পুরনো দোকানের খণ্ডপসরা/ তিন

 
এ কি বাংলাদেশ?
-----------------------


এখানে গড়ে উঠেছে দালান-কোঠা আর মহাঅট্টালিকা,
আর ওখানে মুখথুবড়ে পড়ে আছে বস্তি,
যেখানকার মানুষের দুঃখের নেইকো শেষ।
এ কি বাংলাদেশ?
এখানে ধনীরা মহাসুখে ফিরনি-পোলাও খাচ্ছে,
আর ওদিকে গরীবরা অনাহারে দিনাতিপাত করছে,
এ কি বাংলাদেশ?
এ কি আমার সোনালি স্বপ্নের দেশ?
এখানে অট্টালিকায় মোরা মহাসুখে থাকছি,
আর ওখানে কারিগরেরা কোনও রকমে
কষ্টেসৃষ্টে কুঁড়েঘরে থাকছে,
এ কি বাংলাদেশ?
এ কি ছিল মুক্তিযুদ্ধের স্বপ্ন?
আমরা এদিকে হাল ফ্যাশনের পোশাক
পরে ঘোরাফেরা করছি,
আর দর্জিরা ওদিকে ছেঁড়া গেঞ্জি আর লুঙ্গি পরে হাঁটছে।
এ কি বাংলাদেশ?
এ কি সমাধিকার?
আমরা এদিকে আরামে ভাত, মাছ-মাংস খাচ্ছি,
আর কৃষকরা ওদিকে অনাহারে বা অর্ধাহারে থাকছে।
এ কি বাংলাদেশ?
এ কি স্বপ্নের বাস্তবায়ন?
আমরা এদিকে মজা করে ‘ফিস কাটলেট’ খাচ্ছি,
আর ওদিকে জেলেরা ডাল-ভাত খেয়ে
কোনও রকমে দিন কাটাচ্ছে।
এ কি বাংলাদেশ?
এ কি ন্যায়বিচার?
আমরা কি পারি না আমরা দেশকে সমৃদ্ধিশালী করতে?
আমরা কি পারি না ধনী-গরীব নির্বিশেষে
সকলকে সমাধিকার দিতে?


…………………………………………
৪ সেপ্টেম্বর ১৯৯৭


একটি চোরের আত্মকথা
-------------------------------


(যদিও সব চোরের মন-মানসিকতা ঠিক এরকম নয়।)


আমারও আছে সুখ-দুঃখ, বেদনা।
কারণ আছে, কেন আমি হলাম এরকম ঘৃণ্যতর,
আমারও ইতিহাস আছে,
শোনে না কেউ, কারণ আমি চোর।
যখন আমার দুঃখের ছিল না শেষ,
আমার ছোট ভাইটি ছিল ক্ষুধাতুর,
কেউ দেয়নি দু’মুঠো ভাত, করেনি কেউ সাহায্য।
কেউ শোনে না, কারণ আমি চোর।
আমিও ছিলাম একদিন সেরা ছাত্র,
আমারও আশা ছিল,
স্বপ্ন ছিল, একদিন হব বড়।
কেউ শোনে না, কারণ আমি চোর।
আমিও বলতে চাই, বলতে চাই আমি,
কেমন করে ওই ভদ্রবেশি রক্তচোষা জোঁকগুলি
কেড়ে নিয়েছিল আমাদের সব কিছু, বাড়ি-ঘর।
কেউ শোনে না, কারণ আমি চোর।
আমিও চাই ভদ্র পোশাকধারী
ওই রক্তচোষা জোঁকগুলিকে চিনিয়ে দিতে।
আমিও বলতে চাই, “ধর, ওদের ধর!”
কেউ শোনে না, কারণ আমি চোর।
আমিও চাই দেশের শত্রুদের
বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে।
যারা দেশের অর্থনীতিকে ভেঙে ফেলছে মড়মড়।
কেউ শোনে না, কারণ আমি চোর।
আমি তো সাধারণ চোর,
আমি তো ওসব ভদ্রবেশীদের মতো পুকুরচুরি করছি না,
তবুও তারা কেন বেঁচে যায়,
যারা দিচ্ছে ভেঙে শ্রমিকদের সবল কর?
কেউ শোনে না কারণ আমি চোর।
আমিও চাই সুন্দর হয়ে সৎপথে চলতে,
যদি পাই একটু সাহায্য।
আমিও চাই এদেশকে দেখতে
সুখে-শান্তিতে, সম্পদে ভরপুর।
কেউ শোনে না, কারণ আমি চোর।


……………………………………………………………
৭ সেপ্টেম্বর ১৯৯৭


সুন্দরে অসুন্দর
------------------------------


একদিন বিকেলে বসেছিলাম এক মহীরুহের ছায়ায়,
যে বিটপীর নাম ছিল বট।
এমন সময় বন্ধু কল্লোল এসে বলল,
“চল যাই ঘুরে আসি পারাবার-তট।”
বন্ধুর অনুরোধে রক্ষার্থে
গেলাম সৈকতে অনিচ্ছা সত্ত্বেও।
কিন্তু সেখানে গিয়ে পুলকিত হলো আমার মন,
ফিরে পেলাম যেন নতুন উদ্যম,
পশ্চিমাকাশে তপনের রক্তিম আভা
কতই না মনোরম।
গাংচিল, বক, আরও নাম-না-জানা কত বিহঙ্গম
আসছিল ফিরে নীড়ে।
নীলাকাশ যেন শ্বেত হয়ে গেছে
শত বিহগের ভিড়ে।
সুশান্ত বাতাস, নীলাম্বুর গর্জন…
করলাম কিছুক্ষণ স্বচক্ষে অবলোকন।
ওখানে গেলে আর স্পৃহা জাগে না ফিরতে।
যেন অলৌকিক শক্তিতে নির্মল হবে
নিতান্তই অরূপের মন।
এমন সময় বন্ধু কল্লোল বলল, “দাঁড়া,
একটু ঊর্মির কাছ হতে ঘুরে আসি,
মনটা বেশি করছে ঘুরঘুর।”
বললাম আমি, “যা,
তবে যাসনে বেশি দূর।”
সে গেল, এক ঘণ্টা কেটে গেল,
তখনও ওর পাইনি কোনও খবর।
ওদিকে ক্রমেই সন্ধ্যা আসছে ঘনিয়ে
ডুবুডুবু প্রায় দিবাকর।
ভাবলাম আমি, “আসছে না কেন সে?
ওদিকে যে যাচ্ছে আদিত্য অস্তাচল!”
কী যেন এক অজানা আশংকায়
উঠল ভরে আমার মন।
ঊর্ধ্বশ্বাসে ছুটে গেলাম আমি,
সর্বশক্তি দিয়ে।
গিয়ে দেখি, কল্লোল কল্লোলে যাচ্ছে ভেসে,
যাচ্ছে না কেউ সাহায্য করতে এগিয়ে।
এ অর্ণবের পুলিনে কত লোক আসে,
কত দ্বিজ গায় গান,
আর সেই রত্নাকর নিষ্ঠুর তস্কর সেজে
ছিনিয়ে নিল আমার সুহৃদের প্রাণ।
আমি ও কল্লোল ছিলাম দুটি দেহ,
তবুও অভিন্ন ছিল মোদের হৃদয়।
লোকান্তরিত হয়ে ও দেখিয়ে গেল,
সুন্দরও কত বিভীষিকাময়!
এ সুন্দরও মানুষকে করতে পারে কতটা শোকবিহ্বল!
সব কিছুতেই লুকিয়ে আছে নিষ্ঠুরতা
কোনও না কোনওখানে!
এ নির্মম, বাস্তব সত্যটি জেনে গেলাম
সবিতার বিদায়কালে, সখার মহাপ্রস্থানে।


(আমাদের মধ্যে অহংকার আসার কারণ এই যে, আমরা যে কত কম জানি, তা আমরা নিজেরাই জানি না।)


……………………………………………………
৮ সেপ্টেম্বর ১৯৯৭


বর্ষা
-----------------


গ্রীষ্ম ঘুরে বর্ষা এল,
মেঘ ডাকছে গুড়গুড়,
মাঠেঘাটে চলছে জলের খেলা,
অথই জলে ভরপুর।
নদীগুলো ভরপুর বৃষ্টির জলে,
কিশোর ডিঙ্গি বায়,
মাটি ভিজে হয় স্যাঁতস্যাঁতে কাদামাটি,
সবাই ধুপধাপ আছাড় খায়।
বরিষা ক্ষেতে বরিষা ধরে,
কাশবনে ফুটে কাশ,
প্রকৃতি যেন নবরূপে সাজে,
তৈরি হয় কত রবীন্দ্রনাথ আর জীবনান্দ দাশ।
টুপুরটাপুর বৃষ্টি পড়ে,
ধানক্ষেতে জন্মে ধান,
বিছানায় শুয়ে বৃষ্টি দেখতে
আনন্দে ভরে উঠে প্রাণ।
কারও কারও কাছে আনন্দ তুমি,
কারও কাছে ভয়,
কাকগুলো ছোটাছুটি করে এদিকওদিক,
খোঁজে একটু আশ্রয়।
ছোটদের কাছে আনন্দ তুমি,
স্কুলে যেতে হয় না,
ছাতা ফেলে দিয়ে তাই বলে ওরা
“একটু ভিজি, আয় না!”
মাঝে মাঝে তুমি নিষ্ঠুর অতি,
সৃষ্টি কর বন্যা।
তখন ঘর-বাড়িহারা মানুষের
যেন শেষ হয় না কান্না।
বর্ষা, তুমি সুন্দর অতি,
প্রকৃতিতে করো মনোরম,
তোমার বদৌলতেই ফলে কত শস্য
ধান-পাট-আখ আর গম।


…………………………………………………
১০ সেপ্টেম্বর ১৯৯৭


সেই পাখিটি
------------------------


একদিন ভোরে বসেছিলাম জানালার ধারে,
চেয়ে ছিলাম একদৃষ্টিতে আকাশ পানে,
চারিদিকে পাখির কলরব, সুমধুর বাতাস,
যেন তারা অভিবাদন জানাচ্ছে নতুন দিনকে
সুমধুর গানে।
এমন সময় একটি হলুদ পাখি
এসে বসল জানালার উপর।
বলল আমায়, “কেমন আছ?”
জানালো আমায়, “সুপ্রভাত!”
সে পাখিটির চোখে মায়া ছিল,
ছিল কল্পপুরীর ছায়া,
সে পাখিটির কণ্ঠে যেন যাদু ছিল,
ছিল মন-ভোলানো মায়া।
পাখিটি আসতো প্রতিদিন ভোরে,
ভাঙাত আমার ঘুম,
ঘুম থেকে জেগে প্রথমে আমি
তার মুখ দেখতুম।
সে পাখিটি আসে না এখন,
জাগায় না এখন প্রভাতে।
জানিনে সে কোথায় এখন,
হয়তো-বা নিঃশেষ হয়ে গেছে
কোনও শিকারির নিষ্ঠুর হাতে।
হয়তো-বা অনাহারে গেছে মরে
পরিবেশের নিষ্ঠুরতায়।
হয়তো-বা যায়নি মরে,
বেঁচে আছে কোনও লোহার খাঁচায়।
আমি তাকে ভুলতে পারি না এখনও
শত কাজের ভিড়ে,
সে পাখিটির মধুর স্মৃতি
আজও আমাকে তাড়া করে ফিরে।


(পৃথিবীতে মানুষ যত বাড়ছে, সত্যিকার অর্থে মানুষ তত কমছে।)


………………………………………………………
২৬ সেপ্টেম্বর ১৯৯৭


A Talented Boy
-------------------------


Once I found a boy
In a fair.
I went near him
With a great desire.
I was really surprised
To see the boy’s talent,
He was writing a beautiful
Poem named, “A memorable moment.”
I cried out in joy
“What a talented you are!
Are you Wordsworth or Shakespeare!”
“I am a poor orphan boy.”
He replied.
“I have none in this world,
My parents are sleeping in the ground.”
I said to him, “Where do you live?
Where do you pass your days?”
He said, “I live nearby, in an orphanage.”
I helped him with some money
And said “I hope you will be a great poet
In course of time.”
The boy said nothing but smiled.
I returned home,
And sat under the fan,
And thought myself, “Can we not help them,
As much as we can?”


(Teacher: What three words do students use most?
Student: I don’t know.
Teacher: That’s correct.)


কী হবে
------------------------


কী হবে ফুলের মতো ফুটে
আবার পাতার মত ঝরে গিয়ে?
কী হবে ঘৃণ্য হয়ে
ওই নিকৃষ্ট মাংসস্তূপটাকে বাঁচিয়ে রেখে?
কী হবে ওই রঙিন মুখে
শত রঙয়ের ঢং দেখিয়ে?
কী হবে ওই ছার দেহে
দামি দামি পোশাক জড়িয়ে?
কী হবে নিজের ছবি ওই
সোনালি ফ্রেমে বাঁধিয়ে রেখে?
কী হবে অন্যের মুখ হতে
নিজের প্রশংসা আর গুণকীর্তন কুড়িয়ে?
কী হবে সুপ্ত থেকে লুপ্ত হয়ে
নিজেকে গৃহকোণে বন্দি রেখে,
যদি না পার জ্ঞানী হতে,
অন্যের মাঝে আলো বিলোতে?
কী হবে কুকর্ম করে
মানুষের কাছে স্মরণীয় হয়ে,
যদি না পার শ্রদ্ধা অর্জিতে
না পার যদি বরণীয় হতে?
কী হবে সোনার হরিণের পিছনে ছুটে
বৃথাই সময় নষ্ট করে?
কী হবে আসল হরিণ না পেয়ে
সম্পদের পাহাড় খুঁজে মরে?
কোনও লাভ নেই এ রঙ্গমঞ্চে
ক্ষনিকের জন্য রঙ্গ দেখিয়ে,
যদি না পার, চিরভাস্কর হতে
মানুষের ওই হৃদয় ফ্রেমে।


(অতিরিক্ত হাসি অনেক সময় শুভ্রতার প্রতীক না হয়ে পাগলামির প্রতীকও হতে পারে।)


………………………………
২ অক্টোবর ১৯৯৭


তুমি সুন্দর
------------------------


তুমি বিষটির পরে রোদের মতো সুন্দর,
তুমি শরতের শুভ্র নীলিমার মতো সুন্দর,
তুমি ফসল হাতে কিষাণের হাসির মতো সুন্দর,
তুমি স্বাধীনতা, আমার প্রাণপ্রিয় স্বাধীনতা।
তুমি সমুদ্রের হিংস্র ঢেউয়ের মতো সুন্দর,
তুমি কালবৈশাখী ঝড়ের মতো সুন্দর,
তুমি বিজলিকন্যার হাসির মতো সুন্দর,
তুমি স্বাধীনতা, আমার প্রাণপ্রিয় স্বাধীনতা।
তুমি নিষ্পাপ শিশুর হাসির মতো সুন্দর,
তুমি ঘোমটার ফাঁকে বধূর হাসির মতো সুন্দর,
তুমি স্বাধীনতা, আমার প্রাণপ্রিয় স্বাধীনতা।
তুমি মাতৃক্রোড়ে শিশুর হাসির মতো সুন্দর,
তুমি মুক্ত বিহঙ্গের ডানামেলে ওড়ার মতো সুন্দর,
তুমি পাখির নীড়ে ফেরার প্রশান্তির মতো সুন্দর,
তুমি স্বাধীনতা, আমার প্রাণপ্রিয় স্বাধীনতা।
তুমি শিল্পীর তুলিতে আঁকা ছবির মতো সুন্দর,
তুমি কবির দু’লাইন কবিতার মতো সুন্দর,
তুমি চাষার দু’ফোটা ঘামের মতো সুন্দর,
তুমি স্বাধীনতা, আমার প্রাণপ্রিয় স্বাধীনতা।
তুমি মায়ের বুকে ছেলের ফেরার মতো সুন্দর,
তুমি প্রেয়সীর গোলাপি ঠোঁটের হাসির মতো সুন্দর,
তুমি বিজয়ের পতাকা হাতে নবীনের মতো সুন্দর,
তুমি স্বাধীনতা, আমার প্রাণপ্রিয় স্বাধীনতা।
তুমি ভাইয়ে ভাইয়ে মিলনের মালার মতো সুন্দর,
তুমি বাড়িয়ে দেওয়া সহযোগিতার হাতের মতো সুন্দর,
তুমি পরকে আপন করার সুখের মত সুন্দর,
তুমি স্বাধীনতা, আমার প্রাণপ্রিয় স্বাধীনতা।


………………………………………………
২২ এপ্রিল ১৯৯৮


শ্রদ্ধাঞ্জলি
--------------------


সমরেন্দ্র স্যারের প্রতি---
আজি এ ধরাতলে ঋতুর মহোৎসব,
বসন্তের লীলানৃত্যে ভীত কুহেলি প্রকোপ।
হৃদয়াবেগের এই ক্রীড়ার সঙ্গী যেন তবু বেদনার বীণা,
পেয়ে হারানোর ব্যথা, এই হয়তো ছিল পাওনা।
তমসা হতে আনিলে আলোকে, সৃজিলে হিরন্ময় দ্যুতি,
তাই এই বিচ্ছেদে যেন শুনি প্রয়াণের আহূতি।
অত্যুজ্জ্বল ধ্রুবতারাসম যেন তব প্রজ্ঞা,
মিটিয়েছে তাই দিয়ে মোর অসীম জ্ঞানতৃষ্ণা।


হে যোহরা, জ্ঞানের সিন্ধুকর্দমে বাড়িয়েছ মোর ঋণের ভাগীরথী, অরুণতি হিয়ার যেন সকরুণ আর্তিতে বিমলিন হয়েছে তিথি।
ঠেকায়ে মাথা তোমার পায়ে আর মাগি এই ভিক্ষা গো----
দাও চরণের পুণ্যধূলি---নাও হৃদয়ের পুষ্পার্ঘ্য।


...............................................................
২৫ ফেব্রুয়ারি ২০০০