বেঁচে নেবার গান

নাহয় তোমাকে আমি প্রতারক ভেবেই ঠিক বেঁচে নেবো,
আমি নাহয় তোমাকে ভণ্ড আর জোচ্চোর ভেবেই বেঁচে নেবো,
নাহয় তোমাকে আমি কাপুরষ ভেবেই ঠিক বেঁচে নেবো,
আমি নাহয় তোমাকে বিশ্বাসঘাতক ভেবেই আজ বেঁচে নেবো,
নাহয় তোমাকে আমি জলের কুমির ভেবেই এবার বেঁচে নেবো,
নাহয় তোমাকে আমি ডাঙার বিষধর সাপ ভেবে বেঁচে নেবো,
আমি নাহয় তোমাকে পালা করে করে এটা সেটা ভেবে ভেবে
দিনের পর দিন, রাতের পর রাত ঠিক ঠিক বেঁচে নেবো,
আমি নাহয় নিজেকে আস্ত একটা বোকা ভেবে বেঁচে নেবো,
আমি নাহয় নিজেকে রাস্তার পাশে পড়ে-থাকা বন্য এক অচেনা ফুল ভেবে বেঁচে নেবো,
আমি নাহয় নিজেকে নষ্টমেয়ে ভেবে বেঁচে নেবো,
আমি নাহয় নিজের ভালোবাসার প্রতি ঘৃণা করতে শিখে বেঁচে নেবো,
আমি নাহয় নিজেকে এই পৃথিবীর আগাছা ভেবে বেঁচে নেবো,
আমি নাহয় নিজেকে অভাগা ভেবে বেঁচে নেবো,
আমি নাহয় নিজেকে শঙ্খচিল ভেবে ক্ষণিকের পাখি ভেবেই বেঁচে নেবো,
আমি নাহয় ভেবে নেবো, ভুল করে কোনও এক ভুলে চলে এসেছিলাম এই তোমাদের মাঝে,
আমি নাহয় ভেবে নেবো, আমি আমারই ভুলের প্রায়শ্চিত্তে ঠায় বেঁচে আছি,
আমি নাহয় নিজেকে ভাঙনের কড়াল গ্রাস ভেবে বেঁচে নেবো,
আমি নাহয় নিজেকে কালের কালো মেঘ ভেবে বেঁচে নেবো,
আমি নাহয় বেঁচে নেবো যেমন তেমন একটা জীবন,
আমি নাহয় করে নেবো বোঝাপড়াটা নিজের সাথেই, যে করেই হোক,
আমি নাহয় বুঝিয়ে নেবো বেঁচে নিজেকে এই যে, তোমাদের জীবন আমার জীবন এক নয়,
আমি নাহয় বেঁচে নিতে শুরু করব নিজের জীবন নিজের মতো করে,
শত বার যে জীবন আমি রোজ অস্বীকার করে গেছি,
রোজ যে জীবন থেকে আমি পালিয়ে বাঁচতে চাইছি,
যে জীবনটাকে নিজের বলে মেনে নিতে চাইনি কখনও,
যে জীবনকে দেখে ভেবেছি, আমার জীবনটাও একদিন ওদের মতনই হবে,
আমি নাহয় এই জীবনের সকল ভুল ভাবনাকে ঝেড়ে ফেলে নিজের এই ভাঙাজীবন,
নিজের এই দরিদ্র আর ভিখিরির জীবন ঠিক বেঁচে নেবো।


তবুও আমাকে করুণা করে নিয়ো না টেনে বুকে, ভুলেও,
আমি তো ভালোবাসা ছাড়াই বেঁচে নিয়েছি এতটা কাল,
আর নাহয় কয়েকটা দিন এই ছোট্ট একটা জীবন ঘুমের ঘোরেই কেটে যাবে,
তবুও যাক যেমন খুশি, দিয়ো না আমাকে মিথ্যে ভালোবাসা,
আমাকে মরে যেতে দিয়ো যদি ভালোবাসাহীন এই জীবন আমাকে কুঁড়ে কুঁড়ে খায়
রোজ একটুখানি করে, তবুও ক্ষয়ে যেতে দিয়ো এই অবলা প্রাণখানি,
আমার চাই না কোনও করুণা, চাই না কোনও এমন স্বভাব,
যে স্বভাব চোখের আড়াল হলেই হয় বর্ণচোরা।


আমাকে নাহয় হারিয়ে যেতে দিয়ো,
নাহয় আমাকে রোজ পচে যেতে দিয়ো একটু একটুখানি করে,
বিধাতার বিধান কে আটকায়, বলো?
যদি অদৃষ্টরে করো কখনও বিশ্বাস, তবে জেনো, অদৃষ্টেই আমার ছিল এমনই কিছু লেখা,
আমার এই শূন্য জীবন,
আমার এই শূন্য নীড় ভালোবাসাহীন মরুভূমি হয়ে পড়ে থাকুক,
তবুও কোনও অনিশ্চিত পথিক এই পথ যেন না মাড়ায় কখনও,
আমার এই পৃথিবীতে আমার কেবল আমিটাই থাকুক পড়ে!


আমি নাহয় রোজ নিজের সাথে নিজেকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বেঁচে নেবো,
আমি নাহয় নিজের ছায়ার সাথে ঠিকই বেঁচে নেবো,
নাহয় আমার ঘরে ঘুটঘুটে আঁধারই থেকে যাবে,
নাহয় আমার চোখ কেবল শূন্যতা দেখবে দূর থেকে দূরে,
নাহয় আমার পা দুটো গ্রীষ্মের তপ্ত রোদে পুড়ে পুড়ে ফেটে চৌচির হয়ে যাবে,
নাহয় তেষ্টায় আমার গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে যাবে, জানি, তবুও জল পাবো না একটি ফোঁটাও,
তবুও হেঁটে যাব এই পথ,
এই পথের শেষ প্রান্তে গিয়ে যিনি ঠায় দাঁড়িয়ে আছেন, বলব তাঁরে,
‘জীবন আমার গেছে জীবনেরই মতো,
যা-কিছু পেয়েছি এই চলার পথে,
সব কিছুই এসেছি ঝেড়ে ফেলে ওই পথেরই বাঁকে,
যা-কিছু দিয়েছেন আমার এই ক্ষুদ্র সত্তাটিরে আপন করে,
সেইসব তার নিয়েছি মেনে, নিয়তিরে করেছি বরণ অকাতরে,
এবার এই পথের দায় আমার ফুরোলো,
এবারে তবে দয়া করে আমাকে গ্রহণ করুন, হে মহামহিম!’