নিভৃত লুকোচুরি

 
মাঠে ফুল, চারণভূমিতে বৃষ্টি,
শস্যে উষ্ণতা,
মহিলাদের হৃদয়ে পুরনো প্রেম,
বাচ্চাদের মনে মায়েরা কিংবা খেলনাগুলি।
এসবের কিছুই আর আমায় টানে না……রাতটা বড্ড কালো, এবং অপরিচিত।


ফেরাউনের সমাধির দিকে গেলে
তারা আমাকে একবার খুঁজে পাবে।
না, ভুল হল। তাদের আমাকে খুঁজে বের করতে হবে।
মরুভূমিতে চাঁদনি রাত তৈরি হবে।


আমার দুটি নখ, আমার আঙুলগুলি
বালি থেকে উঠছে, দেখবেন।
নিজের ভেতরটাকে ভাঙুন, বালু খুঁড়ে দেখুন
এবং সন্ধান করুন:
আমার হৃদয়,
আমার সম্পদ,
আমার গোপন যা কিছু আছে।


ওরা আমার সাথে গান গায়, এবং ওরাই আমাকে,
কাঁপতেকাঁপতে, রৌদ্রের গালিচায় উটের পিঠে
চিরকালের জন্য অনন্ত সমাধির দিকে নিয়ে যায়।
সেখানে আর কাউকেই আমি কখনো দেখিনি।


এবড়োথেবড়ো ভূমিতে, কোদাল দিয়ে,
আমি শরতের উঠোন খুঁজি, অবোধ্য সব চিহ্ন আঁকি।
সন্ধ্যায় কাঁপুনি ওঠে, শীত এসে যাবে বুঝি!
এসব দেখে মনে আসে, আমি বোধহয় খুঁড়তে শিখে গেছি।
আমার গভীরতা যতো বাড়ছে, রাতের গভীরতা ততো কমছে।


আকৃতি সম্পর্কে আমরা যা জানি কিংবা আমাদের যা জানানো হয়েছে,
তার অনেকটুকুই ভ্রান্ত।
সমস্ত চিহ্ন এবং ব্যবহারবিধির বাইরেও
কিছু অদৃশ্য, অথচ অবিনশ্বর আত্মা
লুকিয়ে থাকে। নির্দয় এবং অনিবার্য
সত্যগুলি অন্ধকারে বাঁচতেবাঁচতে
ক্লান্ত হয়ে, একসময়
নদীর তলদেশে গড়িয়ে পড়ে।


আপনি বাড়ি দেখলে বলে বসেন,
এর চারটি দেয়াল রয়েছে।
এবং এটি সত্য নয়।
আপনি চুলের গঠন জেনেছেন, চুলকে জানেননি।
আপনি ফুলকে মোলায়েম বলেন,
কিন্তু তা ঠিক নয়।
আপনি মহিলাকে বলেন---
নারীশ্বর, ওখানেও ভুল।


আমি সন্ধের পর তাদের নাম রাখতে চাই। নতুন নাম।
তাদের অনিরাপদ কথাগুলি আমার কাছে পৌঁছেছে,
তাদের অদৃশ্য সৈন্যবাহিনি আমাকে জড়িয়ে ধরে কেঁদেছে বহু বহুবার!
এবং, তারা আমার মায়ের নিরাপদ কোলটার মতো গোপন কোনো আশ্রয়,
সাথে কিছুটা প্রশ্রয় খুঁজছে।


আমি নিয়তি লিখছি।
আমি ইস্পাতনির্মিত উল্লম্ব রড চিরে
পালকের গায়ে দুঃস্বপ্ন খোদাই করি।
আমি বালিকার কপালের টিপটি তুলে রাতের কালোরসে ডুবিয়ে ফেলি।
আমি বরফের মাঠে, অন্ধ নীহারিকার দেয়ালে ভাগ্য লিখি।


দেখলাম, আমার শক্ত, জেদী আবেগগুলি
নিথর হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।
ফেরেশতার দীর্ঘ প্রলাপ আর
কাঁপুনিপ্রসূত সংগীত শুনে
নিরক্ষীয় অঞ্চলে খুঁটি ধরে সাহসী লোকটি কাঁদছে।