বোধের অন্য পাঠ

 আমার দেয়া সুখটুকুকে ঝুলিয়ে রেখো--ওই দেয়ালে,
যেমনি লোকে রঙবেরঙের ক্যালেন্ডারকে ঝুলিয়ে রাখে।
আস্তিনে আমার খেয়াল করো, ছোট্ট একটা ফুটো আছে--কাজে লাগবে।
ব্যাপারটা আর কিছু নয়, এটুকই শুধু।
তোমার আর আমার মাঝে জায়গা যেটুক,
সেখানটাতে তুমিও নেই, আমিও নেই।
আমি জানি, আমি এখানে অতিথি কেবলই,
এক দড়ির উপর আয়না ঝুলছে--সেটাই আমি!
ওটা এদিকওদিক ঘোরেই কেবল, স্থির হয় না--
শুধুই ছায়া আটকায়, আর কিছু না।
 
এক অবিশ্বাস্য দ্রুততায় বদলে যাচ্ছে সবকিছু,
ক্ষতির যত ঠিকানা আছে, লাভের তত নেই।
লাভের ঘর একটাই, জানি; ক্ষতি ঘর তো অগণিত!
যদি এমন কোনও উপায় পেতাম,
যাতে মিথ্যেগুলি আলাদা হতো,
তবে কি বলো, এমনি করে হারিয়ে যেতাম?
আমার পায়ের চিহ্নগুলি এক-এক করে মুছে দিয়ে,
যত্নে বোঝার চেষ্টা করি, এই আমি’টা কেমন ছিলাম?
কিছুই তো আজ মনে পড়ে না!
আমার আমি’টা যেমন ছিলাম, তেমন ছিলাম--মানে, আগের মতন...শেষ কখন কবে?
মনে পড়ে না।
অঙ্গুরীয় কিংবা আলো, কোনটা ছিলাম?
নাকি কোনও শরতবেলার দিঘি ছিলাম,
আলো জমাতাম, আলো ছড়াতাম?
শীতল সে আলো--তাপ থাকে না, ছায়া থাকে।
হয়তো সবই মনের সৃষ্টি! যাকগে সে কথা...
এমনকিছুই নেই জগতে যা আমাকে ফিরিয়ে নেবে আগের আমি’তে।
 
তোমার ওই দুটি হাত পলকে হারায় কোথায় যেন, যেমনি করে বানের জলে দূরে ভেসে যায় গাছের শাখা। আমি দেখেছি।
জীবন যেন এক পুরনো সিনেমা--একই দৃশ্যে একই মানুষ, একই অনুভব, একই কষ্ট।
আমি আগামী দেখি অশনি দেখে--শুধু আলোই দেখি, আঘাতটা নয়।
তাই বড় অনায়াসে আঘাত আসে এক-এক করে--আমার বুকে।
আমায় যা খোঁজে, তা-ই যে পালায় আমায় পেয়ে,
বর্তমানটা...যখনই ভাবি--মৃদু, বিনীত আর নম্র,
তখনই বিপদ আসে ধেয়ে--সে বড় উন্মত্ত আর মাতাল-বন্য!
আমার এই হাতে রুটি, কত সুখে ছুটি! কে জানে হায় উপোসই আছে শুধু এই নসিবে!
 
হে নিয়তি! ধন্যবাদ তবু। কতকিছুই তো পারত হতে!
এখন যা আছি, ভালই তো আছি--এমনই ভাবি।
স্বপ্নে দেখি, কোনও সন্ধেআলোয় দারুণ আয়োজন। জীবনের উৎসবে
সে আসে, কাছে এসে আমার বাহুতে জড়ায় নিজেকে, আর মৃদু হেসে বলে, ভাল আছ?
তার চুলের, গ্রীবার আর চিবুকের পুরনো সে ঘ্রাণ চিনতে পারি ঠিক, ভুল হয় নাকো!
আলতো চুম্বনে আমায় বেঁধে ফিসফিসিয়ে ভালোবেসে বলে, স্বপ্নে বেঁচো, বাস্তবে নয়!
ঘুম ভেঙে যায়! স্বপ্নের চুমু স্বপ্নেই মিলায়! বাস্তব শুধুই আহত করে!
তবু মনে হয়, ও যেন স্বপ্ন নয়! জেগেই তো ছিলাম, এখনও আছি!...আমরা কি তবে স্বপ্নে বাঁচি?
আমি তো ভাবিনি অমন হবে, তবু তো হয়েছে! ভেবে নিলে তবে সত্যি করেই স্বপ্ন আসে?
 
আমার হৃদয়ে তোমায় রেখেছি মুগ্ধতা ভরে,
তোমার হাসিতে স্বপ্ন আমার কেবলই ঝরে,
এমন কেন হয়, বলতে পারি না, বুঝতে পারি না।
এই অনুভূতি বেড়ে চলে শুধু, শুধু বেড়ে যায়...এটুকই জানি!
প্রার্থনায় চাই, তুমি যেন আসো আমার হয়ে...বন্ধু শুধু নয়, আত্মা হয়ে।
আমি স্বপ্ন ভাঙি না, বাস্তবে আমি বেমানান বড়,
ভাবি যখনই, আমার তো নও তুমি কখনও--অন্য কারও,
আমি নিথর হয়ে পড়ি, অনুভূতি আর কাজ করে না, জীবন আমায় আর টানে না।
আমি জেনেবুঝেই স্বপ্নে বাঁচি--বাঁচার তাগিদে!
 
যারা ভেবে নেয়, আমায় দেখে, কতটুকু দেখে?
পৃথিবীর কাছে আমার পরিচয়--হয়তো বোধহয় সম্ভবত...আর কিছু নয়।
আমার কী ব্যথা, কেউ জানে না।
কত রাত কেটে যায়...ঘুমুতে পারি না--কেউ জানে না।
এই হাসির আড়ালে কান্না কতটা--কেউ জানে না।
বন্ধুরা দেখে, কত ভাল আছি, কত হাসিখুশি!
কেবল আমিই জানি, আমি বেঁচে আছি কেমন করে, কোন মুখোশে।
প্রায়ই মনে হয়, এমনি করে আর কতকাল? হার মেনে নিই, দুঃখ কমাই, শান্তি বাড়াই।
সত্যি বলছি, তবু ভাল আছি। তুমি আছ পাশে--স্বপ্নের বেশে, হৃদয়ের দেশে।
 
সুখের মানে তো তোমায় দেখা।
সুখের মানে তো তোমায় বোঝা।
সুখের মানে তো তোমায় ভাবা।
সুখের মানে তো তোমায় পাওয়া।
একটি সত্যেই জীবনে বাঁধা--বড় ভালোবাসি! ভালোবাসবো!
তোমায় ভালোবাসি শত বাধাতেও, শত আঘাতেও।
তুমি আমার নও তো, প্রিয়, অন্য কারও--বুঝি সবই, তবু নিজেকে থামাতে পারি না।
যে অনুভব আমায় দিয়েছ, সে অনুভব বড় অভিনব, বড় অনন্য!
যখনই তুমি আমায় দেখো, তখন আমি যে দেখি না কিছুই,
তোমার স্বপ্নে বিভোর আমি শিহরিত হই, শরীর কাঁপে থরোথরো মনের ঘরে!
আমার ভালোবাসা তোমায় বাঁধে যেমন করে, অমন বাঁধনে বাঁধবে নাগো কেউ কখনও--জেনে রেখো।
 
আমার স্বপ্নে তোমায় কাঁপাই--শরীরে, মনে, আর আত্মায়।
তুমি মিশে যাও হৃদয়মাঝে, সেখানে কোনও ভয় থাকে না, কিংবা দ্বিধা।
জানি, এ ভালোবাসা স্রোত অবৈধ প্রেমের নিষিদ্ধ গাথা,
পাবো না জেনেও নিজেকে কিছুতে বোঝাতে পারি না!
ওগো জীবন আমার, চলে যেয়ো না, ছেড়ে যেয়ো না। চলে গেলে তুমি...মৃত্যু নিয়তি!
তুমি থেকে যাও স্বপ্নে আমার, শুধু অনুভবে বাঁচিয়ে রেখো এ প্রাণটুকু--একান্ত প্রণয়ে।