ভাবনাদেয়ালের পলেস্তারা (৩২শ অংশ)

ভাবনা: দুইশো আঠারো।

……………………………………..

একটা মানুষ কতটা কষ্ট সহ্য করতে পারে? আদৌ কি সীমা আছে তার? আমি তার সর্বোচ্চটা দেখতে চাই—নিজেকে দিয়েই নাহয়! আমার জীবনে তুমি যদি না-ই থাকতে চাও, যদি তোমার জীবনের অংশীদার না-ই হতে দাও, তবে কষ্ট পাই সে-ই ভাল, তবু এমনি করে ভিখারিনি হয়ে আর নয়।

আমি জানি, আমার সহ্য শক্তি কত বেশি! কষ্ট পাচ্ছি, পেলাম নাহয় অনেক বেশি, তবু দূরেই থাকি, সেটাই চাও তো, থাকলামই নাহয় তেমন করেই! তবু থেকেই যাবো কোথাও না কোথাও, মিলিয়ে দেখো। যেদিন থেকে আপন ভাববার অধিকারটা দিয়েছিলে, বোঝোনি তো যে কেউ এমন করেই থাকবে লেগে! যতই ঝড় আসুক, আমাকে কেউ বাধ্য করতে পারেনি এই পরম সত্যকে মিথ্যা বানাতে, দুই পা পিছিয়ে ফিরে যেতে, অথবা অন্য কিছুতে হারিয়ে নতুনকে পেতে প্ররোচিত হতে। আমি সবসময়ই তোমাকে নিয়ে বেঁচেছি, তোমাকে নিয়েই বাঁচব।

আঘাত সহ্য করবারও একটা সীমা থাকে। অন্তত তা বরদাস্ত করবার নির্লিপ্ততা দেখানোর একটা যুক্তিসংগত কারণ তো চাই! সবই বোঝ, আর বোঝ বলেই কি তবু সেই সীমাটা গত এক মাস ধরে এভাবে বারেবারে অতিক্রম করে তা জানিয়ে দিলে? এটা আমিও বুঝি, জোর করে কিংবা একতরফা কোনও সম্পর্কই হয় না এবং এতদিন তা ছিলও না। কোনও না কোনওভাবে সুতোটায় তোমার টানও ছিল। হালকা হলেও এ ভারের কিছু বয়েছিলে ঠিকই, হোঁচট খেলেও ছেড়ে দাওনি কোনওদিন। হঠাৎ ছুটে গেছেও, যদিও দ্রুত তা তুলে নিয়ে বাড়িয়েছিলে টান আরও বেশি। কিন্ত গত একটা মাসে ঘটেছে ভিন্ন অনেক কিছুই। আর তাই একলা টানে সুতোর গুটি নিয়ে যাচ্ছে আমাকে কেবলই দূরে তোমার কাছ থেকে, বুঝতে পারি। এতটা অবুঝও নই আমি! ঠিকই বুঝি। ভালোবাসি বলেই তো সব বুঝেও অবুঝ হয়ে বাঁচি।

আর তাই আমার ভেতরেই সেই ‘আমি’টার ঠাঁই মেলে—না তোমার কাছে, না অন্য কোথাও। আমার নাহয় মান নেই, ওই ‘আমি’টার তো কিছু সম্মান আছে! তার অভিমান তাই হবে না কেন বলো! এমনি করেই ঘরছাড়া হয়ে থাকবে সে, দেখো!

একটা কথা মনে রেখো। আমার সমস্যা কিন্তু আমি একাই সমাধান করতে পারি, তোমাকে সবকিছু বলতাম কেবল আপন ভেবেই। আমার পৃথিবীর বাধাগুলি আমি একা-একাই সরিয়ে চলতে পারি। তুমি ছাড়াও একা চলেছি একটা সময়, একা কীভাবে চলতে হয়, তা আমার জানাই আছে। আমি পারি একাই চলতে, পেরেছি যেমন আরও আগে সবসময়ই। এবার নাহয় নতুন করে আবার হবে। একলাই হাঁটবো সেই পথে যদি তোমার সময় না-ই বা জোটে। আমি ঠিক পারবো। একসময় পারতাম তো! আবারও নিজের শক্তিতে পথ চিনে নেবো। শক্তি তো আর হারিয়ে যায়নি, আমি শুধু ওটাকে কাজে লাগাতে ভুলে গেছি। দেখো, আমি আবারও একলা চলতে শুরু করলে আমার যা প্রয়োজন, তা আমার ভেতরের ‘আমি’টাই আমাকে দিয়ে দেবে।

আমার চাওয়াটা তোমার অংশীদার হওয়া; কাজে, ভাবনায় অথবা অন্য কোনওভাবে। তোমাকে আমার সমস্যা জমা রাখবার বাক্স বানাতে চাইনি, বরং তোমার সকল সমস্যা জমা রাখবার বাক্স হতে চেয়েছি।

আমি নিজের অশান্তি বাড়াচ্ছি? আমার শান্তি কোথায় আছে, কীসে স্বস্তি ফেরে, জানাইনি কি? জানিয়েছি তা বহুবার তোমাকে। তবুও তুমি তোমার ব্যক্তিগত জীবন থেকে আমাকে বিচ্ছিন্ন করে রেখেছো। মন বড় বিচিত্র জায়গা। এখানে আর যা-ই খাটুক, জোর খাটে না। এটকু বোঝার মানসিক শক্তি আমার এখনও আছে। এতটাও অবুঝ নই আমি। সেটা তুমিও জানো। তুমি কি বোঝ আমি তোমাকে কতটা ভালোবাসি? তুমি কি দেখ আমি কী নিয়ে বেঁচে আছি? কেন শুধু আমার বেলাতেই অন্ধ হয়ে থাক? কেন?

আমাকে কি বলবে আমি তোমার কে বা কী? আমি তোমার মনের সঠিক ধারণাটা সূক্ষ্মভাবে জানতে আগ্রহী। নিঃসন্দেহে তুমি আমায় খুব ভালোবাস। কিন্তু আমি তোমার কী, এটা আমার জানা প্রয়োজন। আমি তোমাকে যতটা বুঝি, তুমি নিশ্চয়ই আমাকে তার থেকেও বেশি বোঝো। আমি কেন জানতে চাচ্ছি, বুঝেছ নিশ্চয়ই। আমি চাই না আমার প্রতি তোমার ভালোবাসাটুকু শেষ হয়ে যাক, যদিও আমি জানি, তুমি ধীরেধীরে আমার প্রতি সমস্ত আকাঙ্ক্ষা হারিয়ে ফেলবে! যদি তা-ই হয়, তবে আমি জানি, আমার কী করণীয়। তাই জানতে চাইছি। উত্তর দাও না কেন? চুপ করে থেকো না। আমার এই প্রশ্ন হয়তো তোমার চোখে পাগলামি, কিন্তু আমার কাছে এটাই বেঁচে থাকার অর্থ।

এই কথাগুলি তোমাকে আর কখনওই বলবো না বলে ঠিক করেছিলাম। কিন্তু আজকের নোটগুলো পড়ে বিশেষ করে ‘সবুজ খামের গল্প’টা পড়ে আবারও ইচ্ছেটা তীব্র হয়ে গেল। তোমার সাথে অনবরত কথা বলে যাওয়া। তুমি আমার কাছে নেই, অথচ এই তোমাকে ঘিরেই আমার প্রতিদিনের বাঁচা। তোমার ছবি, তোমার ইনবক্সটা খুলে এপাশে আমি ইদানিং একটাও কথা না বলেও শুধু বসে থেকেই শান্তি খুঁজে নিতে শিখে গেছি। তোমার প্রোফাইলে যাই, মেসেজ বাটনে স্পর্শ করি, আর এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকি। মনে হয়, তুমি আমার কাছেই আছ। যেমনটা মন্দিরে প্রতিমার পদতলে বসে ভক্ত শান্তি খুঁজে পায়, ঠিক তেমনই। আমি এপাশে বসে দুচোখ বুজে অনুভবে তোমাকে পাই, তুমি আমাকে আদর করে দাও। তোমার প্রতিটি ছোঁয়া আমাকে অবিরত ভাললাগায় আচ্ছন্ন করে যায়। আর ওপাশে তুমি নীরবে শুধু তাকিয়ে দেখো। তোমার কথা ভাবতে-ভাবতে তোমার উপেক্ষা হজম করতে-করতে নিজেকে যতই অপাঙক্তেয় মনে হোক না কেন, অপমানে শরীরের রোমগুলো যতই কাঁটা দিক না কেন, এপাশ থেকে আমি তাতেই স্বর্গসুখে ভাসি। আর আমার জীবনের সকল শিক্ষা যেন ধাপেধাপে পূর্ণতায় পৌঁছে যায়।

জানি, তুমি আর কোনও বাড়তি ঝামেলা চাও না। অথচ তুমিই আমার বাঁচার একমাত্র অনুসঙ্গ হয়ে গেছ। অবশ্য যে এভাবে বাঁচে, সে মরে গেলেই কী-ই বা ফারাক পড়ে!

কতদিন হয়ে গেলো আমার নামটা ধরে পর্যন্ত ডাকো না তুমি আর!

মা বলে, যে ভুলের জন্য শাস্তি পায় না, সে কখনও উন্নত হতে পারে না। আচ্ছা, আমি কি ভুল করছি? আমি কি খুব বড় কোনও শাস্তি পাবো? আমার ক্ষেত্রে উন্নত হওয়ার মানে কী?

ভাবনা: দুইশো উনিশ।

……………………………………..

তুমি কি জানো, তুমি আমার উপর মানসিক চাপ সৃষ্টি কর? আমি গত চার সপ্তাহ ধরে একটা কাজও ঠিকমতো করতে পারিনি। আমি শনিবার ভার্সিটিতে আসি, সেদিনের ক্লাস তো করিই না, উল্টো বাসায় এসে কী কী করেছি তার একগাদা মিথ্যে বয়ান দিই, এটাও কোনও সমস্যা না। রবিবার ক্লাস শেষে ঘুম, এরপর একটুখানি পড়াশোনা। তারপর সোমবার থেকে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত তুমি প্রেশার দাও লাবণ্যকে ফ্রাইডেতে তোমার সাথে ঘুরতে যেতে রাজি করানোর জন্য! আমি আর কিছুই করতে পারি না। কীভাবে ওকে রাজি করানো যায়, সে বুদ্ধি বের করতে-করতে আমার সব সময় চলে যায়। সত্যি বলছি, এর মত জঘন্য কাজ আর নাই। তুমি হয়তো জানো না কতটা ছোট হতে হয় ওর কাছে, কতটা তেল দিতে হয় ওকে। আমি তবু সবই করি তোমার ইচ্ছেপূরণের জন্য। ভয়ও কাজ করে যদি আমি এটা না করলে তুমি আমার সাথে যোগাযোগ বন্ধ করে দাও! তোমার জন্য আমি কিছু করতে না পারলে আমার কতটা খারাপ লাগে, বুঝ? প্রচণ্ড ভালোবাসি তোমায়। আমাকে সেদিন মিথ্যেবাদী বললে, আমি নাকি লাবণ্যের সাথে কথা না বলেই তোমাকে বানিয়ে-বানিয়ে কী কী সব বলি, আমি হেসেছিলাম শুনে। তুমি খুব বড় মাপের মানুষ। কিন্তু নিশ্চিত জেনো, আমার ভালোবাসার মাপ তার চেয়েও বেশি। আমি প্রতিবার প্রতিমুহূর্তে তোমার প্রেমে পড়ি। প্রেমেপড়া এক জিনিস, আর ভালোবাসা আরেক জিনিস। আমি তোমাকে খুব ভালোবাসি। তুমি যা ইচ্ছে কর, কিন্তু কখনওই আমাকে ছোট করে কিছু কোরো না, কিছু ভেবো না। আমি কোনওদিন তোমার যোগ্য ছিলাম না, আজও নেই, আর হতেও পারব না। আমি নগণ্য, তা-ই থাকি। আমি খুব বেশি ভাগ্যবতী যে তোমার ভালোবাসা একটু হলেও পেয়েছি। মুখেবলা ভালোবাসা গ্রহণ করা এক জিনিস, আর নীরব ভালোবাসা বুঝে নেয়া আরেক জিনিস। আমি তোমার ভালোবাসা বুঝতে পারি। আর বুঝতে পারি বলেই আমার সবচাইতে কাছের বান্ধবীকে নিয়ে তুমি যে স্বপ্ন দেখছ, সেটা পূরণেও তোমাকে সাহায্য করছি। নিজের হাতে নিজের ভালোবাসার মানুষকে অন্যের হাতে তুলে দিতে কেমন লাগে, জানো? আমি সেই কাজটাই করার চেষ্টা করে যাচ্ছি। এ যে কতটা কষ্টের, তুমি তা কোনওদিনই জানবে না।

একটা কথা বলব? তোমার বাসার রান্নাঘরের বারান্দাটা আছে না? ওপাশ দিয়ে কিছু ফেললে কোনও সমস্যা নাই। কেউ কিছু দেখবে না, বুঝতে পারবে না। তুমি আমার দেয়া টিশার্টটা ওদিক দিয়ে ফেলে দিয়ো। আমি আপনাকে অনেক ভালোবাসি, স্যার।

আচ্ছা, তুমি সারাদিন কী করছো আমার জানতে ইচ্ছা হয় না বুঝি! আমাকে বলতে একদম ভাল লাগে না তোমার সেটা তো বুঝি। এজন্যই এমন বাঁকা-বাঁকা আর কাঠখোট্টা উত্তর দাও। “আমি ভাল আছি, তুমি ভাল থেকো, বাসার সবাই ভাল আছে। আর কিছু বলতে হবে?” তুমি এমন করে উত্তর দেয়া কার কাছ থেকে শিখেছ? এসব কী? “আমি ভাল আছি। তুমি কেমন আছো?” এসব প্রশ্ন-উত্তরের সম্পর্ক তোমার সাথে আমার না। আমি চাই তোমার সারাদিনের খুঁটিনাটি ঘটনার বিবরণ। সেটা অবশ্য এক কথায়, এক শব্দে হতেও পারে যদি তুমি ব্যস্ত থাকো। কিন্তু তা কখনওই এমন ছকেবাঁধা রোবোটিক উত্তর হবে না। তোমার বলা সেই একটা শব্দও বলে দেবে অনেক গল্প, অনেক কথা, আর বুঝিয়ে দেবে অনেক-অনেক অনুভূতি। এইটুকু তুমি বোঝো না?

লাবণ্য নাকি তোমার সাথে কথা বলে না? তোমরা দুজনেই অনেক অভিমান করে আছো একজন আরেকজনের সাথে। আচ্ছা, আজকে ওর মানটা তুমিই ভাঙাও না। ও তো ছোট মানুষ, তাই না? একটু আগে তোমাকে যে ছবিটা দিলাম, সেটা ওর কাছ থেকেই পেয়েছি। ছবিটায় দুজনকে কত মানিয়েছে, দেখো। তুমি তো মান ভাঙিয়েছোই কতবার! আর একবার না হয়……! ও ভুল হয়তো করেছে, তাতে কী? তুমি ওকে ক্ষমা করে দিতে পারো না? আমার তো তোমাকেই আদর দিতে ইচ্ছা হচ্ছে। তোমার ওই হাত দুটোয়, তারপর কানের লতিতে আর…………আর ভাবতে পারছি না, কী এক আদরে চোখের পাতা এক হয়ে যেতে চাইছে, শ্বাস ঘন হয়ে আসছে, গায়ের সবকটা লোম দাঁড়িয়ে গেছে, ঠোঁট কাঁপছে ক্রমাগত!…………আমি খুব বাজে, তাই না?

মেয়েদের ঘরের বাইরে কাজ করার সবচেয়ে বড় বিড়ম্বনা কী, জানো? তাদেরকে ঘিরে কিছু পুরুষের অযাচিত এক্সাইটমেন্ট! কর্মক্ষেত্রে নাহয় তা দেখেও না দেখার ভান করে চলা যায়, কিন্তু সবচেয়ে বড় সমস্যাটা হয় পাবলিক ট্রান্সপোর্টে। না পারা যায় বলা, না পারা যায় সওয়া! যখন স্পষ্টতই পাশের পুরুষ যাত্রীটির এক্সাইটেড অবস্থা ধরা পড়ছে শরীরের ঘ্রাণে আর আলতো স্পর্শে, তখন…………! টোটালি আনএক্সপেক্টেড! নিজেকে তখন যতটা পারা যায় ঢেকে সংকুচিত সংবৃত রেখে ঝিম মেরে বসে থাকতে হয়। যে মানসিক চাপ সহ্য করে সময়টা পার করতে হয় দূরপাল্লার যাত্রায়, তাতে মাঝেমধ্যে ইচ্ছা হয়, পাশের সিটের ভাড়াটাও দিয়ে ওটা ফাঁকাই রাখি! কেবল সামর্থ্যে কুলায় না বলে তা করতে পারি না। মেয়েদের এ কষ্ট কেউ কখনও বুঝবে না। যেসব মেয়েকে ঘরের বাইরে চলাফেরা করতে হয়, এবং যেসব মেয়ে পুরুষদের এমন অভব্য আচরণের প্রতিবাদ করে, এ দুইয়ের অনুপাত কত হবে? খুব বেশি হলে হান্ড্রেড ইসটু ফাইভ! পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ আত্মরক্ষার কৌশলগুলিও যদি আমাদের মেয়েদের শিখিয়ে দেয়ার ব্যবস্থা করা হয়, তবুও ওরা এ নির্যাতনের হাত থেকে রেহাই পাবে না। কেন পাবে না? দুটো কারণে। এক। সেসব কৌশল যারা শিখতে রাজি হবে, কিংবা সে সুযোগ যারা গ্রহণ করতে পারবে, তারা হয়তো সেই ভালনারেবল গ্রুপের, মানে ওই গ্রুপের কথা বলছি যাদের রাস্তাঘাটে পুরুষদের এমন লালসার শিকার হতে হয় প্রতিনিয়তই—মাত্র ৫%, বা তারও কম। দুই। মেয়েরা যতই আত্মরক্ষার কৌশল শিখুক না কেন, যারা শিখবে তারা ওসব পুরুষরূপী জানোয়ারদের ঠিক সময়ে ঠিক উপায়ে সত্যিই প্রতিহত করতে পারবে বড়জোর ৩০% ক্ষেত্রে। মেয়েদের আত্মরক্ষার কৌশল শিখিয়ে এমন যৌন নির্যাতন প্রতিহত করার পরিকল্পনা ইউটোপিয়ান স্কিম মাত্র—শুনতে দারুণ লাগে, কিন্তু কোনও কাজের না। আমি এ চিত্র পুরো বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে তুলে ধরেছি। যতদিন পর্যন্ত আমাদের মানসিকতায় পরিবর্তন না আসবে, ততদিন পর্যন্ত কোনও বুদ্ধিতেই এ সামাজিক যন্ত্রণা থেকে মুক্তি সম্ভব নয়। যদি কিছুটাও সম্ভব হয়, তবে তা হতে পারে এ বিষয়ক কঠোর আইন প্রণয়ন ও তা সঠিকভাবে বাস্তবায়নের মাধ্যমে। পথের ক্লান্তি, গাড়ির ঝাঁকুনি, রাস্তার ধুলোবালি, জ্যামের বিরক্তি—কিছুই আমাকে বিপর্যস্ত করে না, কেবল এই অনাকাঙ্ক্ষিত পুরুষালি উত্তেজনার কারণ হওয়া ছাড়া।

একটা ব্যাপার খেয়াল করেছ? প্রতিক্রিয়া একই—যার কাছ থেকে চাচ্ছি, তার কাছে পেলে নিজেকে মনে হয় পূর্ণ, আর অযাচিত হলেই সেটাকে বোধ হয় গ্লানি! কী অদ্ভুত, তাই না?

ভাবনা: দুইশো বিশ।

……………………………………..

এই শোনো, আমি কিন্তু তোমার ‘তুমি’কে ভালোবাসি, তোমাকে নয়।

সেদিন সন্ধ্যা থেকে কী যে অস্থিরতা কাজ করছিল! রাত সাড়ে আটটা থেকে আমি যেন আর শ্বাস নিতে পারছিলাম না। চাবি নিয়ে চলে এলাম ছাদে। খোলা আকাশের বিশালতাও আমার চারপাশের চেপেধরা জগৎটাকে হার মানাতে পারছিল না যেন! অগত্যা এই কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হই। আজকের এই শুভক্ষণেই তোমাকে কবুল করে নিতে হবে, এটা ভাবতেই বুকটা হালকা হয়ে গেল। ওযু করে বসে পড়লাম জায়নামাজে। তোমাকে আমি সমাজস্বীকৃত উপায়েই নিজের করে নিয়েছি—হোক গোপনে, তবু নিয়েছি তো!

কোনও-কোনও পতঙ্গ নাকি তার সঙ্গীর সাথে একবার মিলিত হয়েই মারা যায়! ভেবে দেখো, তার সারাজীবনের প্রস্তুতি কেবল ওই মিলনের জন্যই। এরপর আর কিছুই থাকে না, শুধুই বিশুদ্ধ শূন্যতা। তোমায় আমি একবারই পেয়েছি। তবু সেই সুখস্মৃতি নিয়ে আমি নীরবে অভিমানে নিভৃতে বেঁচে থাকতে পারবো অনন্তকাল, যেমনি করে একজন মৃত মানুষ সারাজীবন বেঁচে থাকে।

বাইরে বের হলেই, আম্মা সবসময় বাচ্চাদের মতো করে এটাসেটা নিয়ে আসতে বলে…যেমন আইসক্রিম, চিপস্‌, চকোলেট, বার্গার, চিকেনফ্রাই, তেহারি, ফল, এসব। অনেক সময় আনি, অনেক সময় মনে থাকে না, অনেক সময় আবার সেই একটা পার্ট নিই……..

এত কিছু আনতে পারবো না! আমার হাত কি দশটা? অমুক আজাইরা জিনিসটা আনবো হুদাই—টাকা লাগে না!? কিংবা বলি, আমি যেদিক দিয়ে আসছি সেখানে, যেটা আনতে বলছেন সেটা পাওয়া যায় না। বা বলি, তিনশ টাকা দিয়া বার্গার না খাইয়া ১০ টাকার বনরুটি দিয়া তরকারি থেকে একপিস মুরগির রান নিয়া খাইয়া ফেলেন! ফ্রেঞ্চফ্রাইয়ের কথা বললে বলি, ১টা আলু ভাজা ২০০ টাকা দিয়া কিননের কোনও মানে আছে নাকি!? আমিই আলু টুকরা কইরা তেলে ভাইজ্জা খাওয়ামো নে—যান! হে হে হে……..

আম্মা অনেক সময় চুপচাপ শুনে যায়, আবার অনেক সময় রাইগামাইগা বলে— অই! আমার টাকা দিয়া আমারে কিননা দিবি, আবার আমারেই টাকার হিসাব দেখাস!? তুই ইনকাম করস!? কিপটা মাইয়া কোথাকার! এইডা আমার ঘরে কেমনে হইলো!?

হে হে হে……তিনি ঠিকই বলসেন……আমাকে একটু কিপটামিই করতে হয়……বাসার সবগুলা মানুষ লাগামছাড়া, তাই ওদের লাগাম ধরে রাখতে আমাকে সবসময় যথেষ্ট কিপ্টাই সাজতে হইসে…….হে হে হে……

সে যা-ই হোক……আজকে বলে দিসে—বিশাল বড়বড় কলা যেন নিয়ে আসি। কলা কিনতে গেলাম। কলা কিনতে-কিনতে তিনজন ফকিরকে টাকা দিয়ে বিদায় করলাম। ফকিরকে টাকা দিলে ওরা একেএকে আসতেই থাকে। এর মধ্যে এক বাচ্চা আসলো। কলা বিক্রেতাকে আমার কেনা কলাগুলো থেকে বাচ্চাটাকে একটা দিতে বললাম।

বিক্রেতা কলাগুলোতে রশি বেঁধে আমাকে দিতে চাইলেন। বললাম, এভাবে না, ব্যাগে দেন। তিনি আশেপাশের দোকান থেকে খুঁজেটুজে কিছুক্ষণ পর পলিথিন নিয়ে তাতে দিলেন। বললাম, এভাবে না, কলাগুলো পেপার দিয়ে মুড়িয়ে, পলিথিনে দেন! তারপর দুইজন মিলে কলা পেপার দিয়ে মুড়িয়ে কষ্ট করে পলিথিনে ভরলেন। এত কাহিনি দেখে বিক্রেতার সাথের লোকটা জিজ্ঞেস করলেন, এত প্যাকেট করার কী হইলো!?

বললাম, রাস্তায়, আমি বড়জোর ৩/৪ জন ফকিরকে চাইলে কলা দিতে পারবো, কিন্ত রাস্তার গরীব অনেকেরই হয়তো তা দেখে কলা খেতে ইচ্ছে করবে। কিন্তু আমি তাদের সবাইকে দিতে পারবো না। কাজেই, যে খাবার আমি সবাইকে দিতে পারবো না, সে খাবারের লোভ সবাইকে দেখানোও আমার ঠিক হবে না।

কলা বিক্রেতার প্রচণ্ড বিরক্তিভরা মুখটা নিমিষেই হাসিমুখ হয়ে গেল।—ঠিক, ঠিক, ঠিক! আপনি ঠিকই কইসেন, আপা।

আমি প্রায়ই দেখি, রাস্তায় মানুষজন এটাসেটা কিনে নিয়ে যায়, আর একশ্রেণীর গরীব মানুষ বা রাস্তার ভিক্ষুকরা ওই খাবারের দিকে খুব মনখারাপ করে তাকিয়ে থাকে। তখন আমারও মনটা খারাপ হয়ে যায়। হায়, কারও মধ্যে একইসাথে দারিদ্র্য ও মানবিকতা থাকা ঠিক নয়।

শুনো, বাংলাদেশে যতগুলো খালবিলে শাপলা ফুটেছে সবগুলো আমার নামে লিখে দাও। প্লিজ, দাও না! বিনিময়ে আমি তোমাকে আমার প্রিয় আমগাছটা দিয়ে দেবো। সত্যি! ওই গাছে সূর্যপুরী আম ধরে—মধুর মত মিষ্টি সে আম!

তোমার টেক্সট পেলাম। মন ভাল হয়ে গেছে! এখন থেকে আমি শুধুই নীল রঙের শাড়ি পরব। নীলে আমাকে মানায়, আগে জানতাম না। কেউ বলেনি তো কখনও! তুমি বলেছ, অতএব, সেটাই সত্যি।

জনাব, ভালোবাসি আপনাকে!

আমি তোমার চোখে আমার জন্য ভালোবাসা দেখেছি! আমার এ চোখ ভুল দেখতে পারে না!

জানো, ৯ বছর ধরে এক দাদার সাথে কথা বলতাম—অনিঋত দাদা। ফোনে, মেসেঞ্জারে। কখনওই উনার সাথে আমার দেখা হয়নি। গত ৫-৬ মাস ধরে আমাদের কথা হয় না। আজ সকালে জানলাম, তিনি ২ মাস আগে মারা গেছেন। খুব কষ্ট হচ্ছে মেনে নিতে। আমাদের জীবনটা কত ঠুনকো, তাই না?

ভাবনা: দুইশো একুশ।

……………………………………..

কী অদ্ভুত! তোমাকে বলেছিলাম না, আমি ঠিক বুঝে নেবো? আমি ১৭ তারিখ রাতে তোমাকে ঠিক যেভাবে কল্পনা করেছিলাম আজ ছবিতে সেভাবেই দেখতে পেলাম, এমনকি সুখজয়াকেও। সেই শেরওয়ানি, লাল ধুতি, সেই নাগরাই; সুখজয়ার লাল শাড়ি, মাথার টোপর—সব দেখেছি কল্পনায়। তোমার বিয়ের আগেই দেখেছি। সত্যি। সব মিলে গেছে। জানো, দেখে বড় ভাল লাগল। আচ্ছা, আমাকে ভিডিও দেখাবে না?

সেদিন কিছু কথা লিখেছি। পড়বে?

শুভ বিবাহসায়াহ্ন

আজ ১৭ মার্চ ২০১৪

আজ সেই মানুষটার বিয়ে, যাকে ভালোবেসে একটাসময় আমি আমার একাকিত্বের সময়ে নেয়া সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসি। যা হয় হয়তো ভালর জন্যই হয়।

ঠিক সেই মুহুর্ত থেকে আমি তাঁর হয়ে উঠি পুরোপুরি। ধ্যানে, জ্ঞানে, শয়নে, স্বপনে আমার সেই একজন ছাড়া দ্বিতীয় আর কেউ ছিল না, আর আজ এই মুহুর্ত পর্যন্তও নেই।

ঠিক আর তিরিশ মিনিট পর লগ্ন শুরু হবে। আজ যে মন্ত্র পড়া হবে তোমার মন্দিরে, এই মাহেন্দ্রক্ষণে এইখানে বসে তা উচ্চারিত হবে আমারও কন্ঠে। আজ থেকে তুমি আমার হয়ে রইলে অন্যভাবে। সুখেদুঃখে, প্রতিটি স্পর্শে।

আমি প্রার্থনায় আছি, থাকবো, দেবদত্ত!

লগ্ন জানাটা আমার জন্য খুব জরুরি ছিল। তুমি সেটা আমাকে জানিয়েছো। আমি তাতে অনেকটা ভারমুক্ত হলাম। আমার আর কোনও রাগ অবশেষ রইলো না। এখন থেকে জয়ার সাথেই পাবে আমাকে। ওর যত্ন তাই দ্বিগুন করে নিয়ো! নইলে আমার ভাগটা পাব কেমন করে? ওর চোখে চেয়ে দেখো, আমাকেও পাবে ওইখানে। প্রার্থনা করি, সিদ্ধান্তগুলো ও যেন নিতে পারে আমার মতই। তোমার সকল কাজের সঙ্গী থাকুক আমার মতই। ওকে ছুঁয়ে দেখো, পাবে আমাকেই। তোমার সকল কষ্ট আগলে নেবে ও আমার মতই। তুমি ওকে ভালোবাসা দিয়ো অনেক, তা ঠিক পৌঁছে যাবে আমার কাছে।

আজ থেকে এক নূতন জীবন শুরু হল—তোমাদের, আমার—আমাদের। আমাদের এই একাত্মতা ঘুচবে না কোনওদিনও।

দুইটা প্রশ্নের উত্তরে আমাকে মুখে একটা বলতে হয়, আর মনে আর একটা রাখতে হয়, যা প্রচণ্ডভাবে আমার স্বভাববিরোধী আচরণ। আর এই টানাপোড়েনে আমার নিজের স্বতঃস্ফূর্ত জীবনটা দিনকে দিন কেমন যেন ঘোলাটে হয়ে যাচ্ছে। এই যে এতদূর এসেছি জীবনের পথটা পাড়ি দিয়ে—আমারই তো জীবন! তাই দূরত্বও মাপি নিজের মতন নিজের জীবন দিয়েই অন্য কারও সাথে তুলনায় না গিয়ে। পথ যেটুকুই হোক, পার হতে তো হয়েছেই। হ্যাঁ/না—সোজাসাপটা কিন্তু সবচেয়ে কঠিন অমন উত্তরেই এগিয়েছি এতদিন।

কিন্তু এখন আর সে উত্তর বয়ে বেড়াতে পারছি না যেন। শুধুই একটা স্বপ্নে থেকে যাওয়া। থাকতে সমস্যা নেই, সমস্যা—মাঝেমধ্যে নিজেকে কোথায় যেন হারিয়ে ফেলা!

প্রশ্ন দুইটা বলি—

১। ভাইয়া কী করেন?

২। পছন্দ আছে?

উত্তর জানো। তোমারই জানার কথা। কারণ, তোমার সাথেই শেয়ার করি। প্রথমটার উত্তর, ভাইয়া ব্যবসায়ী। এরপর অবধারিতভাবে যে প্রশ্নগুলো আসবে, বুঝতেই পারছো, তার উত্তর কী হবে, কী দিই……।

কিন্তু হায়, বলতে হয়, মুখে একটা হাসি টেনে……জ্বি, আমি এখনও অবিবাহিতা।

পরের প্রশ্নের উত্তর হচ্ছে, পছন্দ আছে। খুব বেশিই পছন্দ! যার জন্য সারা বাংলাদেশের সব পাত্রই ম্লান হয়ে যায় আমার চোখে। সে কে সেটাও তুমিই জানো। জানিয়েছি তোমাকেই, আমার পছন্দ তোমাকে সরাসরিই বলেছি। কী? বলিনি তোমাকে?

এক্ষেত্রেও আমাকে মুখ শুকনো করে বলতে হয় বাইরের সবার কাছে……না, কোনও পছন্দ নেই।

আমি জানি আর হয়তো সাত থেকে দশ বছরের মাথায় আমাকে এই প্রশ্ন দুইটা শুনতে হবে না। তবে যেটা মাঝেমধ্যেই আমাকে ভীষণভাবে যন্ত্রণা দেবে তা হল, আপনার বাচ্চারা কী করে?

তুমি আমাকে বলে দিয়ো, ঠিক কখন কী করতে হবে। নিজের ভার নিজে বইতে-বইতে কখনও এই ইচ্ছা তো হতেই পারে—যাকে চাই তেমন কেউই হাতটা ধরুক, ভারটা কমুক। আমার ভাবনাটা সেও একটু হলেও ভাবুক!

তার দুইদিন আগে যা লিখেছিলাম………

সুপ্রভাত, বিয়ের বর!

খুব উত্তেজিত, তাই না? আমি তো তোমার বিয়েতে আসতে পারছি না, তুমি দাওয়াতও দিয়ে দেখলে না। আর এদিকে আমার সেমিনারের ডিউটি পড়ে গেল ওই দিনই। মানুষকে তো আগে থেকে জানাতে-টানাতে হয়, নাকি? তবেই না সময় ম্যানেজ করা যায়! যাক গে! অদৃশ্যভাবে সবসময়ই তোমার সকল ভাল কাজেই আমি পাশে আছি, আর খারাপ কাজকে ‘না’ও করেছি, জানো তো?

ওর কি আজকে গায়ে হলুদ হবে? তোমারটা কি আগামীকাল? আমাদের এভাবেই হয় সাধারণত।

ইসস্‌! দেখতে খুব ইচ্ছা হচ্ছে……….

অনেক সুখী হও তোমরা! সারাজীবন এমন বর্ণিল আর সকলের আশীর্বাদ ঘিরে থাকো।

আমি তোমাদের সাথে সবসময়ই আছি। আমার যা কিছু, সবই তোমাদেরও। নাহয় কোনওকিছুতেই পূর্ণতা খুঁজে পাবো না আমি।

ভাবনা: দুইশো বাইশ।

……………………………………..

(বকা দিবেন না, ঠিকাছে?)

কয়েকদিন থেকেই অন্তর্দ্বন্দ্বে ভুগছি। মনের ভেতর যে ঝড়টা তোলপাড় করছে, তার কোনও সমাধান খুঁজে পাচ্ছি না। কিন্তু, এই ঝড়টাই বা কতটা যুক্তিসঙ্গত? মনের একদিক বলছে, ঠিক হচ্ছে না; অন্যদিক বলছে, কোনও ভুল হচ্ছে না। কী করা উচিত আমার?

তুমি জানো, তোমাকে আমার কতটা ভাল লাগত, ভাল লাগে?

আমার বয়ফ্রেন্ডের সাথে যখন ব্রেকআপ হল, প্রচণ্ডভাবে ভেঙে পড়ি। একা, নিঃসঙ্গ হয়ে পড়ি, অনেকটা নিজের ইচ্ছাতেই। কারও কথাই, একটুও কোলাহল ভাল লাগত না। তখন একদিন, ভার্সিটিতে তুমি এলে আমাদের সাহিত্য সংগঠন ‘চিলেকোঠা’র আমন্ত্রণে। অথচ, আমি সেদিন কী এক ব্যস্ততার কারণে তোমার কথা শুনতে যাইনি। অত মানুষজন, কোলাহল, কোনওটাই পছন্দ ছিল না। আমার তো ভাল লাগে একা থাকতে, স্রেফ নিজের সঙ্গটা। আর, সবচে বড় সত্যি কথা কী জানো, আমি না তখন তোমার নামও শুনিনি, কোনও আইডিয়াই ছিল না তুমি কে। ভেবেছিলাম, কোন টাক-মাথা, পেট-মোটা, বুড়ো লোক কিছু উপদেশ দিতে আসবে। হাসবে না, সত্যিই সেটা ভেবেছি। তারও কিছুদিন পর ইউটিউবে ভিডিও সাজেশনস্‌-এ আসল—চিলেকোঠায় চিত্রাঙ্গদ। বসেই ছিলাম একা। ভাবলাম যে দেখি একটু। সেই শুরু, টানা শেষ না করে স্ক্রিন থেকে চোখ সরাইনি। কী অদ্ভুত! অন্যরা সবাই হয়তো তোমার প্রতিটি কথা খুব মনোযোগ দিয়ে শুনছিল। আর আমি! অবাক নয়নে শুধু তোমার দিকেই তাকিয়ে ছিলাম। তোমার চাহনি, কথা বলার ভঙ্গি, তোমার হাসি আমাকে চুম্বকের মত টানছিল। স্টেজে তোমার প্রতিটি পদক্ষেপ গুনছিলাম।

(অফটপিক। প্রতিভা বসুর মহাভারতের মহারণ্যে-তে পড়েছি, “চিত্রাঙ্গদ অতিশয় বলবান ছিলেন, অত্যন্ত দাম্ভিকও ছিলেন। সকলকেই নগণ্য জ্ঞান করতেন।” কিছু মনে কোরো না, তুমিও কি অমন নাকি? আমার, কেন জানি না, তোমাকে একটু ওরকম মনে হয়েছে। আমার বিবেচনা ভুলও হতে পারে। ভুল হলে ক্ষমা করে দিয়ো। আচ্ছা, তোমার নামটা কার দেয়া?)

পুরো ৬ ঘণ্টা ৯ মিনিট ৪০ সেকেন্ড! আমার জীবনটাই পাল্টে দিল। উহুঁ, এটা ভেবো না, তোমার কথা শুনে জীবন গড়তে উঠেপড়ে লেগেছি, কিংবা ভেবেছি আমি এখুনিই ঘুরে দাঁড়াবো। তেমন কিছুই না কিন্তু। কারণ, আমার মন তো আর তোমার কথার দিকে ছিল না, তোমার দিকে ছিল। কী হল জানি না, সম্পূর্ণ অপরিচিত, অচেনা, যার সম্পর্কে কিছুই জানি না, যাকে কখনও চোখের সামনে দেখিনি—তার প্রেমে পড়ে গেলাম। হ্যাঁ, ঠিক তা-ই। হয়ত ভাবছ, কী বাজে মেয়ে রে বাবা, কয় দিন হলো না ব্রেকআপ হলো, টুক্‌ করে আরেকজনের প্রেমে পড়ে গেল! এখন যদি আমি প্রেমে পড়েই যাই, কী করব, বলো! ইচ্ছা করে পড়েছি নাকি? তবে, তোমাকে যদি আরও আগে চিনতাম, তাহলে হয়তো অন্য কারও সাথে সম্পর্কে জড়াতামই না। তোমাকে পাই বা না পাই, তোমার কথা ভেবেই সময় পার করে দিতে পারতাম।

যা-ই হোক, সেদিন তারপর তোমার নাম দিয়ে নেটে সার্চ দিলাম। দিয়ে সত্যিই আশাহত হলাম! এই লোকটা এত পপুলার কেন! ধুউর! এটা কিছু হল? পপুলার না হলে তো একটু কথাটথা বলা যেত! কিন্তু তা আর হল কই! দুনিয়ায় এত মানুষ থাকতে এই লোকটাকেই পপুলার হতে হবে কেন?

তবে ইন্টারনেট হয়ে অনেক সুবিধা! নয়তো তোমাকে দেখতামই বা কই, আর তোমার ছবি পেতামই বা কই!

ইউটিউবে তোমার সব ভিডিও, তোমার ব্লগ, ছবি এসব নিয়েই থাকতাম। আর হ্যাঁ, ফেসবুকে ফলো করে রেখেছিলাম পোস্ট পড়ার জন্য। আমার মাথায় সবসময় যে পোস্টের বিষয়বস্তু ঢুকতো, তা নয়, ঢুকত, এসব তুমি লিখেছ, অতএব, অবশ্যপাঠ্য! তবে কখনও কমেন্ট/লাইক দিইনি ভয়ে, যদি ব্লক খাই! এমনকি একটা মেসেজও না।

ঘণ্টার পর ঘণ্টা তোমার ছবি দেখে-দেখে পার করে দিতে পারতাম। এমন কোনও দিন যেত না, তোমাকে শুভ রাত্রি না জানিয়ে ঘুমাতে গেছি—তবে শুধুই মনেমনে। আমার বয়ফ্রেন্ড আমার অভ্যেস হয়ে দাঁড়িয়েছিল, আর তুমি ভাললাগা, মায়া, প্রেম। আমার যখন খুব মন খারাপ হত, ইউটিউবে তোমার ভিডিও দেখতাম, মনে হত, তুমি পাশেই আছ।

নির্লজ্জের মত কথা বলছি, না? আমায় বেহায়া ভাবছ খুউব?

আচ্ছা ভাবো, সমস্যা নাই। তোমাকেই তো বলছি, অন্য কাউকে তো আর না। মনেমনে তোমায় নিয়ে কতকত কল্পনার বীজ বুনেছি, তুমি ভাবতেও পারবে না। তোমায় নিয়ে বৃষ্টিতে ভিজেছি, সমুদ্রস্নান করেছি, পূর্নিমা দেখেছি……….কী মনে হচ্ছে? পাগলের প্রলাপ? আচ্ছা, ধরে নাও আমি পাগল। এইবার ঠিকাছে?

আমি কখনওই তোমার সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করিনি। কারণ ছিল কয়েকটা।

যেমন ধরো, যদি আমাকে ব্লক করে দাও! সবচে বড় ভয় ছিল এটা। সবাই বলত, তুমি নাকি খুব ব্লক করে দাও দুম্‌ করেই! আর, আরেকটা হল, এমন কাউকে ভালোবেসেছি, যাকে ভালোবাসা আমার অধিকারের মাঝে পড়ে না। না মেনে নেবে সমাজ, না ধর্ম। কিন্তু আমি তো আর কিছু দেখে তোমাকে ভালোবাসিনি, কিচ্ছু না, শুধুই তোমাকেই দেখেছি, আর ভালোবেসেছি—এটা মেনে নিয়েই যে তোমাকে কখনওই পাবো না! তাই দূর থেকেই ভালোবাসতে চেয়েছি তোমাকে। পাওয়ার আশাই যেখানে নেই, সেখানে পাওয়ার চেষ্টা করা বোকামি মাত্র!

যেদিন তোমার বিয়ে হল, আমি কষ্ট পেয়েছি, নাকি খুশি হয়েছি, নিজেই জানি না। কারন, যদিও জানতাম, তুমি থাক ওই আকাশে, তোমার ছোঁয়া কোনওদিনই পাওয়া যাবে না, তবুও বোকার মতন কষ্ট পেয়েছি। আবার বউ নিয়ে সুখী থাকবে ভেবে খুশিও হয়েছি। হিহিহিহি………

বেশিই বকবক করে ফেলছি?

তোমাকে নিয়ে কেউ বাজে কথা বললে খুব মেজাজ খারাপ হত। কয়েকজনের সাথে ইনবক্সে ঝগড়াও করেছি। কারণ, ওই যে বললাম, ভয়ে কখনও কমেন্ট করতাম না। করলে, ঝগড়াটা তোমার কমেন্ট-থ্রেডেই হতো!

সেদিন কেন জানি না, তোমাকে মেসেজ দিয়ে ফেলেছি! কেন, সত্যিই নিজেই জানি না। হয়তো আনম্যারিড কারওর চাইতে ম্যারিড কারওর কাছে প্রত্যাশা কম থাকে, কিংবা থাকেই না। তাই। আমি যে তোমার প্রতি কতটা দুর্বল, তা শিরায়-শিরায় টের পাচ্ছিলাম। তোমার প্রতিটি কথা, নিঃশ্বাস, আমার ভেতর তোলপাড় করে দিচ্ছিল।

এবার একটু চোখ বন্ধ করে পড়ো তো! লজ্জা লাগছে লিখতে।

আমার বয়ফ্রেন্ডের বিশ্বাসঘাতকতার পর থেকে আর কোনও পুরুষের প্রতি বিন্দুমাত্রও শারীরিক আকর্ষণ অনুভব করিনি। এমন নয় যে, সুযোগ পাইনি। মেয়েরা বরং অমন সুযোগের জ্বালায় ও ঠ্যালায় অতি-যন্ত্রণার মধ্যে থাকে! ব্যাপার হচ্ছে, ওটা ভাবলেই বিরক্ত লাগত আমার। সেদিন তোমার সাথে কথা বলার পর কী হল, জানি না। সত্যিই জানি না। হয়তো তুমি আমাকে নির্লজ্জ ভেবেছ। কিন্তু বিশ্বাস করো, আমি আসলে সত্যিই এমন না। আমি খুবই লাজুক স্বভাবের মেয়ে—অন্তত তুমি বাদে সবার কাছে।

তুমি সেদিন বললে না, মনের টান না থাকলে শারীরিক সম্পর্ক হয় না? আমি তো এর মাঝে আমার ভালোবাসার পূর্নতা কল্পনা করেছি। আমার মনে যে কী ঝড় বয়ে যাচ্ছে, কেবল আমিই জানি। কাছে পেয়েও দূরে সরে হওয়ার যন্ত্রণা যে কী, তা লিখে বোঝাতে পারব না।

এ কী হল? এর চেয়ে তো তোমার আকাশই ভাল ছিল। ইচ্ছেমত উড়ে বেড়াতাম, রঙ ছড়াতাম।

আমি কখনওই তোমার ব্যক্তিগত জীবনে প্রবেশ করতে চাই না, করবো না। ভয় পেয়ো না।

বাস্তবে তুমি যারই হও, কল্পনার রাজ্যে তুমি আমার। তবে এও জানি, সেটা শুধুই কল্পনায়।

আমি কোনওদিনই তোমার সামনে আসব না। আমি ভাবতেও পারি না, তুমি সত্যি-সত্যি সামনে এলে কী হবে!

পুনশ্চ। আমার উপর খুব বেশি মেজাজ খারাপ হলে ব্লক করে দিয়েন। আর অল্প মেজাজ খারাপ হলে একটু বকা দিয়েন। আর মেজাজ খারাপ না হলে একটা স্মাইলি পাঠিয়ে দিয়েন। সরি, তুমি করে বলার জন্য। আর এই কথাগুলো কারও সাথে শেয়ার করার মত না, তাই আপনাকেই বললাম। আর সবকিছুর জন্যই ভীষণ দুঃখিত।

ভাবনা: দুইশো তেইশ।

……………………………………..

অবস্থা তো পরিবর্তনশীল। বাজে অবস্থাটা দ্রুত কেটে যাক! কী নিয়ে তুমি এত যন্ত্রণা পাচ্ছ? ভাইবারে কিছু ফুল পাঠিয়েছি। চেক করেছ নিশ্চয়ই। ফুলগুলো দেখেও মন ভাল হয় না? আর ফুলের পাশে পুতুলের মতন ওই ছোট্ট মেয়ে দুটো? ওদেরকে একটু আদর করে দাও। দেখবে, নিজের মনেই হেসে উঠেছ!

এই ছেলে, এটা তোমার সাথে শেয়ার না করে চললোই না, বুঝলে? বদরাগী হনুমান! রাগ কমলে জানাবা আমাকে, বুঝসো?

স্বরোচিষ, তুমি আমার সাথে কথা বলছো না কেনো? কোনও উত্তরও দিচ্ছ না। কী হয়েছে তোমার? একটু বলো না। আমার খুব ছটফট লাগে তো!

আমি কেন তাহলে তোমার সাথে একলাই বকি? তুমি চুপ করেই যদি থাকবে, তাহলে তোমাকে আমার কোনও কথা না বললেও তো চলে, তাই না? কিন্তু এটা আমায় কে বোঝাবে? তুমিই বলে দাও!

সব জায়গা থেকে যেমন সরিয়ে দিয়েছো, এখান থেকেও নাহয় চলে যাই আড়ালে। সে-ই ভাল! মনে করো, আজ বিকেলটাই আমার জীবনের শেষ বিকেল। কী বলো? তোমার জন্য এ জীবনে কত হাজারবার মরে গেছি, তুমি তা ভাবতেও পারবে না। আজকের পর যদি আরও একবার মরে যাওয়ার জন্য বেঁচে না থাকি, তখন কী হবে?

“বিবাহ-বিচ্ছেদে মুক্তি সে আমার নয়, বিবাহ-বন্ধন মাঝে লভিব মুক্তির স্বাদ।“ ~ আত্মজীবনীতে অন্নদাশঙ্কর রায়

আইসিএস-এ প্রথমবারে পঞ্চম। সেবার নেয়া হয়েছিল ৩ জনকে। আবারও পরীক্ষা দিলেন। পরেরবারে প্রথম। উনি লিখেছেন, উনি প্রথম হওয়ার জন্যই আইসিএস দিয়েছিলেন। প্রথম হতে না পারলে ওরকমটা লিখতেন কি না, সেটা নিয়ে ভাবাই যায়। প্রথম হওয়ার জন্য কেউ ওরকম কঠিন পরীক্ষা দিতে পারে নাকি? অন্নদাশঙ্কর অনার্সেও ফার্স্ট ক্লাস ফার্স্ট। আইএ-তেও তা-ই। রবি ঠাকুরকে একটু এদিকওদিক করে লেখা ওপরের কথাটায় জানিয়েছিলেন বিয়ের আগে বিয়ে নিয়ে তাঁর ভাবনা। সুখের বিষয়, তাঁর জীবনে Happily married কথাটি নিছকই অক্সিমোরোন হয়নি। তিনি তাঁর সারাজীবনের সেরা দুই অর্জনের মধ্যে একটিকে বলেছেন, অবাঙালি মার্কিন মেয়ে লীলা রায়কে বিয়ে করা—কিছু-কিছু কারণে . . . . . . .তোমার অভিজ্ঞতা কেমন বিয়ে নিয়ে? বলো না একটু!

আমাদের এক বন্ধু প্রায়ই বলত, বিয়ে করবে না, বিয়ে করবে না। সে নাকি সন্ন্যাসী হয়ে যাবে। পরে অবশ্য আমার সে বন্ধুটি বৈরাগ্যসাধনে মুক্তির পথে যায়নি। বরং, আমাদের মধ্যে সে-ই সবার আগে বিয়ে করে ফেলেছিল। এখন ওর টুকটুকে মেয়েটি ফোনে বলতে পারে, পিসি, তুমি কেমন আছ?

হায়! কখনও-কখনও প্রচণ্ড অভিমান, বাবা হতেও পারত, এমন কাউকেও মামা বানিয়ে দেয়! কী ইন্দ্রজাল! কী রহস্য! স্রেফ ইগোতে কত-কত সম্পর্ক জোড়া লাগার আগেই ভেঙে টুকরো-টুকরো হয়ে যায়। ভুল বোঝাবুঝিতে কত দেরি হয়ে যায়, কত-কত অভিমানী প্রেমিক ভাই হয়ে ফিরে আসে! সাত পাকের বন্ধন পথ হারিয়ে রাখীবন্ধনে উত্তর খুঁজে ফেরে!

হায়! অন্যের গার্লফ্রেন্ডের চাইতে নিজের গার্লফ্রেন্ড ছ্যাঁকা বেশি দ্যায়৷ তাই, গার্লফ্রেন্ড অপেক্ষা মুরগি উত্তম—আর কিছু হোক না হোক, ফ্রি’তে ডিম খাওয়া যায়।

জানা কিছু অনুভব

অকারণ অবহেলায়

অজানায় ফেলে রেখো না…….

ওতে যে পাপ হয়!

যে বোঝে না, তাকে নাহয় বোঝালাম,

যে বোঝে, তাকে বোঝাই কী করে, বলো!

বুঝেও

মিথ্যে ছলের টানে

অবুঝ হয়ে বেঁচো না!

অতোটা ঘৃণায় কেন

রেখেছ বাঁচিয়ে—

আজও জানা হল না।

এভাবে আমায়

বারবার তুমি

স্তব্ধ কোরো না……আমি নিঃশেষ হয়ে যাচ্ছি!

ভালোবাসায় অন্ধ কষ্টমন না হয় ক্ষমা করে দেবে,

কষ্ট যে ক্ষমা করবে না…….

মনে রেখো—কখনওই না!

কষ্টের দয়া তোমার চেয়ে কম।

আমার কষ্ট—তোমায় বাঁধে না, জানি।

তোমার কষ্ট—আমায় ঠেলে না, মানি।

বাঁচতে না দাও, তবু বাঁচিয়ে রেখো—ভালোবাসতে।

বালের অনুভূতি—বালের কষ্ট—বালের ভালোবাসা—বালের মায়া—বালের যতসব ইচ্ছা—বাল যত্তসব!!

ভাবনা: দুইশো চব্বিশ।

……………………………………..

বর্তমান কষ্ট দূর করার একমাত্র উপায়ই হচ্ছে জীবনে আরও কষ্টকে আমন্ত্রণ জানানো। কাজটি সহজ নয়। এ কাজে নিজেকে উৎসাহিত করতে মানুষ অনুপ্রেরণার খোঁজ করে। বিভিন্ন লেখা পড়ে, লেকচার শুনে, ভিডিও দেখে মানুষ অনুপ্রাণিত হতে চায়, কঠোর পরিশ্রমের জন্য নিজেকে মানসিকভাবে প্রস্তুত করতে চায়। দুঃখ যখন মানুষকে বিহ্বল করে দেয়, তখন অনুপ্রেরণা যাদুর মতো কাজ করে।

অনুপ্রেরণার খোঁজে দিগ্বিদিক না ছুটে ধর্মগ্রন্থ থেকে তা খুব সহজেই নেয়া যায়। পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ দার্শনিক গ্রন্থ হল ধর্মগ্রন্থসমূহ। আমরা নির্বোধ বলেই ধর্মগ্রন্থ থেকে জীবনযাপনের প্রয়োজনীয় নির্যাস সংগ্রহ না করে কলহ ও দ্বন্দ্বের উপকরণ সংগ্রহ করি।

আমি ৪টি ধর্মগ্রন্থে সুখ ও দুঃখের পারস্পরিক সম্পর্ক নিয়ে কী বলা হয়েছে, নিচে লিখেছি (গ্রন্থের নামের আদ্যাক্ষরের বর্ণ-ক্রমানুযায়ী)। এই রত্নটুকু যদি কেউ হৃদয়ে ধারণ করতে পারেন, তবে জীবনে কোনওভাবেই তার হতাশ হওয়ার কথা নয়।

আল-কুরআনের চুরানব্বইতম সূরা আল-ইনশিরাহ-র পঞ্চম ও ষষ্ঠ আয়াতে বলা হয়েছে:

ফাইন্না মা‘আল্ উ’স্রি ইয়ুস্রান্।

ইন্না মা‘আল্ উ’স্রি ইয়ুস্র-।

এর অর্থ হল:

সুতরাং কষ্টের সাথেই রয়েছে সুখ।

নিশ্চয় কষ্টের সাথেই রয়েছে সুখ।

পালি ভাষায় সংরক্ষিত থেরবাদ বৌদ্ধধর্মের প্রামাণ্য ধর্মগ্রন্থের সংকলন ত্রিপিটকের সুত্ত পিটক অংশের পাঁচটি নিকায়ের মধ্যে দ্বিতীয় মজ্ঝিম নিকায়ের মহাসতিপট্ঠানসুত্তে বলা হয়েছে:

দুঃখ ও কষ্টভোগের মধ্য দিয়ে মানবাত্মার পরিশুদ্ধি ঘটে; এর ফলে শোক ও যন্ত্রণা দূর হয়ে দেহ, অনুভূতি, মন ও অন্যান্য মানসিক সদ্‌গুণ বিকশিত হয়, মানুষ সঠিক পথের সন্ধান পায়।

বাইবেলের জন সংক্রান্ত গ্রন্থের ষোড়শ অধ্যায়ের বিংশ স্তবকে লেখা আছে:

Truly, truly, I say to you, that you will weep and lament, but the world will rejoice; you will grieve, but your grief will be turned into joy.

এর অর্থ হল:

আমি তোমাদের নিশ্চিত করে বলছি, তুমি কাঁদবে আর বিলাপ করবে, কিন্তু তখন পৃথিবী আনন্দে মেতে থাকবে; তুমি কষ্ট পাবে, তবে তোমার কষ্ট আনন্দে পরিণত হবে।

মহাভারতের দ্বাদশ অধ্যায় শান্তিপর্বের পঞ্চবিংশ উপপর্বে ব্যাস বলছেন:

সুখস্যানন্তরং দুঃখং দুঃখস্যানন্তরং সুখম্।

ন নিত্যং লভতে দুঃখং ন নিত্যং লভতে সুখম্॥

সুখমেব হি দুঃখান্তং কদাচিদ্দুঃখতঃ সুখম্।

তস্মাদেতদ্দ্বয়ং জহ্যাদ্য ইচ্ছেচ্ছাশ্বতং সুখম্॥

এর অর্থ হল:

সুখের পর দুঃখ আসে, দুঃখের পর সুখ আসে।

কেউই সবসময় দুঃখভোগ করে না, কেউই সবসময় সুখভোগ করে না।

সুখের পর দুঃখ আসবেই, কখনও দুঃখের পরও সুখ আসে।

তাই, যে ব্যক্তি অনন্ত সুখ কামনা করে, সে ব্যক্তিকে দুটোই হারাতে হয়।

নিজেকে অনুপ্রাণিত করতে আর কিছু লাগে না, ধর্মগ্রন্থের দর্শনকে হৃদয়ে ধারণ ও তার নিয়মিত চর্চা করলেই যথেষ্ট।