তৃতীয় পাথরের প্রতীক্ষায়

 ভেবেছিলে, চলে গেছি।
বড্ডো সহজে ভেবে ফেলো তুমি!
অতো সহজে চলে যাওয়া গেলে তো বেঁচেই যেতাম!
সেদিন খুব হেসেছিলে, না?
নেচেছিলে? তাথৈতাথৈ? ঘুঙুর পায়ে? উঠোনে যেমনি বৃষ্টি নাচে?
আর ফিরবো না ভেবে এতো আনন্দ তোমার?
কী করবো, বলো! খুব যন্ত্রণা হয় যে!
বিদায় বলতে ভারি কষ্ট, সৃজিত!--তুমি বুঝবে না।
আমি নেই---এ বড়ো মোলায়েম দৃশ্য তোমার চোখে, জানি।
নাকি, ভুলই ভাবছি?
আমি আছি কী নেই, এটা তোমার মাথায়ই থাকে না হয়তো!
আমি চলে গেলে জানতেই না, যেমনি জানোই না, আমি আছি।
ওই হৃদয়ে এই অস্তিত্বের জায়গাটুকুও হয় না, তা-ই তো?
 
জানো, এই যে তোমায় ভালোবাসি, সে ভালোবাসায় তোমায় লাগে না আমার।
কখনো লাগেওনি। যেদিন প্রথম ভালোবাসি, সেদিনও তুমি সামনে ছিলে না।
তুমি ছিলে না, অথচ তোমার অস্তিত্বে বেঁচে একাকী হেঁটেছি অনেকটা পথ।
পথ ফুরোয়, ফুরোই আমি--কখনো বুঝিনি।
নিঃস্বার্থ নিঃসঙ্গ নিঃশব্দ ভালোবাসায় হৃদয় ক্ষয়ে যায়।
আমি অদৃশ্যে মেতে দৃশ্য ভুলে বাঁচতে শিখে গেছি!
হারিয়ে যাবে? হারিয়ে যাবো? ভয় দেখিয়ো না, প্রিয়।
তোমায় নিয়ে তোমায় ঘিরে তুমিহীনা হয়ে বেঁচে দেখিই না মরতে কেমন লাগে?
 
আমার সবটুকু সুখ চুরি করে সুখেই আছ, না?
যা পড়বে, ইদানিং তা আর পাঠাই না; পুড়িয়ে ফেলি।
পোড়াতে কত সুখ, জানো?
যা পড়বে না জানি, তা পাঠিয়ে দিই।
যা তুমি পড়ো না, ফেলে দাও, তাও তো পুড়েই যায়!
কী দিব্যি ছাই হয়ে বাঁচতে শিখে গেছি, দেখো!
আমি কত ভালো হয়ে গেছি না, বলো?
জ্বলি, তবু জ্বালাই না। পুড়ি, তবু পোড়াই না।
অস্থির হয়ে থাকি, বোকা আঙুল কিবোর্ডে শান্তি খুঁজে ফেরে,
তবু নক করি না।
আমায় শান্ত করে পাতার পর পাতা জ্বালানি-অক্ষর, কিংবা ঘুমের বড়ি।
তোমার সময় তোমারই থেকে যায়। সময় বাঁচাতে বড়ো সুখ, তাই না সৃজিত?
সত্যিই তো! স্বার্থ যেখানে ঘর বদলায় না, সেখানে খরচের কী মানে? হোক সময়, কিংবা টাকা?
 
কতদিন তোমায় দেখি না...
অবশ্য, দেখা করাটা আজ পাগলামি ছাড়া আর কিছু নয়।
ঠিকই বলো তুমি, আমার মাথা ঠিক নেই।
সুস্থ মাথায় এমন স্বার্থ ভুলে কে তোমায় ভালোবাসত, বলো?
আসলে প্রেম-ভালোবাসা সুস্থ মানুষদের ঠিক মানায় না।
আমি তোমার খুব চেনা গল্পগুলোর একটা চরিত্র হয়েই বেঁচেছিলাম।
গল্পের শুরু, গল্পের শেষ, সবই তুমি জানতে;
শুধু স্বাদটাই জানতে না।
তোমার স্বাদের দামে একজন্মের সবটুকু সাধ বিকিয়ে বড় ভালো আছি!
আজো আমি তোমার আলোহীন গল্পের জ্বলজ্বলে নায়িকা!
 
কেউ ভালোবেসে শরীর টানে,
কেউ শরীর টেনে ভালোবাসে।
কারো ভালোবাসা মানুষে,
কারো ভালোবাসা সংখ্যায়।
কেউ চলে মনের কৈফিয়তে,
কেউ বা শরীরের।
বলো না সৃজিত,
একজন্মের সবটুকু দায় কত শরীরে মেটে?
মনকে নিখোঁজ রেখে ম্যাজিক পেনের নেশায় জীবনটা ফুরিয়েই দিলে?
যা পেয়েছ, তা হারানোর দিন সামনেই, জেনো।
একা হয়ে যেতে একটুও ভালো লাগে না, সৃজিত! বিশ্বাস কর!
এ ভয় তোমার নয়, আমার।
 
বাজে ভাবছ আমাকে?
ভাবছ, যেমনি করে পিঁপড়ে মারে পিষে,
মারবে তেমনি?
তোষামোদটা শিখে নিলে প্রিয়ই হতাম, জানি।
অমন সত্যি কে বলে, বলো? বোকারাই তো!
একদিন এই সত্যিটাই সত্য হবে। মিলিয়ে নিয়ো!
নেই-পাওয়া-সুখ মানুষগুলোর কষ্ট নাহয় মেনেই নিলাম;
তবু, অনেক সুখের মানুষগুলি যখন কাঁদে ভালোবাসার ভীষণ ফাঁদে,
মানতে তখন কেমন লাগে?
অভিশাপ দিচ্ছি না,
অভিমান করছি না,
অভিযোগ বলছি না,
নিঃশঙ্ক হওয়ার মিনতি জানাচ্ছি।
 
খুব বকছি, না, বলো?
লক্ষ্মী আমার, রাগ রেখো না।
ভালো থেকো সেইদিনটাতেও,
যেদিন তোমায় এসব বলার কেউ থাকবে না,
কেউ যে নেই, তাও যেদিন জানবে না তুমি, সেইদিন।
ভালো আছো তো?--জানতে চেয়ে উত্তর পাঠাও। বলবে, কেন?
যে মানুষটার থাকা না থাকায় কিছুই যায় না এসে,
সে নাহয় মরেই থাক।
কখনো বা বাঁচে যদি, নির্লজ্জের মতো জিজ্ঞেস করেই বসে, “কেমন আছ?” উত্তর দিয়ো না।
নিয়মরক্ষার সরবতাটুকু না-ই বা হলো! অনিয়মের নীরব রীতিই চলুক না!
 
বৃষ্টি ঝরে, বৃষ্টি থামে। উদাস মনে স্বস্তি নামে।
যার বৃষ্টি আর থামে না, তার মনটা মানবে কীসে?
কষ্ট আমার, জীবন আমার, কান্না আমার; এসব গল্প তোমায় লেখার বোনাস কষ্ট--সেও আমার!
অস্পর্শ অনুভূতি--মাতাল করে মুহূর্ততেই, কিছুই কারো যায় না এসে।
কথার রেলটা বাড়তে থাকে, কথা ফুরাবার প্রতীক্ষাতে,
রাগ জমে যায়, অভিমান এসে বেয়াড়া রেলটা থামায় হেসে।
ছোট্ট জীবন, পৃথিবী আমার ছোট্ট আরো,
গল্প দুইয়ের ফুরোয়ও যদি, কথা কি তবু ফুরোয়, বলো?
 
একটা পুতুল, দুইটা পাথর।
কয়টা বছর...
শূন্য পুতুল, তিনটা পাথর--কাটে নিরন্তর প্রতীক্ষার প্রহর।
ভালো আছি, বেশ ভালো আছি, সৃ।