ভাবনাদেয়ালের পলেস্তারা (৩৪শ অংশ)

ভাবনা: দুইশো বত্রিশ।

……………………………………..

মিউজিক থেরাপি

……………………………

কী করছেন, বন্ধু?

ব্যস্ত? মনটা অশান্ত হয়ে আছে?

একটা মেন্টাল থেরাপির কথা বলি? নিয়ে দেখতে পারেন। ……….. কাজ করে।

মনোযোগ নষ্ট করে, এমন সবকিছুকে দূরে সরিয়ে রাখুন কিছু সময়ের জন্য। সত্যিই রাখুন; ‘এমনকি’ ফেসবুককেও।

ইউটিউবে যান। সতীনাথ ছেড়ে দিন। শুনতে থাকুন………শুনতে থাকুন। এরপর একে-একে জগন্ময় মিত্র, অনুপ ঘোষাল, শ্যামল মিত্র, মানবেন্দ্র মুখোপাধ্যায়, পিন্টু ভট্টাচার্য, তালাত মাহমুদ, অখিলবন্ধু ঘোষ, সন্তোষ সেনগুপ্ত, সুধীরলাল চক্রবর্তী, হেমন্ত মুখোপাধ্যায়, মান্না দে, কিশোর কুমার …………… চলতে থাকুক!

আপনি এখন আর…………. যেখানে আছেন, সেখানে নেই ………… নিজের সব নিরর্থক অহংকার নিজের সামনে এসে হাহাহা শব্দে হাসতে-হাসতে বলতে থাকবে, তুমিও…….???

সুরের ছোঁয়ায় শরীর দুলে-দুলে জানিয়ে দেবে, হঠাৎ করেই ভাল আছেন! ……… মুখে হাসি লেগে থাকবে; স্নিগ্ধ, ভেতর থেকে আসে, এমন হাসি। খুব কান্না পাবে, কিন্তু চোখের জলটাকে ফেলে দিতে ইচ্ছে করবে না। বিশ্বাস করতে ইচ্ছে করবে, ওটা বড় দামি। একটা পুরনো প্রশ্ন সামনে এসে ঠায় দাঁড়িয়ে থাকবে…………আমার চোখের জলের দাবি আর কারই বা?

যে মানুষটাকে ভালোবাসেন, কিন্তু কাছে নেই, ওর কথা মনে করে দেখুন। মনে হতে থাকবে, কী যেন নেই, কী যেন নেই। কী যেন হারিয়ে গেছে, সবকিছুকে ফাঁকি দিয়ে চলে গেছে। ওকে বড্ডো ভাল মনে হবে। ………… একটা পৃথিবীতে হারিয়ে যাবেন, যে পৃথিবীতে সব দোষ আপনার নিজের ভাবতে বড় ভাল লাগবে। যে পৃথিবীতে নিজের কদর্য রূপগুলির কথা ভেবে অন্যের যেকোনও রূপকেই হাসিমুখে ক্ষমা করে দেয়া যায়। কারোরই খারাপ কিছু চোখে বড় হয়ে উঠবে না। আপনি নিজে অতো ভালই বা কীসে?

যে ভালোবাসাটা কখনওই বাসা হয়নি, সে ভালোবাসাটাই বাসতে ইচ্ছে করবে। চারপাশে যেন কোত্থেকে আসা এক ঠাণ্ডা হাওয়া আপনার চোখেমুখে চুমু খেয়েখেয়ে পিছলে যাবে একটু পরপরই। মনটা শান্ত স্তব্ধ হয়ে একটা সরলরেখায় চলে যাবে…………..সেখানে, যেখানে গেলে ফিরে আসতে বড় আফসোস হয়।

প্রতিটি কথা আর সুরের ওঠানামায় হৃদয়ে একেকটা মৃদুমধুর ধাক্কা এসেএসে লাগবে। গানটাকে ছুঁয়ে দেখতে ইচ্ছে করবে ভীষণভাবে। ছোটবেলার মুগ্ধতায় ফিরে একটা মিষ্টি শৈশবে আবারও বাঁচতে ইচ্ছে করবে। মাথা নত করে প্রণাম করতে ইচ্ছে করবে সলিল, গৌরিপ্রসন্ন, পুলক, সুবল, জটিলেশ্বর, সুধীন, রবীন, প্রণব, পঞ্চকবি, বর্মণদ্বয়দেরকে! এঁদের কাছে যে সারাজীবন হেরে যাওয়াতেই বড্ড সুখ!

একটা প্রিয়মুখের হাসির জন্যও তো বেঁচে থাকা যায়! যাকে ভালোবাসি, তার একটু সুখের জন্যও মৃত্যুর আগ মুহূর্ত পর্যন্ত প্রতীক্ষা করে থাকা যায়! মায়ের দিকে তাকিয়ে আন্তরিকভাবে হেসে মাকে খুশি করে দিতে বড্ড ইচ্ছে করবে………….. ছোটভাইকে ডেকে বলে দিতে ইচ্ছে করবে, “তুই বড় ভাল রে!” বাবাকে জড়িয়ে ধরে “বাবা, অনেক ভাল থেকো!” বলে দেয়ার সাহস কোত্থেকে যেন হয়ে যাবে! ……………….. প্রিয়াকে নাকের, গালের, থুতনির ওপরে আলতোভাবে টোকা দিতেদিতে নিজেকে শূন্য করে ওকে পূর্ণতায় ভরে দিতে ইচ্ছে করবে।

যারা আপনাকে ভালোবাসে বলে বিরক্ত হয়ে আছেন অনেকদিন ধরেই, তাদের ভালোবাসতে না পারার জন্য নিজের স্বতঃস্ফূর্ত কিংবা আরোপিত অক্ষমতাকে আরও একবার তাচ্ছিল্যভরে ক্ষমা করে দিয়ে তাদেরকে বড় করে দেয়ার সুখ পেতে ইচ্ছে করবে। হৃদয় থেকে দুটো কথা বের হয়ে আসতে চাইবে……..তবুও, ভাল থেকো………

ভালমানুষকে ভালমানুষ ভাবতে পারার মত বড় হয়ে যাবেন হুট করেই কীভাবে যেন! সবাইকে চিৎকার করে বলতে ইচ্ছে করবে, “ভাল হয়ে থাকা আর ভালথাকা, দুটোই কী ভীষণ দারুণ অনুভূতি!!” জীবনটাকে যেভাবে করে কখনওই চেনা হয়নি, সেভাবে করে চিনতে ইচ্ছে করবে। সুন্দর ভাবনাগুলিতে ডুবে যাওয়ার যাদুতে ভেসে যেতে ইচ্ছে করবে সেই ওইখানে, ওই দূরে……………….যেখানে পৌঁছে গেলে সবাইকেই ক্ষমা করে দেয়া যায়! আর বলে ফেলতে ইচ্ছে করবে………………ক্ষমা করে দিয়ো, বন্ধু!!!!

আহা! শুধু একটা গানের জন্যও তো বেঁচে থাকা যায়!!

ভাবনা: দুইশো তেত্রিশ।

……………………………………..

পুজো কাদের নামে হবে?

ক্যাথরিন আর রাজন।

কোন গোত্র? কুষ্ঠির নাম কী?. . . . . ব্লা ব্লা ব্লা …………….

হিহি . . . . আমার ছোটো মামি জাতে রাশান। মামা কসমোপলিটান স্পিরিটের মানুষ। লৌকিক সংস্কার তাঁকে কখনও বাঁধেনি, উনি চাননি বলে। এই-ই হয়।

মামাত ভাইবোনের কুষ্ঠির নাম আদিনাথের পূজারিকে দেয়া গেলো না। উনি বললেন, কোনও সমস্যা নেই, পুজো হবে। কুষ্ঠি না থাকলে যে নাম আছে, সে নামেই পুজো হয়। বিদেশি নামে দেশি ঠাকুরের পুজো!

ভাবলাম, আমার কুষ্ঠির নামও দেবো না। সুশান্ত নামেই পুজো হোক।

পূজারিকে এটা বলতেই উনি বললেন, কুষ্ঠি না থাকলে সমস্যা হতো না, কিন্তু থাকলে দিতে হয়। আবারও হাসলাম। হিহি . . . . .

আমার এক মাসিমা বিভিন্ন পুজোর উপোস থাকেন। বয়েস হয়েছে, ভাঙাচোরা শরীর। গতবারের কার্ত্তিক পুজোর উপোসে উনার শরীর একেবারে ভেঙে পড়লো।

বললাম, মাসিমা, এসব উপোস-টুপোস না করলে কী হয়?

উনার এক কথা, এসব মনে আনাও পাপ। সিদ্ধিলাভ হয় না। ছেলেমেয়ের অকল্যাণ হয়।

চট্ করে মাথায় মাসিকে খ্যাপানোর দুষ্টুমি খেললো। জিজ্ঞেস করলাম, মাসিমা, কী যে বলো! এই যে বারাক ওবামা দ্বিতীয়বারেও প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হলেন, উনি কি ইলেকশনের আগে কার্ত্তিক পুজোর উপোস করেছিলেন? এটা বলেই মাসিমার সামনে থেকে এক দৌড়! হিহি . . . . .

রথ ভাবে আমি দেব, পথ ভাবে,আমি। মূর্ত্তি ভাবে আমি দেব, হাসেন অন্তর্যামী। .. . . . হঠাত্‍ মনে পড়ে গেলো। কী যেন নাম কবিতাটার?

ধর্ম ব্যাপারটার সবচে’ বড়ো সুবিধে এই, এটাকে নিজের সুবিধেমত কাস্টমাইজ করে নেয়া যায়। যাতে আমি ভাল থাকি এবং অন্যের ভালথাকাও ঠিক থাকে, তা-ই ধর্ম। আমি যা অন্যের জন্য ভাল হবে ভাবছি কিংবা অন্য কেউ যা আমার জন্য ভাল হবে ভাবছে, তা ধর্ম নয়, চাপিয়ে-দেয়া লোকাচার মাত্র; বড় জোড় সংস্কার। ধর্মের মাহাত্ম্য আরও অনেক বেশি। ধর্ম কাজ নয়, কাজই ধর্ম।

আজকের এই অসম্ভব রকমের রোমান্টিক দিনটাতে কী বলছি এসব! আসল কথা হচ্ছে, পাহাড়ে বৃষ্টি দেখছি। চোখ দিয়ে নয়, মন দিয়ে, সমস্ত হৃদয়টুকু নিঙড়ে। ছড়ানো-ছিটানো দ্বীপগুলোতে বর্ষা নেমেছে। হাজার বছরের পুরনো বর্ষা। জলের স্নিগ্ধ ফোঁটা চোখ থেকে ঠোঁটে গড়িয়ে পড়ছে। তৃষ্ণা কমছে না, বরং বেড়ে যাচ্ছে। কীসের এ তৃষ্ণা? জানি। না জানলে ভাল হতো। সব কিছু জানতে হয় না। পাহাড়ের ওপরে তপোবন। এই আশ্রমে শকুন্তলা নেই, নেই অনসূয়া, প্রিয়ংবদাও। তবুও কেনো জানি এখানে আসার পর থেকেই দুষ্মন্তের প্রেতাত্মা ভর করেছে আমার ওপর। এমনই অপূর্ব এই আশ্রমের শোভা, আবহ।

মহেশখালিতে।

ভাবনা: দুইশো চৌত্রিশ।

……………………………………..

আমি জানি না, তুমি কে। আমি জানি না, তুমি কী চাও। আমি তোমাকে খুঁজব না। আমি তোমার পিছু ছুটব না। যদি তুমিও না খুঁজ, পিছু না ছুট; তবে আমি তোমাকে খুঁজব, আর খুঁজে বের করবই! ……….. এবং তোমাকে আমি খুন করব!!

ওপরের কথাগুলো একটা মুভি থেকে নেয়া। মুভিতে কথাগুলো বলেছিল এমন একজন, যার মেয়ে কিডন্যাপড হয়েছিল। এ স্ট্যাটাসে কথাগুলো বলছে এমন একজন যার হতে-পারত এমন সব প্রেয়সীরা কিডন্যাপড হয়ে যাচ্ছে। কিছু-কিছু মেয়ে এত সুন্দর হওয়ার কী দরকার?! হবেই যদি, তবে আমার প্রেয়সী না হওয়ার কী দরকার?! একবার ওর দেখা পেয়ে গেলে স্ট্যাটাসদাতা ওকে সত্যিসত্যি তুলে আছাড় মারবে, এটা মনস্থির করেছে। মানুষ মানুষকে এত জ্বালায় ক্যান? আসুক একবার! ধরে একদম ………. আগে আসলেও যা, পরে আসলেও তো তা। আগেআগে চলে আসলে কী হয়? ঈশ্বরের যত ঢং!

আমার হবু বউ কার সাথে কত সুখে প্রেম করে বেড়াচ্ছে কে জানে! ছেলেরা ২ ধরনের মেয়েকে বিয়ে করে—নিজের গার্লফ্রেন্ড। অন্যের এক্সগার্লফ্রেন্ড।

প্রিয় বউয়ের শ্রদ্ধেয় বয়ফ্রেন্ড, আপনারা ব্রেকআপটা কবে নাগাদ করছেন? আমি কি হেল্প করতে পারি কোনওভাবে? কিন্তু, কীভাবে? বলুন প্লিজ! আপনাদের চিনি নাতো! ব্রেকআপ হবে না? আচ্ছা, ভেরি গুড! সুখী হোন। ব্রেকআপ হয়ে গেছে অলরেডি? সো নাইস অব ইউ, জেন্টলম্যান!! আমাদের সুখী হওয়ার সুযোগ করে দেয়ার জন্য ধন্যবাদ।

প্রিয় বউ, আর কত? চলে এস! তোমাকে খুঁজে পাচ্ছি নাতো! এত অসাধারণ একজন মানুষ শুধু আমার জন্যই তোমাকে বিয়ে করার আগেই ডিভোর্স দিয়ে দিল, তুমি এখনও আমার কাছে না এসে একাএকা বসে আছ কোন সুখে, শুনি! মাইর চিন, মাইর?!

ভাল কথা। আচ্ছা, বন্ধুরা, বলুন তো কোন মুভিতে শুরুর কথাগুলো আছে?

মুভি নিয়ে আরও কিছু কথা হোক। ইয়ে মানে, আমি মুভির অপ্সরাদের কথা বলছি।

একে তো বাবা, তার উপরে বয়সেও বড়ো, তাই কিছু বলি না। রাজনীতি তো রাজরাজড়ার নীতি, এতো কপচানোর কী দরকার বাপু! যাতে আমার হাত নেই, তাতে আমার মাথা দিয়ে কী-ই বা হবে! যারা লুটেরা, তারা লুটেই যায়। হোক সেটা ধন কিংবা মজা। বাবা যতখানি রাজনীতি বোঝেন, তার অর্ধেকখানি বুঝলেও রাজনীতিবিদরা রাজনীতি ছেড়ে পালাতেন। কেউকেউ করে, বাকিরা শুধু বুঝেই যায়। এটাই নিয়ম। আমি বাপু ছাপোষা মানুষ, স্রেফ বাঁচার দায়ে বাঁচি। একদিন টুক্ করে মরে গিয়ে একেবারে বেঁচে যাবো। এর আগে একটু ফাঁকিটাকি মেরে বুদ্ধিটুদ্ধি করে যতটুকু বেঁচে নেয়া যায় আরকি!

যাই, এবেলা বাংলা সিনেমায় আমার কিছু ড্রিমগার্লের নাম বলে যাই। ওরাই আমাকে প্রেম শিখিয়েছে। এবং আইরিনিক্যালি, এখনও পর্যন্ত প্রেম করতে দ্যায়নি!

সুচিত্রা সেন। মাধবী মুখোপাধ্যায়। সাবিত্রী চট্টোপাধ্যায়। অপর্ণা সেন। মমতা শংকর। মহুয়া রায়চৌধুরি। শতাব্দী রায়। ববিতা। সুবর্ণা মুস্তফা।

বড় আরামের বিষয়, একাএকা থাকলে ওদের ভালোবাসতে ইচ্ছে করে। তখন আর একাএকা থাকতে ইচ্ছে করে না। এটাই সমস্যা।

আরও আছে তো! মনে পড়ছে ঠিক না এইমুহূর্তে। বন্ধুরা, আপনারাও কিছু অ্যাড করুন না! সাথে এক চিমটি মিষ্টি ভাললাগা। উইকএন্ড; একটু প্রেম, আধটু প্রেমপ্রেম ভাব। থাক না!

ছোট্টো একটা অনুরোধ। জ্ঞানীরা অনুগ্রহ করে আমার কাছ থেকে দূরে থাকুন। সবসময়ই!

ভাবনা: দুইশো পঁয়ত্রিশ।

……………………………………..

(মাশরাফির কোনও এক জন্মদিনে এই লেখাটি লিখেছিলাম।)

প্রিয় মাশরাফি! বেঁচে থেকো!!

কিছুকিছু স্মৃতি—চাইলেও, আর মনে আসে না।

কিছুকিছু স্মৃতি—চাইলেও, আর ভোলা যায় না।

সময়টা, প্রায় ৬ বছর আগে হওয়ার কথা। তখন চট্টগ্রাম এয়ারপোর্টে কাজ করতাম। বরাবরই, প্রচুর কফি খাই, ফাঁক পেলেই কফিকর্নারে কিছুক্ষণ কাটিয়ে আসি।

একদিন। দুপুরটা বিকেল ছুঁইছুঁই করছে। কফিতে চুমুক দিচ্ছি, সাথে আমার কলিগ, সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা মাসুম—অভ্যাসবশত, এদিকওদিক না তাকিয়ে, কফির ধোঁয়ায়ই পুরোপুরি ডুবে আছি।

হঠাৎ দেখি, মাসুম অনেকটা চিৎকার করে বলে উঠলেন, স্যার, দেখেন, দেখেন, মাশরাফি! তাকিয়ে দেখি, মাশরাফি স্ত্রীকে নিয়ে বসে আছেন আমাদের একটু দূরে-থাকা চেয়ারগুলোর একটিতে। সেসময় উনি কী কারণে যেন টিমের বাইরে ছিলেন। উনাকে আগে থেকে চিনতাম, খুব ভালোবাসতাম; তবে, এর আগে কখনও সামনাসামনি দেখিনি। উনার পেশাদারিত্ব, সত্য কথাটি সরাসরি বলার সাহস, সরলতা, কাজের প্রতি অসীম ভালোবাসা আমাকে মুগ্ধ করতো।

কাছে গিয়ে, ‘আমি সুশান্ত’ বলে হ্যান্ডশেক করলাম। সাথে-সাথেই কফির কাগুজে কাপটা স্ত্রীর হাতে দিয়ে, চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়িয়ে খুবই সাবলীলভাবে হাসিমুখে কথাবলা শুরু করলেন। “আপনি প্লিজ বসেন, বসেন, বসেবসে কথা বলেন!” “না, না, ঠিক আছে!” এমন সহজভাবে অতো বড় একজন মানুষ আমার সাথে কথা বলবেন, সেটাই ভাবতে পারিনি। উনি বয়সে আমার ঠিক ১ বছর ২৮ দিনের বড়, কিন্তু প্রকৃত অর্থে, উনার বড়ত্বের কাছে, আমি নিতান্তই শিশু।

মাসুম উনাকে জিজ্ঞেস করলেন, “মাশরাফি ভাই, আপনাকে আবার কবে মাঠে দেখবো?” উনি শান্তভাবে বলেছিলেন, “আসলে, আমার কিছু সমস্যা আছে, সেগুলো কাটিয়ে উঠতে পারলেই আমি আবারও খেলতে পারবো।” আমাকে দেখিয়ে মাসুম বললেন, “উনি আমাদের এয়ারপোর্টের এসি স্যার, আপনার ভক্ত।” “আরে না, না, কী যে বলেন! আমার আবার ভক্ত…………” বলেই, আমাকে জড়িয়ে ধরে উনি বলেছিলেন, “আপনি তো অনেক ব্যস্ত মানুষ, আমি আপনার সময় নষ্ট করছি নাতো?”

আমি ঠিক বুঝতে পারছিলাম না, একজন মাশরাফি এমন প্রশ্ন করলে উত্তরে কী বলতে হয়। বড় মানুষের সামনে গেলে আমি তেমন কোনও কথা বলতে পারি না—চুপচাপ উনাকে দেখি, উনার কথা শুনি। উনি কক্সবাজার যাবেন, আমাকে একটা গাড়ি ঠিক করে দিতে অনুরোধ করলেন। উনার জন্য একটা গাড়ি এয়ারপোর্টে থাকার কথা, সেটা নষ্ট হয়ে গিয়েছিলো বোধহয়। আমি যে সরকারি মাইক্রোটা ব্যবহার করতাম, সেটাকেই, ড্রাইভারকে আড়ালে ডেকে তেলের খরচটা দিয়ে, উনাকে পৌঁছে দিতে বললাম।

উনি বারবারই নিষেধ করছিলেন, প্রাইভেট গাড়ি ভাড়া করে দিতে বলছিলেন। আমি উনাকে ‘হ্যাঁ’/’না’ কিছুই না বলে, মাসুমকে, ইশারায়, কী করতে হবে বুঝিয়ে দিলাম। উনার জন্য মাত্র ওইটুকু করতে পারাটা আমার জন্য ছিল পরম আনন্দের। উনি যখন আমাদেরকে খুবই বিনীতভাবে বারবার ধন্যবাদ দিচ্ছিলেন, তখন, নিজেরই, কেমন জানি, সংকোচ লাগছিল।

মাশরাফির সেদিনের অমন সহজ ব্যবহারের রেশ এখনও আমার মাথায় আছে, কোনওদিনই সে রেশ মুছে যাবে না। জীবনে যে কয়েকবার কারও সাথে কথা বলে ভীষণ মুগ্ধ হয়েছি, সেদিনেরটা ছিল সেগুলোর মধ্যে একটি।

আমার একটা সমস্যা আছে। যাকে আমি অসম্ভব পছন্দ করি, কোনওভাবে তার সামনে পড়ে গেলে, আমি ঠিকমতো কথাই বলতে পারি না, উনার সাথে সেলফি নেয়া কিংবা অটোগ্রাফ নেয়া তো অনেক পরের কথা! সেদিনও নিইনি, কিছুই না—না সেলফি, না অটোগ্রাফ—শুধুই, একরাশ মুগ্ধতা কুড়িয়ে নিয়েছিলাম। মাসুম সেলফি, অটোগ্রাফ নিচ্ছিলেন, আমি মাশরাফির দিকে শুধুই তাকিয়ে ছিলাম। উনার সাথে আমার কোনও ছবি নেই, উনার কোনও অটোগ্রাফও আমি রাখিনি, তবু, মাশরাফি আমার হৃদয়ে আছেন, থাকবেন। অমন সহজ মানুষকে দেখলেই কী যে ভীষণ ভাল লাগে! চোখের অমন শান্তি, সবাইকে দেখলে আসে না।

প্রিয় মানুষ, শুভ জন্মদিন। এভাবেই বেঁচে থাকুন আমাদের হৃদয়ে। আর, প্লিজ, প্লিজ, প্লিজ, নিজের দিকে একটু খেয়াল রাখবেন। আপনাকে মাঠে দেখলে, বুকের ভেতরে-ভেতরে ভয় হতে থাকে—মাশরাফি ব্যথা নিয়ে, নিজের উপর জোর খাটিয়ে খেলছেন নাতো?

উনার কিছু কথা শেয়ার করলাম, যেগুলো আমার ভাল লাগে………

– আমি কখনওই আমার জীবনে কোনওকিছুর জন্য পরিকল্পনা করিনি—পরীক্ষার জন্যও না, অথবা কোনও অনুষ্ঠানের কাপড় কেনার জন্যও না। আমি সবসময়ই, শেষ মুহূর্তে যেটি সঠিক বলে মনে হয়েছে, সেটি করেছি। তাই, যখন আমি দলের অধিনায়কের দায়িত্ব পেলাম, তখন আমি সবসময় যেটি করতাম, সেটিই করেছি। আমি সাফল্য, ব্যর্থতা, ভবিষ্যৎ অথবা অতীতের জন্য কখনওই চিন্তা করিনি। এগুলো নিয়ে আমি কখনওই ভাবিনি। ……. (আমি নিজেও, এ দর্শনটা হুবহু মেনে চলি।)

– আজ কিছু কথা পরিষ্কার করে বলি। আমরা সবাইকে বিনোদন দেই। আমরা প্রকৃত অর্থে বীর নই। আমাদের সত্যিকার বীর হচ্ছেন মুক্তিযোদ্ধারা। আমরা দেশের জন্য কোনও কিছু বিসর্জন দিইনি, মুক্তিযোদ্ধারা দিয়েছেন। আমাকে ভুল বুঝবেন না—ক্রিকেট কিন্তু জীবনের সবকিছু নয়। আমরা শুধুমাত্র চেষ্টা করি আমাদের দেশের মানুষকে খুশি করতে। ……. (এমন অকপট কথা বলতেও অনেক সৎসাহস লাগে।)

– আমি বলি, এই যারা ক্রিকেটে ‘দেশপ্রেম’ ‘দেশপ্রেম’ বলে চিৎকার করে, এরা সবাই যদি একদিন রাস্তায় কলার খোসাফেলা বন্ধ করত, একটা দিন রাস্তায় থুতু না ফেলত বা একটা দিন ট্রাফিক আইন মানত, দেশ বদলে যেত। এই এনার্জি, ক্রিকেটের পেছনে ব্যয় না করে নিজের কাজটা যদি সততার সঙ্গে একটা দিনও সবাই মানে, সেটাই হয় দেশপ্রেম দেখানো। ……. (আপনি এতো সুন্দর করে ভাবতে পারেন, আমরা পারি না, তাইতো, সহজ কাজটাই করার জন্য বেছে নিই—নিজেরা নোংরা থাকা, চারপাশটাকে নোংরা রাখা।)

উনি এমনই। অনেক বড় মাপের, সহজ মানুষ—বিন্দুমাত্রও হিপোক্রিসি নেই। যা বলার, একেবারে সরাসরি বলতে পারেন। দেখলেই এতো ভাল লাগে! উনার আরেকটা ব্যাপার, যা দেখলেই অনুপ্রাণিত হই……….নিজের একেবারে সবটুকু দিয়ে লড়াই করে যাওয়া শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত! যত কষ্টই হোক, নিজের কমিটমেন্টের প্রতি সৎ থাকা—সত্যি বলছি, এসব অতো সহজ নয়!! বছরবছর, আমাদের মত, হাজারহাজার গর্দভ জন্মানোর চাইতে, হাজার বছরে, একজন মাশরাফি জন্মানো—অনেক ভাল। হ্যাঁ, আমরা হয়তো মাশরাফি হতে পারবো না, তবু, কেউ না কেউ যেন, আমাদের কাউকে না কাউকে দেখিয়ে বলে, “ওই দেখো, ওর মত হতে হবে।”—সে চেষ্টা তো আমাদের করে যেতে হবে, তাই না?

এই পোস্টটা লেখার সময় যে শ্রদ্ধা আর ভালোবাসাটা কাজ করেছে, তার খোঁজ হয়তো আপনি কোনওদিনই পাবেন না, তবু, জেনে রাখবেন, আপনি যখন মাঠে নামেন, তখন আমরা আপনার দিকে তাকিয়ে থাকি—শুধু একজন খেলোয়াড় মাশরাফির দিকে নয়, একজন ভালমানুষ মাশরাফির দিকেও—পরম মমতায় আর নির্ভরতায়।

ভাল থাকবেন, প্রিয় ক্যাপ্টেন! আপনাকে আমরা অনেক ভালোবাসি।

ভাবনা: দুইশো ছত্রিশ।

……………………………………..

অক্ষর-এর গল্প

……………………………..

(অনেকদিন আগের লেখা। কতদিন আগের, মনে নেই।)

এটা একটা বইয়ের বিজ্ঞাপন।

আগেই বলে নিই, এটা পড়াটা বিরক্তিকর মনে হতে পারে। এতে আমার ব্যক্তিগত কথাবার্তা আছে। চাইলে এড়িয়ে যেতে পারেন।

আমি ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিই। এর মধ্যে কয়েকটা একটু বড় হয়ে যায়। সেগুলোকে গল্পটল্প বলে চালিয়ে দিই। আসলে ওগুলো গল্প না, বড়জোর ফেসবুক নোটে রাখার মত বড় ‘কিছু একটা’। এই ‘কিছু একটা’ আসলে যে কী, এটা ভাবতে পারি না। ভাবলে, আর স্ট্যাটাস দেয়াই হবে না। কিছুকিছু সম্পর্কের মত কিছুকিছু লেখারও নাম থাকে না। বন্ধুদের কেউকেউ সেগুলো পড়েন, লাইক দেন, শেয়ার করেন, দয়া করে ‘ভাল হয়েছে’ বলেনটলেন, তাই এই একটু লিখি, মানে স্ট্যাটাস লিখি। লাইক না পেলে, কেউ ভাল না বললে নিশ্চয়ই লিখতাম না। আমি লিখি দুইটি কারণে—নিজের ভাললাগার জন্য। বন্ধুরা ভাল বলে, তাই।

বন্ধুদের মধ্যে অনেকে কিছু লেখা মনে রেখে দেন। বন্ধুদের মধ্যে অনেকে কিছুকিছু লেখা প্রিন্ট করে রেখে দেন।

কয়েকজন বন্ধু আছে, যারা আমার সব ফেসবুক পোস্টই ওয়ার্ড ফাইলে কপি করে রেখেছে। কপি মানে কিন্তু আমার টাইমলাইনে গিয়ে পুরনো লেখাগুলো সিলেক্ট করেকরে কপি-পেস্ট করা। কাজটা কিছুতেই সহজ নয়। অত্যন্ত ক্লান্তিকর বিরক্তিকর সময়সাধ্য কাজ। এদের মধ্যে একজন লীনা, যে কিনা ভাবে, সুশান্ত পাল একটা ডট দিলেও সেটার অর্থ থাকবেই! ওর ধারণা, আমার সব লেখাই ভাল। বড় বজ্জাত মেয়ে! এদের জন্য শান্তিতে যা ইচ্ছা তা-ই (পড়ুন, যাচ্ছেতাই) লেখা যায় না। এই দলে ও একা নয়। আরও অনেকেই আমার স্ট্যাটাস, নোট কপি করেন। দয়া করে আমাকে মেইলে পাঠান। ওর কথা কেন আলাদা করে বললাম, ও কী করেছে, সে কথায় একটু পরে আসি।

এমন একজন বন্ধুকে পেয়েছি, যে আমার সকল বিস্ময়কেও ছাড়িয়ে গেছে। অতোটা ভাববার মতো সাহসই আমার কখনও হয়নি। ফেসবুকে আসার পর থেকে আমি যা কিছু লিখেছি, মানে স্ট্যাটাস লিখেছি, কমেন্ট লিখেছি, নোট লিখেছি, কোনও একটা পোস্ট শেয়ার করার সময় সেটার জন্য যা লিখেছি, সবকিছুকে একসাথে জড়ো করে ফাইলে ধরে রাখছে। ও এটা করছে অনেকদিন ধরেই। এটা আমার জন্য অনেক বড় উপহার। ওর কাছে আমি এটা কখনওই চাইনি। আচ্ছা, চাইলে কি এটা দিত? মানুষ ডাকলে কি কাছে আসে? নাকি, না ডাকলেই বরং আসে? ওর মহত্ত্বের কাছে হারতেও ভাল লাগে। ভাল কথা, ও নওরীন।

বন্ধুমহলে আমার দুটো পরিচয় আছে। এক। কেউ সেধে উপকার করতে চাইলেও আমি প্রায়ই সেই উপকার গ্রহণ করার ব্যাপারে নির্লিপ্ত থাকি। দুই। যাদের পছন্দ করি, ওদেরকে নিজের অজান্তেই আঘাত দিয়ে কথা বলি।

নিজের সৃষ্টি ধরে রাখার ব্যাপারে আমার আগ্রহ আছে, উদ্যোগ নেই। লীনার কথায় ফিরে আসি। ও অনেকদিন ধরেই আমার লেখা পড়ে। শুধুই পড়ে? নাহ! আমার লেখার ব্যবচ্ছেদ করে, আমার মনমেজাজের খোঁজখবর আমার লেখা থেকেই খুঁজে নেয়। ও জানে, আমি যোগাযোগ না রাখার ব্যাপারে কতোটা সিদ্ধহস্ত। ও একদিন আমাকে বলে, “আচ্ছা, তোর লেখা তো অনেক। আমি চাচ্ছি, কিছু লেখাকে একসাথে করে ছাপবো।” আমি এই কথার উত্তরে ওকে রীতিমত ঝাড়ি দেই এবং বলি, লেখা ছাপানোর মত যোগ্যতা আমার এখনও হয়নি। ও দিনের পর দিন আমাকে রাজি করানোর চেষ্টা করে, সাথে চলছিল লেখা জড়ো করার কাজ। আমি এই ব্যাপারটা নিয়ে ওর সাথে অনেক দুর্ব্যবহার করেছি। ও তাতেও দমেনি। আমাকে অনুরোধ করেছে আমার কিছু লেখা সিলেক্ট করে দেয়ার জন্য। আমি তো এটা করিইনি, বরং ওর সাথে মেজাজ খারাপ করে কথা বলেছি। এরপর ও নিজেই আমার বেশকিছু লেখা জড়ো করে মেইল করে একটা ফাইলে পাঠায় এবং আমাকে ফোন করে অনুরোধ করে যেন আমি ওখান থেকে কিছু লেখা পছন্দ করে দিই। আমি সেই মেইল চেক করি প্রায় ১ মাস পর। করেই ওকে ফোন করে বলি, “আমি আমার লেখা ছাপবো না। লোকে কী ভাববে আমাকে? খবরদার, এই ব্যাপারে আমাকে আর বিরক্ত করবি না!” চোরে না শুনে ধর্মের কাহিনী, লীনা না শুনে সুশান্তের ঝাড়ি। কাজ হল না। এরপর ও নিজেই কিছু লেখা নির্বাচন করে আমাকে সেই লেখাগুলো মেইল করে পাঠায় যাতে আমি অন্তত অণুলেখাগুলোর একটা করে শিরোনাম ঠিক করে দিই। (লেখাগুলোর বেশিরভাগই আমার বিভিন্ন স্ট্যাটাস। স্ট্যাটাসের তো আর শিরোনাম থাকে না।) অনেকদিন ধরে ওকে ঘোরানোর পর আমি সেটাও করিনি। এরপর ও আমাকে হুমকি দেয়, যদি আমি নিজে লেখার শিরোনাম ঠিক করে না দিই, তবে ও নিজেই নিজের মত করে শিরোনাম লিখে দেবে। (আমার নিজের লেখার ব্যাপারে আমি অতিমাত্রায় সেনসিটিভ। ও এটা ভাল করেই জানে।) এরপর আমি ওর ফোন রিসিভ করা বন্ধ করে দিই। ওকে খুব কঠিন ভাষায় বলি, যাতে ও এটা কিছুতেই না করে। আরও অনেক কড়া কথা শোনাই যাতে ও আমার লেখা ছাপানো থেকে নিবৃত্ত হয় আর আমাকে এই ব্যাপারে আর না জ্বালায়। আমি আমার সাধ্যমত ওকে অবহেলা করি, তুচ্ছতাচ্ছিল্য করি।

কিন্তু হায়! ইউ হ্যাভ টু বুঝতে হবে, লীনা অন্য চীজ। অনেকদিন ও কোনও যোগাযোগই করেনি। আমিও শান্তিতে ছিলাম। ওয়ান ফাইন মর্নিং, লীনা ফোন করে বলল, “সুশান্ত, আমি নিজের মত করে তোর কিছু লেখা সিলেক্ট করেছি। এবং সেগুলোর নামও দিয়ে দিয়েছি। তুই যদি দেখে না দিস, তবে লেখাগুলো এভাবেই যাবে। তুই যা ইচ্ছা বলতে পারিস, যা ইচ্ছা মনে করতে পারিস, কিন্তু আমি তোর লেখা ছাপবোই। বাকিটা তোর ব্যাপার।” আমি সেই মুহূর্তে মুখে যা আসলো, তা-ই বললাম। ও একটা সময় বেঁধে দিয়েছিল। ওই সময়ের মধ্যে নাম ঠিক করে না দিলে লেখাগুলো ওর ঠিক করে দেয়া নামেই প্রেসে চলে যাবে। আমি পরে ঠাণ্ডা মাথায় ভাবলাম, “যদি নামগুলো ঠিক করে না দিই, তবে এই পচাপচা শিরোনামে আমার লেখা বের হবে।” নিজের লেখার জন্য মায়া বড় মায়া! অগত্যা একেবারে ডেডলাইনের দিন সকালে অফিসে যাওয়ার আগে তাড়াহুড়ো করে লেখাগুলোর শিরোনাম ঠিক করে ওকে মেইল করলাম। ও যে বইটা সম্পাদনা করছিল, সেটাতে শুধু আমার লেখাই নেই, আরো অনেকের লেখাই ওতে আছে। ওটা একটা সংকলন। আমিই একমাত্র ব্যক্তি, যে ওতে লেখা পাঠায়নি, যার লেখা নিজ দায়িত্বে ঝাড়ি সহ্য করে সংগ্রহ করা হয়েছে। আমার জন্য অন্য সবার লেখাও পাঠানোর কাজটি ও শুরু করতে পারছিল না। প্রকাশকের অনেক বিরক্তিও ওকে সহ্য করতে হয়েছে। দুদিন পরেই ও আবার নক করল। এবার লেখক-পরিচিতি লিখে দিতে হবে। সবাই সবারটা দিয়ে দিয়েছে। একমাত্র আমিই বাকি। (যারা জানেন না, তাদের বলছি, বইয়ের ফ্ল্যাপে যে লেখক-পরিচিতিটা থাকে, সেটা সাধারণত লেখক নিজেই লিখে দেন।) আমি ভাবলাম, দেখি, শেষ মুহূর্তে হলেও আমার লেখাগুলো বাদ দেয়া যায় কি না। আমি যথারীতি লেখক-পরিচিতি লিখে দিলাম না। এভাবে ওকে ঘোরালাম আরো এক সপ্তাহ। এরপর ও নিজে আর আমার আরেক পুরনো স্টুডেন্ট মিলে আমার বিশাল এক লেখক-পরিচিতি দাঁড় করালো। এরপর ওটা আমাকে মেইল করে দিয়ে সেই আগের থ্রেটটা মারল। আমি অতিবিরক্ত হয়ে মেইল খুলে দেখি লেখক-পরিচিতিতে আমাকে ফুলিয়েফাঁপিয়ে একাকার করে ফেলা হয়েছে। মেজাজ অতিখারাপ হল। কী আর করা! নিজেই ২-৩ লাইনের একটা লেখক-পরিচিতি লিখে ওকে পাঠিয়ে দিলাম।

এভাবেই বের হল ‘অক্ষর’। এতে অনেকেরই লেখা আছে। এটা লীনার সম্পাদনায় এমন একটা সংকলন, যেটাতে শুধু এমন লেখাই আছে, যেগুলোকে লেখকরা নিভৃত কোণেই রেখে দেবেন বলে ঠিক করেছিলেন। এটাতে সবচাইতে বেশি লেখা আমার। কিছু আলোকচিত্র বাদ দিলে এতে ৬৪৬ পৃষ্ঠা জুড়ে মোট ৩৬ জনের লেখা আছে। আমার লেখার ভাগটা ৯৪ পৃষ্ঠার। এটা শুনে আমি আরো রেগে গিয়েছিলাম। এটার মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে আমি রাগ করে যাইনি। এটা বের হওয়া নিয়ে কোনওদিনই কাউকে কিছু বলিনি। (তা সত্ত্বেও আমার লেখা ভালোবাসেন, আর লীনার সাথে কোনও না কোনওভাবে পরিচিত, এমন অনেকেই এটা সংগ্রহ করেছেন। আমার অনেক শুভাকাঙ্ক্ষী লীনার সাথে যোগাযোগ করে মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানেও গেছেন।) এমনকি এটা বের হওয়ার পর আমার ঠিকানায় ক্যুরিয়ারে আসা সৌজন্য কপিটিও অনেকদিন প্যাকেট খুলে দেখিনি। ভেবেছিলাম, এটার কথা কাউকেই বলব না। এটা নিয়ে কাউকে বলতে কেমন জানি লজ্জালজ্জা লাগছিল। ছাপা যেতে পারে, অতো ভাল আমি লিখতে পারি না। আমার পড়াশোনাও কম। পড়াশোনা না করে লেখার ব্যাপারটাকে আমার নিজের কাছে একধরনের ডিসঅনেস্টি আর হিপোক্রিসি বলে মনে হয়। তাছাড়া চাকরির ব্যস্ততায় সময়ই পাই না। এই সামান্য কাজ চালানোর মত জ্ঞান নিয়ে ফেসবুকে লেখালেখি, এইটুকু পর্যন্ত ঠিক আছে। কিন্তু বই বের করা? নৈব নৈব চ!

বইটা বাজারে এখনও আসেনি। সামনের একুশের বইমেলায় পাওয়া যাবে বোধ হয়। এখন আপাতত বইয়ের প্রকাশককে ০১১৯৫০০৭৯৫০ এই নাম্বারে ফোন করে বইটা কেনা যাবে। দাম লেখা আছে ১০০০ টাকা। পৃষ্ঠাসংখ্যা ৬৬৪। অফসেটে ছাপা। কেনা যাবে ৭৫০ টাকায়। আমি মনে করি, বইয়ের দাম একটু বেশি রাখা হয়েছে। তবুও আপনাদের বইটির কথা বলছি। কেন? গত রোববার লীনার পাঠানো একটা মেইল পড়ে। মেইলটা এখানে শেয়ার করছি।

শোন, তোকে একটা গল্প বলি- “একদা কোনও এক অজানা অচেনা সুশান্ত পালের লেখনী দেখে মুগ্ধ হয়েছিলাম। সেই মুগ্ধতা একসময় এতোটাই প্রবল হয়ে উঠেছিল যে সারাক্ষণ ভাবতাম, এতো সুন্দর করে যে লিখতে পারে তার লেখা শুধু ফেসবুক নামক একটা নির্দিষ্ট গণ্ডির ভেতরে কেন সীমাবদ্ধ থাকবে? এমন লেখা সব সীমানাকে ছাড়িয়ে যাওয়ার যোগ্যতা রাখে। আমি নিজে টুকটাক লিখতে চেষ্টা করি বলেই হয়তো অন্যের ভাল লেখার গুরুত্ব দেয়ার চেষ্টাটুকুও করি। সে যেহেতু সেই অর্থে আমার খুব পরিচিত কেউ নয় তাই তাকে জোর করে বা অতটা অধিকার নিয়ে বই প্রকাশের কথাও বলা যায়নি। চিন্তা করলাম নিজেই কিছু একটা করি। এখানেও একই বিপত্তি, খুব কাছের কেউ যেহেতু নয় তাই আমার উদ্যোগে তার একক বই বের করে দেয়ার কথাও বলতে পারিনি। আর বললেই বা সে শুনবে কেন! আমি কোথাকার কে!

সেখান থেকেই যৌথ প্রকাশনার চিন্তাটা মাথায় আসে। যার ফলশ্রুতিতে ‘অক্ষর’ নামক বিশাল সাইজের একটি বই ইতোমধ্যেই প্রকাশিত হয়ে গেছে। এই ‘অক্ষর’ নামক বইটিকে আলোর মুখ দেখাতে গিয়ে কতটা কষ্ট যে আমাকে করতে হয়েছে মাঝখানের সেই গল্পটি বলতে গেলে ছোটখাটো একটা ইতিহাস রচনা করে ফেলতে হবে। তাই সেটা না-ই বা বললাম। শুধু বলি, একটা পর্যায়ে গিয়ে মনে হয়েছিল এই দুঃসাধ্য কাজ আমাকে দিয়ে হবার নয়। বারবার হাল ছেড়ে দিতে গিয়ে শুধু ভেবেছি, তাহলে যে সুশান্ত পালের লেখাগুলো আর প্রকাশ করা হবে না। এই ভাবনা থেকে আবার এগিয়ে গিয়েছি। ততদিনে তার সাথে কিছুটা সখ্যতা গড়ে উঠেছিল বটে! এবং বারবার বিভিন্নভাবে তার কাছে অপমানিত, অবহেলিত হয়ে কষ্ট পেয়েছি, কেঁদেকেটে একাকার হয়েছি। আমি জানতাম, এই বই বা তার লেখা প্রকাশ হওয়া নিয়ে তার কোনও ইমোশন, ফিলিংস কিছুই নেই, তবুও কাজটি করে গেছি। জানি না কীসের মায়ায়!

শুধু এই সুশান্ত পাল-এর এক কথাতেই আমি অনেক ঝড়ঝাপটা সামলে একটা অনুষ্ঠানের আয়োজন করলাম। সে জানতো, শুধু তাকে উপলক্ষ করেই এতকিছু………কিন্তু শেষ পর্যন্ত সে আসেনি। ওই যে বললাম, এটা নিয়ে তার কোনও আবেগ অনুভূতি কিচ্ছু নেই। বুঝি সব। কিন্তু মনকে যে মানানো যায় না! সাংবাদিক, মিডিয়া, ক্যামেরার সামনে মেকি হাসি নিয়ে বসে ছিলাম ঠিকই, তবে উপভোগ করতে পারিনি এতবড় আয়োজনের এক বিন্দুও! শুধু তার কারণে। তার প্রতি অপরিসীম ‘মায়া’র কারণে। তাই এসব ‘মায়া’ নামক মরীচিকার গায়ে লাত্থি মেরে সব ছেড়েছুঁড়ে দূরে চলে যাচ্ছি, যে জগৎ কাঁদালেও বুকে মুখ গুঁজে কান্নার আশ্রয়টা অন্তত দেবে, সে জগতের সন্ধান পাওয়ার আশায়। জানি এটাও পাবো না, তবুও আশায়-আশায় আশার ঘরে বসতি… ভাল থাকিস।”

ভাবনা: দুইশো সাইত্রিশ।

……………………………………..

মাঝেমধ্যেই আঘাত করতে দিই। এতে সহজেই বুঝে যাই, কারা-কারা সুযোগ পেলেই আমাকে আঘাত করবে। সবাই আমার প্রিয় হবে না। অনেকেই অখুশি হবে। আশ্চর্য! সবাইকে খুশি করতে পৃথিবীতে এসেছি নাকি? যারা সবাইকে খুশি করে বাঁচে, ওদের জীবনে সুখ বলতে কিছু থাকে না। নিজের সাথে প্রতিনিয়তই প্রতারণা করে ওদের বাঁচতে হয়। ওরকম আত্ম-প্রতারক হওয়াটা একটা স্পেশাল কোয়ালিটি। সবাই তা পারে না। একেকজন একেকরকমের। কিছু লোক সব কাজেই বেশ সিরিয়াস; এটা ভাল। ওরা সিরিয়াস, এটা সবাইকে বলে বেড়ায়, এটাও ভাল; কিন্তু পৃথিবীর সবাইকেই ওদের মতোই হতে হবে, এটা প্রতিষ্ঠিত করার চেষ্টা করবে, আবার এর অন্যথায় হলে ব্যক্তিগতভাবে আক্রমণ করবে, এটা তো মানা যায় না৷ মত প্রকাশের স্বাধীনতা মানে কিন্তু নিজের মতামতকে অন্যের কাঁধে জোর করে চাপিয়ে দেয়ার স্বাধীনতা নয়, এটা তো বুঝতে হবে৷ ওরা অবলীলায় অন্যমতের লোকজনকে আক্রমণ করে বসে। আঘাত করে যে, সে আঘাত না করার শক্তি অতোটা টের পায় না। আঘাত করে করুক। প্রয়োজনে আহত হবো, তবুও হিপোক্রিট হতে পারবো না। আমি যেমন তেমনই। আমি ফরমাল, ভাল রকমেরই ফরমাল৷ ভদ্র, আন্তরিক; তবে হিপোক্রিসি সহ্য করতে পারি না৷ আর কেউ উল্টাপাল্টা বুঝে ব্যক্তিগত আক্রমণ করলে কষ্ট পাই৷ আমাকে না বুঝুক, সমস্যা নাই; কিন্তু ভুল না বুঝুক। আমি যা নই, তা বলে বেড়াতে পারি না, কারও পছন্দ হোক বা না হোক৷ সবাই তো আর সবকিছু পারে না। আমি যা নই, আমাকে তা ভেবে সম্মান করার চাইতে বরং আমি যা, আমাকে তা ভেবে অসম্মান করুক। সেও ভাল। অপ্রাপ্য সম্মানের চাইতে প্রাপ্য অসম্মান শ্রেয়। সে জীবনকে নিয়ে অ্যাত্তো সিরিয়াস হওয়ার কী আছে, যে জীবন আমাদের পাত্তাই দেয় না! মুহূর্তের দুনিয়ায় সুন্দরভাবে বাঁচলেই তো ভাল। লোকের সব পরামর্শ শোনার কোনও মানে নেই। লোকে পরামর্শ দেয় দুটো কারণে: এক। উনি আপনার ভাল চান, এই জন্য। দুই। উনি আপনার চেয়ে ভাল, এটা বোঝাতে। তাই কারও কথা শুনে নিজেকে বদলানোর আগেই ভাল করে ভেবে নিতে হবে, উনি আপনাকে পরামর্শ দেয়ার যোগ্যতা রাখেন কি না, উনি আপনার প্রকৃত হিতাকাঙ্ক্ষী কি না, আপনাকে পরামর্শ দেয়ার পেছনে উনার কোনও স্বার্থ আছে কি না।

আমার কথা পড়তে তোমার কষ্ট হয়, জানি। তবু লিখে পাঠাই, কারণ আমি তোমাকে আমার ব্যক্তিগত ডায়রি বানিয়ে রেখেছি। কখনও মনে হয়,Top of Form

আর কিছুই শেয়ার করব না—কি ভাললাগা, কি কষ্ট। কেমন আছি, বা কী ভাবি। এতেই তোমার শান্তি তো! তবে তাই হোক। কিন্তু সত্য হচ্ছে, মানুষ কখনওই একা বাস করতে পারে না। হোক বাস্তবে কিংবা কল্পনায়, তার অন্তত একজন সঙ্গী চাই, যার সাথে সব কিছু ভাগ করা যায়। যার প্রতি অধিকার থেকে তাকে অনুভবেও পাওয়া যায়। তার উপর রাগ ক্ষোভ অভিমান আর ভাললাগা ছড়িয়ে দেয়া যায়, আর তার ভালোবাসা, কখনও মন্দবাসাও কুড়িয়ে নিয়ে শূন্যতা দূর হয়ে যায়, এইভাবেই ভালথাকায় দিন এগিয়ে যেতে পারে, যায় এবং যাচ্ছিলও। কিন্তু যদি সেটাও বন্ধ করে দাও, তবে এই অভাগির কী হবে, তা কল্পনা করতে পারো?

অনার্সে আমরা শৈবালের কোষ স্টাডি করতাম। একটু পানি না দিলে মাইক্রোস্কোপ এর নিচে যতই পাওয়ার অ্যাডজাস্ট কর না কেন, কোনও লাভ হবে না। তখন সে কোষ এক অস্পষ্ট মৃত স্তূপ ছাড়া আর কিছুই মনে হবে না। শুধু ওই কয়েক ফোঁটা পানিই কোষগুলি জীবন্ত হতে বড় বেশি প্রয়োজন। আমারও নিজেকে ঠিক তেমনটাই মনে হয়। তুমি বরং আমাকে আনফলো করে দিয়ো। তাহলে আর এই আবর্জনাগুলো তোমার চোখের সামনে কখনওই আসবে না। তোমাকে নিয়ে এই একটাই পৃথিবী তো আমার, তাই ওভাবেই বেঁচে আছি। সত্যি বলছি, আমার খুশিগুলি সব তোমাকে ঘিরেই সৃষ্টি তো, তাই আমার এ ঘর আমারই থাক। তুমি যখন মন চায় এসো, ঘুরে যেয়ো। কিন্তু সবসময় এসে বিরক্ত হওয়ার দরকার নেই। কেবল মন চাইলেই এসো; যে সুরে তোমায় সাধি, সেখানে কোনও জোর তো নেই, সে সুরকে বেসুর করে দিয়ো না।

বড় কষ্ট লাগে যখন বল তোমার কবিতা আর আমার নয়, আমার জন্য নয়। আমি তোমার কেউ নই। ভেতরে যে অন্তর্দহন হয়, তা কখনও বোঝনি তুমি, তুমি বুঝবেও না। নিজেকে এতদিন একটুও পরাজিত মনে হয়নি। আজ হয়, যখন সমস্ত দাবি তুলে নাও, ছেড়ে দিতে বলো অধিকার সব! যে মুহূর্তে মনে হয়, ছেড়েছি তোমায়, আমার বাঁচা আর মরার পার্থক্য একেবারেই ঘুচে যায়। এই চলে যাওয়ার আগে একটা দিন কি পাবো না! তুমি কি আমায় ভালোবেসে গ্রহণ করবে? আমার কী-ই বা আছে ভালোবেসে জড়িয়ে নেবার মতন! আসলেই কী আছে আমার, যে তুমি মুগ্ধ হয়ে মন ভরাবে, কাছে টানবে! শরীরে শরীর কথা বলবে! বিশ্বাস করো, সবকিছুর শেষে বড্ড বেশি একা লাগে। আমার একটা ভালোবাসার শরীরী মন চাই, যে আমাকে ছুঁয়ে যাবে; যতটা ছোঁয়নি কেউ কোনওদিনই!

ভাবনা: দুইশো আটত্রিশ।

……………………………………..

একটা গল্প আছে। হয়তো শুনেছ। শুনে থাকলে আবারও শোনো।

এক লোক অনেক মালামাল নিয়ে মরুভূমি দিয়ে যাচ্ছিলেন। সাথে একটি উট ছিল, কিন্তু ওতে কেবল মালামালগুলোই বহন করা যাচ্ছিল। তাকে প্রচণ্ড রোদ আর গরমের মধ্যে হেঁটেই যেতে হচ্ছিল। অবশেষে আর কষ্ট সহ্য করতে না পেরে, তিনি প্রার্থনায় একটি উট চাইলেন।

উট তিনি ঠিকই পেয়েছিলেন, কিন্তু সেই উট তাকে বহন করেনি, বরং তাকেই উটটাকে বহন করতে হয়েছিল। মানে, আগের উটটাই একটা বাচ্চা প্রসব করেছিল।

সত্যিই জীবনটা ভীষন অদ্ভুত। আমরা জীবনে এমন অনেক কিছুই চাই, যা পেয়ে গেলেও সেই চাওয়াটা পূর্ণতা পায় না। আমরা ভুলভাল অনেক কিছু চাই, কিংবা কখনও হয়তো ঠিক চাওয়াটাই চাই, অথচ সেটা এমনভাবে পাই যে………সবই শুধু ভুল হয়ে যায়!

একজন মানুষের খুব ইচ্ছে, তিনি জীবনের সমস্ত সঞ্চয় দিয়ে একটা বাড়ি বানাবেন। সেই ইচ্ছে পূরণ হল, কিন্তু যেদিন তিনি বাড়িতে উঠবেন, তার আগের রাতেই তিনি হার্ট অ্যাটাকে মারা যান।

এক মহিলার জীবনের শুরুটা কেটেছিল অনেক কষ্টে। একটা ভাল শাড়ি ছিল না কোথাও পরে যাবার মতো। অনেক শখ ছিল, তার অনেক শাড়ি হবে। একটা সময় সত্যিই তার আলমারি ভর্তি দামিদামি শাড়ি থাকে, কিন্তু কী জানি এক আজব কারণে তিনি আর শাড়ি পরেন না।

এক নিঃসন্তান দম্পতি একটা খুপরি ঘরে থাকতেন—একটা বড় চারচালা ঘরে। তাদের স্বপ্ন ছিল একটা বড় ঘরে থাকার। এক আত্মীয় তাদের ইচ্ছে পূরণ করেন। তৈরি হতে থাকে তাদের স্বপ্নের ঘরটি। কিন্তু সেই ঘরে ওঠার দুদিন আগে এক ভয়ংকর টর্নেডোর আঘাতে সেই ঘর একেবারেই নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়।

বাইরে ঝুউউউম বৃষ্টি। এমন বৃষ্টি-দুপুরে কারও খুব গরুর মাংসের ভুনা দিয়ে খিচুড়ি খেতে ইচ্ছে করল। সেই মুহূর্তে ওসব রান্না করা প্রায় অসম্ভব ছিল। কিন্তু ইচ্ছে যেহেতু প্রবল, তাই সব রান্না হল। অবশেষে আয়োজন করে যেই খেতে বসেছে, অমনিই বৃষ্টি উধাও হয়ে কাঠফাটা রোদ! ইচ্ছে পূরণের মাংস তো রান্না হল, কিন্তু বৃষ্টিটাই যে নেই, সাথে ইচ্ছেটাও চলে গেছে।

কোনও প্রিয় মানুষের কর্মস্থলে নিজে বদলি হবার অনেক ইচ্ছা, তাই প্রবল চেষ্টা। অবশেষে ইচ্ছেপূরণ। কিন্তু হায়! ততদিনে সেই প্রিয় মানুষটিকেই যে বলদি হয়ে অন্যত্র চলে যেতে হয়!

বর বিদেশ, বৌ স্বদেশ। বৌ চেষ্টা করতে থাকে বরের কাছে যাওয়ার। কতটা বছর ধরে দুজন দুদেশে! অবশেষে ওদের প্রতীক্ষার পালা শেষ হয়। ইচ্ছে পূরণ হয়। বৌ চলে যায় বরের কাছে। কিন্তু কয়েকদিনের মধ্যেই বরের ভিসার কাগজপত্রের কী একটা সমস্যার কারণে যেন বরকে দেশে চলে আসতে হয়! একটা বড় সংসারের আর্থিক যোগান দিতে বৌটা বিদেশেই রয়ে যায়।

এমনই আরও কত কিছুই তো ঘটে, তাই না? কখন যে কোন ইচ্ছেটা নিরর্থক হয়ে যায়, কে বলতে পারে! অথচ, সে ইচ্ছেটা পূরণ হওয়ার আগ পর্যন্ত সেটিকেই পাওয়ার জন্য আমাদের মনপ্রাণ ব্যাকুল হয়ে থাকে! এমনও হয়, ইচ্ছেগুলো পূরণ হয়েও কোথায় যেন সব এলোমেলো হয়ে যায়। তখন মনে হয়, যা পেয়েছি, তা কেন চাইলাম? কেনই বা উনি আমার ইচ্ছেটা পূর্ণ করলেন! কেন সবসময়ই আমি যা চাই, তা আমাকে পেতেই হবে?