বিসিএস লিখিত পরীক্ষার প্রস্তুতিকৌশল: গাণিতিক যুক্তি, মানসিক দক্ষতা, সাধারণ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি (কালের কণ্ঠ)

গলফ খেলায় ভাল খেলোয়াড়রা দুটো ব্যাপার মাথায় রাখেন: এক। বল। দুই। গর্তটা। গর্তে বলটা ফেলার জন্য গর্তের সাথে বলটার সংযোগের একটা দৃঢ় কল্পনা মাথায় আসার পরেই উনারা বলে আঘাত করেন। আর সাধারণ মানের খেলোয়াড়রা দূরত্ব, আশেপাশের মাঠের পরিবেশ, দর্শকদের প্রতিক্রিয়া—এসব নিয়েই বেশি ভাবতে থাকেন।

বিসিএস পরীক্ষার জন্য দুটো ব্যাপার মাথায় রাখুন: এক। প্রস্তুতিকৌশল। দুই। চাকরিটা। বিসিএস নিয়ে যত বেশি গবেষণা করবেন, ততই আপনার প্রস্তুতি খারাপ হবে। আপনার স্বপ্নটা মাথায় রেখে আর কোনওকিছুকেই তোয়াক্কা না করে প্রচুর পরিশ্রম করে প্রস্তুতি নিন। দেখবেন, চূড়ান্ত গেজেটে আপনার রোল নাম্বারটা আছে!

এই সময়টাতে আপনার মনোযোগ বিক্ষিপ্ত করে, এমনসব ব্যাপার আপনার জীবন থেকে সাময়িকভাবে হলেও একেবারেই সরিয়ে দিন। সবাই সবকিছু পছন্দ করে না। এটা ঠিক আছে। কিন্তু অনেক নির্বোধই আরেকজনের পছন্দ নিয়ে নানান মন্তব্য করতে পছন্দ করে। ওরকম লোকজন থেকে নিজেকে দূরে রাখুন।

গাণিতিক যুক্তির জন্য যেকোন তিনটি গাইড বই কিনে সলভ্ করে ফেলুন। ম্যাথস্ ভাল না পারলে প্রতিদিনই প্র্যাকটিস করুন। বিসিএস পরীক্ষায় ম্যাথসে ফুল মার্কস পাওয়ার জন্য সায়েন্সের স্টুডেন্ট হতে হয় না। প্রতিটি স্টেপ বিস্তারিতভাবে দেখিয়ে ম্যাথস্ করবেন। কোন সাইডনোট, প্রাসঙ্গিক তথ্য—কিছুই যেন বাদ না যায়। কোন অংশটা কোথা থেকে দেখতে পারেন, সেটা নিয়ে বলছি।

সরল: আগের বছরের প্রশ্ন, গাইড বই। সরলের উত্তর সবার শেষে করলে ভাল হয়।

বীজগাণিতিক রাশিমালা, বীজগাণিতিক সূত্রাবলী, উৎপাদকে বিশ্লেষণ, একমাত্রিক ও বহুমাত্রিক সমীকরণ, একমাত্রিক ও বহুমাত্রিক অসমতা, সমাধান নির্ণয়, পরিমিতি, ত্রিকোণমিতি: আগের বছরের প্রশ্ন, গাইড বই। চাইলে ৯ম-১০ম শ্রেণীর গণিতের সংশ্লিষ্ট অধ্যায় সলভ্ করে নিতে পারেন।

ঐকিক নিয়ম, গড়, শতকরা, সুদকষা, লসাগু, গসাগু, অনুপাত ও সমানুপাত, লাভক্ষতি, রেখা, কোণ, ত্রিভুজ, বৃত্ত সংক্রান্ত উপপাদ্য, পিথাগোরাসের উপপাদ্য, অনুসিদ্ধান্তসমূহ: আগের বছরের প্রশ্ন, গাইড বই

সূচক ও লগারিদম, সমান্তর ও জ্যামিতিক প্রগমন, সেটতত্ত্ব, ভেনচিত্র, সংখ্যাতত্ত্ব: গাইড বই এবং ৯ম-১০ম শ্রেণীর গণিতের সংশ্লিষ্ট অধ্যায়

বিন্যাস ও সমাবেশ, স্থানাংক জ্যামিতি: গাইড বই, ১১শ শ্রেণীর বই থেকে সংশ্লিষ্ট অধ্যায়

সম্ভাবনা: গাইড বই, ১২শ শ্রেণীর বিচ্ছিন্ন গণিতের সংশ্লিষ্ট অধ্যায়

মানসিক দক্ষতার প্রশ্নগুলো একটু ঘোরানো হওয়ারই কথা। মাথা ঠাণ্ডা রেখে, ভালভাবে প্রশ্ন পড়ে, এদিকওদিক না তাকিয়ে পূর্ণ মনোযোগ দিয়ে উত্তর করতে হবে। অবশ্যই ৪-৫টা গাইডবই ভালভাবে পড়ে ফেলুন। গাইড বই, আইকিউ টেস্টের বই, আর গুগলে সার্চ করে বিভিন্ন সাইটে ঢুকে এই অংশটি নিয়মিত প্র্যাকটিস করতে পারেন। এ অংশে ফুল মার্কস পাবেন না, এটা মাথায় রেখে প্রস্তুতি নিন।

সাধারণ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি অংশের জন্য আগের বছরের প্রশ্নগুলো আর ২-৩টা গাইড বইয়ের সাজেশনসের প্রশ্নগুলো প্রথমেই যথেষ্ট সময় নিয়ে কয়েকবার খুব ভালভাবে পড়ে ফেলুন। এই অংশে সাধারণত সায়েন্সের স্টুডেন্টরা মার্কস কম পায়, এর কারণ হল, অহেতুক আত্মবিশ্বাসের জোরে অনেকেই ঠিকভাবে প্রস্তুতি নেয় না। বিজ্ঞানে বানিয়ে বানিয়ে লিখুন একটু কম। প্রয়োজনীয় চিহ্নিত চিত্র, সংকেত, সমীকরণ দিতে পারলে আপনার খাতাটা অন্য দশজনের খাতার চাইতে আলাদা হবে। মাথায় রাখুন, ১০ মার্কসের একটা প্রশ্ন উত্তর করার চাইতে ৪+৩+৩=১০ মার্কসের ৩টা প্রশ্নের উত্তর করা ভাল। এখন কোন অংশটি কোথা থেকে পড়তে পারেন, সেটা নিয়ে বলছি।

আলো, শব্দ, চৌম্বকবিদ্যা: গাইড বই, ৯ম-১০ম শ্রেণীর পদার্থবিজ্ঞান, ১১শ-১২শ শ্রেণীর পদার্থবিজ্ঞান ১ম ও ২য় পত্র

অম্ল, ক্ষারক, লবণ: ৯ম-১০ম শ্রেণীর সাধারণ বিজ্ঞান, ১১শ শ্রেণীর রসায়নবিজ্ঞান

পানি, আমাদের সম্পদসমূহ, পলিমার, বায়ুমণ্ডল, খাদ্য ও পুষ্টি, জৈবপ্রযুক্তি, রোগব্যাধি ও স্বাস্থ্যের যত্ন: গাইড বই, ইন্টারনেট, ৯ম-১০ম শ্রেণীর সাধারণ বিজ্ঞান, ৯ম-১০ম শ্রেণীর ভূগোল

কম্পিউটার ও তথ্যপ্রযুক্তি: গাইড বই, ইন্টারনেট, পিটার নরটনের ইন্ট্রোডাকশন টু কম্পিউটারস, উচ্চমাধ্যমিক কম্পিউটার শিক্ষা ১ম ও ২য় পত্র

ইলেকট্রিকাল এবং ইলেকট্রনিক টেকনোলজি: গাইড বই+ উচ্চমাধ্যমিক পদার্থবিজ্ঞান ২য় পত্রের বই

সিলেবাস দেখে টপিক ধরে ধরে কোনটা কোনটা দরকার, শুধু ওইটুকুই ওপরের বইগুলো থেকে পড়বেন (গাইডেও অনেককিছু দেয়া থাকে যেগুলোর কোন দরকারই নেই)। চাইলে পুরো বই না কিনে যতটুকু দরকার শুধু ততটুকু ফটোকপি করে নিতে পারেন। ইন্টারনেটে টপিকগুলোকে গুগল করে করে পড়লে খুবই ভাল হয়। বেশি বেশি প্রশ্ন স্টাডি করে প্রশ্নের ধরন বোঝার চেষ্টা করুন, এতে অপ্রয়োজনীয় প্রশ্ন পড়ে সময় নষ্ট হবে না।

এই সময়টাতে এদিকওদিক না দৌড়ে, বাসায় বেশি সময় দিন। প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় প্রধান সমস্যাটাই হল, প্রিপারেশন প্রিপারেশন ভাব, প্রিপারেশনের অভাব। বিসিএস লিখিত পরীক্ষা দেয়া অতো সোজা না। এটা ঠিক, এ পরীক্ষা দিয়ে পাস করে ফেলতে পারবেন, কারণ এ পরীক্ষায় ফেল করা আসলেই কঠিন। শুধু পাস করার সান্ত্বনা পুরস্কার হিসেবে ভাইভা পরীক্ষা দিতে পারবেন, আর কিছু না। আপনার টার্গেট পাস করা নয়, চাকরি পাওয়ার মতো বেশি নম্বর পেয়ে পাস করা। যদি ঠিকভাবে বুঝেশুনে পরিশ্রম করেন আর সেটাকে কাজে লাগাতে পারেন, তবে ভালভাবে পাস করার যথার্থ পুরস্কার হিসেবে চাকরিটা পাবেন।

লেখাটি গত ১১ মে ২০১৬ তারিখ কালের কণ্ঠ পত্রিকার ‘চাকরি আছে’ পাতায় এসেছিলো। লিংকটি:

http://www.kalerkantho.com/print-edition/chakriache/2016/05/11/356965