জীবনে উপেক্ষিতা (১ম অংশ)

প্রিয় উইপোকা,

বিশ্বাস কর, এছাড়া আর কোনো উপায়ই আমার ছিল না। হয়তো এই চিঠিটাও তুমি ফিরিয়ে দেবে। তুমি বড্ডো ফিরিয়ে দিতে জানো! তা জেনেই লিখছি। কী করব, বলো? আর কী-ই বা আমার করার আছে? তোমাকে ভালোবাসা ছাড়া অন্য সব কাজেই আমার ক্ষমতা বড় অল্প। তুমি পর্যন্ত পৌঁছতে আর কী কী-ই বা করতে পারি! ওই পর্যন্ত পৌঁছনোর সব পথই যে তুমি বন্ধ করে দিয়েছ। প্রথমে ফোন করা কমালে, এরপর ফোন রিসিভ করা কমিয়েছ। এরপর শুরু হলো ফোন রিসিভ করে ফেলেরাখা, কথা না বলা, বললেও ভীষণ গালিগালাজ করা, না চেনার ভান করা। এখন তো আর ফোন রিসিভও কর না। একটু রিসিভ করলে কী হয়? নাহয় দুটো গালিই দিলে! তোমার কণ্ঠস্বরটা তো অন্তত শুনতে পাবো! তাতেও তোমার হলো না, প্রিয়। আমার নাম্বার ব্লক করা শুরু করে দিলে। আমার কণ্ঠ শুনলেই সে নাম্বার ব্লক করে দাও। আগে গালিগালাজ করতে, এখন তাও কর না। যে-ই বোঝো আমি, সাথে-সাথেই ব্লক! কত দ্রুত তোমার অনিচ্ছা জন্মে যায়! ওতেও তোমার কম পড়ে গেল! ফেসবুকে ব্লক করলে! ভাইবার, মেসেঞ্জার, হোয়াটস্‌অ্যাপ, ইমো—কোথাও আমি তোমাকে আর পাই না। তোমার মোবাইলের ইনবক্সে আমার একটাও খুদেবার্তা থাকবে না। ওই ব্যবস্থাটাও করে দিলে। আমি মেসেজের পর মেসেজ পাঠাই, আর তুমি সিন করে ডিলিট করে দাও। আমার একটা মেসেজও পড় কখনো? আমি অবশ্য, তুমি পড়েছ, এটা ভেবেই খুশি থাকার অভিনয় করা শিখে গেছি। কী করবো বলো, বাঁচতে হয় যে! অনেক চিঠি পাঠিয়েছি, তার একটাও তুমি রিসিভ করে নাওনি। ৫৭টা চিঠি আমার কাছে ফেরত এসেছে, বাকিগুলো কোথায় আছে, জানি না। আমি কিছু পাঠালে, সেটা ক্যুরিয়ার থেকে নিয়ে আসার শক্তিটাও তোমার হয় না, প্রিয়! এক ভালোবাসা ছাড়া আর কী-ই দিতে পারি তোমাকে? ৬টা পাঞ্জাবি ফেরত এসেছে, ২টা নকশি কাঁথা লুকিয়ে রেখেছি, ৯৭টা কার্ড লাল কাপড়ে বেঁধে রেখেছি। যে কার্ড আর খামগুলি ফেরত পাঠিয়েছ, সেগুলি বানাতে রাতের পর রাত জাগতে হয়েছে, চোখের নিচে কালি পড়েছে, চেহারা ভেঙে গেছে। জানি, তোমার কাছে এসবের কোনো দাম নেই। তোমার কাছে যা আবর্জনা, আমার কাছে যে সেটুকুই জীবন! কী করবো বলো, আমার পৃথিবীটা ছোট তো! একবার বলবে আমায়, আমি কীকরে তোমার কাছে পৌঁছব? নাকি বলে বসবে, আমার কাছে পৌঁছনোর কী প্রয়োজন তোমার? যত্তোসব! বললে বল! আমি যাবোই যাবো তোমার কাছে। কীসের প্রয়োজন? হ্যাঁ, আছে অনেক প্রয়োজন! পৃথিবীতে আসার সময়ই আমি আমার মনটাকে খুশি রাখবো ঠিক করে এসেছি। আর কিছু নয়, আমাকে খুশি রাখতে আমি তোমার কাছে পৌঁছতে চাই। জীবন আমায় এতকিছু দিল, আর ওকে এই সামান্য উপহারটুকু আমি দিতে পারবো না? যেখানেই যাও, তোমার পাশে আমায় পাবে। আমি তোমার পিছু-পিছু থাকব। তুমি কখনোই আমার দৃষ্টিসীমার বাইরে যেতে পারবে না। জানো কেন? কারণ আমি তোমাকে ভালোবাসি। তুমি আমার জীবনের সবচাইতে আনন্দের ভুলটি, তুমি আমার মধুর দুঃস্বপ্ন। তোমায় কোনোদিন পাবো না জেনেও শুধু তোমাকেই ভালোবাসি। সত্যিই ভালোবাসি প্রিয়, অনেকবেশিই ভালোবাসি। সারাজীবন ভালোবাসবো। আমার সবটুকু সময়ের চেয়ে, আমার যেকোনো সুখের চেয়ে অনেক অনেক অনেকবেশি ভালোবাসি।

জানো, কখনো-কখনো ভুল করার আনন্দটাই অন্যরকম হয়। তোমার জীবনে এমনটা হয়েছে কখনো? আমার জীবনে এমনটা হচ্ছে। যখন থেকে তুমি আমার জীবনে এসেছ, যেদিন থেকে তুমি আমার সুখ হয়েছ; হয়ে গেছ হাসি, গান আর আমার বেঁচে থাকার একমাত্র উৎস, আমার মরে যেতে চাওয়ার কারণ, তখন থেকে আমি এক অনন্ত ভুলের পথ বেছে নিয়েছি, সে পথের পথিক হয়ে বেঁচে আছি। আমার উপর তোমার অনেক রাগ, অনেক বিরক্তি, তাই না? তোমার কাছে আমি নাহয় অভ্যস্ততা মাত্র, কিন্তু আমার কাছে যে তুমিই জীবন! আমি যে পারি না তোমার মতো অনাসক্ত একাকী নিঃস্পৃহ হয়ে বাঁচতে! গভীর রাতে তোমার নাম্বার ওয়েটিং-এ পেলে অনেক খারাপ ভাবনা মাথায় আসে, মনে-মনে অনেক বাজে কথা বলি, তোমাকে সন্দেহ করি, ক্রমাগত মিসড্‌ কল দিতে থাকি। কী করবো বলো? তোমার নাম্বার ওয়েটিং-এ পেলে যে আমার মাথায় রক্ত উঠে যায়। সেসময় আমার কোনো হিতাহিত জ্ঞান থাকে না। আমি কিছুতেই তোমাকে অন্য কারো সাথে ভাগ করতে পারবো না। তুমি কি জানো, আমি সারাদিনই নিজেকে কত বোঝাই যে, আমার কলটা ওয়েটিং-এ থাকলে তোমাকে আর উল্টাপাল্টা কথা শোনাবো না, তুমি তো খারাপ হতে পারোই না, তুমি অনেক ব্যস্ত মানুষ, হয়তো কোনো কাজেই কারো সাথে কথা বলছ, হোক সেটা রাত ২টায়, জরুরি প্রয়োজনে যে কেউ তোমাকে ফোন করতেই পারে, আমি তোমার সম্পর্কে যেমনটা ভাবছি, সেটা মাথায় আনাও পাপ, তুমি ভাল, আমিই খারাপ, এরকম আরো কত কী ভাবি! কিন্তু তোমাকে ওয়েটিং-এ পেলে ঠিকই আবার সব প্রতিজ্ঞা, সব বোধ, সব পরিস্থিতি ভুলে হিংস্র হয়ে উঠি। এই ভুলটা আমি করেই যাই। আমার এ ভুল করাতেই যতো আনন্দ। তোমাকে ঘিরে আমার দুঃখ বাড়ে, সাথে বাড়ে সন্দেহ আর হিংস্রতা। আমি চাই, তোমার সকল ওয়েটিং নিয়ে আমার মনের মধ্যে যতো খারাপ চিন্তা আছে, সব যেন মিথ্যে প্রমাণিত হয়। তোমাকে আরো বেশি ভালোবাসার ক্ষমতা আমার ঈশ্বর যেন আমাকে দেন। তোমাকে ভুল বুঝতে ভীষণ কষ্ট হয়। তোমাকে কষ্ট দিতে অনেক কষ্ট হয়। তোমার সাথে দুর্ব্যবহার করার সময় নিজেকেই নিজের কাছে ছোট মনে হয়। তোমার জায়গাটা আমার কাছে যে কত উপরে, তা তুমি ভাবতেও পারবে না। তোমাকে নিয়ে আমার যতো সন্দেহ, সব যেন ভুল প্রমাণিত হয়, এটা আমি চাই, মন থেকেই চাই। আমি চাই, তুমি শুধু আমাকে নিয়েই ভাল থাক। তোমার সাথে রাগারাগি করতে চাই না। তবু কেন জানি না, নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারি না। মন শুধু ভাবে, ভাবতেই থাকে, যদি তুমি কোনো মেয়ের সাথে কথা বল, তখন আমার কী হবে? যদি ওকে মনের ভুলেও আমার মতো আদর করে থাকো! যদি ও তোমাকে আমার মতো করে কাছে টানতে চায়! তোমার প্রেমিকারা সব ডাইনি এক একটা! তোমার চুমুর শব্দ প্রতি মুহূর্তে আমার কানে বাজে। আমাকে চুমু খাওয়াটা তোমার কাছে হয়তো স্রেফ প্রয়োজন ছাড়া আর কিছু নয়, কিন্তু আমার কাছে যে ওটাই জীবন! তোমার জন্য আমার অনেক আদর, অনেক মায়া, অনেক অনেক! তুমি অন্য মেয়ের সাথে ঘনিষ্ঠ হচ্ছ, কেউ একজন তোমাকে আমার কাছ থেকে ছিনিয়ে নিয়ে যাচ্ছে, তুমি দূরে সরে যাচ্ছ, তোমাকে ফোনে ওয়েটিং-এ পেলেই আমার মনে এমন সব ভাবনা চলে আসে। বলে দাও প্রিয়, আমি কী করবো? আমি চাই, আমার এই ভাবনাটা ভুল হোক। আমি আমার নিজের কাছে হেরে যাওয়ার প্রতীক্ষায় আছি। হয়তো তুমি আমার জীবনে অনেক বড় একটা ভুল। কিন্তু বিশ্বাস কর, এমন ভুলে বাঁচার আনন্দ অনেক! আমাকে ভুল বোঝো না। আমি তোমাকে অনেক ভালোবাসি। ভালোবাসি বলেই তো এমন পাগলামি করি। মা, বাবা, ভাইবোন, বন্ধু এদের ভালোবাসার সাথে কারো ভালোবাসার কোনো তুলনা চলে না। তারপরও জীবন বিশেষ কারো ভালোবাসা চায়। বিশেষ কারো প্রয়োজন জীবনে আছে। আমরা মুখে স্বীকার করি না করি, কেউ সারাক্ষণই আমাদের অনুভবে বাস করুক, এমনটা আমরা চাই। এই যেমন, আমায় সামান্যতম ভালো না বেসেও বিশেষ-বিশেষ মুহূর্তে তুমি আমার প্রয়োজন অনুভব কর। আর আমি তোমায় ভালোবেসে প্রতি মুহূর্তেই তোমার অস্তিত্ব অনুভব করি। এখানেই আমার জয়। আমার কাছে মনে হয়, আমার জীবনের চাইতেও আমার ভালোবাসার জয় বড়। তুমি অবশ্য ভাবো, আমার জন্য তোমার দামি ভালোবাসাটা একটুও খরচ না করেই তুমি যা চাও, তা তো দিব্যি পেয়ে যাচ্ছ। তবু বলবো, আমার জয় এখানেই! যার যা দরকার, যে যেটুকুতে সুখ খুঁজে পায় আরকি! জীবন যাকে যতটুকু চেনায়, সে তো ততটুকুতেই বাঁচে, তাই না? তোমার বাঁচা যেখানে শেষ, সেখান থেকেই আমার বাঁচা শুরু। আমার কথায় রাগ কোরো না। তোমাকে ভালোবাসার পর থেকে আমি অনেক বাজে বকি।

তুই জানিস, তুই আমার এমনই একজন, যার আদর, যার কথা, যার অবহেলা, যার বকাঝকা, যার একটু যত্ন—সবই আমার ভাল লাগে। তোর মুখটা মনের আয়নাতে দেখি আর নিজের অজান্তেই ঠোঁটের কোণায় হাসির রেখা ফুটে ওঠে! আবার এমনও হয়, নিজের অজান্তেই কেঁদে ফেলি। ভাবি, এতো আদর কেন? এতো সুখ কীসের? কেন তোর জন্য আমার এতো মায়া? তোর জন্য এতো প্রেম কেন আমায় তাড়া করে ফেরে? এতো বছর তুই কোথায় ছিলি? আরো আগে কেন তুই আসলি না? কেন তোর ভালোবাসায় আরো আগেই পূর্ণ হলাম না? কেন তোকে সারাক্ষণ কাছে পাই না? কেন এতোগুলি বছর তোর সোহাগে মাতাল হয়ে রইলাম না? আমার জীবনে এই এতদিন ধরে কত অপূর্ণতা এসে আমায় গ্রাস করেছে! কেন তুই আরো আগে এসে আমায় পূর্ণ করিসনি? তুই কখনো জানবি না, তোর আদর কত মায়াময়, তোর মন কত সুন্দর, তোর ভালোবাসা কত গভীর! তুই কত সুন্দর করে ভালোবাসতে পারিস! আচ্ছা, তোর সব প্রেমিকাই কি এমন ভালোবাসায় সিক্ত হয়? কেন তোর জীবনে আমি ছাড়া অন্য কেউ আসবে? কেন তুই শুধুই আমার না? আমি যে শুধুই তোর, এটা কি তুই বুঝিস? তোর প্রেমে এই ছোট্ট একটা জীবন কত সহজে কাটিয়ে দেয়া যায়! আমার সারাজীবনের সব অপেক্ষা তোর ভালোবাসার জন্যই। তোকে ভালোবাসতেই বেঁচে আছি। আমার মনের মধ্যে জমেথাকা সব ভালোবাসা তো এমন কারো জন্যই ছিল, যে ভালোবাসতে জানে। যে আমায় ভালোবাসায় ভোলাবে, আমি যে শুধুই তার হয়ে থাকবো। আমি কখনোই চাইনি, আমায় ছেড়ে আমার ভালোবাসার মানুষটি অন্য কারো হয়ে যাক, আমি সবসময়ই চেয়েছি, আমার ভালোবাসায় মাতাল হয়ে সে পুরো পৃথিবী ছেড়ে আমার কাছেই ছুটে আসুক। যখন তাকে নিজের করে পাবো, তখন তাকে বড় যত্নে রাখবো, আদরে বাঁধবো। সে আমাকে ছাড়া আর কিছুই বুঝবে না। আমার ভালোবাসার শক্তির উপর আমার বিশ্বাস আছে। আমি পারবো তাকে সারাজীবনের জন্য আমার বুকের মধ্যে রেখে দিতে। সে কোনোদিনও আর কোথাও যাবে না। সে আজীবন শুধুই আমার হয়ে থাকবে। আমার পৃথিবী যার প্রেমে গড়া, আমার সব ভালোবাসার যার জন্য, আমার সকল ভাবনা যাকে ঘিরে, তাকে পাওয়ার মোহ আমাকে তো স্বার্থপর করবেই। এতে কী অন্যায় আছে? ভালোবাসার জন্য আমি স্বার্থপর, বেপরোয়া, উদ্ভট হতে পারি। আমি কোনো যুক্তি মানি না, কোনো বাধা জানি না, কোনো বিচার শুনি না। আমি শুধুই ভালোবাসি ভালোবাসি ভালোবাসি!

জানো, তুমি আমার জীবনে না এলে আমি কখনোই অনুভব করতে পারতাম না, সত্যিকারের ভালোবাসা কেমন হয়। দিনের পর দিন কারো প্রেমে বুঁদ হয়ে থাকতে কেমন লাগে। তোমার ভালোবাসা আমায় ঘরছাড়া উদ্ভ্রান্ত আচ্ছন্ন করেছে। ভালোবাসার রঙটা তুমিই আমায় চিনিয়েছ! কেন তবে আমায় এমন বিবর্ণ করে দিয়ে দূরে সরে আছ? আমাকে একটু ভালোবাসবে? বাস না একটু! মিনতি করে বলছি, আমায় একটু ভালোবাসো। তোমার একটু ভালোবাসা পেলে আমি কয়েক মৃত্যুকে হাসিমুখে আলিঙ্গন করতে পারি, কয়েক জন্মকে তাচ্ছিল্যমাখা চাহনিতে বিদায় জানিয়ে দিতে পারি। তোমার ভালোবাসার কথা ভাবলে বুকের ভেতরটা কেমন যেন করে ওঠে! বাঁধ ভেঙে চোখে জল আসে। ভাবতে-ভাবতে চোখে জল জমে যায়। সে জলটা ফেলে দিতে ইচ্ছে করে না। মনে হতে থাকে, আমার চোখে জমে আছে তোমার ভালোবাসা। ওটা ওখানেই থাকুক। তোমার জন্য মায়া লাগে, মায়া বাড়তেই থাকে। একসময় চোখের জলটা আর চোখের কোণায় ধরে রাখতে পারি না। টুপ্‌ করে গড়িয়ে পড়ে। তখনকার অনুভূতিটা অদ্ভুত রকমের সুন্দর! এই পোড়া চোখে ভালোবাসা সইলো না, তাও একটাই সান্ত্বনা, কিছু সময় তো ধরে রাখতে পেরেছি। এও বা কম কীসে? কয়জনের ভাগ্যেই বা ওরকম জোটে, বলো? কখনো স্বপ্নে দেখি, তুমি আমাকে ফেলে বিদেশে চলে যাচ্ছ। আমি তোমার পেছন-পেছন যাচ্ছি, আমার দিকে তুমি ফিরেও তাকাচ্ছ না। কখনো একটু থেমে আমাকে খুব বকছ, তোমার সাথে যেতে দিচ্ছ না। জানি না কেন এমন দেখি। আমি ঘুমের মধ্যেই কেঁদে ফেলি। কালও এই স্বপ্নটা দেখেছি। আর পরশু দেখলাম, তুমি আমার উপর ভীষণ রাগ করেছ। গাঢ় নীল রঙের স্যুট পরে দূরে কোথায় যেন হারিয়ে যাচ্ছ। আমি আকুল হয়ে অদ্ভুত দৃষ্টিতে তোমার দিকে তাকিয়ে আছি। খুব কষ্ট হচ্ছিলো, তোমাকে ফেরাতে না পারার কষ্ট। অসীম সে কষ্ট, তুমি কখনো বুঝবে না। ভালোবাসা বড় কষ্ট দেয়, প্রিয়! আচ্ছা বল না, এতো আদর কেন? কেন এতো মায়া আমায় সারাক্ষণ ব্যাকুল করে রাখে? তোকে খুব বেশি আদর করতে ইচ্ছে করে, বাবু। খুউব খুউব খুউব! এবার দেখা হলে তোকে অনেক আদর করবো, কেমন? অনেক অনেক আদর। পাগলের মতো তোকে ভালোবাসবো। অতৃপ্ত মন, অতৃপ্ত পিপাসা, অতৃপ্ত দৃষ্টি। তুই আমার অতৃপ্ত নেশা।

ভয় হচ্ছে। আমার এই চিঠি আদৌ তোমার হাতে পড়েছে তো? হয়তো এই চিঠিটাও নিতে চাইবে না, ফিরিয়ে দেবে। দিলে দিয়ো। আমার যতদিন লেখার ক্ষমতা থাকবে, ততদিনই আমি তোমাকে লিখে যাবো। তুমি পৃথিবীর যে প্রান্তেই থাকো না কেন, তোমাকে ভেবে লিখবোই আমি! কেউ না রাখুক আমার এপিটাফের কোনো খোঁজ! আমার ঈশ্বর তো জানবেন, ওই কালো অক্ষরগুলিতে লেপটে আছে এক দুঃখিনী প্রেমিকার কষ্ট। সারা পৃথিবী জুড়ে আমার ভালোবাসার মুঠো-মুঠো স্মৃতি ছড়িয়ে থাকবে। আমার ভালোবাসা, আমার কষ্ট কখনোই মরবে না। শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে পৃথিবীর বুকে আমার সমস্ত বেদনা নীরবে নিঃশব্দে জেগে থাকবে। আজ নাহয় আমার ভালোবাসা নিচ্ছ না, একদিন ঠিকই আমায় পাগলের মতো খুঁজে বেড়াবে। সেদিন আমায় আর পাবে না। হয় আমি উন্মাদ হয়ে যাবো, কিংবা এই পৃথিবী ছেড়েই চলে যাবো। সেদিন কি আমার কথা মনে করে তোমার চোখে জল আসবে? একটুও কাঁদবে? দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলবে, “আমায় ভালোবেসেই পাগলীটা মরল!” আমি পাখি হয়ে আসবো তোমার অলস দুপুরের সঙ্গী হতে, ঘাসফুল হয়ে ফুটব তোমার চলার পথে, বৃষ্টি হয়ে ঝরবো তোমার অপূর্ব চোখের পাতায়, রোদ্দুর হয়ে খেলবো তোমার গোলাপি ঠোঁটে। সেদিন আমায় নেবে তো চিনে? নাকি, তাড়িয়ে দেবে? বিরক্তিতে ভ্রুজোড়া কুঁচকে যাবে নাতো? আমার এই চিঠিগুলোর কথা মহাকাল লিখে রাখবে। জানো তো, চিঠি মনের সবচাইতে বিশ্বস্ত আয়না। অনেক স্পর্শকাতর একটা জিনিস এই চিঠি। কত মায়া, কত মমতা, কত আদর জড়িয়ে থাকে এই চিঠির শরীরে! আর সেটা যদি হয় প্রেমপত্র! আহ্‌! আমার এই চিঠি ভুল কারো হাতে পড়েনি তো? অন্য কারো হাতে পড়ার চাইতে বরং আমি যেন মরে যাই, সেও ভাল। প্রেমপত্র মানেই দুর্বলতার আবাহন আর নিরাবেগ বোঝাপড়ার মৌন সম্মত বিসর্জন। কাঙ্ক্ষিত মানুষের হাতে না পড়া কিংবা সে প্রেমপত্র ফেরত আসার যন্ত্রণা যে কতটা ভয়াবহ, সে অনুভূতি তুমি কল্পনাতেও আনতে পারবে না। অথচ, সে যন্ত্রণাটাই তুমি আমাকে দিয়েছ। বহুবার! তোমাকে লেখা উনষাটতম চিঠিটা যখন আমার হাতে ফেরত এল, তখন আমার অনুভূতি ছিল, যেন কেউ আমার হৃদয়ে ছুরি চালিয়ে সেটাকে ক্ষতবিক্ষত করে দিচ্ছে। ওই চিঠি হাতে নিয়ে আমার মনে হচ্ছিল, আমার হাতে চিঠি নয়, আমার টাটকা হৃদপিণ্ডটাই যেন আমার হাতে ছটফট করছে। আচ্ছা, নিজের হৃদপিণ্ডটা নিজের হাতে রেখে স্থিরদৃষ্টিতে তাকিয়ে দেখার অনুভূতিটা কেমন, জানো তুমি? জানি, জানো না। হয়তো, কোনোদিন জানবেও না! ভালোবাসতে কেমন লাগে, সেটা কোনোদিনই জানা হবে না তোমার! প্রিয়, তোমার কখনো কাউকে ভালোবাসতে ইচ্ছে করে না? কীভাবে পারো এমন নিরাবেগ হয়ে বাঁচতে? করুণা হয় তোমার জন্য! কেমন আছ তুমি? অনেক-অনেক ভাল আছ নিশ্চয়ই। আমি ভাল নেই। অনেকদিন ধরে আমার আর মনেও পড়ে না, ভাল থাকতে কেমন লাগে! আমার বড় ভাল থাকতে ইচ্ছে করে, প্রিয়! যন্ত্রণাকে পর করে দিতে ইচ্ছে করে। আমি সুখী হতে চাই না, আমি কষ্টশূন্য হয়ে বাঁচতে চাই। আমায় একটা ছোট্ট করে জীবন দেবে? আমি বাঁচতে চাই। আমি তোমাকে নিয়ে বাঁচতে চাই। আমাকে কিছুই দিতে হবে না, ভালোবাসাও দিয়ো না, শুধু পাশে রেখো, দূরে সরিয়ে দিয়ো না। একটু দয়া কর আমায়। আমি আর পারছি না, প্রিয়!

এই চিঠি প্রতিটি বর্ণ লেখার সময় যত বিন্দু চোখের পানি ঝরেছে, তত বিন্দু ভয়ও জমে যাচ্ছে বুকের ভেতর—যদি এ চিঠিটাও তুমি না নাও! যদি এটাও আমার কাছে ফেরত আসে! আমি নাহয় তোমার কাছে অস্পৃশ্য, তাই বলে আমার চিঠির সাথে এমন নির্দয় আচরণ তোমার! আচ্ছা, তুমি আদৌ পড়ছ তো? নাকি, না পড়েই ছিঁড়ে দলা পাকিয়ে-পাকিয়ে তোমার চেয়ারের ডানপাশের ঝুড়িটাতে ছুঁড়ে ফেলে দিচ্ছ? ফেলেই রেখেছ এই চিঠিটা? পরে পড়বে? পড়তে মনে থাকবে তো? নাকি, ভুলেই যাবে একটিবারের জন্যও উল্টে দেখতে এতে কী আছে! আচ্ছা, তুমি পড়ছ তো? এটাও আমার কাছে ফেরত আসবে নাতো? সত্যিই ফেরত পাঠাবে নাতো? তোমার অমূল্য সময়ের কিছুটা আমাকে দেয়া যায় না?

জানো, অনেক যন্ত্রণা! অনেক! প্রেমপত্র ফেরত আসার যন্ত্রণা অনেক ভয়াবহ! আমি এ যন্ত্রণার মধ্য দিয়ে আর যেতে চাই না! হৃদয়-নৈবেদ্য দেবতাও ফিরিয়ে দেন না, প্রিয়! তুমি আমাকে এ যন্ত্রণাটা আর দিয়ো না। ক্যুরিয়ার অফিস থেকে রিসিভটা অন্তত কোরো। এরপর নাহয়, ফেলেই দিলে। আমি জানলাম, তুমি আমার চিঠি নিয়েছ। চোখ বন্ধ করে ভেবে নেবো, আমার চিঠি তুমি নিশ্চয়ই পড়বে। আমি যদি মিছেমিছি স্বপ্ন দেখে এতটুকুও শান্তি পাই, সেটাও পেতে দেবে না? আর কতটা কষ্ট পেলে শান্তি আসে? কতটা কান্না গিলে ফেললে আর কান্না পায় না? লাল-নীল-সবুজ কাগজে রঙিন কালির ছোঁয়ায় খামে আটকানো আমার মুঠো-মুঠো ভালোবাসা। হোক ফ্যাকাসে, সস্তা, ছন্দহীন, তবু ভালোবাসা তো! আর ফিরিয়ে দিয়ো না, লক্ষ্মীটি!

তুমি গত এক বছরে অনেক বদলে গেছ। আসলে আমার সাথে দেখা হওয়ার পর থেকেই অনেকবেশি ব্যস্ত হয়ে গেছ। এতটাই ব্যস্ত যে, আমাকে একটুখানি মনে করার সময় কিংবা প্রয়োজনটুকুও যেন ফুরিয়ে গেছে তোমার! তোমার কাছে আমার প্রয়োজন এতটাই ঠুনকো হয়ে যাবে, কখনো ভাবতেও পারিনি। আচ্ছা, দাবি ব্যাপারটা কেমন হয়, বলতে পারো? দাবি বলতে, হৃদয়ের দাবি? আমার প্রতি তোমার কোনো হৃদয়ের দাবি নেই, তাই শারীরিক দাবিটাও জোরালো নয়। কোনো মায়াই নেই তোমার মধ্যে আমার জন্য। হৃদয়ের দায়বদ্ধতা তুমি কী সহজেই এড়িয়ে গেছ, তাই শারীরিক দায়বদ্ধতাটুকুও এড়াতে তোমার কষ্ট হয়নি। সবকিছু খুব সহজ, তাই না? তোমার জন্য, হ্যাঁ, শুধু তোমার জন্য অনেক সহজ ভুলে যাওয়া, ভুলে থাকা। আচ্ছা, আমি তো তোমায় আটকাই না, তবে তুমি আমার কাছ থেকে এমন পালিয়ে বেড়াও কেন? তবে কি আমি ধরে নেবো, তুমি অন্যায় করেছ? অনেক অরুচিকর তোমার এমন ব্যবহার! অনেকবেশি অরুচিকর! তোমার সাথে যায় না এমন ব্যবহার। কেন যায় না, জানো? কারণ, আমি তোমাকে অনেক ব্যক্তিত্বসম্পন্ন একজন মানুষ বলে জানি। তোমাকে আমি অনেক উঁচুতে স্থান দিয়েছি। তোমাকে যতটা ভালোবাসি, তার চাইতে বেশি বিশ্বাস করি। আর ঠিক ততটাই সম্মান করি। চোখ বন্ধ করে এতোটা বিশ্বাস আর সম্মান কখনোই কাউকে করিনি। সত্যিই! আচ্ছা, যাকে ভালোবাসা যায়, তাকে মানুষ কীভাবে ঘৃণা করে, বলতে পারো? তুমি জানো, আমি তোমাকে ঘৃণা করতে চাই না? সত্যিই না প্রিয়, আমি তোমাকে ঘৃণা করতে চাই না। তুমি যখন আমার সাথে খারাপ আচরণ কর, তখন তোমার সম্পর্কে অনেক বাজে চিন্তা মাথায় আসে। আমি সেসব চিন্তাকে প্রশ্রয় দিতে চাই না। আমি বিশ্বাস করতে চাই না, ওসব ভাবনা সত্য। আমি চাই, সেসবকিছুই মিথ্যে হোক।

আচ্ছা, আমাকে বলতে পারো, যাকে শরীর দেয়া যায়, কেন তাকে মন দেয়া যায় না? ভালোবাসা যায় না? যার সাথে কাটানো প্রতিটি মুহূর্তে স্বর্গসুখের অনুভূতি জাগে, কেন তাকে সারাজীবনের করে নেয়া যায় না? প্রিয়, আমি কখনো এমনটা কল্পনাও করতে পারি না। যে আমার প্রতিটি ছোট-ছোট মুহূর্তও এমন সুখে ভরিয়ে দিতে পারে, সে কেন আমার সারাজীবনের সঙ্গী হবে না? কেন প্রিয়? কেন এমনটা ভাবো তুমি? জানো, সত্যিকারের ভালোবাসা, মনের মতো মন, এসব অনেক কষ্টে মিলে, অনেক সাধনায় এসব পাওয়া যায়। পেলে, এসব আর হারাতে নেই। গত এক বছরে তুমি অনেক বদলে গেছ, অনেক অস্বাভাবিক আর বেপরোয়া হয়ে গেছ, তোমার আগের সেই সহনশীলতা অনেকটাই হারিয়ে গেছে, নাকি, তুমি কখনোই অমনটা ছিলে না, এটাই তোমার আসল রূপ, যা আমার মনে ছিল, তার পুরোটাই আমার কল্পনা? এতোটা ভুলও দেখা যায়? এতোটা ভুলও করা যায়? তুমি যদি মিথ্যে হও, তবে পৃথিবীতে কোনটা সত্য?

জানো প্রিয়, আমি চাই না, আর কোনো মেয়ে আমার মতো করে তোমাকে নিয়ে কষ্ট পাক, তোমার জন্য চোখের পানি ঝরুক আর কোনো মেয়ের। তোমাকে নিয়ে আমার অনেক অভিযোগ, অনেক অনুযোগ। তবে, সব অভিযোগ আর অনুযোগই তোমার কাছে। আর কারো কাছে আমি সেসব কখনোই বলবো না। আমি চাই না, আর কোনো মেয়ে তোমাকে নিয়ে আমার মতো অভিযোগ করুক। আর কেউ তোমাকে ঘৃণা করতে চাক। আমি সত্যিই তোমাকে ঘৃণা করতে চাই না, প্রিয়! যদি সেটা চাইও, সে ঘৃণা করার অধিকারটুকু শুধুই আমার থাক, তোমাকে নিয়ে অভিযোগ করার আস্পর্ধা শুধুই আমার থাক, আর কারো নয়। তোমার সবকিছুই, ভালকিছু, মন্দকিছু, সবই আমার স্মৃতিতে থাক। আর কারো নয়! অভিযোগ করতে অধিকার লাগে, ঘৃণা করতেও অধিকার লাগে। অবহেলা আর অবজ্ঞা করতে কিংবা সহ্য করতেও অধিকার লাগে। একটু ভাবো তো, এই যে আমাকে এমন অপমান অবহেলা কর, তা কি একটুখানি হলেও অধিকার থেকে নয়? হ্যাঁ, আমার উপর তোমার অধিকার আছে, এটা তুমিই দেখিয়ে দিচ্ছ। যতোই অস্বীকার কর, এটাই সত্য। তোমার উপরও আমার অধিকার আছে, ভালোবাসার অধিকার। সে অধিকার থেকে বলছি, আমি নিজেও অন্য কারো হবো না, তোমাকেও কখনোই অন্য কারো হতে দেবো না। প্রয়োজনে মরে যাবো, তবুও তোমাকে কোথাও যেতে দেবো না।

আমি চাই, পৃথিবীর সবাইই তোমাকে ভালোবাসুক। সত্যি সত্যিই ভালোবাসুক। কেউ তোমাকে একটুও ঘৃণা করুক, এটা আমি চাই না। আর কোনো অধিকার দেখাতে পারি না পারি, তোমাকে ঘৃণা করার অধিকারটুকু শুধুই আমার হয়ে থাক। প্রিয়, আমি যে তোমায় ভালোবাসি! সত্যি-সত্যি ভালোবাসি। অনেকবেশিই ভালোবাসি। আমি তোমাকে আমার যেকোনো প্রিয় বস্তুর বা ধারণার চাইতেও বেশি ভালোবাসি। তোমাকে যে কতটা ভালোবাসি, তা বলে বোঝাতে পারব না। আমি কোনোদিনই ভাবিনি যে তোমাকে ভালোবাসব। কোনোদিন কল্পনাও করিনি যে তোমাকে চাইব। অথচ দেখ, আমি আর আগের মতো নেই। তুমি আমায় বদলে দিয়েছ। আমাকে বদলে দিয়ে এরপর তুমি নিজেই বদলে গেছ। এখন আমি কী করবো? আমি যে তোমাকে ভালোবাসি। তোমাকে চাই, আপন করে চাই, অনেক কাছে চাই তোমাকে। প্রতি মুহূর্তের জন্য আর সারাজীবনের জন্য চাই। শুধুই তোমাকে চাই, হোক সেটা সমস্ত পৃথিবীর বিনিময়ে, তবুও চাই। অথচ, আমি তোমাকে চাইনি, চাইব বলেও কখনো ভাবিনি। আর এখন তুমি আমার প্রতি মুহূর্তের প্রার্থনা হয়ে গেছ। ঘুমাতে যাই তোমার জন্য প্রার্থনা হৃদয়ে নিয়ে, আর ঘুম ভাঙেও তোমার জন্য প্রার্থনা হৃদয়ে নিয়ে। আমি নিজের উপর নিজেই অনেক অবাক! আমি তো এমন ছিলাম না কখনোই! আসলে কী জানো, ভালোবাসা কখনো বলেকয়ে হয় না। ভালোবাসা হয়ে যায়—মনে, আবেগে, হৃদয়ে, আত্মায়, কোথায় হয় জানি না, তবে হয়ে যায়। মনের কাছে জ্ঞানের কোনো স্থান নেই। ভেবো না, তোমার জ্ঞান দেখে আমি তোমার প্রেমে পড়েছিলাম, বরং প্রথম দেখায় তোমাকে আমার রাক্ষস মনে হয়েছিল। তোমার আদর, তোমার ভালোবাসা আমার কাছে তোমাকে সুন্দর করে তুলেছে। আমি তোমার সৌন্দর্যের মোহে নয়, তোমার আদরের মায়ায় পড়েছি। তোমার আদরকে আপন করে নিয়েছি। তোমার হৃদয়টা আমার হৃদয়ে বেঁধে নিয়েছি। আমার মধ্যে কোনো প্রেম ছিল না, তুমি আমার মধ্যে প্রেমের সঞ্চার করেছ। আমাকে তুমি আদর শিখিয়েছ। এতোটা ‘সাহস’ কোনোদিনই কোনো ছেলের হয়নি। তুমিই আমার ধৈর্যের বাঁধ ভেঙে দিয়েছ। আমি রোদ্দুরের পেছনে ছুটতে-ছুটতে মনের ভুলে আগুনে ঝাঁপ দিয়েছি। আচ্ছা প্রিয়, তোমার মধ্যেও তো কোনো প্রেম ছিল না! তবে এতোটা আদর আর প্রেম কোথায় পেলে? তোমার মনে আছে জাপান যাওয়ার আগের দিন একটা রাশান মুভি দেখে আমাকে রাত ২টায় ফোন করেছিলে। ওই মুভির নায়কটার মাঝেও কোনো প্রেম ছিল না, নায়িকাই তার মাঝে প্রেম জাগিয়ে তুলেছিল। সেই মুভি দেখে নাকি আমাকে তোমার মনে পড়েছিল। তার মানে কি আমিই তোমার মাঝে প্রেম জাগিয়েছিলাম? নাকি, মিথ্যে বলেছিলে আমাকে? নাকি, এমন মিথ্যে আরো অনেককেই বলেছ? তোমার সব কথাই যে আমি বিশ্বাস করি! তোমার কাছে আমার কোনো আলাদা জায়গা নেই? তোমার কাছে আমার এই গুরুত্বহীনতা আমাকে অনেক ভাবায়, অনেক ভাবায়। কেন ভাবাবে না, বল! আমি যে তোমার চাইতে বেশি গুরুত্ব এ জীবনে আর কাউকেই কখনো দিইনি। তুমি ছাড়া তো আর কেউ আমার সুখ এতোটা ছুঁয়ে দেয়নি। আর কারো নিঃশ্বাসের এতো কাছে আমি কখনো যাইনি! এতো আদর তো কেউ আমাকে কখনো করেনি। বিশ্বাস, শ্রদ্ধা আর ভালোবাসা না থাকলে কেউ কাউকে এতোটা নিবিড়ভাবে ছুঁয়ে দিতে পারে, তা আমি কল্পনাতেও আনতে পারি না। কারো মন না ছুঁয়ে শরীর ছোঁয়া যায়, প্রিয়? আমাকে বড্ডো সেকেলে ভাবছ, তাই না? ভালোবাসাহীন দৈহিক সম্পর্কে বিশ্বাসী হওয়ার চাইতে এমন তথাকথিত সেকেলে হওয়াটাই কি ভাল নয়? আমি সেকেলে হয়েই বাঁচতে চাই, মরতে চাই! তোমার ভালোবাসায় বাঁচতে চাই, তোমাকে ভালোবেসে সুখী হতে চাই, তোমার ভালোবাসা নিয়েই মরতে চাই। আমি তোমাকে ঘৃণা করতে চাই না, আমি ঘৃণার মাঝে বেঁচে থাকতে চাই না। যার ঘৃণার আগুন, তাকেই পুড়িয়ে মারে। এটাই জগতের নিয়ম।

আমার ভালোবাসাকে আমি অপমান করতে চাই না, কিন্তু প্রিয়, তুমি আমার ভালোবাসাকে অপমান করেছ, তুমি আমাকে অস্বীকৃত রেখে দিয়েছ। যন্ত্রণা প্রিয়, বড় যন্ত্রণা! শিরোনামহীন সম্পর্কের অনেক ব্যথা। তুমি ওটা বুঝবে না। যদি মেয়ে হতে, তবে বুঝতে। ছেলেরা শিরোনামহীন সম্পর্কে অভ্যস্ত, আর মেয়েরা সবসময়ই সম্পর্কের একটা নাম দিতে চায়। বিপত্তিটা বাধে তখনই। যতক্ষণ প্রেম এগোয় দেহের দাবিতে, ততক্ষণই প্রেম খাঁটি থাকে। প্রেমের মধ্যে মন মিশলেই আসল বিপদ শুরু হয়ে যায়। আচ্ছা, পৃথিবীর সব মেয়েই কি তোমার ওই প্রেমিকার মতো যে তোমাকে ছেড়ে চলে গেছে? তোমার রক্তের সাথে যার স্মৃতি মিশে আছে, তাকে ভেবে পৃথিবীর সব মেয়েকে শাস্তি দিয়ে তুমি একধরণের পৈশাচিক আনন্দ পাও, তাই না? কেন প্রিয়, কেন? যে শাস্তি তোমার পাওনা ছিল না, সে শাস্তি পুরো পৃথিবীর পাওনা করে দিতেই কেন হবে তোমাকে? কেন আমাকে জোর করে তোমার জীবনের সাথে জড়ালে? আমি তো চাইনি। আমি তো একা-একা ভালই ছিলাম। জীবনে প্রেম ছিল না ঠিকই, কিন্তু স্বস্তিটুকু তো ছিল! ভালোবাসা মানুষকে যে ঐশ্বর্য দেয়, সে ঐশ্বর্য জীবনের সব ঐশ্বর্য একে-একে কেড়ে নেয়। আমাদের মাঝে যে দেয়ালটা ছিল, আমি তো সেটা ভাঙতে চাইনি। সেটা তুমিই ভেঙেছ। তো ভাঙলেই যখন, কেন এখন ছেড়ে যেতে চাইছ, প্রিয়? দেয়াল ভেঙে দূরে সরে যাচ্ছ, আমার চলার পথে অনেক কাঁটা ছড়িয়ে দিয়েছ, সে কাঁটা উপড়াতে গিয়ে আমি প্রতি মুহূর্তে রক্তাক্ত হচ্ছি। যতোই তোমাকে দেখি, জুয়াড়িদের প্রতি ততোই শ্রদ্ধা জন্মে। ওরা আর যা-ই করুক, অন্তত জীবন নিয়ে জুয়া খেলে না। আমি ভেবে পাই না, যাকে নিঃশ্বাসের এতোটা কাছে টানা যায়, তাকে কীভাবে দূরে ঠেলে দেয়া সম্ভব? কীভাবে তাকে এতোটা অবজ্ঞা আর নিন্দায় ভাসিয়ে দেয়া যায়? কীভাবে পারে মানুষ এমন করতে? আচ্ছা, কোনো সুস্থ-স্বাভাবিক মানুষ কি এরকম করতে পারে? এমন করা মানুষকে তো মানায় না! যাকে বুকে জড়িয়ে নেয়া যায়, তাকেই আবার কীভাবে ধাক্কা মেরে ছুঁড়ে ফেলে দেয় মানুষ? যার সাথে গোপন সুখ ভাগাভাগি করে নেয়া যায়, যার কাছে সকল লজ্জা বিসর্জন দেয়া যায়, তাকেও মুহূর্তেই অচেনা করে ফেলা যায়! মানুষ কীকরে এতোটা বিশ্বাসঘাতকের মতো আচরণ করে? আমি এমন কাজ করা দূরে থাক, করার কথা কল্পনাতেও আনতে পারি না। তোমাকে কঠিন ভাষায় কিছু বলতেও লজ্জায় আমার মাথা নত হয়ে যায়। আর সেই আমাকেই কিনা এমন অপদস্থ করতেও তোমার কিছুই এসে যায় না। হ্যাঁ, যদি আমার মতো আরো মেয়ের অস্তিত্ব তোমার জীবনে থেকে থাকে, তবে মেয়ে মানেই তোমার কাছে সস্তা, খেলো, ফালতু হওয়ারই কথা। সেক্ষেত্রে তাদের সাথে এমন যাচ্ছেতাই ব্যবহার করা কিংবা তাদের কাছ থেকে পালিয়ে বেড়ানো তোমার স্বভাবজাত। আমি তো ওরকম ছিলাম না। তবে কেন আমার সাথে এমন করলে? আমার কোন আচরণ দেখে, কোন কথা শুনে তুমি ধরে নিয়েছিলে, আমি ব্যবহৃত হতে অভ্যস্ত? টিস্যুপেপারের জীবন কাটাতেই আমি জন্ম নিয়েছি? তুমিই আমাকে অনেক কাছে টেনে নিয়েছিলে, তোমার খুব কাছে আসার প্রশ্রয় দিয়েছিলে। আমি চাইনি, তবুও জোর করে অনেককিছুই দিয়েছ। সেদিন তোমার সাথে কাটানো ৬ ঘণ্টা সময়ের ৪ ঘণ্টা আমি নিজের মধ্যে ছিলাম না। কিন্তু বাকি ২ ঘণ্টার প্রত্যেকটা স্মৃতি আমার মনে স্থায়ীভাবে গাঁথা হয়ে গেছে। সে স্মৃতি আমাকে প্রতিনিয়তই নির্দয়ভাবে বিদ্ধ করে। আমার প্রায়ই ইচ্ছে জাগে, নিজের শরীরের সব মাংস খুলে ডাস্টবিনে ফেলে দিই। শরীরের চামড়া তুলে নিই, ওখানে নতুন পবিত্র চামড়া জন্মাক। সেদিনের কথা মনে এলেই ঘণ্টার পর ঘণ্টা বাথরুমে স্নান করতে থাকি। পৃথিবীর সব জল মিলেও আমার পাপ ধুয়ে দিতে পারে না। তুমি কি সবকিছুই ভুলে গেছ? নাকি, ভুলে আছ? একটুও মনে পড়ে না তোমার? এও সম্ভব? বল না, মনে পড়ে না তোমার? মায়া জাগে না এই আমার জন্য? একটুখানিও? গাড়িতে চড়ে রাস্তা দিয়ে যাওয়ার সময় গাড়ির চাকার নিচে কোনো কুকুর চাপা পড়লে, সে কুকুরের স্মৃতিও তো চট্‌ করে মানুষের মন থেকে মুছে যায় না। আমি কি কুকুরেরও অধম? তোমার জীবনে কি শুধুই নারীদেহের প্রয়োজন? কোনো নারীর স্থান নেই সেখানে?

তুমি যখন আমার সাথে যাচ্ছেতাই ব্যবহার কর, তখন খুব যন্ত্রণা হয়। আমি কি ওরকম আচরণের যোগ্য? আমি ‘যে কেউ’ হলে কি তোমার বুকে মাথা রাখতে পারতাম? বিশেষ মানুষের জন্য আমি আমার হৃদয়ে বিশেষ স্থান রাখি। সবাইকে সব জায়গায় রাখা যায় না। বিশেষ মানুষকে যেখানে রাখা যায়, সেখানে আর কাউকেই রাখা যায় না। আমি এই দর্শনেই বিশ্বাসী। যাকে ইচ্ছে তাকেই সবকিছু দিয়ে দেয়া যায় না, প্রিয়। তোমার জায়গাটা আমার কাছে অনেক দামি ও পবিত্র। অথচ, আমার কোনো মর্যাদাই নেই তোমার কাছে। বল না প্রিয়, আমি কি তোমার কাছে একটুও সম্মানের অধিকার রাখি না? আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজেকে প্রশ্ন করে দেখ তো, তোমার কাছে আমার কি কোনো অধিকারই নেই? যদি মিথ্যে দিয়ে গড়া তোমার ওই পৃথিবী থেকে বের হওয়ার একটু সময় হয় তোমার, তবে সেখান থেকে বেরিয়ে এসে দেখ না, আমি কি সেই মেয়েটি নই, যে তোমার সুখ ছুঁয়েছিল? আমি কি সে নই, যাকে তুমি জীবনের রঙ চিনিয়েছিলে? তুমি কি সে মহান শিক্ষক নও, যার কাছে আমি জীবনের পুনর্পাঠ নিয়েছিলাম? যে তোমার সুখ ছুঁয়েছে, তার জন্য অপমান, অবজ্ঞা, নিন্দা, অবহেলা ছাড়া আর কিছুই কি দেবার নেই তোমার? এতোটাই রিক্ত হলে আজ? দারিদ্র্যের এমন তাজ কোন সুখে পরলে? এই অসীম শূন্যতা নিয়ে কবে থেকে বেঁচে আছ?

আজ বছর খানেক হয়ে গেল আমাদের কোনো যোগাযোগ নেই। বল না প্রিয়, তুমি কীভাবে আছ? তোমার আবেগকে তুমি আজ কীভাবে নিয়ন্ত্রণ কর? নাকি, আবেগটুকুকেও গলা টিপে হত্যা করেছ? তুমি অন্য মেয়ের কাছে সুখ খুঁজে নাওনি তো? না না, আমি এমনটা ভাবতে চাই না! এমন করে ভাবাও পাপ! তোমাকে নিয়ে এমন নোংরা চিন্তা মাথায় আনাও আমার অপরাধ। যাকে ভালোবাসা যায়, তাকে নিয়ে কখনো বাজে চিন্তা করা যায় না। কিন্তু জানো, যখন তুমি আমার সাথে খারাপ ব্যবহার কর, অচেনা মানুষের মতো আচরণ কর, এমনভাবে কথা বল যেন আমাকে চেনই না, তখন আমার খুব কষ্ট হয় আর তোমার সম্পর্কে খুব খারাপ-খারাপ চিন্তা মাথায় আসে। আমার মনে হয়, তুমি অন্য মেয়ের কাছে সুখ খুঁজে নাও। তোমাকে যখন গভীর রাতেও কল-ওয়েটিং’এ পাই, আমার মন বারবার বলে, তুমি হয়তো অন্য মেয়ের সাথে কথা বলছ। নিজেকে বোঝাই, না, আমার প্রিয় কিছুতেই এমন হতে পারে না। তুমি তো সেই মানুষ, যাকে আমি চিনি। তবে কেন এমন হবে? তবু মন বারবার বলতে থাকে, তুমি আমাকে ধোঁকা দিচ্ছ। তোমাকে প্রতারক ভাবতে আমার কষ্ট হয়। আমি প্রায়ই এলোমেলো হয়ে একটা ঘোরের মধ্যে সময় কাটাই। একই কথা বারবার বিড়বিড় করতে থাকি, একই ভাবনা বারেবারে মাথায় ঘুরপাক খেতে থাকে। আচ্ছা, আমি কি পাগল হয়ে যাচ্ছি? এই কষ্ট কি তোমার প্রেম-উপহার?