তুমি-পাগল

এখনও ঘুমুচ্ছ? উঠবে না? আর ঘুমিয়ে কাটাতে নেই গো! ওঠো না!
দেখো...তোমাকে সুপ্রভাত জানাবে বলে সবাই কেমন প্রতীক্ষায় আছে!
তুমি যখন ঘুমের আড়ষ্টতা ভেঙে চোখ খুলে সকালের প্রভায়
প্রথম চোখটি রাখবে, তখন নানান সুরের সমারোহে একঝাঁক পাখির দল
তোমাকে সুপ্রভাত বলবে! ওদের সুপ্রভাত বলতে ভুলো না যেন!




তুমি যখন তার পরেই পাশ ফিরে খাটের পাশে-রাখা টেবিলে
ল্যাম্পস্ট্যান্ডটির দিকে তাকাবে, তখন চোখে পড়বে, এক মিষ্টি ঘ্রাণে,
সৌন্দর্যের পবিত্র আভায়...তোমার লেখালেখির টেবিলের ওদিকটায় রাখা
একগুচ্ছ গোলাপ তোমাকে বলছে...সুপ্রভাত! ওদেরও উত্তরটা দিয়ো মনে করে!




এরপর যখন তুমি বারান্দায় এসে দাঁড়াবে,
তখন দেখবে, এই উন্মুক্ত আকাশ, সাথে রৌদ্রের নরম আভা
তোমাকে বলছে...সুপ্রভাত! ওদের তুমি ফিরিয়ো না যেন!




এরপর যখন ঘরে ফিরে দরজার কাছে গিয়ে দাঁড়াবে,
তখন দেখবে, বার্তাবাহী একটা সবুজ খাম তোমাকে সুপ্রভাত জানাচ্ছে এই বলে...
কী গো! এখনও রেগে আছ আমার উপর?
জানোই তো আমার মাথার তার দু-একটা ছিঁড়েই আছে সেই কবে থেকে!
আমার মতো পাগলির উপর এভাবে রেগে থাকতে আছে?
তুমি না বুঝলে কে আর বুঝবে শুনি, এই পাগলিকে...হ্যাঁ?
অমন রেগে আর থাকে না গো!




তোমার এই ঠাঁই ছেড়ে যে আর কোথাও গিয়ে
এই অতি সাধারণ বিরক্তিকর পাগলিটা
একদণ্ডও স্বস্তির শ্বাস নিতে পারে না গো!
তুমি ওকে ক্ষমা না করলে আর কে করবে, বলো তো?




ও মানুষ! শোনো না...দেখো, কত রাশি রাশি লাবণ্য ডালা ভরে এনেছি তোমার জন্য!
আমার নিজের যে নেই কিছুই, তাই তো প্রকৃতির কাছ থেকেই ধার নিয়ে এলাম।
নেবে না গো? না কি রাগ দেখিয়ে আমাকে দূরেই রেখে দেবে?
ও রাগি মানুষ! শুনছ গো? এই যে, তাকাও একটু এদিকে!




এমনি করেই গতকালকের রাগ ভাঙাতে, এক নতুন মহিমায় মহীয়সী
আজকের এই প্রভাতের সুপরিচিত সেই আভাকে যেন আরও একবার
নতুন করে সৃষ্টি করার উদাত্ত আহ্বান রেখে...এই ক্ষুদ্র মানবী,
যে বড্ড তুমি-পাগল এবং এক তোমার জন্যই অকালপক্ব...
তোমাকে জানাচ্ছে...সুপ্রভাত!




ভয় নেই গো, পাগলিটিকে তোমার পালটা সুপ্রভাত না বললেও চলবে!
তাতে কোনও বিস্তর ফারাক তেমন চোখে পড়বে না!
ও আবার তোমাকে জ্বালাতে ঠিকই হাজির হয়ে যাবে, সে তুমি যা-ই বলো না কেন!




ভাবছ, কেন? ওই যে...সে যে ভীষণ তুমি-পাগল মেয়ে!
তুমিই বলো, এমন এক তুমি-পাগল মেয়েকে কি আর
তোমার কাছ থেকে আলাদা রাখা যায়!