ভাবনাদেয়ালের পলেস্তারা (২৩শ অংশ)

ভাবনা: একশো পঞ্চান্ন।

……………………………………..

অত্যধিক চরিত্রহীন বলে অতি ঘৃণা করি কিন্তু একটা সুন্দর মন ও উন্নত চিন্তাশক্তির জন্য অনেক ভালোবাসি, এমন একজন বান্ধবীকে নিয়ে মাঠে বসে বাদাম খাচ্ছিলাম। কয়েকটা টোকাই ছেলেকে ডাকলাম…….অ্যাই বাদাম খাবি? অমনিই, যেকটা বাদাম, সেকটা হাত! গায়ে ভীষণ নোংরা কাপড়—অবশ্য ওরকমই হবার কথা; ময়লার স্তর পড়ে-পড়ে সবকটার চেহারা দেখতে একই রকম হয়ে গেছে। ‘বসু, দ্য লিটল স্ট্রেঞ্জার’ মুভির মা’টি বসুকে প্রথম দেখায় যেমনি চমকে উঠেছিলেন, আমিও তেমনি চমকে উঠলাম। কম করে হলেও পাঁচবার সাবান ডলে-ডলে গোসল করালে ওদের আসল চেহারাটা হয়তো বুঝা যাবে। আমি প্রচণ্ড শুচিবায় মানুষ, নোংরামি আমি অতি অপছন্দ করি। কারও বাসায় বেড়াতে গেলে বিছানার চাদর দেখতে এতটুকু মলিন দেখালে সেই বিছানায় ঘুমানোর চেয়ে বরং বারান্দায় পায়চারি করে রাত কাটিয়ে দেয়া আমার কাছে উত্তম! কিন্তু ওদের উপর আমার রাগ হয়নি, কারণ ওদের অপরিষ্কার থাকার দোষটা ওদের নয়—হয় বাবা-মা’র কিংবা কপালের। ওদের সাথে নানান হাবিজাবি কথাবার্তা শেষে ওদের মলিন হাতে একটা করে মলিন নোট (নোট সবসময় চকচকে হতে হবে কেন? আমার সব নোটই মলিন—আমার জীবনের মত।) ধরিয়ে দিলাম। মলিন চেহারার কয়েকটা মলিন মুখ স্পষ্ট, শুদ্ধ, দৃঢ় উচ্চারণে অমলিন মন থেকে বলে উঠল: “Thank you!” সাথে-সাথে অনেকগুলো সো-কলড সভ্য সমাজের সো-কলড শিক্ষিত মানুষের গালে আপনিই ঠাস-ঠাস চড় বসে গেল। এমনকি নিজের অপকার করে অন্যের উপকার করলেও অসভ্য মানুষগুলোর এতটুকু কৃতজ্ঞতাবোধ থাকে না; থাকলেও, প্রায়শই সেটা মেকি কিংবা কেবলই বলার জন্য থ্যাংকয়্যু বলা। অথচ অশিক্ষিত রাস্তার টোকাই ছেলে মন থেকে কী আন্তরিকভাবে ধন্যবাদ জানাল।

ছেলে, আমার টাকাটা তোর কতটা তৃষ্ণা মেটাবে জানি না, তবে তুই আমার মনের তৃষ্ণা মিটিয়েছিস। আজ খুব সামান্য টাকায় লক্ষ টাকার লাভ হয়ে গেল রে!

আমি কিন্তু বলছি না যে মানুষ ধন্যবাদ পাবার আশায় উপকার করে। কৃতজ্ঞতাবোধ মানুষের মনে শান্তি আনে আর অন্যকে সাহায্য করতে আগ্রহী করে। আমরা অকৃতজ্ঞ জাতি; প্রায়ই কৃতঘ্নও। যে আমাদের জন্য বুক পেতে দেয়, আমরা তার সে বুকেই ছুরি চালাই।

আমার সে বান্ধবী চুপচাপ আমার কাণ্ড দেখছিল। সেদিন ওর একটা কথা মাথায় গেঁথে গেছে: জানিস, খুব আনন্দ হচ্ছে রে! আগে ভাবতাম, শরীরী তৃপ্তির চাইতে বড় আর কিছু নেই। আজ বুঝলাম, মনের আনন্দটা কত দামি—এর কাছে শরীরের সকল সুখই তুচ্ছ!

এক প্রেমিক ছিল। প্রথমে ভাবতাম, ও আমার প্রেমিক। পরে বুঝেছি, ও প্রেমিক, তবে শুধুই আমার নয়—ও অনেকেরই প্রেমিক। ওকে অনেক বোঝাতে চেয়েছি, কখনওই বুঝতে চায়নি। নিজের কৃতকর্মের জন্য খেসারত দিয়েছে বহুবার, তবুও শিক্ষা হয়নি। বাবা-মা’কে ছোট করেছে সমাজের চোখে। মানুষ মানুষকে ভালোবাসে, তাকে কাছে পেতে চায়—ঠিক আছে, কিন্তু তাই বলে তো এ-ই নয় যে রোজ কয়েকজন জুটাবে, সেক্স করবে, পরদিন তারা এঁটো হয়ে যাবে, তারপর আবার নতুন জুটাবে, কয়েকবার অ্যাবরশন চলবে, বাবা-মা সমাজে লজ্জিত হবে, জীবনে চরম হতাশা নেমে আসবে, মাসে ত্রিশদিনই মনোচিকিৎসকের দরজায় নক পড়বে—এটা আর যা-ই হোক, কিছুতেই জীবন নয়।

এসবের জন্য ওকে জীবন থেকে বাদ দিতে চেয়েছি অনেকবার, কিন্তু খুব ভালোবাসতাম বলে ওই অবস্থায় ওকে ফেলে যাওয়া ঠিক হবে না ভেবে বাদ দিতে পারিনি। কারণ, পরিবারের বাইরে ওর জীবনে একমাত্র আপনজন আমি—বাকিরা সবাই ক্ষণিকের অতিথি। আমাকে ছাড়া ও বড় অচল অথর্ব।

অনেক চেষ্টা করে বুঝিয়েশুনিয়ে ওকে মোটামুটি একটা সুস্থ জীবনের স্টেজে রেখে (অবশ্য জানি না, ও আবারও সেসবে জড়িয়ে পড়েছে কি না) জীবন থেকে ওকে বিদায় জানিয়েছি। যেদিন ও মন থেকে বুঝতে পেরেছিল, কাঞ্চনা ওর জীবনে কী, কাঞ্চনা যা যা বলেছে তার একবিন্দুও মিথ্যে নয়, সেদিন সে আর আমাকে খুঁজে পায়নি—তার আগেই আমি ওর জীবন থেকে নিজেকে সরিয়ে নিয়েছি। ওর জন্য আমার জীবনে কয়েকবার ভয়ানক দুর্যোগ নেমে এসেছিল, আমি তবু কখনও সরে যাইনি ওর পাশ থেকে।

জীবনের নিষিদ্ধ রঙগুলি ঠিক কতটা বিবর্ণ, সময় তা ঠিকই বলে দেয়। তখন বড্ড দেরি হয়ে যায়…….

“বান্ধবী, তোকে মিস্‌ করছি খুব। আমাকে যেমন বেসেছিস, অমন পাগলটাইপ ভালোবাসা খবরদার কাউকে বাসবি না। নোংরা রঙিন মিথ্যে পৃথিবীটা আর কখনও তোকে স্পর্শ না করুক।”

আমার কথা তোর চেনা পৃথিবীটা একদম ওলটপালট করে দেয়? তোর সাথে মেলাতে পারিস না, তাই না রে? তবে শোন, আবারও তোকে একটু এলোমেলো করি: আমি একজনকে ভালোবাসি, সে সবসময়ই আমার মনে থাকে, তাকে স্পর্শও করতে চাই!—এটা শুনে তোর চেহারাটা কেমন হল, দেখতে খুব ইচ্ছে করছে। আচ্ছা, সারাজীবন সবসময় ফান করি বলে কি আমার একটা কথাও বিশ্বাস করবি না? আমি কিন্তু সত্যিই সত্যি বলছি। প্লিজ বিশ্বাস করিস আমার কথা। আমিও ভালোবাসতে জানি রে, আমিও প্রেমে পড়ে যাই। শুধু শরীর নয়, আমার একটা মনও আছে। সে মনটা আমাকে বড্ড জ্বালায়। বলে, ও নাকি ভালোবাসে…….ভাল থাকিস রে পাগলী।”

আমি চাই, খুব করে চাই, আমার বান্ধবী জীবনের রঙগুলি চিনতে পারুক। শরীরের বাইরের পৃথিবীটা বড় সুন্দর। সে পৃথিবীটা একটু ঘুরে দেখার সময়টুকু ওর হোক।

একটা মেয়ের শরীরটা ইউজ করা শেষ হয়ে গেলে টিস্যু পেপারের মত ছুঁড়ে ফেলে দেয় ওরা। এমন মেয়ের নাম দিলাম, ব্যবহৃতা। এ ব্যাপারটা সবাই জানে। কিন্তু অন্য আরেকটা রকম আছে, সেটা এটার চেয়েও ভয়ংকর। সে রকমের মেয়েরা হল অব্যবহৃতা—এদের ইউজ করা যাবে না বলে ইউজ না করেই ইউজ্‌ড টিস্যুর মতো ছুঁড়ে ফেলে দেয়া হয়! আহারে! ভাবছি, তবে মূল্যটা আছে কার? মূল্যবান শুধু সেসব মেয়ে, যাদের ইউজ করা যাবে, কিন্তু এখনও ইউজ করা হয়নি। ওদের পেছনেই দুনিয়া ঘোরে। হায়!

ভাবনা: একশো ছাপান্ন।

……………………………………..

আমার ফ্রেন্ডলিস্টে আপনি ছাড়া আর কেউ নেই। আপনার খুব কৌতূহল হয় ‘নেই কেন’, তা জানতে। হওয়াটা স্বাভাবিক। আমার আসলে ফেসবুক জায়গাটা ভাল লাগে না। বড় হয়ে গেছি হয়তো, তাই এ ভ্রান্তবাগিচায় উদ্ভ্রান্তের মত ঘুরে বেড়াতে আর ইচ্ছে করে না। এখানে একজন আরেকজনের বন্ধু হয়—ভার্চুয়াল বন্ধু: যে বন্ধুত্বের সৃষ্টি ও ধ্বংস দুইই আঙুলের ডগার আলতো ছোঁয়ায়। বন্ধু মরে গেল কি বেঁচে থাকল, সে খোঁজ নেয়ার সমস্ত দায় একটা রিঅ্যাকশনেই মুক্ত—এমন বন্ধুর দুই পয়সারও দাম নেই। আবার আরেক শ্রেণীর লোক এখানে এসে ছেলে থেকে মেয়ে হয়ে যায়, মেয়ে থেকে ছেলে হয়ে যায় কী সহজেই—সেক্স রিঅ্যাসাইনমেন্ট সার্জারির খরচ লাগে না, শুধু চাইলেই হয়। ফেসবুক চ্যাটরুমে মিথ্যের নির্লজ্জ বেসাতি চলে নিরন্তর নিরলস—আবেগের চাইতে আবেগের নগ্ন প্রদর্শনের খেলা জরুরি এখানে, সে খেলায় ‘জো জিতা ওহি সিকান্দর, জো হারা ও হ্যায় বান্দর’। এখানে কত সহজেই মানুষ কষ্ট পায়, সুখ পায়—এসব দেখলেই আমার খুব হাসি পায়। লোকে ফেসবুকীয় প্রশংসায় আপ্লুত হয়, নিন্দায় বিহ্বল হয়। কারও সম্পর্কে বা কোনও বিষয় সম্পর্কে ভাল করে না জেনে খুব শিক্ষিত দায়িত্বশীল লোকজনও স্টুপিডের মত জাজ্‌ করে, অন্যকে ব্যক্তিগতভাবে আক্রমণ করে অসুস্থ আনন্দ লাভ করে—সত্যিই আমাদের জীবনে নির্মল বিনোদনের উৎস কমে যাচ্ছে, পরচর্চা আর পরনিন্দার মধ্যে আমরা সুখ খুঁজে বেড়াচ্ছি। ফেসবুকীয় প্রেমের দর্শন প্ল্যাটনিক নয়, ফ্রয়েডীয়; তবে শুরুটা প্ল্যাটনিক লাভ-এর মিথ্যে ছাঁচে গড়া। ১ জনের কাছ থেকে একই সাথে ১০ জন ভালোবাসা-গাথার কপিপেস্ট ভার্সন পেয়ে যায় নিমিষেই। এমন ফেসবুকীয় ভালোবাসা ‘যদি লাইগ্যা যায়’ ভালোবাসা। ফেসবুকের প্রেম বিরহ কলহ—এ দুর্ভাগা দেশের বেকার সমস্যার প্রকট বাস্তব চিত্র ছাড়া আর কিছু নয়। ফেসবুক যতটা মানবীয়, ততধিক স্ব-কেন্দ্রীয়। এক লোককে চিনি যার কয়েক লাখ ফলোয়ার ছিল, ফ্রেন্ড ছিল অগণিত, অথচ উনি যখন চরম বিপদে, তখন উনার পাশে যে ৪-৫ দাঁড়িয়েছিল, তাদের কারও সাথেই উনার ফেসবুকে পরিচয় হয়নি। ফেসবুকের ফ্রেন্ড বা ফলোয়ার একটা সংখ্যা ছাড়া আর কিছুই নয়। ফেসবুক মানুষকে অথর্ব বানিয়ে দেয়—লোকে বই পড়ে না, ফেসবুক পড়ে; লোকে মুভি দেখে না, ফেসবুক দেখে; লোকে গান শোনে না, ফেসবুক শোনে; লোকে গল্পকবিতা লেখে না, ফেসবুক লেখে—জ্ঞানচর্চার একেবারে তেরোটা বেজে যায়। লোকে বেড়াতে যায় আনন্দ করতে নয়, ফেসবুকে সে জায়গার ছবি পোস্ট করতে—চোখ কিংবা হৃদয়ের লেন্সে নয়, ক্যামেরার লেন্সে সুন্দরকে ধারণ করার অসুস্থ প্রতিযোগিতায় নামে। খাবার খায় স্বাদ পেতে কিংবা ক্ষুধা নিবৃত্ত করতে নয়—ফেসবুকে খাবার সমেত সেলফি আপলোড করতে। ফেসবুক যদি দেশ হয়, তবে বলব, সে দেশে সত্যের চাইতে গুজবের কদর বেশি, মানবতার চাইতে জনপ্রিয়তার মোহ তীব্র, কর্মের চাইতে প্রচারের গ্রহণীয়তা স্পষ্ট। সে দেশে নিরাপরাধ গরীব মানুষকে রাস্তায় কুকুরের মত পিটিয়ে খুন করে ফেললেও কারও কিচ্ছুটি এসে যায় না, অথচ কারও মানিব্যাগ থেকে ১০ টাকা খোয়া গেলে সেটা নিয়ে হৈচৈ বাধিয়ে দেয়া যায় খুব সহজেই। সে দেশে কারও অসহায়ত্ব সিংহভাগ মানুষকে নিষ্ঠুর অবিবেচক উন্মত্ত করে দেয়। ফেসবুকে মানবিকতার চাইতে সেক্সের মার্কেট ভ্যালু হাই। এখানে নতুন ইস্যু এলে পুরনো ইস্যুর পিতৃকাননে আরামে হিস্যু করে নরম টিস্যুতে বিবেকের শিশ্নাগ্রে পড়েথাকা ধৃষ্টতার শেষ দাগটিও নিশ্চিহ্ন করে ফেলা যায় অনায়াসেই। অন্যের মায়ের রোগমুক্তির জন্য ফেসবুকবাসীর অশেষ প্রার্থনা, অথচ নিজের মা পাশের রুমে অযত্নে অনাদরে অবহেলায় মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ে। মৃত পিতার লাশ কাঁধে নিয়ে সেলফি আপলোড করতে দেখি কিছু জারজ সন্তানকে। পৃথিবীর তাবৎ ভণ্ডামির জায়গা এ ফেসবুক। এখানে ভণ্ডরা নিরাপদে, অকপটরা বিপদে বাস করে। নির্দোষ লোককে পায়ে পিষে মেরে ফেলতে লোকের অনেক আগ্রহ, অন্যের অপমান দেখার নেশায় মত্ত ফেসবুকীয় সাধুসন্তদের মিলনমেলা দেখা যায় হরহামেশাই। ঘরে চাল নেই, মাথায় মাল নেই—এমন লোকেরও ফেসবুকীয় যশের শেষ নেই। ফেসবুকে মুখ ও মুখোশের মাঝখানের দেয়ালটা তাসের ঘরের দেয়ালের চাইতেও হাল্কা ভঙ্গুর ঠুনকো। নার্সিসিজমের এতটা উলঙ্গ বেহায়া চর্চা ফেসবুক ছাড়া আর কোথাও আপনি পাবেন না। অসভ্যদের সভ্য মুখোশ এই ফেসবুক। পড়াশোনাজানা স্মার্ট ভিক্ষুকরা এখানে কবির বেশে সংবাদ প্রসব করে, সাংবাদিকের বেশে কবিতা প্রসব করে। ফেসবুক হচ্ছে যোগ্যদের অনর্থক হতাশ আর অযোগ্যদের অনর্থক অনুপ্রাণিত করার ধুরন্ধর প্লাটফর্ম—ফেসবুক পঙ্গুকে এক লাফেই হিমালয় জেতায়, শক্তসমর্থকে ঘোড়ার পিঠে হাঁটায়। বিশ্ববাটপারদের অভয়ারণ্য এই ফেসবুক। অসুন্দরদের এমন সৌন্দর্য প্রতিযোগিতা আপনি ফেসবুক ছাড়া আর কোথাও পাবেন না। এখানে সুন্দররা নিভৃত, অসুন্দররা প্রকাশ্য। যেখানে ব্যক্তির ব্যক্তিত্ব ও গ্রহণযোগ্যতা তার পোস্টের লাইকের সংখ্যায় পরিমাপ করা হয়, সেখানে আর যা-ই হোক সততা আর সত্য আশা করা যায় না। ফেসবুক হচ্ছে সেই সবুজচোখা দৈত্য যে তার রাজ্যের সকল অধিবাসীর হৃদয়ে ঈর্ষা, স্বার্থপরতা, ক্রোধ, অপচিকীর্ষা, ঔদ্ধত্য আর মিথ্যার বীজ বুনে দেয়। জ্ঞানীদের অথর্ব আর অথর্বদের অমানুষ করে দেয়ার কারখানা এই ফেসবুক। ঘটনা ঘটুক আর না-ই ঘটুক, লোকে ফেসবুকে নিজ-নিজ সুবিধা ও ইচ্ছা মত ঘটনার জন্ম দেয়, ঘটনার মৃত্যু ঘটায়। সিংহের কেশর টেনে বানরের তাণ্ডব নৃত্য—এক ফেসবুকেই সম্ভব। ফেসবুকে শুয়োরের বাচ্চারা শ্রদ্ধেয় হয়, শ্রদ্ধেয়রা শুয়োরের বাচ্চা হয়। এখানে জোর করে রবীন্দ্রনাথের বাংলা ক্লাস নিয়ে নেয় বাংলা মদের মূর্খ কারবারি। ফেসবুক সত্যিই ‘It’s not free and never will be.’ হওয়ার সময় এসে গেছে—এতে যদি শাপলাভূষণ, শাপলাবিভূষণ, শাপলাশ্রীদের মর্কটনৃত্য একটু কমে আরকি!

ভাবনা: একশো সাতান্ন।

……………………………………..

: চোর তো বারান্দার তারের ভাল শাড়িগুলো নিয়ে যাবে। যাও ওগুলো নিয়ে আসো।

: নিলে কী আর হবে?

: কী আর হবে মানে?

: চোরের বউয়ের আলমারির দুএকটা শাড়ি বাড়বে, আর আপনার আলমারির দুএকটা শাড়ি কমবে। এই তো!

: তোমাকে চোরের বউয়ের আলমারির চিন্তা না করলেও চলবে। তুমি বরং চোরের মেয়ের আলমারির কাপড় বাড়ানোর চিন্তা কর!

আম্মা এগুলা কী বলেন? বুঝি না তো! উনি কি তবে আমায় আমার ড্রয়ার থেকে জামাকাপড় নিয়ে বারান্দার তারে রেখে আসতে বললেন চোরের মেয়ের জন্য? নাকি…….ধ্যত্‌!

ইসসস্‌ কত-কত কী-কী যেন বলে ফেলতাম আর একটু হলে! অনেক কিছু বলার থাকলেই হায় চুপ থাকতে হয়, নইলে সত্যি-সত্যিই কেউ যেন গলায় কী একটা চেপে ধরে! ভাল হয়েছে আম্মার কথা শুনে কাপড় আলমারিতে রেখে দিয়েছি! তা না হলে, তখুনিই বকাবকি শুরু করে দিত। আম্মা শ্রেণীর জীবরা যা করতে বলেন, বিনা বাক্যব্যয়ে তা করে ফেলাই উত্তম, তা না হলে উনারা রাবণের সাধের রাজ্য বাসায় এনে হাজির করবেনই। মেয়েরা অবোধ প্রাণী—সে মেয়ে আম্মার মেয়েই হোক, আম্মাই হোক, আর আম্মার আম্মাই হোক!

স্যার, শুনছেন? একটা এই ছোট্ট মানুষের একটা ছোট্ট অনুরোধ ছিল। করব অনুরোধটা? আপনি পছন্দ করে দেবেন আমার এবারের ঈদের ড্রেস। আপনাকে সাথে নিয়ে ঈদের জামা কিনব—এটা বললে তো অহেতুক কৌতুক হয়ে যাবে, তাই বললাম না। আপনি ড্রেস পছন্দ করে মার্কেট, দোকান, ড্রেসকোড আমাকে জানাবেন, আমি পরে গিয়ে কিনে নিয়ে আসব। আর হ্যাঁ, ৫০০০ টাকার মধ্যে যেন হয়, এর বেশি দিয়ে আমি কিনব না। আপনি চাইলে, অনলাইনেও ড্রেস পছন্দ করে দিতে পারেন।

আমি আর একবারও আপনাকে ড্রেস পছন্দ করে দেয়ার কথা মনে করিয়ে দিব না। যদি চান, ঈদটা আমার নতুন ড্রেসে না হউক, তবে আপনি চাইলে ভুলে যেতে পারেন, পছন্দ না করে দিতেই পারেন—সে আপনার ইচ্ছা। আমি নিশ্চয়ই বলছি না, আমার জন্য মার্কেটে গিয়ে ড্রেস পছন্দ করুন। আপনার যখন কিছু কিনতে যাওয়া হবে তখন একটু কষ্ট করে…….

ঈদটা পুরনো ড্রেস পরেই করেছি। জানি, আপনার এতে কিছু এসে যায় না। আমি আপনার জন্য এমনটা করিওনি। আমি এটা করেছি, নিজের সাথে অভিমান করে, আপনাকে সত্যিই ভালোবাসি—এটা নিজেকে আরও একবার মনে করিয়ে দেয়ার জন্য। আমি খুব স্বার্থপর প্রাণী—নিজের ভালোবাসাকে কত কায়দায় বাঁচিয়ে রাখি!

একটা সেলফি চেয়েছিলাম, প্রিয়। আজ ২৮ জুলাই ২০১৭। হ্যালির ধূমকেতুকে এতটা অনুরোধ করলে সেও ২০৬১ সালের ২৮ জুলাইয়ের চৌদ্দগুষ্ঠি কিলিয়ে আজই এসে আমাকে একটা সেলফি দিয়ে যেত, কিন্তু ইলেশ দেয় না।

চুলে (মানে, মাথায়) হাতটা একটু রাখি?

আচ্ছা, ঠিক আছে, রাখলাম না।

শরীরের ঘ্রাণটা একটু নিই?

আচ্ছা ঠিক আছে লাগবে না, আপনার একটা আধোয়া টিশার্ট পার্সেল করে দিন না!

জীবনে কিছু লাইফগেইম আসে, যেখানে আমরা হারার জন্য লড়তে-লড়তে জিতে যাই; বিষণ্ণ মন তখন কেবলই বলতে থাকে, কেন হারলাম না কেন হারলাম না! জিতে যাওয়ার সে কষ্ট জীবনটাকে জীবনভর স্পর্শে রাখে। হেরে যাওয়া—অতই সহজ?

রাখাল বালককে মিথ্যে বলার জন্য বাঘের খাবার পরিণত হতে হয়েছিল। রাখাল বালক আজও বাঘের খাবারে পরিণত হয়…….সত্য বলার জন্য। অন্যায় করে একজন, শাস্তি পায় আরেকজন—সমাজ এর নাম দিয়েছে ‘বিচার’।

আপনার আইডিটা ‘মানুষ’ হলে তার চুলের মুঠি ধরে প্রায়-প্রায়ই ঝুলিয়ে রাখতাম! কেনই বা রাখব না? বলি, স্ট্যাটাসগুলি কি হাওয়া হয়ে যায়? কত-কত স্ট্যাটাস কোথায়-কোথায় যেন হারিয়ে যায়! নাকি আপনিই ‘অনলি মি’ করে ফেলেন? কেন করেন? জানি, আপনার লেখা, আপনার আইডি, অতএব আপনি যখন যা ইচ্ছা করতে পারেন। কিন্ত লেখাগুলি যখন আপনি পাবলিক করে দেন, তখন সেগুলো পাবলিকের সম্পত্তি হয়ে যায়, আর পাবলিকের সম্পত্তি তো আর আপনি লুকিয়ে রাখতে পারেন না! মানুন আর না-ই মানুন, এটাই সত্য। লেখাগুলি তো আর টিস্যুপেপার নয় যে একবার ইউজ করলাম আর ছুঁড়ে ফেলে দিলাম। লেখা একবার পড়ে শেষ করে দেয়া যায় না, ভাল লেখা মাঝেমধ্যে পড়তে ইচ্ছে করে—প্রিয় রাস্তায় মানুষ যেমনি করে উল্টো পথেও হাঁটে, তেমনি করে। সে রাস্তায় একেক বার হাঁটলে একেক জিনিস চোখে পড়ে, নতুন কিছু খুঁজে পাওয়া যায়। রাস্তার ধারের যে ছোট ফুলটা প্রথমবার চোখে পড়ল না, সেটা পরেরবার হয়তো তার সমস্ত রূপরস সমেত পথিকের মনের চোখের সামনে নিজেকে মেলে ধরে। সে রূপ, সে রঙ, সে ঢঙ উপভোগ করতে তো রাস্তাধরে হেঁটে যাওয়ার পুনরাবৃত্তি করতে হয়ই। ফেলেআসা কাউকে খুঁজে না পেলে খুব মিস করি, মেজাজ খারাপ হয়; লেখাও ওরকম। প্রিয় লেখা প্রিয় জনের মতই নিবিড়ভাবে সঙ্গ দেয়। এমন লেখা হারিয়ে গেলে তখনই চুলের মুঠি ধরে আপনার আইডিকে, মানে সৃষ্টির স্রষ্টাকে লিফ্‌ট করে রাখতে ইচ্ছে করে। আইডিটা মানুষ না হোক আইডির মালিক তো মানুষ এবং তেনার মাথাভর্তি চুলও কিন্তু আছে! হুমম্‌! অতএব, সাধু, সাবধান!

কাল সন্ধ্যা থেকে একটা স্ট্যাটাস খুঁজতে-খুঁজতে নিজেই হারিয়ে যাচ্ছি।

ভাবনা: একশো আটান্ন।

……………………………………..

না-অভিনন্দন! মানে, গতকাল যে ‘অভিনন্দন’টা দিয়েছিলাম সেটা ফিরিয়ে নিলাম। ওটা মন থেকে দিইনি, তাই মিথ্যেটা নিজের মন থেকে সরিয়ে ফেললাম। মন থেকে যখন দিতে পারব, তখন আবার দিব। (এবং, ভাল না লাগলে আবারও সরিয়ে নেবো। নিজের রাজ্য নিজেই চালানোর এটাই মজা।)

নিজের কাছ থেকে নিজেরই পালিয়ে যেতে ইচ্ছে করছে! কী যে প্রবল এ ইচ্ছে! আচ্ছা, আপনার রিসেন্ট প্রোফাইল পিকচারের হাসিতে প্রাণ নেই কেন? আমার শৌর্যটাকে অমন ফিকে দেখাচ্ছে কেন? হয়তোবা অতি প্রাণে নিস্প্রাণ হয়ে গেছে আপনার ভেতরটা। এমনই হবে।

বহু প্রতীক্ষিত কোনও কিছু যখন পূর্ণতা কিংবা অপূর্ণতা নিয়ে জীবনে এসে ধরা দেয়, তখন মানুষ কেমন যেন একটা অচেনা অসহায়ত্বে ভাসতে থাকে। তবে সে অসহায়ত্ব দীর্ঘ নয়—হ্রস্ব, কিংবা অতিদীর্ঘ। শুধু পূর্ণতাই প্রতীক্ষিত নয়, কিছু অপূর্ণতাও প্রতীক্ষিত। কিছু অপূর্ণতা জীবনে পূর্ণতা আনে। যে কষ্টটাকে সাথী করে জীবন কাটছে, সে কষ্টকে জীবন থেকে দূর করে দিলে হয়তো জীবন অপূর্ণ হয়ে যাবে, তবে এমন অপূর্ণতা পূর্ণতার চাইতেও বড়। সমাজ ও গোষ্ঠীর চোখে যা অপূর্ণতা, তা অনেকসময়ই ব্যক্তিকে পূর্ণ করে। প্রতি মুহূর্তেই অপূর্ণ হয়ে বাঁচার চাইতে বরং একবার ভীষণভাবে অপূর্ণ হয়ে যাওয়া ঢের ভাল। এমন অপূর্ণতা পূর্বের সকল মুঠোমুঠো অপূর্ণতার গ্লানি দূর করে জীবনকে পরিপূর্ণ করে দেয়। ব্যক্তিগত অপূর্ণতার কষ্ট সামাজিক অপূর্ণতার কষ্টের চাইতে অনেক বেশী তীব্র। হোক না অপূর্ণ হয়ে যাওয়ার ধকল সামলাতে অনেক সামাজিক মূল্য দিতে হবে—তবু জীবন তো বাঁচবে! এ সমাজ কবেই বা ব্যক্তির ব্যক্তিগত কষ্টের দাম দিয়েছে? পূর্ণতা কিংবা অপূর্ণতার ব্যাকরণ সামাজিক নয়, প্রচণ্ড মাত্রায় ব্যক্তিগত। মৃত্যুর সাথে প্রতিটি মুহূর্তে বাস করার চাইতে বরং বৃহৎ মৃত্যুকে একবার আলিঙ্গন করার সাহস দেখানো ভাল। এতে বৃহৎ জীবনের রাস্তা প্রশস্ত হয়। কখনও-কখনও অপূর্ণতার পূর্ণতা পূর্ণতার পূর্ণতার চাইতে অনেক বেশি সুখের।

জীবনে কিছু পাওয়া কেবলই না-পাওয়াগুলিকে মনে করিয়ে দেবেই যদি, তবে কেন জীবনে কিছু না-পাওয়া পাওয়াগুলিকে মনে করায় না?

কাউকে সারাজীবনের জন্য বেঁধে নেয়ার চাইতে বরং নিজেকে সারাজীবনের জন্য মুক্ত করে দেয়া বেশি জরুরি—যদি ওতে দুটো জীবনই বেঁচে যায়। কষ্টতে অত কষ্ট নেই—কষ্টটাকে যে ভালোবেসে হাসিমুখে হাসিমনে মেনে নিতে হয়, তাতেই সব কষ্ট।

শৌর্য, আপনার কিছু স্ট্যাটাস আমি দেখতে পাই না কেন? কী করেছেন আপনি? প্রাইভেসি চেঞ্জ করেছেন? আপনার প্রাইভেট লিস্টে আমাকে রাখেননি, না? নাকি আমি মহিলা-গাধাই শুধু দেখতে পারছি না? আপনার পোস্ট দেখতে ইচ্ছে করলে আমাকে কী করতে হবে? শুধু কালকের দিনটাই বাকি আছে, পরশু থেকে আপনি অন্য কারও। কালকের দিনটাকে ঈদ-ঈদ লাগছে। মনে হচ্ছে, আরও একটা দিনের জন্য ‘অবিবাহিত শৌর্য’ আমার হয়ে থাকবে। আপনার পোস্ট আমাকে দেখতে দিন না!

: একজনকে মুক্তিবেগে পৃথিবীর বাইরে নিক্ষেপ করতে ইচ্ছে করছে। পৃথিবীর টানকে ছাড়িয়ে সে চলে যাবে ওই দূউউউরে! তবে হ্যাঁ, আমাকেও সাথে-সাথে খপ্‌ করে তার শার্টের কোণাটা শক্ত করে ধরে ফেলতে হবে। তা না হলে মুক্তিবেগে নিক্ষেপ করলে তাকে আর পৃথিবীতে পাব কোথায়?

: সে কী রে, পাগলী? তাহলে তার ‘সে’এর কী হবে?

: অক্কে! তাহলে সাথে তার ‘সে’কেও নিক্ষেপ করব! আমি বাদ্‌! তারা সেখানে মনের সুখে একান্তে ইয়ে করবে!

: আর তুই কী করবি রে?

: আমি? আমি আমি…….আমার ভালোবাসা আর ‘ভালোবাসা’র ভাল বাসাকে দেখভাল করব। ওরা দুজনই পৃথিবীর বাইরে চলে গেলে ওই নিষ্ঠুর শয়তানটার বাসা আর বাসার লোকজনকে কে দেখাশোনা করবে?

: ভাল বাসা মিন্‌স নাইস হোম?

: ইয়েস্‌! সেটাই!

: তাতেই কি সুখ? কী সুখ?

: নিশ্চয়ই! ওকে পেয়ে গেলে তো ওর ঘরটাকেও পেয়ে যেতাম! ওর ‘সে’ ওকেও পেয়েও ঘর হারাবে, আর আমি ওকে না পেয়েও ঘরটা পেয়ে যাব। সুখ তো বটেই! তবে হ্যাঁ, সে সুখ দুঃখের—বিলাসী সুখ। কিংবা, দুঃখটাই সুখের—বিলাসী দুঃখ।

হীরে দিয়ে রাস্তা বানালেও তাতে মানুষের পা-ই পড়ে।

মুকুট, লোহার হলেও তা মানুষের মাথায়-ই থাকে।

আমি আপনার লাইফে খুব বেশি লস্‌ প্রজেক্ট, তাই না?

ভাল থাকুন প্রিয়, তবে তেমনভাবে নয়, যেমনভাবে ভালথাকার জন্য একটা সময় খুব খারাপ থাকতে হয়। জানি, এটা নিয়ে আপনি মাথা ঘামান না, তবু বললাম, বলতে ইচ্ছে করে, তাই।

আপনাকে আমার মুক্তিবেগে পৃথিবীর বাইরে নিক্ষেপ করতে ইচ্ছে করছে। আমি সত্যি-সত্যিই আপনাকে মেরে ফেলব। জীবনে কক্ষনো আমার চোখের ষড়সীমানায়ও আসবেন না। আসলে…….

আহা, ছোটবেলার হাফ্‌ প্যান্টপরা শৌর্যসোনাকে দেখলাম। এহ্হহ্‌ আপনি এইগুলা কী পরতেন? সত্যিই পরতেন? ভাগ্যিস, এখন পরেন না! পরলে আপনাকে ধরে…….ধরে…….এক্কেবারে প্যান্টমুক্ত করে দিতাম!

ভাবনা: একশো ঊনষাট।

……………………………………..

‘রাজা’ আর ‘প্যান্থার’ কনডমের চারকোনা প্লাস্টিক প্যাকেট পঁচিশ পয়সায় পাওয়া যেত। প্যাকেটের ভেতর একটাই থাকত। ছোটবেলায় এর নাম ছিল বেলুন। খেলার সাথিরা মিলে দোকান থেকে প্রায়ই এই বেলুন কিনে আনতাম। একটা সিকি পয়সা দোকানির দিকে বাড়িয়ে দিয়ে বলতাম, একটা ‘ফোটকা’ দেন। প্রচণ্ড পিচ্ছিল বলে বাসায় এনে সাবান দিয়ে খুব ভাল করে ধুয়ে নিতাম। তারপর ইচ্ছা মত ফোলাতাম। অনেক সময় বড় হতে-হতে সশব্দে ফুটে যেত। কখনও-কখনও এগুলোর মধ্যে পানি ভরতাম, বেলুনের মাঝখানে-মাঝখানে সুতো দিয়ে বেঁধে পানির রঙিন পুঁটলি বানাতাম, নানান রকম ডিজাইন করতাম। বেলুনে হাওয়া ভরে সেটার সাথে একটা লম্বা সুতো বেঁধে দৌড়াতাম। বেলুনটাও উড়ে-উড়ে পিছু নিত। আহ্‌! কী আনন্দ! আমাদের ছোটবেলা ছিল রাজা-প্যান্থার’এর ছোটবেলা। দুইটা ব্যাপার ভীষণ বিরক্ত লাগত। এক। এটা এতো পিচ্ছিল কেন? হাতে ধরাই যায় না। ফোলানোর সময়ও খুব ঝামেলা হয়। দুই। বেলুনের শেষ অংশটা এমন কেন? অন্য বেলুন তো এমন না। আমরা মুখ থেকে বেশি বাতাস ঢুকিয়ে ওই অংশটা বেলুনের অন্য অংশের মত সমান করে দেয়ার চেষ্টা করতাম। এই অদ্ভুত জিনিসকে খেলনা হিসেবে মনে করে খেলতাম বলে, বড়রা একটু বিব্রত হত, তবে তেমন কিছু বলত বলে মনে পড়ে না। হ্যাঁ, মা ভীষণ বকা দিত। তাই বাসায় লুকিয়ে বা বাইরে গিয়ে ওটা নিয়ে খেলতাম। ছোটবেলার এই বেলুনই যে বড়বেলার কনডম, এটা আমি জানতে পেরেছি যখন আমি অনার্স থার্ড ইয়ারে পড়ি, তখন! আমার চেয়ে বয়সে ছোট এক বোনের কাছে! হায়! ছিঃ ছিঃ!! এই জিনিস নিয়ে কিনা ছোটবেলায় বাসার বাইরে সবার সামনে ধেইধেই করে খেলেছি! আমি এখন ভেবে খুব অবাক হই, আমরা নাহয় ছোট ছিলাম, বুঝতাম না, কিন্তু দোকানিরা কেন এমন একটা জিনিস আমাদের মতো ছোটদের কাছে বিক্রি করত?

বয়স কত কিছু বদলে দেয়। খেলনা একই, শুধু খেলার ধরন বদলে যায়। জীবনটাও এমন। একই জীবন একই থাকে, শুধু দেখার ধরনের সাথে জীবন বদলে যায়।

আচ্ছা একটা কথা, আপনি যে বলেছিলেন পারস্পরিক সম্মতিতে যত ইচ্ছে তত জনের সাথে সেক্স করাটাকে আপনি পুরোপুরি সমর্থন করেন, কথা হল, এটা কি বিয়ের পরও? মানে, বিবাহিত দুজন বা বিবাহিত একজন অন্য কারও সাথে সেক্স করতেই পারে—এটাও আপনি সমর্থন করেন? মানে, বিয়ের পরও কি আপনি ইচ্ছে হলে অন্যকারও সাথে সেক্স করতেই পারেন? বিয়ে কি তবে শুধুই মনকে বাঁধে? শরীরকে নয়? তবে কি পৃথিবীতে কমিটেড রিলেশনশিপ বলে কিছু নেই? নাকি, কমিটমেন্ট ব্যাপারটাই মানসিক? কেন আপনি এমন করে ভাবেন? হয়তো বলবেন, “আমি তো কারও কোনও ক্ষতি করছি না।” তার মানে কি কারও কোনও ক্ষতি না করে যা ইচ্ছা তা-ই করা যাবে?

কী হল? আপনি এমন গুরুত্বপূর্ণ একটা ব্যাপারে চুপ করে আছেন কেন? উত্তর দিন বলছি! ভাল হবে না কিন্তু! আমার জানতে হবে এ ব্যাপারটা! কোথায় আপনি? কী করছেন? কী নিয়ে বিজি?

আবার হাওয়াআআআ…….নাহ্ আপনাকে আর বাঁচিয়ে রেখে লাভ নেই। অনেক বেঁচেছেন! এবার সত্যি-সত্যিই মেরে ফেলতে হবে।

আচ্ছা, আমি করতে চাইলে—করবেন? কী হল? আছেন?

বিয়ের পর আপনি যদি পরস্পরের ইচ্ছে মাফিক যে কারও সাথেই শুতে পারেন, তবে আপনার ‘সে’ও তো শুতে পারে পছন্দের যে কারও সাথে। কী? পারে না? এবং সেটাতেও আপনার পূর্ণ সমর্থন থাকতেই হবে! মানে, আপনার থিওরি অনুযায়ী, সে যেহেতু কারও বিন্দুমাত্রও ক্ষতি না করেই তার মনের একটা ইচ্ছা পূরণ করছে, এতে আপনার আপত্তি থাকবার কথা নয়। নাকি অন্য কিছু ভাবেন তার ব্যাপারে? আপনার জন্য এক নিয়ম, আপনার স্ত্রীর জন্য অন্য নিয়ম—এমন নিয়ম তো হতে পারে না। অতএব, নিশ্চিতভাবেই আপনার উত্তরটা ‘ইয়েস’ ধরে নিলাম, মানে যে কোনও লোকের সাথে বিবাহ বহির্ভূত শারীরিক সম্পর্কের ব্যাপারে আপনার স্ত্রী আপনার কাছ থেকে একটা অলিখিত ‘ইয়েস কার্ড’ প্রাপ্ত। সব বিয়েতে যেমনি ভালোবাসা থাকে না, তেমনি সব ভালোবাসায় বিয়ে থাকে না। তবে কি বিয়ে মানেই এক ধরনের সামাজিক অভ্যস্ততা যেখানে দুজন মানুষকে একসাথে থাকতে হয়? কিংবা, যেসব বিয়েতে ভালোবাসাও থাকে, আবার মনোগ্যামির ব্যাপারে কোনও স্ট্রিক্ট কমিটমেন্ট থাকে না, সেসব বিয়েতে পারিবারিক বন্ধনের সুতোটা কেবলই মনের? সে সুতো ছেঁড়ে না? এতই শক্ত?

আপনি চাইলে আমার প্রশ্নের উত্তর ভয়েসেও পাঠাতে পারেন। যদি আপনার দর্শনের পাঠটা অল্প কথায় বোঝানো না যায়, আর অত কথা লিখে পাঠাতে আপনার হাত ব্যথা করে, তবে কোনও সমস্যা নেই, আমি নিজ দায়িত্বে ভয়েসে শুনে নেবো।

প্রায়ই কোনও কিছু বলার চেয়ে লিখে দেয়া সহজ। যা মানুষ পিটিয়ে মেরে ফেললেও মুখে বলবে না, তা-ই কী অবলীলায় লিখে পাঠিয়ে দেয়! আপনি তো লিখছেন না, তাই বলে পাঠাতে বললাম। আমি তো আর আপনার সাথে ফোনে কথা বলতে পারছি না, সে সুযোগ আপনি আমাকে দিচ্ছেন না। একটু কষ্ট করে উত্তরটা রেকর্ড করে পাঠান না!

আচ্ছা, আপনার জন্য আমার ভয়েস শোনাটা সত্যিই কি খুব কষ্টকর? দু মিনিটের জন্যও?

ভাবনা: একশো ষাট।

……………………………………..

স্কুলে সব পরীক্ষায় বরাবরই ফার্স্ট হতাম বলে হেডস্যার জালিবেত দিয়ে পেটাতেন! অন্যরা একই ভুল করলে কিছুই হত না, আর আমি……সবাই এমন করে! ভাল কাজের জন্য জীবনভর শাস্তি পেলাম। তবু নির্লজ্জের মত ভাল কাজই করে গেলাম, যাচ্ছি।

আপাদমস্তক লালকালো ড্রেস্‌ড-আপ ছিল মেয়েটা। হঠাৎই দেখল, রাস্তায় চমৎকার সুন্দর একটা গাড়ি। আশপাশে কেউ নেই। ড্রেসের সাথে কারের রেড কালারের শেডটারও দারুণ মিল। কালো সানগ্লাসটা চোখে রেখে ছবির জন্য রেডি, বান্ধবী শুধু ক্লিক্‌টা করবে, আর অমনিই কোত্থেকে যেন গাড়ির মালিক ড্যাশিংটাইপ এক ছেলে সামনে এসে হাজির! (হায়রে কপাল!)

“এক্সকিউজ মি…….মিস্‌, অনুমতি নিয়ে ক্লিক্‌টা করলে ভাল ছিল না?”

“হ্যাল্লোওওও মিস্টার! রাস্তার ঠিক এখানটায় দাঁড়িয়ে আমার ছবি তুলতে ইচ্ছে হয়েছে—আমি ছবি তুলছি। আমার পেছনে হাতি, ঘোড়া, গরু, গাড়ি যা-ই থাকুক না কেন, এটা তার ব্যাপার যে এখানে এটা রেখেছে! ইট্‌স নান অব্‌ মাই বিজনেস্‌! গট ইট?” বলেই হনহন করে হেঁটে চলে যেতে-যেতে মেয়েটা শুনল……. “হুমমম্‌ আই জাস্ট লাইক ইট!”

মেয়েটাও ঘাড় বাঁকিয়ে বলল, “সেইম টু ইউ!”

ছেলেটার প্রশস্ত হাসির বিস্তৃতি ঘটার আগেই, মেয়েটা দুম্‌ করে বলে বসল, “ইউ মিন্‌স ইয়োর কার্‌!”

আহহহ্‌! এবার ছেলেটার মুখটা দেখার মত হয়েছিল!

ওপরের মেয়েটা আমি। গল্পটা আপনাকে বলতে ইচ্ছে করল, বলে ফেললাম। আপনি যদি একবার অন্য কোনও ছেলে হয়ে নিলুফার সামনে আসতেন, তবে বুঝতে পারতেন, নিলুফা কী জিনিস!

এত-এত চরম নোংরামির নির্লজ্জতার কষ্টে

বিশাল আকাশটায় রোজ ফাটল ধরে।

আবার এক অদ্ভুত মায়াময় নির্লজ্জতায়

রোজ সে ফাটল মিলিয়েও যায়!

হায় নির্লজ্জতা…….!

আপনি এসব খেতেন?—ছোটবেলায় আমরা খেতাম—পঁচিশ পয়সা দিলে আংটি বানিয়ে দিত, ওটাকে আমরা বলতাম কটকটি। আর ঘড়ি, ফুল—ওসবের দাম ঠিক মনে নেই, পঁচিশ পয়সার চাইতে বেশিই হবে। লোকটা যখন বাঁশের উপরের অংশে কাপড় দিয়ে বাঁধা একটা অংশ থেকে টেনে-টেনে ওসব বের করত, তখন লোভ-লোভ চোখে ওই কাপড়ের পুঁটলিটার দিকে তাকিয়ে থাকতাম আর ভাবতাম, না জানি ওইখানটায় ঠিক কতখানি আছে! ইসসস্‌ ওই সবটা কত টাকায় পাওয়া যাবে? অতটা টাকা হয়তো আমার বাবার নেই! আজ হঠাৎ আপনার ওয়ালে ছবিটা দেখে পুরনো দিনগুলির কথা খুব মনে পড়ছে—সেই সুন্দর সময়টার কথা, যখন আমি ছোট আর বোকা ছিলাম। এই বড়বেলায় কোথাও যদি ওই লোককে পেয়ে যাই, তবে বাঁশের উপরের অংশের সবটা কাপড় খুলিয়ে দেখেই নিব ওখানে ঠিক কতটা আছে! শুনুন, আপনি যদি কোথাও এদের দেখেন, আপনি কিন্তু আমার জন্য সবটা কিনে নেবেন! আর যদি কিনতে ভুলে যান, তা হলে কিন্তু ওই বাঁশটা দিয়ে বাড়ি মেরে আমি আপনার মাথা ফাটায় ফেলব! হুমমম্‌!

কম করে হলেও দশটা কামড় আপনার শরীরের বিভিন্ন জায়গায় বসালে মনে হয় আমার পাগলা দাঁতব্যথাটা কমে যেত! আমি শিওর, কমে যেত।

মানুষ রোজ-রোজ যে আবেগগুলোকে দিনশেষে ফালতু ভেবে কষ্টে ভাসে, আসলে সেই অনুভূতিগুলোই মানুষকে জীবনের অনেকটা সময় সঙ্গ দিয়ে বাঁচিয়ে রাখে। মানুষ নামের বিশ্রী প্রাণীটা এমনই—যে তাকে সঙ্গ দিয়ে বাঁচিয়ে রাখে, তাকেই কিনা ফালতু ভাবে!

আপনার একটা ছবি চাইতে ইচ্ছে করছে, কিন্তু চেয়ে না পেলে মেজাজটা প্রচণ্ড খারাপ হয়ে দাঁতব্যথার সাথে মাথাব্যথাও শুরু হয়ে যাবে। তাই, থাক…….

হ্যালো এক্সকিউজ মিইইই……..! আপনি ভাববেন না যে আমি ধরে নিয়েছি এভাবে করে বললেই আপনি লাফিয়ে-লাফিয়ে আমাকে ছবি দিয়ে দিবেন! হুহহহ্‌…….হিহিহিহাহাহাহেহেহেহোহোহো……….ভাবছি, এমন হিহাহেহো করেই জীবন কাটিয়ে দেবো। কী বলেন? পারব না?

আজও কি ঝোঁপের পাশের স্যাঁতস্যাঁতে ওই দেয়াল বেয়ে শামুক উঠে? অবাক হয়ে তাকিয়ে থাক, বোঝো না কিছু ইচ্ছে করেই?

শুভ অশুভ দুপুর—শুভটা আপনার, অশুভটা আমার—বরাবরের মত।

উত্তর নেই। হায়! আবার কোন সুন্দরীতে বিজি! ধাক্কা দিয়ে কিন্তু কলসিতে না, এবার একদম কুয়োর মধ্যে ফেলে দিব!

আমার একটা ছবিও আপনার কাছে অন্য অনেকের ভিড়ে নিঃশ্বাস নিতেও কষ্ট পাবে, আর আমার চারপাশের সবটাই একা আপনার ছবির জন্য—সেখানে আপনার হাজার ছবিও প্রাণভরে নিঃশ্বাস নিতেই থাকবে নিতেই থাকবে…….

দিয়ে দিন না একটা ছবি! না দিলে টিকটিকি, তেলাপোকা, ইঁদুর, ব্যাং একদম সব ধরে ভাজি করে মাকড়সার চাটনি দিয়ে খাওয়ায় দিব কিন্তু! মাইরা মামদো ভূত বানায় ফেলব একদম। ছবি কইইইইইইই? ছবি দিচ্ছেন না কেনঅঅঅঅঅ? আপনাকে একবার সামনে পেয়ে নিই, এরপর দেখবেন!

বেশি-বেশি করলে সোজা আপনার বাসায় এসে ‘সব’ খুলে ফেলব কিন্তু—এই যে হ্যাল্লুউউউ! অ্যাত্তো খুশি হইয়েন না!……আমার না কিন্তু, আপনার ‘সব’……!

এই ছেলেটা আমার সাথে এমন করে ক্যান?

আমি বুঝি, আপনি যে সত্যিই আমাকে দেখতে ইচ্ছে করে বলে ছবি দিতে বলেন, তা কিন্তু নয়। তাই দিতে ইচ্ছে করে না, আবার আপনার চাওয়াটাকে সত্যি ভেবে (কিংবা ইচ্ছে করেই সত্যি ভেবে) ছবি দেয়ার জন্য মনটা অস্থির হয়ে উঠে। দ্বৈতসত্তার ক্রমাগত চাপে জীবনটা চ্যাপ্টা হয়ে গেল!

এই ভূত, এইইই! সেলফি তুলতে পারিস? দে না একটা সেলফি তুলে…….তোকে একটা পুরনো বটগাছ দিব। একদম প্রমিইইইজ্‌!

সত্যিই তো আমায় দেখতে চান না, এমনি-এমনি আমার ছবি চান কেন? আচ্ছা যান, আপনার ছবি দিতে হবে না।

বৃষ্টি ব্যস্ত, প্রিয় ব্যস্ত, কষ্ট ব্যস্ত—রোদ ছুটিতে, আমি ছুটিতে, সুখ ছুটিতে।

ভাবনা: একশো একষট্টি।

……………………………………..

মানুষের ভালোবাসা—মানুষকে বড় অসহায় করে ফেলে।

মানুষের না-ভালোবাসা—মানুষকে বড় অসহায় করে তুলে।

ভালোবাসা, এমন হতে নেই…….

গ্যাসের তীব্র গন্ধটা রান্নাঘর পেরিয়ে, ডাইনিং হয়ে আমার রুমে দিকে…….

আর আমি কিনা কারও প্রোফাইলে পাগলাটে হয়ে মগ্ন, বিভোর।

চুলোয় ভাত বসিয়েছি, পরে ভুলে গেছি।

ভাতের মাড় পড়ে আগুনটা নিভে গেছে, কিন্তু গ্যাস বেরিয়েই যাচ্ছে…….

গ্যাসের তীব্র গন্ধটা খেয়াল না করে যদি চুলাটা তখনই অন করে ফেলতাম,

কী হত জানি না—হয়তো ভাতের সাথে আমিও চুলোয় যেতাম, কিংবা আরও বেশি কিছু।

শুধু জানি, আমার জন্য অপরদিকের মানবাত্মার অনুভূতিটা কী ভীষণ তুচ্ছ! যার জন্য তার সবচাইতে প্রিয় মানুষটার কোনও অনুভূতি নেই, সে হায় কীকরে বাঁচে?

আপনাকে খুব দেখতে ইচ্ছে করে, জানতে ইচ্ছে করে আপনি কী করছেন, কোথায় আছেন, খাচ্ছেন কি না ঠিকঠাক। আর আমাকে এসব জানালে তো পৃথিবীটা সত্যি উল্টে যাবে। তখন আপনার মত মানুষ মাথায় ভর দিয়ে হাঁটত আর পা দুটো উপরে থাকত। দেখতে লাগত ওরাংওটাংদের মত! হুহহহ্‌!

আপনি কার ছবি দেখা নিয়ে এত ব্যস্ত? হায়! আমার প্রিয়টা কি এবার ছবির সাগরে হাবুডুবু খাচ্ছে? হাজারখানেক ছবি দেখা শেষ হয়েছে? এবার দিয়ে দিন না একটা সেলফি, একটা না হোক অন্তত অর্ধেকটা—মানে শুধু আপনার বদনখানা আমায় দিন না!

মেয়েটা সারাক্ষণ মুখে চুল গুঁজে রাখত আর দাঁত দিয়ে চুল কামড়াত।

ছেলেটা একদিন লোভ সামলাতে না পেরে বলেই ফেলল, এটা ওর ভীষণ ভাল লাগে।

শুনে মেয়েটার খুব ভাল লাগল।

কিন্তু—এরপর আর কখনওই মেয়েটা ভুল করেও মুখে চুল দেয়নি।

কেন? বলতে পারবেন? (বলতে পারলে রাতে যখন আপনি ঘুমিয়ে থাকবেন, তখন আপনার মশারির ভিতর কিছু উড়ন্ত তেলাপোকা ছেড়ে দিব।)

আপনাকে একবার সামনে পেয়ে নিই! এরপর (মাথার) চুল, গাল, কান আর নাকের স্থানচ্যুতি ঘটলে কিন্তু যে ঘটাবে তার কোনও দোষ নাই, সব দোষ—যার ঘটবে, তার! হুমমম্‌! ইচ্ছে করছে, আপনাকে চ্যাংদোলা করে তুলে একেবারে নায়াগ্রার উপর থেকে ফেলে দিয়ে আসি। প্লিজ প্লিজ প্লিজ একটা সেলফি না দিয়ে ঘুমাবেন না। স্যার! জনাব! মহোদয়! আপনি কইইইই?

নাহ্‌! আমি চাইলেও মনে হয় আপনাকে আর বাঁচানো সম্ভব নয়! অন্নেএএএক্‌ বেঁচেছেন!

যেভাবে আপনাকে মেরে ফেলব মেরে ফেলব করি, আমাকে তো সবাই জঙ্গি আর জংলি ভাববে! ওমাগো!

আপনি আমার ‘হট সেলফি’ চান কেন? এত্ত আছে আপনার কাছে—আমারটা দিয়ে করবেনটা কী? ওদেরটা দেখেন না! আমি দিতে-দিতেই তো আমারটা একশো ছবির নিচে চাপা পড়ে যাবে, আর আপনিও ভুলে যাবেন যে আপনি আমার কাছে ছবি চেয়েছেন! আপনি তো আমাকে ভুলে যান। যান তো! কী? ভুলে যান না, বলেন? ঠিক বলেছি না? (ভাবছেন, গাধা কোথাকার! যে আমার মনে নেই-ই, তাকে আবার ভুলি কীভাবে?)

আমার ‘আপনি’গুলোকে আমি কত্ত যত্ন করে লুকিয়ে রেখেছি, আর আপনাকে দেয়া ‘আমি’রা…….হায়! তাদের কথা নাই বা বললাম! আমি কি আর আপনার কাছে থাকবার যোগ্য? ঠিকই আছে!

আমার প্রিয়টা এ ছবিতে এমন রেগে আছে কেন? নাকি, টায়ার্ড, ঘুমাননি তাই? নাকি, অ্যাত্তোগুলা ইগো জমে আছে মনে?

একটা বুদ্ধি দিই। বড় করে এক লাফ দেন! ইগোগুলো ঝরে পড়বে। তারপর, আরও একটা ইগোহীন সেলফি দিয়ে দেন। খাটের উপর থেকে লাফ দেন! আরে জ্বালা, বিশ্বাস করে না আমার কথা! আমি পাগল বলে কি আমার সব কথাই প্রলাপ? লাফটা দিয়েই দেখুন না কী হয়!

অতি অতি অতি অতীব আজিব—আপনি না, আমি। মানুষের একটু হলেও লজ্জা থাকে। আমি কী জাতীয় প্রাণী?

দিয়ে দিন একটা সেলফি! দেখে ঘুমিয়ে যাই। কী হল? প্রিয়অঅঅঅঅঅঅঅঅঅঅ…………..!!!

এমনিতেই আমার ভয়েস ছেলেদের মত, আপনাকে চিল্লায়ে-চিল্লায়ে ডাকতে-ডাকতে তো আরও খারাপ হয়ে যাচ্ছে! পরে তো কোনও মেয়েও আমার প্রেমে পড়বে না! তখন কী হবে? এই বান্দর পোলা! মাগোমা উল্লুকটা আমার সাথে কেমন করে দ্যাখো না! এই শয়তান ছেমড়া! ছবিটা দিয়ে দিলে কী হয়? মানুষের ঘুম পায়, ক্ষিধে পায়, বড় ইয়ে পায়, আমার যে ছবিদেখা পেয়েছে—খুউউব পেয়েছে যে! দিয়ে দেন দিয়ে দেন দিয়ে দেন!

আপনি কেন আমার কাছে এসব চান? আমি নিজেকে ভয় পাই—আপনি চাইলে হয়তো অনিচ্ছা সত্ত্বেও সত্যিই দিয়ে ফেলব। আমি জানি, আপনি যা দেখতে চাইছেন, ওটা দিয়ে দিলে ওটার পর আপনি ‘ভি’ চাইবেন—ধরে নিচ্ছি, আমি না হয় সেটাও দিলাম! কিন্তু প্রিয়, তারপর আর কী চাইবেন? আর আছেটাই বা কী? সো, যেটার মাত্র দুই ধাপ পরে থামতেই হবে, সেটা এখানেই থেমে যাক না! যে চাওয়ায় সকল চাওয়ার সমাপ্তি ঘটে, অমন চাওয়া না চাইলেই তো ভাল, তাই না? কীইইই? ঠিক না? কী হল? উত্তর দিন! আমি ঠিক বলিনি? তো? চুপ করে আছেন কেন এখন?

ভীষণ রাগে দাঁত কটমট করতে-করতে যদি আমার দাঁতগুলো ভেঙে যায়, তাহলে কিন্তু আমি আপনার সবগুলো দাঁত নিয়ে নিব! তারপর আপনি কী করবেন? দাঁত না থাকলে পৃথিবীর কোনও সুন্দরীকেই কিস করে একটুও মজা পাবেন না! শুধু মাড়িওয়ালারা কিস করে শান্তি পায় না। কামড়াতে না পারলে কিস করে কী লাভ? আপনাকে একদম মাড়িওয়ালা বানায়ে ছেড়ে দিব!

আমার সেলফি দেখতে হবে না, জনাব। এক মিনিট পরপর ফেৎ করে-করে নাক থেকে ঘন শ্লেষ্মা ফেলছি! এটা দেখতে নিশ্চয় আপনার ভাল লাগবে না! আর তিন দিনের দাঁতব্যথায় আমাকে দুর্ভিক্ষে দিনের পর দিনের দিন না খেয়ে থাকা মানুষের মত দেখাচ্ছে! আপনি আমাকেই সহ্য করতে পারেন না, আর আমার এই অসুস্থ চেহারা সহ্য করবেন কীভাবে?