তেল ফুরোয় তো ফুরোয় দাম

পাবলিক অ্যাত্তোগুলা খ্রাপ! খুব খুউব খ্রাপ!!

ইনবক্সে লিখেঃ ভাইয়া, আমাদের জেলায় একটা ক্যারিয়ার আড্ডা দেন।

কিন্তু এইটা বলে না, ভাইয়া, আমাদের জেলায় ঘুরতে আসেন।

কনভারসেশন শুরুই করে এভাবে: ভাইয়া, বিসিএস রিটেনের জন্য কী কী বই পড়ব?

ভুলেও জিজ্ঞেস করে না, ভাইয়া, আপনি কেমন আছেন?

ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাঠায় এই বলে—ভাইয়া, আমি আপনার কাছ থেকে কিছু পরামর্শ চাই, তাই আমার ফ্রেন্ড রিকোয়েস্টটা অ্যাক্সেপ্ট করলে খুশি হতাম।

আমি বলি, শুধু পরামর্শের জন্য ফ্রেন্ড হওয়ার কী দরকার? ওটা তো আমি এমনিতেই দিই।

সেদিন ‘পাত্রী চাই’ টাইপের একটা বিজ্ঞাপন (পড়ুন, স্ট্যাটাস) দিলাম। সেখানেও কমেন্ট: ভাইয়া, দিনে কত ঘণ্টা করে পড়ব? আপনার নেক্সট ক্যারিয়ার আড্ডাটা কবে? কোথায়?

আর কে নারায়ণের একটা চমৎকার গল্প আছে, Under The Banyan Tree. সেখানে এক লোক গ্রামবাসীদের গল্প শোনায়, মুগ্ধ করে রাখে। এতে ওর শুধুই ভাললাগা ছাড়া আর কোনও স্বার্থ নেই। সে গ্রামটি একেবারে প্রত্যন্ত একটি গ্রাম যেখানে গেলে মনে হবে, জায়গাটি শুধু শহর কেন, যেন একেবারে পুরো পৃথিবী থেকেই বিচ্ছিন্ন। সেখানকার একমাত্র নাগরিক সুবিধা হল, খেয়েপড়ে বেঁচেবর্তে থাকা। গ্রামবাসীরা সংখ্যায় অল্প, ওদের মন ভাল করার আশ্রয় ওই একটাই—ওই গল্পবলিয়ের গল্প।

ওই বেচারার নাম নাম্বি। কেউ কখনওই জানতেও চাইলো না, নাম্বি কেমন আছে, ঠিকমতো খেতে পায় কি না, ঘুমুতে পায় কি না। ওরও যে মন খারাপ হয়, সেটা তো কারওর মাথাতেই আসত না! শরীর ভাল না, গল্প বলতে কষ্ট হচ্ছে, সেটা কারওরই মাথায় নেই। সবাই শুধু ভাবছে, গল্প কোথায়? আমাদের গল্প চাই, গল্প! ওরা যে শুধু ওর গল্পের জন্যই ওর কাছে আসত, সারাদিনের কাজের শেষে মনটাকে একটু ফুরফুরে করার জন্য নাম্বির কথা মাথায় আনত। আর কিছুই না!

হ্যাঁ, ওরাও নাম্বির কথা একদিন ভেবেছিল, মন থেকে ফিল করেছিল, কী যেন নেই, কী যেন নেই! তখন নাম্বি আর গল্প বলতে পারে না। ঈশ্বর তার কাছ থেকে গল্প বানানোর সব ক্ষমতা কেড়ে নিয়েছেন। তখন সে যা পারত, তা হল, সবার দিকে ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থাকা আর মানুষের একটুখানি ভালোবাসা চাওয়া। অবশ্য কেউ তাকে খালি হাতে ফেরায়ওনি; দিয়েছিল; ভালোবাসা নয়, করুণা।

সে গল্পের একটা কথা আমার সবচেয়ে প্রিয় কথাগুলোর একটি: What is the use of the lamp when all the oil is gone?