ত্রয়ীরা ভালো থাকুক

ত্রয়ীর সবচাইতে কাছের বান্ধবী মুনা। মুনার বিয়ে হয় সেই অনার্স ফার্স্ট ইয়ারেই। ওরা এখন মাস্টার্সে। ত্রয়ীর এখনও বিয়ে হয়নি। মুনা এদিক দিয়ে একটু এগিয়েই আছে। ওর ছেলের বয়স ৪, নার্সারিতে পড়ে। মুনার হাজব্যান্ড অপু। অপু একটা ব্যাংকে আছে সিনিয়র অফিসার হিসেবে। খুব স্মার্ট হ্যান্ডসাম ‘জেন্টলম্যান’। মুনার সূত্রেই ত্রয়ীর সাথে অপুর পরিচয়।

মুনা হাজব্যান্ডকে অন্ধের মতো বিশ্বাস করে। ওর ধারণা, পৃথিবীতে ওর মতো ছেলে খুব কম আছে। মুনা ভার্সিটির হলে থাকে, ছেলে থাকে ওর দাদিমার সাথে, চাকরিসূত্রে অপু থাকে অন্য একটা শহরে। ত্রয়ী আর মুনা একই হলের দোতলা-তিনতলায় থাকে। মুনা অপুকে ত্রয়ীর নম্বর দেয় আর বলে রাখে, যদি কখনও ওর মোবাইল বন্ধ থাকে তবে যেন সে ত্রয়ীকে ফোন করে ওকে ফোনটা দিতে বলে। অপু ত্রয়ীকে ফোন করে। ত্রয়ী ফোনটা মুনাকে দিয়ে আসতে চাইলে বলে, “তোমার সাথে কিছু কথা ছিল, বলি। তুমি ফ্রি আছ তো?”

প্রথম প্রথম ত্রয়ী দু-এক মিনিট ফর্মাল কথাবার্তা বলে রেখে দিত। এভাবে আস্তে আস্তে এটা নিয়মিত ব্যাপার হয়ে দাঁড়াল। ত্রয়ী কথা বলতে না চাইলেও অপু ফোনে কথা বলেই যেত বলেই যেত। ত্রয়ীকে ফোন করে অপু এমন কিছু কথা বলতে চাইত, যা স্ত্রীর বান্ধবীকে বলা যায় না। ত্রয়ী বিষয়টা বুঝতে পেরে অপুর ফোন রিসিভ করা বন্ধ করে দিল। মুনাকে এইসব বললে মুনা কিছুতেই বিশ্বাস করবে না। বরং অপু মুনাকে উলটাপালটা বুঝিয়ে শুনিয়ে ত্রয়ীকে ওর চোখে খারাপ মেয়ে করে দেবে। মেয়েরা যাকে ভালোবাসে, ওর অন্যায় দিকগুলিসহই ভালোবাসে। ভালোবাসার মানুষটির অন্ধকার দিকগুলিতেও আলো খুঁজে নেওয়ার ক্ষমতা মেয়েদের অসীম। ভালোবাসার মানুষটির কাছে সব মেয়েই নির্বোধ। ত্রয়ী ভাবে, এসব বললে মাঝখান থেকে মুনার মতো একজন অসাধারণ ফ্রেন্ডকে সে হারাবে। ত্রয়ী তাই মুনাকে কিছুই বলল না।

মুনার কাছে অপুই ছিল পুরো পৃথিবী। সারাক্ষণই বান্ধবীদের সাথে অপুর গল্প করত। আর ওদিকে অপু ত্রয়ীকে অনেক অপরিচিত নম্বর থেকে ফোন করতেই থাকত। বেশিরভাগ কলই আসত রাত ১২টার পর। ত্রয়ী রিসিভ করে বুঝতে পারলে সাথে সাথেই কেটে দিত। একদিন মুনা আর ত্রয়ী ক্যাম্পাসের রাস্তায় দাঁড়িয়ে ফুচকা খাচ্ছে। ত্রয়ীর মোবাইলে অপু ফোন করে যাচ্ছেই তো যাচ্ছে। ত্রয়ী কিছুতেই রিসিভ করছে না। অপু জানে, ওরা এখন একসাথে। ত্রয়ী যে মুনাকে কিছুই বলতে পারছে না, এটাও অপু জানে। ত্রয়ীর এই অস্বস্তি আর অসহায়ত্ব অপু খুব এনজয় করে।

ত্রয়ীকে ফোনে না পেয়ে অপু মুনাকে ফোন দিয়ে কিছু কথা বলার পর বলল, “তোমার বান্ধবী আমার ফোন রিসিভ করে না কেন? ও তোমার সাথে থাকলে ওকে ফোনটা দাও, কথা বলি।” মুনা ত্রয়ীকে বলল, “কী রে, তুই তোর ভাইয়ার ফোন রিসিভ করিস না কেন? এই নে ধর, কথা বল।” বলেই ত্রয়ীকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে ওর হাতে ফোনটা ধরিয়ে দিয়ে আরেক বান্ধবীর সাথে গল্প করায় ব্যস্ত হয়ে পড়ল মুনা। ত্রয়ী সালাম দিয়ে হ্যালো বলতেই অপু বিশ্রী শব্দ করে হেসে উঠল। এরপর শুরু করল ইঙ্গিতপূর্ণ কথাবার্তা বলা। ত্রয়ী, “আপনি মুনার সাথে কথা বলুন, ভাইয়া।” বলেই মুনাকে ফোনটা ধরিয়ে দিল।

মুনা ফোনটা হাতে নিতেই অপু বলল, “তোমার বান্ধবীর সমস্যাটা কী? আমার সাথে দুর্ব্যবহার করে কেন?” মুনা ত্রয়ীকে বলল, “তুই অপুর সাথে ভালোভাবে কথা বলিস না কেন? ও তোকে অনেক ভালো হিসেবে জানে।” ত্রয়ী কিছুই বলল না। রুমে ফিরে বালিশে মুখ গুঁজে অঝোরে কাঁদতে লাগল। একটু পরেই আবার অপুর ফোন। ত্রয়ী রিসিভ করল না। ত্রয়ী বাধ্য হয়ে অপুর ৮টা নম্বর সেভ করে রেখেছে যাতে ওগুলি থেকে ফোন এলেই কেটে দিতে পারে। অপু নিত্যনতুন নম্বর থেকে ত্রয়ীকে ফোন করেই যায়, টেক্সট পাঠায়, অশ্লীল কথাবার্তা লেখে। আজেবাজে ছড়া লিখেও পাঠায়। ফেসবুকে অন্তত ৬টা আইডি থেকে আপত্তিকর ছবি পাঠায়, মেসেজ পাঠায়। ত্রয়ী একটা ব্লক করলেই আরেকটা আইডি খুলে এসব পাঠায় অপু।

ত্রয়ী কাউকে কিছুই বলতে পারছে না। অপু এসব কাজ করতে অভ্যস্ত। আরও অনেক মেয়ের সাথেই ও এসব করে থাকে। ত্রয়ী খুবই শান্ত আর ভীতু স্বভাবের মেয়ে। আর ওদিকে মুনা ওর বরকে ভালোবেসেই যাচ্ছে বেসেই যাচ্ছে। বরের জন্য সোয়েটার সেলাই করে পাঠায়, রুমালে নকশা তুলে দেয়। বর ওর শহরে এলে বরের সাথে সময় কাটাতে পাগলের মতো ছুটে যায়। অপু ওর কাছে একটা নেশার মতো। অপুকে নিয়ে পৃথিবীর যে যা-কিছুই বলুক না কেন, ও কিছুতেই তা বিশ্বাস করবে না। অপু কথার জাদুতে ওকে বশ করে রেখেছে।

ত্রয়ী, বোন আমার, শোনো। ভালোবাসার মানুষটির কাছে মেয়েরা সরল হয়, বোকা হয়। ওইটুকু পর্যন্ত ঠিক আছে। কিন্তু এই জগতে মুনারাও আছে। ওরা শুধু বোকাই হয় না, ওরা হয় গাধি! ওদেরকে চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে না দিলে ওরা কিছুই বুঝবে না, কোনওদিন বোঝেওনি। (চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিলেও পর্যন্ত কখনও কখনও বোঝে না!) বোন, তোমার কাছে অপুর নষ্টামির সব এভিডেন্স আছে না? মুনাকে ওসব কিছু দেখিয়ে ঠান্ডা-মাথায় সব কিছু খুলে বলো। প্রয়োজনে আইনের সাহায্য নাও। তোমার ইচ্ছের বিরুদ্ধে একটা বাজে লোক দিনের পর দিন যা ইচ্ছে তা-ই করে যাবে, আর তুমি চুপচাপ সহ্য করে যাবে, এতটা দুর্বল হয়ে থেকো না। মুনা তোমার সবচাইতে কাছের বান্ধবী না? ওর এই উপকারটা করো। অপুরা ভেতরে ভেতরে খুব দুর্বলচিত্তের মানুষ হয়। একবার রুখে দাঁড়িয়েই দেখো! ওই হারামজাদা পালাবার পথও পাবে না!

ত্রয়ীদের জন্য শুভকামনা।