ভাবনাদেয়ালের পলেস্তারা (৩১শ অংশ)

ভাবনা: দুইশো এগারো।

……………………………………..

শোনো, একটা কথা বলি, আমি তোমাকে ভালোবাসি। ভালোবাসা মানে কিন্তু এই নয় যে কথা বলতেই হবে, কন্টিনিউ করতেই হবে, ইত্যাদি, ইত্যাদি। তোমার যা কিছু যেমন আমি তেমনই ভালোবাসি। তোমার ভালটাকেও ভালোবাসি, খারাপটাকেও ভালোবাসি। তোমার যা ভাল লাগে, তা আমার যতই অপছন্দ হোক না কেন, তাকেই আমি ভালোবাসি। তুমি যেভাবে ভাল থাক, সেভাবে তোমাকে রাখতে ভালোবাসি। আমি তোমাকে আমার মত নয়, আমি তোমাকে তোমার মত করেই গ্রহণ করতে ভালোবাসি। দুম করে ছেড়ে চলে গেলেও ভালোবাসব। ভয়ের কিছু নেই।

২০১৪ সালের হোয়াটস্‌অ্যাপ মেসেজগুলি হঠাৎ স্ক্রিনে টাচ লেগে ওপেন হয়ে গেল। আমার চ্যাটলিস্টের একমাত্র ব্যক্তি তো তুমিই ছিলে, এখনও তা-ই আছ। দেখছি আর হাসছি। আমি বদলাইনি একটুও। মনে আছে, স্মার্ট ফোন নতুন কেনা……তোমাকে যখনতখন বিরক্ত করতে তুমি যা যা অ্যাপ ব্যবহার করছো, সবকটা একে-একে ইন্সটল করলাম। মেসেঞ্জার, ভাইবার, হোয়াটস্‌অ্যাপ, ইমো। এর কোনওটাই এখন আর ব্যবহার করা হয় না। তুমি উত্তর দেওয়া বন্ধ করে দিয়েছো, তাই। কনভারসেশনগুলো কখনও দেখি……হঠাৎ যেন সেই সময়ে ফিরে যাওয়া। ইশ! কেন তুমি বিয়ে করে ফেললে! আর করলেই যদি আমাকেই কেন করলে না? জানি, এসব আমার ছেলেমানুষি। প্রেমে পড়লে মেয়েরা ছেলেমানুষ হয়ে যায়।

মাঝেমাঝে মনে হয়, এই যে আমি মন থেকে তোমাকে গ্রহণ করেছি, মানে তোমার বিয়ের দিন অনানুষ্ঠানিকভাবে কিন্তু মন থেকে কবুল করে নিয়েছি তোমাকে; কেউ যখন জিজ্ঞেস করে, আমি বিবাহিতা কি না, ইচ্ছা করে বলে দিই, জ্বি, বিবাহিতা। সমাজ বড় বেয়াড়া চিজ্‌! তার বানানো নিয়ম ছাড়া সে চলেই না। যে বিয়ের কোনও সামাজিক স্বীকৃতি নেই, সমাজ সেটা বিয়ে মানবে কোন নিয়মে? আচ্ছা, সমাজে নতুন নিয়ম করা যায় না?

সেদিন নওশীন ম্যাডামের সাথে দেখা করতে গিয়েছিলাম। আমার ছোটবোনটাও নিজের পছন্দে বিয়ে করেছে শুনে বললেন, আমার ছাত্রীটার কাউকে বুঝি পছন্দ হয় না? মনেমনে বললাম, সারাজীবন ব্যতিক্রমই রয়ে গেলাম। এমন বিশেষ কাউকেই ভাল লাগে, ভালোবাসি, যে কোনওদিনই আমার হবে না। যাকে কখনওই পাবো না, তাকেই শুধু পেতে চাই। এর নাম নাকি ভালোবাসা!

মাঝেমাঝে খুব রাগ হয় এ ভেবে যে, তোমার বিয়ের দিনে কবুল পড়লাম দুইজনেই একসাথে, একই মন্ত্রে, অথচ কেবল একজনেরই সকল অধিকার! আমার তবে কী থাকল আর? এ কি অন্যায় নয়? পরে সান্ত্বনা নিই এই ভেবে, যেটা লোকচক্ষুর আড়ালে ছিল, সামনে আসেনি সেদিনও, আজ তা সম্মুখের দাবি তুলবে কীভাবে?

সব মানলাম, ঠিক আছে। কিন্তু তুমি? তোমাকে তো জানিয়েছি। ওইটুকু অধিকার তুমি তো আমাকে দিতেই পার, না? কী? বলো, পার না? বেশি কিছু চাইছি নাতো, তোমার খুঁটিনাটি সব আমি জানব, শুধু এইটুকু অধিকার।

মাথায় চুড় করে খোঁপা বেঁধে বাইরে গিয়েছিলাম, ডিসি অফিসে। ওড়না ছিল মাথায়। বাসায় ফিরে চুল থেকে রাবার-ব্যান্ড খুলে দিতেই রেশমি চুলের বন্যা আমার সারা পিঠ ছেয়ে কোমর বিছিয়ে গড়িয়ে গেল আরও নিচে। নিজের বলে বলছি না, আমার চুল এত সিল্কি আর সফট যে ছুঁতে-ছুঁতে যেন আর হাতই সরে না। বেশি মোলায়েম বলে ছড়িয়ে না দিলে এর ঘনত্বও সহজে আঁচ করা মুশকিল। নার্সিসিজম হয়ে যাচ্ছে, না? হোক একটু! আয়নায় নিজেকে দেখি, নিজের জন্য নিজেরই মায়া হয় এই ভেবে যে, এ সৌন্দর্য লুকিয়ে বাঁচিয়ে চলি কার জন্য? কেউ নেই যে মুগ্ধ হয়ে আমার মধ্যে হারায়, আমায় একটু ছুঁয়ে দেখে! মনে পড়ছে, ভার্সিটিতে একদিন থার্ড ইয়ারে থাকতে ক্লাসে হঠাৎ খোঁপা খুলে চুল ছড়িয়ে পড়েছিল পিঠ জুড়ে, সারোয়ার পেছন থেকে বলেছিল, “খোলাই থাক না, একটু দেখি!” জোর করে দ্রুত বেঁধে নিয়েছিলাম। বিশেষ সৌন্দর্য থাক না যত্নে বিশেষ কারও জন্য। রাগ করে বলেছিল সারোয়ার, “ঢং! একটু দেখতেই তো চেয়েছিলাম!” সবসময়ই চেয়েছি, আমার সকল সাজসজ্জা শুধুই হবে তার জন্য যাকে আমি ভালোবাসবো। যে হবে সেই বিশেষ কেউ। লুকিয়ে-বাঁচিয়ে চলি আজও। একদিন সাজব শুধুই তোমার জন্য—এই ভেবে। হায়, কিছু মানুষ শুধু ভেবেই জীবন কাটিয়ে দেয়, কোনও কাজই আর করা হয়ে ওঠে না!

আমি অনেক বিষয়েই উদাসীন, এটা ঠিক, অনেক সহজেই ক্ষমাও করে দিই, কিন্তু কিছু বিষয়ে আমার অবস্থান একদম জিরো টলারেন্স লেভেলে। যেমন, কেউ যদি আমাকে অহেতুক অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে দেখে। যেহেতু বিবাদ ভালোবাসি না, তাই নিজেই এমনভাবে চলি যেন লোকের দৃষ্টি আকর্ষিত না হয় সহজে। তবু যদি কেউ বেহায়ার মতন আচরণ করে তাহলে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হয় আরকি! সে হোক আমার ক্লাসমেট, কি কাছের কেউ। (ভাই, বন্ধু যে-ই হোক।) একমাত্র তুমিই ব্যতিক্রম যে কিনা আমার আপাদমস্তক তাকিয়ে-তাকিয়ে পর্যবেক্ষণ করলেও আমার খারাপ লাগেনি কখনও, সেই প্রথম দিন থেকেই। কারণ, কাজটা আমিও করি তোমার সাথে। আপাদমস্তক পর্যবেক্ষণ!

কিছু মনে কোরো না। বলতে ভাল লাগছে এসব, তাই বলে যাচ্ছি। আমার মধ্যে আরেকটা ‘আমি’ আছে যে ‘আমি’তে খুব সহজেই তুমি চলে আস। এটা জানো?

ভাবনা: দুইশো বারো।

……………………………………..

লক্ষ্মী ছেলের মত আমার প্রশ্নের উত্তরগুলো দাও। অনেকগুলো প্রশ্ন করেছি এ পর্যন্ত, একটারও উত্তর দাওনি।

একটা কথা বলি সকাল-সকাল? তুমি কোথায় আছো, কী করছো, আমি জানি না। তবে যেখানেই থাকো আমার জন্য তোমার অবস্থান স্থির, তা বাড়েও না, কমেও না। সে তুমি একাই থাকো, আর কারও সাথেই থাক। আমার কাছে তুমি, অথবা তোমার কাছে আমি, এক জায়গায় আর এক দূরত্বেই বাঁধা পড়ে আছি। আমার কাছে তুমি এই বুকের ভেতর, তোমার কাছে আমি তোমার দৃষ্টিসীমানার বাইরে। যা বলবো বলে তোমাকে নক করা! গতকালের একটা প্রধান খবর ছিল পুরো ফেসবুক জুড়ে। হ্যাঁ, তুমি খবরটাতে মন্তব্যও করেছো। দুজনেই ভাল থাকুক দুজনের মতন করে। এর চাইতে সুন্দর উইশ আর কী হতে পারে? লোকে কত আজেবাজে কথা বলল। দুজন মানুষ বিয়ে করছে, সেটা নিয়েও বাজে কথা; ওদের সম্পর্কটা কোনও কারণে ভেঙে গেলো, সেটা নিয়েও বাজে কথা! কিছু ফালতু লোক পারেই শুধু বাজে কথা বলতে, তাই ওরা বিশেষ কেউ নয়, কখনও হতেও পারে না তেমন কিছু—ওরা স্রেফ ‘ম্যাঙ্গো-পাবলিক’, ওভাবেই থেকে যায় আজীবন, আমৃত্যু।

তাহসান আর মিথিলা। আমি সামনাসামনি দেখেছি ওদেরকে। সবসময়ই মুখে হাসি নিয়ে পাশাপাশি। মিথিলার তাহসানকে নিয়ে এক ধরনের পজেসিভনেস ছিল, আর পেছনে কাজ করতো হারিয়ে ফেলার আতঙ্ক। আমাদের ডিপার্টমেন্টের তাহমিদা ম্যাডামের ছেলে তাহসান। ও একদিন মিথিলাসহ এসেছিল ক্যাম্পাসে। তখন সামনে থেকে দেখা। সবাই তাহসানের সাথে ছবি তুলছে, আর মিথিলা খুব সবসময়ই কৌশলে তাহসানের দিকে খেয়াল রাখছে। মিথিলার তাহসানকে আঁকড়ে থাকার একটা প্রবণতা কাজ করতো। এটা ইনসিকিউরিটি থেকে মানুষ করে। আমি দূর থেকে একপলক দেখেছিলাম কেবল। সেলিব্রেটি দেখে ছবি তুলতে হুমড়ি খেয়ে পড়া আমার নিজের কাছে বরাবরই হাস্যকর ঠেকে। ওটা আমার ধাতে নেই। যা-ই হোক, একদিন ওদের একটা মেয়ে হলো। এখন দেখলাম, ডিভোর্স হয়ে গেলো। এই ডিসিশনটা কিন্তু ভীষণ হিসাব কষেই মানুষ নেয়। যখন আর কোনও দ্বিতীয় চিন্তা করবার উপায় থাকে না, তখন বাধ্য হয়ে মানুষ এটা করে। এখন কথা হচ্ছে, ওরা নিজেরা ভাল থাকবে বেশ! একসাথে কষ্টে থাকার চেয়ে আলাদা হয়ে ভাল থাকা অনেক ভাল। দিনের পর দিন নিজেকে ক্রীতদাসের জীবন কাটাতে দিতে সত্যিই ভাল লাগে না। বিয়ে লোকের পায়ে শেকল পরিয়ে দেয়। বিয়েটা সেই খুনের মত যে খুনটা প্রমাণিত হয়েছে আর কোর্টে যাবজ্জীবন সাজাও হয়ে গেছে। বেশিরভাগ মানুষই বিয়ে করে নিজে সুখী হতে নয়, তার চারপাশের লোকজনের প্রত্যাশা পূরণ করতে। অথচ কী আইরনি দেখো, যখন বিয়ের পর পৃথিবীর সব অ-সুখ এসে বাসা বাঁধে সম্পর্কের মধ্যে, তখন তা কেবল ওই দুটি মানুষকেই সহ্য করতে হয়। ওই আশেপাশের লোকগুলি তখন আরামে তামাশা দেখে। জীবনে সুখী হওয়ার হাজারো বুদ্ধি হয়তো আছে, তবে সেখানে বিয়ে করার বুদ্ধিটা নিশ্চয়ই নেই। সুখী হওয়ার টেকনিক আর যা-ই হোক না কেন, বিয়ে করা অন্তত নয়! এপিকিউরাসের কিংবা দালাই লামার ক্লাসিক টেক্সট দ্য আর্ট অব হ্যাপিনেস, কাহ্‌লিল জিব্রানের দ্য প্রফেট থেকে শুরু করে হালের রিচার্ড বাচের জোনাথান লিভিং স্টোন সিগাল পড়ে দেখো। কোথাও সুখী হওয়ার পন্থা হিসেবে বিয়ের কথা বলা হয়নি। ডিভোর্সের সোশাল কস্টটা বড্ড হাই এ দেশে। নইলে বাংলাদেশে ডিভোর্সের উৎসব শুরু হয়ে যেত। দিনের শেষে গুরু বাচ্চুই ঠিক—সুখের অভিনয়, আসলে কেউ সুখী নয়। সব সম্পর্কই কমবেশি কমপ্লিকেটেড। তবে ওদের সন্তানটি যে খুব ভাল থাকবে, এটা বলা যাচ্ছে না। সংসার এমন একটা জায়গা যেখানে নিজের চেয়েও সন্তানের গুরুত্ব অনেক বড়। আর সেজন্যই সেটা পরিবার, সেকারণেই ঘর বাঁধা, সংসার করা। তাই এমন সিদ্ধান্ত সেটা যত কঠিন কারণেই হোক না কেন, সেটা কেবল স্বামী আর স্ত্রীর ভাল থাকার স্বপ্ন ছাড়া আর কিছু নয়। ওদের সন্তানের দিকে যখন তাকাই, তখন আমার ওদের দুজনকে স্বার্থপর মনে হয়। আমি জানি, আমার এই কথায় তোমার মন বিদ্রোহ করে উঠবে।

ওরা তো শিল্পী, সেলিব্রিটি। ওদের কথা নাহয় বাদই দিলাম। আমি ভাবি, আমার বাবার সাথে আমার মায়ের এই দীর্ঘ উনপঞ্চাশ বছরের সংসার কি খুব সোজা পথে এগিয়েছে? না। কিছুতেই না। যে নির্যাতন আমার মাকে সহ্য করতে হয়েছে দিনের পর দিন, তাতে বিচ্ছেদটাই ছিল স্বাভাবিক ও জরুরি। কিন্তু আমরা কি ভাল থাকতাম তখন? থাকতাম না। তোমার চারপাশে তাকিয়ে দেখো। বাবা-মায়ের একটা বিচ্ছেদ সন্তানের জীবনে সব থেকে বড় অভিশাপ। এইতো ঈদের পরে রাজশাহী ঘুরতে গেলাম আমরা। ভাইয়া-ভাবির এগারো বছরের সংসার। কতবার ভাঙনের সুর উঠেছে তাতে। সেইদিন, এত বছর পরেও, ভাইয়া যেন সিরিয়াসলিই একটা ডিসিশনে আসতে চায়। প্রতিদিন এভাবে মরে যাওয়ার চেয়ে একবারে সব শেষ হয়ে যাওয়া অনেক ভাল।—আমার না, এটা ভাইয়ার কথা।

তখন আমরা সবাই মিলে ওদেরকে বোঝালাম।

আমি ভাইয়ার অনেক-অনেক ছোট হলেও ছোটবেলা থেকেই ভাইয়া আমার কথাকে আমার বড় বোনদের চেয়েও গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করে। আমার মতামত জানতে চায়। আমি ভাইয়াকে বললাম, ভাইয়া সব তো আর শতভাগ আমাদের মনের মতন হয় না। এটাই জীবন। শুদ্ধ আর দেবীর কথা ভাবো। শুধু-শুধু ওরা কেন ভুক্তভুগী হবে? ভাবির যে বিষয় ভাল লাগে না, তা শুধু ইগনোর কর। এমন কোন সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলো না, যা তোমার সন্তানদের জীবনকে বিধ্বস্ত করে দেবে। অহেতুক তুমি নিজে বাড়তি স্ট্রেস নিয়ো না। তাহলেই দেখবে সামনে এগোনো আর কঠিন মনে হবে না। কোনও বিষয় নিয়ে লোকে আসলে যতটা উদ্বিগ্ন হয়ে পড়ে, বিষয়টি প্রায়ই প্রকৃতপক্ষে অতটা উদ্বিগ্ন হওয়ার মত নয়। (আমি জানি, ভাবি কখনওই ভাইয়াকে ছেড়ে যাওয়ার চিন্তা করে না, এখানে কিছু হিসাব আছে, হিসাব বরাবরই থাকে। সংসার মানেই জটিল হিসাব।)

বাচ্চাদেরকে বাবার বিরুদ্ধে বলা, বাবাকে খারাপ দেখিয়ে মা হিসাবে নিজের অবস্থান বড় করে তোলা এই কাজটা যে মেয়ে করতে পারে, তাকে কেবল অবুঝ শিশুই ভাল মা হিসেবে জানতে পারে। কিন্তু শিশুরাও একসময় বড় হয়। ওরাও বোঝা শেখে। তখন সত্য উপলব্ধি ঠিকই করতে পারে। যে সন্তানের কাছে বাবা কিংবা মা নিজেকে বড় করে অন্য কাউকে ছোট করে দেখায়, সে সন্তান বড় হলে ওই বাবা কিংবা মায়ের প্রতি তার শ্রদ্ধা কমে যায় অনেকখানি। চুপ না থেকে ভাল কোনটা, মন্দ কোনটা, সত্য কোনটা, আর মিথ্যা কোনটা, এসব ওদের সামনে তুলে ধরার দায়িত্বও বাবা-মা’কে নিতে হয়। এই শেখানো শুধু এক পক্ষের দায়, সেটা কখনওই ভাবা যাবে না। গঠনমূলক তর্ক স্বামী-স্ত্রীতে হতেই পারে সন্তানদের সামনেই। তাহলে ভুলটা কার, আর ঠিকটা কী, সেটা তারা জানতে পারবে। তাদের মধ্যে ন্যায়-বিচারবোধ তৈরি হয় এর ফলে। তবে সে তর্ক যেন মার্জিত হয়, সেখানে যেন স্বামী-স্ত্রী পরস্পরকে ছোট করে কথা না বলে।

তোমায় একটা ভাল পরামর্শ দিই, শোনো। যদি কখনও তোমার মনেও এইরকম চিন্তা এসে থাকে যে তোমরা আর একসাথে থাকতে পারছ না, তখন যদি তোমাদের একটা হলেও সন্তান থাকে, তবে কখনও অমন সিদ্ধান্ত নিতে যেয়ো না। (আমি বুঝি, মুখে যা-ই বলুক তোমার স্ত্রী তোমাকে ছাড়ার চিন্তা কখনওই করে না।) সন্তানের জন্য হলেও তোমরা এক সাথে চলবে। যদি এমন কোনও সিদ্ধান্ত নিতেই হয় কোনদিনও, তা যেন সন্তান হওয়ার (গর্ভে আসার) আগেই নিতে পারো, এটা মাথায় রেখো।

এটাই জীবনের জটিল সমীকরণ। জীবনে এটাকে মিলিয়ে চলতে হয়।

এই সকাল-সকাল তোমাকে এসব বলতে হল। বিরক্তি নিয়ো না। যদি আমার কথা বিরক্তির উদ্রেক করে, তবে শুধু ইগনোর করো—তাহলেই হবে।

ভাবনা: দুইশো তেরো।

……………………………………..

গতকাল রাতে হঠাৎই পুরনো টেক্সট ঘাঁটতে-ঘাঁটতে এটা সামনে বেরিয়ে এল। প্রথমটুকু ওই সময়েই তোমাকে পাঠিয়েছিলাম। সেই দিনগুলিতে সব কিছু ইগনোর করতাম। কারণ, আমার বিশ্বাস ছিল দুনিয়ার মানুষ যা-ই বলুক না কেন, আমি তোমাকে ঠিক জানি, আর আমার কাছে তুমি কী, সেটাও তুমি জানো, তাই পৃথিবীর সবাই অন্যদিকে চলে গেলেও আমি তোমার সাথেই থেকে যাব। দ্বিতীয় স্ক্রিনশটটার ছবি সে সময় আর তোমাকে পাঠাইনি। ইগনোর করতাম। ভাবতাম, লোকে যা বলে বলুক! ওরা তো আর জানে না তুমি আমার কে, আর কত আগে থেকেই আমি তোমায় পেয়ে এসেছি! তাই ওদের কথায় আমার কিছুই এসে যায় না। কিন্তু কালকে রাতে শেষ কথাগুলি পড়ে এত কষ্ট লাগলো! আচ্ছা, এখন তুমিও বুঝি এমনই ভাবো! আর তাই আমাকে এড়িয়ে চল? সেজন্যই আমাকে বলেছো, “নক করো না।”?

তুমি আমার সাথে কথা বলছো না কেনো? কোনও উত্তরও দিচ্ছ না। আচ্ছা, যে একদিনের অপেক্ষায় আছি তা কি সত্যি হবে? কবে হবে?

আমার স্বপন কিনতে পারে এমন আমীর কই? (দীপান্বিতা দত্তের কণ্ঠে)

যমুনা কি বলতে পারে কত বার কেঁদেছে রাধা? (শিপ্রা বসুর কণ্ঠে)

কী কখন বলে বাঁশি রাধা না হলে কেউ বোঝে না। (কৌশিকী চক্রবর্তীর কণ্ঠে)

বঁধুয়া নিদ নাহি আঁখিপাতে। (শ্রাবণী সেনের কণ্ঠে)

বাঁশিটার একটাই দোষ, বলে রাধা রাধা। (শ্রীরাধা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কণ্ঠে)

আজ বিকেলের ডাকে তোমার চিঠি পেলাম। (বনশ্রী সেনগুপ্তর কণ্ঠে)

খুঁজবে আমায় সেদিন, যেদিন আমি থাকবো না। (হৈমন্তী শুক্লার কণ্ঠে)

মনে করো আমি নেই, বসন্ত এসে গেছে……… (সুমন কল্যাণপুরের কণ্ঠে)

হারিয়ে যেতে-যেতে অজানা সংকেতে……… (আরতি মুখোপাধ্যায়ের কণ্ঠে)

এ তো রাগ নয়, এ যে অভিমান। (মান্না দে’র নয়, অদ্রিজ ঘোষের কণ্ঠে)

………………এখনও চলছে। সবকটা গান বহুবার শুনেছি, আজকেও শুনে যাচ্ছি বারবার।

আচ্ছা, আমি যদি রাধা হই, তুমি তো আমার শ্যাম আছোই, তাই না?

সেদিন জিজ্ঞেস করেছিলে, ইহরাম কী। ইহরাম হচ্ছে দুই টুকরা সাদা কাপড় যা কাফনের কাপড় হিসেবে বিবেচ্য। মৃত্যুর সময় যেমনি মানুষকে পার্থিব সকল লোভ আর মায়ামোহ পেছনে ফেলে মহাকালের পথে যাত্রা করতে হয়, ঠিক তেমনি একজন হজ্বযাত্রী হজ্বের নিয়তের সাথেসাথে এই পার্থিব জীবনকে এক অর্থে বিদায় জানিয়ে আল্লাহ্‌র কাছে নিজেকে সমর্পিত করেন। ইহরাম বাঁধার সাথেসাথে তিনি এ জাগতিক সম্পর্ক ছিন্ন করে ফেলেন। ইহরাম পরার অর্থ হল, তুমি যা-ই হও না কেন, ফকির কি-বা আমীর, তোমাকে সবকিছু ত্যাগ করেই আল্লাহ্‌র সামনে রিক্ত হস্তে হাজির হতে হবে। সে সময় কারও সাথে উচ্চস্বরে কথা বলা যাবে না, কারও প্রতি রাগ বা বিদ্বেষ রাখা যাবে না, এমনকি মাটিতে প্রতিটি পদক্ষেপ হবে কমনীয়। যেন কোনও শব্দ না হয়, চলতে পথে যেন একটা ঘাসও ব্যথা না পায়। একটা পিঁপড়াও যেন ভুলে না মরে, আর একটা মশাও যেন মারা না হয়। ইহরাম অবস্থায় চুল, দাড়ি, নখ এসব কাটা নিষেধ। কোনও প্রকারের সুগন্ধি ব্যবহার করার ক্ষেত্রেও নিষেধজ্ঞা রয়েছে। সুগন্ধি সাবান ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা থাকায় এ সময় সুগন্ধিহীন সাবান ব্যবহার করা হয়। একেবারেই সাদামাটা জীবনযাপন করতে সকল প্রকার অহংকার, খারাপ আচরণ ও চিন্তা এসময় মন থেকে দূরে রাখতে বলা হয়। অন্যান্য নিষিদ্ধ কাজের মধ্যে রয়েছে কোনও প্রাণীহত্যা, ঝগড়া বা লড়াই করা, যৌন সম্পর্ক স্থাপন ইত্যাদি। এছাড়া সাধারণ সময়ে নিষিদ্ধ কাজসমূহও এসময় নিষিদ্ধ থাকে। দৃষ্টি সংযত রাখা অন্যান্য সময়ের মত এসময়ও গুরুত্বপূর্ণ। দৈনন্দিন জীবনের ব্যস্ততার বাইরে এসে এসময় শুধু আল্লাহর স্মরণ করা হাজিদের দায়িত্বের মধ্যে পড়ে। এতটাই উদার, নমনীয় এবং সংবেদনশীল, কিন্তু পার্থিব মায়ামুক্ত হয়ে নিজের রুহ্‌কে আল্লাহ্‌র কাছে হাজির করা হয়। কেউ বাহ্যিক জীবনে যখন এরূপ বেশ ধারণ করবেন, তখন তাঁর মনের ওপরও এর গভীর ছাপ মুদ্রিত হবে, অন্তরের ভেতর থেকেও তাঁর মন সত্যিকারভাবে ‘ফকির’ হবে। এই ফকিরের হওয়ার মানে, সকল অহংকার ও গৌরব দূর করা, নিজের হৃদয়ে গরিবানা ও শান্তিপ্রিয়তা প্রতিষ্ঠা করা। এটাই ইহরাম বাঁধা, হজ্জের প্রথম আনুষ্ঠানিকতা। ইহরাম অবস্থা থেকে মুক্ত হওয়ার সময় মাথা মুণ্ডন বা খুব ছোট করে চুল ছেটে ফেলতে হয়, এবং এরপর থেকে চুল, দাড়ি, নখ কাটার অনুমতি রয়েছে। মহিলাদের মাথা মুণ্ডন করতে হয় না। বরং চুলের কিছু অংশ কেটে ফেলতে হয়।

গতকাল রাতে ভাইয়া, ভাবি, বাবা আর মা’র হজ্বযাত্রার মুহূর্তের কিছু ছবি দেখছিলাম। বাবার ছবিটার দিকে তাকিয়ে কেমন যেন গায়ে কাঁটা দিয়ে উঠল। বাবাকে সবসময়ই দেখে এসেছি ভীষণ রাগি-রাগি কঠিন হৃদয়ের মানুষ হিসেবেই। অথচ, ইহরামের কাপড়গায়ে বাবাকে সম্পূর্ণ অন্য মানুষ মনে হচ্ছিল। যেন একেবারেই শান্ত, বিনীত, অহংকারশূন্য, স্তব্ধতার শুভ্র চাদরে মোড়া একজন মানুষ খুব সাবধানে ধীর পদক্ষেপে সামনের দিকে হেঁটে চলেছেন নিঃশব্দে। যারা ধর্মে বিশ্বাস রাখেন, ধর্ম সত্যিই তাঁদের অনেক বদলে দিতে পারে। ধর্মের এ ক্ষমতা আছে।

তোমার কাল রাতের কবিতাটা যে কী চমৎকার! পুরনো অভ্যেসে ভেবেছিলাম, আমাকে নিয়েই লিখেছ। কিন্তু না, তুমি লিখেছ অন্য কাউকে ভেবেই। জানি। সেই মানসী কে, তা আন্দাজও করতে পারি অনেকটাই। ঠিক কি ভুল তা নাহয় অজানাই রইল!

এমন একটা স্বপ্ন নিয়ে যে বেঁচেছে, সে বড় ভাগ্য নিয়েছে বেঁচে আছে—হোক না তা অলীক মিথ্যে! তবুও স্বপ্ন তো একই, তাই না, বলো? তোমার আর আমার মিলনের সুখকল্পনা নিয়ে আমি বেঁচে আছি তোমারই লেখার রেশে, ঘুরলোই নাহয় তোমার ভাবনা ভিন্ন মানুষকে ঘিরে! আচ্ছা, ওই কবিতাটা কাউকে আবৃত্তি করে শুনিয়েছিলে? যাক সে কথা!

আমার জন্যই লিখেছিলে, তা-ই ভেবেই ভেসে বেড়াব সুখে স্বপ্ন ছুঁয়ে, সময় তাতে ঠিক মিলাবে দুই আঙুলের এক তুড়িতে! আমি তখন আরও বেশি থাকবো মিশে ওই তোমাতে। “খুব হিসেবে মিলিয়ে নিয়ে তখন কেঁদো।”

ভাবনা: দুইশো চৌদ্দ।

……………………………………..

তুমি কী গো? ঘুম ভেঙেই দেখি ফর্মালিটির সুবাস ছড়িয়ে দিয়েছ! তীব্র একটা গন্ধ, অসহনীয়! আচ্ছা বাবু, এতোটাই ঠুনকো কি তোমার-আমার সম্পর্কটুকু? পাগল ছেলে! আমি দেখেছি তোমার চোখ, উপলব্ধি করেছি তোমার ভেতরের তোমাকে, দেখেছি তোমার বুকটা কতটা প্রশস্ত! অতোটা জায়গা জুড়ে আমায় রেখো না প্লিজ, রাখলে হারিয়ে যেতে পারি! তোমার বুকের উত্তরপাশে গুটিসুটি মেরে থাকার মতো একটুখানি জায়গা দিলেই হবে। একজন লেখক কি কখনও কারও একার হতে পারে? সে তো সবার। কিন্তু তোমার মাঝের ওই জায়গাটুকু শুধুই আমার। বাস্তবে হোক না হোক, কল্পনায় আমি ওখানেই থেকে যাবো আজীবন। সবাই বাস্তবতায় বাঁচে তো বাঁচুক, আমি এই কল্পনায় বাঁচতে-বাঁচতে একদিন টুক করে হাসিমুখে মরে যাবো। কোনও সমস্যা? আমিতো শুধু চেয়েছি আমাদের বন্ধনটুকু আত্মিক হোক। কথা না হোক, দেখা না হোক, হৃদয়ের শুদ্ধ ধারাটুকু বহমান থাকুক। দুজনের দেখা হয় না, কথাও হয় না, পোশাকি প্রেমের সব সম্পর্ক শেষ—তবু যেন দুজনের প্রতি দুজনের শ্রদ্ধাবোধটুকু অটুট থাকে, দুজনের কেউ যেন আরেকজনের সম্পর্কে একটাও বাজে কথা না বলে, ওকে নিয়ে কোনও বাজে ভাবনা মাথায় না আসে। আমার কাছে সত্যিকারের প্রেম এটাই। আমাদের সম্পর্কটাও ওরকম হোক। হুট করেও দেখা হয়ে গেলে যেনো দুজন দুজনকে সর্বোচ্চ ভালোবাসা দিতে পারি! তুমি না দিলেও আমি ঠিক তা কেড়ে নেবো, আমার হকটুকু আদায় করে নেবো। কেড়ে নেয়ার মতো অধিকার দিয়েছ তো আমায়, তাই না? সম্পর্ক কি নেশার মতো, বলো, যে নেশা কেটে গেলো, আর অমনিই সব সম্পর্ক শেষ? তোমার শরীরের ঘ্রাণটুকু না পেলে আমার দম বন্ধ লাগে, বোঝো না? অতো-অতো সরি আর থ্যাংকস আমাকেও কেন বলতে হয় তোমার? ভাল্লাগে না একদম! আমি চাই না তোমার-আমার সম্পর্কে কোনও ফর্মালিটি থাকুক। পৃথিবী উল্টে বয়ে যাক না! হাজার-হাজার দুঃখ আমাদের বিচলিত করুক না! তুমি বাঁচো তোমার মতো করে। অন্য সব মেয়ের মতো লুতুপুতু পেইনমার্কা প্রেম করতে বুঝি আমি এই পৃথিবীতে এসেছি? আমি এসেছি প্রেমটাকে গিলে খাওয়ার জন্য। তুমি নিশ্চয়ই বুঝেছ কতটা স্বার্থহীনভাবে আমি তোমায় ভালোবাসি। তোমার সকল সীমাবদ্ধতাসহই আমি তোমায় ভালোবাসি। তোমার অন্ধকার দিকগুলিও আমার চোখে আলো ছড়ায়। আমি খুব ভাল করেই বুঝি, তোমার যতো খামখেয়ালিপনা, হেঁয়ালি, উদাসীনতা, পাগলামি, বদভ্যাস, সেগুলিকে বাদ দিলে তুমি হয়ে উঠবে অসম্পূর্ণ। আমি তো তোমাকে সম্পূর্ণভাবেই চাই। তোমার মন খারাপ থাকলে, তুমি অশান্তিতে থাকলে, কোনও বাহ্যিক ঝামেলা তোমাকে তোমার মত থাকতে না দিলে আমার নিশ্চয়ই ভাল লাগবে না, তাই না, বলো? আমি সব বুঝি, বাবু। আমি তোমাকে আমার মত করে নয়, আমি তোমাকে তোমার মত করেই পেতে চাই। আমার জন্য তোমার নিজেকে বদলাতে হবে না, তুমি তোমার মতই থেকে যাও, আমি তোমাকে ওভাবে পেলেই খুশি, আমি নাহয় নিজেকে তোমার আদলে বদলে নেবো। এই শোনো না, খিদে পেয়েছে খুউব। একটা হাসি না দিলে কিন্তু কিছুই খাবো না! দাও না একটু হাসি ছড়িয়ে এই চোখে, হৃদয়ে। তোমাকে আমি পুরো পৃথিবীর সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে ভালোবাসতে রাজি আছি। হয়তোবা, আমি ভুল, বাকিরা সবাইই ঠিক। নিজের ভাললাগা নিয়ে কিছু সময়ের জন্য পস্তানোও ভাল। অন্যের ভাললাগাকে নিজের করে নিয়ে সারাজীবন পস্তানোর কী মানে?

অ্যাই পচা ছেলে, আমি কখন বললাম ফোন করতেই হবে আমাকে? আমার মেসেজের রিপ্লাই দিতেই কেন হবে? ধ্যত্‌! তুমি দেখছি আমাকে বোঝোই না! দিয়ো না ফোন। কোরো না রিপ্লাই। দিতে হবে না। শুধু ভালোবেসো। একটুখানি। কী, পারবে না? ফোন দিলেই যদি ভালোবাসা হয়ে যেত, তবে তো হতই। ফোনে যে ভালোবাসার প্রমাণ দিতে হয়, সে ভালোবাসা হচ্ছে টিনএজ-ভালোবাসা। বড় সস্তা ভালোবাসা! দেখেলেই ঘেন্না ধরে যায়! টিনএজ ইঁচড়ে পাকা ছেলেমেয়েদের দেখো না, ভালোবাসার ‘ভ’টাও বোঝে না, অথচ সারাদিনই ফোনে ‘ভালোবাসি’ ‘ভালোবাসি’ বলে-বলে অস্থির করে ফেলে! ওই ভালোবাসায় কী হয়, বলো তো? হয়তো আমাদের দেখা হবে না কখনওই, কথা হবে না এক যুগ, তবু সে এক যুগ পরও যদি ফোন কর একটু সময় করে, ঠিক প্রথমদিনের মত করে করে বোকা মেয়ের মত কেঁদে ফেলে বলে ফেলব, ভালোবাসি! সেদিন কি ফিরিয়ে দেবে? নাকি, চিনতেই পারবে না? ভুল মেরে বসে থাকবে সবকিছু বেমালুম? একটু হেসে বলবে না, ‘পাগলি!’ এখন যেমন বলো? যেদিন আমি থুড়থুড়ে বুড়ি হয়ে যাবো, আমি আমার নাতনির হাত ধরে হাঁটবো, সেদিনও যদি ভুলেও আমাদের দেখা হয়েই যায়, আমায় পারবে না চিনে নিতে? মনেমনে হলেও বলবে না, পাগলিটা! দূর থেকে তোমার চোখদুটো একটু হেসে উঠবে না সেদিন? ঠিক আছে, নাহয় কিছুই বোলো না সেদিনও। ইচ্ছে না করলে হেসোও না। আমি যে কিছুই চাই না তোমার কাছে। শুধু ভাল থেকো। সবসময়ই। আর কিছু চাই না। আমি তো তোমারই মধ্যে মিশেই আছি; জেনে রেখো, সবসময়ই থাকবো। প্রিয়, তোমায় আমি ভালোবাসি বিনিময়ে ভালোবাসা পেতে নয়, তোমায় ভালো না বেসে বাঁচতে পারি না বলেই ভালোবাসি! ভালো নাহয় না-ই বা বাসলে, আমায় মনে রেখো শুধুই ঘৃণায়। তোমায় ভালোবাসি বলেই তো তোমার ঘৃণার চাপটা সহ্য করতে পারি। বাজি ধরে বলতে পারি, তোমায় আমি বুঝতে পারি—তোমার মতন করে। শোনো না, তোমার চোখে একটা নদী আছে। জানতে?

এই যে স্যার, আপনার দেয়া ‘সাতকাহন’টা শেষ করতে পেরেছি! সাথে ‘উত্তরাধিকার’ও। আজ আপনার একটা কবিতা পেলে আমার ভাল লাগবে—নতুন কিংবা আগের। আপনাকে ভালোবাসি। আপনি ভাল থাকবেন। আপনাকে ভাল থাকতে দেখলে অন্তত একজন মানুষ খুব ভাল থাকে। আপনার ভালথাকার মাঝেই সে মানুষটার সব স্বস্তি।

লিখছ, না? আচ্ছা, লিখ। একজন লেখককে প্রেসার দেয়া, বিরক্ত করা মহা অপরাধ। অপরাধী হতে চাচ্ছি না। ভালোবাসি। আসি।

– তোমার ওই গোলগোল চোখের ভেতর যে সত্যিই একটা নদী আছে, তা কি তুমি জানো?

– নাতো, জানি নাতো! আছে বুঝি?

– হুমমম্‌ আছে। মাঝেমাঝে আমার খুব ইচ্ছে করে তোমার চোখের সেই নদীতে সাঁতার কাটতে। তুমি এতো নিষ্ঠুর কেনো গো? কেনো সবসময়ই বঞ্চিত করে রাখো আমায়? কেনো যেতে দাও না সেই ইচ্ছের ধারেকাছেও?

– তুমি বৃথায়ই আমার গোল চোখ নিয়ে পড়ে আছ। পৃথিবীর সকল সৌন্দর্য ধরা পড়ে টানাটানা হরিণীচোখে। বুঝলেন, ম্যাম?!

– বুঝিনি আর বুঝতে চাইও না। তোমার চোখ যেমন, আমার কাছে তেমন চোখই সবচাইতে সুন্দর। এমন নয় যে আমার গোলগোল চোখই ভাল লাগে, তোমার চোখ গোলগোল বলেই আমার গোলগোল চোখ ভাল লাগে। আচ্ছা, তুমি কখনও খেয়াল করেছো আমি তোমার চোখের দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে কী যেন খুঁজি?

– নাহ্‌! কখনও খেয়ালই করিনি। তবে আজ যে কিছু একটা খুঁজছ সেটা টের পাচ্ছি।

– আমি দেখি, তোমার চোখের মাঝে ক্ষুদ্র সেই মণিটা আমায় কতটা মায়ায় আঁকড়ে ধরে রাখে! ভীষণ টানে, জানো? আমি অনুভব করতে চাই আমার মুখের দিকে তাকিয়ে তোমার চোখ কতটা প্রশান্তি খুঁজে পায়! আমি সত্যিই দেখেছি সেই প্রশান্তি তোমার চোখ হতে সারা মুখে ছড়িয়ে পড়তে। সেখানে কোনও ভুল নেই, কোনও মিথ্যে নেই। আমি সে সুখ অনুভব করেছি সবসময়ই। অপূর্ব তোমার চোখ—অপূর্ব তোমার চোখের মায়া।

ভাবনা: দুইশো পনেরো।

……………………………………..

একটা সত্যি কথা বলব, শোনো। তুমি আমার জীবনে আসার পর থেকে অকার্ভের প্রতি আমার আর কোনও আবেগই কাজ করে না। বিশ্বাস করো, এই এতটুকুও না। ওর যে প্রতিটা ছবি আমি সযত্নে হাত বুলিয়ে-বুলিয়ে দেখতাম, ওগুলো এখন আর দেখতেই ইচ্ছে করে না। আমি ওর প্রায় আড়াইশো ছবি মোবাইল থেকে ডিলিট করে দিয়েছি! ভাবতে পারো? আমার সবসময়ই মনে হয়, আমার সবটুকু জুড়ে তুমি আছ, তোমাকে আমি পেয়ে গেছি, তাই আঁকড়ে ধরে রাখি মনেপ্রাণে। আমি তোমাকে নিয়েই বেঁচে থাকতে চাই। একজন মানুষের সাথে সারাজীবন থেকেও যদি সে না-পাওয়াই থেকে যায়, তাতে লাভই বা কোথায়, বলো? আমি তোমাকে পেয়েছি হৃদয়-মাঝে। আমি তোমায় হারাতে দেবো না।

আরেকটা সত্যি বলি? তোমার সন্ধেবেলার হাসিটা কিছুতেই ভুলতে পারছি না। আবারও প্রেমে পড়ে গেছি। হায় আল্লাহ্! আর কতবার তাহার প্রেমে ফেলিয়া আমাকে ক্ষান্ত করিবে? আরেকটা সত্যি কথা, আমার এখন খুব তোমার পাশে বসে ঢুলুঢুলু চোখে মুভি দেখতে আর তোমাকে আদর করতে ইচ্ছে করছে। সাথে কফি আর ঝালমুড়ি হলে একেবারে জমে যাবে! ইচ্ছেটা বেমানান মনে হলে আমি ক্ষমাপ্রার্থী নই। আরেকটা পচা সত্যি কথা………নাহ্‌, এটা বলা যাবে না!

শোনো, খুব ভালোবাসি তোমায়। বকা দিচ্ছ, না? একটা পচা, দুষ্টু, বোকা মেয়ের এই কথাটা বারবার বলতে ইচ্ছে করলে সে কী করবে? তার কী দোষ? তুমি সত্যিই কিছুই বোঝো না। আর আমাকে কিনা এসব শোনার পরও মানতে হচ্ছে। তুমি তো তুমি। আমি তো আর তুমি নই। আমি তোমার মতন স্থির নই, আমি ভালোবাসা লুকিয়ে বাঁচতে পারি না। আমার ভালোবাসার পরীক্ষা নিচ্ছ কেন এতটা তীব্রভাবে! আমি নিশ্চয়ই তোমার থেকেও বেশি প্লান করেছিলাম আমাদের নিয়ে, আমাদের জীবন নিয়ে। আমি সত্যিই বেহায়া। ভাল থেকো। এরকম করে মাঝেমধ্যে কষ্ট দিয়ো। তাহলে আমি আমার ভালোবাসার শক্তিটা চিনতে পারবো বারবার।

তোমাকে কখনওই পাবো না। এটা আমাকে খুব যন্ত্রণা, আরও যন্ত্রণা দেয়। যে আমার কথা সারাদিনেও একবার ভাবে না, আমি কিনা তাকে ছাড়া ভাল থাকতেই পারছি না! নিজেই নিজেকে অনেকদিন জিজ্ঞেস করেছি, কাবেরী, কীসের বিনিময়ে এই কষ্টটা তুই ভুলতে পারবি? উত্তর খুঁজে পাইনি। হঠাৎ মনে হল, কেউ কি ভেতর থেকে চিৎকার করে বলছে না, এ কষ্ট নয়, এ যে ভালোবাসা! ভালোবাসা এমনই!………যাক, বাদ দিই এসব। তোমায় অনেক কিছু বলতে ইচ্ছে করে, অনেক ব্যাপারে সাবধান করে দিতে ইচ্ছে করে, অনেক ভাল-ভাল বুদ্ধি দিতে ইচ্ছে করে। তবু কী যেন এক অদৃশ্য বাধা আমায় আটকে দেয়। যে ভালোবাসায় কোনও অধিকার নেই, সে ভালোবাসা নিয়ে বেঁচে থাকা বড় কঠিন। আমি শুধু জানি, আমি আছি। তবু জানি না, কোথায় আছি, আমার অবস্থানটা ঠিক কোথায়। মানতে বড় কষ্ট হয়! সমস্যাকে বাড়তে দেয়া খুবই ভয়ংকর, আরও ভয়ংকর—সমস্যাটা সমাধান-যোগ্য নাকি অযোগ্য—সেটাই বের করতে-করতে অনেকটা সময় নিয়ে নেয়া। নিজের সাথে নিজের বোঝাপড়ার সময়টা কমিয়ে নিচ্ছি প্রতিনিয়তই তোমার কথা ভেবে, তোমায় ভালোবেসে। নিজের সাথে নিজের দূরত্ব যখন নিজের কারণেই বাড়তে থাকে, তখন না যায় পালানো, না যায় থাকা। সবচেয়ে কম সময়ে সবচেয়ে বেশি চেষ্টা করতে হবে অন্তত সবচেয়ে কম হলেও ভাল থাকতে।

এক বছর হয়ে গেলো, না? সব ভুলে বিশেষ দিনটা বিশেষভাবে কাটুক। দুঃখ? অপ্রাপ্তি? কষ্ট? কোনও ব্যাপারই নয়!

কোনওকিছুই মনের মত হচ্ছে না? সবকিছুই out of control মনে হচ্ছে? ভাঙচুর শুরু করতে ইচ্ছে করছে? I quit! I quit! I quit! বলে গলা ফাটিয়ে চ্যাঁচ্যাঁতে ইচ্ছে করছে?

আহহহহহহ্‌ Wait, Boss! প্রয়োজনে রুমের দরোজাজানালা বন্ধ করে ফুল ভলিয়্যুমে হার্ড রক ছেড়ে চিৎকার করে বেসুরো গলায় গাইতে থাকো, পাগলের মত নাচতে থাকো! নিজেকে টায়ার্ড করে দাও, নিঃশেষ করে ফেলো শক্তির প্রতিটি কণা, ধপাস্‌ করে বিছানায় পড়ে মড়ার মত একটা সেই ঘুউউউউম দিয়ে দাও! তবুও ছেড়ে দিয়ো না! এই আর একটু………ধরে রাখো! God must have a master plan for you! Wait patiently for that! সামনে ভাল কিছু আসছে। Get prepared to grab that!

আসলে ফুল ভলিয়্যুমে বাচ্চু শাফিন জেমস্ হাসান, এবং আরও কিছু ছেড়ে দিয়ে নিজেই মাতাল হয়ে কিংবা মাতালের মতো প্রায় দুই ঘণ্টা নাচলাম!! এখন সবকিছু একদম ফ্রেশ!!!!! Life fucks! I fuck life!! When life fucks you, fuck life!!!!!!!!!

আচ্ছা, কেমন ছিল একটা বছর? যেমন আশা করেছিলে, তেমনই কি ছিল? নাকি ভিন্নতা ছিল? বিয়ে জিনিসটা আসলে কেমন? আর, তোমার কাছেই বা কেমন লেগেছে? যা ভাবতে তা কি হয়েছে? বিয়েটা কতটুকু মুক্তি, আর কতটুকু শৃঙ্খল? নিজেকে কি বদলে নিতে হয়েছে খানিকটা? কিংবা, হচ্ছে? নাকি নিজে স্থির থেকেই চারপাশটাই একটু বদলে নিয়েছ? তোমার ফোনে ভয়েস রেকর্ডার আছে না? রেকর্ডিং-লিস্ট থেকে কয়েকটা ভয়েস রেকর্ডিং দেবে? একটু তোমার ভয়েসটা শুনবো। সেটা যে কথাই হোক, যার সাথে বলা কথাই হোক, যে বিষয়ের কথাই হোক—কোনও সমস্যা নেই। দেবে না?

বেশি ভেবো না। সব ঠিক হয়ে যাবে। অমিতাভ বচ্চনের বাবা হরিবংশ রাই বচ্চনের একটা কথা আমার খুব প্রিয়—যাব তাক জিভান হ্যায়, তাব তাক সাংঘ্রুশ হ্যায়। মানে, যতক্ষণ জীবন আছে, ততক্ষণ ঝামেলাও আছে।

আচ্ছা, তোমাকে একটা প্রশ্ন করি? তুমি তো আমাকে ছাড়া দিব্যি ভাল থাক, তবে আমি কেন তোমাকে ছাড়া ভাল থাকতে পারি না? এই ফালতু জিনিসটার নামই কি ভালোবাসা?

ভাবনা: দুইশো ষোলো।

……………………………………..

চুলে দাউ-দাউ কইরা আগুন জ্বলে—তার উপর কাঁচি চালাইয়া চুল কাটে! নাম ‘ফায়ারকাট’!

বলি, মাথার চুলের আগুনের উপর একখান ফ্রাইপ্যান ধইরা তার মইধ্যে একখান ডিম পোজ কইরা ছেলের গার্লফ্রেন্ড বা মেয়ের বয়ফ্রেন্ডরে খাওয়ানো যায় না!? তাইলেই তো সারাজীবন কইতে পারবো—আমার মাথাডা জ্বালাইয়া খাইছো! হেহেহেহে…………এই হেয়ারকাটের নাম আগে শুনি নাই……দিনেদিনে আরও কত কী যে দেখতে হইবেক!

ছোটবেলায় আমরা দুধভাত খেলতাম না? যাকে খেলায় সত্যি-সত্যি নেয়া যায় না, তাকে মিথ্যে-মিথ্যে নেয়া হতো ‘দুধভাত’ নাম দিয়ে। সে খেলায় মিছেমিছি তাকে খেলতে দেয়া হতো। আর খেলায়, মিথ্যে দান বা চাল দিতে পেরেই সে খুশি হয়ে যেতো। ক্রিকেট খেলায় তাকে ব্যাটিং করতে দিলে সে আউট হয়ে গেলেও আবার ব্যাটিং করার সুযোগ পেত, কারণ সে ‘দুধভাত’। যদি সেটা লুডুখেলা হতো, তবে যে দুধভাত, সে গুটি চালার সময় ‘এক’ উঠলে মন খারাপ করে ফেলে, আবার ছক্কা মানে ‘ছয়’ উঠলে খুশিতে ফেটে পড়ে। কিন্তু হায়! সে তো দুধভাত—তার ১ যা, ৬-ও তা-ই!

বড়বেলায় এসেও অনেকেই সেই দুধভাত খেলা ভুলতে পারে না। জীবনও তার রহস্যময় খেলায় অনেককে এমন দুধভাত করে রেখে দেয়। ওদের মিথ্যে চাল দিতে দেয় মাঝেমধ্যে, আর তাতেই ওরা খুশি হয়ে যায়! তাদের অনেকে জানেই না—তারা দুধভাত হয়ে আছে! তারা দিনের পর দিন মিথ্যেটাকেই সত্যি হিসেবে বিশ্বাস করে জীবন কাটিয়ে দেয়। জীবনের খেলায় থাকতে পারলেই তারা খুশি। আবার জীবনও তাদের খুশি রাখতে তাদের সাথে এই মিথ্যে খেলার নাটক মঞ্চস্থ করে।

সবাইই যে জানে না, না জেনেই ‘দুধভাত’ হয়ে থাকে, তা কিন্তু নয়। কেউকেউ স্বেচ্ছায় দুধভাত হয়ে খেলে যায়। হয়তো জীবনের খেলায় সে হেলার পাত্র, তবু সে বেঁচে তো আছে! তার প্রাপ্তি ওইটুকুই। জীবনের খেলায় সবাইকেই জিততে হবে কেন? আচ্ছা, যখন কেউ সত্যিটা জেনেও চাল দিতে থাকে দুধভাত হয়ে—তখন আসলে সত্যিকারের দুধভাতটা কে হয়? সে নিজে? নাকি, তাকে যে না বুঝেই খেলাচ্ছে, সে?

আপনি খুব ভাল থাকুন, প্লিজ……..

মনে পড়ে তখন আমি সেকেন্ড ইয়ারে কি থার্ড ইয়ারে পড়ি। টিএসসিতে অনুষ্ঠান হচ্ছে। গ্রিনরুমে বান্ধবী চৈতি বলেছিল, নৃ (ও আমাকে আদর করে নৃ বলে ডাকে) তোর তো পেটে কোনও চর্বিই নাই। জামাই আদর করবে কীভাবে? বলা বাহুল্য, চৈতির তখন তেরো বছরের প্রেমের বারো বছর চলছে, মানে, সে পরের বছর ক্যাপ্টেন রবি ভাইকে বিয়ের প্লান ফাইনাল করে ফেলেছে। তাই ওর অমন করে বলাটা জায়েজ ছিল। আর বান্ধবী বলে কথা। (বান্ধবীররা এরকম ফাজলামি করেই, সেটা আমি ভার্সিটিতে এসে একটু-একটু করে জেনেছি।) আমি বলেছিলাম, না করুক সে-ই ভাল; যদিও এ ধরনের মজা করা স্কুল-কলেজের বয়সে আমি চুড়ান্ত অশ্লীল বলে মনে করতাম। ভার্সিটির অনার্স লাইফে আমি অনেক বেশি শুকনা ছিলাম। এতটাই যে, হাড় গোনা যেত। খাওয়াদাওয়া আর নিজের বাহ্যিক সৌন্দর্যচর্চার প্রতি বরাবরই ছিলাম অমনোযোগী, উদাসীন। ওই সময়েই অনুষ্ঠান শেষে কমল নামে মাস্টার্সের এক বড় ভাই, যিনি খুব ভাল গান করতেন, খাবারের টেবিলে বসে এমনভাবে আমার আপাদমস্তক তাকিয়ে একটা মন্তব্য করেছিলেন যে আমি খুবই অপ্রস্তুত হয়ে গিয়েছিলাম। সাথে কিঞ্চিত দু:খিত আর অপমানিতও। অনুষ্ঠানে ফ্যাশন শো’তে বাউলসঙ্গী সেজেছিলাম। হাতে একতারা আর গলায় মালা, মাথায় উঁচু করে খোঁপা বাঁধা, পড়নে গেড়ুয়া শাড়ি। বাউল সেজেছিল অশ্রু। যাই হোক, কমল ভাইয়ের কথায় ছিলাম, বলা বাহুল্য, উনি ছিলেন অতিরিক্ত মোটা আর মাথায় একটা প্রমাণ সাইজের টাকও ছিল। স্টুডেন্ট পলিটিক্স করতেন বলে আমার পছন্দের বাতিল-লিস্টের উনি একজন ছিলেন। যদিও উনার গানের জন্য আমি বরাবরই উনার প্রশংসা করতাম। এখনও করি। উনিও আমাকে ডেকে কথাটথা বলতেন—ম্যাগাজিনে আমার লেখা পড়েছেন, ভাল লিখি, আমি চেষ্টা করলে অনেকদূর যেতে পারবো, এসব বলে বেশ প্রশংসা করতেন। ছাত্র রাজনীতি করতেন বলে ভয়ে এড়িয়ে চলতেও পারতাম না। সেদিন রাতে আমার দিকে আপাদমস্তক তাকিয়ে উনি বলেছিলেন, তুমি তো শুকাইতে-শুকাইতে শেষ। গায়ে কিছুই নাই। খাওয়াদাওয়া কর বেশি করে। হঠাৎ সেদিন যেন আমার সম্বিত ফিরল। কেমন অপমানিত বোধ হল। এরপর ফেসবুক ছাড়া উনার সাথে আর তেমন দেখা বা কথা হয়নি ক্যাম্পাসে। আমার খুব বাজে লেগেছিল এভাবে কেউ বলতে পারে ভেবে। যদিও আমি আস্তে-আস্তে নিজের স্বাস্থ্যের প্রতি যত্নশীল হয়েছিলাম। সেই কমল ভাই আমার ফেসবুকের ফ্রেন্ডলিস্টে ছিলেন একটা সময় পর্যন্ত। আমার ছবিটবিতে লাইক দিতেন। একটা অল্পবয়সী মেয়েকে বিয়ে করেছিলেন আরও কিছুদিন পর। (সেই মেয়ের বাবাকে কোন এক পলিটিকাল নেতাকে দিয়ে ফোন করিয়ে ভয় দেখিয়ে অনেকটা জোর করেই বিয়ে করেছিলেন।) আর তার কিছুদিন পর গণজাগরণ মঞ্চের আন্দোলনের দিনগুলিতে তার কিছু পোস্ট দেখে তাকে আনফ্রেন্ড করে দিয়েছিলাম। যদিও তার কণ্ঠের প্রশংসা আমি আজও করি। ভবিষ্যতেও করবো। মাঝেমাঝে ভাবি, উনি সোজাসাপটা একটা দারুণ সত্য আমার চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছিলেন। যত ভাব নিয়েই আমি চলি না কেন, দিনশেষে সবাই বাইরের ওই দেহটাই দেখে। তাই তারও কিছু যত্নের দরকার পড়ে বৈকি! কাঁটা দিয়ে কাঁটা তোলার মতোই কষ্ট দিয়ে কষ্ট ভোলার চেষ্টায় মনে হচ্ছে আমি পরাজিত। আপনি আমাকে লিখে পাঠিয়েছেন, অনর্থক নিজের অশান্তি বাড়াচ্ছ!—সে প্রসঙ্গেই রাগ করে কষ্ট থেকে এতকিছু লিখে ফেলেছি। আমি ভাল করেই জানি, আপনি আমার জন্য কতটা কম ভাবেন। কিন্তু আমি চাই, আপনি সব কিছু খুলে বলুন, শেয়ার করুন নিঃসংকোচে আমার সাথে। আমি যে আপনাকে আমার সেখানেই রেখেছি, যেখানে কাউকে রাখলে আর কিছুতেই তাকে নিজের অস্তিত্বের বাইরে আলাদা কিছু হিসেবে ভাবা যায় না! সেই আপনি চুপ হয়ে গেলে যে আমার জীবনটাই চুপ হয়ে যায়!

ভাবনা: দুইশো সতেরো।

……………………………………..

উকুন নাকি তিব্বতিদের অতি প্রিয় একটি খাবার! আমাদের দেশের সকল উকুনসমৃদ্ধ পাবলিককে তিব্বতে পাঠানোর ব্যবস্থা করা যায় না?

বাসে ভিড়ের মধ্যে দাঁড়িয়ে থেকে-থেকে যখন ভাবছি, পা দুইটা কোনও বুদ্ধিতে কাঁধে নেয়া যায় কি না, ঠিক তখনই পাশেই সিট খালি হলে সেখানে গিয়ে বসে পড়লাম। পাশের সিটেই এসে বসল এক টাকলা আঙ্কেল। একটু পরই, হঠাৎ মনে হলো, ছোটখাটো একটা ভূমিকম্প হচ্ছে! সিটটা কেমন নড়ে উঠলো! পরে বুঝলাম, না, এ তো ভূমিকম্প নয়—সিটে বসেই, আঙ্কেলের কী যে হলো, পা দুইটা সমানে ঝাঁকাতে থাকলেন! এমনইভাবে পা নাড়াচ্ছেন, আমার পা পর্যন্ত নড়ছে! আমার পা সরানোর মতো আর জায়গাও নেই………হঠাৎ, ওমাগো! কিছুক্ষণ পর দেখি উনিও নড়ছেন!

দৃষ্টি বাইরে—

আআআআআঙ্কেএএএল………আন্টি কি বাপের বাড়ি…….!!??

হাহাহাহাহা……….আঙ্কেলের গন্তব্য কই ছিল কে জানে!? শান্তিনগর মোড়ে বাস থামতেই, উনি ত্বরিতগতিতে নেমে গেলেন!

আহারে বেচারা আঙ্কেল! বাসা পর্যন্ত যেতে পেরেছিলেন তো! নাকি রাস্তায়ই………!!

আচ্ছা শমিক, আমাকে একটাও কথা বল না? তুমি কি ব্যস্ত?

তোমার কিছু কথা আমাকে খুব খোঁচায় মাঝেমাঝেই। দেখো, জীবনের এতটা পথ পার হয়ে এসেছি কোনওদিন এমন ছন্নছাড়া অসংলগ্ন আচরণ আমি করিনি। ইদানিং কি তোমার সাথে বেশিই হ্যাংলামো করে ফেলছি? তুমি কি আমাকে খারাপ ভাবো? এটা বলছি কারণ মানুষ এমন আচরণকে নিশ্চয় ভাল চোখে দেখবে না। তার উপর তুমি বিবাহিত। আমি যে তোমাকে গোপনে বিয়ে করে ফেলেছি সেই জাপানিজ ওয়াইফটার মতন! এটা তো কেউ জানে না।

আমি কি বুড়ি হয়ে ভীমরতিতে পড়েছি? তোমার এমন মনে হয় কি কখনও যে আমি যৌবনজ্বালা মিটাতে না পেরে তোমাকে জ্বালাতন করি? আমার নিজের মাঝেমধ্যে হীনমন্যতা বোধ হয়, কারণ তুমি নিজ থেকে অন্তত বিয়ের পর আমাকে সেভাবে করে আসলেই কখনও নক করোনি।

এসব ভাবলে খুব কষ্ট হয়!

তুমি কেমন আছো, তার বিস্তারিত আমাকে কখনওই জানাও না। মানে তুমি আমাকে একান্ত আপনজন ভাবো না। তুমি লাস্ট কবে বাসায় গেছো? আমি কি জানতে পারি? তোমার ইদানিং আমাকে আত্মসম্মানবোধহীন আর ভীষণ ছ্যাঁচড়া মনে হয়, তাই না? নাকি ভীষণ বাজে একটা মেয়ে মনে হয় যে তোমার সংসারে নাক গলানোর জন্য উদগ্রীব! ভীষণ অসংযমী উটকো কেউ! এরকমই তো ভাবো আমাকে, তাই না?

বিশ্বাস কর, আমি আসলেই তেমনটা কোনওদিনই চাই না। তোমরা তোমাদের মতই ভাল থেকো সবসময়! আমি কেবল তোমাকে ছাড়া ভীষণ অসহায়বোধ করি, এই জন্য তোমার প্রতি মুহূর্তের খবর জানতে চাই। যদি এতটাই অসংযমী হতাম, তাহলে এতদিন এভাবে থাকতে পারতাম, বলো?

কাল যখন বাসায় ফিরছি সন্ধ্যায়, ওই চাঁদটা দেখতেই তোমাকে মনে পড়ে গেলো, যাকে দেখি শুধুই দূর থেকে……কখনওই ছুঁতে পারিনে।

ইশ্! হাত-পায়ের তলা জ্বলে যাচ্ছে তাপে। তোমার উত্তাপে মিলিয়ে নিয়ে আরও বেশি পুড়তে ইচ্ছা করছে। এসো, এক সাথে পুড়ে হেমশিখায় ছাই হয়ে যাই।

এই একটা বছরে না চাইতেও অনেক বড়-বড় কিছু উপহারে তুমি আমার জীবনটা সাজিয়ে দিয়েছো; আমার ক্যারিয়ার বাদেই—ওটার কথা বলছি না।

আমার কাছে সবচেয়ে বড় উপহার ছিল তোমার বলা ওই কথাটা—“আমি তোমাকে আমার স্ত্রীর, এমনকি আমার নিজের চেয়েও বেশি বিশ্বাস করি।” এই একটা কথায় যে কী ভীষণ রকমভাবে আমায় তুমি মহিমান্বিত করেছিলে! অথচ যিশুর শিষ্যের মতই আমিই তোমার সবচেয়ে বড় ক্ষতি করে ফেলেছি, তাই না? যদিও তুমি বলেছিলে, “কিছুই হয়নি। যা হওয়ার, তা-ই হয়েছে।” কিন্তু তবুও সেই হওয়ার সাথে কোনও না কোনওভাবে আমিও যে জড়িয়ে গিয়েছি অজান্তে! আর তাই হয়তো এর শাস্তি পাচ্ছি নিজেও।

মাঝেমাঝে অন্ধকারে হারাই, অন্ধকারেই ঠাই জেগে রই, শান্তি পাই।

……একদিন সত্যিই হারাবো চিরতরে……ফিরবার থাকবে না কোনও তাগিদ। জানি, আমার মতন কাউকে কেউ খুঁজবে না—সেদিনও। কেউই না।

আজকের আকাশ যেন বিষণ্ণতায় মোড়া এক আখ্যানশৈলী। অথচ আকাশই পারে দিনটাকে বদলে দিতে, ভরিয়ে তুলতে ঝলমলে রোদে। এক আকাশ সবকিছু কেমন করে বদলে দেয়, না? আজ বাতাসটা অনেক ব্যথার ভারে স্থির দাঁড়িয়ে আকাশের সমস্ত কান্না বুকে নিয়ে।

তোমার লেখা মিস করছি ভীষণ! কাল ভোরে উঠে আবার সেই জার্নি। একটা নতুন লেখা দাও না, পড়ি! কী করছো তুমি? দেখো আমার উপর বিরক্ত হয়ে থাকলে উত্তর দিতে এসো না। সেও ভাল। এত দূর থেকে তোমার বকা শুনতে আমার খুব খারাপ লাগে।

যদি বিরক্তি কমে থাকে, তবে উত্তরটা দিয়ো।