প্রেমে পড়লে মরাই নিয়ম

 একটা আবদার আছে। রাখবে?
যেদিন আমায় ছেড়ে যাবে, এমনি করেই রেখেছ ভেবে…
এই ধরো, আজ থেকে দশ মাস, হোক না বছর দশেক পরই,
সেদিন যাবার আগে, ব্যথা দেবে যা, যন্ত্রণা আর আঘাতটুকু,
আজকের দিনে আগাম দেবে?
অনেক পরে কষ্ট পাবার চাইতে নাকি আগেভাগেই কষ্ট নেওয়া অনেক ভালো!
 
আমার যত ঘাটতি আছে, গুণ-পুণ্যের অভাব আছে,
কিংবা তোমার চাওয়ার মতো এই নিজেকে দিইনি বলে,
এমন কিছু অপূর্ণতা, যা একাট্টা হল…ওসব নিয়ে
আমায় তুমি ছেড়েই যাবে, অজুহাত তো তৈরিই আছে!
সেই ভবিষ্যতের আঘাত আমি আজকে নেব, প্রিয় ওগো,
দয়া করো, আজকে আমায় বেসো না ভালো,
আজকে থেকেই আঘাত করো, এ বুকের ভেতর কান্না চাপাও,
সারা শরীরে চাবুক বসাও, চলতে-ফিরতে কথায় মারো!
একটি ক্ষণের আঘাত যত, হাজার ক্ষণে সহ্য করাও!
বোধের নিপাত যাত্রা ঘটাক আজকে থেকেই!
 
আগুনে হুতি দেবই যদি, সে হোম-অরণি আজকেই পুড়ুক আমার প্রেমে!
যদি সে দহনে আজকে মরি, ভেবে নেব তবে, মরণই আমার প্রাপ্য ছিল,
তোমায় দেবার ছিলই-বা কী, আর সেসব জেনে হবে না যেতে অনেক পরে!
যদি খুবই ব্যস্ত থাক, আমায় জেনেশুনেও আঘাত দিতে মনে না থাকে,
তবুও নাহয় অযোগ্য ভেবেই থাকতে দিয়ো, আমি সারাজীবনই তোমার প্রেমে
থাকব নত এমনি করেই! ভালোবেসেছি, ভয়টা কীসের?
 
তুমি আমার বিলাসিতা নও, নও আবেগও,
আজ বেঁচে থাকতেই তোমায় লাগে,
শ্বাসের দাবি তোমায় বাঁধে…তুমি আমার সে-ই প্রয়োজন!
আমি অধম হয়েই হাসিমুখে তোমারই র’ব,
যদি আজকেই দাও আঘাত আর কষ্টটুকু, ভীষণ রেগে,
আমার এসব প্রলাপ শুনে শেষটা যদি আগেই মেটে…
আপত্তি নেই, আমি তো দিব্যি তৈরিই আছি সে কবে থেকেই!
 
যাবার বেলায় বলেই দিয়ো…
তুমি তো ভারি অসুন্দরই!
পড়াশোনাই জানো কতটুক?
তোমায় যারা চেনে, ওরা…ভালো বলে?
জানো তো তুমি দেখতে কালোই?
তুমি হাঁটও কেমন এঁকেবেঁকে!
মাথায় যা চুল, ওটা আবার চুল বলে কে?
চোখ তো দেখি, কাঁচের নিচেই আটকে থাকে!
রান্নাটান্না পার কিছু? ঘর গোছাতে?
আমাকে নেবার কী গুণ আছে তোমার মাঝে?
বিয়ে করবে কোন সত্তায়? সংসারটা করবে কীসে?
 
তোমার এমন হাজার কারণ আছে, সেইখানে ভিড়!
অমন ভিড়ে এই ভালোবাসাটা উটকো খুবই!
এরচে’ বরং আঘাত আসুক,
সব হিসেবনিকেশ চুকুক আজই!
আমিও একটু আরামে বাঁচি!
তুমি আমায় প্রেমিকা বলবে,
তোমায় দেখে বলবে লোকে, আহা, কী দারুণ প্রেমিক তোমার!
…এসব পেতে আসিনি আমি! জেনে রেখো!
লোকের বলায় কী এসে যায়? আমি তো জানি,
আমি তোমার অযোগ্য এক খেলার পুতুল,
খেলা হলে ঠিক ফেলে দেবে…সেও জানি!
 
তুমি আমায় ঘরে তুলবে,
তোমার জন্য পরব শাড়ি,
দুই-পা ভরে আলতা দেব,
লাল টিপটা কপালে নেব,
চুড়ির শব্দে ঘুম ভাঙাব,
তোমার বুনো ইচ্ছে হব…
ওসব আমি ভাবি না কিছুই!
অমন উড়তে গেলে ডানা লাগে,
সেই ডানা তো ফেলেছি কেটেই সেই তো কবেই!
 
যাকে ভীষণ বেসেছি ভালো,
অগাধ মায়ায় আর শ্রদ্ধায় রেখেছি বোধে,
তারই কাছে, আমি যোগ্য কি না, ফর্দ দেব?
সে হয় না! সেই দিনটা আসার আগেই বিদায় নেব!
হাজারটা ভুল, দোষ তো আরও একটা বেশি, ওসব করেও
যখন তোমার সামনে যাব, খুবটি করে বোকোই নাহয়, আর একটুখানি শুধরে দিয়ো!
…আমার মনে এমনি করেই ভাবনা আসে!
তখন হয়তো ঠোঁট উল্টে, চোখের জলে, জড়িয়ে ধরে
চেঁচিয়ে উঠে বলব তোমায়, ভালোবাসি!
ভালোবাসি যে…ভালোবাসলে আর চাই কি কিছু?
 
আমি তো কোনও যুদ্ধে নামিনি, জিততে আসিনি,
কেবল তোমার চোখের মণি হয়েই থাকতে এসেছি!
আমাকে এমন যুদ্ধে ঠেলো না, এরচে’ বরং
এ হৃদয়ে ছুরিই চালাও, শত আঘাতে চূর্ণ করো!
যত ব্যথা দাও, নানান ছুতোয় সরাও দূরে…
সারাজীবনই বলব তবু,
তোমাকে বাদে বুঝিনি কিছুই,
যত চিনেছি তোমায়, এক ভালোবাসা ছাড়া শিখিনি কিছুই!
 
মনে আছে, একদিন বলেছিলে, “আমার আয়ুর কিছুটা হলেও তোমার যেন হয়!”
শুনে সেদিন বলেছি হেসে, “এই বোকাটা! তোমার আগেই যেন বিদায় বলি!”
বিশ্বাস করো, বানিয়ে বলিনি এতটুকুও!
তুমি যোগ্য বলেই অযোগ্য আমি, নাকি
আমি অযোগ্য, তাই তো তুমি যোগ্য হয়েছ…
সে তর্কটুকু সরিয়ে রেখে এটুকই বলি,
কাপড় যত উজ্জ্বল, দাগ তো ততই জ্বলজ্বল!
…এ হিসেব ভুললে চলবে কেন?
ক্ষমা চাইছি, হিসেব ভুলে হার মানছি!
অতো হিসেবে বাঁধ হয়ে যায়, সাঁকো হয় না!
বকা দিচ্ছ? দাও না বকা! তোমার বকা খেতেই অবুঝ হব!
 
দুঃখটুকুই থাকুক আজি, সুখটা নাহয় পরেই নেব!
জানি, ভালোবাসা শুধু দুঃখ দেবে, একদিন হঠাৎ করেই
তাড়িয়ে দেবে, পথেপথে ঘুরব সেদিন বাঁধন ছিঁড়ে।
এ মনে তবু বাঁধন ছেঁড়ার ভূত চেপেছে,
কষ্ট পেতে সাধ জেগেছে, কান্না নেয়ার রং লেগেছে!
পাগলামি তো, তাই না, বলো?
যখন ভাবি, ছিঁড়ব বাঁধন, হোক না সে তা যেমন করেই,
তখন ভাবি, যাবই যখন, যাওয়ার আগেই যোগ্য হব,
অজুহাত তুমি যতই খোঁজ, আমাকে আমি ঠিক বোঝাব,
আমায় তোমার পাশে মানাত ঠিকই,
তুমি ভুলে করেই সরেছ দূরে!
 
ভালোবাসলে দায়দায়িত্ব অনেকই থাকে, পিছুটানটাও থাকে অনেকটুকুই!
রাগটা চলে ঠিক ততটাই, যতটা হলে সম্পর্কটা ভালোই থাকে!
যদি সূক্ষ্ম কিছু অনুভূতি জমে সূক্ষ্ম কিছু অভিমানে,
পাহাড় গড়ে ওঠার আগেই সরি বলে তা ভেঙেফেলা ভালো!
ভালোবাসলে তার বদলে কিছুই পাওয়ার আশা থাকে না…
মানুষটাকে বকতে হয় না…সবাই দেখে, এমন করে।
দোষ করলে, ভুল করলে অসীম ক্ষমায় বেঁধে নিতে হয়।
ওকে বাসলে ভালো, তার চাইতে কে-কে ভালো, সে তুলনা করাই বৃথা!
ভালোবাসি যাকে, তার সবটা নিয়েই ভালোবাসি তাকে!
অতো বিচার করে, অংক কষে…ভালোবাসা হয়?
 
জানো, তুমি যখন একটু দেখাও…ভালোবাসো,
তখন ভাবি, এই বুঝি মরেই যাব!
এই এত সুখ, সেও কেন সহ্য হবে?
সারাদিন কত গল্প করি, কুটকুট করে তোমায় ডাকি…
বোঝ কিছু? এই আজকেই দেখ, একটু গা এলিয়ে দুপুরে যখন
শুয়ে ছিলাম, হঠাৎ ভাবি, তোমাকে জড়িয়ে ধরে শুই একটু?
লাজুক স্বরে ইচ্ছেটুকু বলেছি যখন, অমনিই তুমি টানলে বুকে!
আমায় বাহুতে রেখে জড়িয়ে নিতে তোমার ভীষণ ভালো লাগে,
তবু আজ দুপুরে জেদটা করেই তোমার বুকের লোমে মাথা গুঁজে হারিয়ে গেছি!
 
প্রেমিকা তো অনেক পাবে, এমন পাগলী কটা পাবে, বলো?
এরপরও যদি হাত ছেড়ে দাও,
এই জন্মের মতো বিদায় বল,
সেদিনও জেনো, আটকে তোমায় হব না আপদ,
শুধু তোমার বুকের উপর আছড়ে পড়ে কাঁদব ভীষণ,
আর বলব হেসে, এই এক জীবনে হেরেই গেলাম!
কিছু মানুষ আসে হেরে যেতেই, আমিও বুঝি তাদের দলে!
 
দেখো, কোনও একদিন আমিও ভীষণ যোগ্য হব!
সেদিন তোমার হাতটা হবে অন্য কারও…
খুব চাইলেও পাব না তোমায় আর কখনও…
তা-ই যদি হয়, অমন যোগ্য হয়েও কী আর হবে?