বড়দিকে

বড়দি,


তুমি হচ্ছ আমার জীবনে বিনা মূল্যে পেয়ে-যাওয়া সবচেয়ে অমূল্য সম্পদ। আমি তোমাকে কতটা ভালোবেসেছি, তা নিয়ে বলব না, ওসব বলতে আমার লজ্জা লাগে। আমি তো কখনওই কোনও কিছু ঠিকঠাক প্রকাশ করতে পারি না। কিন্তু জানো, যখন তুমি পাশে থাকো, তখন মনে হয়, যেন মা-ই আমার পাশে আছেন।


সেদিন ট্রেনে ওই ছোট্ট অতটুকু বিছানায়, তুমি যখন আমাকে তোমার পাশে ঘুমোতে বললে, আমার হুট করেই কেমন যেন একটা লাগল, বুকের ভেতরে। আজ অবধিও আমি বুঝিনি, কেন অমন লেগেছিল সেদিন। বার বার মনে হচ্ছিল, এই যে ‘মা দুনিয়া ছেড়ে চলে গেলে আমার যাবার আর একটিও জায়গা নেই।’ এমন একটা ধারণা, যেটি আমি সারাজীবন ধরে পেলে পুষে বড়ো করেছি, সেটি খুবই ভুল। আমার তো তুমি আছ, বড়দি!


মা চলে গেলে তুমি মায়ের বিকল্প হয়তো হতে পারবে না, ঠিক আছে, কিন্তু মা না-থাকার সেই ভীষণ কষ্টটা বোধহয় তুমি আমাকে ভুলিয়ে দেবে, তুমি আগলে রাখবে আমাকে মায়েরই মতন। হঠাৎ আমার এ কী হলো জানি না, কিন্তু মনে হচ্ছে, আমি জিতে গেছি, আমি বড্ড জিতে গেছি গো! আমার সব আছে, সবাই আছে। আমি আজ থেকে বাঁচতে চাই, আমি আরও অনেক দিন বেঁচে থাকতে চাই!


তুমি যদিও আমাকে প্রায় সারাদিনই এটা সেটা বলে বকুনি দাও---আমার ড্রেস নিয়ে, আমার বিশ্বাস নিয়ে---আমার চলাফেরা, ধর্ম কিংবা মত-দর্শন নিয়ে তুমি, যখন যা ইচ্ছা হয়, তা-ই বলো, তা-ও তোমায় বড়ো ভালোবাসি। আমি মাঝেমধ্যে অবশ্য ওসব শুনে ভীষণ কষ্টও পাই, খুব কাঁদি। একলা থাকি, কারুর সাথে কথা বলি না, কিন্তু একটু পরে আবার তুমি আদর করলেই আমি সব ভুলে যাই।


বড়দি, এতদিন ধরে তোমায় ভালোবেসে বেসে আমি একটা জিনিস শিখে ফেলেছি, জানো? সেটা হচ্ছে, যে মানুষটা আমায় ভালোবাসে, তার ভুলগুলোকে ভুলে যেতে জানতে হয়।


ভালো থেকো!


ইতি
তোমার পাগলিটা