বিষণ্ন সূর্যের নিচে

  
 আমি যে কতটা মায়া অনুভব করি তোমার জন্য,
 তোমাকে ঠিক বোঝাতে পারি না, যেমন পারি না ভালোবাসাটুকু!
  
 কোভিড নাইনটিনের ভয়ে
 আমার এখন রাতে ঘুম আসে না, দিনে তো ভুলেও না!
 কড়া একমগ রংচা নিয়ে পড়ার টেবিলে বসেছি,
 ল্যাপটপ অন করে তোমার ছবির দিকে তাকিয়ে আছি।
 নিজের দিকে তাকিয়ে আমার মনে হচ্ছে,
 আমি এখন বেকার, তোমাকে ভালোবাসা ছাড়া আমার আর কোনও কাজ নেই।
  
 আমি বুঝতে পারছি, এই পৃথিবীতে বেকার মানুষদের ভালোবাসার তীব্রতা অনেক বেশি থাকে,
 ব্যস্ততার ছোবলে পড়ে ভালোবাসা বাধ্য হয়েই হিসেবি হয়ে ওঠে।
  
 রুমে অর্ধসম্পন্ন অনেক কাজ ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে,
 অথচ এইসব অপেক্ষমাণ কাজ গোছানোর কোনও তাড়া নেই আমার।
 তোমাকে ভালোবাসার অনেক তাড়া থাকলেও
 তোমার দিকে তাকিয়ে থাকতে আর ভালো লাগছে না।
  
 আমার তোমাকে গালি দিতে ইচ্ছে করছে,
 তোমার নাকে ঘুষি মারতে ইচ্ছে করছে,
 তোমার মাথার চুল টেনে টেনে ছিঁড়ে ফেলতে ইচ্ছে করছে।
 আরও অনেক কিছুই ইচ্ছে করছে, যা বললে তুমি রাগ করবে।
  
 আমি এখন তোমাকে রাগাতে চাইছি না।
 এই মহামারিতে যদি মরে যাই,
 যদি আবার তোমার কাছে ক্ষমা চাওয়ার সুযোগ না হয়…
 তাই তোমাকে কষ্ট দিয়ে মরে যেতে আমি নারাজ।
  
 তুমি আমাকে বলো, তুমি আমাকে হাসানোর চেষ্টায় ফোন করো।
 আজকাল নাকি তুমি আমাকে বিষাদগ্রস্ত পাও!
 অদ্ভুত! বিষাদগ্রস্ত পাবে না?
 করোনাআক্রান্ত সন্দেহে, শ্বাসকষ্টের সন্দেহে,
 অসুস্থ রোগীরা সেবা পাচ্ছেন না। এই অবস্থায়, এই মুহূর্তে
 অসুস্থ হলে ঠিকমতো চিকিৎসা পাওয়ার সম্ভাবনা অল্প।
 আমি ধরে নিচ্ছি, পাবো না! অসুস্থ হলে
 কাছের দূরের একজন মানুষও দেখতে আসবে না। এমনকি, তুমিও না!
  
 আহা ভালোবাসা! এ হচ্ছে কচুর ভালোবাসা!
 কী এক কোভিড নাইনটিনের জন্য কেউ এখন কাউকে ভালো-টালো বাসছে না আর,
 ভালোবাসছে এক নিজের নিঃশ্বাসটাকেই!
  
 শোনো, আমাকে হাসানোর চেষ্টা থেকে তুমি বরং সরে আসো।
 তুমি আমার চেয়েও বেশি মৃত্যুভয়ে আছ,
 আর এজন্যই দেশে এই ব্যাধি আসার পর থেকে
 দীর্ঘসময় ধরে তুমি আমার চোখের সামনে থেকে পালিয়ে বেড়াচ্ছ!
 এই জন্মে তোমার সাথে আমার দেখা হওয়ার সম্ভাবনা খুবই ক্ষীণ মনে হচ্ছে।
  
 তুমি ঘরে বসে মুভি দেখতে দেখতে পাগল হয়ে যেয়ো না,
 পৃথিবীটা কখন সুস্থ হবে, সেটার একটু খবর রেখো, মাঝে মাঝে আমারও।
 জানোই তো, তোমার মধ্যে যে ভীতু তুমিটা আছে,
 ওকে আমি অনেক ভালোবাসি, অনেক।
  
 রোজ তোমার জন্য প্রার্থনা করি।
 তুমি নিরাপদে থেকো, বাসায় থেকো, মায়ের আদরে থেকো।
 নিজের অসুস্থতার দিকে খেয়াল রেখো, নিজের মনের যত্ন নিয়ো।
  
 একদিন এই মহামারি শেষ হবে, তুমি বন্দিত্ব থেকে মুক্ত হবে, পৃথিবী সুস্থ হবে।
 সেদিনও সুন্দরভাবে বেঁচে থেকো।
 মাথায় রেখো, এই দুঃসময়ের ঘায়ে যদি আমি মরে যাই,
 ভূত হয়ে এসে হলেও তোমাকে ঠিকই জ্বালাব,
 তোমার কল্পনায়, তোমার ভাবনায় থেকে যাব।
 আমি ভালোবাসবই তোমাকে, সে আমি যেখানেই থাকি না কেন!
  
 তোমাকে বলা হয়নি,
 আমি নিজের জন্য এক সেট কাফনের কাপড় কিনে রেখেছি,
 দাফনটুকু কে করবে, সেটা একমাত্র আল্লাহ্‌ই জানেন।
 এই মহামারিটা এসে বুঝিয়েছে, মানুষ হিসেবে
 আমরা কতটা অমানবিক, নির্দয়, এবং একই সাথে অসহায়।
 আমাদের সমস্ত বিশ্বাস ও দর্প কতটা ঠুনকো!
 মানুষের উপর আস্থা রেখে শেষপর্যন্ত বেঁচেথাকা খুব কঠিন!
  
 তোমাকে লিখতে কিংবা বলতে আমার আর ভালো লাগছে না।
 আমি এখন ঘুমিয়ে পড়ব এক বিষণ্ন সূর্যের নিচে,
 সমুদ্রের পাড়ে সদ্যই জন্মনেওয়া কাছিমের বাচ্চার পাশে।