তুমিহীন বারোদিন

 
এই বাবুই, শুনছ?
জানালার পাশে যে জারুলগাছটা,
ওটাতে নাম-না-জানা দুটো পাখি ছোট্ট একটা সংসারপেতে বসেছে। দেখেছ কাণ্ড!
খুব শিগগিরিই ওদের ঘরে তিনটা ছানাপোনা আসবে।
ভাবছ, তিনটা, জানলাম কী করে? আমার মনে হয়, তিনটাই আসবে! একদম গুনে গুনে তিনটা!
আমরা ওদের ছানাদের নাম কবে দেবো? তুমি ওদের আদর করতে আসবে না?


ছাদের নীলটবের গোলাপগাছটাতে আজকে নতুন একটা কুঁড়ি এসেছে।
ওই কুঁড়ির মুখটা দেখতে হুবহু তোমার মুখের মতো।
লালকলিটা, এই তো কিছু দিনের মধ্যেই, ফুটে টগবগে যৌবনে পা রাখবে।
তুমি ওর মুখটা ছুঁয়ে দেখবে না?


এই বাবুইসোনা! শুনতে পাচ্ছ?
আমার রুমে যে টিউবলাইটটা আছে,
ওটাতে একটা নিঃসঙ্গ মাকড়শা জাল বুনেছে।
ওর কেউ নেই বোধহয়, ঠিক আমার মতোই নিঃসঙ্গ সে।
জানো, আজকে ঘরঝাড়ু দেবার সময় ওর ঘরটা ভাঙিনি।


মনে হলো, এ জন্মে মানুষ না হয়ে হতাম যদি ওই মাকড়শাটাই,
তবে কি অমন উদ্বাস্তু হতে আমার ভালো লাগত, বলো?
তুমি ওর জালটায় চোখ ডোবাবে না?


আজ দুপুরে, বাসায় কোত্থেকে জানি একটা সাদা বেড়াল এসেছে।
মেয়েবেড়াল। বোধহয় বরের সাথে ঝগড়াটগরা করে ঘর থেকে বেরিয়ে এসেছে।
তোমার অনেক অনেক কথা ওকে বলে দিয়েছি।
তুমিও যে ঝগড়া কর, আমাকে খুব বকেও দাও…কারণে অকারণে,
আবার সুযোগ পেলেই অমনিই খুব আদর করেটরে অস্থির করে তোল, সব ওকে বলে দিয়েছি।


ওকে বোঝালাম, এরকম সংসারে টুকটাক মান-অভিমান তো হয়ই!
তাই বলে ছেড়ে আসতে হয়? এর পর,
খুব খাতিরযত্ন করে, একবাটি দুধ খাইয়ে ওকে ওর ঘরে পাঠিয়ে দিয়েছি।
তোমার ওকে দেখতে ইচ্ছে করছে না?


বাবুই, দেখছ, পৃথিবীটা কেমন চুপসে গেছে! চারিদিক কেমন নিস্তব্ধ!
জানো, তোমাকে দেখতে খুউব মন চাইছে!
পৃথিবীর অসুখটা সারবে কবে, বলো তো?
কবে আমাদের আবার দেখা হবে?
কবে তোমাকে কোনও ভাবনা ছাড়াই চুমু খেয়ে ফেলতে পারব?
কবে তোমাকে গ্লাভস না পরেই অবাধে ছুঁয়ে ফেলতে পারব?


আচ্ছা, পৃথিবীর এই অসুখ আর যদি না সারে?
এই অসুখে পড়ে আমিও যদি আকাশের তারা হয়ে যাই?
তখন কী হবে, বাবুই?
ওই পাখির ছানাদের নাম দেওয়া হবে না?
মাকড়শার জালে বন্দি নিঃসঙ্গতার প্রেমটা দেখা হবে না?
লাল গোলাপকুঁড়ির যৌবনফোটা আমরা দেখতে পাব না?
তোমাকে একবার শক্ত করে বুকে চেপে দীর্ঘসময় ধরে কাঁদা আর হবে না?


শুধুই মনে হচ্ছে,
কত দিন, কত যুগ, কত সহস্রবছর পেরিয়ে গেছে…তোমাকে দেখিনি!
গুনে গুনে গোটা বারোটা দিন চলে গেছে তোমাকে না দেখে। ভাবতে পার, বাবুই?