নিরাশ্রয় রক্তাপ্লুত হাতে

  
 ভালোবাসা ঠিক কোন রাস্তা ধরে গেছে,
 বলতে পারো? যাও, খুঁজে আনো তুমি এখুনিই তাকে!
 পৃথিবীর কোন সে পথে হারিয়েছে সে?
 সে যদি আজ সত্যিই যায় মরে কোনও অভিমানে,
 বাঁচব তবে এই জীবনের পরের জীবনে।
  
 এ জীবন তবে থাকুক পড়ে এই ব্যর্থ-রথেই,
 ভালোবাসা কী, জানা তা নেই কি আজও?
 ভালোবাসা---সে যে এক জীবনখোঁড়া কেঁচো!
 এরই মাঝে কিনা তুমি সস্তার হিসেব খোঁজো!
 এবার ব্যস্ততা ঠেলে একটু জীবন বোঝো!
  
 সারাবেলার ক্লান্তি মাড়িয়ে সন্ধে হলেই,
 জ্বালিয়ে প্রদীপ কাঁপে বিদঘুটে এক শান্তি আজও!
 কাকভেজা দুপুরটা গড়ালে পরে নিংড়ে আকাশ
 নাহয় ঘোলাটে মেঘেই জীবনে সেজো!
  
 আরে ভায়া, হিসেব বোঝো, হিসেব?
 হিসেব যে বোঝে, তাকে বাঁচতেই হয় নির্ঘুম রাত,
 গুনে গুনে পুরো যৌবনকাল হিসেবেই মেপে,
 হিসেবি মানুষ খোঁজে যত্নে আধপেটা এক নিভৃতআলো।
 পেয়েছ যেটুক, আর যতটা হাত ফসকে চলেই গেল,
 অতটাই তবে হিসেবে রাখো, সবটাই তার গিলেই ফেলো!
  
 ভালোবাসা মেপেই দিলো আজ পুরনো অভাব,
 হয় অভাবই স্বভাব, ওটুক জানাও মহা মহাপাপ!
 মাথা খুঁড়ে খুঁজে ফেরো দিনময় আলো শুধু আলো,
 আমার একূল গেল, ওকূল…হারালো সে-ও,
 আর তুমি কিনা বলো, এই বোঝাপড়া ভালো!
  
 ব্যাকুল হৃদয়ে কীসের অত আহাজারি করো!
 ভালোবাসি-টা সজোরে বলে দেখি তো কেবলই হিসেবে মরো,
 তোমাদের যেমন এখন সকাল হয়,
 তেমনি আমার গভীর রাতের ভয়।
 মুঠোয় পুরে আবেগ রাখি ধরে,
 ভালোবাসা, তাকে এসেছি যে ফেলে সপ্তাশেষের আড়ে।
  
 চোখলজ্জার আশ্রয়ে যেটুক ধরি চোখেরই কোণে,
 যে আমায় ব্যথা দিয়ে যায়, আহত করে,---
 আমার এ বুক তো পোড়াই আছে দারুণ দহনে,
 তার আসল যে খোঁজ,---সে আদৌ কতটা গোনে?
 তবু সান্ত্বনা যে সাধো দুকড়ির ফুলটা শুধুই সেধে,
 তা দেখে আমার ক্লান্ত-শরীরে উঠছে কেবলই ভয়,
 হায়, সে জানে না প্রতীতি, সে জানে না প্রণয়!
  
 যেতে দাও, আমায় দাও ফুরাতে নিস্তব্ধ এ রাতের সাথে,
 শুকনো পাতার মতোই মিলিয়ে যাব আমিও, দেখো!
 নক্ষত্রের আলিঙ্গনে হয়ে যাব ক্ষয়, ফিরব না পিছুটানে!
 ভীতু রাত্রি কেঁপে যায় আজ পোড়া-সূর্যের বিগত তাপে,
 দিগন্তেই শেষ হয়ে যায় অচেনা ছায়া কোনও গভীর রাতে।
  
 পৌষ কিবা শরৎ, সবই তো আসে,
 তবু এক শঙ্কা বুঝেই পার হয় রাত,
 ভাবি, এই বুঝি বসন্ত ফুরায় এ অবেলায়!
  
 এই মনের গহন, তার পিছু নেবো আজ ইচ্ছেমতন,
 হাঁটতে হাঁটতে ফুরোবে এ পথ শুধুই প্রেমের সাথে।
 দেখা হবে দিনের সাথে, নিবিড় রাতের মিলনক্ষণে,
 কথা হবে শিমুলতলায় শুক্লপক্ষের মগ্ন-রণে,
 ব্যথা যা-কিছু, সুধোবে শুধুই তারার মায়ায়,
 জীবন বন্দি একজীবনের আলো-ছায়ায়।
  
 আমার সকল আখর ফুরোলে পরে
 তুমি এসো! এসে নিয়ে যেয়ো ভরে ভরে সাজি।
 সত্য কেবল ততটুকই ঠিক, মেখে যতটুক প্রলয় বাঁচে,
 এমনি করেই তবু বেঁচে আছি আজি।