ভাবনাদেয়ালের পলেস্তারা (১৩শ অংশ)

ভাবনা: পঁচাশি।

……………………..

আজ দুজনার দুটি পথ গেছে

আমার স্বপ্নেদেখা রাজকন্যা থাকে

এ শুধু গানের দিন

এই পথ যদি না শেষ হয়

এই মধু রাত

এই যমুনারই তীরে

এই রাত তোমার আমার

এই সুন্দর স্বর্ণালী সন্ধ্যায়

কে তুমি আমারে ডাকো

গানে মোর কোন ইন্দ্রধনু

ঘুম ঘুম চাঁদ

জানি না ফুরাবে কবে

তুমি যে আমার

তুমি না হয় রহিতে কাছে

নীড় ছোটো ক্ষতি নেই

বড়োবেলায় সুচিত্রাকে দেখে বুঝেছি, ছোটোবেলায় কেনো মা বাবাকে এইসব গান শোনাতেন৷ ছোট্টো আমি সামনে গেলে গান বদলে গিয়ে গুনগুন হয়ে যেতো৷ হাহাহা…….

এইরকম অনেক গানকে আমার খুব কাছের মনে হয়৷ মায়ের প্রিয় গান কার না আপন মনে হয়! মানুষ যখন থেকে শুনতে শেখে, তখন যে গানগুলি সে বারবার শোনে, সেগুলি সারাজীবনই তার প্রিয় হয়ে থাকে। আর মা-বাবা বা কাছের কেউ ছোট শিশুর সামনে যে গানগুলি গুনগুন করে গায়, সেগুলি তার চেতনার সাথে মিশে যায়, সেই গানগুলির কথা ও সুর সে অনুভব করতে পারে। আমার বাবা মায়ের যে গুণটার কথা বলতেন (এবং এখনও বলেন) তা হলো: ব্যক্তিত্বসম্পন্না অথচ রোমান্টিক৷ ভাবি, সুচিত্রাও কি ওরকম নন? তবে কি বাবা মায়ের মধ্যে সুচিত্রা বা এমন অন্য কাউকে কল্পনা করে আনন্দ পেতেন?

সপ্তাহশেষের সারাটা সন্ধে ইউটিউবে সুচিত্রার সাথে কাটালাম৷ সুচিত্রার সাথে কাটানো প্রতিটি মুহূর্তই ভীষণভাবে ছুঁয়ে যায়!

হ্যাপিনেজ ইজ …….. রমার ঠোঁটে যখন সুচিত্রার চোখের যাদু খেলা করে৷

সুচিত্রা যখন রমা ছিলেন, কিংবা সবেমাত্র সুচিত্রা হয়েছেন, তখন তাঁর উচ্চারণে পূর্ববাংলার একটু টিপিক্যাল টান ছিলো৷ তাঁর প্রথম মুক্তিপ্রাপ্ত ছবি সাত নম্বর কয়েদী’র পরিচালক সুকুমার দাশগুপ্ত মহানায়িকাকে শরৎচন্দ্রের ‘বিন্দুর ছেলে’ নাটকটা পড়তে বলেছিলেন নিজেকে শুধরে নিতে৷ তাঁকে বলা হয়েছিলো, উচ্চারণে পাবনার আঞ্চলিক টানের সমস্যা আছে, প্রমিত উচ্চারণে কথা বলা না শিখলে আর অভিনয় করার সুযোগ পাবেন না।……….. বিশ্বাস হয়? একজন সুচিত্রাকেও অমন কথা শুনতে হয়েছিলো!

কেনো বললাম এটা? আমরা যারা নিজেদের অনেক ত্রুটি শুধরে নেবো ভাবছি, একটুও ভুল ভাবছি না৷ নিজের স্বপ্নের জীবনটাতে বাঁচার জন্য নিশ্চয়ই নিজেকে বদলে নেয়ার দরকার আছে। কেন? কারণ, আমরা যে জীবনটার স্বপ্ন দেখছি, সে জীবনটা এমনকিছু, যা এই মুহূর্তে আমাদের নয়। তাই, সে জীবনে বাঁচতে হলে আমাদের এমনকিছুই হতে হবে, যা এই মুহূর্তে আমরা নই। ওরকম হওয়ার ব্যাপারটা কারো ক্ষেত্রে আগে ঘটে, কারো ক্ষেত্রে পরে। তাই বলে কেউ যে কারো চাইতে পিছিয়ে আছে, এমন কিন্তু নয়। সুচিত্রা সেনের পারফেকশনে যাদের আস্থা আছে, নিজেদের ইমপারফেকশনে রাগটাগ না হয় এইবেলা ঝেড়ে ফেলি৷ হতে পারে, আমি এখন কিছুই না। তাই বলে কি কখনওই কিছু হবো না? সুচিত্রা যে বয়সে শুদ্ধ প্রমিত উচ্চারণে কথাবলা শিখেছেন, সে বয়সের অনেক মেয়েই রীতিমতো নিপুণ আবৃত্তিশিল্পী হয়ে উঠেছিল, কথার যাদুতে সবাইকে মুগ্ধ করে রেখেছিল। কিন্তু, কেউ কি সুচিত্রার ধারেকাছেও যেতে পেরেছে? কোনো কাজে আপনার চাইতে যারা অনেক বেশি এগিয়ে, সেই কাজটা আপনি শুরু করলে আর ঠিকভাবে সাধনা করে গেলে, হয়তো এতোটাই এগিয়ে যাবেন যে, ওরা আপনাকে ছোঁয়ার স্বপ্নও দেখতে পারবে না কোনোদিনই। শুরুটা করেই দেখুন না, কী হয়!

কৈলাস খের তাঁর প্রথম জীবনে একটা বিয়ের অনুষ্ঠানে গান গাইতে চেয়ে অপমানিত আর প্রত্যাখ্যাত হয়ে মনখারাপ করে ফিরে এসেছিলেন। সেদিন অনেক অনুরোধ করার পরও উনাকে একটিবারের জন্যও স্টেজেই উঠতে দেয়া হয়নি। তাই বলে কি উনি হারিয়ে গেছেন? এখন তাঁকে হাতেপায়ে ধরেও নেয়া যাবে একটি বিয়ের অনুষ্ঠানে গান গাইবার জন্য?

জীবনটা এমনই। একদিন আসবে, যেদিন ফেলে-আসা পেছনের দিনগুলির দিকে তাকিয়ে হেসে বলবেন, এই আমিও ওখানটাতে ছিলাম!

ভাবনা: ছিয়াশি।

……………………..

আমার প্রেয়সী আমাকে প্রেম শিখিয়েছিলো, সেটা বড়ো কথা নয়; বড়ো কথা, প্রেয়সী না হয়েও ওরকম প্রেম শিখিয়ে দেয়া সম্ভব। যে আসলে প্রেয়সী নয়, স্রেফ পাশে থাকে কিছু সময়ের জন্য, তাকে বড়োজোর সঙ্গী বা বন্ধু ভাবা যায়। প্রেয়সী ভেবে ফেললেই তো বিপদ! আর সেই ভাবনায় বাঁচতে যদি সেই শেখায়, ক্রমাগতই শিখিয়ে যায়, হঠাৎই এমন কেউ হয়ে যায়, যাকে আমি একসময় চিনতাম, তবে সেটাও কি মেনে নেয়া সম্ভব? জীবন বড় অদ্ভুত, কতকিছু যে মেনে নিতে শেখায়! প্রিয়মানুষের প্রত্যেকটা কথা বিশ্বাস করলে কখনো-কখনো ভালোথাকার ব্যাপারটাও নস্টালজিয়া হয়ে যেতে পারে একটাসময়ে, এটা বোঝার আগেই ও ভালোবাসতে শিখিয়ে দিয়েছিলো। ওকে কেনো ভালোবেসে ফেলেছিলাম এটা ব্যাখ্যা করা ততটাই কঠিন যতটা কঠিন কেনো ওকে আজো ভালোবাসি এটা ব্যাখ্যা করা। লুকিয়ে-লুকিয়ে যখন ওর প্রোফাইলে যাই, দেখি, ও কেমন আছে, ওর মনখারাপ থাকলে আজো সেই আগের মতো আমার মনটাও কাঁদে, ও কোনো ছেলের পাশে দাঁড়িয়ে ছবি তুললে ওদের অবস্থানের দূরত্ব মাপতে ফিতা নিয়ে বসে পড়ি, এসবের কোনো মানে হয়তো নেই। সবার জীবনই যে কোনো না কোনো মানেতে চলবে, এরই বা কী মানে? ওকে ঘৃণা করা গেলে সুবিধা হতো এই যে, কেনো ঘৃণা করি এটা বলে দেয়া যেতো, অথচ কখনোই বলে দেয়া যায় না, কেনো ভালোবাসি। এই ভালোবাসাটা লোকে কেন যে বাসে, যে জানে? কারণ নেই, যুক্তি নেই, মানে নেই। ফালতু একটা জিনিস এই ভালোবাসা। হায়! এই ফালতু জিনিসটাই জীবনটাকে টানে—সামনের দিকে, পেছনের দিকেও। এই টান না থাকলে জীবনের কোনো অর্থই যেন থাকে না। ভালোবাসা ওরকমই। ও ভেবেছিলো, ওটা একটা খেলা। খেলা শেষ হলে ভেঙে ফেলবো। ব্যস্‌! চুকে গেলো! আমি এখনো ভাবি, ওটাই জীবন। জীবনটাই যদি না থাকল, তবে নিজের লাশটাকে বয়ে বেড়ানোর জন্য বেঁচে কী হবে? এই ভুল বোঝাবুঝিই দূরত্ব বাড়িয়ে দিলো। কাঁঠাল পাতার সাথে মাটির ঢেলার প্রেমের গল্পে তাদের মধ্যে কথা ছিলো, বৃষ্টি এলে কাঁঠাল পাতা আগলে রাখবে মাটির ঢেলাকে, আর ঝড় উঠলে মাটির ঢেলা আটকে রাখবে কাঁঠাল পাতাকে। বিধির কী পরিহাস! একদিন ঝড়বৃষ্টি একসাথেই এলো। এরপর সব শেষ। এটাই হয়। মানে, এটা প্রেডিক্টিবল। কিন্তু হায়! এমনও হয়, ছাগল এসে খেয়ে নিলো কাঁঠাল পাতাকে, আর কুমোর এসে হাঁড়ি গড়লো মাটির ঢেলায়। কার ফসল কার ঘরে যায়! জীবিকার কাছে জীবনের কী আইরনিক পরাজয়! সাথে প্রেমেরও। ব্যস্ত প্রেয়সী আমার খুব দ্রুত ঘর থেকে বেরিয়ে যাবার কালে আমার কবিতার পাণ্ডুলিপিগুলোকে মাড়িয়ে দিয়ে অন্যমানুষের স্বপ্ন সাজাতে চলে যায়; সেই কবিতাগুলো মুখ থুবড়ে পেছনে পড়ে থাকে, যে কবিতাগুলোর মতো জীবন হবে, এরকম কথা ও-ই আমাকে দিয়েছিলো। কীভাবে যে মানুষ কথা দিয়ে কথা ভেঙে সব কথা স্তব্ধ করে কথা না ফুরোতেই সরে পড়ে! অন্যের আলো নিয়ে খেলার ফাঁকে নিজের মানুষটাকে অন্ধকারে ঠেলে দিতে-দিতে প্রেয়সীর যে রূপটা চোখে ভাসে, তা দেখে জীবনানন্দের মতো শান্ত অভিমানী মানুষও বলে ওঠেন, যে মেয়েটাকে কিছুক্ষণ আগে কোমল পায়রার মতো লাগছিলো, তাকে এখন লাগে রুক্ষ মুরগির মতো। . . . . . . . হায়! আহাম্মক আমি যে তাও ভাবতে পারি না! একবারের কোমল পায়রাকে সারাজীবনই কোমল পায়রা করে জীবনে রেখে দিই। লাইফ ইজ বিউটিফুল মুভিতে বাবাকে সেনারা হত্যা করার আগমুহূর্তেও জীবনটাকে সহজভাবে নেয়ার সহজাত ইশারায় সেই বাবা তার পুত্রকে যেভাবে বিশ্বাস করিয়েছিলেন, মৃত্যুও একটা খেলা, সেই ইশারা কি জীবনকে বাদ দিয়ে জীবন সাজানোর সকল অহেতুক আয়োজনকে অর্থহীন করে দেয় না? জীবনের খেলায় একবার মেতে পরমুহূর্তেই মৃত্যুকে ক্রীড়ার স্বাচ্ছন্দ্যে আলিঙ্গন করে বেঁচে থাকার অভিনয়! এমন নাট্যকলায় অভ্যস্ত হয়ে যাওয়া! এই একজীবনে আর কতটা মেনে নেয়া যায়? কতটা কষ্ট পাওয়া হয়ে গেলে জীবনটা জীবন হয়ে ওঠে? কতটা যন্ত্রণা হাসিমুখে নিলে পরে জীবনকে জীবন বলে?

ভাবনা: সাতাশি।

……………………..

আচ্ছা, তোমার টাচ্-স্ক্রিন এক্সপেরিয়ায় ফোন এলে আলতো ছোঁয়ায় আমায় আর আগের মতো স্লাইড করো নাতো? তোমার পছন্দের আমার সবকটা ছবিই ফেলে দিয়েছো তো? ব্যাকগ্রাউন্ডে কাকে দিয়ে রাখ? আমার ওই ধেড়ে গলায় ‘এই বাবু, এইইই…….ফোনটা ধরো……’ রিংটোনটা তো আর নেই, জানি; অডিও ফাইলটা ডিলিট করে দিয়ো, কেমন? নাকি, করেই দিয়েছ কত আগে! বান্ধবীরা আমায় দেখে, ইসস্ কী হ্যান্ডসাম! বললে এখন তো বরং রাগই হয় তোমার, না? আমার মতো মানুষও আবার সুন্দর হয় নাকি? আমার প্রোফাইলে ভুল করেও কি ঢোকো কখনো? ছবিগুলোর দিকে অকারণে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপলক তাকিয়ে থেকে আর কি সুখ হয় আগের মতো? যে কলটার জন্য সারাক্ষণ ছটফট করতে, একদৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকতে ফোনটার দিকে, স্ক্রিনলকটা খুলে-খুলে বারবার দেখে নিতে মিসড্‌ কল হয়ে গেলো কিনা, সেই ফোনটা এখন কে করে? বারবার কললিস্টে গিয়ে কার কল রেকর্ডগুলি ছোঁও এখন? মেসেঞ্জারে কখন কত সময় অ্যাক্টিভ থাকি, সে হিসেবটা তো এখন আর রাখতে হয় না, তাই না? ওই বেঁচে যাওয়া সময়টা কাকে দাও? আমার মতো মানুষকেও হিংসে করাটা শিখিয়েই ছাড়লে! আমার মতো সেও কি তোমায় দেখতে চায় মুহূর্তে-মুহূর্তে? সেলফি পাঠাতে বলে? না পাঠালে রাগ করে? গালের টোলটার কথা সেও কি বলে? নাকি খেয়ালই করেনি এখনো? এর মধ্যে ঝগড়াও কি হয়ে গেছে ওর সাথে? ফোন রিসিভ না করে এখনো ফেলে রাখো, রাগ হলে? পরপর তিনবার ফোন না করলে অভিমানে গাল ফোলাও? নাকি, সংখ্যাটা আরো বাড়িয়ে দিয়েছ? অভিমানে নিচের ঠোঁটটা উল্টে যায় এখনো? ফোনে চুমুটা খেয়ে নেয়ার স্বাচ্ছন্দ্য হয়ে গেছে তোমাদের? তুমি খেয়েছ কিনা, কে জিজ্ঞেস করে এখন? নাকি, কেউ জিজ্ঞেস না করলেও খেয়ে নিতে শিখে গেছো এখন? সন্ধেবেলায় স্নান করলে কেউ কি রাগ করে? মনে করে খেয়ে নিতে কাকে মনে করাও? সক্কাল-সক্কাল ফোন করে কে ঘুম ভাঙায়? সকালের প্রথম ক্লাসটা ধরতে পারো তো ঠিকমতো? চুল কাটতে কেউ তো এখন আর বারণ করে না, না? বুকের ভেতর চুলের ঘ্রাণটা কে টেনে নেয়? তোমার চোখে চোখ ছুঁয়ে দেয় আমার মতো? নীল শাড়িটা এখনো পরো? কার জন্য? লাল টিপটা কেউ পরতে বলে? একটুখানি চশমা নামিয়ে কাকে দেখ? তোমার যতো মিথ্যে নালিশ, কে শোনে আজ ধৈর্য ধরে? বান্ধবীদের সাথে রাগটা কার ওপর ঝাড়ো এখন? এ সংসারে রাগ ঝাড়তেও তো কাউকে লাগে, না? রাঙাবৌদি বকলে এখন আর মনখারাপ হয় না? দুপুর যখন বিকেলে পিছলে যায় একটু-একটু করে, বাসার সামনের ঝলসানো রাস্তার দিকে আজো তাকিয়ে থাকো? সন্ধে নামলে তোমার জড়ানো গলায় রবীন্দ্রনাথ শুনতে চায় কে? তোমার কবিতাগুলির ছন্দ ঠিক করে দেয় কে? নাকি, তোমার কবিতা এখন আর ছন্দ হারায় না? ইচ্ছে হলে সারারাত কার সাথে গল্প কর? রাত্রে কাকে গান শোনাও গুনগুন করে? তুলে আছাড় মারতে কার ফোনটা কাড় এখন? চিঠি লিখতে ইচ্ছে করলে কাকে লিখ? অমন দীর্ঘ মায়াবী চিঠি সে ধৈর্য ধরে পড়ে তো? একদিন সত্যি-সত্যি অন্য কারো সাথে দিব্যি সংসারী হয়ে যাবে, না? সত্যিই পারবে? আমি তখন কী করবো, বলো? এতো সহজে অনুভূতির হাতবদল হয়ে যাবে? মনখারাপের ব্যামোটা সেরে উঠলো হঠাৎ? কে এখন মন ভাল করে দেয়? আমার পছন্দের গান আর কবিতাগুলো অপছন্দ করা শিখে যাচ্ছো তো আস্তে-আস্তে? আমার লেখা কেউ ভালো বললে এখন তো আর খুশি হয়ে ওঠো না, ওঠো? তোমার অদ্ভুত সুন্দর পেইন্টিং অ্যাপ্রিশিয়েট করার নতুন মানুষ খুঁজে নিয়েছো? কীভাবে পেয়ে গেছো এতো সহজে? অভিমানগুলো কার সাথে শেয়ার কর? এখনো কি ঠোঁট ফুলিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদো? তোমাকে বুঝিয়েশুনিয়ে শান্ত করার আর্টটা আজ চুরি করতে দিয়েছো কাকে?

……….. খুউব জানতে ইচ্ছে করে।

হাসছ, না? হাসো হাসো, খুব করে হাসো! সবাই কি আর কাঁদতেই জন্মায়? জীবন তো কাউকে-কাউকে হাসতেও শেখায়।

ভাবনা: আটাশি।

……………………..

রেগে গেলেন তো হেরে গেলেন।

কারো কথায় রেগে যাওয়ার মানে হল, আপনি আরেকজনের হাতে আপনার নিজের নিয়ন্ত্রণ দিয়ে দিলেন।

আপনি রেগে গেলে আপনার নিজেরই ক্ষতি হয় সবচে’ বেশি।

আমারই তো মন, আমি রাগতে না চাইলে রাগবে কেন?

ভাই বুঝসি, এবার থামেন। খুব ভালো হইসে। হোক ক্ষতি, ব্যাপার না! কেবল মিচকা শয়তানদের পক্ষেই সম্ভব পাছায় দুইটা লাত্থি মারলেও ব্যথায় বিকৃত হয়ে যাওয়া মুখেও হাসি এনে বলা, থ্যাঅ্যাঅ্যাঅ্যাঙ্কয়্যু স্যার! হ্যাঅ্যাঅ্যাঅ্যাঅ্যাভ্ অ্যা গুউউউউড ডে!! এই দুনিয়াটা ডেস্টিনি কোম্পানিও না, ইনস্যুরেন্স কোম্পানিও না।

পারুম না! খেলুম না! আমি রাগমু, হারমু। রাগ কমবো, জিতমু। আবার রাগমু, হারমু। রাগ কমবো, জিতমু। দেখেন তো পোষায় কিনা? না পোষাইলে ভাগেন, নাচেন!

আমি রেগে গেলে সেটা কখনোই প্রকাশ করি না, যার উপর রেগে গেছি, তাকে কিছুতেই বুঝতে দিই না। একেবারে চুপ হয়ে যাই। চাপা অভিমানে ভেতরে-ভেতরে কষ্ট পেতে থাকি। আমি অতি অভিমানী প্রাণী। ভেতরে-ভেতরে কষ্ট পাওয়ার মধ্যে এক ধরনের সুখ আছে। উফফ্‌! কী বলছি এসব! আমারই তো লস! জানি। তাও কষ্ট পেতে কেমন জানি সুখ-সুখ লাগে। মুখে কটু কথা না বললেও আমাকে দেখে ঠিকই বোঝা যাবে, ওইমুহূর্তে আমার মধ্যে আপনার প্রতি ভালোবাসা কমে গেছে। যাকে পছন্দ করি না, তাকেও বলতে হবে পছন্দ করি, পছন্দ করার মানুষের অতো অভাব এই দুনিয়ায় এখনো হয় নাই। রাইগ্যা গেলে মাইনষ্যে ক্যাম্নে ভ্যাডকায়, আমার তো মাথায়ই ঢোকে না! তাইলে আর রাইগ্যা কী লাভ? আমার তো রেগে গেলে লোকজনকে ধরে-ধরে থাবড়াতে ইচ্ছা করে। মনে হতে থাকে, এই দুনিয়ায় যতো সুখ থাবড়ানোতে!

আমার অভিজ্ঞতা বলে, বেশিরভাগ রাগী মানুষের মন পরিষ্কার থাকে। ওদের মধ্যে হিপোক্রিসি কম থাকে। অন্যলোকের ক্ষতি কম করে। লোকজনকে বিপদআপদ থেকে উদ্ধার করতে চেষ্টা করে। মনের ভেতরে যা, তা চোখেই চলে আসে। যাকে খোলা বাংলা বইয়ের মতো গড়গড় করে পড়ে ফেলা যায়, তার সাথে মেশা সহজ। রাগী মানুষের রাগ পড়ে গেলে যার উপরে রেগে গিয়েছিল, তার উপরে আর কোনো ক্ষোভ থাকে না। উল্টো, কেন যে রেগেমেগে দুর্ব্যবহার করেছিলেন, সেই অসীম আফসোসে নিজেই কষ্ট পান। তখন উনি পৃথিবীর সবচে’ ভাল মানুষ। আহা!

ভাবনা: উননব্বই।

……………………..

কিছু-কিছু মানুষ মনখারাপ করে দেয়ার অসীম ক্ষমতা নিয়ে জন্মায়। কারো মনখারাপ করে দেয়ার কাজটা ওরা কী যে ভাল পারে! এই কাজটা করার জন্য কখনো-কখনো ওদের ঠোঁটও নাড়তে হয় না, চোখের চাহনিই যথেষ্ট। ভয়ংকর প্রতিভা! কারো-কারো চোখ বড় বেশি মায়াহীন হয়। কারো মনখারাপ করে দেয়ার ব্যাপারটা কখনো-কখনো হাজারটা খুনের সমান। খুব মনখারাপ করে আছে, এমন কারো চোখের দিকে তাকিয়ে থাকাটা পৃথিবীর কঠিনতম কাজগুলোর একটি। তবুও কিছু-কিছু মনখারাপ করে দেয়ার প্রতিভাসম্পন্ন মানুষ এ কাজটা করতে পারে। খুব কঠিন আর নির্দয় চোখে হাসি-হাসি মুখে কষ্টপাওয়া মানুষটির দিকে তাকিয়ে থাকে। কীভাবে যে পারে! মনখারাপের ব্যাপারটা খুব চট্‌ করে শেষ হয়ে যায় না। মনখারাপ হয়ে যাওয়ার নিয়ম হল, একবার মনখারাপ হয়ে গেলে মন আরো বেশি-বেশি খারাপ হতে থাকে, হতেই থাকে। একটাসময় পর মনটা আর কিছুতেই ভাল হতে চায় না। কারো মনখারাপ হয়ে আছে, অথচ আশেপাশের কেউই কিছু বুঝতে পারছে না, কিংবা সে নিজেই কিছু বুঝতে দিচ্ছে না, অনেক চেষ্টা করেও সে মুখে কিছুই বলতে পারছে না, এমন মুহূর্তে মনখারাপের সমস্ত চেহারাটা ওর চোখের মাঝে কী এক বিষণ্ণ তুলিতে আঁকা হতে থাকে। দুচোখের কোণায় দলা পাকিয়ে কষ্টে জমতে-জমতে একটাসময় কান্না হয়ে ঝরে পড়ে। ওইসময় মনটা অদ্ভুতরকমের হাল্কা হয়ে যায়। কান্না করে ফেলতে পারার মধ্যে কী যে সুখ! সবাই পারে না, কেউ-কেউ পারে। আবার ওই কেউ-কেউ’ও কাজটা সবসময় পারে না, কখনো-কখনো পারে। সবাই কি আর কাঁদতে পারে? প্রচণ্ড অভিমানী যারা, তাদের ক্ষেত্রে ভারি কান্নাটুকুও ঝরে যাওয়ার মতো অপূর্ব ব্যাপারটা ঘটে না। প্রকৃতির রঙের সাথে মনের রঙ সবসময়ই যে মিলে, এমন নয়। ঝলমলে রৌদ্রেও কারো মনখারাপ হয়ে যেতে পারে, আবার দারুণ অঝোর বর্ষণেও কেউ খুব খুশিমনে গুনগুন করতে পারে। কেউ-কেউ আছে, যাদেরকে রূপকথার গল্পের মতো ঝরঝর করে পড়ে ফেলা যায়। ওদের মন কাঁদলে, ওদের চোখ হাসে না। ওদের মন হাসলে, ওদের চোখ কাঁদে না। ওরা বড় ভাল হয়। ওদের মনখারাপ করে থাকতে দেখলেও ভীষণ মায়া হয়। সবারই যে হয়, তা নয়। কিছু-কিছু বিষয়ের উপর মায়া জন্মাতেও এক ধরণের শক্তি লাগে। এমন মানুষও আছে, যারা ঘাসের ওপর দিয়ে হেঁটে যাওয়ার সময়ও খুব যত্নে হাঁটে। প্রকৃতির এই তুচ্ছ সৃষ্টির ওপর মায়া জন্মাতে অনেক শক্তি লাগে। এটা যে সবার থাকে না। কিছু-কিছু মানুষ আবার অন্যরকমের। ওরা খুব নিখুঁত মুখোশ পরে থাকে। ওরা সবকিছুকেই লুকিয়ে ফেলতে পারে। ওদের সুখ আর দুঃখের অস্তিত্ব কিংবা অনস্তিত্ব—দুই-ই প্রায় সমান। এমন নয় যে, এই দল ভারি করে আছে পৃথিবীর সব চতুর আর খারাপ মানুষ। ভালমানুষও চোখের জল আড়াল করে বছরের পর বছর বেঁচে থাকে। খারাপ লোকের মনখারাপ হয় কম। ভাল লোকের মনখারাপ করে দেয়াটা খুব সহজ। অনুভূতিশুন্য হয়ে বাঁচতে পারলে ভালমানুষ হয়ে বাঁচার দায়টা অনেকেই মাথা পেতে নিত। নরম মনের আবেগি মানুষ খুব অল্প আঘাতেই মনখারাপ করে ফেলে। কখনো-কখনো টুপটাপ কান্নাও ঝরিয়ে ফেলে। যদি ভুলেও এই চোখের জলটা কেউ মুহূর্তের হেঁয়ালিতে দেখে ফেলে হঠাৎ, তখন তার মধ্যে যে প্রচণ্ড অপরাধবোধ কাজ করে, সেটা তাকে ভীষণ ছোটো করে দেয়। এমনকি তার মনখারাপ করে দেয় যে মানুষটা, তাকেও বাঁচিয়ে দেয় কখনো-কখনো। জীবনের যত অপ্রাপ্তি কিংবা পেয়ে-হারানো, এর অনেকটাই ভুল বোঝাবুঝির জন্য। পেছনে-পেছনে যে রাগ আর ক্ষোভ জমতে থাকে, সামনাসামনি কথা বলে নিলে তা অনেকটাই হাল্কা হয়ে যায়। কিন্তু যার উপর রাগটা, তার সাথে নিজ থেকে কথা বলা বড় শক্ত কাজ। হিমালয়ের চাইতেও বড় হাজার বছরের পুরনো এই বরফটা ভাঙবে কে? মাঝে-মাঝে সরি বলতে পারাটা কী যে কঠিন হয়ে পড়ে! নিজের সাথে নিজের এই বোঝাপড়া বড় শক্ত! নিজে শেষ হয়ে যেতে-যেতেও এর হাত থেকে মুক্তি মেলে না। সম্পর্কগুলি এভাবে করে ভাঙতে-ভাঙতে বন্ধু হয়ে যায় পরিচিত। ইগো বড় ভোগায়, কষ্ট দেয়! আবার ইগো ছাড়া যে থাকাও যায় না! এই চিরন্তন দ্বন্দ্ব থেকে মুক্তি মেলে বুঝি কেবল মৃত্যুতেই—আত্মিক কিংবা দৈহিক।

হে ঈশ্বর! মন দিলেই যদি, মনখারাপ করে থাকার জন্য সাথে কিছু বোনাস আয়ুও দিয়ে দিলে না কেন?

ভাবনা: নব্বই।

……………………..

সবাই সবাইকে ভালোবাসতে পারে না। কার যে কখন কী ভাল লাগে, এটা কখনোই কার কী ভাল লাগা উচিত এর সাথে মেলে না। অনেক পরিশীলিত মানুষও একেবারে বোহেমিয়ান ছন্নছাড়া রেকলেস টাইপের কোনো মানুষকে ভালোবাসতে পারে। এতে দোষের কিছুই নেই। একটি অপূর্ব ফুটফুটে মেয়ে চুল বড় রাখে, ভাঙা গাল, একটা সিগ্রেটের জ্বলন্ত শেষ অংশ থেকে আরেকটা সিগ্রেট ধরায়, সেলিব্রেশন মানেই মদগাঁজার সুখ, কারো উপর মেজাজ খারাপ হলেই ঘুষিতে ওর নাক ফাটিয়ে দেয়, পোশাকের দিকে কোনো খেয়াল নেই, শেভটেভ খুব একটা করেটরে না, মেয়েদের দেখলেই আড়চোখে তাকিয়ে চটজলদি শিস্‌ দিয়ে দিতে পারে, দিনরাত মেয়েবন্ধুদের নিয়ে ঘুরতে পারে—এমন একটা ছেলের প্রতি আকৃষ্ট হতেই পারে। এতে দোষের কিছুই দেখি না। যার-যার জীবন তার-তার। ধরা যাক, ওসব বৈশিষ্ট্যের ধারেকাছেও নেই, এমন একটা ছেলের সাথে মেয়েটার পরিচয় হল। ছেলেটাকে ওর একটু-একটু করে ভাল লাগতে শুরু করল। মেয়েটা চাইল, ছেলেটা ও যেমনটা চায়, তেমন করে বদলে যাক। ছেলেটা পারল না। কীভাবেই বা পারবে? চাইলেই কি হুট্‌ করে একদিন সিগ্রেট ফুঁকতে শুরু করে দেয়া যায়? গাঁজার নেশায় বুঁদ হয়ে থাকার দায় নেয়াটা খুব সহজ হয়ে ওঠে এক নিমিষেই? সবাই তো আর সবকিছু পারে না। কারো-কারো জন্য লম্বা-লম্বা চুল রাখার চাইতে লম্বা-লম্বা লেখা লিখে ফেলাটা সহজ। মুভির রাফটাফ নায়ক হয়ে যাওয়ার চাইতে দুপাতা মুভি রিভিয়্যু লেখাটা সহজ। রবীন্দ্রনাথকে যখনতখন ফাকিং হ্যাকনিড্‌ ওল্ডফ্যাশনড্‌ বলে গালাগালি করার স্টাইলটা কেন সবাইকেই রপ্ত করতে হবে? ওসব করেও যে ভাল স্টুডেন্ট, মানে ভাল রেজাল্টকরা স্টুডেন্ট কিংবা ভালমানুষ হওয়া যায় না, তাও কিন্তু কিছুতেই নয়। আমি এও বলছি না, এর কোনটা অন্যটার চাইতে বেশি দামি। শুধু বলছি, যে যেটাকে দাম দেয়, সে সেটা রক্তে মিশে আছে এমন কাউকে খুঁজে নিক না! কেউ-কেউ কেন সেই খেলাটা খেলতে ভালোবাসে, যে খেলাকে খুব সহজেই জীবন বলে ভুল করে ফেলতে ইচ্ছে করে? কোনটা খেলা, কোনটা জীবন, সেটা আলাদা করে বোঝার ক্ষমতা তো সবার থাকে না। মানুষ যে তার ভেতরটা বদলাতে পারে না। ওই ভেতরটাকে ভালোবাসতে পারছি না, অথচ ভালোবাসি কী বাসি না, নিজেকে এই দ্বন্দ্বে রাখতে-রাখতে ভালোবাসার অভিনয় করে গেলাম, এটা কেমন ধরনের হিপোক্রিসি? আমার কনফিউশনকে যদি আরেকজন ভালোবাসা ভেবে বসে থাকে, তবে ওর বুকচাপা অভিমান আর কষ্ট কি একটুও অভিশাপ হয়ে আমাকে দহন করবে না?

সবকিছু মিলিয়ে কাউকে ভালোবাসতে পারছ না, অথচ ওকে ভালোবাসতে ইচ্ছে করছে? চেষ্টা করে দেখ, ও সত্যিই বদলায় কিনা তুমি যেভাবে চাও সেভাবে, কিংবা তুমি নিজেকে বদলাতে পারো কিনা ওর মনের মতো করে। কত সময় ধরে এ ব্যাপারটার জন্য অপেক্ষা করে থাকবে? ততক্ষণই যতক্ষণ তোমাদের ভালোবাসাটা ‘ফর গ্রান্টেড’ পর্যায়ে চলে না যায়। ভালোবাসতেই হবে কেন? কেউ কি তোমাকে দিব্যি দিয়েছে নাকি? এত কীসের দায় তোমার? শরীরের? ঠিক আছে, মানলাম। কিন্তু, ওটার জন্য ‘ভালোবাসি’ বলতে হবে কেন? ভালোবাসার বিশাল রাজ্যে একটা কুটিরের চাইতেও ক্ষুদ্র এই শরীর। আর আমরা কিনা সেই তুচ্ছ কুটিরকেই পুরো রাজ্য ধরে নিজেকে পরিচালনা করি? শরীরের দাবি শরীর মিটাক; এখানে ভালোবাসাকে অহেতুক টানাহ্যাঁচড়া করা কেন? শরীর আর মনের দায়কে যে আলাদা করে বুঝতে পারে না, সে প্রেমিক নয়, বড়জোর পুরুষ; প্রেমিকা নয়, বড়জোর নারী। জোর করে ভালোবাসার অভিনয় করে যেও না। তুমি ভাল অভিনেতা/ অভিনেত্রী হতে পার, কিন্তু সবাই তো আর ভাল দর্শক না। কেউ-কেউ অভিনয়টাকে সারাজীবনেও ধরতে পারে না, ভালোবাসা ভেবে-ভেবে সারাজীবনই ভুল করে যায়, ভুল করতেই ভালোবাসে। দোহাই তোমার, ভেবো না, একদিন সব ঠিক হয়ে যাবে। ততদিনে হয়তো অনেক দেরি হয়ে যাবে, অথচ কিছুই ঠিক হবে না।

কেন কেউ-কেউ কষ্ট দিতে, মনখারাপ করে দিতে, কাঁদাতে এতবেশি ভালোবাসে?

ভাবনা: একানব্বই।

……………………..

কিছু মানুষ নীরবে ভালোবাসে।

আমি চাই, ওরকম কেউ সামনে এসে বলুক, ভালোবাসি! সামনে এসে না হোক, অন্তত লুকিয়ে বলুক।

আমি না জেনে না বুঝে দূরে সরে যাওয়ার আগেই ওরা দূর থেকে কাছে আসুক! আমার অনেক বড় একটা শক্তি আছে। সেটা হলো, আমি ভালোবাসতে ও ভালোবাসাতে জানি। তাই, ভালোবাসাকে অপরাধ ভেবে নিজেকে অপরাধী করে দেবেন না।

আমি চাই না, আপনার ভালোবাসার মালাটির ফুলগুলো আমার কবরের উপর ঝরে পড়ার প্রতীক্ষায় থাকুক। মৃত মানুষ ফুলের সুবাস নিতে পারে না। মৃত মানুষের চোখে সবচাইতে রঙিন ফুলটিও কোনো রঙ ছড়ায় না।

কিছু মানুষ লুকিয়ে ঘৃণা করে।

আমি চাই, যারা ভালোবাসে, ওরা আমাকে লুকিয়ে বলুক, অমুক অমুককে আপনার জীবন থেকে সরিয়ে দিন। সরিয়ে দিতে না পারলেও ওদের কাছ থেকে সাবধানে থাকুন। ওরা ভালোবাসতে জানে না, কথা এটা নয়। কথা হলো, ওরা আপনাকে ঘৃণা করে।…………কেউ-কেউ ওদেরকে চিনিয়ে দেন। ওদেরকে আমি সবচাইতে বড় বন্ধু মানি।

কাউকে ঘৃণা করার জন্যও তো তার পেছনে সময় নষ্ট করতে হয়। যাকে ওদের পছন্দই নয়, তার পেছনে মূল্যবান সময় নষ্ট করে ওদের কী লাভ হয়, আমি বুঝি না। আমি যাচাই করে দেখতে ইচ্ছে করে, আমাকে ঘৃণা করার মতো সময় আসলেই ওদের অফুরন্ত কিনা। যদি তা-ই হয়, তবে আমি ওদের কিছুটা সময় বাঁচিয়ে দেবো। কিছু মানুষ থাকে, যারা অন্যকে ঘৃণা করা ছাড়া বাঁচতে পারে না। আমি চাই, ওরা ওই সময়টাতে ঘৃণা করার জন্যে নতুন কাউকে খুঁজে নিক। এবং একটাসময়ে সেই নতুন কেউ ওদেরকে তার জীবন থেকে সরিয়ে দিক। এরপর ওরা আবারো নতুন কাউকে খুঁজে নিক। ঘৃণাকে বাঁচিয়ে রাখা একটা চলমান প্রক্রিয়া।

যারা ভালোবাসতে জানে না, আমরা ওদেরকে একঘরে করে দিতে চাই। সারামাগোর ‘ব্লাইন্ডনেস’ উপন্যাসের অন্ধদের সমাজের মতো ওদেরও একটা সমাজ সৃষ্টি হোক। ঘৃণ্যদের সমাজ। এই সমাজ ঘৃণিত সমাজ। ওদের সরিয়ে দিতে পারলে আমি আরো কিছু মানুষের ভালোবাসা মাথা পেতে গ্রহণ করার সময় পেতাম, ওদের ভালোবাসার প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে পারতাম। আমার এখনো মানুষের ভালোবাসাকে ভালোবাসতে ইচ্ছে করে।

যারা ভালোবাসে না, ওদের সাথেও থাকা যায়।

কিন্তু যারা ঘৃণা করে ওদের সাথে থাকা যায় না। নিজের জন্যে, ওদের জন্যে। আমি ওদের সাথে থাকলে ওদের সমস্যা, ওরা আমার সাথে থাকলে আমার সমস্যা। কী দরকার?

আমি চাই, অন্তত কিছু মানুষ আমাকে ঘৃণা করার দায় থেকে মুক্তি পাক। কাউকে ঘৃণা করতে কষ্ট হয় তো!

আপনি ভালোবাসেন, এটা বলুন (প্রকাশ্যে কিংবা গোপনে)। ওরা ভালোবাসে না, এটাও দয়া করে বলুন (প্রকাশ্যে কিংবা গোপনে)। ওরা ঘৃণা করে, এটা দয়া করে নিশ্চয়ই বলুন (গোপনে)।

কথা দিচ্ছি, আমি আপনার এই উপকারের কথা সবসময়ই মনে রাখবো, আপনার প্রতি চিরকৃতজ্ঞ থাকবো।