দুই সন্ধের অনন্ত সাঁকো

ভালোলাগা মাত্রই ভালোবাসা তো নয়!
এমন কিছু মাথায় আর মননে রেখে আমার নিজের পথেই হাঁটছি…
এমন সময়, হঠাৎ দেখা তোমার সাথে! অবশ্য বলতে পারো,
দেখাটা হয়েইছিল কিছুটা পথের ভুলে!
পথভুলে তোমাকে পেলাম কোনও এক অনাকাঙ্ক্ষিত সন্ধেবেলায়।
‘অনাকাঙ্ক্ষিত’ কেন, এখন সে কথায় আসি।


সেদিন সন্ধেটিতে,
যে বিশেষ ক্ষণে, যে বিশেষ কারণে, যে বিশেষ বেশে, যে বিশেষ মানুষটির জন্যে ছিলাম আমি অপেক্ষারত,
সেই মানুষটি আর শেষ পর্যন্ত আমার অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে
আমি অবধি পৌঁছবার দুঃসাহসটি করে উঠতে পারেনি জানতে পেরে
আমি ঠিক যেই মুহূর্তে পৃথিবীটাকে অসহ্য ঠেকছে ভেবে
পালিয়ে যেতে চেয়েছিলাম বহু বহু দূরে, ঠিক তখনই…
হ্যাঁ, ঠিক সেই মুহূর্তটিতেই, এখনও সব শেষ হয়ে যায়নি…
আরও অনেকটা পথ হাঁটার এখনও যে বাকি…
এমনই কিছু কথার অস্পষ্ট এক প্রবর্তকরূপে আচমকাই
আমার সমস্ত অস্তিত্বের সামনে এসে দাঁড়িয়েছিলে তুমি!


সেইদিনের সন্ধেতে তোমায় দেখবার আগ অবধিও,
ভালোলাগাকে ভালোবাসা ভেবে ভুল না করবার শক্তি আমার আছে,
---এই সরল বিশ্বাসে আত্মবিশ্বাসটুকু বাঁচিয়ে রেখে বেঁচে ছিলাম;
আজ এই সন্ধেতে এসে তুমি সেই বিশ্বাসটুকুও ভেঙে চুরমার করে,
আমায় রিক্ত নিঃস্ব করে…এখন বোধ করি তোমার ঝাড়া হাত-পা!


কী অদ্ভুত, তাই না!
সেদিনও সন্ধে ছিল!
আর আজও, এখন সন্ধে!
তফাতটা শুধু এটুকুই, সে সন্ধেতে সব খুইয়েছি বলে কষ্ট পেয়েছি,
আর আজ সন্ধেতে সব পেয়েছি বলে হাহাকার করছি!


যে বিধ্বস্ত বিবর্ণ মানসিক অবস্থায় আমি তোমায় প্রথম দেখেছিলাম,
তখন এক অদ্ভুত আবেগে তোমায় আমার ত্রাণকর্তা বাদে
আর কিছু মনে হচ্ছিল না।
যে মুহূর্তে সুতীব্র এক বিশ্বাসঘাতকতায় আমি জর্জরিত ক্ষতবিক্ষত ছিলাম,
সে মুহূর্তে তুমি এসেছিলে আমার সমস্ত ভরসার একধরনের আক্ষরিক অনুবাদ হয়ে।
ভাবানুবাদে আমি ভীষণ কাঁচা…দুঃখ শুধু এটুকুই!


জীবনটাকে নিছক অভিশাপ বলে যখন ধরেই নিয়েছি,
তখন এক অসীম আশীর্বাদ হয়ে তুমিই তো এসেছিলে, তাই না?
…হ্যাঁ, তুমিই তো!
তুমিই তো এসেছিলে আমার ভালোলাগায়…
সম্ভবত, ভালোবাসাতেও মিশে এক হয়ে গিয়ে
আমায় সুখের ভেলায় দূরে ভাসিয়ে নিয়ে যাবে বলেই…এসেছিলে!


ভালো তো অনেককেই লাগে, তবে ভালোটা সবাইকে বাসা যায় না!
---এটাই তো ছিল তোমার সহজ ধারাপাত, কোথাও ভুল হচ্ছে কি?
ভালোলাগাকে ভালোবাসা ভেবে ভুল না করে
যাকে তুমি সত্যিই ভালোবাসো, তার কাছে নিজেকে সমর্পণ করতে বলা
সেই মানুষটি তো তুমিই, তাই না, বলো?


তবে এ তোমার কেমন ভালোবাসা গো?
আমি নাহয় ভালোলাগায় ভালোবাসা খুঁজে মরেছি, মরছি আজও,
কিন্তু তুমি নিজে এ ভালোবাসায় কী খুঁজলে? প্রয়োজনই নিছক?
তবে আমি কি তোমার শুধু প্রয়োজনই হয়ে রয়ে গেলাম?


এ কেমন ভালোবাসা তোমার?
অপ্রয়োজনের অবেহলা সহ্য করা গেলেও,
প্রয়োজনের কাছে-আসা, সেও মেনে নেওয়া যায় কি আদৌ?
এ যে চরম আত্মগ্লানি!


তবে…তোমার কাঁধে মাথা রেখে, তোমার হাতে হাতটা রেখে,
পূর্ণ ভরসায়…ভালোবাসার আকাশটাকে যখন আমি নতুন চোখে দেখেছিলাম,
তখন কি আমি ছিলাম শুধু তোমার ক্ষণিকের কোনও প্রয়োজনেই?
আমার আঁকা সব ছবিতেই যখন আমি তোমার প্রতিচ্ছবি খুঁজতে শশব্যস্ত,
তখনও আমি ছিলাম তোমার প্রয়োজনেই শুধু?
এ তোমার কেমনতর ভালোবাসা গো, বলো না, প্রিয়?


আমায় দেওয়া তোমার সময়খানিতে যখন আমি
হারিয়ে নিজেকে তোমায় ছুঁতে ভীষণ ব্যাকুল,
তখনও কি আমি তোমার প্রয়োজনেই ছিলাম শুধু?


তোমার দেওয়া অধিকারে, তোমায় নিয়ে স্বপ্ন সাজিয়ে
দূরে কোথাও হারিয়ে যেতে যখন আমি তোমায় পেলাম,
তখনও,…তখনও কি ছিলাম আমি তোমার শুধুই প্রয়োজনে?


আমি কি তোমার প্রয়োজনেই শুধু প্রয়োজন হয়ে রয়ে গেলাম তবে?
এ তোমার কেমন ভালোবাসা…বলো না গো?
এ-ই বুঝি তোমার ভালোবাসার নিজস্ব রূপ,
যাকে তুমি প্রয়োজনের ভালোবাসার পরিয়েছ পোশাক?
না কি এ নিছক অপ্রয়োজনীয় ভালোলাগা শুধুই?
এ ঠিক কোনটা গো…বলে দাও না!


আজ যে আমার চৈতন্যের ঘরে এলোমেলো সবই!
এ প্রয়োজনের ভালোবাসা, না কি অপ্রয়োজনীয় ভালোলাগা?
না কি এ অত কিছু নয়, কেবলই ফাঁকি?