ধূসর হবার ঠিক আগে

 
আমরা আজও শিখতে শিখিনি।
আমাদের ঘাড়ে মৃত্যু নিঃশ্বাস ফেলছে ঘন ঘন।
তবু আমরা নিজেকে বুঝিয়ে চলেছি, আমাদের কিছু হবে না।


আমরা অনেক জানি ও বুঝি।
আমাদের জানার মধ্যে গলদ থাকতে পারে,
তা জানতে আমরা অভ্যস্ত নই।
আমাদের বোঝার দৌড়ও আমাদের ভাবনা অবধি।


আমাদের পাড়ার চায়ের দোকান ও প্রার্থনালয় খোলা আছে।
সেখানে নতুন বিপদ নিয়ে আলোচনা হচ্ছে।
আপনিও আসুন, আমন্ত্রণ রইল।
আমরা সমৃদ্ধ হচ্ছি। সমৃদ্ধ হতে চাইলে এখুনিই এসে পড়ুন!
ওসব শিশুতোষ পরিসংখ্যানের জুজু আমাদের দেখাতে আসবেন না।


আমাদের আদালত খোলা---বোধের নয়, আইনের।
আমাদের অফিস চলছে---বাণিজ্য বড় জরুরি জিনিস হে!
আরে ভায়া, মানুষ বিপন্ন হলেই তো বরং ব্যবসা ভালো হয়!
ব্যবসাটা মাত্রই ভালো হতে শুরু করেছে, এর অর্থই হলো,
দেশ এগোচ্ছে, আমরা খুশি। আমাদের হাতে সময় নেই!
আমাদের দৃষ্টি তুচ্ছ মৃত্যুর দিকে নয়, জিডিপির দিকে।


আমাদের স্কুল ছুটি হলে আমরা পিকনিকে যাই।
বিপন্ন হলেও এই নিয়মের ব্যত্যয় হয় না।
আমরা জাতিগতভাবেই নিয়মনিষ্ঠ, তদুপরি আচারনিষ্ঠ।
তাই আমাদের উপর ঈশ্বরের বিশেষ আশীর্বাদ আছে।
অনুগ্রহ করে বেশি কথা আমাদের বলতে আসবেন না।


আমরা মরতে ভয় পাই না।
আমরা বাঁচতে ভয় পেতে পেতে…অনেক আগে থেকেই
ক্লান্ত হয়ে বসে আছি। অতএব,
আমাদের এই মামুলি ভাইরাসের ভয় দেখিয়ে কোনও লাভ নেই।


আমরা ভীষণ ব্যস্ত হয়ে আছি।
গোমূত্র পান করলে ভাইরাস মরে, না কি
এর জন্যে স্বপ্নেপ্রাপ্ত থানকুনিপাতাই লাগবে,
এটা বুঝতে না পেরে আমরা কখনও কখনও দ্বিধান্বিত,
কখনওবা, বুঝেছি বলেই যুদ্ধং দেহি অবয়বে সহাস্য আবির্ভূত।


ভাইরাস ঠেকাতে মাস্ক হলেও চলবে, না কি মাক্সই লাগবে,
তা নিখুঁতভাবে জানার স্বার্থে আমাদের দুইএকটা প্রাণ ঝরে যায়।
প্রাণ যায় তো যাক, তবু সঠিকটাই তো জানতে হবে, তাই না?
নইলে ভাইরাসটা ঠেকাব কী করে?
মহোদয়, আমরা আজন্মই জ্ঞানপিপাসু কিনা, তাই…!
তা ছাড়া, ওরকম দুইএকটা প্রাণ হাপিস হয়ে গেলেও কী এসে যায়!
মানে, বলছিলাম কী, আমাদের দিকে একটু তাকিয়ে দেখুন না, সব বুঝে যাবেন!


জটলা পাকানো বারণ! এই বার্তাটি
আমরা সকলের কাছে পৌঁছে দিচ্ছি জটলা পাকিয়েই!
জটলা না পাকালে যে কোনও কিছুই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে না এখানে!
আমাদের কাছে মানুষের চাইতে মানুষের সমর্থন বড়।
জীবনের চাইতে জীবিকা একটু বেশিই দড়!


আমরা সত্যিই ভয় পাচ্ছি না।
আমাদের সাথে ঈশ্বর আছেন।
আমাদের সাথে এমন কিছু মানুষও আছেন,
যাঁদের সাথে ঈশ্বরের প্রায়ই কথা হয়।
আপনাদের আদৌ ছিল কি এমন কিছু?


আমরা শৃঙ্খলিত হতে শিখিনি।
আমরা মাথাটা নত করতে অভ্যস্ত নই।
আমাদের জন্মই হয়েছে মৃত্যু দরোজায় চলে আসার আগ মুহূর্ত পর্যন্ত
দরোজাটা খোলা রাখার জন্যে।
দোহাই লাগে, আমাদের বিরক্ত করতে আসবেন না!...আজকের আড্ডাটা মাত্রই জমল বলে!


আমরা ভালো আছি।
আমরা মৃত্যু না আসা পর্যন্ত হাসিমুখে অপেক্ষা করতে থাকব।
আমরা দেখতে চাই, কে বড়---মৃত্যু? না কি বিশ্বাস?