বিগতজন্মের দায়ের ছাপ

 
খুব একটা মজার ব্যাপার ঘটল!
আমি তোমায় কত অনুরোধ করলাম, কত আকুতি করলাম…
একটা ভয়েসমেসেজ পাঠাও…


পাঠালে। অনেক সাধনার পর একদিন একটু করে আওয়াজ শুনতে পেলাম।
তুমি তোমার ওয়ালে যে গানগুলি গেয়ে পোস্ট কর,
সেগুলিতে, জানো, ইন্সট্রুমেন্টের ওই ক্যাওম্যাও শব্দের জন্য
তোমার কণ্ঠস্বরটা ঠিক বোঝা যায় না।
অবশেষে তুমি পাঠালে। খুব খুশির দিন ছিল সেদিন।
কতবার যে তোমার ওই রাগী কণ্ঠটা শুনেছি, তার ঠিক নেই।


সেদিন তুমি রেগেমেগে কেমন জানি হয়ে গেলে…আর
দুমাদুম দুই দুইটা ভয়েসমেসেজ পাঠিয়ে দিলে!
বাব্বাহ্‌! অমন শান্ত কণ্ঠস্বরে সে কী রিমান্ড!...আমায় ভুল বুঝেছিলে।
আমার মনে সত্যিই যা আছে, তা যে তোমায় কী করে বোঝাই,
কীভাবে যে তোমায় শান্ত করি, এসব ভাবতে ভাবতে
আমার মাথাটাই পুরো এলোমেলো হয়ে গিয়েছিল!
ভয়েসমেসেজটা প্রথমদিকে খুব ভয়ে ভয়েই শুনেছি!


তবে তোমার মনে যা-ই ছিল, তুমি তা-ই বলেছ।
এটাই ভালো! সত্যি বলছি, এটাই খুব ভালো ব্যাপার ছিল।
আচ্ছা, তুমি আমায় কখনও কখনও ভয়েসমেসেজ পাঠাবে?
মানে গালি দিলেও চলবে। তবে যদি পার,
গালি পর্যন্ত না গিয়ে বকাতেই থেকো, কেমন? যদি না-ও পার,
তা-ও পাঠিয়ো! তোমার মনে যা আসে, তা-ই বলবে।
একটা কথাও বানিয়ে বোলো না, মনের বাইরে গিয়ে কিছু বোলো না।


মাঝেমধ্যে এই বোকা মেয়েটাকে তোমায় পাঠিয়ো!
তুমি ঠিক যেমনি করে কথা বল, তোমার শ্বাসের শব্দ ঠিক যেমন,
আমি ওটাই চাই! আমার প্রাণে তোমার স্বাভাবিক শব্দ এসে ধাক্কা দিক।
…পাঠাবে তো?


জানো, মাঝে মাঝে ভাবি,
তোমাকে কেন এত ভালোবাসি? না বাসলে কী হয়?
…আচ্ছা, একবার চেষ্টা করি তো!


খুব কিছু সময় ধরে আমি এক নিঃস্পৃহ নারীর ভূমিকায় অভিনয় করে গেলাম।
হঠাৎ! পেছনে তাকিয়ে দেখি, তুমি মায়াভরা চেহারা নিয়ে বলছ, কী গো? ভুলে গেছ আমায়?
আমি তখন কী এক ভাবধরা মুখ নিয়ে রুমে গিয়ে দেখি রুম খালি কি না।
নইলে বারান্দা, নইলে অন্যরুমে যাব।
ওদিকে তুমি সারল্যমাখা মৃদুহাসি সারামুখে ছড়িয়ে আমার পেছনে পেছনে হেঁটে চলেছ…


যা-ই হোক, একটা রুমে ঢুকে গিয়ে ফ্যানটা জোরে চালিয়ে দিয়ে
বসে পড়ার পর তুমি মিষ্টি হেসে বললে, কী হলো? ভুলে গেছ? সত্যিই ভুলে গেছ?
শুনে আমার সে কী ভাব! রীতিমতো ফুলছি আমি!
যত অবজ্ঞাভরা দৃষ্টি ছুড়ে দিচ্ছি তোমার দিকে, দেখছি,
তোমার হাসি ততই বেশি কনফিডেন্ট হচ্ছে! কী এক জ্বালা, বলো তো!


অগত্যা, কী আর করা! সেইসময় গান আমাকে শুনতেই হয়!
কানে হেডফোন গুঁজলাম। যে-ই না গান শুরু,
অমনিই বুকটায় টিপ টিপ করতে থাকে, কান্না পেতে থাকে…
তোমার কলারটা চেপে ধরে তোমাকে আমার সামনে এনে বসিয়ে বললাম,
এই শুয়োর! তুই আমাকে আর কত জ্বালাবি?
তুমি হাসিমাখা মুখে গোলগোল চোখে আমার হাত শক্ত করে ধরে বললে,
আবার তুই তোকারি! খুব ভালো! তাই তো ভালো লাগে এমন করতে!


সাথে সাথেই ভ্রুটা কুঁচকে আমি অন্যদিকে মুখ ফিরিয়ে নিই।
তুমিও যা নাছোড়বান্দা! আমার মুখের কাছাকাছি এসে আবার আস্তে আস্তে বললে,
কী হলো রে? বলে ফেল না…আমায় খুব ভাল্লাগে তোর?
আমি ফোঁসফোঁস করে বললাম…গাধাটা! হুম্‌!
তুমি একইরকম ভঙ্গিতে বললে,
ঠিক আছে। এখন বলো, আমি শুনছি। ভুলে যাওনি তো আমাকে, না?


হঠাৎ আমার বুকটায় মোচড় দিয়ে কান্না পেয়ে যায়!
তোমাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বকতে থাকি ফিসফিস করে,
জানোই তো তুমি, পারব না ভুলতে! ভালোবাসি! ভীষণ রকমের ভালোবাসি!
এটা জানো বলেই তো এত বাহাদুরি দেখাও, না? আস্ত একটা ঢং কোথাকার!


ওভাবে কতক্ষণ কেটেছে, জানি না। একসময় তোমাকে জড়িয়ে ধরে
আদর করতে করতে দেখি, আমার নরম কোলবালিশটা লক্ষ্মী হয়ে আমার বুকে লেপটে আছে।
বুঝলাম, আমার ঘুম ভেঙেছে।
বাস্তবতায় ফিরে ভাবি, বুঝি এই রোগ আমায় আমৃত্যুই তাড়া করে যাবে!
তুমি তো ভালোই আছ তোমার জগতে! থাকবেও ওখানেই!
তুমি কি কখনও জানবে এসব পাগলামির কথা?


আমি পালিয়ে যাব অনেক দূরে…
সেখানে গেলেও তবু কি ভুলতে পারব তোমাকে?


আচ্ছা, সবকিছুই নাকি পূর্বজন্মের কর্মের ফল?
যদি তা-ই হয়, তবে বলো তো, আমি কী করেছি আগের জন্মে?
তোমায় কষ্ট দিয়েছি?
তুমি আমায় কি এমনি করেই ভালোবাসতে,
আর আমি তোমার ভালোবাসাকে নিয়ে ঠাট্টা করেছি?
তুমি পাগলের মতো ভালোবেসেছ, আর আমি ভীষণ দম্ভ দেখিয়ে উপেক্ষা করেছি তোমায়?
না কি অবহেলা করেছি তোমার আবদারগুলি?
…আমি করেছিটা কী? বলো! বলো না একবার…বলো না, প্লিজ!
যদি কিছুই না করে থাকি সেই জন্মে, তবে এই কষ্টটা শুধু আমার কেন?
এটা ভালোবাসার শাস্তিই যদি হবে, তবে তা শুধু আমারই কেন?