বাসো ভালো, খাও ছ্যাঁকা!

কোনও এক ভালোবাসা দিবসে আমি হয়ে গিয়েছিলাম: সুশান্ত পাল, বিএসসি ইন সিএসই (চুয়েট), এমবিএ ইন ফাইন্যান্স (আইবিএ, ডিইউ) ............ সেইদিন ছিল আইবিএ'তে আমার এমবিএ'র ফাইনাল প্রেজেন্টেশন। প্রেজেন্টেশন শেষে বইমেলায় ঘুরে বেড়িয়েছি। ওরা ভালোবাসা নিয়েছে। আমি বই নিয়েছি, ডিগ্রি নিয়েছি। ওরা পেয়েছে একটা, আমি দুটো। ওদেরও love, আমারও লাভ!
আরও একটা হতে পারত: এমডিএস (ডিইউ) ........হয়নি, আমি ছেড়ে দিয়েছি। কেন? স্রেফ আত্মসম্মানবোধে আর হেঁয়ালিতে। মাঝেমাঝে ভাবি, এই ছোট্টো জীবনটাতে এই জীবনটা নিয়ে অনেক খেলা খেলা হয়ে গেছে। অবশ্য জীবনটা তো খেলার জন্যই, যদি শেষ পর্যন্ত জেতা যায়!
সেইদিন আরও ভাবছিলাম........ আচ্ছা, একটাসময়ে এই নেই-ভাবনা পাগলটাই না ডিসিশন নিয়েছিল অনার্স কমপ্লিট করবে না? ওর না ইন্টারমেডিয়েট-পাস দোকানদার হওয়ার কথা ছিল? মা, তুমি শুনছো? বাবা, একটু এসে দেখে যাবে? তোমাদের অনেক কাঁদিয়েছি, না? পাপ্পু, তোকে না কে কে যেন কথা শুনিয়ে দিত শুধু? তোর দাদা নাকি সারাজীবন অশিক্ষিতই থেকে যাবে? ওরা কোথায় এখন?
ভালোবাসা দিবসের আগের রজনী। এমবিএ’র ফাইনাল প্রেজেন্টেশন রেডি না করে বসে-বসে কুরোসাওয়ার ইয়োজিম্বো দেখছি। চাপে থাকলে ঘণ্টার পর ঘণ্টা ফ্যানঘোরা দেখতেও দারুণ লাগে, পরীক্ষার আগের রাতে পৃথিবীর সবচাইতে বাজে মুভিটাও পরম আয়েশ নিয়ে দেখা যায়। আর ইয়োজিম্বো তো ভাল মুভি! পরেরদিন সকাল ১১টায় মাস্টার্সের লাস্ট প্রেজেন্টেশন। ওটা রেডি করা শুরুই করিনি। আমার পুরনো অভ্যেস---ইলেভেন্থ আওয়ার সিনড্রোম। এটার প্রভাব আমার জীবনে এতোটাই প্রকট যে এ নিয়ে পৃষ্ঠার পর পৃষ্ঠা লিখে ফেলতে পারি। ‘ইলেভেন্থ আওয়ার সিনড্রোম’ কথাটি আর কেউ কখনও বলেছেন কি না, আমি জানি না। সেটা যদি না হয়, তবে এই কথাটিও আমার বানানো। আমার দর্শন: শেষ মুহূর্ত তো এখনও বাকি! ওটা আছেই যদি, তবে ওটার আগের মুহূর্তগুলিকে মাটি করা কেন বাপু? (কখনও সময়সুযোগ হলে আর ভুলে না গেলে ইলেভেন্থ আওয়ার সিনড্রোম নিয়ে লিখবো। বন্ধুরা, একটু মনে করিয়ে দেবেন, কেমন?)
দুপুরে এক বালতি কাপড়ে ডিটারজেন্ট দিয়েছি। ওগুলো ধুতে ইচ্ছে করছে না। কিন্তু ওগুলো ধুয়ে শুতে হবে। কাল সকাল ৮টায় বের হব। কালকে ধোওয়া হবে না। সব কাজ ফেলে রাখি কী এক শেষ মুহূর্তের ইন্দ্রজালের আশায়!
মশা কামড়াচ্ছে। উঠে কয়েল জ্বালাতে ইচ্ছে করছে না। কামড়াবে নাতো কী করবে? পৃথিবীতে সবাই-ই তো কাউকে না কাউকে কামড়ে-কামড়ে বেঁচে আছে। ওদেরই বা কী দোষ? থাক, কামড়াক।......... শালার মশা! আচ্ছা, মশাকে থাপ্পড় লাগানোর বুদ্ধিটা কী? কোনও বুদ্ধি নেই, বুদ্ধি বের করতে হবে।
খিদে পেয়েছে। সামনেই আপেল রাখা। ওটা খেতেও আলসেমি লাগছে। আমাকে কেউ ভালোবাসে না, খাইয়ে দেয় না, তাই আমি নিজহাতে নিয়ে কিচ্ছু খাবো না, খাবো না, খাবো না!! খেয়ো না আপেল, খাও কলা! হুহ্‌! ............ রুমে ফল এনে রাখলে সেটা নিয়ে খাওয়ার মতো গুডবয় আমি নই। এতে আমি একটা জিনিস আবিষ্কার করে ফেলেছি। রুমে দিনের পর দিন আপেল রেখে দিলেও সেটা পচে না! সবই তাঁর (পড়ুন, ফরমালিনের) লীলাখেলা!
কালকে অনেক কাজ। প্রেজেন্টেশন দিতে হবে, বইমেলায় ঘুরতে হবে, আরও কী কী সব যেন করতে হবে.......... মনে নেই। মনে করতেও ইচ্ছে করছে না। যে পুরুষের প্রেমিকার বার্থডে মনে রাখার দায় নেই, সে পুরুষের দুনিয়াদারি মনে না রাখলেও বা কী হবে? কাল না ভালোবাসা দিবস? এ দিবসে না রাস্তায় হ্যাংলা হ্যাবলা ক্যাবলার মত দাঁড়িয়ে থাকলে অন্যের সুন্দরী প্রেমিকাদের দেখে-দেখে ফ্রি-ফ্রি চোখের শান্তি পাওয়া যায়?
রাত বাড়ছে, কাজ কমছে না। এখন আমার অনেক কাজ। সারাদিন কাজের কাজ কিচ্ছু করিনি। তো, আজকে সারাদিন কী কী করলাম? সকালে উঠে ফুল দেখলাম, গাছ দেখলাম, কিছু পাখি দেখলাম, লেক দেখলাম, রুমে এসে ঘুমিয়ে পড়লাম। সারাদিন ঘুমিয়েছি। ঘুমাতে-ঘুমাতে চোখ ফুলে গেছে। আজকের দিনের সেরা অর্জন, গোলাপের পাপড়িতে জমে-থাকা ভোরের শিশির ছুঁয়ে-ছুঁয়ে দেখা। আহা! এ কাজের ফলে ঘোড়া ইয়া বড় আরেকটা ডিম পেড়ে ফেলেছে, বিশ্বের একমাত্র ‘পাপড়ি-ছোঁয়া-মানব’ হিসেবে আমার নাম গিনেজ বুকে উঠে গেছে! তালিয়া, তালিয়া!!
তবুও কাজের কাজ করা শুরু করছি না। মাথায় অনেক কাজের বোঝা নিয়ে ল্যাপটপে বসে আছি। বসে-বসে কী করছি? দুনিয়ার মেয়েরা সব পহেলা বসন্তের ছবি দিয়েছে। ছবিগুলো দেখছি। লাইকটাইক দিচ্ছি কম। দিলে যদি ও বুঝে ফেলে ওর ছবি লুকিয়ে দেখছি! ওর পার্ট বাড়িয়ে কী লাভ? তাই অতোটা দিচ্ছি না। শাড়িতে সাজলে মেয়েদের অপূর্ব লাগে! এদের কাউকে-কাউকে ভালোবেসে ফেলতে ইচ্ছে করছে। আচ্ছা, এটা তো ভালোবাসা না, তাই না? এটা তো স্রেফ প্রেম। আবার কাউকে-কাউকে ধরে...............বলা(পড়ুন, ‘লেখা’) গেলো না!
এক ছেলে ইনবক্স করেছে---
: ভাইয়া, আপনি ছেলেদের ছবিতে লাইক দিচ্ছেন না কেন?
: ছেলেদের ছবিতে লাইক দিতে ইচ্ছে করছে না, তাই।
: কিন্তু মেয়েদের ছবিতে তো ঠিকই লাইক দিচ্ছেন। এটা কি পক্ষপাতিত্ব নয়? আমরাও তো ফাগুনের ছবি দিয়েছি।
: ঠিক আছে, তুমিও চুলে গাঁদাফুলের খোঁপা পরে হলুদ শাড়িতে তোমার ছবি আপলোড কর, আমি প্রমিজ করছি, আমি তোমার সব ছবিতেই লাইক দিয়ে দেবো।
(হঠাৎ আবিষ্কার করলাম, সে অভিমানী ছেলেটি অভিমানে ঠোঁট দুটো উল্টে আমাকে ব্লক করে দিয়েছে! কী আর করা! সবই তাঁর ইচ্ছে!)
পুরনো দিনের বাংলা গান শুনছি। দুষ্টু-দুষ্টু হাসিতে গান শুনতে ভাল লাগছে। গানগুলোকে বেশি-বেশি করে ভালোবাসতে মন চাইছে। গানগুলো যারা লিখেছে, সুর করেছে, গেয়েছে, ওদেরকে ভালোবাসতে ইচ্ছে করছে। পৃথিবীর সবাইকে ক্ষমা করে দিতে ইচ্ছে করছে, এমনকি কেউ আমাকে কষ্ট দিয়ে সুখে থাকলে তাকেও। সিলিংয়ের কোণার টিকটিকিটাকেও ভালোবাসতে ইচ্ছে করছে। ওই বেচারাও আমার মত নিঃসঙ্গ। আচ্ছা, ওটার ডাকটা কি আগেও এরকম সুন্দর ছিল? টিকটিক টিকটিক টিকটিক...........আহা আহা!!! টিকটিকি বড়ই কিউট প্রাণী!
আমি যখন অনেক কাজের বোঝা মাথায় নিয়ে বসে থাকি, তখন কী করি? মাথাটা পুরোপুরি ফাঁকা হয়ে যায়। এমন একটা ব্ল্যাঙ্ক লুকে তাকিয়ে থাকি, দেখলে মনে হবে অনেককিছুই ভাবছি। আসলে কিছুই ভাবছি না। যেটা করতে হবে, সেটার কোনওকিছুই না করে ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসে থাকি। অন্যকিছু করতে থাকি। পৃথিবীর অন্যসব কিছুকেই প্রয়োজনীয় বলে ভাবতে ভাল লাগে, হোক সেটা বাথরুমে যাওয়ার স্যান্ডেল দিয়ে তেলাপোকা মারা। তেলাপোকা নিধন মানবজাতির অস্তিত্ব বিপন্ন হয়ে যাওয়ার হাত থেকে বাঁচতে অতি জরুরি একটি কাজ। এভাবে করে একটাসময়ে রাত হয়ে যায়। সকালে উঠে কাজটা করতে পারব না জেনেও 'অল ইজ ওয়েল' জপতে-জপতে ঘুমিয়ে পড়ি। অনেক কাজের বোঝা মাথায় নিয়ে এমন শান্তির ঘুম আর কে-ই বা কখন দিতে পেরেছে? Only sleep is real!!
উফফ! আর লিখব না। কয়েল জ্বালাতে হবে। শালার মশারা ভালোবাসাও বোঝে না! ওরা পুরনো প্রেমিকার মতোই অবুঝ!! প্রেমিকা যেখানে চুমুও খায় না, মশকী কিনা সেখানে গিয়ে কামড়ায়! নির্লজ্জ মিষ্টিদুষ্টু মশকী!
কয়েল জ্বলছে। হাত চলছে; আবারও। মানে, হাতে সত্যিকারের কলম, আই মিন, কিবোর্ড!
এই যে ছেলে, তোমার প্রেমিকা নীল রঙের শাড়িও পরে তো? নাকি, অন্য অনেকের মতো, শুধুই বিএ এমএ পড়ে?
ভাবতাম, এইবারের ১৪ তারিখে দিকশূন্যপূরে থাকবো। শতাব্দীর সাথে দেখা হবে। কালোধূসর অথবা ওর পছন্দের যেকোনও রঙের পাঞ্জাবি পরে ওর হাত ধরে হাঁটবো, ছবি তুলবো। তোমরা শতাব্দীকে চেনো তো? চেনো না? কেনো চেনো না?
ভাল কথা, আমিও চিনি না।
এই কথাটা মনে পড়লো . . . . . . . যদি না-জিততে পারো তো জিতো না, কিন্তু তুমি হেরেও যেয়ো না তা বলে। কার কথা, মনে পড়ছে না। শুধু মনে পড়ছে, কথাটার জন্যে একদিন, হারিওনি, হারাইওনি। . . . . . . . কিন্তু, এই কথাটা . . . . . . আবার কেন?? দুঃখ কেন ফিরে-ফিরে আসে, সুখ শুধু ফিরে না?
আজও, এক-একটা ভ্যালেন্টাইনস্ ডে আমাকে অন্য মানুষ হতে বলে বলে পিছলে যায়। আমি মুখোশ পরতে পারি না। মুখোশ না পরাও, বস্তুত, একরকমের মুখোশ পরা-ই। মুখোশহীন মুখ আর মুখহীন মুখোশের মধ্যে যে দেয়াল, সে দেয়াল অতো মজবুত নয় বলেই জানি! লুডু খেলায় গুটি কাটা গেলে মেয়েরা যতটা কষ্ট পায়, মুখোশ পরতে-না-পারা ছেলেদের ব্যথায় তার সিকি ভাগও পায় না বোধহয়।
ছেলেগুলোও নিজেদের মতো করে মেয়েদের খুঁজতে গিয়ে হারিয়ে ফেলে। আচ্ছা, ছেলেগুলো এমন কেন? একটা মেয়েকে, মেয়েটা যেমন, ঠিক তেমনভাবে না খুঁজে বরং ও নিজে যেমন করে ভাবে এবং চায়, ঠিক তেমনভাবে খোঁজে। ছেলেগুলো মানুষ চায় না, মেয়েমানুষ চায়। . . . . . . মেয়েগুলো কী চায়? আমি কী জানি! ওরা তা নিজেরাই জানে নাকি? ওরা শুধু এইটুকুই জানে, ওরা 'কিছু একটা' চায়। কী যে চায় ওরা! একটা ছেলে ওর জীবনে আসবে। এসে বোঝানোর চেষ্টা করবে, ওই ‘কিছু একটা’ হচ্ছে এরকম, ওরকম, সেরকম .............আর ওরা অমনিই তা বিশ্বাস করে ফেলবে! বিশ্বাস করার ও অবিশ্বাস করার, দুই ক্ষমতাই মেয়েদের অসীম! মেয়েমাত্রই কনফিউসড প্রজাতির প্রাণী। মজার ব্যাপার হল, ওরা কনফিউসড হতে পছন্দও করে। ছেলেটা ওর নিজের সুবিধেমতো একটা কনফিউশন তৈরি করবে আর খুব কায়দাটায়দা করে বুঝিয়ে বলবে, এই কনফিউশনই সত্য, এই কনফিউশনই জীবন, এই কনফিউশনই সেই 'কিছু একটা'। ব্যস! হয়ে গেল! সুন্দরী যতো, কনফিউসড ততো! মেয়েদের সৌন্দর্য আর কনফিউসড-হতে-চাওয়া'টা পরস্পরের সমানুপাতিক।
এইসব ভাবতে ইদানিং আর ভাল লাগে না। এর চেয়ে বরং বসন্তউৎসব থেকে একটু আগে বাসায়-ফেরা গাঁদা ফুল-রঙা শাড়িপরা মায়ের দিকে তাকিয়ে তৃপ্তির হাসি হাসা ঢের ভাল। আমি দেখেছি, শুধু এই ভালোবাসাতেই মৃত্যুর সাথে ঝগড়াঝাঁটি করে সুখ পাওয়া যায়।
প্রতিবারের মতোই, ওর বদলে, আবারও ভ্যালেন্টাইনস্ ডে এলো। ও এলো না। পুজো এসে যায়, পুজোর উপাচার আর আসে না। শূন্য থালা নৈবেদ্যের প্রতীক্ষায় প্রহর গুনতেই থাকে, গুনতেই থাকে............
এই যে ছেলে, শোনো! তোমরা কিন্তু কালকে, বিকেলটা যখন আর কিছুতেই ফুরোতে চায় না, সেইসময়টাতে, হলুদ পাঞ্জাবি আর নীল শাড়ি পরে বইমেলায় কিংবা ও যেখানে যেতে বলে, সেখানে ঘুরবে। একটা দিনই তো! কালকে না হয় একটু ওর জন্য বেঁচো; পরশু থেকে আবার চাকরির জন্য। মনে থাকবে তো?
চলে যায় বসন্তের দিন............একা-একা! ফাগুনও ফুরোয়, তবু হায়, শীত ফুরোয় না!
পৃথিবীর সবচাইতে অপ্রতিরোধ্য ড্রাগের নাম: বই
বইমেলায় এলে ব্যাকপ্যাকের ভারে পিঠ নুয়ে যায়, বইয়ে বোঝাই ব্যাগগুলো হাতদুটোর শেষ জোরটুকুও কেড়ে নেয় যেন, ফর্সা-ফর্সা তালুতে গোলাপী আভা স্পষ্ট থেকে ক্রমশ স্পষ্টতর হয়ে ওঠে। তবুও এ বইয়ের নেশা কাটে শুধু বইয়েই। বই বইতে যে কষ্ট, সেটা মরে বইতেই। শুধু এই এক বইয়ের ভারের প্রচণ্ড যন্ত্রণা সমস্ত শরীরে নিয়েও মেলায় ঘুরতে-ঘুরতে দেখা হয়ে-যাওয়া পরিচিতদের হাসিমুখে ‘হ্যালো’ বলা যায়। পাথরের মত ভারী দেড় মণ বইয়ের বোঝা বহন করে ঘণ্টার পর ঘণ্টা স্টলেস্টলে বইয়ের সাগরে খুশিমনে সাঁতরে বেড়ানো যায়। পাগলের মত বই কিনি, ছাগলের মত সাজিয়ে রাখি। জানি, ওই কেনা আর সাজানো পর্যন্তই! তবু খুব বিশ্বাস করে ভাবতে শিখেছি, সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও একটা বই কিনতে না পারার অতৃপ্তি কয়েকটি মৃত্যুর সমান। বড়ো বেশি নেশাধরা ছোঁয়া এই বইয়ের ছোঁয়া। পৃথিবীতে ৩টি ঘ্রাণ একই রকমের: প্রেয়সীর চুলের ঘ্রাণ, ফুলের পাপড়ির ঘ্রাণ, আর বইয়ের পাতার ঘ্রাণ। ৩টিই নিঃসঙ্কোচ নির্লজ্জ দুর্বার মাদকতা জাগায়। আরও একটি ঘ্রাণ কখনও-কখনও মাতাল করে দেয়। কীসের? বলব না!
সেদিনের বইমেলায় ভিড় ছিল কম। কিন্তু কেন? ভালোবাসা দিবসে এমন তো হওয়ার কথা ছিল না। হুট করেই প্রেম কমে গেছে নাকি? নাকি, ব্রেকআপ বেড়ে গেছে? নাকি, দুটোই? নাকি, বইমেলার ভিড়কে ফাঁকি মেরে যুগল চলে গেছে কোনও নির্জন দ্বীপে............?
হায়! ভালোবাসা দিবসে ভালোবাসা বাড়েনি, ধুলো বেড়েছে। সেদিন যারা আমাকে ভালোবেসে প্রিয়জন ভুলে আমাকে সময় দিয়েছিল, তাদেরকে শুধুই ধুলো ছাড়া আর কিছুই খাওয়াতে পারলাম না। ওদের বেশিরভাগই ছিল মেয়ে! বুঝলাম, এ জগতে এখনও এমন মেয়ে আছে, যারা বইয়ের যন্ত্রণা সহ্য করার অসীম ক্ষমতা রাখে! যে মেয়ে বই সহ্য করতে পারে, সে মেয়ে নিঃসন্দেহে আমাকেও সহ্য করা শিখে নিতে পারবে!
সেদিনের ভ্যালেন্টাইনস ডে'তে হৃদয়ের বদলে ফুসফুস বিকিয়ে দিয়ে বাসায় ফিরে যাচ্ছিলাম যে গাড়িতে, সে গাড়িতে বাজছিল শুভ্র দেব।...... এই মন আমার পাথর তো নয় . . . . . . এর ঠিক আগে বাজলো খালিদ . . . . . কোনও কারণে ফেরানো গেলো না তাকে . . . . ড্রাইভারের কাকতালীয় সেন্স অব হিউমারে আমি রীতিমতো মুগ্ধ!
অন্য এক ভালোবাসা দিবসের সন্ধে। চাকরিশেষে বাসায় ফিরছি। দেখি, ইপিজেড থেকে দলে-দলে পোষাক-কন্যারা বের হচ্ছে। কারও-কারও হাতে, খোঁপায় গোলাপ, গ্লাডিওলাস, রজনীগন্ধা। চিরক্লান্ত চোখগুলো থেকে যেনো আলো ঠিকরে পড়ছে। সুন্দর খুশি-খুশি মুখ। অপূর্ব! আচ্ছা, ভালোবাসা কি মানুষকে সুন্দর করে দেয়? ছেলেদের অনেকেরই হাতে সুদৃশ্য ভ্যালেন্টাইনস্ কার্ড। ভালোবাসা ক্লান্তি ভুলিয়ে দেয়, দারিদ্র্য ঘুচিয়ে দেয়, ঐশ্বর্যের সন্ধান মিলিয়ে দেয়। অবয়বের সৌন্দর্য হাসিমুখে ম্লান হয়ে ওঠে জ্যোৎস্নার প্লাবনে ছাপিয়ে-ওঠা হৃদয়ের দুকূলের কাছে। ওরা কী যেন এক প্রচ্ছন্ন খুনসুটিতে মেতে উঠেছে। অতো সুখ দেখেও বড় শান্তি! গরীবের সুখ চোখে দেখার সুখ আর কিছুতেই মেলে না। আমি কখন জানি আপন মনেই হাসতে লাগলাম!
ভাল কথা, সেদিন আমার হাতও খালি ছিল না। সেদিনের পেপারটা ছিল---প্রথম আলো।
আসুন, তবুও, নিঃসঙ্গতার সকল গহীন নৈঃশব্দ্যকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে আজও ভালোবাসা দিবসে আমরা সব দুঃখ ভুলে গেয়ে যাই.......
স্বপ্ন দ্যাখো স্বপ্নবাজের মতো,
ভুলে যাও পুরনো ব্যথা যতো।
চলতে পথে যদি কেউ হাতটা এসে ধরে,
ভালোবেসো ওকে তোমার মতো করে!
ভালোবাসা ভাল থাকুক! ভালোবাসা বেঁচে থাকুক!
অফ-টপিক। ডেন্টিস্টের চেম্বারে গেলে উনি কাজ করার সময়ে যখন মুখটাকে হাঁ করিয়ে রাখেন, তখন চোয়ালের ব্যথায় উনাকে আমার মতো কার-কার খুব করে কামড়াতে ইচ্ছে করে, হাত তুলুন!!