ধন্দে-দ্বন্দ্বে

 কোনো একদিন, এক প্রহরে, জানবে না কেউ
হচ্ছেটা কী।
এমন আমি থাকবো নাকো,
হয়ে যাবো অন্য আমি,
তেমন যেমন নইকো এখন,
যেমন তুমি চেয়েছিলে,
হইনি বলে অভিমানে কিংবা রাগে,
ঠেলে দূরে বলেছিলে,
“আছ যেমন, তেমনি থাক,
আমিও থাকি আছি যেমন।
দূরটা থাকুক, দূরেই রাখ!”
হব যখন তোমার মতন,
মনটা তোমার ডাকবে এমন, সত্যি তখন?
 
সব চেনারা অবাক হয়ে নীরব চোখে
বলবে মেপে দ্বিধায় কেঁপে,
“এই তুমি ভাই কোন সে তুমি?
কীসের ছলে যাদুর বলে এমন হলে?”
সব অচেনা বলবে হেসে,
“এমনি এসে আপন দেশে
থাকতে ভেসে সুরের খেয়ায়
পাশে বসো মিশো মায়ায়।
কতদিনের পড়শি ওগো,
ছিলে কোথায়? সরো কাছে, হিয়ায় জাগো।”
ওই অচেনায়, সংশয়ে হায়, অধীর হব।
শপথটুকু ভাঙবো যখন,
হারবে এ পথ হেলায় তখন,
নতুন পথে নতুন রথে, হোক হলে ভুল, স্বত্ব দেবো।
তেমন হলে, হই যেমনই যেটুক যতো, তোমায় ভেবে মানিয়ে নেবো।
অনুভূতি সব বিদেয় হবে,
মায়ার ছায়ায় বাঁধবো না আর,
এই নিজেকে। ভালোবাসার জায়গা কোথায়,
উপহাসে বাঁকা ঠোঁটের, বুঝবে কায়ায়।
 
রেখো জেনে,
ওই আকাশে রাখবো না চোখ আর কখনো,
খুঁজবো নাতো সেই অধরা,
খুঁজলে যাকে খুঁজতে আমায় আগের তুমি।
নীরবতায় পাতবো না কান
নৈঃশব্দ্যকে বিদেয় দেবো
সুরটা এলে এই প্রাণেতে
খুঁজলে হৃদয় সাত কুঠুরি
কোথায় আছে বাঁচার তুড়ি,
দিলেম কথা, দরোজা মনের রাখবো বেঁধে কুলুপ সেঁধে।
 
যা কিছুকে ঘৃণায় সেচে রইছি বেঁচে,
সেসবকিছু আসবে কাছে,
নেবো টেনে বুকের মাঝে।
থাকবে নাতো আর ঘৃণাটা
আগের মতো। বাঁচবো তখন কাঁটার ঘায়ে
ভালোকিছু, ভালোবাসার, মনে রাখার, সাথে থাকার--
সবকিছুকেই প্রবল রোষে ঠেলবো পায়ে।
ভালোবাসার রঙটা মেখে, আগের মতো
আসবো না আর। কাঁদবো না আর যখন দেখি,
ভালোবাসার ঢঙটা মেকি। বললে বরং, “ভালোবাসি”,
বলবো হেসে, “বেশতো এবার ভোগ হয়ে যাক
দেহের প্রসাদ। এইতো নগদ, এইতো আসল!”
উঠলে উঠুক বিপুল কাঁপুক মনের প্রাসাদ,
বাড়ে বাড়ুক হাওয়া ঝড়ো,
বাড়তে দেবো ওই প্রাসাদেই, হোক না যতোই নড়োবড়ো!
 
যে পথেতে পা রাখিনি এই কখনো
ভুলেও মনের যাইনি ভুলে সরতে যে পথ,
দিচ্ছি কথা, সাক্ষী এ চোখ,
সে পথেতেই গড়বো বসত।
বকবে বিবেক, হাসবে ক্রূর চোখের কোণায়।
সবই জানি, স্বার্থ তবু টানবে আমায়
ছুটবো দেখো, ঘোড়ার মতো,
নাচবে ওরা মাথায় তুলে বুদ্ধি ভুলে,
এখন যারা হেলায় দোলে, পায়ে ঠেলে।
দারুণ কী যে!--বলবে সবাই,
করবো যখন ভালো ওদের
দায় ও দেনার বেশ হিসেবে,
রাখতে কথা বসবো ভুলে
সব অভিমান পালাবে হেসে
হালকা গায়ে উঠবো ভেসে
কাঁদুক যতো মানুষ অতো
জ্বলুক ওরা, মরে মরুক,
হাসবো আমি নিজের সুখে
চোখটা বেঁধে; পাছে সে চোখ অন্য কারো কষ্ট দেখে।
 
থাকবো ভালো সবার মতো
মিথ্যে ইগোর উড়বে ফানুস
মিলবে হাওয়ায় পুড়বে বেহুঁশ।
আমি তবু থাকবো অমন
নিজের ঘরে নিজের সাথে নিজের সুখে।
অন্যজনের অন্যঘরে দুঃখ থাকুক--ছোঁবো নাতো!
মিথ্যে বুনে মিথ্যে গড়ে
সত্য ঢেকে মিথ্যে জুড়ে,
যাবো জিতে। হোক ক্ষণিকের,
সে জয় নেবো বুকের মাঝে,
হাসবো দারুণ, নাচবো নেশায়।
আমার বোধে, মোহের ফাঁদে,
লুকায় লুকাক বিবেক লাজে,
আমার কাজে। কী যায় আসে!
 
শ্রদ্ধা খ্যাতি আর আদরে,
ভালোবাসে হৃদয় দিয়ে, রাখে মাথায়,
এমনি যারা আমায় বাঁধে যত্ন করে,
তাচ্ছিল্যেতে আসবো সরে, দেবো বিদায়।
হাসলে আমি, হাসবে জগত,
এইতো নিয়ম! ওসব মানুষ
থাকলে থাকুক, নাই বা থাকুক,
সত্যি হলো, কী এসে যায়?
বাসবো ভালো, ঠিক ততোটাই,
বাসবে ভালো যতোটা আমায়।
ভাঙলে ভাঙুক গড়ার আগেই,
গড়বো আবার, যেমনি গড়ে
পুতুল মাটির, নানান ছাঁচে নানান ধাঁচে,
নানান ঝোঁকে নানান ফাঁকে।
কদর যুগের পুতুলপ্রেমের,
ভালোবাসার শরীর ধূলের,
মানুষ হয়ে কী দাম পাবো?
মজতে প্রেমে, তোমার হেমে,
সব হারিয়ে পুতুল হব।
রঙিন হাতের সব ইশারায়,
দেবো সাড়া। মিলবে শরীর মনটা রেখে,
মাতবো খেলায় ওই অবেলায় ধূর্ত চোখে।
এসব দেখে, বিশ্রী রেগে, বোলো না যেন,
“এই তুমি’টা এমন কেন?
এই তোমাকে চাইনি আমি!
শরীর ফিকে, মনটা দামি,
পুরোনো তুমি আবার জাগো।
এই এবেলা...ভাগো ভাগো!”
 
ভাবছো নাকি, কখন আমি অমন হব?
তেমন মুখোশ পরবো কখন?
কখন আমি তুমি হয়ে ভুলবো আমায়? তেমনি রবো?
একটু রোসো, হাওয়ায় বোসো, কী হয় দেখো!
ভাবছো কেন, সবই ফাঁকি?
এখন আমি যেমন আছি,
তেমন করে থাকবো কেন,
যখন তুমি চাইছো নাকো?
দিচ্ছি কথা, বদলে যাবো,
একেবারেই, তোমার মতো,
যেমনটা চাও।
বলো শুধু,
তখন তুমি বদলে হঠাৎ
ভীষণ ক্রোধে,
আমায় বেঁধে,
ফেললে ছুঁড়ে,
ওই সে দূরে,
জীবন যদি
হারায় ধূধূ?
হারাবো আমি আমায় যখন,
কী নিয়ে আর বাঁচবো তখন?