ফিরে এসে এসে

 কুয়াশায় ঢাকা কোনও দৃশ্যের মতন ঘোরলাগা এবং
রক্তের মতো গাঢ় এক নির্জনতায় বেঁচে আছি। নিজের সাথেই, একা!
অবহেলার বিশ্বস্ত আস্তরে আমার অস্তিত্বটি পড়ে থাকে অদেখা এক বিমর্ষ দ্বীপের মতো।
বেলা ফেলে এসে হাতড়ে অবেলা পথিক যখন দিশেহারা হয়, ঘোরে ক্লান্ত শরীরে,
ঠিক তখনই, অন্য দ্বিধায় মন-কেমনের বিবর্ণ ক্যানভাসে পড়েথাকা
অব্যক্ত যত কথার ভিড়ে অকস্মাৎ পথিক
বদলায় দিক, সুর খুঁজে যায় অন্য সুরে।
 
আর নিশ্চুপ রাত, সেও যেন মালা গেঁথে যায় কথার ফুলে
এমনভাবেই, যেন আজন্মকাল হয়নিকো কথা নিজেরই সাথে!
এ যেন এক হারিয়ে যাবার ভয়ে নিজেকেই হারিয়ে ফেলা,
পথ ঘুরে শেষে নিজের নিজেকে খুঁজে পাওয়া এক মরুভূমিতে, জনান্তিকে!
আচমকা, হ্যাঁ, যেন আচমকাতেই মনে চলে আসে, এইতো আমি,
যেই আমিকে হাজারো বার ফিরেছি খুঁজে অন্যঘরে!
এমন একটা সময় আসে, যখন দেখি, হেলার চাদরই ‘আমি’কে মোড়ায়,
পেয়ে সবই তবু হারানোর ভয় বাসা বাঁধে মনে!
 
এই যেন সুখ, আমি তো এখানে, এইখানে সবই!
যদি সুখের দহন চলেই আসে, পুড়ব একাই, নাহয়
হল কলরব নিজেরই সাথে!
নিজেকে ভেঙে গড়ব নিজেই,
এই পোড়া গায়ে অঙ্গার মেখে শুদ্ধ হবই!
পবিত্র এক শিলার মতো দগ্ধ হয়ে,
ক্রমেই ক্ষয়ে ভেতর থেকেই ‘আমি’টা হব!
 
আমি দেখে নেব ঠিক, গোধূলি পিছলে সন্ধে নামলে
আকাশে ওঠে কোন তারাটি, কোথায় সে থাকে!
মধ্যরাতে হিমেল ছোঁয়ায় এই মাটিতে শিশির ছোটে আকাশ বেয়ে কীসের টানে!
একলা হলেই এসব হিসেব খুব বোঝা যায়,
আরও বোঝা যায়, কোথায় কেন মনটা হারায়!
যখন পথ হারিয়েই পথ পেয়েছি,
হারার পিঠেই হেরেছি পথে সকালসন্ধ্যা অজস্রবার,
তখন যদি মাঝ ওপথে আলোর মেলা
হারায় ভুলে, কী এসে যায়!
 
হবার হবে, যাবার যাবে………আটকাব না।
আমারই হবে, আমারই যাবে!
সুখ, সে যদি হয় প্রজাপতিও,
বাগানে ওড়ে মধুর খোঁজে, নাহয় সে বাগানের মালিই হব!
যদি তবুও না পাই সুখের দেখা, উপায় তখন?
সুখের খোঁজে সুখেরও দেখি দারুণ অসুখ!
হঠাৎ ভাবি, বুঝি বিনা কারণেই ছায়ার খোঁজে পা বাড়ালাম!
সুখটুকু হায় নিজেরই কাছে এই পরাণে আটকে রেখে,
বনের মাঝে পথ হারালাম!
 
এ তুমি এমন কেন?
আমি যখনই তোমার শহর ছাড়ি, বাড়াই দু’পা অন্য কোথাও,
কেবল অমন হলেই বুঝতে পার, আমি তো আছি!
এই তুমিটা এমন কেন?
ভুলে যাবার যোগাড় যত, আর যন্ত্র--
আমি তো কবেই করেই ছিলাম!
বারেবারে তবু তুমি এসে যাও,
বদলে ফেল--এই আমাকে, ওই তোমাকে!
এইভাবে আর কী হয়, বলো………
চালিয়ে জীবন ফিরে এসে এসে?