তবু রয়ে যায়



আমি এখনও ওই বন্ধ নম্বরটিতে বিশেষ একটি দিনে ‘শুভ জন্মদিন’ লিখে পাঠাই এটা জেনেও, কোনও ফিরতি উত্তর আমি পাবো না। তবু পাঠাই। ওই দিনে টেক্সটটা না পাঠিয়ে সুস্থ মনে থাকা আমার পক্ষে সম্ভব নয়।


আমি এখনও ঝুমঝুমিয়ে বৃষ্টি নেমে পড়ার আগের ওই চমৎকার মুহূর্তে রিকশার একপাশে সরে বসে, সেই বিশেষ রাস্তাগুলো ধরে একাই ঘুরে বেড়াই। কী আর করার? রাস্তাগুলো তো সব কিছুরই সাক্ষী। রাস্তাগুলোই তো তবু রয়ে গেছে…।


নিরামিষ আমার অপছন্দ, তা সত্ত্বেও আমি এখনও নিরামিষ-হোটেলে গিয়ে জানালার ধার ঘেঁষে ওই চেয়ারটাতে বসেই নিরামিষ দিয়ে ভাত খাই। কেন খাই? বলব না, সব কিছু বলে ফেলতে হয় না।


এই আমিই আমার অপছন্দের বড়ো লালটিপটা পরে আয়নার সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে থাকি, কারণ কেউ একজন আমাকে লালটিপে দেখতে চাইত। আমি আমার নিজেকে সেই মানুষটির ভালোলাগার রূপে দেখবার ব্যর্থচেষ্টাটা করেই যাচ্ছি।


আমি কিন্তু এখনও হাইহিল পরি না। তার ভাষায়, আমাকে নাকি মানায় না ওতে। এখন পরলে কেউ দেখবে না, কিন্তু আমার তো রুচিই উঠে গেছে, তাই আর পরাও হবে না বাকি জীবনে!


এই খুব স্বাধীনচেতা আমিই আমার প্রচণ্ড আকাঙ্ক্ষাকে দমিয়ে রেখে দিই, এখনও বৃষ্টিতে ভিজি না, কারণ কেউ একজন ছাদে দাঁড়িয়ে আমার বৃষ্টিতে ভেজাটা পছন্দ করত না। এরকম পাগলামোর কারণ ওকে কখনও জিজ্ঞেস করিনি, যদি বোকার মতন কিছু একটা বলেই দিত মুখের উপর, সে ভয়ে!


আমার খুব পছন্দের গাঢ় শেডের লিপস্টিকটা আমি সেইদিন থেকে আর দিই না, যেদিন কেউ বলেছিল, ‘লিপস্টিকে তোমার নিচের ঠোঁটের তিলটা ঢেকে যায়।’ এরকম কথার পরে কী বলতে হয়, আমি জানি না, তাই শুধুই শুনেছি।


কেউ আমায় রবীন্দ্রনাথের নায়িকার সাজে দেখতে চেয়েছিল বলে আমি সিঁদুর পরে ছবিও তুলেছিলাম, কিন্তু কেউ দেখে ফেলবে, এ ভয়ে লুকিয়ে রেখেছি। এখনও আছে ছবিগুলো, দেখি না। যদি আবার নতুন করে সব মনে পড়ে যায়! স্মৃতিকে নিজেই টেনে টেনে কাছে আনার চাইতে বড়ো যন্ত্রণা আর নেই।


‘সেই’ ডায়েরিটা খুললেই দেখি, তার পাশে-পৃষ্ঠে, সামনে-পেছনে, দাঁড়িতে-কমাতে, কলমের কালিতে, পৃষ্ঠার প্রতিটি শব্দে শুধু সেই মানুষটির ঘ্রাণ লেগে রয়েছে। ডায়েরিটা খুলতেই বুকের ভেতরে কেমন জানি হু হু করে ওঠে।


বয়স বাড়লেও আমি পালটাইনি, জোর করেই নিজেকে আগের বয়সে বেঁধে রেখেছি। যদি সেই মানুষটি আমার পরিবর্তন মানতে না পেরে আবারও আগের বারের মতো অভিমানে চলে যায়, সে আশঙ্কায়।