জেতা

অরুণের ডায়রির পাতা থেকে…….

“এক্সকিউজ মি, আমি অরুণ। একটু কথা বলা যাবে?” “জ্বি বলুন…..” ভাবলেশহীনভাবে, অরুণের দিকে না তাকিয়েই মেয়েটি বলল। “আপনি পাখিগুলো ওভাবে ছেড়ে দিচ্ছেন কেন!?” “মানে?” এবার তির্যক দৃষ্টিতে অরুণের দিকে তাকাল মেয়েটা। “কিনে, আবার ছেড়ে দিচ্ছেন। এতক্ষণ ব্যাপারটা দেখছিলাম রাস্তার ওপার থেকে। এমনি কিউরিয়াস হয়ে জানতে এলাম। আর কিছু না।” “যেহেতু পাখিগুলো আমি কিনেছি, সেহেতু, ছেড়ে দেয়ার অধিকার—নিশ্চয়ই আমার আছে……তাই না?” “না না, ছিঃ ছিঃ, আমি আসলে সেভাবে বলতে চাইনি—প্লিজ, কিছু মনে করবেন না…..আসলে……” “ইটস্ ওকে।” অরুণের কথা শেষ না হতেই, ঝাঁঝালো গলায়, এটা বলে মেয়েটা রিকশা ডাকল, “অ্যাই মামা, যাবেন?”

বছরের শেষের দিকে, শরতের এক পড়ন্ত বিকেলে, যেদিন রোদ, নরোম রোদ্দুর হয়ে আকাশ ফুঁড়ে নামছিল, এমন একদিন, ভার্সিটির ক্লাস শেষে কাঁটাবনের রাস্তা ধরে যাচ্ছিলাম। ওদিকে অবশ্য, একটা কাজও ছিল। হঠাৎ দেখি, একটা পাখির দোকানে বেশ কিছু মানুষের ছোটোখাটো জটলা। কাছে গিয়ে দেখি, একটা মেয়ে তিন খাঁচা পাখি নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। এক-এক করে খাঁচা থেকে পাখি বের করে, সেগুলো ছেড়ে দিচ্ছে। সবাই দাঁড়িয়ে-দাঁড়িয়ে বিস্ময়ভরা চোখে সেই দৃশ্য দেখছে। আর আমি, অবাক হয়ে মেয়েটিকে দেখছি। মুক্ত পাখিগুলোর দিকে, ভীষণ তৃপ্তি নিয়ে তাকিয়ে-থাকা অসম্ভব সুন্দর, গভীর একজোড়া চোখ। খুবই সাধারণ একটি মেয়ে—ঘাড়ের নিচ পর্যন্ত চুল, পরিপাটি করে ওড়নাটা দেয়া, খুব একটা সাজগোজ নেই—গলায় একটা পুঁতির মালা, কপালে ছোট্টো কালোটিপ, হাতে একগোছা কাঁচের চুড়ি—ওইটুকুই চোখে পড়ল। দৃষ্টিতে, অবয়বে সাদামাটা একেবারেই, চোখেমুখে কেমন যেন একটা অন্যমনস্ক ভাব, সে চোখের ভাষা বারবার পড়ার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হচ্ছিলাম……..সব সাধারণ এসে ভর করে ওকে একটা অন্যরকম অসাধারণ করে দিয়েছিল সেই বিকেলে। কয়েক মুহূর্তের মধ্যে মেয়েটিকে ভীষণ ভালো লেগে গেল, মনে এল, ওকে আমি কোথাও দেখেছি, ও আমার অপরিচিত নয়। ওকে চেনা মানুষ ভাবতে ইচ্ছে করল।—শুধুই দেখে গেলাম, শেষ পর্যন্ত, অনেক সংকোচে ঢোঁক গিলে আমার নামটা ওকে জানানো ছাড়া আর কিছুই জিজ্ঞেস করতে পারলাম না। দেখতে দেখতেই সে রিকশায় ওঠে চলে গেল। পেছন থেকে তাকিয়েছিলাম, একবার যদি রিকশার পেছন থেকে ভুলে করে হলেও সে তাকায়! ……..তাকালো না, চলে গেল—রিকশা, সাথে ও।

সেদিনের পর থেকে, একটা প্রশ্ন কেবলই মাথায় ঘুরপাক খেতে লাগল—“কেন সে পাখিগুলো ওভাবে ছেড়ে দিল?” এমনি-এমনি নয় নিশ্চয়ই। কিংবা, নিছকই মুক্ত বিহঙ্গের প্রতি ভালোবাসা থেকেও ও পাখিগুলো ওড়ায়নি। মেয়েটি আসলে কে? ওর মনে কী আছে? ও কী ভেবে পাখি উড়িয়ে আনন্দ পায়? তবে, সে যা-ই হোক, যা-ই ভাবুক, তার চাহনি বলছিল, ওই কাজটির গভীরতা অন্য জায়গায়। চোখ কেন মিথ্যে বলবে?…….এরপর থেকে, কারণে অকারণে প্রায়ই ওই রাস্তা দিয়ে যাই, এই আশায়…..যদি মেয়েটিকে আরেকবার দেখতে পাই! নামটাও জানতে পারিনি সেদিন, আমার নামটা শুনেই রিকশায় উঠে কিছু না বলে চলে গেল। আমার নামটাতে, কী এমন ছিল জানি না, তবে, মুহূর্তেই দূরে ঠেলে দেয়ার মতো কিছু একটা ঘটে গিয়েছিলো কীভাবে যেন! ইসস্! আর কিছু না, শুধু নামটাও যদি জানতে পারতাম সেদিন! এভাবে বেশ কিছুদিন কেটে যায়। ওই রাস্তার প্রতিটি টং দোকানের সবাই আমার আপনজন হয়ে ওঠে। একটা কালো কুকুর প্রতিদিন আমাকে সঙ্গ দেয়। আমাকে দেখলেই লেজ নাড়িয়ে খুশি হয়ে ওঠে, কাছে এসে গা ঘেঁষতে থাকে আমার প্যান্টে। আমি, ওই কুকুরটার প্রতি এক ধরনের ভালোবাসা অনুভব করি। কুকুরটা আমার জন্য প্রতিদিন অপেক্ষা করে থাকে। যেদিন আমি আসি না, সেদিন ও কী করে জানি না, তবে পরদিন, আমাকে দেখলেই লাফাতে থাকে—খুশিতে, কিংবা অভিমানে। ও কী বুঝে লাফায়, কে জানে? আমি কারওরই চোখের ভাষা পড়তে পারি না এখন আর, কীভাবে যেন ভুলে গেছি। তবে, সেদিনের আগে, একটুআধটু পারতাম বলেই মনে পড়ে। একদিন ওই দোকানটায় গিয়ে মেয়েটির সম্পর্কে জানতে চাই। ওরা তেমন কিছু বলতে পারে না, তবে এইটুকু বলে, “আগামী বছর ওই মাসে আসলে দেখা পেতেও পারেন। খুব সম্ভবত, উনি ওই মাসেই আসবেন, দুই বছর হয়ে গেল, আসছেন।” তবে কত তারিখ, সেটা ওরা বলতে পারলেন না। পাখি ধরা যাদের কাজ, তাদের, পাখি ছাড়ার তারিখ মনে থাকার কথাও না। অস্থির হয়ে উঠলাম। সেদিন কয় তারিখ ছিল? সময়টা তো পৌনে চারটার দিকেই ছিল বোধহয়। ভাবতে-ভাবতে, হঠাৎ মাথায় এল, সেদিন কনকর্ড এম্পোরিয়ামের ‘মধ্যমা’ থেকে রাশেদকে ‘যদ্যপি আমার গুরু’ কিনে দিয়েছিলাম। বইয়ের প্রথম পেইজে, ‘কিছু মানুষ, নিজের প্রতিভার প্রতি নির্বিচারে অবিচার করতেই অসীম প্রতিভা নিয়ে জন্মান—রাজ্জাকও তেমনই একজন।……পড়ে দেখিস।’ লিখে ওকে দিই। নিচে তারিখ লিখে দিয়েছিলাম, মনে পড়ল। ওকে তখনই ফোন করে সেদিনের তারিখটা জেনে নিলাম। নিজেকে আর অন্যকে বই উপহার দেয়ার অভ্যেসটার জন্য আবার নতুন করে আরেকবার অসীম আনন্দ হল।

এরপর, প্রতীক্ষা করতে থাকি, দিনটির জন্য। ক্যালেন্ডারের পাতা ফুরোয়, মার্কারের কালি ফুরোয়, দিনটি আর আসে না। দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর সেই দিনটা এল। ভোরে-ভোরে গিয়ে ওই দোকান থেকে একটু দূরে দাঁড়িয়ে রইলাম। কত লোক আসে, যায়, মেয়েটা তো আসে না! একেকটা সেকেন্ডকে মনে হচ্ছিলো, আমার চাইতেও বয়সে বড়। অস্থির হয়ে উঠছিলাম বারবার, কিন্তু সেখান থেকে এক চুলও নড়লাম না—যদি ও এসে চলে যায়! হঠাৎ, ভর দুপুরের দিকে দেখি—মেয়েটি হাঁপাতে-হাঁপাতে এসে দোকানে ঢুকছে। আজ শুধু এক খাঁচা পাখি কিনল। কেন? বাকি দুই খাঁচা আর কোনওদিনও কি ও কিনবে না? নাকি, ওর সাথে আজকে অতো পয়সা নেই? দূর থেকে তাকিয়ে এসব ভাবতে-ভাবতে ওকে দেখতে থাকি। পাখি ছাড়া প্রায় শেষ হয়ে গেলে, দু’পা-ভরা জড়তা নিয়ে ভীষণ সাবধানে ওর কাছে যাই, আর অমনিই……..কেমন আছেন, নিখিলেশ? আমি মৃন্ময়ী—সেদিন বলা হয়নি।……..আমি প্রচণ্ড রকমের একটা ধাক্কা খাই। মেয়েটি যে শুধু আমাকে চিনতে পেরেছে, তা-ই নয়, সে আমার নামটা পর্যন্ত মনে রেখেছে! কীভাবে সম্ভব? মনে হল, বেঁচে থাকাটাই সুখ! আমি সবকিছু পেয়ে গেছি, এ জীবনে, আর কিছু না হলেও আমার চলবে। মুখ থেকে অনেক চেষ্টা করেও কোনও কথা বের করতে পারছিলাম না। মুহূর্তের অসীম মুগ্ধতায় নিথর হয়ে গিয়েছিলাম যেন! আমার মনের অবস্থাটা সে হয়তো বুঝতে পেরেছিল, তাই আমাকে আর কিছু জিজ্ঞেস করতে দেয়নি…….নিজেই বলে গেছে…….”আমি একজনকে নিঃস্বার্থভাবে ভালোবাসি, ওর নাম নিখিলেশ, আজ ওর জন্মদিন। ওকে অনেক কিছু দিতে ইচ্ছে করে—কিন্তু সে তা পছন্দ করে না। আসলে, গিফট্ নেয়া তো পরের কথা, সে আমাকেই পছন্দ করে কি না, তাও জানি না। ও করুক, না করুক, আমি তো করি। এতেই আমার আনন্দ। তাই, প্রতি বছর এই দিনটাতে আমি কিছু পাখিকে মুক্ত করে দিই। ওরা উড়ে চলে যায়, খুশিমনে, দেখতে ভারি ভালো লাগে আমার……” “ও আচ্ছা, তা-ই বলুন! উনি আপনার এসব শুনে কী বলেন? খুশি হন? না কি…….” “না না, এসব তো জানানোর কিছু নেই…..আমার ভালো লাগে, তাই আমি করি। আমার পাগলামি, আমার ভালোলাগা, আমার জীবন—সব কিছুই একান্তই আমার। এভাবে বেঁচে থাকতে ভালো লাগছে। এইতো! আচ্ছা আসি, কেমন? আর শুনুন, আপনি আমাকে নিয়ে আর এসব করবেন না। আমি চাই না, আপনি এমন করেন। ভালো থাকবেন।”—এইটুকু বলেই মৃন্ময়ী একটা রিকশায় উঠে যায়। আমি স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে থাকি। রিকশার টুংটাং আওয়াজ কান খাড়া করে শুনতে থাকি। সে শব্দ মিইয়ে আসে, একটা সময়, রিকশাটাও দৃষ্টিসীমার বাইরে চলে যায়, আমি পড়ে থাকি, যেখানে আমার পড়ে থাকার কথা, সেখানেই। একটা রিকশাও, কখনও-কখনও, মানুষকে বড় অসহায় করে দিতে পারে। আরও কী কী যেন মাথায় আসছিল—এখন মনে আসছে না।

মৃন্ময়ী, তার ভালোবাসার আরও অনেক কিছু বলেছিল, সবটুকু মনে নেই, এইসব কথা ছিল বোধহয়…….“আমি ওকে ভালোবাসি, এটা ও জানলেই কী, আর না জানলেই বা কী? ওর কাছে আমার ভালোবাসার খবরটা পৌঁছলে কি আমার ভালোবাসার হ্রাসবৃদ্ধি হয়ে যাবে? আমি যা করি, যা করি না—সব কিছুই ভালোবাসা থেকেই, তা ওকে জানাতেই হবে, এমন কিছুতেই নয়। আমার প্রার্থনায়, আমার অভ্যাসে, আমার ভালোলাগায়, আমার জীবনচর্যায়, আমার বিশ্বাসে—ওর প্রবল অস্তিত্ব মিশে আছে, থাকবে। ভালোবাসা ব্যাপারটা, আমার কাছে, মনের বস্তু। ভালোবাসাটা, আমার কাছে বায়বীয় কিছু নয়, আমি ইচ্ছে করলেই ভালোবাসাকে ছুঁতে পারি। ভালোবাসার সবটুকু অনুভূতি, আমি নিজের মনের কোণে যত্ন করে রাখি, পরম মমতায় লালন করি সেই চেতনা, যা আমাকে ভাবতে বাধ্য করে, আমি একা নই, আমি আর একা হবো না—এটাই আমার নিয়তি। জীবনে আর কিছু করতে পারি না পারি, ভালোবাসতে পেরেছি। ঈশ্বর নিশ্চয়ই আমাকে ভালোবাসেন, নইলে, সে ক্ষমতা আমাকে দেবেন কেন উনি? ঈশ্বরের প্রতি আমি কৃতজ্ঞ। আমার চলার পথে, ভাবনায়, নিখিলেশের অস্তিত্ব প্রকটভাবে সত্য। এই সত্যটা ভুলে বাঁচা সম্ভব নয়। ও আমাকে পায়নি, কিন্তু আমি ওকে ঠিকই পেয়ে গেছি—এই বিশ্বাসই আমাকে বাঁচিয়ে রেখেছে।” এরকম আরও কী কী যেন বলে যায় ও। আমি ভাবতে থাকি, “কেউ একজন, কখনওই আমার হবে না—এটা জেনেও সত্যিই এতটা ভালোবাসা যায়! আজ প্রতিজ্ঞা করলাম, যেকরেই হোক, যত কষ্টই হোক, যত সময়ই লাগুক, আমি নিখিলেশকে খুঁজে বের করবোই করবো। ওর সাথে কথা বলে জানবো, আসলে কী হচ্ছে, ও কেন মৃন্ময়ীকে চায় না। এমন একটা শুভ্র হৃদয়ের প্রতিও মানুষ এতোটা নিষ্ঠুর হতে পারে! আমি নিখিলেশকে বোঝাবো।” আমি চাইলে মৃন্ময়ীর কাছে নিখিলেশের ঠিকানা চাইতে পারতাম, কিন্তু কী এক অভিমানে, কিংবা ক্ষোভে, (নাকি, ঈর্ষায়?) চাইতে ইচ্ছে করল না। আমি সেদিন থেকে সেই অসহ্য, রহস্যময় নিখিলেশের খোঁজে বেরিয়ে পড়লাম। ঠিকানা নেই, ও দেখতে কেমন, তাও জানি না, কিছুই জানি না ওর সম্পর্কে, শুধু জানি—আমি ওকে খুঁজে পাবোই পাবো।

অরুণের এই খোঁজা, সাত মাস পর একদিন বন্ধ হয়ে যায়। বছরের শেষের দিকে, ওই তারিখে, মৃন্ময়ী আবার সেই দোকানে যায়। “আপনি কি মৃন্ময়ী?” “জ্বি, বলুন……কিন্তু, আপনি?” “আমি নবনীতা। অরুণের কথা আপনার মনে আছে?” “ও, হ্যাঁ…..অরুণ।” “আমি অরুণের বন্ধু……” এটা বলে, নবনীতা, মৃন্ময়ীর হাতে একটা ডায়রির কতগুলো ছেঁড়াপাতা দেয়। “সময় করতে পারলে, একটু পড়বেন, প্লিজ।” মৃন্ময়ী, নবনীতার কাছে জানতে পারে, অরুণ প্রায়ই নিখিলেশের খোঁজে বের হত, রাস্তায়-রাস্তায় পাগলের মতো ওকে খুঁজত। এভাবেই চলছিল। একদিন সন্ধ্যায়। কাকরাইলের মোড়টার কাছে। কাকে যেন দেখে, নিখিলেশ মনে করে, ওর দিকে দৌড়ে যাওয়ার সময়, রোড অ্যাক্সিডেন্টে অরুণ মারা যায়। একটা লোকাল বাস এসে ধাক্কা দিয়ে রাস্তায় ফেলে পিষে দেয় অরুণকে। হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পথেই…….নবনীতা বলে যাচ্ছিল। “আর না, প্লিজ থামুন!” মৃন্ময়ীর চোখ ভিজে ওঠে, বুক ধড়ফড় করতে থাকে। ফুঁপিয়ে-ফুঁপিয়ে কাঁদতে-কাঁদতে, সেই পাখির খাঁচার সামনে, জ্ঞান হারিয়ে রাস্তার উপর পড়ে যায়।

কয়েক দিন কাটল। কীভাবে যেন, ওর মনে নতুন একটা বিশ্বাস জন্ম নিল। অরুণ হয়তো নিখিলেশকে খুঁজে বের করে, মৃন্ময়ীর ভালোবাসার কথা তাকে বলে দেবে। মৃন্ময়ী জানতোই, নিখিলেশ ধরা দিতে শেখেনি। যতই চেষ্টা করুক না কেন, অরুণ কিছুতেই পারবেই না ওকে ধরতে। কিন্তু, সত্যি-সত্যিই, এমন একটা দিন তাকে দেখতে হবে, সে কোনওদিনই ভাবেনি। অরুণ সত্যিই নিখিলেশকে খুঁজে পেয়ে গেল! অমন ঠিকানাবিহীন ছুটেচলাও ঠিক ঠিকানায় গিয়ে থামে! যদি অরুণ সত্যি-সত্যিই সবকিছু বলে দেয় নিখিলেশকে, তখন কী হবে? অবশেষে, মৃন্ময়ী ঠিক করে, নিজের জন্য নয়, আজ অরুণের জন্যই সে নিখিলেশকে সব জানাবে। হাসিমুখে খুন হয়ে যাওয়ার যে অযাচিত উত্তরাধিকার অরুণ কেড়ে নিয়েছে মৃন্ময়ীর কাছ থেকে, সে উত্তরাধিকার, আজ মৃন্ময়ী, আবার ফিরিয়ে নেবে। নিখিলেশ, আর জিতে থাকতে পারল না। মৃন্ময়ী যা ওকে কোনওদিনই বলতে পারেনি, সেসব কথা বলবার, জানাবার সময়টা এসে গেছে…….এবং একদিন, সে সত্যিই জানায়……

তিনজন জিতে-যাওয়া মানুষ পাশাপাশি শান্তিতে ঘুমিয়ে থাকে—নিখিলেশ সমাদ্দার নিখিল। নিখিলেশ চৌধুরী অরুণ। মৃন্ময়ী গাঙ্গুলি মীরা।