নির্বাসিত যে আয়ু রয় অনিমিখ

 
মাত্র একটুকরো জীবন নিয়ে এখানে এসে
তার মাঝেও…
ছোট্ট করে আর একটুকরো জীবন পেলাম!
সে জীবনের নামটা ‘তুমি’।
সাথে একচিলতে আয়ু এনে
থেমে ছিলেম অন্ধগলির ব্যর্থমোড়ে।
তুমি এলে, আলো জ্বালালে। সেই আলোর পথটা ধরে
এখানেই হাঁটার পথটি পেলাম।
তখন তোমার হাতটি ধরে শুরু হলো
নতুন আর এক পথের চলা! এমন চলা হয়নি আগে কখনও চলা!


যে কুৎসিত রাতটা গেছে বীভৎস সব মুহূর্ততে,
এ জীবনে তুমি এসে সরালে তা-ও…ভালোবাসা-প্রেমে।
আর ভরিয়ে দিলে এঘর আমার আলোয় আলোয়!
তাই বুঝি আজ ভয়টা ভীষণ…
এই আলোটা হঠাৎ যখন জ্বলে নিভুনিভু,
দূর থেকে ওই ধেয়ে-আসা কোনও দমকা হাওয়ায় নিভে যেতে চায়,
মনে হয়, এবার বুঝি শেষ হলো সবই! বুঝি
সেই পুরনো ঘনআঁধারেই থাকবে পড়ে এই অশ্বত্থ…আগের মতো!


যখন বিকট ছায়া আঁধার ঘনায় এই উঠোনে,
শান্ততীরে আঘাত করে বেপরোয়া ঢেউ অবিশ্রান্ত, তখন ভাবি,
এবার বুঝি ভেঙেই গেল কুঁড়েঘরটাও!
আমার বিশাল তীরে রইবে পড়ে টুকরো টুকরো খড়ের চিহ্ন!
ভাবলে এসব কত কত ভয় এসে যায়, ভাবতে পার?


কিছু বোঝার আগেই আচমকাতে এসব আসে কোথা থেকে?
বলাকওয়া নেই, কোত্থেকে যেন একটুকরো মেঘ জমে যায়!
সাজানো যা-কিছু, এলোমেলো করে, ভেঙে দিতে চায়…বুক কাঁপিয়ে!
বুকের ভেতর পুরনো সে ব্যথা---সে ব্যথাই মৃত্যু যেন!


এরা কোথায় থাকে?
এত কেন লোভ ছোট্ট এই ঘরের উপর!
একটা বাঁশের মাচা, জানালাটা তার ঠুনকো খুবই, আর শুধু তুমি---
ঘর তো ওটুক! ওটুকই তো বিত্ত আমার!


কেমন হুট্‌ করেই ঝড়টা আসে, বুকটা তখন কাঁপতে থাকে!
কী করি আমি, কোথায় যে যাই, বিত্তটুকু লুকাই কোথায়!
কাকে গিয়ে বলি…কতটা যে আমি শেষ হয়ে যাই!
যে বুঝতে পারে এমন ক্ষতি, এক সে-ই তো বোঝে,
পেয়েও সবই হারিয়েফেলা---সে যে কাঁদায়, পোড়ায় আমৃত্যুই!


কী করে যে সামলাই বলো একা একাই এই ঢেউয়ের বাহার!
ঢেউয়ের এমন তীব্র-প্রকট রূপটা দেখে মন কেঁপে যায়!
তখন শূন্যতীরেই অশ্রু বাঁধি, নিয়তি সাধি!
এখন কোথা থেকে যে শুরু করি, হায়?
কোথা থেকেই-বা হালটা ধরি?
আমি সত্যিই জানি, আমার শুধুই ভুল হয়ে যায়!
নিজেও পুড়ি, সাথে তোমাকেও পোড়াই…অনিচ্ছাতেও!


জায়গা আমার আর কোথায় আছে, তুমিই বলো?
আমি কোথায় যাব? ঠাঁইটা আমার কার কাছে আর?
এত ক্ষমা চাই, আর্তি জানাই…যখন আমার ভুল হয়ে যায়,
তখনও কেন হাতটা অমন শিকেয় তোল?
সীমানা তোমার যেখানটাতে, সেখানে তবে নেই কি আমি?
আমার কি আর ছাদ ছুঁতে নেই তোমার ঘরের?


জানো তো সবই…আমি কেমন ভুলের মানুষ!
তবে দাও না কেন খুব বকুনি?
বকলে বকো, তবু চুপ থেকো না, কিছু তো বলো!
নিজেকে কেন মৌনে বাঁধো অমন করে?
আমারও তো কিছু বলার থাকে!


আরও চাই, আমার চাই যে আরও!
আমি অনেকটা চাই, অনেক অনেক মর্জি আমার---
মানছি সবই! তবু সব ভুলে যাই, সঁপি নিজেকে তোমার কাছে,
উঠোনে তোমার ঠিকই ধরি মেলে নিজেকে,
…এসব কেন দেখো না দেখেও?


নাহয় দাও বকুনি ইচ্ছেমতোই মনে যা আসে!
বলেছিলে না, একদিন সময় করে বকে দেবে খুব?
সেদিন বকার পরে ভুলগুলিও ধরিয়ে দেবে?
বলেইছি তো, আমায় তোমার যা ইচ্ছে, যেমন খুশি,
তেমনই কোরো! গুনে গুনে একশোবারই কানটা ধরাও,
তবুও দিয়ো দিনের শেষে ওই বুকে ঠাঁই!
কেবল এইটুকই তো এসেছি চেয়ে!


যদি কেবলই পাই তোমাকে নিজের করে, নিজের ঘরে, নিজের স্বরে,
যখন যেটুক যা পেয়েছি এ জীবনে, সবটুকু তার ছেড়ে দিতে রাজি!
একজীবনে তোমায় পেলে, পূর্ণতাটা পাওয়া হয়ে যায় খুব সহজেই!
এই জীবনে পাইনি যেটুক, তার দায়টা শুধরে নেব তোমায় পেলে!
বাক্সভরা ভুলগুলি সব, তোমায় পেলে, এক এক করে ভুলেই যাব!