পিলসুজে হৃদের বাতি

 তুমি কাছে এলে আকাশ ভাল লাগে,
তুমি কাছে এলে মনটা আমার জাগে,
তুমি কাছে এলে বাঘের নখেও
নির্দ্বিধাতে শরীর বিছিয়ে বলতে পারি--দিব্যি সুখে আছি!
তুমি কাছে এলে বারেবারে আমি বেঁচে উঠি যেন অবিশ্বাসে!
 
অভ্যুত্থানের হে দেবতা আমার!
আমায় পুনর্জন্ম দিয়েছ তুমি। ধন্যবাদ!
জেনে রেখো, বড় ভালোবাসি,
প্রার্থনার শান্তির মত
আমাতে এনেছ তুমি
স্বর্গের অমরত্ব!
আমার মরণে হেনেছ তুমি নব জীবনের গান,
যুদ্ধে এনেছ প্রেম,
শ্রান্তিতে সুখ আর স্বস্তি।
 
অভিবাদন, প্রিয়তম!
যে অমরাবতী রচেছ তুমি,
হৃদয়ে আমার মমতারাশি আর ভালোবাসা ঘিরে বেঁচেছ শতক,
অমৃতে তারই ন্যায্যতা তোমার,
সত্যের মত শাশ্বত সে শপথটুকু ভুলিনি আজও।
এ তো জানি ভালোবাসার চেয়ে বড়!
ওরা তো বেঁধেছে কেবলই ডোরে,
আর তুমি দিয়েছ মুক্তি--
আমার প্রেমাতুর মনটিরে।
 
বাড়িয়ে দিয়ো হাতটি তোমার--
আমার চোখের নিচে,
আমার গালের কাছে,
আঁজল ভরে দুঃখ ছুঁয়ে,
অবেলায় নিয়ো বুঝে--
হৃদয় গভীরে কেমন ব্যথায়
শরবিদ্ধ বিহগের মত আছি বেঁচে এই শহরে।
ধূসর দেয়ালে লেগেছে নতুন রঙ--হঠাৎ আজই! কেন তবে? বোঝো কিছু?
সভ্যতার নিপুণ মুখোশে ঢাকা সে কংকাল আমার হারিয়েছে কবেই,
কেঁদেছে আর ব্যাকুল সেধেছে কত বহুবার--
হে মরণ! হে মরণ!
 
যতো বঞ্চনা আছে--ক্ষয়ে যাক সব,
আমার রক্তে বেড়েছে যতো ক্রমেই অত্যাচার,
সেসবকিছু মুছে যাক আজি লুব্ধ স্মৃতির মতন,
এ ঘর কিংবা ওই পরবাস,
কী আছে আমার!
কে আছে, বলো!
কম্পিত হাত, আরক্ত চোখ,
শোষিত চিত্ত, হৃত বিত্ত,
মরম বেদনা, দুঃসহ ক্রন্দন--
সবাই মিলে ক্ষুব্ধ নাগের মত--বিষে জ্বলে, বিষে ঢলে, বিষে গলে।
 
বিষ চাই, বিষ!
অমৃতের পিপাসায় ওই দেবতারা হোক ধন্যি,
লাঞ্ছনা যতো বিষ ঢেলে দেয়, সেটুক বোঝাই করে
এ আকাশ-বাতাস পড়ে থাক আজ মুখ থুবড়ে।
ঠিকানা আমার ভুল করে যায় ভুল দরোজায়,
চেনা পথটাকে অচেনা করে দুঃখে আমি হাসি
পথের আঁধারে শুনি এক নাম, বুনি এক নাম--সে নাম মরণ!
তবু দেখো, বেঁচে আমি রই বটবৃক্ষের মত,
অমর হওয়ার লোভটুকু নেই, জেনো!
শুধু তোমায় দেখবো বলেই--এই এতকিছু!
তুমি চলে এসো, প্লিজ, তুমি চলে এসো...
বাড়িয়ে দিয়ো তোমার হাত...আমার চোখের নিচে...
 
আমার কবিতা--তুমিই তো তা!
যখন অকারণে চোখের কোণে শিশির ঝরে বিষণ্ণতায়,
ওরা দেখে; বলে, কান্না ওটা। বলে, কাঁদছি আমি।
তুমি তো জানেো, এ আমার প্রেম, এ আমার মন।
আমি তো চাইনি, ভাদরের জলের মতন দুকূল আমার ভরুক,
অস্বচ্ছ আর অচেতন সুখ--সেতো আমি চাইনি কখনও।
যে অমৃত চিত্তে ভরলে আমায়--নিজেরে পুড়ে,
সে ঋণ আমি শুধব কীসে?
 
ভেবেছিলেম, ওদের মতই,
আমিও যাবো নীল যমুনায়,
বড় সাধ মনে, সুখ যদি আসে শরীরে ডুবে!
ওগো প্রিয়, শোনো, পারিনি আমি! আমার পাঁজরে তোমার বসতি, আমার অধরে তোমার সুখস্মৃতি!
ভূলোকে-আকাশে, শিরাতে-রুধিরে,
কেউ নেই আর, তুমিই আছো!
দেবতা আমার রইল পড়ে, চোখে আসে ভেসে সেই চিলেকোঠা,
দেয়ালে লুকানো কিছু গান-স্মৃতি,
তোমার রক্ত, শরীর, মাংস--
হলই নাহয় অন্য কারও,
আমি তো জানি, তোমার তুমিকে কেউ পাবে না, তোমার তুমি যে শুধুই আমার!
 
তোমারে চেয়েছে কে--
শরীর, কি মন?
কে তুমি আমার হে--
প্রেম, কি রণ?
যদি ভালোবাসি তোমারেই তবে
পুরনো সে আঁখি কেন ভেসে যায়?
তোমায় ছুঁয়ে কেন এত জ্বালা?
এতকিছু পরে কেন মন হাসে?
 
কারে বাসি ভালো,
কারে ঠেলি দূরে,
বাজায় কে বীণা,
কে তোলে সুর--
অবুঝের মত শুধু শুনে যাই...
অনুভূতিটুকু নেই বুকে বাকি, তবু শুনে যাই।
এ নয় প্রেম, ভালোবাসা শুধু--ডুবতে সুখে,
এ কেবলই ভাসা অথৈ সাগরে--মনভরা দুঃখে!
 
ঈশানের মেঘের মতন উড়িয়ে আঁচল তোমায় ভালোবাসি,
প্রতীক্ষাতে তাই নিই কুড়িয়ে উপেক্ষা আর অপেক্ষা যতো,
নয়নের ত্বরায় ঝরা বৃষ্টিবাদলে।
চকিত ওই চপল হাসি বড় ভালোবাসি,
ঊষার লালের মতন তোমার ঠোঁটে--
ঘনিষ্ঠ তন্নিষ্ঠ স্বপ্ন, কিংবা দূর পরবাস--
খুব ভালোবাসি!
তোমাকেই ভালোবাসি বহুবহু রূপে, বহুবহু ভাবে,
যতো দূরে যাই, ততো ফিরে আসি!