ভাবনাদেয়ালের পলেস্তারা (৪র্থ অংশ)

ভাবনা: বাইশ।

……………………..

I don’t know if I love you or not………. I never had experience with love before.

All I know is that I have never felt anything for anyone else………the way I feel for you.

ক্রাশ তো জীবনে বহুত খাইসি! ক্রাশ খাওয়া কোনো ব্যাপার না।

But the way you affect me…….is weird…….coz আর কারো কোনো কথায়/ আচরণে আমি আগে কখনোই এতো influenced হই নাই। তুমি একটা বিশ্রীরকমের নেশা। আমি এটার হাত থেকে মুক্তি চাই। এটাকে কি ভালোবাসা বলে নাকি? সেটাও তো বুঝতেসি না। নিজেরে পুরাই স্টুপিড মনে হইতেসে। মাইনষ্যে এইসব ভালোবাসাটালোবাসা সামলায় ক্যামনে? উফফফ! নিজের উপরেই বিরক্ত লাগতেসে!!

Someday you, my epic first love, will become just someone I used to know……তোমাকে আমার just someone লিখতে অনেক কান্না পাচ্ছে, কিন্তু হায়! এটাই বাস্তবতা। এবং এর জন্যে তুমি দায়ী নও, জানি; তবুও বলতে ইচ্ছে করছে, তুমিই দায়ী। ………… তুমি আমাকে কখনোই ভুলতে পারবা না, দেইখো!….……আমি তোমাকে অভিশাপ দিচ্ছি না, আবার it’s not like you’ll have feelings for me…………just that I will always be there somewhere at the back of your mind………Yes, I’ll be! জিজ্ঞেস করতে পারো, কেনো?…………… তুমি তোমার অভালোবাসা (ভালোবাসার উল্টোপিঠে ঘৃণা, এটা আমি মনে করি না।) নিয়ে যতোটা দ্বিধান্বিত ছিলে (কিংবা কে জানে, এখনো আছো!) আমি আমার ভালোবাসা নিয়ে ততোটাই নিশ্চিত ছিলাম, আছি, থাকবো। ……… I can bet you can never say in this way! But I still wonder how people who play with vulnerable hearts talk about true love, and with SUCH depth. It’s funny, na?! ……… তুমি নিজেও জানো না তুমি যে আমার কতো বড় উপকার করসো! ওই ধাক্কাটা আমার জীবনে খুব দরকার ছিলো। আমি বেশি আদরে মানুষ হইসি, কখনোই ‘না’ শুনি নাই। Fairy tale-এ বসবাস করতাম। ভাবতেসো, তোমারে ঘৃণা করতাম? না। ওইসময়ে আমি আমার কষ্ট নিয়ে এতোটাই engaged ছিলাম যে তোমারে ঘৃণা করারও time ছিলো না আমার। তুমি কল্পনাও করতে পারবা না, ঘৃণা করতে না পারার শক্তি কতোটা বেশি! Now I am strong enough to face ANYTHING. I can take a rejection and slap it back on the rejector’s face………কেলি ক্লার্কসনের What Doesn’t Kill You গানটা শুনতে বলসিলা না আমারে? এখন ভাবি, ক্যান বলসিলা? গানটার ভিতরে একটা প্রচণ্ড শক্তি লুকায়ে আছে। ওই মেয়ে ওই কথাগুলো ক্যামনে বলসে কে জানে! গানটা কি আসলেই তোমার প্রিয়? আমি অ্যাট লিস্ট এক হাজারবার গানটা শুনসি। আর ভাবসি, তুমি কি আমারে মাস্টারপ্ল্যান কইরা ছ্যাঁকা দিসো কিনা আল্লাই জানে! হাহাহাহা……….. Yes, I’ve learnt to laugh at myself now! Life is all about making fun of yourself! ভাবতে পারো? আমি কী করসিলাম, জানো? একটা বেড়ালকে দেখে মনে হইসে, ও কেন ম্যাঁও করে? ও একটু ঘেউ করুক না! আহ্লাদি মেয়ে তো, যা মাথায় আসছে, তা নিয়ে লেগে গেলাম! ওকে শেখাতে লাগলাম কীভাবে ঘেউ করতে হয়। আমার পুরা লাইফটা দিয়ে দিলাম ওকে ঘেউ ডাক শেখাতে। আর আমার অ্যাচিভমেন্ট? বেচারা আমার দিকে কিউট করে তাকায়ে চোখ দুইটা ছোট-ছোট লোম ফুলায়ে আদুরে গলায় বলসে, ম্যাঁও!! হাহাহাহাহা………

Disclaimer: If you have decided to decide what to decide or not to decide from a writing apparently, you have to decide first not to decide to hold the writer responsible for whatever you are likely to be deceived by what you are likely to derive from it, for sometimes writers are liars even only for the sake of bagging some silly Facebook likes.

ভাবনা: তেইশ।

……………………..

আপনাকে চাইলেই ভাইয়া বলা যায়। চাইছি না। আমি কেউ না, এটা আপনি মেনে নেবেন—এই বিশ্বাস থেকেই নক করছি। জিজ্ঞেস করতে ইচ্ছে করছে, আট বছর আগের এক জন্মদিনের ৪৬৬টা শুভেচ্ছাবার্তা আপনাকে মুগ্ধ করেছিল…..আর এবার? সংখ্যাটা জানতে পারলে ভাল লাগবে। জন্মদিনে উইশ করলাম না। আমি করি না। জন্মদিনে আমার শুধুই সময়কে গালি দিতে ইচ্ছে করে। সময় কেন এমন কাউকেও বয়ে নিয়ে যায়, যার চলতেই কষ্ট হয়? সময় হেঁটে চলে জীবনকে পিঠে নিয়ে…..সাথে আমরাও যাই। আপনার চলাটা সুন্দর কিনা জানি না, তবে দূর থেকে তো সুন্দরই দেখায়। ওটা নিয়ে আমার আগ্রহ আছে। আপনারও আমার আগ্রহকে পাত্তা দিতেই হবে, এমন নয় কিছুতেই। তবু, তাড়িয়ে দেবেন না। আর দিলেও, আমি যাবো না। কোনো না কোনোভাবে ঠিক ফিরে আসব। এটা ঠিক করেই এলাম।

তো যেটা মনে করে প্রথম নকটা করা। সেদিন আপনার একটা লাইক দেখে আমার ভাল লাগেনি। নিঃস্বার্থ ভালোবাসা থেকে নাকি অধিকারের জন্ম নেয়-সেখান থেকেই বলছি….এমন ছবিতে লাইক না দিলে আপনার কি খুব কিছু হয়ে যাবে? জানি, উনি আপনার ফ্রেন্ড, তবুও খারাপ লাগল দেখে। নিজে একটা মেয়ে বলেই হয়তো কেউ মেয়েদের এভাবে দেখলে খুব লজ্জা লাগে। তবে মেয়েরাও খুব যে সামলে চলে, তা নয়। চললে, ওরকম ছবি তুলত না, তুললেও পাবলিকলি দিত না। জানি, আপনি একা একটা লাইক দেয়া না-দেয়ায় তেমন কিছু এসে যায় না। কিন্তু ভাবুনতো, একটা মানুষও যদি একটা ভাল কথা শোনে তাহলেও কি অনেক নয়? ১-এর কি কোনোই মূল্য নেই? মাত্র এক টাকা কম হলে এক কোটিকে কেউ এক কোটি বলতে পারবে, বলুন? মাত্র এক টাকার অভাবে কারোর কোটিপতি হওয়ার সৌভাগ্য নাও হতে পারে। কিছু-কিছু মানুষ ডাস্টবিনের ময়লাখাওয়া কুকুরের মতো—ওদের কাছে ডাস্টবিনের ময়লা খাবার আর শেরাটনের খাবারের মধ্যে কোন পার্থক্য নেই। রুচিহীনরাই সবচাইতে রুচিকর জায়গায় বসে আছে। এসব মানুষ থেকে বাঁচা যায় কীকরে? যারা ওরকম নয়, ওদেরকেও এখন আর কাছে রাখতে পারছি না। ওরা দূরে সরে গেছে, যাবেই তো! বড় হওয়ার সাথে-সাথে দূরত্ব বাড়তে থাকে। ব্যস্ততার সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়ে যোগাযোগ বিচ্ছিন্নতা। ধরে-ধরে সবার খবর নেয়ার ইচ্ছেটা থাকলেও সময়টা পালিয়ে গেছে। সময়ের চাইতে পলায়নপর আর কী আছে? বাঁচাটা সবার শুভ হোক, যার-যার নিয়মে। মৃত্যুটাও শুভ হোক। ওই একটা ব্যাপারই জীবনে নিশ্চিত। কে বলে মৃত্যু অনেক দূরে? মৃত্যুর চেয়ে কাছের সত্যিই কি কিছু আছে? ডাকলেই চলে আসে, এতোটা বিশ্বস্ত নয় যদিও সবসময়, তবে ওর আসাটা ভীষণ ধ্রুব একটা ব্যাপার, মানে, আসবেই আসবে, আগে বা পরে!

ভাবনা: চব্বিশ।

……………………..

ভালোবাসা…..মানুষ পেয়েও কাঁদে—না পেলে ও কাঁদে। “খুব তেষ্টা পেয়েছে—হাতের কাছেই পানির গ্লাস….খেতে ইচ্ছে করছে না…” জীবনটা কখনও-কখনও অনেকটা এমনই…..ভাল আছি….নিজের জন্য নয়—মনের চারপাশে নিজের অস্তিত্বের সাথে লেপ্টেথাকা আপন মানুষগুলোর জন্য—কিন্তু হায়য়য়—তারা যে চায় আমি নিজের জন্যই ভাল থাকি। আমি ভাবি, এও কি সম্ভব? স্রেফ নিজের জন্যই ভাল থাকতে ইচ্ছে করে কার? কে কেমন করে বাঁচে, তা কেউ জানতে পারে না। কেউ দেখতে পায় না কারো ভেতরটা, যদি সে নিজ থেকে না দেখায়। মানুষের ভালত্ব আর মন্দত্ব–দুটোই মানুষের ভার্জিনিটির মতো, পরিষ্কার করে আসল ব্যাপারটা ধরতে না পারলে বোঝা দায়। মানুষ বড় হতে চায়, উন্নতি করতে চায়, পৃথিবীর কাছে জানান দিতে চায় সে আছে, সে কিছু একটা, তাকে আমলে নিতে হবে—ওতে দোষ নেই। কিন্তু প্রায়শই এই সবকিছুর মধ্য দিয়ে গলে পড়ে যায় মনুষ্যত্ব আর চরিত্র। শেষে একদল মনুষ্যত্বহীন আর চরিত্রহীন মানুষ সমাজের উঁচু আসনে বুক ফুলিয়ে অবাধে বিচরণ করে। কে ওদের বোঝাবে, বিশাল দৃশ্যমান শরীরটার কোনো মূল্যই নেই—এক অদৃশ্য আত্মা ছাড়া? মানুষ চায় নিজেকে ছাড়িয়ে যেতে, যে করেই হোক, ওই পাহাড়ে উঠতেই হবে। এর নামই নাকি জীবন, ওরা বলে। এই খেলায় পড়ে কখনও মানুষ জীবনকে বদলে ফেলে—কখনও বা জীবনই মানুষকে বদলে দেয়। ক্ষণে-ক্ষণে বদলেযাওয়া এই বিশাল দৃশ্যমান পৃথিবীটাতে আসলে রাজত্ব করছে অদৃশ্য এক অনুভূতির পৃথিবী। সৃষ্টি থেকে আজ অবধি পৃথিবীর বুকে যে যত কথাই বলুক, তার সমষ্টি নিশ্চয় না-বলা কথার চেয়ে বেশি নয়। আমরা সবাই, কমবেশি, যা বলা হয়েছে, তার বোঝা নিয়ে চলি। যা বলা হয়নি, সে বোঝা বহন করার শক্তি আছে যার, সে একেবারেই চুপ হয়ে যায়। অনর্থক বলা কথার রাজ্যে পৃথিবীটা দোলে। একটা কথা বলে ফেলি, যদি পরে বলতে ভুলে যাই! সাঁতার পারেন তো? না পারলে প্লিজ শিখে নেবেন। যতই ঘুরে বেড়ান না কেন, জলে পড়লে পড়েই থাকবেন। আসলে পড়ে থাকবেন না, সাঁতার না পারলে ডুবে মরবেন। বিশ্বভ্রমণ শেষে মানুষ কিনা মরে এসে ঘরের দরজায় হোঁচট খেয়ে। জানেন তো, বাংলাদেশে যেখানেই যাবেন, সবচাইতে সুন্দর অনেককিছুই জলের ধারে, কিংবা জল পার হয়েই যেতে হবে। যাক গে! আগের কথায় ফিরে আসি। না, ওটা আর বলতে ইচ্ছে করছে না। নিজের একান্ত ব্যক্তিগত একটা কথা বলে ফেলি। এত-এত খারাপ মেয়েরা এত নোংরামি করছে তাদের তো কিছু হচ্ছে না—এমন একটা ভাল মানুষকে কেন শরীরের অংশ হারাতে হবে? বিধাতা এমন কেন? ক্যান্সারে ১৪ বছর আগে আমার বাবা মারা গিয়েছিলেন। দাদারও ক্যান্সার ছিল। বাবাকে যন্ত্রণা পেয়ে-পেয়ে মরতে দেখেছি খুব কাছ থেকে। অনেক বছর ধরেই একটা আতংক আমার মধ্যে, আমারও ক্যান্সার হবে—ব্রেস্ট ক্যান্সার। ঈশ্বর আমাকে ক্ষমা করুন। আমি ঠিকও করে ফেলেছি, ওরকম কিছু হলে আমি বাসা থেকে পালিয়ে যাব। আমার জন্য অকারণে তাদেরকে নিঃস্ব হতে দেবো না। দূরে পালিয়ে গিয়ে শিশুদের জন্য কিছু একটা করবো। সেইসব শিশুদের জন্য, যারা খেতে পায় না বলে কারো কোনো মাথাব্যথা নেই। যাদের খিদে না পেলেই বরং ওদের মা খুশি হন। বাবা মারা যাবার সময় এক আমি ছাড়া মা, ভাই, বোন কেউই পাশে ছিল না। ইচ্ছে করে ছিলো না, এমন নয়। বাবা মারা গেছেন কেমন যেন হুট করে, যেমনি মানুষ অভিমানে হঠাৎ চলে যায়, ওরকম করে। ওরা সবসময়ই পাশে থাকতেন, শুধু বাবা চলে যাওয়ার সময়টাতেই ছিলেন না, এটাও বিধাতার এক ধরনের ইশারা। উনিই ঠিক করে দেন, মৃত্যুর সময় মানুষ শেষবারের মতো কার মুখ দেখতে পাবে। আমার এক কাকা আছেন যিনি মৃত্যুর সময় সেই মানুষটার হাত থেকে শেষ পানিটা খেয়েছেন, যাকে উনি সারাজীবনই ঘৃণা করে এসেছেন। ব্যাপারটার কী ব্যাখ্যা দাঁড় করানো যায়? বাবার কথা বলছিলাম। তখন খুব ছোট ছিলাম, কিন্তু এখনও মনে আছে, বাবা চলে যাচ্ছিলেন বলে আমি একটুও কাঁদছিলাম না। আমাদেরকে এত ছোট অবস্থায় এত অনিশ্চয়তার মধ্যে ফেলে যেতে না জানি বাবার কত কষ্ট হচ্ছে সেটা ভেবেই, খুব কেঁদেছিলাম। বাবার সামনে নয়, লুকিয়ে। কষ্ট হচ্ছে খুউব। এটা নিয়ে আর লিখব না। সৃষ্টিকর্তা সবাইকে সুস্থ রাখুক।

হাসি…..(মানে, হাসছি..) অশুভ দুপুর। নাক চুলকাচ্ছে।

ভাবনা: পঁচিশ।

……………………..

ছবি দেখতে চাইলেন। দিলাম। একেবারে মেকাপ ছাড়া ইনস্ট্যান্ট সেলফি! তা দেখেই আপনি ইনস্ট্যান্টলি উধাও! কেন রে বাবা? কালো মেয়ের প্রেমে কি ফর্মালিন আছে যে দেখলেই পালাতে হবে? আর আমি তো কালোও নই। আমাকে অন্য মেয়েরা পর্যন্ত উজ্জ্বল শ্যামলা বলে! নাকি, যাকে দেখতে পছন্দ হয় না, তাকে দেখলে কালোই লাগে? শুনুন মিস্টার, আপনার সাথে প্রেম করতে নক দিই না। কেন দিই, এটা বলবো না, বুঝে নেবেন। বুঝে না নিলেও আস্তে-আস্তে ঠিকই বুঝে যাবেন। আমি বিশ্বাস করি না যে, মেয়েদের ব্যাপারে আপনার কৌতূহল নেই। আপনাকে সুস্থ স্বাভাবিক বলেই জানি।

মেসেজ দিতে তো আপনার ন্যানো সেকেন্ডও লাগে না! তবুও…..হায়! আমি আপনার এক ন্যানো সেকেন্ডেরও যোগ্য নই! একটা ডট দিয়েও রিপ্লাই দেয়া যায় তো, না? যার মানে, “আমি বিরক্ত। ভাগো এখান থেকে!” ওতেও তো আমি খুশি! যাকে বিরক্ত করছি, সে যদি বিরক্তই না হলো, তবে কী লাভ বিরক্ত করে? পছন্দের মানুষকে বিরক্ত করার মধ্যে অসীম সুখ লুকিয়ে আছে। এটা একটা আর্ট, সবাই তা পারে না। লিখতে কষ্ট হয় না বুঝি? কাউকে-কাউকে, বিরক্ত করতেও কী যে ভাল লাগে! যে আমার নয়, কোনোদিন হবেও না, তাকে বিরক্ত করার সব অধিকার তো আমার আছেই! জীবনের উদ্দেশ্যগুলো প্রায়শই বিধেয় হয়ে যায়—বিধেয়গুলো উদ্দেশ্য হয়ে পড়ে। ওই জায়গাবদলের খেলায় কার হাত, কেউ জানে না। আপনি এর কোনোটাতেই নেই। আবার দুটোতেই আছেন। আপনাকে কোথায় রাখি, মানে, আমার ব্যক্তিগত ভাবনাজগতের কোথায়, এটা নিয়ে আমার মনের মধ্যের দ্বন্দ্বটা মিটিয়ে দিয়ে আমি ওটাকে শেষ করে দিতে চাই না। আসুক কষ্ট, আসুক বেদনা, কিংবা সুখই আসুক না–ভুল করে। পরোয়া করি না। সুখকে পরোয়া না করে চলার বয়সে পৌঁছে গেছি অনেকদিন আগেই; বয়স মানে, মানসিক বয়স। তবে যা আমি চাইছি না, অথচ চলে আসে—অবলীলায় অবাধে, আমি তাকে সহ্য করতে পারি কম। এই যেমন, চোখের জল। সত্যিই মনে হয়, চোখের জল কোনো মানুষ হলে মেরে তক্তা বানিয়ে ফেলতাম সেই কবে!…..আবার ভাবি, না থাক, মারবো না; ওই একটা জিনিসই তো কষ্টে সঙ্গ দেয়। সবাইই তো সুখের সাথী, কষ্টের সাথী তো ওই একজনই। ওকে কীভাবে দূরে সরাই? এ জগতে কাঁদার জন্যও তো কাউকে না কাউকে লাগে। ও চলে গেলে আর কাকে নিয়ে কাঁদব? যখন কাঁদি, তখন প্রায়ই, নিজেকেই তুলে একটা আছাড় মারতে ইচ্ছে করে। আমি যে কী কী কারণে কাঁদি, তা যদি অন্যরা জেনে ফেলত, তবে ওরা হেসে ফেলার ভয়ে আর কখনো কাঁদতেই পারতাম না।

ভাবনা: ছাব্বিশ।

……………………..

আপনি বুঝছেন না আমি কী বলছি, এইতো? থাক তবে। যা বলেই বলতে হয়, তা না বলাই ভাল। যা না বলেও বলা হয়ে যায়, তাও না বলাই ভাল। তবে বলতে হয় কোন কথাটা? যা কাঁদায়? নিজেকে, কিংবা অন্যকে? নাকি, যা হাসায়? নাকি, যা কোনো অনুভূতিরই জন্ম দেয় না? আছে এরকম কিছু কথা। এই যেমন, ‘আমি বাথরুমে যাচ্ছি।’—এটা। না, ঠাট্টা করলাম। বাথরুমে যাচ্ছি বলার কিছু নেই। ওতে সৃষ্টির যে আনন্দ, তা কর্মের কর্তা ছাড়া আর কাউকেই স্পর্শ করে না। বাথরুম করাটা তাই তেমন মহৎ কিছু নয় যে সদম্ভে ঘোষণা করতেই হবে। আর তাছাড়া, বাথরুমের দরোজা খুলে প্রার্থনাকক্ষে ঢুকে পড়া অসম্ভব। তাই, কোথায় যাওয়া হচ্ছে, সেটা যে বোঝে না, তাকে না বোঝানোই ভাল। তাও লোকে ওটাও বলে—বাথরুমে যাচ্ছি। ………আহা! পৃথিবীর প্রথম মানব হিসেবে কেউ বাথরুমে যাচ্ছেন! দুর্লভতম মুহূর্ত! এরপর কী হবে? এরপর কী হবে? জানার জন্য অধীর আগ্রহে সকলের অপেক্ষা! গ্রেট অ্যাচিভমেন্ট! রীতিমতো রাজ্যজয় করে ফেলার মতো একটা ব্যাপার! কনগ্রাটস্!! —রাবিশ! যত্তোসব টাইপের মানুষের যত্তোসব বিশ্রী কাণ্ড! …… বলতে হয় না কোন কোন কথাটা? অনেকরকমই আছে। একটা বলছি। আমি যদি কাউকে সত্যিই অনেকবেশি ভালোবাসি—কিন্তু এটা যদি এমনই হয়, তাকে বলেই বোঝাতে হয় সেটা, নইলে সে আঁচও করতে পারে না—তবে এমন ভালোবাসার কথা না বলাই ভাল। আবার যখন কেউ আমার ভালোবাসাটা বুঝতেই পারবে—তাকে আর আমার বলতে হবে না যে আমি তাকে ভালোবাসি। জগতে না-বলা কথার শক্তি সবচাইতে বেশি। যা বলা যায় না, তার অস্তিত্ব সবচাইতে ধ্রুব, তাই প্রকট। এই যে প্রকৃতি, এতো সুন্দর, এতো রহস্যেঘেরা, যাকে আমরা নিজেরা নিজেদের মতো করে ভাবি, আবিষ্কার করি, ব্যাখ্যা করে আনন্দ পাই, সে কিন্তু কখনোই কিছু বলে না। বলে না বলেই তো আমরা ছুটে যাই ওরই কোলে—ছুঁতে, গ্রহণ করতে। যা প্রকাশিত, যাকে হৃদয় দিয়ে সাজাতে হয় না, তার আবেদন কতক্ষণের? তার আয়ু ফুরোয় কয় পলকে? তার আকর্ষণই বা কীসে? সে কাকে টানে পাগলের মতো?

আপনি আমার সাথে কত % একমত? ০%? নাকি, পড়েনইনি, এতক্ষণ যা লিখলাম?……বলেই যাচ্ছি। বকেই যাচ্ছি। জানি, রিপ্লাই আসবে না, তবুও….। আমি অবহেলা পেতে হাত পেতে দিয়ে বসে আছি–এতোটাই বেআক্কেল বেহায়া! আপনাকে মেসেজ দেয়াটা অনেকটা এসএসসি এইচএসসি’র প্র্যাক্টিকাল খাতা সাবমিট করার মতো—রাত জেগে-জেগে এতো কষ্ট করে, ঠিক বানানে, নিখুঁত চিত্র এঁকে, কত যত্ন করে খাতাগুলো লিখতাম, তৈরি করতাম—আর স্যাররা একটু দেখে না দেখেই ছুঁড়ে-ছুঁড়ে বারান্দায় ফেলে দিতেন ওগুলো! স্কুলের দারোয়ান আর রদ্দিওয়ালাদের লাভ হতো! আমাদের শিক্ষার মূল্য শিক্ষকদের চাইতে রদ্দিওয়ালাদের কাছেই বেশি ছিল। আমাদের কষ্টের দামে ঝালমুড়ি বিক্রি হতো। মনের দুঃখে মাঝে-মাঝে ইচ্ছে করতো, যা ইচ্ছে তা-ই লিখে দিই! একবার লিখে দিয়েছিলামও! আইয়ুব বাচ্চুকে কৌশলে ঢুকিয়ে দিয়েছিলাম ব্যাঙের প্রজননতন্ত্রে। স্যারদের চোখে পড়ে যায় কিনা, সে চিন্তায় অনেক রাত ঘুমোতে পারি নি। ধরা অবশ্য খাইনি। ফাঁকিবাজ ছিলাম তো, তাই! ফাঁকিবাজরা ধরা খায় না, আন্তরিকরাই ধরা খায়—কী ছোটবেলায়, কী বড়বেলায়। ঘরেও, বাইরেও। জীবনের সবজায়গাতেই—এমনকি, প্রেমেও!

ভাবনা: সাতাশ।

……………………..

উফফফ্…….হুমায়ূন আহমেদ!! যাঁর লেখায়, একই উপাদান—হাসাতেও পারে, কাঁদাতেও পারে……মাঝে-মাঝে হাসতে ইচ্ছে করে, কখনো-কখনো, কাঁদতেও। শিবরামের লেখা—হাসায়, শিবরামের জীবন—কাঁদায়। হাসি আর কান্না, একই জীবনমুদ্রার এপিঠ ওপিঠ—আমি দুটোতেই যাই, ঘুরে আসি, ভাল লাগে। শুধুই ভাল কাজ করি না এই ভয়ে, যদি সত্যি-সত্যি স্বর্গে গিয়ে হাজির হই! স্বর্গ বড্ডো বোরিং একটা জায়গা, সব বোরিং লোকজন স্বর্গে গিয়ে হাজির হয়। ওদের সাথে বড়োজোর মেশা যায়, কিন্তু অনেকদিন থাকা যায় না। এ জীবনে, নরকটা দেখবোই না, এ কী করে হয়? নরকের লোকজনের সাথে আড্ডা দিয়ে বড়ো সুখ। তাই, ভাল কাজের মধ্যেই খারাপ মিশাই ইচ্ছামতো, যাতে, কনফিউশনে হলেও, আমাকে দুই জায়গাতেই ঘোরান উনি। কীভাবে মিশাই? এই যেমন, কোনো ছোট্ট বাবুকে আদর করার সময়, কেউ না দেখে মতো করে, এক ফাঁকে জোরে একটা চিমটি দিয়ে দিই, এমনভাবে, যাতে দাগ না পড়ে যায়। ও কেঁদে ফেলবে-ফেলবে করলে আবার কোলে নিয়ে এমনভাবে আদর করি যে, ওটা দেখে, ওর মা-ই বলে বসে, “এই দুষ্টু ছেলে, আন্টি তোমাকে এতো আদর করছে, আর তুমি কাঁদছ? ছিঃ! পচা ছেলে একটা!” একই মানুষ, অথচ কত রকমের মন নিয়ে চলি। বেশি সুখ, বেশি হাসি, বেশি আনন্দ—বেশিক্ষণ সহ্য করতে পারি না। তাই কাঁদি, একটু শান্ত হই। শান্ত হতে কাঁদতে জানতে হয়। শুধুই সুখ আর সুখ অসুখ নিয়ে আসে। সে অসুখের দাওয়াই নেই কোনো। অনেক আনন্দে নিজেকে খুব বেশি ভাসতে দিই না, সবটা ভেতরেই চেপে রাখি, জোর করেই—এই ভয়ে, পাছে কষ্টগুলোও যেন খুব একটা সুবিধা করতে না পারে; বেশি হাসলে কষ্টরা খুশি হয়, ওরা অপেক্ষা করে থাকে আমরা কখন হাসি, এটা দেখতে। আমরা হাসলে ওরা প্রচণ্ড উদ্যমে চেষ্টা করেই যায়, খুব দ্রুত কাঁদানোর। জীবনে, মনের চারপাশের অনেক ভালোবাসার (অবশ্যই, নিঃস্বার্থ) মানুষগুলোর একটুখানিও ভালোবাসা (….নিঃস্বার্থই) পেলে কী যে ভীষণ ভাল লাগে! সৃষ্টিকর্তা এত ভালোবেসে আমাদের সৃষ্টি করেছেন—তাঁকে স্মরণ করলে তিনি নিশ্চয়ই অনেক বেশি খুশি হন, অথচ, তাতেও কার্পণ্যের শেষ নেই আমাদের। সত্যিই বড্ড বেশি অকৃতজ্ঞ আমরা। ইসস্! কী অসহায় লাগে যখন নিজের মন নিজেরই কথা না শোনে। বুঝি সবই, মনটা তো আমার খায়ও না, পরেও না, শুনবে কেন সে আমার কথা?—তবুও। নিজের কথামতো নিজের মনটা না চলা—এটাও একটা শাস্তি: যা ভুল করেছি, তার; যা করবো, তারও।

ভাবনা: আটাশ।

……………………..

বসুন্ধরার ‘স্টার সিনেপ্লেক্স’এ মাঝে-মাঝে একাই মুভি দেখতে যাই। যে মেয়েটির কেউ নেই, যাকে কেউ মুভি দেখাতে নিয়ে যায় না, তারও কিন্তু সিনেপ্লেক্সে মুভি দেখতে ইচ্ছে করে। আমার তো আর ‘কেউ’ নেই, মানে ওরকম কেউ, যাকে সবাই মিলে ‘বয়ফ্রেন্ড’ নাম দিয়েছে, যার পকেট কাটতে বড়ো সুখ, যার গলায় দুগ্গা-দুগ্গা বলে ঝুলে পড়াটাই হালের ফ্যাশন, যার সাথে সত্যিকারের প্রেম থাক না থাক, সেলফি-প্রেম থাকতেই হয়, হৃদয়ের দাবি থাক না থাক, ঢাকঢোল পিটিয়ে প্রচার করার দাবি ভীষণ রকমের বেশি (ইয়ে মানে, প্রচারেই প্রসার কিনা!), একটা টিস্যুর প্যাকেট লাগলেও যাকে দিয়ে আনিয়ে নেয়া যায়, যার ছোঁয়ায় মন জাগুক আর না জাগুক, শরীর জেগে ওঠে, যার পেটে যায় গার্লফ্রেন্ডের (বা, গার্লফ্রেন্ডদের) লিপস্টিকের ৭০ ভাগই, তেমন কেউ। প্রেমে পড়লে সব মেয়েই তার বয়ফ্রেন্ডকে নাইটগার্ড বানিয়ে ফেলে, কিংবা ছেলেটাই মহানন্দে বিনা বেতনে নাইটগার্ডের চাকরি নিয়ে নেয়। নাইটগার্ড কখনো-কখনো ফাঁকিটাকি মেরে ঘুমিয়ে পড়ে, কিন্তু বিএফ-নাইটগার্ড রাত জেগে ডিউটি দেয়ার ব্যাপারে মাত্রাতিরিক্ত আন্তরিক! আধুনিক ভালোবাসা পকেটের টাকা আর চোখের ঘুম, দুইই কেড়ে নেয়। অফুরন্ত বেকার সময় কাটাতে প্রেমের উপর আর কিছু নেই। আগে একটা সময়ে মানুষ প্রেমের জন্য জীবন দিয়ে দিত, আর এখন ফেসবুকের পাসওয়ার্ডটাও দেয় না। প্রেমের নাম এখন আর বেদনা নয়, প্রেমের নতুন নাম ব্রেকাপ-রিহার্সেল। ব্রেকাপ একটা নাটক, সে নাটকের রিহার্সেলের নামই প্রেম। প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়ে গেলে, কেউ আর বলে না, I am in love, অতোটুকু মিথ্যে বলতে বুক কাঁপে হয়তো, বরং বলে, I am in a relationship, কিংবা I am in an affair এরকম কিছু একটা। আগে হতো প্যাকেজ নাটক, এখন হয় প্যাকেজ অ্যাফেয়ার, প্যাকেজ ব্রেকাপ। আগে প্রেম হতো সারাজীবন একসাথে থাকার নিয়ত নিয়ে, এখন প্রেম হয় পরবর্তী প্রেম পর্যন্ত একসাথে থাকার নিয়ত নিয়ে। আগে পরস্পরের আঙুলের আলতো স্পর্শ লাগলেও, প্রচণ্ড শিহরণে দুজনেরই লোম দাঁড়িয়ে যেত, এখন পরস্পরকে জড়িয়ে ধরলেও কিছুই দাঁড়ায় না। যাক্ গে, আমি ওই লাইনের নই, তা সত্ত্বেও অনেক অনধিকার চর্চা করে ফেললাম। তারপর যা বলছিলাম। আমার বিএফ মানে বয়ফ্রেন্ড নেই বলে যে মুভি দেখার শখও নেই, তা তো আর না। কিন্তু কে বুঝবে এ কথা? কাউন্টারে, ‘একটা টিকেট দিন’ শুনেই, কাউন্টারের দুজন পরস্পরের মধ্যে অদ্ভুত দৃষ্টিতে চোখ বিনিময় শেষে আমার দিকে এমন অসহায়(!) মুখ করে তাকাতো, মনে হতো, যাই, ওদের একজনকে সাথে নিয়ে ঢুকি, তবুও এমন আজব অভিব্যক্তির হাত থেকে নিজেকে বাঁচাই! সিনেপ্লেক্সে একটা মেয়ের একা মুভি দেখতে আসাটা ভিনগ্রহের কোনো ‘অসহায়’ এলিয়েনের কাজ।

আজকে যাবো মুভি দেখতে। অনেকদিন পর সেই অসহায় মুখগুলো আবার দেখব। ঠিক করেছি, ঠোঁটে ক্যাটক্যাটে লাল লিপস্টিক আর চোখে ডিপগ্রিন সানগ্লাস পরে টিকেট কাউন্টারের সামনে গিয়ে হাজির হবো। ……… হেইই ম্যান্‌! নিবে নাকি একদিন এই এলিয়েনটাকে মানুষ করার দায়িত্ব? টিকেটের দামটা আমাকে দিতে হবে? ওকে; তবে কফির বিলটা, তোমার। রাজি? হিহিহি….তুমি নিজেই বদ এলিয়েন একটা! (বিশেষ দ্রষ্টব্য: ‘তুমি’র জায়গায় নিজ দায়িত্বে ‘আপনি’ বসিয়ে নেবেন। কী? মেজাজ খারাপ হচ্ছে? আমাকে কাছে পেলে তুলে আছাড় মারতে ইচ্ছে করছে? কাছে ভিড়ছি কোথায়? দূরেই তো আছি….. দূরেই থাকব… আপনি ভয়ংকর—কাছে গেলে আর ফিরে আসতে পারব না; ভয়টা আপনাকে নয়, আমার নিজেকেই! পুরো পৃথিবীও বেপরোয়া হয়ে গেলে আমার কিছুই এসে যায় না, কিন্তু আমি নিজে বেপরোয়া হয়ে গেলে তখন আমি কী করবো? এই এক ‘আমি’ বাদে, পুরো পৃথিবী আমি সামলে চলতে পারি। দরকার হলে, দুনিয়ার যেকোনো ভয়ংকর বিষও খেয়ে নেবো হাসিমুখে, কিন্তু ভালোবাসায় নিজেকে জড়ানো? নৈব নৈব চ!)