বাখান

যখন পৃথিবীসুদ্ধ মানুষ মিলে ভয়ের কাঁথায় কাঁপছে,
যখন প্রতিটি ঘরে দিচ্ছে হানা মৃত্যুপুরীর প্রকট ছায়া,
যখন দম্পতির ব্যস্ত হাতে গাঢ় অবসর লেপটে আছে,
ঠিক তখনই, তোমাদের ওই ‘চ্যাটের বাল’ পুলিশসেনা,
এসে দাঁড়িয়ে গেছে তোমারই পাশে, নেমেছে পথে
তোমাদের আজ বাঁচাবে বলে। নগদের হিসাবকিতাব
বোঝো তো ভালোই, এবার নাহয় বাকির হিসেবও বুঝতে শেখো!


আমাদের নির্ভাবনায় রাখতে গিয়ে,
নিজেদেরই দিচ্ছে ঠেলে দুর্ভাবনার অসীম স্রোতে,
আমাদের ঘরেই রেখে নিজেদের রাখছে সদাই
ঘর-উঠোনের অনেক দূরে!
সময়ের ঘাড়ে চেপে আমরা করছি যখন অলস যাপন,
তখন ওদের, কাজের চাপে পিষ্ট জীবন,
ওদের পরিবারে ক্ষণে ক্ষণে উঠছে শুধুই ভয়ের তাড়ন।


যখন আমি ঘরের ভেতর আদরে জড়াই, সোহাগে মোড়াই
ছোট্ট আমার পুতুলসোনা, খুনসুটিতে উঠছে ভরে সারা-সংসার,
অবসরে কাটছে দারুণ মিষ্টি সময়, দেখছি তখন,
যাদের আমরা বলেছি ‘কসাই’, তাদের হাতেই ন্যস্ত জীবন।
আমরা যখন ঘরের হাওয়ায় সময় বেচে সময় কিনি,
ওদের তখন দিন-রাত্রি ওই হাসপাতালই ঘরের মতন।


যমদূতকে ছুড়ছে চ্যালেঞ্জ---ব্যস্ত এখন, পরে এসো তো!
যে মুহূর্ততে কেউ পাশে আসে না, খোঁজ রাখে না,
কাছের মানুষ সরছে দূরে, ঘেঁষে না ধারে বন্ধু-স্বজন,
তখন সেই কসাইগুলিই মমতা নিয়ে শিয়রে এসে,
বলছে হেসে, ‘আছেন এখন আগের চেয়ে একটু ভালো?’


আমাদের বাঁচাবে বলে যারা আজকে নিল জীবন হাতে,
তাদের আমরা কত উছিলায়, কারণে কিংবা কারণ ছাড়াই
এই এতদিন দিয়েছি রেখে তাচ্ছিল্যতে, চোখের ঘৃণায়…
আজকে ওদের হাতেই দেশের কেতন, দশের চেতন। এ দুঃসময়ে,
ওদের মহৎপ্রাণে করি নিবেদন এই পৃথিবীর যত ভালোবাসা-প্রেম!