ফসিলের চোখে বিবর্তিত প্রশ্ন

 
আমি সত্যিই জানি,
তোমার আন্তরিক শুভেচ্ছা
আমার জন্য ঠিকই বরাদ্দ হয়ে আছে।
তোমার অবচেতন অনুভবে
আমি সব সময়ই থাকি।


তবু, তোমার প্রকাশউন্মুখ ওষ্ঠযুগলকে
তুমি কষ্টেসৃষ্টে ঠেকিয়ে রেখেছ অর্গল তুলে,
এই আশঙ্কায় যে, যদি বেফাঁসে বেরিয়ে যায়
কিছু ভালোবাসা আমার জন্যে…
সাথে কিছু স্বীকৃতি…আমার সেই সমস্ত কাজের,
যা আমি করেছি স্বীকৃতির কণামাত্রও লোভ না রেখে।


আমি চিৎকার করে বলতে থাকি আর বলতেই থাকি…
সেইসব কথা, যা আমি কখনওই তোমায় বলিনি। তবু,
আমি চাই না, আমার চিৎকারে তোমার ধ্যান ভেঙে যাক।
এই না-চাওয়ার ইচ্ছেটি ভাববার ঠিক পরপরই
ভীষণ অভিমানে আমার কণ্ঠস্বর
বাস্পরুদ্ধ হয়ে আসে।


তুমি আমায় ভালোবাসা দাও আর না-ইবা দাও,
আমি আমার ভালোবাসা নিয়েই দিব্যি বেঁচে থাকব!
তোমায় যেটুক চিনেছি,
সেটুক নিয়েই কয়েকটা জন্ম
হাসিমুখে কাটিয়ে দেওয়া যায়…
এই ক্ষুদ্রজন্ম তো একপলকেই কেটে যাবে!


আমাকে বলতে না দাও, থামিয়েই দাও,
শাস্তি দেবার ভয় দেখাও, তবু
তোমার কর্ষণযোগ্য ভূমিতে
আমি লাঙল ঠেলেই যাব…ততদিন পর্যন্ত,
যতদিন এই কবজিতে জোর আছে।


পেটে ক্ষুধা নিয়ে, দুর্বল হাতে, তবু
মনের দাপটে এই বিরান প্রান্তরে…
যতক্ষণ দেহে আছে প্রাণ, ততক্ষণই
আমি করেই যাব প্রাণের সঞ্চার!
এই ধুলো-ধূসরিত মরুপ্রস্তরের বুকে
ঝরাব কান্না, চারিদিকে রাশি রাশি হেসে
ভরবে শ্যামলিমা। এ আমার দৃপ্তশপথ!


আমি জানি, তুমি একদিন
আমায় ঠিকই খুঁজবে।
যে পথে আমি হারিয়ে গেছি,
সে পথ ধরে ধরে হাতড়ে বেড়াবে…
পূর্ণিমার চাঁদ ক্ষয়ে যাবার ঠিক আগে
শেষচিহ্নটি রেখে যায় যে পথে…
সে পথে খুঁজলে আমায় পাবে।


পাবে যখন,
তখন হয়তো এক ফসিলই পাবে! দেখবে,
একপৃথিবীসমান নির্ভার নির্বিকারত্ব
মৃত্তিকার শতেক স্তরের নিচে
সমাধিস্থ হয়ে আছে।


দোহাই তোমার!
সেদিন আমার ভাঙিয়ো না ঘুম!
খুব সন্তর্পণে, একটি ধুলোরও
স্থানচ্যুতি না ঘটিয়ে
এক অখ্যাত মানুষকে স্পর্শ কোরো…
দেখবে, সে মানুষটির চোখের কোণে
তখনও, শুকিয়ে-যাওয়া জলের দাগ
লেপটে আছে।


সেখানে কিছু উত্তর ছিল, যা
সময়ের বিবর্তনে আজ কয়েক টুকরো প্রশ্ন হয়ে পড়ে আছে!