প্রথম ঘর

শেখর,


আমি জানি, এই কথাগুলো তোর কাছে হয়তো পৌঁছাবার নয় বাস্তবে।
তবু যে বাস্তবতায় তুই নেই, সে বাস্তবতায় অভ্যস্ত হতে আমি চাই না। অভ্যস্ত হতে পারিও না আমি।


চিঠির শুরুতে শুধুই তোর নাম লিখে সম্বোধনটা করেছি। প্রিয় বা শ্রদ্ধেয়, এসব কিছুই লিখিনি। কেন, জানিস? জানিস না হয়তো, আর হয়তোবা জানতে চাইবিও না। তাই আমি নিজেই জানিয়ে দিচ্ছি।


প্রিয়, শ্রদ্ধেয়, প্রিয়তম---এই সম্বোধনগুলো গতানুগতিক চিঠিতে লেখা হয় রে! খুব স্বাভাবিক নিয়মে চলতে থাকা কিছু সম্পর্কে এসব বলে বলে ওপাশের মানুষটিকে সম্বোধন করা হয়।
আমি ঠিক কোন স্বাভাবিকতায় তোকে খুঁজব, বলতে পারিস?
আমাদের সম্পর্ক কিংবা বন্ধুত্ব, সেটা তো এখন আর কটা স্বাভাবিক ঘটনার তুলনায় অস্বাভাবিক বিস্ময়ের একটা ঘটনা মাত্র।


কিন্তু কী, জানিস তো, আমি তবুও তোর এই অস্বাভাবিক সঙ্গ নিয়েই ঢের বেশি শান্তি এবং স্বস্তির নিঃশ্বাসে বেঁচে থাকি এই আজকের স্বাভাবিক যে-কোনও সঙ্গ থেকেও।


তুই কি বুঝতে পারিস, শেখর? আমি জানি, তুই পারিস। কারণ তোর থেকে ভালো এ পৃথিবীতে আমাকে কেউ কোনও দিন বুঝতে পারেনি এখনও অবধি। এটা আমি বুঝি। সেই জোর এবং বিশ্বাস, দুটোই আমার তোর প্রতি অটুট। সেখানে না কোনও ব্যাখ্যার প্রয়োজন হয় আমার, আর না কোনও যুক্তির প্রয়োজন হয়। একেই বোধহয় বলে বিশ্বাস। একেই বোধহয় বলে ভরসা। আর এটা কখনও একপাক্ষিক হয় না।


তোর কারণে এ জায়গাটা তৈরি হয়েছে। শুধুই তুই! এত কেন বুঝেছিলিস আমায়? এত কেন ভালোবেসেছিলিস আমায়? এত কী করে সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ মানুষটি করে রেখেছিলিস আমায়? বল না রে…কী করে?


আর এতটাই যখন রেখেছিলিস নিজের করে, তখন এভাবে কেন চিরতরে পর করে চলে গেলি? একবারও মনে হলো না, তুই চলে গেলে তোর চারু কী করে বাঁচবে? আর কে-ইবা তাকে এতটা বুঝবে? এত আগলে রাখবে? কী করে পারলি, শেখর? কী করে?


তুই জানিস, আমি তোর প্রতিটি জন্মদিনে তোকে উইশ করি? তোর জন্য কেক কাটি। রাঙাকে ফোন করি।


রাঙা কিছুই বলতে পারে না রে! শুধুই কাঁদে। আমার জন্মদিনেও ফোন করে এক রাঙাই মনে করে। এগারো দিন আগে পরেই তো! কী অদ্ভুত, দ্যাখ না, আজকে তুই থাকলে আমার জন্মদিনটা যত গুণ আনন্দের হতো, আজ তুই নেই বলে তার চেয়েও অনেক বেশি গুণ ম্লান হয়ে আছে।


আকাশে আকাশে তোকে খুঁজতে আর ভালো লাগে না, শেখর। কোনওভাবে কি পারতিস না আমার কাছে ফিরতে? তুই ঝগড়া করে দূরে থাকলে তবুও হয়তো, কখনও কখনও, তোকে মানাতে চেষ্টা করতাম। কিন্তু এ কী অবস্থায় আমায় ফেলে চলে গেলি তুই?


আমি হাজার কাঁদলেও কোনও দিন তুই জানতেই পারবি না, তোর না-থাকায় আমি কতটা কষ্ট পাই! তোর নামটা দিয়ে আমি ফোনবুকে সেইভ পর্যন্ত করে রাখতে পারি না তোর নম্বরটা! তাই রাঙার নম্বরটা তোর নামে সেইভ করে রেখেছি, যাতে ক্ষণিকের মিথ্যেতে হলেও এটা মনে হয় যে তোর কল এসেছে! তোকে কখনও চাইলেও মেসেজ পাঠাতে পারি না। কিছুই বলতে পারি না আমি তোকে!


কত কথা, কত অভিমান, কত ঝগড়া বাকি রয়ে গেল, শেখর!
তোর কতগুলো জন্মদিন তোকে ছাড়াই কেটে গেছে, জানিস?
তোকে আমি একটু করে ‘শুভ জন্মদিন!’ অবধি বলতে পারিনি কত বছর!
আকাশের দিকে তাকিয়ে তোর জন্যে আনা কেকগুলো নিজে কেটে নিজেই খেয়েছি।
রাঙাকে হয়তো ফোন করে জিজ্ঞেস করি, পায়েস রান্না করেছে কি না। রাঙা ঠিকই রান্না করে, ভোলে না একবারও। তোর ছবির সামনে এক বাটি পায়েস কিছুক্ষণ রেখে নিজেই হয়তো খেয়ে নেয়।
আমার কষ্ট নাহয় না-ইবা বুঝলি, মায়ের কষ্টটাও কি বুঝলি না, শেখর?
তুই সর্ষে ইলিশ ভালোবাসতিস খেতে, মনে আছে? আমিও খুব ভালোবাসি এটা খেতে। জানিস, পিসেমশাই এখন আর সর্ষে ইলিশ তোদের বাড়িতে রান্না করতেই দেয় না।


আমি এখন হয়তো কাউকে ভেবে বলি, আমার সবটা জুড়েই সে। যাকে ভেবে বলি, সে হয়তো বোঝে বা বোঝে না। আর তুই আমার জীবনে সেই মানুষটা, যার সবটা জুড়ে এক আমিই ছিলাম। অথচ কী অদ্ভুত, দ্যাখ শেখর, আমি তোকে এরকম কোনও স্বীকারোক্তি দিতেই পারলাম না কখনও! কী করে আর দেবো, বল? সেই সুযোগটাই তো তুই দিলি না রে!


পৃথিবীতে এমন কাউকে পাওয়াটা খুব বেশি কঠিন নয়, জানিস তো, যাকে বলতে পারি, সে-ই আমার সবটা জুড়ে! তবে এটা অনেক বেশি কঠিন এমন কাউকে পাওয়া, যার সবটাই আমি, সবটা জুড়েই আমি। আর আমি এতটাই হতভাগিনী, যে না-চাইতেও তেমন একজন মানুষকে পেয়ে তাকে চাইবার আগেই হারিয়ে একেবারে নিঃস্ব হয়ে পথে বসে আছে!


কেন এতটা অসহায় করে আমায় বাঁচিয়ে রেখে গেলি? কেন নিয়ে গেলি না তোর সাথে আমায়? আর যদি রেখেই গেলি, তবে কোনও ঠিকানা কেন আমায় দিয়ে গেলি না, শেখর? বল না, এখন কোন ঠিকানায় আমি তোকে আমার লেখা চিঠিটা পাঠাই? বল না…!


জানিস, যখনই কেউ কষ্ট দেয়, তখন সব সময় তোর সাথেই এসে ঝগড়া করি। তোকে দোষারোপ করি। তুই থাকলে আজ ওরা এমন কিছু কখনও করতে পারত না। আমাকে কষ্ট দিতে পারতই না ওরা!


আজ তুই নেই। তোর চারুকে কত মানুষ কতভাবে কাঁদায়, সেটা জানিস? তুই থাকলে তো দক্ষযজ্ঞ বাধিয়ে দিতিস, আমি জানি। আমার কষ্ট বা চোখের জল, কোনওটাই তোর সহ্য হতো না কিছুতেই।


এত আদরে আদরে আগলে রেখে শেষমেশ এত অনাদরে অবহলোয় আমায় এই পৃথিবীর স্বার্থপর এবং জটিল মানুষগুলোর কাছে রেখে গেলি? কেন শেখর? কেন?


আমি এখন নিজদায়িত্বে এবং ভালোবাসা থেকেই রাঙা, পিসেমশাইয়ের রোজ খবর নিই। ভালো আছে কি না শুনি। সুযোগ পেলেই যাই বাড়িতে। তোর ছবিটার সামনে খানিকক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে চলে আসি। তোর ছবিটা আমার অনেক ভালোবাসার রে! বড়ো ভালো লাগে ওটার সামনে দাঁড়িয়ে তোর গিয়ে তাকিয়ে থাকতে। এমনও হয়, কেবল ওখানে কিছু সময় দাঁড়িয়ে থাকতেই আমি তোদের বাসায় যাই। তুই বোধহয় এসব জানতেই পারিস না।


যার জন্য এত এত কিছু, শুধু তাকেই জিজ্ঞেস করা হয় না, সে কেমন আছে! এটাই নিয়তি, তাই না?


হ্যাঁ, নিয়তিই তো! কিন্তু নিয়তির দোহাই দিয়ে আমি কী করে সব ভুলে যাব রে? শেখর রে, ও বাড়িতে যে আমার একটা না-হওয়া সংসার পড়ে আছে। আর সে সংসারটাকে যে আমি অনেক বেশিই ভালোবাসি। কেন, জানিস? কারণ তুই যে আমাকে তোর নিজের থেকেও বেশি ভালোবাসতিস!


ফিরে আয় না, শেখর? ফিরে আয়, প্লিজ? আমি আর কিছুই চাই না। তুই ছাড়া আমি যে বড্ড অসহায়। কেন বুঝিস না, শেখর? এ পৃথিবীর মানুষগুলো খুব অন্য রকম রে, আমি আর পারছি না ওদের সাথে মানিয়ে নেবার অভিনয় করতে। বড়ো ক্লান্ত আমি। কষ্ট হয় এখন খুব।


সব বাস্তবতার চোখে ধুলো দিয়ে তুই কি পারিস না আমার কাছে ফিরে আসতে, শেখর? সবাই আছে, তবুও যে তোর অভাবে আমি বড্ড একা রে, শেখর! বড্ড একা আমি!


ঠিক গুছিয়ে লিখতে পারছি না তোকে। কত কথা জমে আছে! সব কথা কি আর বলা যায় রে?


কেমন আছিস? কোথায় আছিস? কী করছিস? কবে আসবি? তোকে ছাড়া আমি কীভাবে থাকব? তুই কবে আসবি?---এই গতানুগতিক কথাগুলোর অনেক অনেক দূরে আছিস তুই আমার!...রীতিমতো ধরাছোঁয়ার বাইরে! তবুও আমি কল্পনাবিলাসিতায় ভেসে যাই শুধু তোকে ছুঁতে পারি বলে। আমাকে এভাবে একা ফেলে চলে যেতে পারলি তুই?


সবাই বলে, আমাকে নাকি কোনও একদিন এক রাজপুত্র এসে নিয়ে যাবে, আর এত ভালোবাসবে যে সব দুঃখ ভুলিয়ে দিয়ে রাজরানি করে রাখবে। কিন্তু আমার রাজপুত্র তো আসার আগেই আমার রাজপ্রাসাদ ফাঁকা করে দিয়ে চলে গিয়েছে। এখনও যখন কারও ওপর রাগ হয়, তখন সব রাগ তোর আর ভগবানের, মানে আমার বেস্টফ্রেন্ডের উপর গিয়ে পড়ে---যদিও তাকেও আমি হারিয়েছি আজ!


যখনই কেউ কষ্ট দেয়, তখন মনে হয়, আজ যদি তুই থাকতিস, তবে কেউ আমার সাথে এরকম করতে পারত না! তুই জানিস, কতগুলো বছর তোকে ছাড়া কেটে গিয়েছে? খোঁজ রেখেছিস একটুও? আচ্ছা, তুই এখনও আমাকে সেরকমই সবচাইতে বেশি প্রায়োরিটি দিস? এখনও আমি না থাকলে তোর কিছু ভালো লাগে না? এখনও সেরকমই করিস তো না…আমার জন্য?


জানি, তোর সাথে কাটানো সময়টা এতটাই কম, অন্যের চোখে হয়তো সে কিছুই না, কিন্তু আমার কাছে তা একেবারে নিজের আপন, মনের ঐশ্বর্য!…তোকে একেবারে নিজের ছাড়া অন্য কিছু কখনও ভাবতেই পারিনি রে! আমি জানি, তুই সেই মানুষটা ছিলি, যার উপর আমার একমাত্র আমারই অধিকার ছিল। তাই মনে হয় এতটা তাড়াতাড়ি আমাকে এতটা একা করে চলে গেলি। তুই থাকলে হয়তো আমার জীবনটাই পালটে যেত, সব কিছুই অন্যরকম হতো আরও।


তোর নামটা দিয়ে আমি ফোনে নম্বর সেইভ করতে পারি না, খুব কষ্ট হয়। তোকে ফোন করতে পারি না, তোকে মেসেজ পাঠাতে পারি না, তোর জন্য রান্না করতে পারি না, তোর জন্য কোথাও গিয়ে অপেক্ষা করতে পারি না, তুই আসবি বলে পথের দিকে চেয়ে থাকতে পারি না। স্মৃতিপটটাও এত ঝাপসা যে সব মনেও পড়ে না আর। এতটা অপারগ করে রেখে কেন চলে গেলি?


জানিস, শুধু ফোনে তোর নম্বরটা থাকবে বলে রাঙার নম্বরটা তোর নাম দিয়ে সেইভ করেছি। তোর জন্মদিন পালন করতে পারি না সবার মতো করে, রাঙাকে ফোন করি ওইদিনে। রাঙা শুধু কাঁদে। কিন্তু এবার পালন করেছি, জানিস! কেকটা অবশ্য নিজে কেটে নিজেকেই খেতে হয়েছে। আর আকাশের দিকে তাকিয়ে ভেবেছি, হয়তো তুই সব বাস্তবতাকে হার মানিয়ে আমায় দেখতে আসবি! একবার আসবি রে আমার কাছে? কত কত বছরের কত কথা বাকি রয়ে গেছে…কত কথা তোকে বলা হয়নি আজও!


এতটা অনাদরে রেখে কেন চলে গেলি? আর চলেই যদি যাবি, তবে কেন এসেছিলি? জানিস, আমি প্রতিদিন রাঙার খোঁজ নিই। পিসেমশাইয়েরও নিই। আমরা সবাই আছি, শুধু তুই নেই। ও বাড়িতে যে আমার একটা না-হওয়া সংসার পড়ে রয়েছে রে…


যেটুকু লিখে পাঠিয়েছি, ওটা কোন ঠিকানায় পোস্ট করব আমি? বল না? কোনও ঠিকানা নেই। কোনও চিঠির উত্তর নেই, তবুও তোর জন্য চিঠি লিখতে আমার একটুও কষ্ট হয় না, বিরক্তি আসে না। কত কথা জমে থাকে, তোকে কিছুই বলা হয় না!


জানিস তো, ও বাড়িতে আমার না-হওয়া যে সংসারটা পড়ে রয়েছে, সে সংসারটার খোঁজ আমি নিয়ম করে রাখি! রাঙাকে ফোন করি, পিসেমশাইয়ের শরীর ঠিক আছে কি না খোঁজ নিই। মুখে না বলেও কিছু, কত বড়ো দায়িত্ব যে আমায় তুই দিয়ে গেলি, বল তো!


তোর কি ঠাকুমার কথা মনে আছে? শেষবার তোর দাদুর বাড়িতে গিয়েছিলাম যখন, তখন তুই যেখানে ছিলি, সেখানে রাঙা আমায় নিয়ে গিয়েছিল। শুধু জায়গাটা ছুঁয়ে তোকে অনুভব করতে চেয়েছিলাম। একেবারে আমার নিজের একটা মানুষ তুই!


এত কথা তোকে বলবার ছিল আমার, কিছুই তো বলতে পারলাম না! তুই আমায় সময়ই দিলি না! এত কম সময় নিয়ে কেন এসেছিলি আমার কাছে? কেন রে? তোর মতো করে আমার নিজের একটা মানুষ আর দ্বিতীয় কেউ হবে না, জানিস তো? তোর মতো এত যত্ন করে আমায় কে রাখবে, বল?


তুই জানিস, আমি মেডিকেলে পড়ছি। অনকোলজিস্ট হতে ইচ্ছে হয় মাঝে মাঝে। মনে হয়, নিজে ঝাঁপিয়ে পড়ে ফাইট করব যাতে ক্যানসার নামের ওই ভয়াবহ কালপ্রিটটা আর কারও কাছের মানুষটাকে কেড়ে নিতে না পারে। তুই সর্ষে ইলিশ খেতে অনেক পছন্দ করতিস, আমারও খুবই পছন্দ। জানিস, তুই চলে যাবার পর পিসেমশাই এখন পর্যন্ত আর কখনও ইলিশমাছ বাসায় ঢুকতে দেয়নি, খায়ই না পিসেমশাই। তুই বুঝতে পারিস ওদের কষ্টটা? আমার কষ্ট নাহয় বুঝিস না, ওদের কষ্টও বুঝিস না?


তোর প্রতিটি জন্মদিনে রাঙা এখনও পায়েস বানায়। আমিও জিজ্ঞেস করি, ‘রাঙা, পায়েস করোনি?’ রাঙা হয় কাঁদে, না হয় আমায় বলে, ‘কাঁদিস না মা’, না হয় চুপ করে থাকে। বাসায় গেলে তোর ছবিটার দিকে তাকিয়ে ভাবি, আজ বেঁচে থাকলে তুই কেমন দেখতে হতিস, কী করতিস আমার সাথে, কতটা ভালো থাকতাম আমরা হয়তো…তোর সাথে রাগ করে যা খুশি বললেও ঠিকই তুই ঠান্ডামাথায় আমার সাথে সব ঠিক করে নিতিস, আবার মাঝেসাঝে রাগও করতিস আমি রাগ ভাঙাবো বলে। যাকে এই পৃথিবীতে কেউই চায় না, তারও একটা নিজের মানুষ থাকে। এরকমও হয়, এমন মানুষ থাকে, যাকে কেউ কেউ চায়, অথচ সে যাকে চায়, তাকেই সে হারিয়ে ফেলে। তখন আর কাউকেই সে চাইতে পারে না, মন সায় দেয় না।


আমার সব আবদার অভিমান অভিযোগের জায়গাটা এভাবে কেড়ে নিলি কেন? আমায় এভাবে রেখে গেলি, ভাবলিও না একবারও, তুই চলে যাবার পর আমি কীভাবে তোকে ছাড়া বাঁচব? যারা তোকে নিতে এসেছিল, তাদের সাথে আর-একটু ফাইট করে আমার জন্য রয়ে কেন গেলি না রে? এত কষ্ট আমি কীভাবে সহ্য করব, তুই বলে দে না আমায়! আজকে নববর্ষ ১৪২৭, জানিস…কতগুলো নববর্ষ আমার তোকে ছাড়া কেটে গিয়েছে…কত মানুষকে আজ বলেছি, শুভ নববর্ষ! শুধু তোকেই বলতে পারিনি কিছুই! কোন ঠিকানায় বলব, বল না?


শেখর, আমার মাথা আর কাজ করে না। আবোলতাবোল লিখি, একই কথাই ঘুরেফিরে লিখে ফেলি। যাকে এত লিখি, সে-ই কখনও কিছু জানতে পারে না। তুই চলে গেলি খালি হাতেই, শুধু আমাকেই সবটা দিয়ে গেলি। তুই আমার জীবনে প্রথম হারানো সব থেকে প্রাইসলেস গিফট রে! তুই-ই একমাত্র মানুষ, যার সবটা জুড়ে আমিই ছিলাম। তোর অভাবটা কোনও দিনই পূরণ হবার নয়। এমন করে কেউ কখনও আমার যত্ন নেয়নি। নিতে পারবেও না। ভালোবাসা লাগে রে, অনেক ভালোবাসা লাগে…এমন করে কাউকে যত্ন করতে। যেদিন থেকে এটা বুঝেছি, সেদিন থেকে আরও বেশি করে তোকে মিস করি। জীবনে এরকম দ্বিতীয় কাউকে পাওয়া যায় না,---অন্তত আমার জীবনটা এখনও সেরকমই রয়ে গেছে। তুই আজও আমার প্রথম ও একমাত্র ঘরই রয়ে গেছিস রে!


এমন কাউকে পাওয়া সত্যিই কঠিন, যাকে ভেবে বিনা কুণ্ঠায় বলে ফেলা যায়, সে আমার সবটা বা এমন কিছু কথা। যে মানুষটা কোনও কারণ ছাড়াই আমাকে তার জীবনের সবটা করে নেয়, এরকম কাউকে পাওয়া তো আরও কঠিন! তুই আমার জন্য এরকমই একজন ছিলি। সব থেকে বড়ো কষ্ট, তুই এমনভাবে চলে গেলি, যেখান থেকে ফেরার আর কোনও পথ নেই।


তোকে জানিয়ে রাখি, আমার আর-একজনের সাথে দেখা হয়েছে পরে, যে আমায় অনেক যত্ন করে রাখতে জানে। আমি দেখি, আর অবাক হই মাঝে মাঝে। না, তার সাথে আমার তেমন কোনও সম্পর্ক নেই, আমার ইচ্ছে করে না রে! আমার এই অনিচ্ছের কথা সে কিন্তু জানে, বোঝে। তা-ও কোনও কিছুরই প্রত্যাশা ছাড়াই সে আমায় ভীষণ ভালোবাসে…তার মধ্যে আমার কাছে আসার কোনও তাড়া নেই, কেবলই আমায় ভালোবাসার তাড়া আছে। খুব খুব খুব যত্ন করে রাখতে জানে সে আমায়। ওর মধ্যে তোকে খুঁজে পাই কখনও কখনও। বিস্মিত হই আর ঈশ্বরকে কৃতজ্ঞতা জানাই।


ইতি-
তোরই চারু