থাকে না মানুষে কেবলই মানুষ

 
যে স্রষ্টার অসীম দয়ায়
এসেছিলে তুমি পৃথিবীমাঝে…
তাঁরই সৃষ্টির ক্ষুদ্র একটা অংশ হয়ে,
তাঁর সৃষ্টি যত, হেলায় ঠেলে খুঁজছ তুমি…স্রষ্টা কোথায়!
স্রষ্টাকে বাসতে ভালো,
তাঁর সৃষ্টিটাকেই নাও টেনে নাও!
সৃষ্টি তুমি সরিয়ে দূরে, তাঁকেই কেমন ফেলছ ঝেড়ে!
তোমার প্রতিদিনের প্রার্থনাতে
স্রষ্টা কোথায়, বোঝো আগে!
বুঝলে পরে তখন নাহয় ভক্তিভরে খোঁজো তাঁকে!


কখনও কি দেখেছ ভেবে…
এই যে পথের ধারে শুয়ে আছে ক্ষুধার ঘায়ে ক্ষতবিক্ষত মা-কুকুরটি…ওকে দেখে
যখন একটুকরো রুটি দিয়ে ওর ক্ষুধাটা তাড়াও,
তখন তুমিই সেই স্রষ্টা---
রাহমানুর রাহিম।


ভাঙাপায়ে ঢুলতে-থাকা বিষণ্ণ ওই বেড়ালটাকে মারছ ছুড়ে গাছের গুঁড়ি,
সগৌরবে ওর পিঠের নরম হাড়টা দুইটা ইঞ্চি দিচ্ছ বাঁকিয়ে,
ঠিক তখনই স্রষ্টা এসে স্বশরীরে তাকিয়েছেন তোমার দিকে
ক্রুদ্ধচোখে! তখন তুমি ঘৃণ্য---এক সাক্ষাৎ সীমার যেন!


লজ্জায় নুয়ে চাইতে-না-পারা, ওই দুটি হাত পাততে-না-জানা, ক্ষুধা গিলেই ক্ষুধা-মেটানো
হতদরিদ্র মানুষ দেখে যখন তুমি সবার চোখকে আড়াল করে খুব গোপনে
নিজের হাতটা বাড়াও তাঁর বাঁচার পথে,
তখন তুমি উঠছ হয়ে ঈশ্বরেরই আর একটা রূপ!


ধুলোয়-ধূসর ভাঙাদেহের রাস্তার ওই মাটিকাটা গরীবলোকের
তুচ্ছ ভুলের শাস্তি দিতে যখন তুমি
তার গালে দাগটা বসাও দু-চারটা প্রবল চড়ের,
পরমুহূর্তেই বেসিনে গিয়ে ধুয়ে ফেল হাত খুব আরামে,
কে বলে তবু মানুষ তোমায়? আমি তো দেখি, এক জলজ্যান্ত অসুর তুমি!


তিনচাকার ঘুরিয়ে প্যাডেল খেটে-খাওয়া শ্রমিক-লোকের শরীরটাকে
দশটা টাকা বাড়িয়ে দিয়ে
তার ক্ষুধায়-ঠাসা মলিনঘরের চাল কিনতে একটুখানি পাশে দাঁড়াও,
তখন তুমি হও ভগবান, কৃষ্ণ-যিশু!


জীবনের ভার যা-কিছু আছে, অসময়ে কাঁধে তুলে যে টোকাই-ছেলে
পুরো একটা সংসারকে বাঁধে পিঠে,
তোমার ঘরের ফেলে-দেওয়া বাজে এটা, ফালতু ওটা ভরে বস্তায়, আর
কামায় দুটাকা, ঘরে-থাকা কটা শুকনো মুখে ভেজা-ভাতটা ঠিক তুলে দেয়,
বীরদর্পে তারই পিঠে সপাং করে বসাও দুটো বেতের বাড়ি,
নাও পরখ করে নিজের অক্ষমতার শক্তিটুকুন…মাঝেমধ্যেই,
সেই তোমাকেও লোকে মানুষ বলে? জেনে রেখো তবে,
মানুষ তুমি নও কিছুতেই! তুমিই জালিম, ফেরাউন তুমি ঠিক অবিকল!


ওই পাশের উঠোনটাতে জীবনভারে খুব ন্যুব্জ যে বৃদ্ধমানুষ,
কারও দুয়ারে হাত না পেতে বিক্রয়-অযোগ্য দু-চার সবজি বিক্রিআশায়
রাতে কি দিনে ঠায় থাকেই বসে, তাঁরই কাছে ন্যায্যদামের বেশি দিয়ে
সেই পচা-বাতিল পণ্য কিনে সে বৃদ্ধলোকের জীর্ণঘরে এনেছ হাসি,
তবে জেনো নিশ্চিত, আল কারীম তুমিই---সেই দয়াময়!


স্রষ্টা কি খোদা, কোথায় খুঁজছ তাঁকে এমন ব্যাকুল হয়ে?
ঈশ্বর তুমিই, দানব তুমিই, সন্ত কি পাপী---সেও তুমিই!
ঈশ্বর বল, আর আল্লাহ্‌ই বল,
যাঁকে মহানজ্ঞানে রেখেছ হৃদয়ে,
গাঢ় বিশ্বাসে আর ভালোবাসায় মনে বেঁধেছ যাঁকে---
তুমিই তিনি, তিনিই তুমি…তোমায় ঘিরেই বসত করেন
রাব্বুল আল-আমিন!