পুরুষদের নিয়ে দু-চার কথা


এক। জমিজমা আর টাকাপয়সা সংক্রান্ত ব্যাপারে পুরুষদের মধ্যে বিবাদ একটা চোখে পড়ার মতন বিষয়। এমন বিবাদ অনেক পুরুষের কাছেই নেশার মতন একটা ব্যাপার। এক্ষেত্রে ভাই ভাইকেও ছাড় দেয় না। মাঝেমধ্যে মনে হয়, জমিজমা থাকার চেয়ে না থাকাটাই বেশি শান্তির, এক্ষেত্রে অন্তত নিজের আপন মানুষকে তো চোখের সামনে পর হতে দেখা লাগে না! তার চাইতে বড়ো কথা, এই জমিজমা নিয়ে দুনিয়ার অশান্তি ও ঝামেলা ভোগ করতে হয় যাকে, সে প্রায়ই জমিজমার সুফল ভোগই করতে পারে না, ভোগ করে তার বংশধর বা অন্যরা। অথচ এই যে দুশ্চিন্তা, তার কারণে অসুস্থ হয়ে অনেকে মারা পর্যন্ত যায়!


দুই। একজন ছেলেকে বলা হয় বংশের বাতি, সেই বাতি, যা আপনি দেখতে পাবেন মৃত্যুর পরে! নিজের সাথেই নিজের এই হিপোক্রিসির কোনও মানে হয়? মরে যাবার পরে বাতি দিয়ে কী ঘোড়ার ডিমটা হবে? এমনও পরিবার দেখি, যেখানে ছেলেসন্তানদের ‘বাতি’ বানানোর নামে আশকারা দিয়ে দিয়ে এমনই কুসন্তান বানানো হয় যে একটু গায়েগতরে শক্ত হবার পর সেই ‘বাতি’ই বাবা-মা-বোনদের লাথি মেরে ঘর থেকে বের করে দেয়। তখন আবার বংশের অ-বাতি মেয়ের কাছে ছুটতে হয়! বংশের বাতি হিসেবে ছেলেকে প্রাধান্য দেবেন, ভালো কথা, সেটা আপনার ইচ্ছা, কিন্তু সে যখন লাথিটা মারবে, তখন যেন তার নালিশ নিয়ে আসবেন না যেন। দুনিয়ার মানুষের অত সময় নাই, ভাই, আপনার পারিবারিক সমস্যার সমাধান করার। তার চেয়ে বরং তাকে বংশ আলোকিত করার কথা শেখাবার আগে নিজের মন, মস্তিষ্ক আর মেধাকে আলোকিত করার শিক্ষাটা দেবেন। ভাগ্য সুপ্রসন্ন হলে, আপনার বংশ কেন, এমনও হতে পারে, আপনার সমগ্র জেলা বা দেশটাতেই সে আলো জ্বেলে সবার সামনে নিয়ে আসবে। এই কথাটা আপনার মেয়েসন্তানের বেলাতেও একইভাবে প্রযোজ্য। মূলকথা হচ্ছে, আলো যার হাতে থাকবে, সে-ই পথকে আলোকিত করবে, সে নারীই কি আর পুরুষই কি, তাতে কিছুই এসে যায় না।


তিন। আমাদের সমাজের অনেকের কাছেই পুরুষ শব্দটির সমার্থক হচ্ছে টাকা। অনেক পরিবারের চোখেই, পরিবারের রোজগেরে পুরুষটি হচ্ছে টাকা কামানোর একটা মেশিন। তাদের কাছে সেই পুরুষই পুরুষ, যার কাছে অঢেল টাকা আছে, হোক সেই টাকা ঘুষের কিংবা অন্য কোনও অবৈধ রাস্তায় উপার্জন-করা। আপনি কি শিওর যে এটাকেই পৌরুষ বলে? তাহলে বিনয়ের সাথে বলছি, আপনার জানায় ভুল আছে। তবে এখানে আরেকটা কথা বলা প্রয়োজন। অনেক পুরুষই পরিবার বা আত্মীয়দের চাপে অথবা ভালোবাসার মানুষকে তার স্বল্প আয়ে খুশি করতে পারে না বিধায় বাধ্য হয়ে অবৈধ রাস্তায় পা ফেলে, যাদের খবর আমরা অনেকেই জানি না। তার পরেও দেখা যায়, তার অতিরিক্ত আয়টাকেই তার প্রিয়মানুষটি প্রাধান্য দিচ্ছে, তাকে না! হায়, এরকম একজন প্রিয়মানুষ পাশে থাকার মতন দুর্ভাগ্য আর একটিও নেই!


চার। একজন পুরুষমানুষ নাকি প্রেমিকার মধ্যে মায়ের ছায়া খুঁজে বেড়ায়! ছায়া খুঁজতে খুঁজতে কেউ কেউ মা টাইপের কাউকেই প্রেমিকা বানিয়ে ফেলে! এরকম অনেক বাধ্য প্রেমিক আছে, যারা প্রেমিকার সব কথাই মেনে চলে, তাতে তার যত কষ্টই হোক না কেন! ওদের দেখি আর ভাবি, সব কথা মানলে কেউ প্রেমিক হয় নাকি আবার? আশেপাশে এমন কিছু প্রেমিকাকে আপনি দেখবেন, যার বেশভূষা, চেহারার কাঠিন্য, কথা বলার ধরন, আদেশ করার ধরন দেখে আপনার মনে হবে সে যেন তার প্রেমিকের মা-ই হয়! এটা মেয়েদের বেলাতেও দেখা যায়। তারা বয়সে অনেক বড়ো অথবা অতিরিক্ত গম্ভীর টাইপ কোনও প্রেমিকের সাথে এমনই আচরণ করে যে তাদের দেখলে বাবা-মেয়ে মনে হয়! কেউ বলে না দিলে তারা যে একজন আরেকজনের প্রেমিক প্রেমিকা হয়, এটা আপনি কোনওভাবেই বুঝতে পারবেন না।


পাঁচ। পুরুষমানুষ বলে, ‘যেতে হবে, আজকে হাতে সময় নাই।’ অন্যদিকে নারীরা বলে, ‘আরে, বসেন ভাবি! কী করবেন বাড়ি গিয়ে?’ পুরুষের হাতে সময় নাই, আর নারীর কথার শেষ নাই। প্রকৃত ব্যাপারটা হচ্ছে, পুরুষের হাতেও সময় আছে, নারীর কথারও শেষ আছে। রোজগেরে মানুষ প্রকৃত ব্যস্ততায় বা ব্যস্ততা-প্রদর্শনে অভ্যস্ত।