ভাবনাদেয়ালের পলেস্তারা (১৬শ অংশ)

ভাবনা: একশো ছয়।

……………………..

উত্তর দিয়ো না, উত্তর পাওয়ার জন্য তোমাকে লিখছি না। লিখছি নিজের মনকে হালকা করার জন্য। প্রায়ই কত কী যে লিখি। সেগুলির একটাও তোমার কাছে পৌঁছয় না। খুব ভাবি, আমার জীবনের যতো হাসি, যতো খুশি, সবই তোমায় দেবো। দুঃখটুকু নাহয় আমারই থাক। ওইটুকুও তোমায় দিয়ে দিলে নিজের বলতে আমার আর থাকে কী, বলো? আমার কোনো চিঠিই তোমার দরোজায় যাবে না, আমার কোনো অক্ষরই তোমার আগুনে পুড়বে না, আমার সব ভাষা শুধুই আমার আবেগের উত্তাপে পুড়তে থাকবে। জীবনখাতার পাতায়-পাতায় যতো হিসেবনিকেশ, যতো কান্নাহাসি, যতো দেয়ানেয়া, তার সবটুকুই আমি একা সামলে নেবো। অনেকটুকু সময়ই তো দেখতে-দেখতে পার করে দিলাম তোমায় ভেবে। আর বাঁচবোই বা কতদিন, বলো? তোমায় ঘিরে আমার আবেগ আর ভালোলাগাগুলিকে যত্ন করে-করে আর কটা দিন কাটিয়ে দেবো। কী আর হবে, বলো? একটাই তো জীবন। এক জীবন আর কতই বা দেবে? অনেককিছুই তো দিয়েছ তুমি। যা পেয়েছি, তার স্তূপ, যা হারিয়েছি, তার স্তূপের চাইতে ঢের উঁচু। আমি খুশি, কোনো অভিযোগ নেই আমার। লেনাদেনার হিসেবে কি আর জীবন চলে, বলো? জীবনে যাকিছুতে বাধা এসেছে, যাকিছু আমায় বাঁধতে চেয়েছে, যাকিছু তোমায় আড়াল করতে চেয়েছে আমার জীবন থেকে, তার কতকিছুই তো ছেড়ে দিয়েছি আলগোছে কত কতবার! আর কেউ না জানুক, তুমি তো জানো। নিজেকে সামনে বাড়তে দিয়েছি প্রতিনিয়ত। তোমার যাকিছু ভাল, তাকিছুকেই বুকের মধ্যে বাঁচিয়ে রাখি। আমার জীবনে একমাত্র তোমার ক্ষেত্রেই যতবার বাধা এসেছে, তা যতোই প্রবল হোক না কেন, নিজের সবটুকু দিয়ে প্রতিহত করে পরম যত্নে হৃদয়ের মধ্যে আগলে রেখেছি তোমার ওই ভালোটুকু। তোমায় বাঁচিয়ে রাখতে ছেড়েছি বন্ধু কত শত! ছিলো না যার শত্রু একজনও, আজ সেই আমারই কত নিন্দা কত্তো মুখে-মুখে! ছেড়ে গেছে বিশ্বাসেঘেরা সম্পর্কের সুতো, মুহূর্তের অভিমানে খুলে গেছে বন্ধন যত। সেসব গল্পের ঠিকানা তুমি কখনোই জানবে না।

আমি তোমাকে কীভাবে ভালোবাসি, কতটা ভালোবাসি, তুমি তো খুব ভাল করেই জানো! ওই ভালোবাসার জায়গাটা সবসময় থাকবে। একেবারে সবসময়ই। আত্মার তো কখনো বিনাশ হয় না, আমার এ ভালোবাসারও বিনাশ হবে না কখনোই!

আমি তোমাকে খুব বাজেভাবে আক্রমণ করে পোস্ট দিই, এটা তুমি ঠিক বলনি। আমার জন্য তোমার শান্তি নষ্ট হচ্ছে, এর চেয়ে ভয়ংকর অভিযোগ আর হয় না। তুমি কষ্ট পেয়ে এসব বলছো, তাও আমি জানি। আমি ভীষণ রকমের চাপের মধ্যে আছি। এজন্য হয়তো ইদানিং এমনটা হচ্ছে। আমি না বুঝেই অবচেতন মনে তোমায় ওসব বলে ফেলি। মানুষের কষ্ট রাখার জন্যও তো একটা ঝুড়ি লাগে। সে ঝুড়ি বড় যত্নের, বড় নির্ভরতার, বড় শান্তির, বড় স্বস্তির, বড় মায়ার। তোমাকে সে ঝুড়িটা ভেবে আমার সব কষ্টের কয়েক মুঠো রেখে দিয়েছিলাম। তুমি এতোটা কষ্ট পাবে, বুঝিনি। তুমি আমার কত কাছের, কত আপন, কত আদরের, তা তো তুমি জানো, জানো না বলো? আমার কষ্ট তোমার সাথে ভাগ করি, একটু হলেও সুখ অনুভব করি, আর সেটাকে যদি তুমি না বুঝে আক্রমণ ভেবে কষ্ট পাও, তাহলে আমি আর কার কাছে আমার ব্যথা জানাবো, বলো? যার ব্যথা প্রকাশ করার কেউ নেই, সে বাঁচে কীকরে, বলো?

আমায় ভুল বুঝো না। তুমিও অনেক চাপের মধ্যে থাকো এবং ইদানিং আছো, সেটা আমি খুব বুঝতে পারি। তোমার মেজাজও সবসময় ঠান্ডা থাকে না। সেটা কি আমি বুঝে নিই না, বলো? মনে শুধু-শুধু কষ্ট নিও না। কাল থেকে মনটা ভারি হয়ে আছে। অনেক কেঁদেছি, কষ্ট পেয়েছি বলে কাঁদিনি, তোমায় কষ্ট দিয়েছি বলে কেঁদেছি। গত রাতে তোমার লেখা কবিতাটা পড়লাম। মনে-মনে তোমার কণ্ঠে, শব্দে, উচ্চারণে তা শুনেও নিয়েছি। আমি এর চাইতে বেশি পাওয়ার সাহসও করি না। একসময় কবিতা লিখে আমায় শোনাতে। মনে পড়ে? বলতে, দেখো তো ঠিক আছে কিনা? শব্দের গাঁথুনি, ছন্দের বিন্যাস? তুমি বললে, বদলে দেবো। তোমায় না শোনালে আমার ছন্দ মিলে না। আমি জানি, এখন আমাকে ছাড়াই তোমার কবিতার ছন্দরা দিব্যি মিলে যায়। আমি আর তোমার কবিতা নই। তোমার কবিতা আর আমি নয়। আমি তো মেনে নিয়েছি। জীবন সবকিছুকেই মানিয়ে নেয়। তাই বলছি, দোহাই তোমার, শুধু ভুল বুঝো না। আমায় নাহয় না-ই বা বুঝলে, তবু ভুল বুঝো না।

আমি তোমাকে অনেক ভালোবাসি, তুমি জানো সেটা। তুমি কোনো কারণে কষ্ট পেলে আমার হৃদয়ে কেউ যেন শক্ত করে ধারালো ছোরা চেপে ধরে। রাজ্যের যতো কান্না দলা পাকিয়ে গলার কাছে এসে শক্ত হয়ে আটকে যায় আর ব্যথা ছড়াতে থাকে। চোখের কোণে বর্ষা নামে। আমি সবসময়ই প্রার্থনা করি, তুমি যা চাও, যেভাবে চাও, যতটুকু চাও, সারাজীবন তা-ই যেন হয়! আমি জানি, তুমি আমার ভালোটাই চাও। তুমি মুখে যা-ই বল না কেন, আমি বিশ্বাস করি, তুমি আমার অকৃত্রিম শুভাকাঙ্ক্ষী, বন্ধু, প্রাণের মানুষ। এটা তোমায় কখনো বলে দিতে হবে না। আমি বুঝি, অনুভবে জানি। তুমিও জানো যে আমি এটা জানি। আমার অনেক আদর আর অফুরন্ত ভালোবাসা তোমার জন্য। ঈশ্বর আমার জীবনের বিনিময়ে হলেও যেন তোমাকে ভাল রাখেন।

একটু মজা করি তোমার সাথে, কেমন?

আকাশে একথালা ধবল চাঁদ নরোম আলো ছড়ায়……

দেখো, এই হৃদয়ের সব ভালোবাসা একদিন—

ওই চাঁদটাকে দিয়ে দেবো!

আমার পর্বতসম ভালোবাসার ভার সইতে না পেরে,

চাঁদটা তখন—

টুপ্‌ করে পড়ে যাবে…….তোমার মাথার ওপর!

ভাবনা: একশো সাত।

……………………..

কনকর্ড থেকে বেরিয়ে ওর সাথে হেঁটে আজিজ সুপার মার্কেট পর্যন্ত যেতে নৈঋতার খুব ইচ্ছে করছিলো। কিন্তু পারেনি। কারণ, নিজেকে স্বাভাবিক রাখার অভিনয়টা ও আর চালিয়ে যেতে পারছিল না। ওর বুকের ভেতরে একটা অপমানই বারবার ধাক্কা দিচ্ছিল: “আপনি এভাবে আমাকে ফলো করছেন কেন? কুকুরও তো এতোটা ফলো করে না!” এতো সহজ অমন কঠিন করে বলা! একটুও কাঁপল না গলা! কী সহজেই পুরনো ‘তুমি’ ‘আপনি’ হয়ে যায়!

একা হতেই, নৈঋতা ওর নিজের মধ্যে ফিরে আসে। অনিমেষের সামনে গেলে ওর মাথাটা ঠিক কাজ করে না। বরুণের ছায়া দেখতে পায়। ওর বারবারই মনে হতে থাকে, বরুণ সোজাসুজি ওর চোখের দিকে তাকিয়ে কথা বলছে। খুব যন্ত্রণা হয় নিজেকে সামলে নিয়ে ওর সাথে কথা বলতে, ওর কথা শুনতে। ও ভাবতে থাকে, সবাই কেন ওকে ছেড়ে চলে যায়? ও কি কষ্ট পেতেই জন্মেছে? ওর কী দোষ ছিল? এসব ভাবতে-ভাবতে ও সামনের রাস্তাটা ধরে হাঁটতে থাকে। হাঁটছেই তো হাঁটছে। “কুকুরও তো এতোটা ফলো করে না!” কীভাবে বলে ফেলে মানুষ এমন কথা? নৈঋতা ভাবে, ও নিজে কি কখনো একটা অপরিচিত লোককেও এমন দুঃখ দিয়ে বলতে পারতো? হঠাৎই পাখির কিচিরমিচির শুনে একটা খাঁচার সামনে নৈঋতা দাঁড়িয়ে পড়ে। আরে! কাঁটাবন এসে গেছে! পাখিগুলোর দিকে তাকিয়ে নৈঋতার মনে হলো, এই পাখিরা এই খাঁচায় কেন? ওদের তো আকাশে থাকার কথা ছিল! সেই কবে বরুণ ওদেরকে মুক্ত করে দিয়েছিল না? ও যেখানে দাঁড়িয়ে, তার একটু দূরে অজিত হেঁটে যাচ্ছে। একবার ফিরেও তাকাচ্ছে না। অজিতরা শুধু পাশ কাটিয়ে হেঁটে যায়। এইখানে এই সময়ে বরুণ নেই কেন? আকাশ থেকে ও কেন ফেরে না? নাকি, ওখান থেকে ফেরার রাস্তা বন্ধ? বরুণই শুধু ওকে একটু বুঝত। এইটুকু সুখও ঈশ্বরের সহ্য হলো না! নৈঋতার খারাপ মনটা আরো বেশি খারাপ হয়ে গেলো। বরুণ তা বুঝতে পেরে ওই দূরের আকাশ থেকে নিশ্চয়ই বলছে, “এই বোকা মেয়ে! এমন করে কেউ মনখারাপ করে থাকে? এই দেখো, আমি আছি তো! হাসো, এইবার হাসো!” ঠোঁটের কোণায় হাসির রেখা ফুটিয়ে তুলে আকাশের একটা তারার সাথে নৈঋতা একফাঁকে হাই ফাইভ করে নেয়। তারপর, আবার হাঁটতে থাকে। একটু আগে চারদেয়ালের মাঝের যে দুঃখমাখানো সুখস্মৃতিগুলো, একটু-একটু করে অতীত হয়ে যাচ্ছে, নৈঋতা সেগুলো ছুঁয়ে-ছুঁয়ে দেখছে। লোনাজলের ঘনত্বে নৈঋতা বারবারই আটকে যাচ্ছে, কেবল ওর দুই পা ছুটছে।

হঠাৎ একটা খালি রিকশা দেখে ঠিকানা বলে ভাড়া জানতে চাইলে উত্তর এলো, “১৮০ টাকা।”

“কী? ১৮০ টাকা? মানে কী? ভাড়া জানেন কিছু আপনি?”

চেঁচিয়ে উঠে চারপাশটা দেখে নৈঋতার সম্বিৎ ফিরল; বুঝল, আনমনে হাঁটতে-হাঁটতে উল্টোপথে সে কতদূর এসে পড়েছে!

“চলেন মামা।”

রিকশায় উঠে নৈঋতা নিজেকে প্রশ্ন করে, জীবনের সঠিক গন্তব্যে পৌঁছনোর কোনো রিকশা নেই কেন? ভাড়া নাহয় একটু বেশিই নিলো!

রিকশা ছুটছে ঠিক গন্তব্যে।

ভাবনা: একশো আট।

……………………..

আচ্ছা, ওয়াশরুমে দেরি তো হতেই পারে, তাই বলে এতোটা? আজব! একা-একা বসে থাকতে কার ভাল লাগে? আমাকে এক কাপ কফি শেষ করার সময় দিয়ে গেছে। হুহ্‌! এই সময়ের মধ্যে দশ মগ কফি শেষ করে একটা ঘুমও দিয়ে দেয়া যায়!

ওয়াশরুমে এতক্ষণ কী? আমার মতো শুচিবায়ু আছে নাকি!? মনে তো হয় না। তাছাড়া, যা “বের হবার” তা তো বের হয়েই গেছে! এর পেছনে কেন এত সময় দিতে হবে তাহলে? নাকি, বড়টা পেয়েছে, তাই দেরি হচ্ছে? হায়, এই রোমান্টিক মুহূর্তেই কেন বড়টা পেতে হলো? বড় বাথরুম? এই অবেলায় কেন এলি রে? জানিস আমি কে? একদম মেরে ফেলে লাশ করে দেবো গুম! আমার সুন্দর সময়টাতে কেন ভাগ বসাচ্ছে প্রকৃতির নিষ্ঠুর হাতছানি? আসলে, আমি কেউ নই। এটা ওর বড় বাথরুমও জানে।

ধ্যৎ! কিছু ভাল্লাগছে না! আচ্ছা, মহোদয় ওয়াশরুমে দাঁড়িয়ে-দাঁড়িয়ে আবার সুমিতার সাথে গল্প করছে নাতো? একটু আগে বজ্জাত মেয়েটা ভাইবারে নক করেছিলো। এর পরপরই তো ওর বাথরুম পেলো! স্মেলস্‌ ফিশি! “ভাল। আপনি?” কেন সুমিতা এটা পাঠাল? তার মানে কি ও সুমিতাকে প্রথমে টেক্সট পাঠিয়েছে? ভাবতে ভাবতেই ঘরের শত্রু দ্বৈতসত্তা এসে হাজির! কেন রে নিশি? সুমিতার সাথে কথা বলুক, আর যার সাথেই কথা বলুক, তোর কী এসে যায়? জ্বলছে বুঝি খুব? এতো ঈর্ষা কেন রে তোর?

একদম পকপক করবে না, দ্বৈতসত্তা! ভাল হবে না কিন্তু! বলেছি, আমার জ্বলে? আর জ্বলেও যদি, তাতে তোমার কী? আর জ্বলবে না-ই বা কেন? আমার জন্য যে সময়টা রাখা, ওই সময়টাতে আমি কিছুতেই অন্যকারো ভাগ সহ্য করবো না। হুঁউউউউউ…….

এমন করিস কেন? ও নাহয় সুমিতার সাথে একটু কথা বললোই, অন্যকিছু তো আর করছে না!

বোমার শব্দের আবহের মধ্যে আমাকে মাছি মারার শব্দ শোনাতে এসো না, বুঝলে? আমার সবই জানা, কিছুই অজানা নয়। সমস্তটার গভীরতা এবং বিস্তৃতি—সবটাই আমি জানি, বুঝি। তুমি যতই শোনাও না কেন, কমই শোনানো হবে। বৃথা চেষ্টা কোরো না আমাকে সান্ত্বনা দেয়ার। যাও, নিজের কাজ করো গে, আর আমাকে মুক্তি দাও।

দ্বৈতসত্তা আর জ্বালালো না। এদিকে আমার সময় কাটছেই না, আর ওদিকে সত্যিকারের সময় যেন আলোর বেগে ছুটছে। আসুক ব্যাটা বাথরুম থেকে! পেটে এমন চিপা দিবো যে আরেকবার ‘বড়’টা পেয়ে যাবে! হুউমম্‌…….! ইসস্‌! ‘একসাথে থাকার’ সময়টা থেকে কতটা সময় চলে যাচ্ছে। ও কেন এখনো আসে না? বাথরুমে থাকতে কীসের এতো সুখ?

এসব ভাবতে-ভাবতে, নিশির মনটা খারাপ হয়ে যায়। অবশেষে ক্লান্ত হয়ে, সময় কাটাতে একটা বই হাতে নিয়ে নিশি পড়তে শুরু করে।

ভাবনা: একশো নয়।

……………………..

আমার ভালোবাসা মিথ্যে, সমস্ত অনুভূতিটনুভূতি মিথ্যে, প্রতিদিনের অগণ্য মুহূর্তের চোখের জল মিথ্যে। এসব যদি মিথ্যে না-ই হতো, তবে তুমি আমার অনুভূতিগুলো ঠিক বুঝতে পারতে। তুমি এতোটা ভীষণভাবে, এতোটা সময় ধরে নিরবিচ্ছিন্নভাবে আমার সাথে ‘এমন’ করতে পারতে না—কখনোই না! এই যে তুমি এখন ভাবছো, এই ‘এমন’টা আবার কী? আমার ভালোবাসা মিথ্যে বলেই হয়তো তুমি বুঝতে পারছো না, নয়তো ঠিকই বুঝতে। তোমার আর কী দোষ, বলো? আমিই তোমাকে সত্যিকার অর্থে ভালোবাসতে পারিনি। যে ভালোবাসা মিথ্যে, তেমন ভালোবাসায় ভর করে আমি কীকরে থাকি বলো তোমার পাশে? চলে গেলেই তো ভাল, তাই না? ছেড়ে চলে যাওয়াটা কী সহজ! এই সহজ কাজটাই এখনো শিখতে পারলাম না। তোমার পাশে থাকার জন্য, কিংবা আমায় পাশে রাখার প্রত্যয়ে কোনোদিন ভুল করেও একবিন্দু ভরসা আমায় তুমি দাওনি। আমি তো টিকে আছি কেবল আমারই ভালোবাসায় ভর করে। অথচ সেই ভালোবাসাটুকুও যদি মিথ্যে হয়, তবে আমি কীকরে থাকি বলো! প্রতিটি মুহূর্তেই মিথ্যে সব অনুভূতি আমায় এতটা বিহ্বল আর অস্থির করে রাখে, আর আমি কিনা তাদের সত্য মনে করে বেঁচে আছি? এ কী ভয়ানক অন্যায় বলো? এ আর কত হতে দেয়া যায়?………তাই আমি আজ চলে যাচ্ছি। কিছু-কিছু চলে যাওয়া মানেই—কী ভীষণভাবে থেকে যাওয়া! নীরবে, অনেকবেশিই নীরবে। যদি হাত ছেড়ে দিলে মন ছেড়ে দেয়া যেত, তবে কতই না সুখে বাঁচা যেত! তোমায় দেখে-দেখে যেমনি করে চোখ ক্ষয়ে যায়, যদি তেমনি করে পুরনো সব স্মৃতি ক্ষয়ে যেত! কেন মনে রাখি? কেন মনে থেকে সেসবকিছু যা শুধুই কষ্ট দেয়? যখন প্রদীপের শেষ তেলটুকুও নিঃশেষ হয়ে যায়, কোন আশায় তখনো হৃদয়ের রক্ত দিয়ে আলো জ্বেলে রাখি? যখন দুটি পাড়ের একটি আর নেই, তখনো কোন আশায় সেতুর দিকে অপলক তাকিয়ে স্বপ্ন দেখা? আঁধারযাপনই যার নিয়তি, সেও কেন ভোরের আলোর স্বপ্নে জাগে?

যেতে পারি না, তাও যাবো। আমি যেমনই থাকি, তুমি ভাল থেকো।

জানো, আমার কত কষ্ট হবে? এই যে তুমি একটুও বুঝতে পারছ না, কিংবা ভাবতে চাইছ না যে আমার ঠিক কতটা কষ্ট হবে, এর মানে হচ্ছে এই, আমার বুকের ভেতরের এই কষ্টটাও মিথ্যে। যদি সত্যই হতো, তবে নিশ্চয়ই তুমি বুঝতে পারতে। লোকে তো বাড়ির কুকুরবেড়াল কষ্ট পেলেও একবার তাকিয়ে দেখে, দেখে না বলো? আমার যে সে ভাগ্যটুকুও হয় না! তোমার হৃদয়ে আমার স্থান নেই, জানি। তাই বলে আর তো আমার কষ্টের খোঁজটা তোমার অজানা নয়। আমি কষ্টে থাকলেই তো তুমি ভাল থাকো, না? আমার কষ্ট, তোমার আনন্দ। যে আমার প্রিয়, কেবল আমার কষ্টটাই তার প্রিয়। আমার নিয়তিই এমন! তাই ভাবছি, আমি যা পাচ্ছি, তা কি আদৌ কষ্ট? সেটাই যদি হতো, তবে কেন তুমি আমার কষ্টের কথা জানলে না? আমি যে কষ্টে আছি, তা জানতে না পারলে তো তোমারও কষ্ট হওয়ার কথা! হিসেব তো মিলছে না! তবে কি ধরে নেবো, আসলে আমি কষ্টে নেই? এ সবই আমার কষ্ট-কল্পনা মাত্র?

জানো, আমি জানতাম, চোখের জল মিথ্যে বলে না। অথচ দেখো, সমস্ত অপমান, অবজ্ঞা, তাচ্ছিল্য ভুলে, যে জলে রোজ সমস্ত আমি’টা ভিজে- ভিজে নিজের কাছেই সান্ত্বনা খুঁজে নিতাম, সেই একান্ত আপন লোনাজলটাও কিনা আমার সাথে এমন করলো? যাকে সান্ত্বনা দেয়ার কেউ নেই, সে বড় দুঃখী। আমি যে কাউকে আমার কষ্টের কথা বলতেও পারি না। আমি নিজের সাথে নিজেই বোঝাপড়া করে নিতে শিখে গেছি।

আমার মন আমার পর হলো, আমার চোখের জলটাও আমার পর হলো—ওরা কেউ আর আমার কথা শোনে না। আমার নিজের বলতে আর কিছুই রইলো না। আমি এখন বড়ো একা। আমি কী নিয়ে বাঁচি বলতো? তবুও আমি বেঁচে থাকবো। মানুষ বেঁচে থাকে…….

ভাবনা: একশো দশ।

……………………..

সালেহা, মোগলাই আনস নাই?

না আম্মা, মনে নাই।

মোগলাই যখন নাই, পাউরুটি নিয়া আসতি।

‘নাই’ তো বলি নাই, বলসি, ‘মনে নাই।’

আমি তো এইজন্যই বললাম, মোগলাই যখন নাই, তখন পাউরুটি আনলেই হইতো, স্যান্ডউইচ করতাম।

আরে আজব! মনেই যদি থাকতো, তাইলে তো মোগলাই-ই আনতাম! (চিৎকার করে)

তাইলে এক কাজ করতি, পুরি নিয়া আসতি। হোটেলে পুরিও নাই?

এমন বদ আম্মাগুলানকে তুলে আছাড় মারা দরকার না? কোনো কারণ ছাড়াই আমার পেছনে লাগে!

অবশ্য, আম্মা যদি আমার পেছনে না লাগে, তবে বাঁচবো কীকরে? আব্বা মারা যাওয়ার পর থেকেই তো এই মধুর যন্ত্রণাটা পেয়ে আসছি। আমার পেছনে না লাগলে বেচারি আর কার পেছনে লাগবে? আম্মা যদি কখনো আমাকে এই যন্ত্রণা দেয়াটা বন্ধ করে দেন, তবে কার কাছ থেকে যন্ত্রণা চেয়ে নেবো? আমাদের দুজনেরই কেউ নেই। আম্মার প্রিয়জন হারিয়ে গেছে, আমার প্রিয়জন হারানোর ভয়ে আজো আসেইনি!

ভাবনা: একশো এগারো।

…………………………..

জানেন, আমার যদি অনেক টাকা থাকতো, তবে আপনাকে নিয়ে একদিন হেলিকপ্টারে চড়তাম। অনেকটা সময়ের জন্য একটা কপ্টার ভাড়া নিয়ে, যতোটা সম্ভব সবটা দেশ উপর থেকে ঘুরে দেখতাম। কিন্তু কী করবো, বলুন! কপ্টার ভাড়া নেয়ার মতো টাকা হয়তো আমার কাছে আছে, কিন্তু যতো টাকা থাকলে একটা কপ্টার ভাড়া করে বিলাসী সুখ উপভোগ করা যায়, ততো টাকা যে নেই।

আমার অনেক টাকা হলে ইসস্‌ কী যে মজা হবে! আমরা দুজন কপ্টারে ঘুরে বেড়াবো, সারাক্ষণই আপনার হাতদুটো চেপে ধরে রাখবো! নিচের সবকিছু দেখার ফাঁকে-ফাঁকে একটু করে, আপনি কফি আর আমি চা খেয়ে নেবো, পত্রীর কথোপকথন-এর কটা লাইন দুজন একসাথে পড়ে নেবো, দুজন মিলে চারলাইন করে ওই মুহূর্তের অনুভূতি নিয়ে একটা কবিতাও লিখে ফেলবো! এরপর হাতে, মানে…….আপনার হাতে একটা শক্তপোক্ত মজবুত কামড় বসিয়ে নিশ্চিত হয়ে নেবো, যা হচ্ছে, তার সবটুকুই বাস্তব, কোনো কল্পনা নয়। তখন কিন্তু আপনি আবার সেদিনের মতো অমন ভয়ংকর ঝাটকায় আপনার হাতটা সরিয়ে নিয়েন না, কেমন?

আর ইয়ে মানে, অন্যকিছু করতে ইচ্ছে করলে, সেটাও করে ফেলবো! (এমনকি, টয়লেট করতে ইচ্ছে করলেও দুম্‌ করে টয়লেট করে ফেলবো! কপ্টারে টয়লেট বানিয়ে দিতে বললে ওরা বানিয়ে দেয় না?)

আচ্ছা, সিএনজি’র মতো কপ্টারেও কি লুকিংগ্লাস থাকে? ককপিটে বসেথাকা পাইলট ব্যাটা যদি লুকিংগ্লাসের দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে, কোনো রকমের জ্বালাযন্ত্রণা করে, তবে ওই ব্যাটাকে ধরে একদম ধাক্কা মেরে নিচে ফেলে দিবো! এরপর যা হয়, হবে, কিন্তু ওকে ফেলে দিবোই দিবো! প্রয়োজনে গুগলে সার্চ করে-করে হেলিকপ্টার চালানো শিখে নিয়ে দুজন মিলে কপ্টার ওড়াবো।

খুব মজা হবে না? ইসসসস্‌! কখনো আসবে এমন একটা দিন?

ভাবনা: একশো বারো।

…………………………..

একদিন-একদিন করে, সেই ছোট্টটি থেকে ধীরে-ধীরে বড় হয়ে যাওয়াটা কেমন যেন একটা অদ্ভুত ব্যাপার, তাই না?

আমরা তো রোজ ঠিক একইরকম থাকি—গতকালকের আমি, আজকের আমি, আগামীকালকের আমি—সবকটা আমি’ই তো দেখতে ঠিক একই রকম। কেউ তো আর বলতে পারবে না যে গতকাল ছোট ছিলাম, আজ বড় হয়ে গেছি, কিংবা আজ ছোট, আগামীকাল বড় হবো; অথচ রোজকার এই অদ্ভুত অপরিবর্তনটাই আমাদেরকে একেবারে জন্ম থেকে বয়ে মৃত্যু অবধি নিয়ে ছেড়ে দেয়! অপরিবর্তনও বয়ে নেয় তাহলে? কী দারুণ একটা ব্যাপার, না? প্রতি সেকেন্ডে আমার সাথেথাকা আমি’টা আমাকেই কী ভীষণ ফাঁকি দিয়ে ফেলে! কখন হুট্‌ করে বড় হয়ে যাই, বুঝতেই পারি না! আমাদের মধ্যে একটা নীরব, সূক্ষ্ম পরিবর্তন প্রতিনিয়তই ঘটতে থাকে এই আমাদের চোখকেই আড়াল করে!

ছোট থেকে বড় হয়ে ওঠার একটা টুইস্ট মনে পড়লো এইমাত্র। আমি আর আমার বোন দুজনেই খুব আব্বুর কোলে উঠতাম, আব্বু যেখানে যায়, আমরা সেখানেই যেতাম, এমনকি আব্বুর অফিসেও! কনকনে শীতে, আব্বুর রাতে ডিউটি থাকলেও আমরা দুবোন সাথে চলে যেতাম! আব্বু টিঅ্যান্ডটি’তে ছিল; বিজয় সরণির উল্টোদিকে সংসদ ভবনের লাল বিল্ডিংয়ের প্রথম গোলকটার মধ্যে আমাদের ছোট্টবেলার অনেকটা সময় কেটেছে। অনেকেই আব্বুকেও চিনতো না, কিন্তু আমাদেরকে ঠিকই চিনতো! আব্বুর কাজ থাকলে আমরা একা-একা সংসদ এলাকায় ঘুরে বেড়াতাম (ভেতরেই ঘুরতাম), আর আব্বু ফ্রি হলেই আব্বুর কোলে চড়ে ঘুরতাম। কে আগে আব্বুর কোলে উঠবে, এটা নিয়ে আমাদের দুবোনের মধ্যে বেশ ঝগড়া হতো।

একবার গ্রামে গেছি বেড়াতে। আব্বুর সাথে হাঁটতে-হাঁটতে অনেকদূরে কোথায় একটা যেন গিয়েছিলাম, মনে নেই—ফিরতে রাত হয়ে গেছে। সেসময় গ্রামে সন্ধ্যা মানেই গভীর রাত। চারপাশে চিৎকার করে ঝিঁঝিঁ পোকা ডাকছে। ঝিঁঝিঁ নামের কোনো পোকা যে এমন বিকট শব্দে চিৎকার করতে পারে, ছোট্ট আমি তো সেটা জানতামই না; এখন কিন্তু ভীষন ভাল লাগে, অনেক রাত আমি ঝিঁঝিঁ পোকার কাল্পনিক ডাকে মাতাল হয়ে থাকি। ছোট্ট আমি সেদিন পোকাগুলোকে খুব ভয় পেয়েছিলাম। আমরা রেললাইন ধরে হাঁটছিলাম, দুপাশে শুধু জমি আর জমি, কেউ কোথাও নেই, শুধু ঝিঁঝিঁ পোকারা রাতের ডিউটি করছে। ভয়ে আমি ভেতরে-ভেতরে কুঁকড়ে যাচ্ছিলাম, কিন্তু আব্বুকে তা একদমই বলিনি। আমি না অনেক ছোটবেলাতেই অনেক কিছুই ভেতরে চেপে রাখতাম, আব্বু বা পরিবারের অন্যরা কষ্ট পাবে, দুশ্চিন্তা করবে, এমন কোনোকিছুই কাউকে বলতে চাইতাম না।

যা বলছিলাম…….আব্বুর আঙুল ধরে রাতের আঁধারে সেই গ্রাম্য ভূতুড়ে রেললাইন ধরে ভেতরে প্রচন্ড ভয় চেপে রেখে দ্রুত হাঁটছিলাম। হায়! এর মধ্যে নামলো প্রচণ্ড বৃষ্টি! বৃষ্টি মানে, একেবারে ঝুউম্‌ বৃষ্টি! এমনিতেই ভয়ে কুঁকড়ে যাচ্ছি, বৃষ্টি এসে গলায় যতটুকুনও জল ছিল, যেন সেইটুকুনও শুষে নিল! সেই ছোটবেলাতেই বুঝে গিয়েছিলাম, হায়, বৃষ্টি শুধু জল দেয়ই না, কখনো-কখনো, নিয়েও যে নেয়! এতোটাই নিয়ে নেয় যে একেবারে তৃষ্ণার্ত করে ছাড়ে! ততক্ষণে আমরা চলে এসেছি একটা ব্রিজের কাছাকাছি; ওটাকে আসলে ঠিক ব্রীজ বলা যায় না, বলা যায়, জলের অনেক ওপরে রেললাইনের সজ্জা। ও মাগো মা! রেললাইনের দুকাঠের মাঝখান দিয়ে ফাঁকা! আকাশের বজ্রপাতের আলোতে হঠাৎ-হঠাৎ দেখা যাচ্ছে নিচের গভীর জল, দুপাশে ধরার মতোও কিছু নেই! এটা দিয়ে মানুষ পার হয়!? ছোট্ট আমার কাছে সেই মুহূর্তটা কী যে ভীষণ দুর্বিষহ লাগছিল, আমি ঠিক এই মুহূর্তে লিখতে-লিখতে অবিকল সেই মুহূর্তটা গভীরভাবে অনুভব করতে পারছি, ভয়ে আমার গায়ের লোম খাড়া হয়ে যাচ্ছে! মানুষের জীবনের অনুভূতিগুলো কী অদ্ভুত, তাই না!? কোন ক্লাসে পড়ি, ঠিক মনে পড়ছে না, থ্রি অথবা ফোর হবে হয়তো।

যা-ই হোক, যা বলছিলাম…….এতক্ষণ আমি আব্বুর হাত ধরে-ধরে হেঁটেই যাচ্ছিলাম, কিন্তু যখন ওই ভয়ংকর ব্রিজটা পার হবো, তখন আব্বু আমাকে কোলে নিয়ে নিলেন। আমি আব্বুর কোলে চড়ে ব্রিজ পার হচ্ছি, বজ্রপাতের আলোতে আব্বুর পা আর রেলের দুকাঠের মাঝ দিয়ে নিচের গভীর জলের খেলা দেখা যাচ্ছে, আর আমি অতি আতংকে সে দিকেই তাকিয়ে আছি! সে কী ঝুউউউমমম্‌ বৃষ্টি হচ্ছে, আমরা ব্রিজ পার হচ্ছি…..। আব্বুর জন্য আমার খুবই কষ্ট লাগছিল, বারবার মনে হচ্ছিল, এই বুঝি দুজন পা পিছলে রেলের ফাঁকা দিয়ে অনেক নিচে পড়ে যাবো। এসব এলোমেলো ভাবতে-ভাবতে পার হচ্ছি, হঠাৎই আমার নিজের কাছে নিজেকে, এই বহুচেনা কোলে কেমন যেন একটা বেমানান লাগতে শুরু করলো! আমি যেন হঠাৎই ছোট থেকে বেশ বড় হয়ে গেলাম, কিংবা আমি যেন বুঝতে পারলাম, আমি বড় হয়ে যাচ্ছি। কোলে যেন আমাকে আর ঠিক মানাচ্ছে না, কোলের সময়টা আমার যেন শেষ হয়ে গেছে, আমি বড় হয়ে গেছি। ওই অনুভূতিটা আমাকে ক্রমশ বিবশ করে দিচ্ছিল, আমার মনে হচ্ছিলো, চিৎকার করে কাঁদি আর বলি, কেন আমি বড় হয়ে যাচ্ছি? আমি কেন আব্বুর কোলে আর চড়তে পারবো না? আমি বড় হতে চাই না, আমি আব্বুর কোলে চড়তে চাই! আরো বেশ কিছুসময় পর, হঠাৎ আমার খুব লজ্জা লাগতে শুরু করলো, অনেকদিন পর কোলে উঠেছি বলেই কি এমন মনে হচ্ছে? এক গভীর মগ্নতায় আমি ওসব ভাবছিলাম, আমার চারপাশটা একদম অদৃশ্য, আমি কিচ্ছু দেখতে পাচ্ছি না, শুনতে পাচ্ছি না, আমি কেবলই আমার ভাবনায় নিমগ্ন।

ততক্ষণে আব্বু প্রায় লোকালয়ে চলে এসেছে, বৃষ্টিও থেমে গেছে। আমাকে আব্বু কোল থেকে নামালে আমার ধ্যান ছুটলো। আহারে ব্রিজ সেই কখন পার হয়ে গেছি আর আমি এতক্ষণ আব্বুর কোলে চড়ে বসেছিলাম? এতোটা পথ বৃষ্টিতে আমাকে কোলে নিয়ে হাঁটতে আব্বুর কতটা কষ্ট হয়েছে, তা ভাবতেই মনটা খারাপ হয়ে গিয়েছিল।

এরপর আর কখনো আব্বুর কোলে উঠেছিলাম কিনা মনে নেই।