ভাবনাদেয়ালের পলেস্তারা: ১০১


ভাবনা: সাতশো এক
...............................................................
এক। আমার সমস্যাটা হচ্ছে, আমি কাছে না-ঘেঁষে থাকতেই পারি না। আমার কথা বলতে ইচ্ছে করে, ছুঁয়ে দেখতে ইচ্ছে করে, আরও দুনিয়ার কত অদ্ভুত কিছুই যে ইচ্ছে করে! আর সবচেয়ে বড়ো কথা হলো, সব অসম্ভব ব্যাপারই করতে ইচ্ছে করে, যেগুলো বেঁচে থাকতে করা সম্ভবই না! নিজের উপরেই আমি ভীষণ রকমের বিরক্ত।
তো কথা হচ্ছে, এগুলো আমার সমস্যা। কেন এত ইচ্ছে করে, সেজন্য নিজের কাছে লজ্জা তো আর কম পাই না। বুঝি, সব ঠিকও হয়ে যায়, একটা সময় পরে গিয়ে আবার ইচ্ছে করে। এসব বর্ণনাও তো করা যায় না কারও কাছে। খারাপ লাগে আমার। কেমন যে লাগে, এটা আপনি বোধহয় বুঝতেও পারবেন না, শুধু এটুকুই বলতে পারি। আপনি নিশ্চয়ই আমার মতন বেহায়া আর একটাও দেখেননি। আমাকে ভালো করে দেখে নিন। আমি সরি, অনেক অনেক সরি। আপনার জীবনে আমি নিশ্চয়ই আপনার বিশাল কোনও ভুলের শাস্তি।
আমার যে মাঝেমধ্যে বুকের ভেতরে কী অসম্ভব রকমের যন্ত্রণা করে, এক্কেবারে অজানা অচেনা পরদেশি একটা মানুষের জন্য, সেটা আমি কাকে বোঝাব? আর কত সহ্য করব? আমার তো অনেক কষ্ট হয় রে, তোরা যে কেউই বুঝিস না আমাকে। কষ্ট হয়, এই কথাটা লিখতেও ইচ্ছে করে না, ওতে তো আর কিছু বোঝানো যায় না। তোর নাহয় আমাকে দেখতে বা কথা বলতে ইচ্ছে হয় না, কিন্তু আমার তো হয়, আমার বুকে ব্যথা হয়। আজকে ভোরবেলায়ও অনেক কেঁদেছি; তোদের ভাষায়, মরাকান্না। আজকাল আর লুকোই না, বলেই দিই। মনে হচ্ছিল, তুই আমার সামনেই বসে আছিস। এসব কথার কোনও দাম নেই, জানি। কী করব আমি?
আমি একদিন ঠিকই তোদের সমাজ থেকে পালিয়ে যাব, তুই দেখিস। একদমই একা থাকব। আমি আর কাউকে ভালোবাসতে যাব না কখনও। কী যে হয় ভেতরে আমার, কেউ তো বোঝে না। আমি যে কেন এরকম করি, তোরা কখনওই বুঝতে পারবি না, ওটা তোদের পক্ষে বোঝা সম্ভবই না। ভালোবাসব না বাসব না করেও ভালো না বেসে পারি না। এটা পাপ নয়, এটা রীতিমতো মহাপাপ। এর শাস্তি না পেয়ে যাব কোথায়!
শোন, তোকে একটা প্রমিজ করছি। আমি সত্যি সত্যিই পালিয়ে যাব একটা সময়। মারা-টারা যাব না। তবে অনেক দূরে চলে যাব। আমি সমাজের অনেক কিছুর সাথেই মানিয়ে নিতে পারছি না। তুই আর কিছুদিন সহ্য করে নে আমাকে, প্লিজ। অবশ্য, আমার কথাগুলোকে তুই উড়িয়েই দিস হয়তো, অন্য কেউ হলেও তা-ই করত। আমার তো সবই ফালতু কথা। বাবা মারা যাবার পর থেকে এখনও শব্দ করে এক বারও কাঁদিনি, যদি কেউ মনের অবস্থা বুঝে ফেলে, সেই ভয়ে। আর যাদের জন্য এই কান্না, তারা তো কেউ শুনতেই পায় না, পাবেও না। আমি প্রমিজ করেছি, তা রাখব। একটু সময় লাগলেও এটা হবে, চিন্তা করিস না তুই।
আমি কোথায় যে যাব, তা এখনও জানি না, তবে যাব সত্যিই, শুধু তোদের আশপাশ থেকে দূরে চলে যাব। অনেক তো আশপাশে থাকলাম, চিৎকার করলাম, কেউ তো তোরা শুনতেই পেলি না। আর বলব না। অনেক বলেছি। আর বরাবরের মতনই যদি এইরকম সিদ্ধান্ত নেবার পরেও কোনও একটা লোভে আবারও থেকে যাই, তুই আর বাকিরা মিলে এবার আমাকে বের করে দিস, ধাক্কা দিয়ে হলেও, কেমন? আমি অনেক মাথায় চড়েছি সবার। আর না, আমাকে আরও বেশি প্রশ্র‍য় দেওয়া মানে রীতিমত অন্যায় করা। আর করিস না রে!
আচ্ছা, তুই বড়ো হয়ে গেলে কী হবে রে? আমি তো তোকে ছোটোই চিনি। সেজন্য, তোকে ফেলে আমি যেতে পারি না, কোথায় যেন একটা ভয় কাজ করে। তবে আমার জন্য অনেক বড়ো একটা খুশির খবর হচ্ছে, তুই সত্যি সত্যিই বড়ো হয়ে গেছিস। তুই আর আমার সেই বাচ্চা ছেলেটি রয়ে যাসনি। আগামী মাসের ছয় তারিখে আমাদের শেষ দেখা হবার দুই বছর পূর্ণ হবে। তুই কি কখনও ভেবে দেখেছিস, দুই বছরে কতগুলো রাত আর কতগুলো দিন আসে, যায়?
যদি ঢাকায় বা অন্য কোথাও এর পরে তুই কখনও বেড়াতে আসিস, সেটা যত দূরেই হোক, আমাকে একবার বলিস। আমি একটা শেষ চেষ্টা করব। আমি একবার শুধু সামনে থেকে তোকে দেখব, ব্যস্। কথা বলতেও চাই না, দেখেই চলে আসব। তোর সাথে সামনাসামনি দেখা করতে চাওয়া বা অন্য কোনও কিছুরই চেষ্টা আমি করব না। সত্যি বলছি, শপথ করে বলছি।
তোর কাছে আমি কিছু চাই না কেন, জানিস? চাওয়াটা সমস্যা না, আসলে আমি চাইতে শিখিইনি। আগে ভাবতাম, এটা খুব চমৎকার একটা স্বভাব। এখন বুঝি, এতটাও চমৎকার না এটা, ভালোই পেইনফুল! যে যত চায়, সে তত অল্প পায়, তাই দুঃখটাই বেশি পায়। মানুষ তাকেই বেশি দেয়, যার দরকার নেই, যে চায়ই না। তাই চাওয়া কমিয়ে ফেলতে পারার চাইতে বড়ো সাফল্য আর নেই। আমার দুঃখটা কোথায়, জানিস? যারা চায়, তারা অল্প হলেও তো পায়। আর আমি? চাইও না, পাইও না। যার কাছে চাইতে হয় না, না চাইতেও যে তার 'কাছের মানুষটি'র মন বুঝে নিয়ে ঠিকই দিয়ে দেয় সময়মতোই, তুই যে সে মানুষ না রে! অবশ্য, এমনও হতে পারে, আমিই বরং তোর সেই 'কাছের মানুষটি' নই!


দুই। আপনি থেকে তুমিতে গেলে এক্সপেকটেশন বাড়ে, আর তুমি থেকে তুই হলে যে কী হয়, আমি খুব ভালো করেই জানি। আপনি বলা মানেই একটা দূরত্ব বজায় রাখা, আমার এরকমই মনে হচ্ছে ইদানীং। সেজন্য আপনিই ভালো।
আহা, কত কিছুই যে মানুষের পেতে আর করতে ইচ্ছে করে, সেটা আমাকে না দেখলে আমিও বুঝতাম না। মেয়েদের যেসব কাজ দেখে একসময় নিজে হাসাহাসি করতাম, ইদানীং আমার সেসবই করতে ইচ্ছে করে। নিজে প্রেমে না পড়লে কেউই আসলে প্রেমে পড়লে যে কেমন পাগল পাগল লাগে, তা ঠিক বুঝতে পারে না।
একটা মেয়ে ঠিক তখনই মানসিকভাবে পরিপক্ব, যখন সে কারও প্রেমে পড়ে যাওয়ার পরেও নিজের মাথাটা ঠিক রাখতে পারে। যার প্রেমে পড়ল, তাকে ঠিক তার নিজের মতো করে বাঁচতে দেয় না যে মেয়েটা, তাকে আর যা-ই হোক, মানসিকভাবে পরিপক্বটা ঠিক বলা যায় না। অনেক মেয়েকে দেখি, সামাজিকভাবে খুবই শক্ত ও পরিপক্ব অবস্থানের, কিন্তু প্রেমের ক্ষেত্রে গিয়ে সে বেপরোয়া, পাগলাটে, অস্বাভাবিক। ওদের এমন আচরণ পরিপক্বতার পরিচয় দেয় না। কষ্ট ওরা পাবেই। এটাই ন্যায্য।
বুঝি সবই। তা-ও সব কিছুকেই তো আর বাঁধা যায় না। নিজেকে কত দিক থেকেই তো বেঁধেছি। তাই এখন মনে হয়, সব মিলিয়ে, আপনিটাই ভালো। আমি ওতেই সুখী।


ভাবনা: সাতশো দুই
...............................................................
এক। অনার্সলাইফটা ইচ্ছামতো মৌজ মাস্তি করে কাটাও। কোনও ব্যাপারই না! প্রেম করো, ঘুরো ফিরো, টাকা উড়াও, দাদাগিরি করো। জীবন তো একটাই, মজা করতে না পারলে বেঁচে থেকে লাভ কী? কষ্ট করার জন্য তো সারাটা জীবন পড়েই আছে, তাই না?
একসময় জীবনের কাছ থেকে লাত্থি খেতে খেতে হতাশ হয়ে আমারই মতো কোনও ছাগলের কাছে গিয়ে বলবে, আমি অত্যন্ত মেধাবী, পরিশ্রমী, ভালো স্টুডেন্ট, কিন্তু ভাগ্য খারাপ বলে জীবনে তেমন কিছু করতে পারি নাই। অতএব, আমাকে কয়েক ছটাক মোটিভেশন দেন, পানিতে গুলিয়ে গিলে ফেলি।
তোমাদের দেখি, আর হাসি। এরপর আবারও দেখি, আবারও হাসি। কত তেল শরীরে, কত তেজ মনে। অপেক্ষা করো, সময় কথা বলবে। আগেও বলেছে, এখনও বলছে, সামনেও বলবে। অবশ্য, যাদের বাপের ভালোই টাকাপয়সা আছে, ওদের কথা আলাদা। ওরা তো জন্ম থেকেই গুরুদেব! জন্মই ওদের আজন্ম সুখ!


দুই। প্রচণ্ড ভালোবাসার মানুষের উদাসীনতা, বেঁচে থেকে সহ্য করা যায় না। এই কাজটিই সব চাইতে কঠিন। এর থেকে মরে যাওয়াও অনেক সহজ।
আপনি কখন‌ওই ছিলেন না, নেই আজ‌ও। থাকবেনও না। সব ঠিক বুঝেছি, একদম সব‌‌ই! আমি আপনাকে চিঠি লিখেছি, বিনিময়ে কিছু সময় আপনি আমাকে দিয়েছেন। এটুকুই, ব্যস্! ভালোবাসা অবধি আর যাননি।
আমি আপনাকে আর লিখব না। বিনিময়ে আপনার দেবারও কিছু রইল না আর। আজ থেকে আপনি মুক্ত। এ মিথ্যে ভালোবাসা ভালোলাগায় ভরা বিনিময় প্রথাটা এবার বন্ধ হোক। এত হিসেব রাখতে পারি না আর।
এত ভালোবেসে এত কিছু লিখেছি...অভিমান করলেও লিখেছি...কত কত লিখেছি... কখনও আপনাকে, কিংবা কখনও আপনার জন্যে লিখেছি...
এত চিঠি আমি কোন‌ও দিনই কাউকে লিখিনি। সবটাই এরকমভাবে প্রয়োজন বানিয়ে ফেললেন? সাহিত্য হিসেবে পড়েই প্রয়োজনটা মেটালেন? একবারও বুঝলেন না ওগুলো কী ছিল?
হায় রে! পাঠক...! এত এত পড়ে মানুষটা, আর সে কিনা আমার একটাও কথা বুঝতে পারল না, আমাকে তো না-ই! এসবের প্রয়োজন ছিল? আর থাকলেও তার বিনিময়ে এই মিথ্যে ভালোবাসা, সময়, অধিকার দেবার দরকার ছিল কি খুব?
আপনি ভালো না বেসেও আমার কাছে কিছু চাইলে আমি সর্বোচ্চ চেষ্টা করতাম দিতে। কিন্তু তার জন্য বিনিময় হিসেবে কিছু লাগত না। এভাবে সবটা বিনিময় বানিয়ে না দিলেও পারতেন গো!
আমি চিঠি লিখেছি বলে আমাকে ভালোবাসার বিনিময়যোগ্য পণ্য বানিয়ে দিলেন তো, তাই লেখালেখিটাই আমি ছেড়ে দেবো পুরোপুরিই। যেসব কথা এমনি বলতে না পেরে লিখে লিখে বলতাম, সেগুলো না বলাই থাকুক। আমি ভুলে যাব আমি কখনও কোন‌ও দিন কাউকে কিছু লিখতে জানতাম।
ভুলে যাব, লিখতে ভালোবাসতাম...তার থেকেও বেশি মানুষটাকে লিখতে ভালোবাসতাম। যাকে যাকে ভালোবাসি, তাকে তাকে লিখি। যা মুখে বলতে পারি না, তা লেখার ভেতরে বলি। এটাই আমার লেখালেখি।
তবে এখন আর তার কোনও প্রয়োজন নেই। অবশ্য প্রয়োজনটা অনেক আগেই শুধুই প্রয়োজন হয়ে গিয়েছিল। বুঝেছি সেটা সময়মতোই। তাই লেখালেখিটা আর সম্ভব নয়। মন থেকে আসেই না। অনেক জোর করে লিখতে হয়।
এবার মনে হচ্ছে, অনেক তো হলো... এখন থেকে আমি সত্যিই আর লিখব না কাউকে বা কার‌ও জন্যই।


তিন। আমি খুব করে চাই তোমাকে আমার সবটাই দিয়ে দিতে, ওতেও যদি আমার কিছু শান্তি হয়। অবশ্য দিয়েছিই তো---আমার মন, শরীর, প্রেম, ভালোবাসা, স্নেহ, মায়া, আদর, শাসন, অনুভব, এমনকি আমার এই গোবরে-ভরা মগজটা, যেটাকে তুমি অহেতুকই ‘আহা, কী ভালো!’ এরকমই বলো বরাবরই! এই সবই তো তোমায় দিয়েছি। আমার নিজের বলতে আর কিছুই তো রইল না বাকি।
শুনলাম, তোমার একটা কিডনি নষ্ট হয়ে গেছে। এই বয়সেই! আমি দৌড়ে গেলাম হাসপাতালে, কিডনি দিতে। লোকজন সব হাসাহাসি শুরু করল; বলল, পড়াশোনা-জানা একটা মানুষ এটুকু জানে না যে, কিডনি দিতে চাইলেই দিয়ে দেওয়া যায় না, কী কীসব নাকি মিলতে হয় শরীরের। আচ্ছা, আমার তো অত কিছু মাথায়ই ছিল না! শুনেছি আর অমনিই ছুটে গিয়েছি! তোমার কিডনি নষ্ট হয়ে গেলে আমি আমার কিডনি দিয়ে কী করব? যাকে পুরো মনটাই দিয়ে রেখেছি, তাকে আমি এই কিডনি দিতে পারব না?
জানো, আমি একসময় ভাবতাম, তোমার যা যা প্রয়োজন, তোমায় তা তা দিয়ে দেবো, আর সেদিন আমি আমার সমস্ত দায়ভার থেকে মুক্ত হব, সত্যিকারের শান্ত-সৌম্য হব। অথচ দেখো, কী আশ্চর্য, যতই দিয়ে যাচ্ছি, ততই আমার মনের ঐশ্বর্য বেড়ে যাচ্ছে! এটা তো আর দেখা যায় না, তাই তুমি ওসব কৃতজ্ঞতা, সাথে আরও কী কীসব হাবিজাবি বলো। আমি মনের দিক থেকে দিন দিন বড়ো হচ্ছি, আর বড়োলোক হচ্ছি। এমন বড়োলোক আমি তো আমার চারপাশের কাউকেই দেখি না! যদি সত্যিই ওরা এক জনও বড়োলোক হতো, তবে আমাকে ওরা পাগল বলতে পারত না। আমি ভাবি, ওরা মনের দিক দিয়ে গরীব বলেই ওসব বলতে পারছে অনায়াসেই।
আমি যখন কিডনি দেবো বলে দৌড়ে যাচ্ছিলাম হাসপাতালে, তখন মা আমাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বললেন, ওসব ছুরি কাঁচির তলে পড়ে যদি আমি মারা যাই! মা’টা কেমন যে বোকা! হাসি পেয়ে গেল অমন কথা শুনে! তা-ও চুপ করে রইলাম আমি। মাকে কে বোঝাবে, যাকে কাঁদতে কাঁদতে পুরো মনটাই দিয়ে বসে আছি, তাকে হাসতে হাসতে প্রাণটাও দিয়ে দিতে দুইমিনিটও যে লাগে না!


চার। আমার হাতে সময় আর বেশি নেই। তোকে কিছু কথা বলে যাই। আগে বিশ্বাস করতাম, অনেক কথা লুকিয়ে রাখতে হয়। হ্যাঁ, মানছি, ঠিক আছে, যার ইচ্ছা, সে ওরকমভাবে চলুক। তবে আমি এখন আর আবেগ লুকোই না। শেষসময়ে এত কিছু মেনে চলার কোনও মানে নেই। তোকে এসব বলে দিতে ইচ্ছে করছে অনেক দিন ধরেই।
এক। আমার মনে অনেক অনেক অনেক কথা, অনেক পাগলামো, আর অনেক অভিজ্ঞতা জমে আছে। সত্যি সত্যিই আছে। তোকে ওসব বলাই হলো না। আমাদের দুজনের অনেক কিছুই ঘটার কথা ছিল। এত এত কিছুর মধ্য থেকে কিছু তো অন্তত ঘটতই, ঘটতে পারত। আফসোস, আর ঘটল না!
দুই। তুই আমাকে অন্তত এক বার জড়িয়ে ধরলে, আর তোকে ধরে একটু চিৎকার করে কাঁদতে পারলে আমি সত্যিই, মানসিকভাবে অর্ধেক সুস্থ হয়ে যেতাম, এটা আমার মনে হয়; আর আমার ডাক্তারের কথাও তা-ই। ডাক্তার আসলেই আমাকে এটা বলেছেন। আমি অন্য কারও সামনে কাঁদি না, একমাত্র তোর সামনেই কাঁদি, ভালো লাগে, তাই। তোর এসব করার ইচ্ছে না-ও থাকতে পারে, সেটা নিয়ে আমি ভাবি না। তবে হ্যাঁ, আমি তোর সিদ্ধান্তকে সম্মান করি। তুই চাইলে তোকে না দেখেও মরে যেতে আমি রাজি।
তিন। আর কিছু নয়, স্রেফ তোর বুকে মাথা রাখলেও আমি অনেক বেশিই সুখ পাই, সেটা হয়তো তুই জানিস না।
চার। আমি তোর গা ঘেঁষে বসে থাকলেও ভীষণ সুখে থাকি।
পাঁচ। প্রায়ই পাগল পাগল লাগে তোকে দূর থেকে হলেও একটু দেখার জন্য!
ছয়। তোকে একটুখানি জড়িয়ে ধরার তেষ্টায় খুব খুব খুব কষ্ট হচ্ছে।
যা-ই হোক, মনের কথাগুলি বললাম। এই জন্মে এসব চাওয়া পূরণ না-ইবা হলো। তুই ভালো থাকিস রে!


ভাবনা: সাতশো তিন
...............................................................
এক। Even being hated in the name of any fucking thing is much much better than being dominated in the name of love.


দুই। চৌধুরি সাহেব, মেশিনগানের গুলি আর ডাংগুলির গুলি কখনওই এক নয়। মেশিনগানওয়ালার কাছে ডাংগুলির গল্প করতে আসবেন না।


তিন। স্বৈরাচারী শাসকের বিরুদ্ধে কবিতা লিখে অতীতে অনেক কবিই কারাগারে যেতে বাধ্য হলে, বর্তমানে আমারই ওয়ালে আমার বিরুদ্ধে মন্তব্য করে আপনি আমার ব্লকলিস্টে যেতে আপত্তি করছেন কেন? প্রতিটি ফেইসবুক ইউজারই স্বৈরাচারী। আপনার কখনও মনে হয়নি ওরকম?


চার। 1. Before you knock someone looking at their face, look at your own face once again in the mirror. Stop feeling proud of your inner beauty as you can show them only your face.
2. When you are too conservative to show your face to a person of the opposite sex, also be that much conservative not to knock them. If you are conservative, stay conservative in all aspects.
3. Seeking any kind of help from a stranger at the first knock is like making someone an offer to lie with you in the first conversation. First, have a reason behind this help, if you don't have it, create it, then the rest will follow automatically.
4. Before you tell someone very emotionally about your problem, please keep it in your mind that your problem is only your problem, not theirs. Never expect anyone else's attention on your problem without at least an interest they may have.
5. Never expect time from a person if you don't know how to buy it. Remember, in most cases, the time you really need is the time you cannot buy with money.


পাঁচ। এ পর্যন্ত কোনও এক্সট্রাঅরডিনারি মানুষকে কারও ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে মাথা ঘামাতে দেখলাম না। এক জনকেও না।
এ পর্যন্ত কোনও অরডিনারি মানুষকে কারও ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে মাথা না ঘামাতে দেখলাম না। এক জনকেও না।
কে কী করে, কেন করে, কই যায়, কার সাথে ঘোরে, কী খায়, কী পরে, কীভাবে চলে, এমনকি কীভাবে চুলটা আঁচড়ায়...এসব নিয়ে মাথা ঘামায় কেবলই অরডিনারি লোকজন। এক্সট্রাঅরডিনারি যারা, সত্যি বলছি, ওদের অত সময় বা আগ্রহই নেই! নিজেদের কাজই এত বেশি থাকে যে, ওগুলি শেষ করতেই ওদের নাভিশ্বাস ওঠে!
মাঝেমধ্যে কিছু লোককে দেখি, আমার ওয়ালে এসে, আমার ইনবক্সে (আদার্সে‌) এসে আমার ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে ঘাঁটাঘাঁটি করতে থাকেন। ওঁরা কেউ আমার ফ্রেন্ডলিস্টেও নেই। যাকে আমি ঘরেই ঢুকতে দিলাম না, যার জায়গাই আমার বাড়ির দরজার বাইরে, সে আমার দরজার কাছে এসে দাঁড়ায়, বাড়ির হেঁশেল থেকে আসা মাটন-বিরিয়ানির ঘ্রাণ নেয় আর ভাবে, 'আহা, আমার জন্যই তো বিরিয়ানি রান্না হচ্ছে!' এরপর কিছুক্ষণ নিজের দুঠোঁট নিজেরই জিভ দিয়ে চেটেপুটে খেয়ে নিয়ে দরজার বাইরে থেকেই বিদেয় হয়।
এজন্যই কিছু মানুষের নাম 'পাবলিক'।


ছয়। এ কেমন যন্ত্রণা! যাকে এত ভালোবাসি, কখনও কখনও মনে হয়, নিজেকে ভালোবাসার সমপরিমাণ এই ভালোবাসা তার জন্য থাকা সত্ত্বেও সারা দিন অপেক্ষাশেষে দুমিনিট শান্তিতে ভালো করে দুটা কথাও তার সাথে বলতে কখনও পারি না।
আমি জানি না, আমি কেন তোমাকে আমার নিজেকে বোঝাতে পারি না, কেন আমার সব কথাই তোমার কাছে শুধুই অভিযোগ মনে হয়। আমার ভালোবাসার প্রতি আমার নিজেরই আত্মবিশ্বাস উঠে যাচ্ছে; হয়তো এটা শুনে তুমি বলবে, তোমারও আমার ভালোবাসার প্রতি বিশ্বাস উঠে যাচ্ছে।
আমি জানি না কিছু, আমি কিছুই বুঝতে পারি না কেন তুমি আমাকে একটুও বুঝতে চাও না, কেন আমার সব কথাই তোমার কাছে শুধুই অভিযোগ হয়ে কানে বাজে! এত ভালোবাসি তোমাকে, অথচ কেন মনটা সবসময় এমন অশান্ত হয়ে থাকে! কেন আমি তোমাকে একটুকরো শান্তি এনে দিতে পারি না? কেন আমি নিজেও একটুকরো শান্তি পাই না? আমাদের ভাগ্যেই হয়তো শান্তি বলে কিছু নেই!
আমি তোমার প্রতি অভিযোগ করেই যাই, কেবলই অভিযোগ করি। আমি এখন থেকে আর কোনও কথাই বলব না, কিছুই করব না বাড়তি। আমি ক্লান্ত হয়ে যাচ্ছি, আমি এসবের সাথে মানিয়ে নিতে আর পারছি না। আমাকে প্লিজ একটু বাঁচতে দাও, তুমিও একটু বাঁচো।
আমাদের মাঝে স্বাভাবিক সম্পর্ক বলতে কিছুই তো নেই। ভালোবাসার স্বাভাবিক প্রকাশটাই তোমার আমার কারও মাঝেই নেই। আমি বিশ্রাম চাই। অনেক অনেক ঘুমোতে হবে আমাকে।


সাত। আমরা সত্যি সত্যিই কি আমাদের ভালোবাসার মানুষের হতে পারি? পৃথিবীতে কেউ আসলে কারও হয় না, হতে পারেও না, শুধু হওয়ার অভিনয় করে যায়। আমরা আমাদের ভালোবাসার মানুষের পুরোটা জুড়ে বাস করতে পারি না। এ সম্ভব নয়। হয়তো তার মাঝে আরেকটি ভালোবাসা বাস করে, যার খোঁজ আমি জানিই না। এ দোষের কিছুই নয়। মানুষের অবচেতন মন কখনও এক-এ বাঁধা থাকে না। এ সত্য, এ স্বাভাবিক, এ ধ্রুব।
আমরা সকলেরই অর্ধেক হৃদয় অন্য জনের, বাকি অর্ধেকটা আমাদের নিজেদের। আমাদের হৃদয়ের দেয়াল কখনও আমরা নিজেরা উঁচু করি, নয়তো আমাদের ভালোবাসার মানুষ আমাদের পাশে থেকেও তার নিজের দেয়ালটি আমাদের দেয়ালের চাইতে আরও খানিকটা উঁচু করে রাখে, ফলে আমরা তাকে কাছে আর পাই না। আমাদের মনে হয়, সে অনেক দূরের কেউ। আমাদের মাঝের দূরত্ব ক্রমেই বাড়তে থাকে। আসলে মানুষের মনের দেয়াল যে কখন উঁচু হয়, আর হতেই থাকে, তা সে নিজেই জানে না। কিন্তু হঠাৎ যখন সে তার চারপাশে তাকিয়ে দেখে, তার চারপাশের দেয়ালটা এতটাই উঁচু হয়ে গেছে যে তার ঠিক পাশের দেয়ালটাও আর কিছুতেই দেখা যাচ্ছে না। এ এক তীব্র অসহায়ত্ব!
মানুষের মন আজন্মই একা, চারপাশ বিবেচনায়। মানুষের কাছে নিজে ছাড়া কিংবা নিজসত্তা ছাড়া আর কিছুই কোনও দিনই আপন হয় না। মুখে যে যা-ই বলুক, এটাই সত্য। কেউ বোঝেও না অন্য কারও হৃদয়ের সত্যিকারের ভাষা। এজন্য অন্যের কাছে কিছু আশা করতেই মানুষ আঘাত পায়, আর সে সবচেয়ে বড়ো আঘাতটা পায় তার ভালোবাসার মানুষটার কাছে, কেননা ভালোবাসার মানুষের কাছে আবদারের একটা জায়গা থাকে, নিজের অধিকারবোধ থেকে সে তার ভালোবাসার মানুষের কাছে সব কিছু আশা করে। সে আশা করে, তার ভালোবাসার মানুষটি তাকে বুঝবে, তাকে জানবে, তার সবচাইতে প্রয়োজনের সময় তার কাছে থেকে তাকে সাহস দেবে, কিন্তু যখন সেই মানুষটাকে সে আর তেমন করে পায় না, তখনই দুঃখগুলো একে একে তাকে আঘাত করতে থাকে, তার ভেতরটা ছিন্ন ভিন্ন হয়ে যেতে থাকে, ভালোবাসার পৃথিবীর প্রতি তার একপ্রকার ঘৃণা চলে আসে। সে ভাবতে থাকে, পৃথিবীতে ভালোবাসা বলে কিছু নেই। এভাবেই মানুষে মানুষে দেয়ালগুলো উঁচু হতে থাকে, আর হতেই থাকে।


ভাবনা: সাতশো চার
...............................................................


এক। আমার জীবনে বাবা-মা'র পর যদি কাউকে জায়গা দিতে হয়, তবে সে হচ্ছ তুমি---সেটা সম্মানের দিক দিয়ে হোক, কিংবা ভালোবাসার দিক দিয়ে। কখনও কখনও এই ভালোবাসার মানুষগুলোকে খুব কাছ থেকে ছুঁতে ইচ্ছে করে। কিংবা না ছুঁই, কাছ থেকে মন ভরে দেখতে ইচ্ছে করে। একটা সময় মনে হতো, তুমি কেন আমার ধরাছোঁয়ার বাইরের কেউ? কেন তোমাকে আমি নিজের করে পাবো না? কিন্তু তোমার কাছ থেকে দূরে সরে এসে আজ বুঝি, ভালোবাসা দূর থেকেই সুন্দর। তুমি দূরে থাকো, তবুও যেন আমার দুচোখের ঠিক সামনেই থাকো! তুমি আমার কোনও 'অভ্যেস' ছিলে না, নও আজও; তুমি কেবলই আমার বেঁচেথাকার শক্তি।
ভালোবাসি।


দুই। জীবন কী? এ প্রশ্নের উত্তর কি কোনও পরমতত্ত্ব অনুযায়ী দেওয়া আদৌ সম্ভব? জীবনের চাইতে বড়ো আপেক্ষিকতা আর কার হয়! এ পৃথিবীতে কোনও গতিই পরম নয়, সবই আপেক্ষিক। বিজ্ঞানের ভাষায় গতিকে ঠিক এভাবেই ব্যাখ্যা করা হয়েছে। একটু গভীরভাবে ভাবলে দেখা যাবে, এই কথাটা প্রায় অনেক কিছুর ক্ষেত্রেই খাটে। গতির জায়গায় অন্য যে-কোনও কিছু, হ্যাঁ, যে-কোনও কিছুই বসালেই একদম খুবই ভালোভাবে মিলে যাবে!
ধ্রুবক ব্যাপারটাকে গণিতেও কিন্তু অনেক কৃত্রিমতায় এবং শর্তসাপেক্ষে পাওয়া যায়, সাবলীলভাবে নয়। অবশ্য, এই যা-কিছুই বলছি, তা-ও আসলে আপেক্ষিক মতান্তর মাত্র! সবাই আমার সাথে সহমত হবার কথা নয়। কেন? ওই যে বললাম, সব কিছুই আপেক্ষিক!
তো যা-ই হোক, আমি অতটা বিজ্ঞ নই। আমার জ্ঞান, অভিজ্ঞতা সবই এতই নগণ্য যে জ্ঞানসমুদ্রের বিশালতা বা গভীরতা আন্দাজ করবার মতো সামর্থ্যটুকুও আমার নেই। তাই এইসব তত্ত্বকথায় সন্তরণ করার দুঃসাহস আর না দেখাই।
হ্যাঁ, ফিরে আসি আমার আলোচ্য বিষয়েই। জীবন! এই জীবনটা এই মুহূর্তে আমার জন্য আমার কাছে ভীষণই অদ্ভুত! কষ্টের, সুখের, দুঃখের---এসবের কিছুই এককভাবে আমার জীবনের জন্য প্রযোজ্য নয়। একমাত্র ‘অদ্ভুত’ বিশেষণটাই আমার জীবনের সাথে যায়। আমি প্রতিনিয়তই অবাক হই আমার জীবনটা নিয়ে! আমি আসলেই অবাক হই আজ অবধি আমার সাথে যা যা ঘটেছে, তা ভেবে! আর বিশ্বাস করি, আরও অবাক হব সামনে যা যা ঘটবে, তা তা নিয়ে!
যে দিনটা যায়, সে দিনটাই ভালো যায়। ভাবি, আজ তো একরকম গেল…কাল কী হবে! আমি কি একটু হাসিখুশি থাকব, না কি অনেক কষ্ট হবে? হবেটা কী আসলে? কিছুই বুঝতে পারি না।
ইতিবাচক চিন্তাভাবনা করো…সবাই তা-ই বলবে। সবাই বলেও তা-ই। কিন্তু অদ্ভুতভাবে হলেও আমার ক্ষেত্রে আমার নেতিবাচক আশঙ্কাই, যেভাবেই হোক, সত্য হয়ে যায়, সে আমি যতই ইতিবাচক ভাবনায় বাস করি না কেন! তবুও এখন একরকম বাধ্য করি মস্তিষ্ককে এটা বিশ্বাস করাতে যে, যা হয় বা হবে, ভালোর জন্যই সব কিছু। আমার সাথে ভালো কিছুই হবে। দেখিই না কী হয়!
জোর করে কি আর সব কিছু হয়! তবুও এখন এই জোরটুকুই জীবনের প্রতি শেষ ভরসা! কী অদ্ভুত, তাই না! এত জোর আসলে করতাম না। যেহেতু জীবন থেকে পালানোর সুযোগ নেই, ইচ্ছেকৃত বা অনিচ্ছেকৃতভাবে, যা-ই হোক, বেঁচে যেহেতু থাকতেই হবে বা হচ্ছে, তাই এই এত এত জোরাজুরি! কী আর করা!
যতক্ষণ শ্বাস, ততক্ষণ আশ থাকতেই হবে! যার নেই, সে মানুষ, মানুষই নয়। যে মানুষটা প্রতিদিন একটু একটু করে মরে যেতে যেতে বহু বছর যাবত একটার পর একটা আঘাত, প্রত্যাশিত বা অপ্রত্যাশিত, পেয়ে পেয়ে বেঁচে রয়েছে, যে মানুষটা প্রতিটি রাত ঘরের দরজা বন্ধ করে কাঁদতে কাঁদতে রাত কাটিয়েছে বছরের পর বছর, সেই মানুষটাও, হঠাৎই কোনও সামান্য কারণেই একটুও খুশি হলে, সেই খুশির কারণগুলোকে বার বার যে-কোনও মূল্যে হলেও ফিরিয়ে আনবার চেষ্টাটুকু অন্তত করে একটু ভালো থাকার লোভে, একটু সুখী হতে কেমন লাগে, সেটা ভাববার আশায়।
সে জানে, সাময়িক সুখ যদিওবা আসে পথ ভুল করে, এর পরিণতি চরম কষ্ট ছাড়া আর কিছুই নয়, তবুও কিন্তু মানুষ ওই সাময়িক সুখটুকুর লোভ অনেক কষ্টেও ছাড়তে পারে না। আর সেখানে, যে মানুষটা দিনের পর দিন কেঁদে কেঁদে শেষ হয়ে যেতে থাকে ক্রমশই, একদিন একটু হেসে বাঁচতে পারে সে যখনই, তখন তার একটু হেসে খেলে বাঁচবার লোভটা হওয়া অস্বাভাবিক কিছু নয়! আমার এই একটুখানি জীবনে আমি এত এত যে উদ্ভট ও বিচিত্র পরিস্থিতির সম্মুখীন হয়েছি অকারণেই, আবার এমন অনেক পরিস্থিতির সম্মুখীন হইনি হওয়ার কথা থাকা সত্ত্বেও যে, এসবের কোনওটারই কোনও ব্যাখ্যা আমার কাছে আর নেই।
একটা নতুন সকাল শুভযোগে শুভতিথিতে আরম্ভ হবে, এটাই সবার কাম্য থাকে। কিন্তু এই শুভতিথিতেই রাতটাও পার হবে, এটা কে নিশ্চিত করে বলতে পারে! উত্থান পতন নিয়েই জীবন---এ কথা মুখে অনেকেই বললেও, তত সহজে মেনে অনেকেই নিতে পারেন না। আসলে পারা যায়ও না।
একবার কোনও পরীক্ষায় প্রথম হওয়া খুব কঠিন যদি হয়, তার ধারাবাহিকতা ধরে রাখা তাহলে হাজার গুণ বেশি কঠিন। দীর্ঘদিন ধরে ক্রমাগত সব পরীক্ষায় প্রথম হয়ে হয়ে এটাতেই যখন অভ্যস্ত হয়ে পড়ে কেউ, তখন হঠাৎই সেই ধারাবাহিকতা কখনও হারালে অনেকেই সেই ধাক্কটা আর সামলাতে পারে না। যদিও, জয়-পরাজয় নিয়েই জীবন, এমন কথা তার অজানা নয়। তবুও, হেরে যাওয়াটা কোনও সমাধান নয়। শেষ রক্তবিন্দু অবশিষ্ট থাকা পর্যন্ত লড়াই করে যাওয়াই মানুষের প্রকৃত ধর্ম। ইতিবাচক হয়ে বাঁচতে শিখতে হবে। সাথে পরিশ্রমকে সঙ্গী বানাতে হবে। সব হারিয়ে ফেলে আবার নতুন করে শুরু করার সাহস এবং উদ্যোগ থাকতে হবে। তা না হলে জীবনযুদ্ধে হেরে-যাওয়াটা অনিবার্য!
ধৈর্যকে সহায় করে নিতে হবে। বার বার ব্যর্থতাকে হার মানিয়ে চেষ্টাকে জয়ী করতেই হবে। আর কিছু হোক না হোক, অন্তত সর্বোচ্চ চেষ্টাটা করা হোক! তখন তবু, এটুকু তো সম্বল থাকবে---সাফল্য আসুক না আসুক, সর্বোচ্চ চেষ্টা তো করা হয়েছে। চেষ্টায় কোনও ত্রুটি রাখা যাবে না। আন্তরিকতায় কোনও ফাঁক রাখা যাবে না। ওরকম হলে ব্যর্থতা এলে তখন নিজেকেও ক্ষমা করা যায় না। তবে, ওসবের জন্য একটু হলেও কখনও কখনও জীবনের উৎসাহটা প্রয়োজন হয় বইকি!
আত্মবিশ্বাস! এটা তৈরি হওয়াও কঠিন, আর ভেঙে দেওয়াও কঠিন। তবে একবার ভেঙে গেলে আবার ফিরিয়ে আনা অসম্ভবপ্রায়! যাকে এ কাজটা করতে হয়, একমাত্র সে-ই জানে! জীবন তবুও এগোয়! আহা জীবন! আহারে জীবন! দর্শন, যুক্তি, আবেগ, কষ্ট, সাফল্য, ব্যর্থতা----এমন যা-কিছু আছে, তার সব কিছুর ঊর্ধ্বে টিকে থাকে…জীবন! বড়োই অদ্ভুত এই জীবন!


ভাবনা: সাতশো পাঁচ
...............................................................
এক। যতটা তোমার আদর পাই,
ততটা আদর করতেও চাই।
ততটাই মনে জাগে ইচ্ছে...
তোমার পায়ে মাথাটা রাখি!
আমি সারাজীবনই তোমার কাছে ঠিক এমন শিশুই রবো।
থাকব বেঁচে তোমার প্রতি এই এতটাই নির্ভরতায়।
যতদিন থাকব এমন, ঠিক জানি, ততদিনই থাকব ভালো।
তোমার দেওয়া ভালোবাসা-আদর, কিংবা ভর্ৎসনা-রাগ---
কোনওটি থেকেই কখনও আমায় রেখো না দূরে!


দুই। শুধুমাত্র আমায় ভালোবাসো বলে আমার কাণ্ডজ্ঞানহীন আচরণকে কখনও প্রশ্রয় দিয়ো না, প্লিজ। যার যার নির্দিষ্ট স্থানেই সব কিছু সুন্দর। আমি একটা দায়িত্ব নিয়ে সেটাতে এভাবে অবহেলা করে যেনতেনভাবে চালাতে পারি না। সত্যিই এটা আমার অনেক বড়ো একটা ভুল। আর আমার কোনও ভুলেই একবিন্দু পরিমাণও ছাড় দিয়ো না। দাও যদি, তবে তোমার আগেই ক্ষতিটা আমার হবে।
আমি যদি এমন কিছু করি, যাতে তোমার মনে হয় যে আমি কোনও ব্যাপারে এলোমেলো আচরণ করছি, তাহলে আমাকে যত পারো লজ্জা দিয়ে কথা বোলো, হেয় করে করে কথা বোলো।
আমি অনেক ফাঁকিবাজি করি, সুযোগ পেলেই আমি বিশ্রাম নেবার সুযোগ খুঁজি। ঘুমের ফাঁকটা আমি সবসময় খুঁজতেই থাকি, এটা আমার একটা বাজে অভ্যাস। এভাবে চললে আমি কীভাবে তোমার কাজটা সুন্দরভাবে শেষ করতে পারব? আমার মতন একজন দায়িত্বজ্ঞানহীন মানুষ কোনও কিছু সঠিকভাবে করতে পারে না।
আমাকে ভালোবাসার জায়গায় ভালোবাসায় রেখো, অন্যান্য জায়গায় অন্যান্যেই রেখো। দায়িত্বের জায়গায় ভালোবাসা মেশালে ভালোবাসা দায়িত্বকে অনেক দূরে সরিয়ে দেয়, তখন কাজটাই আর হয় না। তাই অনুরোধ করছি, একটার সাথে অন্যটাকে মিলিয়ে ফেলো না, কখনও একচুল পরিমাণ ছাড়ও আমায় দিয়ো না!
আমি তোমায় অনেক বড়ো কষ্ট দিয়েছি। এমন নির্বোধ হওয়া আমাকে মানায় না, আমি সত্যিই একটা ইরেসপন্সিবল মানুষ! যতদিন না আমি তোমার কাজটা সুন্দরভাবে শেষ করতে পারি, ততদিন পর্যন্ত আমাকে বেশি মাথায় তুলো না, আমার উপর ভরসা কোরো না। যদি আমি কখনও প্রমাণ করতে পারি যে আমি ভরসার যোগ্য, তবেই কেবল ভরসাটা কোরো, নয়তো সারাক্ষণই লজ্জা দিয়ে যেয়ো সব কিছুতেই।
তোমার প্রতি আমার কণাসমও অভিযোগ কোনওকালেই ছিল না, আজও নেই। শুধু জেনে রেখো, আমি তোমায় ভালোবেসেছি, ভালোবাসব---সে তুমি আমায় যত অভিযোগেই বিদ্ধ করো না কেন!


তিন। Never become excited about anything until and unless you're sure that it will work finally. Don't tell anyone you're something if you're not that something yet. Let time speak for you, not your mouth. Life is not a Destiny 2k Ltd Company. If you make your life that company, suddenly, you'll find it nowhere like that company! When you see a rainbow, tell yourself it's yours, but tell others it's ours. It will keep your emotions safe. You can never catch a falling star if you start telling people about it, especially when those people are from Bangladesh. Do respect your own emotions. Don't make them come out unnecessarily. Emotions kept inside; emotions strengthened inside. ALWAYS. The more you stop sharing everything, the more you start growing up. Peace.


চার। : স্যার, অনেকেই বলেন, ইঞ্জিনিয়াররা নাকি বিসিএস ক্যাডার হয়ে যাচ্ছে কেবলই অঙ্কের জোরে। কথাটা শুনে হাসি পায়। আমি বিসিএস পরীক্ষায় অঙ্কে ১০ নম্বরের উত্তর ভুল করে এসেছি। ওইটুকু ভুল না করলে রেজাল্টটা অন্যরকম হতে পারত।
: তোমাকে তো ধরে মাইর দেওয়া দরকার। অঙ্কে কীভাবে ভুল করলে তুমি!? অঙ্কে ভুলকরা তো অনেক কঠিন ব্যাপার! ওখানে ফুল-মার্কস পেলে তো তুমি প্রশাসন ক্যাডারে ফার্স্টই হতে। তোমার সাথে ফার্স্টবয়ের ১০ নম্বরের পার্থক্য থাকার কথা না!
: হয়তো, স্যার...তবে স্যার, আমার ধারণা, আমি চাকরি পেয়েছি বাংলা, ইংরেজি দিয়ে। পলস-এ যেভাবে করে বাংলা, ইংরেজি লিখতাম, সে স্টাইলেই রিটেনে বাংলায়, ইংরেজিতে, সাধারণ জ্ঞানে লিখতে পেরেছি, স্যার।
একটু আগে কথা হচ্ছিল আমার প্রিয় ছাত্র Shoumya’র সাথে। সে এবার বিসিএস প্রশাসন ক্যাডারে মেধাতালিকায় ২য় হয়েছে। গল্প করার সময় সৌম্য দারুণ একটা আইডিয়া দিয়েছে। (আইডিয়াটা অবশ্য ওর সহধর্মিণী আমার ছোটো বোন Bristiর। সেও এবার ওর সাথেই ৩৮তম বিসিএস-এ চাকরি পেয়েছে।)
আইডিয়াটা হলো---
একদিন সৌম্য তার সাফল্যের গল্পটা লাইভে শোনাবে, সাথে থাকবে বিসিএস পরীক্ষায় ভালো করার কিছু কৌশল।
অন্য তিনদিন...
আমার ভীষণ প্রিয় ছাত্র দিব্য বলবে বাংলাদেশ ব্যাংকের সহকারী পরিচালক পদে পরীক্ষার প্রস্তুতিকৌশল সম্পর্কে।
আমার ভীষণ প্রিয় ছাত্র ডাক্তার Rasel বলবে বিসিএস হেলথ ক্যাডার নিয়ে।
আমার ভীষণ প্রিয় ছাত্র Shuva বলবে জিআরই পরীক্ষায় কী করে ভালো করতে হয়, এবং স্কলারশিপ নিয়ে বিদেশে পড়তে যাবার খুঁটিনাটি সম্পর্কে।
বলা বাহুল্য, উপরের তিনজনই, যে যে ক্ষেত্র নিয়ে বলবে, সে সে ক্ষেত্রে সফল। মজার বিষয়, ওরা চারজনই পলস-এর একই ব্যাচের স্টুডেন্ট। রাসেল বাদে বাকি তিনজনই ইঞ্জিনিয়ার। শিক্ষক হিসেবে আমার দেখা সবচাইতে কৃতজ্ঞ ও বিনয়ী ছাত্রদের তালিকা করতে বলা হলে এই চারজনকে আমি প্রথম দিকেই রাখব। ওরা আজও নিয়মিতই আমার খোঁজখবর রেখে চলেছে! আজ মনে পড়ছে, বুয়েটে পড়ার সময় প্রতিটি পরীক্ষা দেবার পর দিব্য রাতে আমাকে ফোন করে জানাত ওর পরীক্ষা কেমন হয়েছে! যে-কোনও বড়ো সিদ্ধান্ত নেবার আগে ও আমাকে জিজ্ঞেস করে নিত।
উপরের চারটি প্রোগ্রামেই আমি সঞ্চালকের ভূমিকায় থাকব। আমি কথা বলব না, শুধুই শুনব, আপনাদের সাথে। এ যে আমার জন্য কত বড়ো আনন্দের একটা ব্যাপার, আমি তা বলে বোঝাতে পারব না! সৌম্যর সাথে এটা নিয়ে কথা বলবার সময় অদ্ভুত রকমের একধরনের সুখ ও শক্তি অনুভব করছিলাম! আমার হাতে- ও বেতে-গড়া ছাত্ররা ওদের সাফল্যের গল্প শোনাবে---এর চেয়ে গর্বের আর কী হতে পারে!
ভালো কথা, 'পলস' হচ্ছে আমার একসময়ের স্বপ্নঘর 'পলস কোচিং হোম', যেখানে সৌম্য-রাসেল-শুভ-দিব্য'রা পড়ত।


ভাবনা: সাতশো ছয়
...............................................................
এক। একটা মজার কথা বলি। শুধু চাইতে পারি না বলে আজ অবধি যত মানুষ আমার জীবনে এসেছে, কয়েক জন থেকে গেছে এখনও, তাদের কেউই আমাকে আমার পাওনাটা দেয়নি,---হোক সেটা টাকা কিংবা অন্য যে-কোনও কিছু। সময়মতো দিতে না পারলে মানুষ তো পরে হলেও দেয়, কিন্তু আমাকে কেউ তা-ও দেয়নি। লোকে অন্তত সরি তো বলে যে, তোমাকে অমুক জিনিসটা সময়মতো দিতে পারলাম না। আর আমাকে এই সরিটাও কেউ বলে না! আমি কিছুই বলি না, আমি চুপচাপ দেখি শুধু। উপরি তো দূরের কথা, আমার হকটাই আমারই সামনে সবাই অন্যকে দিয়ে দিয়েছে! তা-ও আমি কিছুই বলিনি।
আমার বাবা-মা পর্যন্ত আমি না চাইলে আমার পাওনাটা কখনও আমায় দেয়নি। আমি শুধু পরীক্ষা করবার জন্য দু-একবার চেয়ে দেখেছি, তখন ওরা আমার দিকে অদ্ভুতভাবে তাকিয়ে ছিল! হা হা হা...। এমনভাবে তাকিয়ে ছিল যেন এরকম কিছু ওরা আগে কখনওই শোনেনি।
আমাকে সবাই মিলে ঠকায়, ঠকাতে ঠকাতে তারা এটাকেই নিয়ম বানিয়ে ফেলেছে। হ্যাঁ, সবাই-ই! আমি কিন্তু চুপ করেই থাকি, চাই না কিছুই, চাইবও না। মরার সময় পানিও চাইব না আমি, ওভাবেই মারা যাব প্রয়োজনে। যদি কখনও দেখি, এতটাই রোগগ্রস্ত হয়ে গিয়েছি যে সবার বোঝা হয়ে যাচ্ছি, তখন আর একমুহূর্তও দেরি না করে নিজেই নিজেকে চিরমুক্তি দিয়ে দেবো!
আমাকে ঠকিয়ে যদি সবাই সুখে থাকে, আমার ওতেই সুখ হয়। যে কিছুই চায় না, তাকে হারানো কিংবা ঠকানো অসম্ভবের চেয়েও বড়ো অসম্ভব একটা ব্যাপার!


দুই। যার দুটো কথা তোমাকে আরাম দেয়, যদি মনে করো, তার জীবনে কেবলই সুখ আর সুখ, তবে তুমি মস্ত বোকা। যা হয়, তা হলো, প্রকৃতপক্ষে তার জীবনটা অনেক দুঃখ আর ঝামেলায় পূর্ণ, এমনকি সেগুলির পরিমাণ এত বেশি যে তোমার জীবনের সমস্ত যন্ত্রণা মিলেও তার সিকিভাগও নয়। তবুও সে তোমাকে শান্তি আর স্বস্তি দেবার জন্য ক্রমাগত চেষ্টা করে যায়। থাকে এমন কিছু মানুষ, যারা অন্যের চোখে হাসি দেখে নিজের চোখের কান্না গিলে ফেলে। যদি ওদের দেখে নিজের যন্ত্রণার পসরা খুলেও বসো, তা-ও তুমি বুঝতেই পারবে না ওদের মধ্যে কী যে ঝড় বয়ে যাচ্ছে ঠিক ওই মুহূর্তে!
আরে বোকা, কেন বোঝো না যে তার জীবনে অত বেদনা যদি না-ই থাকত, তবে সেগুলিকে দূরে সরিয়ে কী করে এমন হাসিমুখে বাঁচতে হয়, তা সে কীভাবে জানতে পারত? যে মানুষ নিজে দুঃখী নয়, তার পক্ষে কারও দুঃখ দূর করা সম্ভব নয়। মানুষ নিজে যে যন্ত্রণাটি ভোগ করেনি কিংবা করছে না, সে কখনওই অন্যের সে যন্ত্রণাটি দূর করতে পারে না। যে নিজে কখনও আত্মহত্যা করতে চায়নি, সে চেষ্টা করলেও কাউকে আত্মহত্যার হাত থেকে ফিরিয়ে আনতে পারে না। যার নিজের জীবনে কখনও কালো মেঘ আসেনি, সে কিছুতেই অন্যকে এই সাহসটা দিতে পারে না যে----একসময় এই কালো মেঘটা সরে যাবে।


তিন। প্রেম? আহা, এ যে আষাঢ়ের ঢল! এ কি যাবে এত সহজে? হাড় কঙ্কাল নিংড়ে বের করে নেবে, তবেই না যাবে!
কখনও মনে হয়, তুমি আমার হৃদয়ের সবচেয়ে কাছের কেউ,
আবার কখনও মনে হয়,
তুমি আমাকে চেনোই না!
এমন খণ্ড খণ্ড অনুভূতি আমাকে দোটানায় ফেলে দেয়।


চার। তোমার এই দেখেও না দেখার বিষয়টা আমাকে খুব আহত করে। কোনও বিষয় বলতে না চাইলে অন্তত এতটুকু বলে দিলেই পারো যে এই বিষয় নিয়ে তুমি কিছু বলতে চাইছ না। কিন্তু দেখেও না দেখার ভান করে থাকা,এড়িয়ে যাওয়া...এসব সহ্য করতে গিয়ে আহত হতে হয় বেশি। তোমার এসব ব্যবহারের কারণে আমার সব স্বাভাবিক কাজের উপর বাজে প্রভাব পড়ছে, যার ফলে আমি বাধ্য হই তোমার সম্পর্কে নিজের মতো করে কোনও একটা কিছু ভেবে নিতে। এভাবে একটা সম্পর্ক চালানোর চাইতে সরল বন্ধুত্বও ভালো, কিন্তু ভালোবাসার নাম দিয়ে এভাবে পেইন নিয়ে যাওয়ার কোনওই অর্থ হয় না।
আমি খুব গোছানো মেয়ে, কিন্তু ধীরে ধীরে আমি ছন্নছাড়ার মতো হয়ে যাচ্ছি। তুমি বরং আমার কাছ থেকে দূরেই থাকো। এভাবে অস্বাভাবিক একটা সম্পর্ক তৈরি করে জোর করে কোনও কিছু আমি করতে পারব না। জীবনটাকে আমি সোজা দেখতে পছন্দ করি, কিন্তু এখন সোজা দেখতে পারছি না। তুমি সব কিছু ঘোলাটে করে এটা আশা করতে পারো না যে আমি সোজা দেখব। ভালোবাসার সম্পর্কটা যেহেতু ভালোবাসার মতো চলছেই না, সেহেতু বন্ধুত্বের সম্পর্কটা রাখতে পারো, কিন্তু যে পাত্রে যেটা ধারণ করা যাচ্ছে না, শুধু শুধু সেটাকে জোর করে সেখানে আঁটানোর কোনও মানেই হয় না। আমি খুব দ্রুত নিজেকে পরিস্থিতির সাথে মানিয়ে নিতে পারি। সুতরাং আমাকে নিয়ে এমন কোনও ভয়ে থাকার কিছুই নেই যে আমি এলোমেলো কিছু একটা করে বসব।
আমি তোমার এসব ব্যবহারের সাথে মানিয়ে চলতে পারছি না। আমাকে জোর কোরো না তোমার নীতিতে চলতে। আমি কখনওই সেটা করতে পারব না।


পাঁচ। একটু ভাববার পর যা জানতে পারলাম, তুমি আসলে অনেক সহ্য করো আমাকে, তা না হলে আমার মতো একটা পাগলের সাথে সম্পর্ক টিকিয়ে রাখা যায় না। সত্যিই...সব ক্রেডিট তোমার একার।
আরও একটু ভাববার পর বুঝতে পারলাম, আমি এতটাই অপদার্থ যে, কেবলই জীবন থেকে পালিয়ে বাঁচতে চাই। পালাইটা আর কোথায়? তোমার মধ্যেই...আবার কোথায়! তুমি তা-ও আশ্রয় দাও। সত্যিই...সব ক্রেডিট তোমার একার।


ছয়। #দাদা_আই_লাভ_ইউ_ফ্যাক্ট
অতিপ্রশংসায় উদ্‌বেলিত এবং অতিনিন্দায় বিচলিত না হয়ে নিঃস্পৃহ থাকবার প্র্যাকটিস মানুষকে অনেক অহেতুক ঝামেলা থেকে বাঁচিয়ে দেয়। এই বোধটা মানুষের মধ্যে তখনই জন্ম নেয়, যখন সে দেখে:
এক। যারা আজ তার প্রশংসায় পঞ্চমুখ, বিপদের দিনে ওদের কাউকেই আর খুঁজে পাওয়া যায় না। উলটো, কয়েকজনকে তারই বিরুদ্ধে নিরলস কর্মীর মতো কাজ করে যেতে দেখা যায়। তাই শুরুতে ওদের আপন ভেবে নিলেই বরং মহাবিপদ!
দুই। যারা আজ তার নিন্দায় শশব্যস্ত, বিপদের দিনে ওদের নিন্দা বিপদবৃদ্ধিতে তেমন কোনও ভূমিকা রাখতে পারে না। ওদের যেহেতু আগে থেকেই চেনা আছে, তাই ওদের কাছ থেকে নিজেকে নিরাপদ দূরত্বে রেখে-দেওয়াটা অনেক সহজ হয়।


ভাবনা: সাতশো সাত
...............................................................
এক। দুই রকমের বন্ধু দেখেছি:
কিছু বন্ধুর সাথে বন্ধুত্ব টিকিয়ে রাখবার স্বার্থে কথা বলবার সময় সেই প্রথম আলাপের মতোই সম্মান দেখিয়ে কথা বলতে হয়।
কিছু বন্ধুর সাথে বন্ধুত্ব নষ্ট করবার স্বার্থে কথা বলবার সময় সেই প্রথম আলাপের মতোই সম্মান দেখিয়ে কথা বলতে হয়।
আরেকটা মজার ব্যাপার খেয়াল করেছি। কিছু বন্ধু অনেক অনেক পুরনো হলেও কিছুতেই ওদের 'তুই' বলে ডাকা যায় না, 'তুমি' করেই বলতে হয়, 'তুই'টা মুখে আসেই না। এমন নয় যে, ওদের সাথে সম্পর্কটা ফরমাল, দূরের বা তেমন কিছু। আবার কিছু বন্ধু থাকে, যাদের একেবারে প্রথম দিন থেকেই তুইতোকারি করা যায়। ওদের চেহারার মধ্যেই কেমন জানি একটা তুই তুই ব্যাপার লেপটে থাকে! হতে পারে, এমন নয় যে, ওদের সাথে সম্পর্কটা বেশ হৃদ্য।
এই পৃথিবীতে মানুষের সাথে মানুষের সম্পর্কের গতিপ্রকৃতির চাইতে বিচিত্র আর কী আছে!


দুই। যা জানার দরকার নেই, তা মানুষ যত বেশি জানতে থাকে, দরকারি যা-কিছু আছে, তা-কিছু জানার ব্যাপারে তার আগ্রহ তত বেশি কমতে থাকে। অপ্রয়োজনীয় জিনিস মানুষকে সাধারণত বেশি তৃপ্ত করে রাখে বিধায়, মানুষ ক্রমেই সেসবের প্রতি আসক্ত হয়ে পড়ে। একসময়, স্বাভাবিকভাবেই সে অন্য দশটা সাধারণ লোকের কাতারে মিশে যায়। কে কীসে তৃপ্ত হয়, তা নির্ধারণ করে দেয় কে কতদূর যেতে পারবে। 'রাস্তার লোক' বলে একটা কথা আছে। যাদের মানসিকতা ওই পর্যায়ের, তারা সারাজীবনই ওরকম থেকে যায়। সকাল যেমনি দিনটা কেমন হবে, তা জানিয়ে দেয়, ঠিক তেমনি অল্প বয়সের কাউকে দেখলে প্রায় ৯৫% ক্ষেত্রেই অনুমান করে ফেলা যায়, সে জীবনে বড়োজোর কতটা পথ পাড়ি দিতে পারবে। মুখে বললে রাগ করবে (এমনকি ধরে মারতেও পারে) বিধায় বলি না, তবে আমার এই অনুমান বা প্রাক্কলন এখন পর্যন্ত তেমন একটা ভুল হয়নি। অল্প বয়সে নিজেকে অনেক রাজা-মহারাজা মনে হয়, বয়স বাড়তে থাকলে বোঝা যায়, হায়, রাজা হওয়া তো অনেক দূরের কথা, রাজার বাড়ির কাজের লোক হবার যোগ্যতাটাও সে অর্জন করতে পারেনি! তখন আর তেমন কিছু করার থাকে না।


তিন। প্রত্যেকটি মানুষই আসলে একা, কেবল স্বীকার করতে ভয় পায়; পাছে যেটুকু আছে, সেটুকুও খোয়ায়, ভয়টা সেখানেই। এমনকি, ভুল কারও সাথে থেকে একাকিত্বও মানুষ মেনে নিতে পারে, তবে নিজের সাথে নিজে একা থাকবার কথা ভয়ে মাথায়ও আনতে পারে না সে। এ কারণেই আমার প্রায়ই মনে হয়, মানুষ একধরনের যন্ত্রণাবিলাসী প্রাণী। মানুষ যে জীবনে বেঁচে থাকে, সে জীবন থেকেই পালিয়ে বাঁচতে চায়। ফলে না হয় বাঁচা, না হয় পালানো।


চার। কারও কাছ থেকে আমি যেরকম ব্যবহার আশা করি না, যদি আমি তার সাথে সেরকম ব্যবহারটা করি, তবে আমি হয় নির্বোধ, নতুবা বেয়াদব। যদি আমি ভালো ব্যবহারটা জমিয়ে রাখি অল্পপরিচিতদের জন্য এবং খারাপ ব্যবহারটা ঘনিষ্ঠদের জন্য, তবে দেখা যাবে, আশেপাশের সবাই-ই একটা সময় অল্পপরিচিতদের দলে ঢুকে যাচ্ছে, আর আমি ক্রমেই হয়ে যাচ্ছি একা।


পাঁচ। আমার একসময়ের কোচিং সেন্টার P@ul's Coaching Home-এর সবচাইতে প্রিয় ও আমার প্রতি আশ্চর্য রকমের কৃতজ্ঞ দু-তিনজন ছাত্রের একজন Shoumya Chowdhury। ও এবার বিসিএস প্রশাসন ক্যাডারে মেধাতালিকায় দ্বিতীয় হয়েছে। এইমাত্র ফোন করে জানাল।
ওর একটা কথা এই মুহূর্তে খুব মনে পড়ছে: স্যার, আমি যা-কিছুই জানি, আপনার কাছ থেকেই শিখেছি, তা দিয়েই স্টুডেন্ট পড়িয়েছি, তা দিয়েই বিসিএস পরীক্ষা দিয়েছি, তা দিয়েই এখনও করে খাচ্ছি। আপনি পড়ানো বন্ধ করার পর থেকে আজ পর্যন্ত, নতুন আর তেমন কিছুই শিখিনি, যা আমার চলার পথে কাজে লেগেছে।
অদ্ভুত রকমের খুশি লাগছে। আমি চট্টগ্রামে আছি, অথচ সৌম্য ঢাকা থেকে চট্টগ্রামে এসে আমার সাথে দেখা না করে ঢাকায় ফিরে গেছে, এমন ঘটনা একবারও ঘটেনি। এমন কৃতজ্ঞ, বিনয়ী ছাত্র এই জীবনে খুব বেশি পাইনি। এমন ছাত্রের জন্য আশীর্বাদ সত্যিই মন থেকে আপনাআপনি চলে আসে। আজকে যে আনন্দ পাচ্ছি, নিজের রেজাল্ট পেয়েও ততটা হয়তো পাইনি।
আবেগে আর লিখতে পারছি না, ওদের কী স্টাইলে পড়াতাম, তা নিয়ে পরে আরও লেখার ইচ্ছে র‌ইল।


ছয়। #সাবস্ক্রাইবারসংখ্যা_এক_লক্ষ_ছাড়াল!
আমি বিশ্বাস করি, আমার ইউটিউব চ্যানেলটি অসংখ্য মানুষকে বেঁচে থাকবার পথ দেখিয়েছে, ক্যারিয়ার নিয়ে ভাবতে শিখিয়েছে, আত্মহত্যার পথ থেকে ফিরিয়ে এনেছে, জীবনের অনেক প্রশ্নের উত্তর দিয়ে দিয়েছে। বিভিন্ন চাকরি পেতে ও ব্যবসা করতে, এককথায় জীবিকার্জনে সাহায্য করেছে। সবচাইতে বড়ো কথা, চোখ যখন হাসে, চোখ যখন কাঁদে---দুই সময়েই আপনাদের অনেকেরই পাশে থেকেছে আমার চ্যানেলটি। আমার জন্য, এ এক পরম সৌভাগ্য! আপনাদের ধন্যবাদ পাশে থাকবার জন্য।
আজ এমন একটা দিনে আমাদের পরিবারের সদস্যসংখ্যা এক লক্ষ ছাড়াল, যেদিন রাত ৯টায় আমি লাইভে আসছি বিষণ্ণতা, আত্মহত্যা, ব্যর্থতা, মানসিক স্বাস্থ্য ইত্যাদি নিয়ে কথা বলতে! কাকতালীয়ই বটে!
এই যে আমাদের পরিবারের সদস্যসংখ্যা ১ লক্ষ ছাড়িয়েছে, এ অর্জন আপনাদেরই। যতদিন বেঁচে আছি, ততদিনই আপনাদের জন্য কাজ করে যাব---কখনওই একটা পয়সাও গ্রহণ না-করে।
এই ফাঁকে আরেকটা ঘোষণা দিয়ে রাখি। মাত্র কিছুদিন আগে আমি আমার ইউটিউব চ্যানেলটিকে মনিটাইজ করেছি। এই চ্যানেলের মাধ্যমে যা-ই অর্থ আসুক না কেন, তার পুরোটাই আমি মানুষের কল্যাণে ব্যয় করব, একটি পয়সাও নিজের কাজে ব্যয় করব না। এটাই আমার শপথ ও স্বপ্ন।
আপনাদের সুস্থতাকামনা করছি। সাথে থাকুন!
ইউটিউব চ্যানেল লিংক: youtube.com/c/SushantaPaulCareerAdda


সাত। আমাদের লাইফে দুই রকমের সময় আসে:
একসময়, আমরা কারও কারও সাথে কথা বলবার, মিশবার সুযোগ চাই, কিন্তু পাই না। ওরা আমাদের সে সুযোগটা দিতে চায় না।
পরবর্তীতে, ওরাই আমাদের সে সুযোগটা দিতে চায়, কিন্তু আমরা তা নিতে চাই না। ভাবি, কী দরকার এলিটদের সাথে মিশবার!
যদি নিজেকে এলিট শ্রেণিতে রাখতে ইচ্ছে করে, তবে এমনভাবে রাখুন, যাতে আমৃত্যুই এলিট থেকে যেতে পারেন। বড়ো আমগাছ যখন ছোটো আমগাছকে পরগাছা ভাবে, তখন ছোটো আমগাছও বড়ো হবার পর বড়ো আমগাছকে সেই পরগাছাই ভাবে। এটাই নিয়ম।