ভাবনাদেয়ালের পলেস্তারা (৪৮শ অংশ)

ভাবনা: তিনশো ত্রিশ

…………………………………

একটা গল্প বলি, কেমন? জীবনের গল্প। (যাঁদের হার্ট দুর্বল, তাঁরা অনুগ্রহ করে এই গল্পটা পড়বেন না।)

একটা ছেলে আর একটা মেয়ে। দুজন দুজনকে ভালোবাসতো। একদিন ওরা ঠিক করলো, বিয়ে করবে। দুজন কাজি অফিসে গেলো, বিয়ে করলো। সেখান থেকে ফেরার পথে ওদের গাড়িটা অ্যাক্সিডেন্ট করলো।

তারপর………

ছেলেটির স্পটডেথ! মেয়েটিকে ভর্তি করানো হলো হাসপাতালে। মেয়েটির যখন জ্ঞান ফিরলো, তখন সে ছেলেটির কথা জিজ্ঞেস করলো।

সবাই ওকে অনেক করে বোঝানোর চেষ্টা করে যাচ্ছিল, কিন্তু কিছুতেই মেয়েটিকে শান্ত করা যাচ্ছিল না। সে কেবলই কাঁদছিল আর বলছিল, “কেন আমি ওর কথা শুনতে গেলাম! কেন আমি ওর কথা শুনে অটোর ডানদিকে বসলাম না! কেন ওকেই চলে যেতে হলো!” তার তীব্রকান্না সে বদ্ধ ঘরটার বাতাসকে ভারি করে তুলছিল।

কাঁদতে-কাঁদতে মেয়েটির প্রায় অন্ধ হওয়ার দশা! একটা সময় সে বললো, আচ্ছা, ঠিক আছে, বিয়ে করে তো আর সংসার করতে পারলাম না, ওর রক্তমাখা পাঞ্জাবিটা আমাকে দাও, আমি ওটা নিয়েই সংসার করবো। বাকি জীবনটা ওর স্মৃতি বুকে নিয়েই কাটিয়ে দেবো।

মেয়েটি ছেলেটির সে রক্তমাখা পাঞ্জাবিটা পরম মমতায় বুকে জড়িয়ে বাসায় গেলো।

এভাবে আরও কয়েকদিন যাওয়ার পর………

মেয়েটির বাবা একদিন স্বপ্নে দেখলেন, উনার কাছে এক ভয়ংকর রকমের অদ্ভুত কণ্ঠস্বরের মানুষ এসে চাপাগলায় বলছে, পাঞ্জাবিটা দিয়ে দে, নইলে তোদের মৃত্যু হবে!

প্রথমবার মনের ভুল ভেবে উনি ওটা নিয়ে কিছু ভাবলেন না। এভাবে দ্বিতীয় দিনও তিনি একই স্বপ্ন দেখলেন। পরপর কয়েকদিন একই স্বপ্ন দেখার পর তিনি স্ত্রীকে বললেন এ দুঃস্বপ্নের কথা। স্ত্রী জানালেন, তিনিও এই স্বপ্নটা দেখছেন কয়েকদিন ধরে, ভয়ে কাউকে কিছু বলেননি। এরপর দুজনে মিলে ব্যাপারটা মেয়েকে বললেন। মেয়ে জানালো, সেও এই একই স্বপ্ন কয়েকদিন ধরে দেখছে।

সবাই তখন মহা মুশকিলে পড়ে গেলো। ব্যাপারটা ওদের মধ্যে ভয়েরও সৃষ্টি করলো।

এরপর একদিন।

হঠাৎ মধ্যরাতে মেয়েটি তার দরজায় কড়া নাড়ার শব্দ শুনতে পেলো। সে ভয়ে দরজা খুললো না। কেউ একজন বাইরে থেকে আরও জোরে কড়া নাড়তে লাগলো। তখন বাধ্য হয়ে দরজা খুলতেই মেয়েটি দেখলো, সামনে দাঁড়িয়ে আছে স্বপ্নের সেই অদ্ভুত মানুষটি!

ভয়ে ওর রক্ত হিম হয়ে গেলো!

লোকটি স্বপ্নের মতোই বিদঘুটে আওয়াজ করে বলতে লাগলো, পাঞ্জাবিটা দিয়ে দে, নইলে তোদের মৃত্যু হবে!

এটা শুনে মেয়েটির সে কী কান্না! সেই পাঞ্জাবিটাই যে তার প্রিয়তমের একমাত্র শেষ স্মৃতি! এটা বুকে আগলেই তো সে এতদিন বেঁচে আছে! এটা দিয়ে দিলে সে বাঁচবে কী নিয়ে!

মেয়েটি কিছুতেই পাঞ্জাবিটা দিতে রাজি হলো না। আর ওদিকে ওই লোকটি পাঞ্জাবি না নিয়ে যাবেই না!

একটা সময় মেয়ে দুইহাত জোড় করে অনেক কেঁদেকেঁদে বললো, এটা রাখার কি কোনো উপায়ই নেই?

মেয়েটির এমন আকুলতা দেখে লোকটির মনে মায়া জন্মালো। সে বললো, উপায় একটা আছে।

মেয়েটি চিৎকার করে বললো, কী সে উপায়?

উত্তর এলো, যদি তুমি পাঞ্জাবিতে লেগেথাকা রক্তের দাগ ধুয়ে সরাতে পারো, তবেই আমি তোমার কাছে রেখে যাবো তোমার স্বামীর এই শেষ স্মৃতি!

এরপর মেয়েটি পাঞ্জাবি ধুতে গেল। কিন্তু কিছুতেই সে পাঞ্জাবির দাগ সরাতে পারলো না!

লোকটি এবার বিকট শব্দে হেসে বললো, পারলে নাতো? তাহলে এবার পাঞ্জাবিটা দিয়ে দাও!

মেয়েটি আবারও পাগলের মত কাঁদতে শুরু করলো। বললো, আমাকে আরেকবার সুযোগ দিন! এ পাঞ্জাবি ছাড়া আমি বাঁচবো না!

লোকটি মৃদু হেসে বললো, ঠিক আছে, দেখো চেষ্টা করে!

মেয়েটি তার সবটুকু শক্তি দিয়ে চেষ্টা করলো পাঞ্জাবিটা কেচে দাগ তুলতে। কিন্তু হায়, দাগ কিছুতেই উঠলো না!

অগত্যা নিরুপায় হয়ে মেয়েটি লোকটির পায়ে ধরে কেঁদেকেঁদে দাগ তোলার উপায় জানতে চাইলো………

তখন লোকটি বললো………

উপায়টা হলো

.

.

.

.

.

.

.

.

.

.

.

সার্ফএক্সেল আছে না!

মোরাল অব দ্য স্টোরি: দাগ থেকে যদি দারুণ কিছু হয়, তবে তো দাগই ভাল!

ভাবনা: তিনশো একত্রিশ

…………………………………

এক।

রঙবেরঙের সব কষ্টজল এক পাত্রে জমিয়ে রাখি……একসময় উপচে পড়ে…….তখন ঠিক বুঝতে পারি না—কোন রঙের জলটা বেয়ে পড়ছে…….শুধু জানি, নতুন জলকে জায়গা দিতে হবে…..তবুও…..জীবন ঠিকই ছুটে চলে…….

সকাল সুন্দর……আপন আর প্রিয়জনদের সাথে কাটানো সকাল—আরও সুন্দর!

নীলকষ্ট। নীলজল। রুদ্ধশ্বাস। রুক্ষবিশ্বাস। চেতন কিংবা অবচেতন ইচ্ছের অস্পষ্ট দিগন্ত……জীবন এসব নিয়েই!

অবেলার অবহেলা……সূর্য আর তারার একসাথে পথচলা….মনটাকে…….কিছু বলা, বলতে-দেয়া…… কে বোঝে!

কারো চুলে খুব ভাল করে তেল দিয়ে দিতে ইচ্ছে করছে……চুলের একটুও যত্ন নেয় না, এমন কারো চুলের যত্ন নিতে ইচ্ছে করছে। তার চুলে সাধারণ তেল না দিয়ে ক্যাস্টর অয়েল দিয়ে দিতে ইচ্ছে করছে।

ইচ্ছেগুলি এমন কেন!

কারো জন্য, যখন কিছু জানতে চাওয়া হয়, তখন—এক্ষুনিই চাই, জাস্ট নাউ—মিনস্‌ জাস্ট……জাস্ট নাউ! আর, অন্যের ক্ষেত্রে, যখন চাওয়া হল, থাক না তা পড়ে অনন্তকালের অপেক্ষায়…….জীবন—একেক মানুষের জন্য একেক রকম!

দুই।

নিতান্তই ছোটলোকগুলো, মহৎ উচ্চ পদমর্যাদার মানুষদের হিংসে করে অতিকষ্টে, প্রাণপণ যুদ্ধ করে, যে করেই হোক, বাহ্যিক সেই অবস্থানে কোনোভাবে পৌঁছে যেতে পারলে—ভাবে, সে বুঝি তার সমকক্ষ হয়ে গেছে!

কারো, বাহ্যিক অবস্থানের সমকক্ষ হওয়া মানে যে, সেই মহৎ মানুষটি বা মানুষগুলো হয়ে যাওয়া নয়, এই কথাটা ছোটলোকগুলোর বুঝতে যতটা বছর প্রয়োজন, আফসোস!……তার অর্ধেক বছরও তারা বাঁচে না!

তিন।

জীবন, সত্যিই কখনো এসে যেন ভাতের বৈশিষ্ট্য ধারণ করে……আছাড় খেয়েও কিছুই হয় না, অথচ সামান্য চাপেও গলে যায়…….জনাকীর্ণের একাকিত্ব নিশ্চুপে কাঁদে—একার একাকিত্বের মাঝে…….ঘড়ি ঠিকই একই বৃত্তে ঘুরে…….কিন্তু সময় যে অনন্তপানে ছুটে…….হায়…….ফেসবুকের মতো জীবনকে কেন ডিঅ্যাকটিভেট করা যায় না!……কষ্ট, রাগ, বিরক্তির তোলপাড় চলছে…….দ্বৈতসত্তার অপমান—বড় ভয়ংকর…….ভালথাকার মতো হয়ে মানুষ থাকুক… … …তবুও!

বাঁশ, সুর বুঝে না……গান বুঝে না……কিন্তু বাঁশের বাঁশি তো বুঝে……সে…..সুর বুঝে, গান বুঝে…….আর বুঝে……মনটাকে!

স্বার্থ নেই…..তাই, স্বার্থপূরণ শেষে, দ্রুত পালিয়ে যাওয়ার তাড়াও যে নেই……..জীবনভর ঘরের কাজ করেছি, করে যাচ্ছি—কাজ করার লোক কখনোই ছিল না—-কত যে কাজ! আজ এই বেলায় এসে কাজ আছে, কাজ নেই—যেমনই হোক, কেবল আমার মাঝে আমি নেই! কাজের চাপে সময় পাই না, অকাজের চাপে অবসর পাই না।

চার।

“শোনোনি, অনুভব করেছ। তুমি তো মানবপুত্র। যেকোনো সুস্থ মানুষ জীবনের অসংখ্য মুহূর্তে ওই আবেগে বিচলিত হয়। দেবতারাও মুক্ত ছিলেন না।” আহা, লেখকদের সত্যবলার ক্ষমতা অসীম!

যদি বলি, চাই আসিতে…..

আজও কি তুমি বলিবে……

এসো তবে…..

যদি পারো…..

রাতে—

একসাথে থাকিতে……

তোমায় প্রিয়, কোলেই যে রেখে দিতে হবে শেষমেশ! একজনকে ‘তুলে আছাড় দিতে’ ইচ্ছে করছে! আছাড় দেয়ার জন্য তুললে তো আর ফেলতে ইচ্ছে করবে না! তখন তো কোলেই থেকে যাবে কিনা! জগতের সকল ব্যস্ততার ঘাড়ে দুইটা কামড় বসিয়ে দিয়ে নিজেকে মুক্তি দিতে ইচ্ছে করছে!

পাঁচ।

পৃথিবীতে যত প্রাণ—পৃথিবীটা তত রকম…….প্রত্যেকটা জীবন্ত অস্তিত্বের কাছে—জগতটা ভিন্ন…..কারো চেনা পৃথিবীটাই অন্যের কাছে অচেনা……কারো সাথে কারো মিল নেই…….কোটিকোটি প্রাণ—কোটিকোটি পৃথিবী……..

পৃথিবীর একমাত্র প্রাণহীন প্রাণ…….যাকে ভালোবাসা যায় পাগলের মত—বই।

মানুষের কাছে অপ্রিয় হওয়া যে কী ভীষণ সহজ কাজ! আমার কাজটা করতে খুবই হাসি পায়…….সফল হলে—আনন্দ……..সীমা হারায়!

অবেলার অবহেলা……সূর্য আর তারার একসাথে পথ চলা….নিঃসঙ্গতার একটা নীরব শক্তি আছে……নিঃসঙ্গতা নিজেও একটা নীরব শক্তিতে চলে….

ছয়।

এমনি করে কেউ ভাল না থাকুক……সবাই যে কেউ একটা, তা নয়। কেউকেউ……কেউই নয়! কী যে ভীষণ কষ্ট হয়…..আরো বেশি কষ্ট হয়—যখন শুধুই দেখে যাওয়া ছাড়া আর কিছুই করার থাকে না…..সত্যিই কি কিছু করার নেই!

আমার কেউ নাই। হারায়ে গেছে। বাত্তি দিয়ে খুঁজব, সে উপায় নাই। কুপিতে কেরোসিনই নাই! মাঝেমাঝে, ঘুম আর জেগেথাকাকে—কেমন জানি একই মনে হয়…..

এমন একটা ‘সে’ থাকুক, যে শুধুই তার নয়, আমারও। ওর যা ইচ্ছা, তা-ই করবে, তার নিজের ‘সে’কে নিয়ে, আমার ‘সে’কে নিয়ে নয়। আমার যে ‘সে’, ওকে তার যত্নে রাখতেই হবে। রাখতে না পারলে তাকে সারাজীবনের জন্য আমার হয়ে যেতে হবে। তখন যা যত্ন নেয়ার, আমিই নেবো।

একজনকে কেবলই কোলে নিয়ে ফেলতে ইচ্ছে করে! ইচ্ছে করলে আমি কী করব! কিন্তু ** কেজি কীভাবে নেবো? ভারোত্তোলন শিখতে হবে যে! তারপর, কোথাও তাকে পেয়ে গেলেই, কোলে তুলে নিয়ে দৌঔঔড়ড়ড়……চোখ ভিজে, মন ভিজে……চিন্তাগুলোও যে ভিজে!

সাত।

যখন যার কাঁধে হাত থাকে—আমি একবার করে তার হয়ে যাই! এও নাকি জীবন!

হাপরের হাঁসফাঁস…..হাতুরির টুংটাং…..স্ফুলিঙ্গের ছড়াছড়ি……কয়লার ধোঁয়া……দা-এ শান দিলে, কেবল তার ধারই বাড়ে না—ক্ষয়ও যে হয়…….কেউ যদি একটু বুঝত!

এক মৃত্যুকেই হয়তো কেউ ফিরিয়ে দিতে পারে না। কেন মরব? কী লাভ!? এসব বলা যায় না।

লেখকরা যে তাদের লেখার মতো নন—এটা যারা বোঝে না, তাদের একরকম কষ্ট, আর যারা বোঝে, তাদেরও অন্যরকম কষ্ট…….

কাঠবিড়ালীর লেজের কাউকে বেঁধে দিতে পারলে বেশ হত! এটা তার শাস্তি। সে কিছু করেছে বলে নয়, কিছু করছে না বলেই সে এ শাস্তি পাবে।

পৃথিবীর তিনভাগই তো জল, অথচ আকাশটা শুন্য হলেও বৃষ্টি উপর থেকে নিচে পড়ে, নিচ থেকে উপরে নয়……..সব কী আর হিসেব করে হয়!

তখনই নিজেকে ‘তুলে আছাড় মারতে’ ইচ্ছে করে—যখন কেউ কখনো ফোন রিসিভ করে না, করলেও শুধু বকে! আর যখনই তাকে ফোন করা হয়, তখনই ফোনটা অলওয়েজ ওয়েটিং-এ থাকে।

আট।

বাসায় গেস্ট আসার সবচেয়ে খারাপ দিকটা হল—যখনতখন কান্না করা যায় না……যখন ইচ্ছা তখন কাঁদতে না পারাটা আমার কাছে ভীষণ রকমের পরাধীনতা মনে হয়।

এক ইঞ্চি দূরত্বটাও আর সহ্য হয় না যেন……ভিত্তিহীন, স্বার্থহীন, অহেতুক! সব ইচ্ছেকে—পৃথিবীটাও যেন থোড়াই কেয়ার করে……কিন্তু অনুভূতিটা যে মিথ্যে নয়—কেবল একটা মনই তা জানে!

ইসসস্‌! কী কী যেন……কত কত…….কী কী যেন বলতাম! অনেক কিছু বলার থাকলেই যে……চুপ থাকতে হয়……কিংবা সত্যিসত্যিই কেউ যেন গলায় চেপে ধরে! ভাল হয়েছে বুকের যত কথা বুকের ভেতরেই রেখে দিয়েছি! তা না হলে এখুনিই ভেতরের আমি’টা আমায় বকাঝকা শুরু করে দিত!

পরিবারে, এমন কিছু সমস্যা আসে, যা বুঝলেও পরিবারের লোকজন কষ্ট পায়, আবার যদি ভাব দেখায়—কিছুই বুঝতে পারছি না, তাহলেও ওরা কষ্ট পায়।

কাউকে বকা দিতেদিতে কান্না করায়ে ফেলতে ইচ্ছে করলে তখন সামনে কাউকে লাগে। হায়, কেউ থাকে না, সবাই ছেড়ে যায়!

ভাবনা: তিনশো বত্রিশ

…………………………………

এক।

চুলগুলো বেশি বড় হয়ে গেছে—তাকে দেখে এটাই প্রথম মাথায় এল। পুরোই আউলাঝাউলা দেখাচ্ছিল। হাত দিয়ে চুলগুলো ঠিক করে দেয়ার ইচ্ছেটা……একেবারে উপচেউপচে পড়ছিল! এত্তগুলা রাগ আর অভিমানের কাছে থেকে ইটুসখানি ছুটি নিয়ে……কী যে করে ফেললাম……বলা যাবে না!

একজনের গাল দুটো টেএএএনে ছিঁড়ে ফেলতে ইচ্ছে করছে। হাতে চলেআসা দুই টুকরা গালের অংশ প্রিয় কোনো বইয়ের পৃষ্ঠার ভাঁজে লুকিয়ে রাখতে ইচ্ছে করছে।

দা-কে দিয়েছিলাম লেবু কাটতে…..দা বৃদ্ধাঙ্গুলি পছন্দ করল……দুনিয়ায় কষ্টের কোনো দাম নাই! অক্কে! কষ্টকে লাত্থি মেরে ডাস্টবিনে ফেলে দিলাম……কিন্তু যে কষ্টের কাজগুলি আমাকে করতে হয়, সেগুলিকে লাত্থি দিবে কে?

চেনা গল্প বারবার শুনতেশুনতে…….একসময়, অচেনা হয়ে যায়……বলতে পারো—কেন?

একজন আপনি আছেন। উনাকে বলে ফেলতে ইচ্ছে করছে……..আপনি হচ্ছেন—পৃথিবীর সবচেয়ে খারাপ তেলাপোকাটার চাইতেও খারাপ! বুচ্চো কিচু?…….কত্তগুলো চুমু দিলাম! আমি কত্তগুলো ভাল!

দুই।

মানুষের অসুস্থতার সময়ে কিংবা বিশেষ কোনো চিকিৎসা চলাকালীন আর মানসিক যন্ত্রণায়—ন্যানো সেকেন্ডগুলির উপস্থিতি টের পাওয়া যায়……আর সুখ? সে তো বছরকেও ন্যানো সেকেন্ড বানিয়ে ছেড়ে দেয়!

কেউ আমায় বলল, আমি নাকি একজন ‘অভদ্র মহিলা’! কাজেই আমার কাজ তো অভদ্রই হবে! এজন্যই তো রাত তিনটায় আমি উনাকে ফোন দিই! দিতে হয় যে……দোষ তো উনারই!

চাইলে, কাল্পনিক এক-এ’ও আটকে থাকা যায়…….চাইলে, বাস্তবিক লাখ-এ’ও নিজেকে বিলিয়ে দেয়া যায়……..

জীবন—রোজ জন্মে……রোজ, মরে যায়……

মিথ্যে পৃথিবীটা—কী ভীষণ সত্যভাবে………জাপটে ধরে রাখে…..

এসিডের ছিটা দাও—কাটা ঘায়ে! খুব মজা? এসব রংঢং বন্ধ করে আমায় একটু ভালো বাসা হোক! মন আর শরীরের প্রতি ইঞ্চি তীব্র কষ্ট পাচ্ছে…..কাউকে একবার খুব করে জড়িয়ে ধরতে চাই……কিন্তু অপর দিকের মনটা যদি ইমোশনশূন্য হয়—তবে আমার কেবলই একটা শরীরকেই জড়িয়ে ধরা হবে……যার কোনো মানে নেই! স্বার্থহীন হয়েও কষ্ট থেকে মুক্তি নেই…….জীবন এমন কেন!

কেউ আমার অবস্থা দেখে মজা নিচ্ছে। সারাদিনের প্রতিটি মুহূর্তের যন্ত্রণা আর কষ্ট দেখে আনন্দ পাচ্ছে। আমার কষ্টে তো সে একাএকা হাসছে, তবুও প্রার্থনা করি—তার কষ্টে যেন হাজার মানুষ না হাসে……জীবন—সময়, কাজ—সব ফিরিয়ে দেয়; তবে, একটু অন্যভাবে……

তিন।

টিভির ভলিয়্যুম বাড়িয়ে, সবকটা ফ্যান অন করে, চারদেয়ালের মাঝে চিৎকার করে কাঁদি—মধ্যরাতে। বালতির পর বালতি পানি মাথায় ঢালি……কথা বলতে ইচ্ছে হলে কত কী যে করি—তবুও ফোন দিই না…..বেপরোয়া আমি’টাকে শুধরে নেয়ার শত চেষ্টা কেবলই ব্যর্থ হয়।

আমি ভালোবাসা ভয় পাই…….জানি, ওটা দেয়া আর নেয়া, দুইই কতটা অন্যায়! এমনভাবেই থাকি যেন সহজেই কেউ বলে দিতে পারে: আই হ্যাভ নো ইমোশনস্‌ ফর য়্যু!

অনন্তের অনন্তে—অনন্ত অনন্তর।

ভূত, পেত্নী, জ্বিন, পরী যা কিছু একটা হয়ে……কারো ঘাড়ে চাপতে মন চাচ্ছে! তবে, মটকানোর ব্যাপারটা……..অনিশ্চিত!

মধ্য দুপুরেরও যে একটা নিশিকাব্য আছে…….যা ভোরে চোখ মেলে…….হায়…নিশিকাব্য!

বহু চেনা, হাঁটা পথেই—আবারো হাঁটা…….তবুও যেন, অনেকটা অচেনাই!

চার দেয়ালও…….প্রাণের ছোঁয়ায়……দাঁত কেলিয়ে হাসুক………জীবন!

চার।

অনুভূতির পূর্ণতা দিয়ে কেবল অনুভূতির পূর্ণতাকেই উপলদ্ধি করা যায় না- অনুভূতি’র শূন্যতাকেও যে ধারণ করা যায়……

কখনো মনে হয়, বিশেষ চরিত্রদের মতো জীবনভর একটা ড্রেসই পরে থাকলে ভাল; অত ভিন্নতার কী দরকার!? আবার মনে হয়, একটা ড্রেস দুইবার পরার কোনো মানেই হয় না! যেকোনোটা মাথায় ঢুকে গেলে তো মহাসমস্যা!

ব্যস্ততা: কেমন চাপে রাখি, হুঁ? প্রিয় মানুষেতে একবার ঢুঁ মারারও সুযোগ নেই…..মনটা আনচান আনচান করে? হুঁ! হাহাহা…..

আমি: তুই আমার সময় নিতে পারবি, শয়তান, কিন্তু মন নিতে পারবি না……মুহাহাহা!

নীরবতায়, অনেক কিছু থেকে মুক্তি মিলে, সত্যি। কিন্ত, নিজের কাছ থেকে নিজের সত্যিই মিলে কি মুক্তি? নিজের মুক্তি মিলবে—সে কোন নীরবতায়?

পাঁচ।

যেয়ে খাওয়া আর খেতেই যাওয়ার মধ্যে, কার্যক্রমটা দুটো এক হলেও……পার্থক্য অনেক।

সময়—দেয়; নিয়েও যে নেয়…….

ছুঁড়েদেয়া তীরকে গন্তব্যের আগে, আটকে দেয়া যায় ঠিকই……কিন্তু তাতে- নিজেকেই যে দ্বিগুণ আঘাত পেতে হয়……

যত বুঝেই বলা হোক না, কাউকে কথা শুনিয়ে কী লাভ? ঠিক পরবর্তী মুহূর্তটার খোঁজও যেহেতু আমরা জানি না, অন্যকে, অকারণ কথা শুনানোর রাস্তাটা আমরাই কেন করে দিই?

ছয়।

৩৬ বুলেটে আর যাকেই হোক, বঙ্গবন্ধুকে কখনোই মারা যায় না! যে জীবন ৩৬ বুলেটে আবদ্ধ, সে জীবন তিনি বহু আগেই দেশ আর দেশের মানুষকে দিয়ে দিয়েছেন। তাঁর জন্য আজীবনের শ্রদ্ধা আর ভালোবাসা।

সাত।

অনুভূতিরা যেখানে খেলা করে না…….একটা ‘বাল’-এর অকারণ সৃষ্টি হয়েই যায়……কী এমন হয়…..ভাটায় ভেসে যাবে……জোয়ারে কত আসবে……..কিন্তু, ভাটা যা নিয়ে যায়, জোয়ারে কি তা ফিরে আসে! কী স্বাধীন আমরা……জীবন কত সুন্দর!

ধরা যাক, তিন বান্ধবীর দেয়া বিড়ালছানাটির নাম দেয়া হবে—তাদের নামের প্রথম তিন অক্ষরের সমষ্টি। তাদের নাম যথাক্রমে—পেরিসা, নিঝু, সম্পা!

সব বৃষ্টি তো আকাশে মেঘ করে আসে না…….তাহলে, অর্থহীন অপেক্ষা—কেন থাকবে না….থাকবে, খুব করে থাকবে……

একজনের উপর রেগেমেগে তার চুল (মাথার), গাল টেনেটুনে ছিঁড়ে তিন ঘণ্টা টানা কান্নাকাটি করে এক ঘণ্টা গোসল দিয়ে এসে……তাকেই আবার হাসিমুখের সেলফি দিয়ে বসি! এইডা কিসু হইল!?

শুধুই বেঁচে থাকতে হয় বলে…….বেঁচে থাকার দায় বড় দায়!

আট।

যেচেযেচে যে হেরে যায়, তাকে খুব চেষ্টায় জেতানো যায় বৈকি, কিন্তু হারানো যায় না কিছুতেই!

কাউকে খুব বলতে ইচ্ছে করছে—প্লিজ, এবার তো থামো…..আর কত……ঘুমাবে না? কেউ নেই জাগিয়ে রাখার। তাই ঘুমিয়েই বা কী লাভ?

রাগ, অভিমান, অপমান ভুলে—কষ্টকে ভেতরে চেপে, ভালোবাসায় যাই মিশে……বরাবরই। এইতো জীবন…….

সব খারাপেই, ভাল কিছু খুঁজে বের করি আর মনটাকে একটু শান্ত রাখি…..কেউ আমাকে ব্লক করে দিলে ব্লকটা কষ্ট দেয় ঠিকই, কিন্তু খারাপটা বেশি লাগে—ব্লক করার মতো কাজ করেছি বলেই………আগে তো চিন্তা করে কল দিতে হতো, কিন্তু এখন……..যখনতখন দিতে পারি……যে কল ঢুকবেই না, সে কলটাকে ভয় পাওয়ার কী আছে! কল দিই, নিজের মনকে এটা বলে শান্ত রাখি—ওর নাম্বার বন্ধ!

ভাবনা: তিনশো তেত্রিশ

…………………………………

এক।

সবজি আর মাছ দিয়ে রান্নাকরা একটা খাবারের নাম……দুনিয়ায় কি আর কোনো নাম ছিল না!—ছ্যাঁচড়া!

দিনের প্রায় সবটা আলো মৃদু করে দিয়ে………চমৎকার ছন্দে বৃষ্টি হচ্ছে।

আর আমি………চাঁদের আলোয় ভিজছি।

আহহ্‌……পাগল বলছো কেন……..কল্পনায়ও কি একটু স্বাধীন হয়ে ইচ্ছেপূরণ করতে দেবে না!

দুই।

থেমে যাওয়ার কারণগুলোর……বর্ণিল সজ্জাকরণ……তবুও, যে থমকে যায় না, তাকেই চাই! কারণে নয়কো, অকারণেই!

সবাই, সবার জায়গা থেকে ঠিক কাজটাই করে বা করছে, তেমনটাই সবাই ভাবে…….কিন্তু তবুও……সব ঠিক ঠিকই এক হয়েহয়ে…….কোথায় যেন বেঠিক হয়ে যায়……..ইচ্ছের তাগিদটা বরাবরই একটা জড় বস্তু বুঝে ফেলে—হতচ্ছাড়া ফোনটা! রাগেদুঃখে পেটফুলা দুপুর এসে মনটাকে গরম করে দেয়! গাল ফুলতেফুলতে গালে আআআর জায়গা নাই—এখন পেট ফুলছে………গ্রামের পুকুরে ঝুমমম্‌ বৃষ্টিতে জমেযাওয়া এক ভীষণ সুন্দর দৃশ্যের সকাল দেখতে ইচ্ছে করছে। এখুনিই!

ছোট ঝোপঝাড়গুলিতে বেড়েওঠা লতাগুল্মের কচিপাতলা পাতাগুলি ফোঁটাফোঁটা বৃষ্টির ছোঁয়ায় কেমন নড়ে নেচেনেচে ওঠে……কত যে সুন্দর!

কারো হাত দুটো শক্ত করে চেপে ধরে, দিনটা পার করে দিতে—বড় ইচ্ছে করছে…….

তিন।

এমন একটা দমকা হাওয়া বইতে পারে না—যাতে প্রিয়দের উড়িয়েউড়িয়ে চোখের সামনে এনে আছড়ে ফেলে……! হুহহহ্‌! এই বৃষ্টি দুপুরে এত যে উতলা লাগে!

সব সুন্দরে আর সব অসুন্দরে কিংবা খুব দুঃখে বা খুব সুখে—প্রিয়রা এসে, মনের মধ্যে, খুব করে ভিড় করে…….একটা ঝকঝকে তকতকে রৌদ্রময় সকাল……আসুক!

বিন্দুরেও আমি পাই যে দেখিতে…….তাই সিন্ধুর খোঁজও আমি জানি…….

সুখসুখ বলে যতই চেঁচাই না কেন—আসল সত্যটা হচ্ছে, আমরা কষ্টকেই ভালোবাসি…….এজন্যই, কষ্ট পাবো জেনেও সেসব কাজই খুশিমনে করি—যেগুলো কষ্ট বয়ে আনবে……একেবারে বিশুদ্ধ কষ্ট!

চার।

মাঝেমাঝে কী যে হয়……জীবনের সমস্ত কিছু—একইসাথে বেসুরে বাজতে থাকে…….

পাগলের মতো যখন অস্থির লাগে—এক স্রষ্টাই জানেন—কেন প্রিয় মানুষটাও তখন এমন শুরু করে! তাকে, অনুভবে রাখে বলে—একটা মানুষকে তীব্র যন্ত্রণা দিয়ে কী লাভ! কী করলে কেউ অন্য কাউকে মানুষ ভাবে! এর জন্য কী করতে হয়! লোকে ভালোবেসে ফেলে এমন কাউকে, যার সমস্তটা জুড়ে স্রেফ এক বর্ণের একটা উত্তর পাওয়ার যোগ্যতাও তার হয় না কখনোই!

হুম্‌ হুম্‌ ঠিক………একদমই ঠিক……..আমার মনের সবটা জুড়ে কেবল প্যাঁচ আর প্যাঁচ…….আমিই একটা আস্ত প্যাঁচ……..ভেতরের সব প্যাঁচগুলিকে ধরে টেনে সোজা করতে পারলে সৌরজগৎকে কয়েকবার বেঁধে ফেলা যেতো……..হুম্‌………..আমার ভাবনা বাজে……আমি দেখতে যেমন বাজে, তেমনই আমার ভাবনাও বাজে……..আমি ভাল কোনো কিছু ভাবতেই পারি না…….আমার সমস্তটা ঘিরে কেবলই বাজে ভাবনা…….হুম্‌, আমার তো প্রচুর সময়…….এত্ত সময় যে আমি কী করবো, তা ভেবেই পাই না…….কেবল ডালচাল নয়, রীতিমতো চিনিলবণ একসাথে করে, সেগুলো বসেবসে আলাদা করি……..

দ্বৈত: এত্ত ক্ষেপছিস ক্যান!? চউপ, একদম চউপ! এক্কেবারে মরুভূমির জলে চুবাইয়া মাইরা ফেলবো……

আমি: হে হে হে……কাউকে বাঁচানোর পদ্ধতি বলে দেয়ার জন্য ধন্যবাদ!

দ্বৈত: তোর একটুও লজ্জা করে না, না?

আমি: যেখানে জীবনই বিন্দুতেও থাকে না, সেখানে লজ্জারে কোথায় জায়গা দেই, বলতো!

পাঁচ।

পাশের বাসার সাফার আম্মু নিজের আর সাফার জন্য ব্রাজিলের জার্সি কিনসে…….এখন ওরা মা-মেয়ে জার্সি পরে খেলা দেখতেসে…….

নেইমার গোল দেয়ার পর, সাফার আম্মু বলতেসে: মা, বলো নেইমার! নেইমার!

ওদিকে ওর আব্বু শিখায়ে দিতেসে, মা, বলো মেসি! মেসি!

সাফা বলতেসে: মেসি! মেসি!

ওর আম্মু রাইগা বলে, ঐ বেটি! তোরে ব্রাজিলের জার্সি কিননা দিসি নেইমারের গোলে মেসি! মেসি! কওনের জন্য!? এক্ষণ জার্সি খোল!

আরেকদিন।

সাফার আব্বু-আম্মু খেলা দেখতেসে……..

আব্বু সুইজারল্যন্ড আর আম্মু ব্রাজিল……

বাবা শিখায়ে দিচ্ছে: আম্মু, বলো, ব্রাজিল গোল খাবে!

মা শিখায়ে দিচ্ছে: না আম্মু, বলো, ব্রাজিল গোল দিবে!

বেচারি আর বুঝতেসে না কী বলবে!……একনাগাড়ে বলে যাচ্ছে— ব্রাজিল গোল খাবেদিবে! খাবেদিবে! খাবেদিবে!

পুনশ্চ।

আজ ব্রা-জিলের খেলা। তাই পরিনি আজ ব্রা!…….ইয়ে মানে, গরম খুব তো, তাই……..আপনি কি ব্রা’র পক্ষে? ইয়ে মানে, জিলসহ আর জিলছাড়া দুটোর কথাই বলছি!

ছয়।

সবাই বলে, আমি নাকি রাগী! হুহ্‌! রাগের কারণগুলোর বিপরীতে—আমি তো শুধু ১% রাগ করি, আরও ৯৯% তো বাদই থাকে!

একটা মানুষ, ঠিক কতটা ঘৃণা করতে পারে, কতটা অনুভূতিহীনতায় কাউকে রাখতে পারে, ‘দূরত্ব’ আসলে ঠিক কতটা দূরে—সে সকল হিসেব মেলাতে গিয়ে—সময়েসময়ে হারিয়ে গেছে অনেক কিছুই! মুছে দিয়েছি কতকিছুই…….কিন্তু কষ্টগুলো মুছতে পারিনি, ওরা আছে ঠিক একই, থাকবেও……

একটা ভার্চুয়াল আইডিকে ঘিরে—কত অনুভূতি…….কত্ত…….কত্ত কিছু……জানা যত, অজানায় আরও বেশি…….এসব মাথায় এলে খুব কষ্ট হয়!

সব অনুভূতির নাম নেই……সব সম্পর্কেরও নাম হয় না…….তবে, সব কবিতারই-বা কেন নাম থাকতেই হবে?

সাত।

এই যে কোনো সম্পর্কে—

এক পাশের ঘৃণার পর্বত……..আকাশ ভেদ করতে চাইছে……দূরত্ব—একেবারে প্রান্তসীমায়……আরো দূরে সরে যাওয়া যেখানে অসম্ভব…….

অন্য পাশ, রোজ কতবার সৃষ্টিকর্তার কাছে ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছে—ভালোবাসা, অনুভূতি আর কষ্টজলের জন্য……কারণ, কোনো মানুষের জন্য, ‘এতটা করা’, কোনো না কোনোভাবে ভীষণ অন্যায়!

এই সম্পর্কের তো কোনো নাম নেই……..তাই বলে কি অনুভূতিগুলো মিথ্যে? যদি অদৃশ্য বলে অনুভূতিগুলো মিথ্যে হয়, তবে সারাদিন ভিজে থাকি যে ভারি জলে, তা মিথ্যে হয় কীকরে?

আট।

অনেক ভালোবাসায় বাঁচতে হলে, কোনো ভালোবাসাকেই সত্যিকারভাবে গ্রহণ করা যায় না। ফলে, অসীম ভালোবাসা-পাওয়া মানুষগুলোকে—এক অদ্ভুত ভালোবাসাহীনতায় বাঁচতে হয়।

সে যে থাকে বহু দূরে,

মন কেমনকেমন করে…..

যায় না ছোঁয়া তারে,

তবু মন যে ছুঁয়েই থাকে!

জীবনে কিছুকিছু মানুষ আসে, যাদের অনেকেই মন ছুঁয়ে যায়। কিন্তু এমন মানুষ খুব কম আসে, যারা শুধু মনকে নয়, সাথে আত্মাকেও ছুঁয়ে যায়। আর তুই তাদের মাঝে একজন! একসময় কত বাধা ছিল তোর কাছে যাওয়া। কিন্তু আজ এত কাছে থেকেও তোর কাছে যেতে মন চাইছে না। শুধু এতটুকু চাই, তুই যেখানে থাকিস, ভালে থাকিস। তুই যে আমার সত্যিকারের আত্মার আত্মা!

নয়।

গবেষণায় প্রকাশ, চুমু খেলে প্রায় ৮ কোটি ব্যাকটেরিয়ার আদানপ্রদান হয়। আরে বাবা, ৮ কোটি কেন, লক্ষ কোটি ব্যাকটেরিয়ার আদানপ্রদান হইলেও মাইনষে চুমু খাবেই খাবে! এ সৌরজগতে কখনোই চুমুবিহীন পৃথিবীর জায়গা হবে না। হুদাই এইসব হিসাবের কী দরকার?

ভালোবাসা মানে—

খুউব করে চেষ্টা করেও,

কষ্টটা ভেতরে জমে থাকলেও,

শেষমেশ আর রাগ করে থাকতে না পারা!

দশ।

ব্লুফিল্ম দেখে ব্লুফিল্মের কনটেন্টকে গালি দেয়াটা নিছকই কপটতা। কারণ, ইহা একটি নীলছবি, ইহাতে এই-এই রহিয়াছে—এটা জেনেবুঝেই আমি ফিল্মটা দেখছি।

‘বেলাশেষে’ একটি পুরুষতান্ত্রিক মুভি হিসেবেই ট্যাগড্। নির্মাতা খুবই সফল হয়েছেন, এ মুভি নিয়ে সবার প্রবল নারীবাদমুখী প্রতিক্রিয়া দেখে সেটা বারবার বুঝতে পারি।

আমাদের মাথায় রাখতে হবে, কেউই যে পুরুষতান্ত্রিকতা সমর্থন করেন না, তা কিন্তু নয়। আমি অনেক নারীকে চিনি যাঁরা নারীবাদের ঘোর বিরোধী। এটা ওঁদের ব্যক্তিগত দর্শন। সে দর্শন গ্রহণযোগ্য কি অগ্রহণযোগ্য, সেটা নিয়ে আলোচনা হতেই পারে, তবে সমাজে ওঁরা নেই, এমন তো নয়। আমার অভিজ্ঞতা বলে, বাঙালি সমাজে এখনো নারীবাদবিরোধী শিবিরের বাসিন্দারাই সংখ্যাগরিষ্ঠ। ‘বেলাশেষে’ ওঁদের‌ই দেখাচ্ছে। তবে সমস্যা কোথায়?

ভালোবাসা বড় অদ্ভুত জিনিস। ভালোবাসা, দায়ে পড়লে, এঁটো, বমি, মলমূত্র সব‌ই খায়, তৃপ্তি নিয়েই খায়। (বলা বাহুল্য, আগের বাক্যে ‘খায়’ শব্দটি আক্ষরিক অর্থে নয়।) এটা বুঝতে হলে অমন পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যেতে হবে। আমার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকে এ ব্যাপারে আমি নিশ্চিত। মুভিতে অসংগতি কোথায় তবে?

হ্যাঁ, এ মুভির একমাত্র দুর্বল দিক হচ্ছে বাবা-মা’র বেডরুমে সিসি ক্যামেরা লাগানো। ব্যাপারটা ভয়েরিজমের পর্যায়ে যেতে পারত আশংকায় অসংগতিপূর্ণ, তা নয়, ভয়েরিজম কাল্পনিক কিছু নয়; বাঙালি সমাজে অমনটা বাবা-মা’য়ের সাথে কেউ করে না বলেই অসংগতিপূর্ণ।

ভাবনা: তিনশো চৌত্রিশ

…………………………………

এক।

আমি আপনাকে চিনি ২০১৪ থেকে। আপনি আমাকে চেনেন না, কারণ আমি কেউই না। যারা কেউই না, তাদের কেউই চেনে না। আপনার লেখা আমার ভাল লাগে। আপনার অকপটতা আর কথা বলার ধরন আমার ভাল লাগে। আপনার ভদ্রতা আর রসবোধ আমার ভাল লাগে।

আমাকে জীবনে অনেক যুদ্ধ করতে হয়েছে, হচ্ছে, হবেও।

আমার গল্পটা খুবই সাধারণ গল্প। খুব সাধারণ একজন মানুষ আমি। নিম্নমধ্যবিত্ত পরিবারে বড় হয়েছি। মধ্যবিত্ত পরিবারে নিজের অবস্থান নিয়ে হীনমন্যতায় ভোগা শান্তশিষ্ট স্বভাবের মেয়েটি একদিন টুপ করে অনলাইনে এক অচেনা মানুষের প্রেমে পড়ে যায়। সেই অদেখা মানুষের জন্য চার বছর কান্নাকাটি করে পড়াশোনা বন্ধ করে দেয়ার উপক্রম করে। অনার্সে ৩.০৫, মাস্টার্সে ৩.৩৯। আরো ভাল করার কথা ছিল, কিন্তু ক্লাসে অমনোযোগী ছিলাম বলে ভাইভা আর ল্যাবে খারাপ মার্কস আসত।

৩৭ আর ৩৮ বিসিএস দিলাম। দুইবারই প্রিলিতেই ফেল। প্রথমবার মাস্টার্স-এর জন্য পড়তে পারিনি। পরেরবার আবারো একজন ভুল মানুষকে বিশ্বাস করতে চেয়েছিলাম, ফলে হতাশা মনভাঙার কষ্ট নিয়েই বাঁচতে হল আরো কিছুকাল।

এখনো প্রচণ্ড ডিপ্রেশনে আছি। প্রাইভেট জবের জন্য ট্রাই করব, নাকি বিসিএস-এর জন্য?

বাবার টাকায় চলছি না। টিউশনি করে চলছি। জানি, এটাকে চলা বলে না, তবুও। মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তানের মাথা উঁচু করে চলার নাম টিউশনি করে চলা।

পরপর দুইবার অসফল হয়ে সাহস কমে গেছে। সাফল্য সাহস বাড়ায়, ব্যর্থতা বাড়ায় ভীরুতা। একটাতে সফল কারো পক্ষে পরেরটাতে সফল হওয়া যতটা সোজা, একটাতে ব্যর্থ কারো পক্ষে পরেরটাতে ব্যর্থ হওয়া তার চাইতে সোজা। এর মধ্য দিয়ে যাদের যেতে হয়নি, তারা এটা বুঝবে না।

আমার যা আছে, তা হল—প্রচুর ছেলেমানুষি। এখনো বাচ্চাদের মত অনেক আচরণ করি। ইন্ট্রোভার্ট ছিলাম তো, তাই খুব ছোটবেলা থেকে একাএকা থাকতাম। এখন কীভাবে কী করব, বুঝে উঠতে পারছি না। জীবনে যা শিখেছি অনেক দাম দিয়ে, তা হল, প্রেম আর নেম একসাথে পাওয়া যায় না।

আমি যে ইচ্ছে করে প্রেমে পড়েছি, তা নয়। কেউ ইচ্ছে করে প্রেমে পড়েও না। যা-ই হোক, আবার একটু সাহসী হতে ইচ্ছে করছে। আমার মনে হয়, প্রত্যেকটা মানুষই ইউনিক। প্রতিটি সাধারণ গল্পের ভেতরে অসাধারণত্ব কোথাও না কোথাও আছেই! সে অসাধারণত্ব গল্পের গভীরে থাকে। আমি সেই অসাধারণের সন্ধান করে চলেছি।

দুই।

আমি মেডিক্যালে পড়ি। ২ বছর আগে ক্যাম্পাসে এক ব্যাচমেটের সাথে আমার সম্পর্ক হয়। সে শুরু থেকে অনেক কেয়ারিং ছিল। আমার অনেক কাজেই হেল্প করত। আস্তেআস্তে কবে যে আমি মিথোজীবী থেকে পরজীবী হয়ে গেলাম, নিজেই বুঝিনি। সম্প্রতি বুঝতে পারছি, সে আমি ছাড়াও আরো কয়েকজন মেয়ের সাথে কথা বলে, ওদেরও কেয়ার নেয়ার চেষ্টা করে নানানভাবে। আমি এটা বোঝার পর সে এ ব্যাপারটা আমার কাছে অস্বীকার করে। কেন জানি না, সে খুব ছোটখাটো ব্যাপারেও আমাকে মিথ্যা বলে। এক পর্যায়ে আমি ওকে সন্দেহ করা শুরু করি। আমি প্রমাণ পেয়েছি যে আমি বাদেও সে অন্তত আরো একজনের সাথে রিলেশনে আছে। কিন্তু সব বুঝেও নিজেকে কিছুতেই মানাতে পারি না। আমি কোনোভাবেই মানতে পারি না যে ও আমাকে এত বড় একটা ধোঁকা দেবে। আমি সবই বুঝতে পারছি কিন্তু করতে পারছি না কিছুই! আচ্ছা, সব ছেলেই কি একাধিক মেয়ের ব্যাপারে কেয়ারিং?

মানুষের আবেগ কতটা গভীর হয়, জানি না। আমি কিছুতেই ওর চিন্তা থেকে নিজেকে বের করে আনতে পারছি না। অনেক চেষ্টা করেও ব্যর্থ হচ্ছি। দিনের একটা সময় আমি ওকে বেহায়ার মত কল দিয়ে বসি। আর কিছু না, কেবল ওর কণ্ঠস্বরটা একটু শোনার জন্য। খুব করে চাচ্ছি, আমার সম্পর্কটা যাতে আমার জন্য হলেও বেঁচে থাকে। কিন্তু না, সেটা বাঁচবে না, এটা বুঝতে পারছি। এরপরও তাকে আমার জীবনে আশা করাটা নিশ্চয়ই পাপ। আমি সে পাপকাজটাই করে যাচ্ছি, এবং অনেক কষ্টের মধ্যেও সুখের খোঁজ করে যাচ্ছি। আমি আমার এই আবেগ থেকে বের হয়ে আসতে চাই। আমাকে দিনেদিনে মেরে ফেলছে ওর প্রতি আমার এই অন্ধ আবেগ। ও আমার কোনো কথারই একটুও পাত্তা দেয় না। ও বলে আমি নাকি পাগল। আমি তাও মেনে নিই। কিছুই তো করার নেই। ওর চিন্তা যখন আমার মাথায় আসে, তখন আমি অসহায়ের মত ওর কথা ভাবতেই থাকি, কীকরে এ থেকে নিজেকে বের করে আনব, সেটাই বুঝি না। শুধু এইটুকু বুঝি যে, এই যে আমি ওর জন্য এত ভাবি, ওকে এত ভালোবাসি, সেটা ফিরে দেখার সময়ও ওর নেই। কী করলে আমি ওর চিন্তা থেকে নিজেকে বের করে আনতে পারব, আমি জানি না। ২ বছরের রিলেশন বেশি কিছু না। অথচ ও আমার প্রত্যেকটা নিঃশ্বাসের সাথে জড়িয়ে গেছে। এজন্যই ওকে ভুলে থাকতে পারছি না। কেউ দুই যুগেও ভালোবাসায় পড়ে না, আর কেউ দুই মাসেই ভালোবাসায় ডুবে যায়!

তিন।

আমি যখন হলাম, তখন বাবা কষ্ট পেল মেয়ে হয়েছে বলে।

আমি যখন শ্বশুরবাড়িতে গেলাম, তখন শাশুড়ি কষ্ট পেল ভার্সিটিতে পড়ি বলে।

তবু একটা ছায়া ছিল—আমার স্বামী; সেও এখন অনেক দূরে।

শাশুড়ি অনেক ধনী ছিল, শ্বশুর থাকত ফ্রান্সে, আমার স্বামী ছিল বেকার—তাও সাত বছর ধরে।

অনেক সইতেসইতে এখন……থাক!

সেই ২০১২ সাল থেকে প্রাইভেট পড়াই, এখন ছেলের জন্য ছেড়ে দিয়েছি।

আমি যখন বোকা ছিলাম, তখন অনেক শান্তিতে ছিলাম। এখন শান্তির মা মারা গেছে। মাথায় বুদ্ধি বাড়া মানেই অশান্তি বাড়া।

আমি বাঁচতে চাই। ছেলেটাকে নিয়ে শান্তিতে ঘুমাতে চাই। আমার আজ হারানোর কিছুই নেই। আমার ছেলেই আমার সবকিছু।

ক্লাসের ফার্স্ট গার্ল ছিলাম। পরীক্ষার দুইদিন আগে চিকেন পক্স হল। রেজাল্ট এল ৪.৯৬। তারপর ইন্টার ফাইনালের আগে আমার হাজব্যান্ডের সাথে দেখা, আর তারপর কুমিল্লা ভার্সিটিতে পড়লাম। বিয়ে হয়েছিল পারিবারিকভাবেই। আমার শ্বশুরের অনেক টাকা ছিল। পরে কী এক ঝামেলার কারণে ফ্রান্স উনার নাগরিকত্ব বাতিল করে উনাকে দেশে ফেরত পাঠায়। আমার স্বামী র‍্যাডিসন ব্লুতে জব করে, ঢাকায় থাকে। আমি একাকিত্বের মধ্যেই বেঁচে আছি আমার ছেলেকে নিয়ে। আমি যে কীসের পিছে ঘুরছি, আমি নিজেই জানি না।

আসলে পর্দার আড়ালে আরেকটা জীবন আছে। সে জীবন অতি সাধারণ। সেখানে ইঁদুরদৌড় হয় না। আমার আবেগ বেশি, তাই দুঃখও বেশি। আমার সমস্যার সমাধান কেউই দিতে পারবে না, হয়ত সমাধানই নেই! এমনও হতে পারে, আমার দুঃখগুলিই আমার জন্য মঙ্গল। কে জানে!

আমি কয়েকদিন ধরেই ঢাকায় চলে যেতে চাইছি—একাই। চাকরি করব, নিজের মত করে থাকব। ছেলেটাকে রেখে যাবো। তাই ওর জন্য আবেগের ঝড় বয়ে যাচ্ছে বুকের ভেতরে। আমি জানি, নিজের কষ্ট অন্যদের বলে বেড়াতে নেই। আমি তা করিও না। তবু আজ এতকিছু লিখে ফেলছি কেন, জানি না। আর কখনো অভিযোগ করব না। ভালই তো আছি! এখন ভাবছি, ছেলেকে রেখে ঢাকায় যাবো না। কারণ, দিনের শেষে ‘ম্যাডাম’ নয়, ‘মা’ ডাকটি শুনতে চাই। আমি হারব না, হার মানব না।

‘দি ওল্ড ম্যান অ্যান্ড দ্য সী’ আমার প্রিয় বই। আমি সান্টিয়াগোর ভাবশিষ্যা। মারলিন কাছছাড়া হলেও সান্টিয়াগো মরে না। আমি ভাল আছি, আমি ঢাকায় না গেলেও আমার স্বামী ভালই থাকবে। সব ভাল লাগে, কিন্তু নিজেকে অসহায়ত্বের আয়নায় দেখতে ভাল লাগে না।

আমি আমাকে খুঁজি…..লাল ল্যাম্পের নীল আলোর পুঁজিতে বাঁধা জীবন! এ জীবনের পুরো গল্পটাই দহনকালের গল্প।

সবাই ভাল থাকুক। অন্যকে ভাল থাকতে দেখলে ভাল লাগে।

ভাবনা: তিনশো পঁয়ত্রিশ

…………………………………

এক।

অসুস্থ থাকলে ভালথাকা যায়। ধরুন, আপনার জ্বর, আপনার মা আপনার কপালে হাত দিয়ে পাশে বসে আছেন। সে সময় আপনি অসুস্থ হলেও ভাল থাকবেন। এমন হয়। আমার জ্বর হলে মনে হতে থাকে, আমার সাথে অদ্ভুত রকমের কিছু একটা ঘটছে। আমি একটা পাগলামি করি মাঝেমধ্যে। কোনো কারণ ছাড়াই হুট করে কাউকে জিজ্ঞেস করে বসি, আপনি কি খুব অসুস্থ? কেউকেউ এমন প্রশ্ন শুনে আমার দিকে কেমন করে জানি তাকায়। তখন মনে হয়, আহা, প্রশ্নটা উদ্ভট হয়ে গেছে!

একজনের কথা মাথায় আসছে। উনাকে একটু জাজ করা যাক। উনি যতই মানুষের সাথে কাটখোট্টা আচরণ করুন না কেন, উনি আসলে সবাইকে খুব ভালোবাসেন। এক মুহূর্তে সবকিছু ইগনোর করলেও সবকিছুই মনে রাখেন। উনি অহংকারী, তার থেকেও বেশি বিনয়ী। একজন সৃষ্টিশীল মানুষ অনেকটা আবেগী হয়……কিন্তু আবেগহীন থাকার অসীম ক্ষমতা উনার আছে। উনি লেখেন। একজন মানুষের লেখা পড়ে তার সম্পর্কে যে ধারণা হয়, বাস্তবে তার উল্টোটাও হতে পারে। আচ্ছা, সৃষ্টিশীল মানুষ কি সত্যিই আবেগী? তাইতো মনে হয়। আবেগ ছাড়া সৃষ্টি করা যায় না। উনার প্রতি কেউ একবার অনুরক্ত হয়ে পড়লে, তার প্রায়ই মাথায় আসবে, এ অবেহেলার চরম প্রতিশোধ কীভাবে নেয়া যায়! উনার গল্প পড়লে ধারণা হয়, জগতের সব ছেলেই খারাপ। যে মেয়েদের স্বামী তাদের কাছ থেকে দূরে থাকে, তাদের মনে কিছু বাড়তি টেনশনের জন্ম হবেই হবে। মনে হবে, ইদানিং তার স্বামী তাকে এত কম সময় দেয় কেন! কেন হঠাৎ এত অবহেলা? আমি কি সবসময়ই ঝগড়া করি? আমার সাথে কথা বলে না, খেলা দেখে। খেলা জিনিসটা এত দেখার কী আছে! আজব! আমার স্বামী দূরে থাকে, একা থাকে, না জানি কী কী যে করে বেড়ায়! উনার লেখা পড়লে যেকোনো মেয়ের মাথায়ই এমন কিছু প্রশ্ন খেলবেই!

উনার সাথে হঠাৎ কথা হয়। কথা হলে প্যাঁচাল পাড়তে মজা লাগে। উনি তো কখনো সাধারণ মানুষের কথার কোনো উত্তর দেবেন না, তাই নিঃসংকোচে প্যাঁচাল পাড়া যায়! উনি বিরক্ত হলে হোন, উত্তর তো আর দিচ্ছেন না, ক্ষতি কী! সেদিন উনার একটা কবিতা পড়ে স্তব্ধ হয়ে গিয়েছিলাম। কবিতাটা পড়ার সময় নিজের কানে নিজের হার্টবিট শুনতে পাচ্ছিলাম। অসাধারণকে কী দিয়ে ব্যাখ্যা করব…….এই পৃথিবীতে উনাকে প্রশংসিত করার মতন কোনো শব্দ সত্যিই কি আছে!……….নেই। উনার কাছ থেকে শুধু নিয়েই গেলাম, কিছু দেয়ার মতন যোগ্যতা নিয়ে আসিনি…….উনাকে এসব লিখে পাঠাতেই উনি উত্তর দিলেন: আমি একটা বাল। মরার সাহস নেই বলেই অনেক কষ্ট বুকে নিয়ে লিখেটিখে বেঁচে আছি আর সবাইকে বিরক্ত করছি। যাদের কষ্ট সহ্য করার ক্ষমতা নেই, তারা হয় মরে যায়, কিংবা মরার মত বেঁচে থাকে।

আমি লিখলাম, ছিঃ! এসব কেমন কথা! আপনি বিরক্ত করতে জানেন? তারা খুব লাকি, যারা আপনার বিরক্তির ছোঁয়া পায়। শুনুন, আপনাকে তো কখনো জানতে পারি না……..তাই (আপনার বিচারে) ওই বিরক্ত হওয়াটুকুই তো শেষ সম্বল সবার……..আপনি এমনিতেও এখন খুব কম লেখেন। এটা মানতে পারি না…….জানি, সময় হয়ে উঠে না…..তবুও অনুরোধ রইল।

উনি লিখলেন, বেশিদিন বাঁচব না হয়ত। যতটুকু পারি, লিখি। লেখার ইচ্ছেও কমে গেছে। পরিশ্রমও করি না অত!

লিখলাম, কোথায় যাবেন আপনি? আপনাকে কোথাও যেতে দিলে তো! আপনাকে নিতে হলে ঈশ্বরকে আমার কাছে কৈফিয়ত দিতে হবে!

লিখলেন, ঈশ্বর কৈফিয়ৎ দেন না। দিলে সিরিয়ার শিশুদের এমনি করে নির্বিচারে মরতে হত না।

বুঝতে পারছিলাম না, কী লিখব। টাইপ করলাম: অংকের হিসেবে না আসি। জীবনের ভুল অংকের গরমিল হিসাব তো আছেই আপনার লেখাতে। শ্রদ্ধা জানাই। ওই শিশুদের পাশে অন্তত এইবেলায় ঈশ্বর থাকুন।

দুই।

সময় গড়িয়ে গেলে নাকি সব ঠিক হয়ে যায়, আচ্ছা সত্যিই কি সব ঠিক হয়ে যায়! হয়তো ঠিক হয়ে যায়….কিংবা ‘সবকিছু ঠিক হয়ে গেছে’—এই অভিনয়টা করতেকরতে আমরা দারুণ রকমের ভাল অভিনেতা বা অভিনেত্রী হয়ে যাই!

একটা বিজ্ঞাপনের আইডিয়া মাথায় এল।

মেয়েটার বর আজই দেশের বাইরে গেছে অফিসের কাজে। মেয়েটা তার বরের ছবি ফ্রেম নিয়ে বসে আছে, এমন সময় তার বর, মানে ছেলেটা ফোন করল। কথা বলতে বলতেই ছেলেটা বলছে, “সুইট সিক্সটিন, মাই লিপস আর বিকামিং ড্রাই!”

মেয়েটা লজ্জা পাচ্ছে খুউউব! এরপর মেয়েটা ছেলেটাকে বলছে, “ফ্রেশ হয়ে তোমার লাগেজটা খোলো, ব্লুশার্ট-এর পকেটে দেয়া আছে, ড্রাই লিপস-এর সল্যুশন!”

ব্লুশার্টটা হাতে নিতেই ছেলেটা দেখে, শার্টের পকেটে ‘ভ্যাসলিন’ পেট্রোলিয়াম জেলি আছে!

বিকজ উই কেয়ার, ইয়োর লিপস আর সো ওয়েট!

ভ্যাসলিন কত কাজে যে লাগে! বিশেষ মুহূর্তে বিশেষ প্রয়োজনে বিশেষ জায়গা বিশেষ কায়দায় বিশেষ……..ভ্যাসলিন সেইভস্‌ লাইভস!

আমি মিডিয়াতে কাজ করতে চেয়েছিলাম, কিন্তু আমার জন্য ওটা পসিবল না। ছোটবেলায় সবসময় বিজ্ঞাপনের মডেল হতে চেয়েছিলাম, কিন্তু তাও আমার জন্য পসিবল না। পরে হঠাৎ মাথায় বিজ্ঞাপনের আইডিয়া বানানোর কথা মাথায় আসে! বিজ্ঞাপনের জিঙ্গেল আমার খুব পছন্দ! সুমনা হকের চরম ফ্যান আমি। উনার জিঙ্গেলগুলি এখনো মাথায় বাজে!

তিন।

আমার বয়ফ্রেন্ড আমার শরীর চায়, আর কিছুই না। আমি কিছুতেই তা করতে পারব না। বেলপাতা খাবো, দরকার হলে ওষুধ খাবো, কিন্ত কোন পুরুষের চর্ব্য, লেহ্য, ভোগ্য হতে পারবো না। আমি প্রায় দুই বছর ধরে সেক্স করতে চাচ্ছি, কিন্ত কাউকে স্পর্শ করাটাও ঘৃণ্য লাগে। শরীর এতোই চায়, অথচ নৈতিকতা এতটাই বাধা দেয় যে এসব আমার দ্বারা হয় না! আমি ওকে মানসিকভাবে ভালোবাসি, যখন এ ভালোবাসা প্রচণ্ড জোয়ারে ভাসে, তখন শরীরও ওকে চায়। ভালোবাসি—যে ভালোবাসায় অনেক শ্রদ্ধা, অনেক প্রশান্তি আছে; কোনো প্রত্যাশা নেই। ও আমাকে ভালোবাসে না, কিন্ত অনেক ছেলে আছে, যারা আমাকে প্রচণ্ড ভালোবাসে। অন্তত তাদের জন্য আমি ভাল হয়ে থাকতে চাই। যে যতই প্রেম-প্রেম করুক না কেন, এটা আসলে নির্দিষ্ট কারো প্রতি সেক্সচুয়াল আকর্ষণ। আমারও হয়, এটাই স্বাভাবিক। মেয়েরা হারছে না, ছেলেদের মুখোশ কেমন, তা বলে দিচ্ছে—এমন সব গল্প পড়ি, অনেক কিছু শেখার আছে সেখানে। শিক্ষা মানে তো কিছু শেখার পর তার বাস্তব প্রয়োগ, তাই আমার মনে হয়, মেয়েদের ভুলকরা থেকে ওরকম লেখাগুলি বাঁচাতে পারে।

আর একটা কথা হচ্ছে, আমি কাউকে বাজে ভাবতে পারি না। এই যে অনেকে আমাকে ইনবক্সে নানান বাজে কথা বলে, তার জন্য আমি ওদের বাজে ভাবতে পারি না। কারণ, আমিই তো তাকে ওসব কথা বলতে দিয়েছি, আমিই ওসবের সহযোগী। ওর সাথে গল্প না করে ওকে ব্লক করে দিলেই তো পারতাম, তা তো আর করিনি, গল্প করে গেছি। দোষ যদি কিছু হয়েই থাকে, সে দোষ ওর একার কেন হবে?

আমি একজনকে ভালোবাসি, উনাকে সত্যিই ভালোবাসি এবং ভালোবাসবো। উনাকে আমি অনেক কিছু ভাবি। আমার সব চাইতে ভাল বন্ধুর মধ্যে উনি অন্যতম, যাকে সবই বলা যায়, তবে আমি উনার বান্ধবী নই, কারণ আমি উনার শিক্ষার্থী। উনার কাছ থেকে সবসময়ই শিখে যাচ্ছি। আমি সবসময় উনার প্রতি কৃতজ্ঞ এবং ঋণী। উনাকে স্যার বলতে পারি না, দাদাও বলতে পারি না, কী বলবো, সেটাই তো খুঁজে পাই না! এই ভালোবাসাটা অন্যরকম, সংজ্ঞাহীন। কিন্ত আমি সত্যিই উনাকে ভালোবাসি, একটুও মিথ্যে নেই এতে। যেমন করে দেবতাকে মানুষ ভালোবাসে, উনি যা-ই হোন না কেন, উনাকে ওভাবে ভালোবাসতেই আমার ভাল লাগে। উনাকে ভালোবাসতে খুব ভাল লাগে, কারণ এখানে কোনো প্রত্যাশা নেই, কোনো অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ নাই। কেবলই তুমি আর আমি, আমি আর তুমি,/ ভালোবাসা ভালোবাসি,/ তোমার দুচোখ আয়না আমার,/ তাইতো বারেবারে ছুটে আসি!/ আমি এবার তোমায় দরজাতেই কিস করব জড়িয়ে ধরে! অত অপেক্ষা সহ্য হয় নাকি! ঠিক আছে?

কখনো মনে হয়, ভালোবাসি, ভালোবাসি—এইটা ভুল, সবকিছুর মূলে ‘ওইটা’, মানে, সেক্স! রাতে ঘুম আসে না, পড়ায় মন বসে না, পাগলপাগল লাগে, আরো কতকিছু যে!

ভাবনা: তিনশো ছত্রিশ

…………………………………

এক।

সেই আদিমকাল থেকেই কি মেয়েরা দুর্বল আর ধীর? নাকি পুরুষ নারীর উপর দীর্ঘ সময় ধরে কর্তৃত্ব করার ফলে নারী ধীরেধীরে দুর্বল হয়ে পড়েছে? সৃষ্টিকর্তা যদি নারীপুরুষে সমতা বিধান করেই থাকেন, তবে ছেলেতে আর মেয়েতে এত তফাৎ দিয়ে দিলেন কেন?

এইসব ব্যাপার একটু সেন্সিটিভ। সবাই এসবের অর্থটা একইভাবে বুঝতে চায় না। কারো সাথে কথা বলে যে এসব ব্যাপার বোঝা যাবে, তাও নয়। এই যে মেয়েদের পিরিয়ড হয়, এটা কি ওদের নিজেদের ইচ্ছেতে হয়? তবে কেন পিরিয়ড চলার সময় উপাসনা করা যায় না? কোনো শুভ কাজে হাত দেয়া যাবে না? অথচ একটা ভ্রূণের জন্ম হয় পিরিয়ড বন্ধ হওয়ার মাধ্যমে। এখন কথা হচ্ছে, সৃষ্টিকর্তা কি এতই একচোখা যে মেয়েদের আলাদা দৃষ্টিতে দেখবেন? কেন তবে তাঁর প্রার্থনা করা যাবে না? ধর্মের যে বিধিনিষেধ, সেগুলি তো আমাদেরই তৈরি। সেখানে মেয়েদের প্রতি কেন বৈষম্য করা হল? সৃষ্টিকর্তা কি কখনো এতটা বৈষম্য করেন? যত নিয়মের বেড়াজাল, সবই আমাদের সৃষ্ট, নিজেদের স্বার্থেই! ধর্মই কি আর ঈশ্বরের সৃষ্টি?

ধরা যাক, একটা শিশুর জন্ম হল। শিশুটা কোনোভাবে চুরি হয়ে গেল আর তার প্রকৃত বাবা-মায়ের ধর্মের ভিন্ন ধর্মের কোনো পরিবারে মানুষ হতে লাগল। সে ওই ধর্মের সব রীতি মেনে বড় হচ্ছে একজন ধার্মিক মানুষ হিসেবেই। আবার সে যে ধর্মের অনুসারী হওয়ার কথা ছিল, সে ধর্মের অনুশাসন মেনে না চলার কারণে, জন্মধর্ম হতে বিচ্যুত হওয়ার অপরাধে মৃত্যুর পর নরকে/দোজখে গেল। এখন কথা হল, ওর দোষটা কোথায়? ওকে যা শেখানো হয়েছে ছোটবেলা থেকে, ও তো সেটাই করেছে। এর ব্যাখ্যা কী? কোনটা বড়—জন্মধর্ম? নাকি কর্মধর্ম?

অন্য প্রসঙ্গে আসি। আমার বাবা সরকারি চাকরি করেন। কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজের হিসাব বিভাগে। আমরা দুই ভাই, এক বোন। এক ভাইয়ের ব্রেইন টিউমার। আমার পরিবার আর আমার নিজের ইচ্ছে ছিল আমি সরকারি চাকরি করি। গত ডিসেম্বরে বাবা হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েন। বাঁচবেন কি মারা যাবেন, সে সংকট দেখা দিল। পারিবারিক নানান ঝামেলার কারণে বিসিএস প্রিলিমিনারিতে ফেইল করলাম। বাবার চাকরি এখনো আছে, তবে অনেক লো পোর্টফলিওতে বাবাকে চাকরি করতে হচ্ছে। তবু বাবা যা আয় করেন, তা দিয়ে আমাদের মোটামুটি চলে যাবে। কিন্তু সমস্যাটা আমাদের আত্মীয়স্বজনদের নিয়ে। ওরা সবাই বেশ ধনী। ওদের ভাব আর দম্ভ, দুইই খুব বেশি। আমার বাবা অসুস্থ, আমাকে বিয়ে দিয়ে দিতে হবে, পড়াশোনা অনেক হয়েছে, মেয়েদের এত পড়াশোনা করার কী দরকার, এমন আরো হাজারো অজুহাত। এখন আমার কি কোনো প্রাইভেট কোম্পানিতে চাকরির জন্য চেষ্টা করা উচিত? নাকি বিসিএস-এর জন্যই গোঁ ধরে বসে থাকব? কোনো একটা প্রাইভেট ফার্মে ঢুকে গেলে আমার ক্যারিয়ার ধ্বংস হয়ে যাবে, আবার ওদিকে সরকারি চাকরিরও তো কোনো ভরসা নেই। চাকরিতে ঢুকে না গেলে সবাই আমাকে ধরে বিয়ে দিয়ে দিবে। খুবই ডিলেমার মধ্যে জীবন কাটাচ্ছি। আমার এই মুহূর্তে বিয়ে করতে ইচ্ছে করছে না, আমার অনেকদূর যেতে ইচ্ছে করে। দেখতে ইচ্ছে করে, জীবনে অনেকদূর গেলে আসলে কেমন লাগে! ভাবছি, একটা প্রাইভেট চাকরিতে ঢুকে যাবো, এরপর সরকারি চাকরির জন্য প্রস্তুতি নেবো। বিয়ে করে ফেলা কোনো সল্যুশন নয়। মানুষের জীবনে বিয়ে বরং ঝামেলাই বাড়ায়।

দুই।

আমাদের……….নাহ্‌! ‘আমাদের’ বলছি কেনো, এটা হবে—আমার কাহিনী। তো জানুয়ারি মাসের ২৩ তারিখ রাত ৮টার দিকে মানুষটা আমাকে প্রথম নক করেন ফেসবুকে। এর কয়েকদিন আগেই উনি আমাকে রিকোয়েস্ট পাঠিয়েছিলেন। আমরা দুইজনই একই ভার্সিটিতে পড়ি। উনি ফোর্থ ইয়ারে, আমি ফার্স্ট ইয়ারে। উনি ইঞ্জিনিয়ারিং-এ আমি লাইফ সায়েন্স-এ।

প্রথমেই উনি আমাকে কী যে বললেন!……….আমি উনাকে ‘আপনি’ করে বলি। কেন জানি তুমি করে বলতে ভীষণ লজ্জা লাগতো। আমি উনাকে মাঝেমধ্যেই জিজ্ঞেস করতাম, “এই যে আমি আপনাকে ‘আপনি’ করে বলি, আপনার রাগ হয় না!?” উনি তখন হেসে বলতেন, “জানি তো আমি বললেও তুমি বদলাবে না! এখন আমার তোমার বলা ‘আপনি’ ডাকটা অভ্যাস হয়ে গেছে।”

ওহ্‌, যা বলছিলাম! প্রথম টেক্সটিং ছিল এই রকম……..

উনি: আমার শুধু আপনাকে একটা কথাই বলার ছিল!

আমি: হ্যাঁ, বলেন।

উনি: আচ্ছা, আপনিও কি আমার অন্য ফ্রেন্ডদের মতো শুধু লঞ্চের কাহিনীই শুনাবেন?

আমি: মানে কী!

উনি: নাহ্‌। আসলে আমি বলতে চাইছিলাম, বরিশালে তো আর লঞ্চ ছাড়া বলার মতো অন্য কিছুই নাই। তাই আরকি!

আমি গেলাম ভীষণ রেগে। এমনিই আমার রাগ বেশি। তার উপর বরিশাল নিয়ে বাজে কথা বলছে। মনে যা যা খারাপ কথা আসল, তার সবটুকু দিয়ে উনাকে অপমান করলাম।

কথা গড়াতে থাকল এভাবেই। প্রতিদিন একটুএকটু করে। প্রথমে তো আমি জানতামই নাহ যে উনি ফোর্থ ইয়ারে পড়েন। যেদিন প্রথম জানলাম, সেদিন যে কী অবস্থা হয়েছিল আমার! সেটা নিয়েও একটা মজার কাহিনী আছে। থাক এসব কথা।

যা-ই হোক, আমাদের মধ্যে কথা বাড়তে থাকল। রাতে ঘুমানোর অভ্যাসটা ১২টার পরিবর্তে ৫টায় গিয়ে থামল। উনি এতো মজারমজার কথা বলতেন, যা শুনে আমার ঘুমই আসতো না। এইরকমভাবে কিছু দিন চলার পর হঠাৎ করেই উনি ফেসবুকে আসা বন্ধ করে দিলেন। আমার খুব একাএকা লাগতে লাগলো। আমি মনে হয় জীবনে প্রথমবার কাউকে ১০-১৫টা মেসেজ দিলাম। প্রতিটাই আনআন্সারড। এর ঠিক তিনদিন পর উনি মেসেজ দিলেন, “দেখো, আমি ইন্ডাস্ট্রিয়াল ট্যুরে এসেছি। তাই অনেক বিজি। আমার নাম্বারটা রাখো। খুব বেশি দরকার হলে কল দিয়ো।”

আর লিখতে পারছি না। এখন ঘড়িতে ঠিক ৪টা বাজে। আমার চোখ ভিজে যাচ্ছে। মোবাইলের স্ক্রিনের উপর টপটপ করে পড়ছে চোখের জল। এক সপ্তাহ হয়ে গেলো, কীভাবে যে বেঁচে আছি, আমি নিজেও জানি না। এক সপ্তাহে মনে হয় বেশি হলে ২-৩ বার খেয়েছি। তাও রুমমেটদের জোরাজুরিতে। বাসার মধ্যে বন্দী হয়ে বসে আছি। ক্লাসও করি না। আজ যখন অনেক সাহস নিয়ে ক্যাম্পাসে গেলাম, তখনই কেন উনার সাথেই দেখা হতে হলো আবার! আমি উনার দিকে তাকিয়েই ছিলাম। অথচ উনি কেন আমার দিকে একবার তাকিয়েই আর তাকালেন না! আমি কি এতই খারাপ!

ভুল সময়ে ভুল মানুষটাকে কেন ভুল করেই ভালোবেসে ফেললাম আমি!

আমার নিজের আইডিটা ডিঅ্যাক্টিভ করে একটা ফেইক আইডি খুলেছি শুধু উনার আইডিটা দেখার জন্য। জানি, আমার এই লেখা কেউই কোনোদিন পড়বে না। না পড়লেও কিচ্ছু যায় আসে না আমার। নিজের কথাগুলো কাউকে বলার ছিল, তাই কাগজকেই নাহয় বললাম, যদিও পুরোটা বলার মতো কোনো শক্তিই আমার মাঝে আর নেই এখন। এমনিতেও এই কথাগুলো শোনার মতো কেউই তো নেই আমার। কোন মুখেই বা বলবো? নোবডি কেয়ারস!

অতঃপর আরো একটি কান্নাময় নির্ঘুম রাত! ঘুমগুলো কোথায় চলে গেছে, জানি না আমি। পুরোপুরিভাবে ঘুমানোর জন্য প্লান করছি কয়দিন ধরে। কিন্তু বাবা-মায়ের মুখটা তখন ভেসে আসে। তখন আর পারি না। মরে যাওয়া কঠিন, বেঁচেথাকা আরো কঠিন।

আমি কী করবো, কিচ্ছু জানি না! কিচ্ছু বুঝতে পারছি না আমি। একদমই নাহ্‌!