পরাজয়ের সুখ

 তুমি পলাশফুল চেন?
দৈত্যের মতো একটা গাছ, ফুলগুলো ফোটে গাছের মাথার ঠিক ওপরে।
আঙুলে দাঁড়িয়েও হাত বাড়িয়ে ছোঁয়ার কোনও উপায়ই নেই!
তাকে ধরতে গেলে ওই মাথার ওপরে উঠেই ছিনিয়ে আনতে হয়!
আর ঘ্রাণ? সে তো একাই সমস্ত বাতাস গায়ে মেখে ছিটিয়ে পড়ে বাতাসেরই বেশে!
ধীরেধীরে নিজের অস্তিত্ব প্রকাশ করে, আর ফুরোবার সময় এলে,
ভোরের শিশির লুটোবার আগে, আবছা আলোর স্রোতে
চুপচাপ বিছিয়ে থাকে যেন নকশিকাঁথা সেজে।
থাকবে ওভাবে আমার জীবনের পলাশফুলটি হয়ে?
মাথার ওপর একটা রাজসিংহাসন পেতে দেব।
নাহয় ওখানেই বোসো, আর রাজ্য কোরো জয়…যেমন খুশি!
 
ছোটোবেলায় খুব পলাশফুল কুড়োতাম, জানো?
আজও কেন জানি ওই একটা ফুলকেই…
‘রাজফুল’ নামে ডাকি!
দেবে, যদি পার?
কোনও বিশেষ দিনে একঝুড়ি বাসন্তী রঙের পলাশফুল…এনে দেবে?
আচ্ছা, পলাশ কি শুধু বসন্তেই ফোটে?
তা হলে তো মিলেই গেল…
আমার জীবনে ‘তুমি’ মানেই তো পুরো একটা বসন্তকাল!
তুমি এলে ভালোবাসার সুখ এসে যেন ঝাপটা দিয়ে ভিজিয়ে যায়!
 
ভেবে বলো তো, ভালোবাসার একটা দোকান দিলে কেমন হয়?
আবার বলে যেন বোসো না, তোমার মাথায় যতসব উদ্ভট ভাবনার আবাদ!
আমার চাই তো এমনই একটা দোকান…ধরো, তারপর
রঙবেরঙের ভালোবাসার পসরা সাজিয়ে আমি তোমার দোরে দুম্‌ করে বসে পড়লাম…
আর অমনিই, যখন যে রঙ খুশি…তুমি চেয়ে-চেয়ে নিচ্ছ!
ভালো হবে না, বলো? কী যে এক দুর্ভিক্ষ চলছে রঙিন ভালোবাসার!
 
প্রতিদিনই কী একটা দুশ্চিন্তায় পড়ে যাই…
আজ কী রঙের ভালোবাসা দিই তোমাকে!
শেফালিফুল তো চেন নিশ্চয়ই?
গাছের ডালে লেপটে রাতভর মাতাল সুবাস বিলিয়ে ফুরিয়ে যাবার আগে
গায়ে ভোরের শিশির মেখে টুকটুক করে কিশোরীর কোমল শরীরের মতো
কী নিশ্চিন্তে মাটির বুকে ঘুমিয়ে থাকে…দেখেছ তাকে?
কী অপূর্ব সে রূপ! মাটির গা-ঘেঁষে
তখনও সে কী ভারি মিষ্টি সে ফুল!
কী অপাপবিদ্ধ শুভ্রসাদা শরীর নিয়ে
পরাজয়ের আনন্দে মাটির বুকেই আছড়ে পড়ে!
ভাবছ, পরাজয়ের আবার আনন্দ কীসের!
ভালোবাসার পরাজয়…সে যে বিজিতের বেশে সত্যিকারের জয়!
যারা ভালোবেসে হারতে শেখেনি, তারা যে বোঝেনি এখনও ভালোবাসাটাই!
 
আমায় দেবে এক টুকরো জায়গা তোমার বুকে?
ওই উদাত্ত জমিতে নির্ভাবনায় নিরুদ্বেগে আছড়ে পড়ার শখ যে আমার বহু বহুদিনের…
আজকে নাহয় টুকটুকে এক রাঙাজবা হয়েই এসো? আসবে, বলো?
পাঁচ-পাঁচটি বিশাল পাপড়ি…সেখানেই সে শরীর এলায়…কী পূর্ণ…কী শুদ্ধ সে রূপ!
সে পূর্ণতা আর শুদ্ধতা যে শুধু তোমারই বেলায় মানায়, প্রিয়!
ভালোবাসা কি পারে না তবে ফুলের মতন কোমল হতে?
সে কি শুধু কাঁটায়ই বাঁধে সমস্ত ক্ষণ? পরাজিত হয়ে মরতেই শুধু জন্মেছে সে?
ভালোবাসা---সে যে বদলায় রূপ, তবু রূপ বদলে ভালোবাসাই থেকে যায় শেষ অবধি!
 
আসলে কী, জানো? সত্যি তোমাকে সরিয়ে ফেলা খুব দরকার!
আমার অবাধ্য পড়ার টেবিলটা…সেখান থেকে তোমাকে সরিয়ে
অন্য কোথাও রাখতেই হবে, এ ছাড়া আর উপায় নেই যে কোনও!
আমার বিছানার পাশে বসে থাকো ঠায়…তাকিয়েই থাকো অবিচল চোখে, তাতে ক্ষতি নেই…
সে-ই বরং উল্টো ভালো!
সারারাতই নাহয় জ্বালিয়ে মেরো, তবু দিনটায় তো একটুখানি বিশ্রাম পাই!
তা না হলে লিখতে বসলেই বলে বসবে, জলদি করো! আমি বসে আছি তো!
লিখছ কী এত, বলে ফেলো দ্রুত!
তারচে’ বরং এ-ই যে ভালো…তুমি বিছানার পাশে মাথার কাছে বসে থাকো চুপটি করে।
 
আচ্ছা, ওরা আমার দিকে অমন করে তাকায় কেন?
ওরা কি জানেই না এখনও, আমি শুধুই তোমার?
ওরা যখন আমার কাছে ভালোবাসার গল্প শোনাতে চায়,
আমার তখন ইচ্ছে হয়, একধাক্কায় ওদের দিই সরিয়ে অনেক দূরে!
কে দিয়েছে ওদের এতটা সাহস…আমার দিকে তাকিয়ে থাকবার…অমন করে?
তুমি ওদের বকে দাও না কেন? ভালোবাস যাকে, বুঝি তার জন্যও বকতে শেখোনি?
তুমি না একটা বোকা খুব…যা-তা ঘটাও…এখনও কেন কিচ্ছু বোঝ না!