ভাবনাদেয়ালের পলেস্তারা (৯ম অংশ)

ভাবনা: সাতান্ন।

……………………..

একটা অদ্ভুত ইচ্ছে ইদানিং মাথায় খেলে যায় কখনো-কখনো। কেউ মরে যাওয়ার সময়টাতে কী ভাবে, তা জানতে ইচ্ছে করে, মানুষের ‘শেষ কথা’টা শুনতে ইচ্ছে করে। খুউব ইচ্ছে করে। একটা মানুষ হুট করে মরে যায়, কিছুই বলে যেতে পারে না, অথচ তার হয়তো অনেককিছুই বলার ছিল কাউকে বা কিছু মানুষকে। এমনও হতে পারে, মৃত্যুর পূর্বে তাকেও কারো কিছু বলার থাকতে পারে। কিছুই বলা হয় না অমন হুট করে মরে গেলে। সে বলতে-না-পারা কথাগুলি পৃথিবীর বুকে চিরকালই লুকানো থাকে। কেউ কিছু শুনতে পারে না শেষ মুহূর্তে তার মুখ থেকে।

আমার প্রায়ই ইচ্ছে হয়, যে দুএকজন মানুষকে ভালোবাসি, তাদেরকে ডেকে বলি, “তোমরা তোমাদের শেষ কথাটা আমাকে বল। যদি কোনো শেষ ইচ্ছে থাকে, সেটাও বল। আমি আমার সাধ্যমত চেষ্টা করবো সেটা পূরণ করতে।” কিন্তু একথা কি বলা যায়? বলতে গেলেই তো মহাসমস্যা! সবাই ভাববে, আমার কী হয়েছে? আমি আবার পাগলটাগল হয়ে গেলাম নাকি? এই যেমন, আপুকে যদি ডেকে বলি, “আপু, তুমি তোমার শেষ ইচ্ছেটা আমাকে বলে দাও।” তবে ও কথা শেষ করার আগেই আমাকে ফোনের এপ্রান্তে রেখে ফোনটা কেটে নেক্সট ফ্লাইটটার টিকেট কেটে সোজা চলে আসবে বাংলাদেশে। ভাইয়াকে বললে ও এমন কান্নাকাটি শুরু করে দেবে যে, সে কান্নার সাগরে সাঁতারজানা মানুষও ডুবে মরে যাবে! আম্মুকে বললে, উনি কী করবেন আমি জানি না, তবে আব্বুকে বললে, সোজা ধরে বিয়ে দিয়ে দিবে, কারণ পুরোপুরি পাগল হয়ে গেলে আর কেউ বিয়ে করতে চাইবে না। ফ্রেন্ডদের বললে, এক্ষুনি দৌড়ে এসে বাসায় হাজির হবে, সাথে কোনো ওঝাকেও ধরে নিয়ে আসতে পারে ঝাড়ফুঁক করানোর জন্য! যে দুএকজন কাজিনকে অলরেডি বলে ফেলেছি যে, আমার ধারণা, আমার বড় কোনো অসুখ হয়েছে, আমি তাই খুব তাড়াতাড়িই বাসা থেকে পালাবো, যাতে আমাকে কাউকে জ্বালাতে না হয়, তারা গোপনে অনুসন্ধান করতে শুরু করে দেবে আমার কী অসুখ হয়েছে, তা জানতে। কতগুলি আত্মীয়স্বজন কিছু না বুঝেই আজাইরা উপদেশ দেয়া শুরু করে দেবে, “আত্মহত্যা মহাপাপ। খবর্দার!” আবার কিছু তির্যক ভাবনাপ্রিয় আত্মীয় আছে যারা, অন্যরা কেন আমার প্রশংসা করে, কেন আমাকে ভালোবাসে, কেন অনেকেই আমার সম্পর্কে বাজে কথা শুনতে পছন্দ করে না—শুধু এসব কারণেই আমাকে সহ্য করতে পারে না, তারা বলবে, “কত না সবাই বলে, মুক্তি বুদ্ধিমতী, মুক্তি বুদ্ধিমতী, ভালোবাসি—বেশি-বেশি, দেখ এখন, মাথাভর্তি গোবর অতি!” আর নিন্দুকেরা খুশি হবে? ওরে বাবা! সেও হয় নাকি? ওরা তো লাফাতে-লাফাতে বলবে, “হায় হায় মরি মরি! দিনরাত রাতদিন, কাহারে লইয়া মাতি? এ দেখি বলদ পুরাই, একেবারে খাঁটি!”

তার মানেটা কী দাঁড়াল? আমি কি কাউকেই অবলীলায় জিজ্ঞেস করতে পারবো না, “শেষ কথাখানি, কতোখানি রাখিয়াছ লুকাইয়া, কহো এইক্ষণে!” আমি কোথায় পাবো তারে, শেষ কথাটি যে বলবে আমারে? আচ্ছা, শেষ কথাটি কি মানুষ সত্য বলে? এমন মানুষও, যে কিনা জীবনে কখনো মিথ্যে ছাড়া অন্যকিছু বলেনি? আবার এমনও তো হতে পারে, একটা মানুষ সারাজীবনই সত্য বলল, কখনো মিথ্যে বলার স্বাদটা পেল না, শেষটায় এসে তার মনে হল, একটু মিথ্যে বলে দেখিই না, কেমন লাগে! ব্যস্‌ যেই ভাবা সেই কাজ! ফস্‌ করে বলে ফেলল একটা ঘোরতর মিথ্যে কথা। আর বলেই টুক্‌ করে মরে গেল! সবাই সেটাকেই সত্য বলে ধরে নিল, কারণ সে মানুষটা যে কখনোই মিথ্যে বলেনি! শেষকথার দাম অনেকখানি। এমন একটা কথা, যে কথাটি বলার পর আর কোনো কথা বলার কোনো ক্ষমতাই অবশিষ্ট থাকবে না, জীবনের সকল কথা সাঙ্গ হবে সেই কথাটিতে, সে কথার তো একটা তাৎপর্য আছেই! আমি মনে-মনে ঠিক করে ফেলেছি, আমি মৃত্যুর আগ মুহূর্তে কী বলে যাবো। আমার ধারণা, আমি খুব আগেভাগেই এই পৃথিবী ছাড়ব। আমার ইচ্ছেটাও ওরকম। যতো আয়ু, ততো যন্ত্রণা! কী দরকার? মরে গেলেই তো বেঁচে গেলাম। আমার মৃত্যুর পর পুরো পৃথিবীর কেউই আমাকে সহ্য করতে পারুক বা না পারুক! আমার কী? আমি যে কথাটি বলে যাবো ঠিক করেছি, সেটা এখুনিই বলবো না। কেন? এমন নয় যে কথাটি এমন কিছু দামি, যা এখুনিই বলা যাবে না। বস্তুত, আমাদের কোনো কথাই তেমন দামি কিছু না। যাদের কাছে আমাদের কথা দামি, তারা এমনকিছু মানুষ, যাদের কাছে আমরা দামি। ধরুন, যদি আমি এমনকিছু বলি, যা আপনার পছন্দ হয়নি, কিংবা আমাকে পছন্দ করেন না বলেই আমার কথাটিকে তুচ্ছতাচ্ছিল্যে উড়িয়ে দেবেন, তাহলে আপনার ওরকম আচরণের কারণে আমার কথাই কিন্তু চিরতরে থেমে যেতে পারে। তার চেয়ে, যে মুহূর্তটির পর আমি আর এমনিতেই কোনো কথা বলতে পারবো না, সে মুহূর্তেই আমার শেষকথাটি বলি। এতে লাভ দুটো। এক, আপনি আমাকে কতটা নিষ্ঠুরভাবে আক্রমণ করছেন, সেটা আমাকে সহ্য করতে হবে না। দুই, আপনার যতোই মুখ নিসপিস করতে থাকুক না কেন, আপনি মৃত ব্যক্তির প্রতি ভদ্রতা দেখাতে হলেও সৌজন্যস্বরূপ আমার শেষকথাটি নিয়ে কটূক্তি করতে পারবেন না। আসলে, আমাদের কথা আমাদের কাছে যতোটা দামি, অন্যকারোর কাছে তা ততোটাই মূল্যহীন। এটা বুঝতে পারি না বলেই আমরা যেচে-যেচে লোকজনের বিরক্তি জড়ো করে সেটা মাথায় নিয়ে নাচি!

ভাবনা: আটান্ন।

……………………..

চার বছর আগের এক সন্ধেবেলা। একটা ছায়া, কোনো মানুষ নয়, কেবলই একটা মানুষের ছায়া, একটা বড় বিপদ থেকে আমায় বাঁচিয়েছিল। সেদিন মনে হয়েছিলো, ছায়া কেবল ছায়াই। জানোয়ারের ছায়াও ছায়া, মানুষের ছায়াও ছায়া। এমনকি, যেসব জানোয়াররা মানুষের মুখোশ পরে ঘোরে, তাদের ছায়াও অন্য সবার ছায়ার মতো নিরাপদ। দুঃখ বোঝাতে, লোকে কেন বলে জীবনে কালো ছায়া নেমে এল? অথচ সেদিন ছায়াই আমাকে পরম বন্ধুর মতো সতর্ক করে দিয়েছিল। আমি এখনো সেদিনের সে জানোয়ারের ছায়াকে ভালোবাসি। সে জানোয়ারটা ছিল যতোটা ঘৃণ্য, জানোয়ারের ছায়া ছিল ততোটাই আদরের। সে ছায়া এসে কী এক শক্তিতে প্রচণ্ড ধাক্কা লাগাল আমার দুপায়ে। আমি দৌড়ে বাঁচলাম সে জানোয়ারের হাত থেকে। জীবন কখনো-কখনো সকল ভরসাগুলিকে ডুবিয়ে দিয়ে নিরাশাগুলিকে আটকে ধরে রাখে। আশ্চর্যের ব্যাপার, সে নিরাশাগুলি কীভাবে যেন মানুষকে আশ্রয় খুঁজে দেয়! নিজেই ধরে নিই, ভাল আছি। বেদনার ঘন তপ্ত শ্বাস এসে জীবনকে জাগিয়ে তোলে।

চোখ বন্ধ করলে প্রায়ই দেখি, অনেকগুলো অজানা রাস্তার একটা কঠিন মোড়ে দাঁড়িয়ে আমি। কোন পথের শেষটায় কী আছে, জানি না। শুধু জানি, কোনো একটা পথ ধরে আমাকে হাঁটতেই হবে, পালাতে পারব না। কোনো পথেই যদি আমি হাঁটতে নাও চাই, তবুও আমি এই মোড়ে দাঁড়িয়ে থাকতে পারব না, সরে পড়তে হবে দ্রুত, নিজ থেকে সরে না গেলে মৃত্যু নিশ্চিত—এতোটাই অসহায় হয়ে দাঁড়িয়ে আছি। সন্ধে নামার আগেই আমার এই স্থান ছাড়তে হবে। বুঝতে পারছি না, কী করব, কেন করব, কীভাবে করব, কী করা উচিৎ…..এদিকে বিকেলমশাই গড়িয়ে-গড়িয়ে সন্ধ্যার পথে হাঁটছেন, সূর্যটা পাহাড়ের পেছনটায় পিছলে গেলো বলে! এমন এক মুহূর্তে একাকি অসহায় কিংকর্তব্যবিমূঢ় আমি ওই মোড়টায় দাঁড়িয়েই তো দাঁড়িয়ে……হুমম্‌……! ঠিকই ধরেছেন। আমি জীবনের কথাই বলছি!

“একটু ভুল করে, আধটু পুষিয়ে দেবো!” আহা কী এক আত্মতৃপ্তিদায়ক সান্ত্বনা! এ নিয়ে কী সুন্দর বেঁচেও আছি! যায় কি সবকিছু সত্যিই পুষিয়ে দেয়া? সম্ভব আদৌ? অমন চেষ্টাই তো বৃথা! জীবনটা লেখার খাতার মতো না যে যা ইচ্ছে লিখে ফেললাম, জীবনটা হাসিমুখে সব গ্রহণ করে ফেলল! জীবন নিয়ে লেখকের কল্পনা যখন আকাশ ছোঁয়, তখন জীবনটা হয়তো সিলিংটাও ছুঁতে পারে না। সত্যিকারের অভিনয় জীবনের চেয়ে বেশি আর কোথাও হয় না। আমরা ভাবি, যা দেখছি, শুনছি, তার সবটুকুই বাস্তব। অথচ এসবকিছুর দাম একটা নাটকের চাইতে বেশি নয়। আমরা সারাজীবনই বেঁচে থাকি কীসব মিথ্যের মধ্যে! যা দেখি, যা ভাবি, যা অনুভব করি, তা সবসময় সত্যও হয় না। কত সুন্দর হাসিতে ছবি ওঠে। সে ছবি দেখে কে বুঝবে, কত কান্না জমে আছে ওই চোখে? কতটা কষ্টেগড়া ওই মুখখানি! একটানা পাঁচ ঘণ্টা কেঁদেও ভীষণ সুন্দর হেসে পোজ দেয়া যায়!

চাঁদকে ভালোবেসে ফেলেছি। সেই চাঁদকে চাওয়া যাবে না, পাওয়া যাবে না, চাঁদের কাছে যাওয়াও যাবে না, সবই নাহয় মানছি। চাঁদ ভালো না-ই বাসুক, কথা না-ই বলুক, কিংবা না-ই শুনুক, তাই বলে কি নিঃস্বার্থভাবে ভালোবেসে আকাশপানে চেয়ে-চেয়ে আন্তরিক অনুভূতিগুলো, একটুখানি নিঃশ্বাস ফেলতেও পারবে না? এ অধিকারটুকুও না পেলে কীভাবে বাঁচে মানুষ? এমন অসহায় হয়ে গেলে কখনো ওতেও কাঁদবো না—এতটা শক্ত যে হতে পারিনি, পারবোও না কোনোদিন। আমি ভালোবাসি, কারণ এই ভালোবাসার অনুভূতিটুকু আমাকে শান্তি দেয়। এর বিনিময়ে ভালোবাসা না-ই বা পেলাম! কী ক্ষতি তাতে? আমি ভালোবেসে ভাল আছি, ভাল থাকতে চাই।

ভাবনা: ঊনষাট।

……………………..

কী ভীষণ খারাপ আছি

এ ক’টা দিন…….

মন কেবলই বলে যায়,

‘প্রিয়’কে বলো,

ও তোমায় রাখবে ভাল।

হায় মন! কেউ না জানুক, আমি তো জানি,

কতটা ভ্রম সে আশায়!

ভালোথাকাটা—কখনো-কখনো, সত্যিই এসে, কেবল—স্রেফ বেঁচেথাকায় ঠেকে। মানুষ ভাল থাকে কার জন্য? অন্যের জন্য? সবচাইতে প্রিয় মানুষটির জন্য? কোনো স্বপ্নের জন্য? নাকি, খারাপ থেকে কী লাভ?–এই ভেবে। আচ্ছা, নিজে ভাল না থেকে অন্যকে কতটুকু ভাল রাখা যায়? কতদিন পর্যন্ত? অনন্তকাল? ওই অনন্তের সীমা কতদূর? একেবারেই চলতে পারছে না, সবার দিকে ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থাকতে পারে শুধু, এমন অসুখ হয়ে পড়ে থাকলেও, সবাইকে ভাল রাখা যায়? অসুস্থ মানুষের প্রতি অন্য মানুষের মায়ার আয়ু কতকাল? অসুস্থ মানুষ নিজেই তো সবার বোঝা হয়ে যায়, অন্যকে ভালোবাসার বোঝা সে আবার টানে কীভাবে? ভালোবাসার প্রকাশ না থাকলে প্রচ্ছন্নতায় ভালোবাসা কতটা ভাল থাকে? কিংবা, ভাল থাকতে দেয়, নিজেকে, ভালোবাসার মানুষটিকে? কয়টা মানুষ ভালোবাসার মানুষটিকে সেই মানুষটির মনের, মেজাজের এবং শরীরের মতো করে মেনে নিয়ে ভালোবাসতে শেখে? ‘শরীর’ কথাটিতে ধাক্কা খাই না এখন আর, বড় হয়ে গেছি—ভালোবাসায় শরীর আসবেই! যারা অন্যকথা বলে, ওরা বেশিরভাগই ভণ্ড। অতো গভীরে যদি নাও যাই, চোখে দেখে যতটুকু মাথায় আসে, সেখান থেকে ভাবলেও, একটা সহজ সাদামাটা ভালোবাসাকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য ভালোথাকা আর ভালোরাখা–দুটোই লাগে। ভালো-নেই’র ভালোবাসা ভাল থাকে না। থাকলেও, কতদিন? প্রতিদিনের জীবনটা নানান জায়গায় এসে-এসে ধাক্কা খায়। প্রায়প্রায়ই হুট করে মনে হতে থাকে, ধ্যত্‌! আর কিচ্ছু ভাল্লাগে না, চলে যাবো যেদিকে দুচোখ যায়! কিন্তু মানুষ কই যাবে? নিজের ভেতরটাকে, সবচাইতে ধ্রুব সত্যটাকে—যা হয়েছে, যা হয়, যা আছে—এসবকে পেছনে ফেলে পালানো যায়? অতো সহজ বেঁচে যাওয়া? জীবনেই তো থেকে যেতে হয় এই এক জীবনে, জীবনেও জীবন থেকে বেরিয়ে যাওয়া যায় না—এটাই ট্র্যাজেডি বেঁচেথাকার। জন্মেছি, তাই বাঁচতে হবে, এই শাস্তি নিয়ে বেঁচে থাকাই জীবন। নিজের জন্মকে গালি দিতে-দিতে ভাবার প্র্যাকটিস করা—বেঁচে আছি, বেশ আছি—এর নামই জীবন! এর জন্য যা আয়োজন, তা নিয়েই পথ চলতে-চলতে একসময় থেমে যাবো। এর আগ পর্যন্ত–যে যা-ই বলুক, যার যাকিছু হোক, আমাকে শেষ করে দেয়ার যত রকমের চেষ্টা, বোঝার আগেই ভুল বোঝাবুঝি এবং সেটাকে সত্য ধরে নিয়ে আমাকে বোঝা, শুধু মন নয়, সত্যি-সত্যিই শরীরকে ভেঙেদেয়া—এ সবকিছুকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে বাঁচার নামই ভালোথাকা। পুরো জীবনটাই তো একটা ঠাট্টা! ইয়ার্কিতে যতদিন বাঁচা যায়, ততদিনই লাভ—একেবারে নগদে! কাউকে ‘বেঁচে থাকতে’ দেখলে ‘কেমন আছেন?’ বলার তীব্রতম বিদ্রূপটি ছুঁড়ে দিয়ে এবং গ্রহণ করে পথ চলছি………জলজ্যান্ত মানুষকে ‘ভাল আছেন তো?’ জিজ্ঞেস করে উত্তরের আশায় হাঁ করে তাকিয়ে থাকতে হয় না। ওতে ঈশ্বরের রহস্যময় নিষ্ঠুরতার প্রতি সংশয় দেখানো হয়। অমন আস্পর্ধা! হাতের আর হৃদয়ের অস্ত্র আঘাত করেই যায় নিপুণ কায়দায়। সে আঘাত ভুলে থেকে—চিবুকে লেপটেথাকা বিশ্বস্ত বিষণ্ণতা আড়াল করে বাঁচাই ভালোথাকা, অতএব, জীবন!

ভাবনা: ষাট।

……………………..

এমনকিছু সম্পর্ক আছে, যে সম্পর্কগুলিতে অস্তিত্বের অনুপস্থিতি কোনো শূন্যতার সৃষ্টি করে না। সামনে থাকা না-থাকায় সম্পর্কেথাকা মানুষ দুটোর কিছুই এসে যায় না। যে অস্তিত্ব তার অনুপস্থিতি অনুভব করায় না, সে অস্তিত্ব আসলে হয়তো কোনো অস্তিত্বই নয়, সমস্ত অস্তিত্বটাই আসলে এক ধরনের শূন্যতা। সে সম্পর্ক বড্ডো একতরফা! আবার, এমন রহস্যের দেখাও মেলে, এই শূন্যতাই হয়তো হয়ে ওঠে পরিপূর্ণ পূর্ণতা। এমনও হয়! বাইরে থেকে দেখলে এই পূর্ণতার খোঁজ কেউই পাবে না। শুধু সেই যুগলই জানে, ওরা কতটা পূর্ণ একটা সম্পর্কের মধ্যে বেঁচে আছে! আবার এও তো দেখি, মিছেমিছি পূর্ণতার নান্দনিক অভিনয়, যা কিনা কোনো মঞ্চে বেশ মানিয়ে যেত, তেমন অভিনয়েও এক জীবন দিব্যি কেটে যায়! কেন এমন হয়? কারণ খুঁজতে গেলে সুস্থ মাথায় খোঁজা সম্ভব নয়। হয়তো, অনেক দুর্লভ কিছু, অনেক দামি কিছু—বস্তুগত কিংবা অবস্তুগত, দৃশ্যমান কিংবা অদৃশ্যমান, প্রাণময় বা প্রাণহীন—পাওয়ার আশায় মানুষ ব্যাকুল হয়ে উঠে, ছটফট করতে থাকে, কিংবা একবার পেয়ে গেলে, খুশিতে আত্মহারা হয়ে বিবেকবুদ্ধিসহ সমস্ত সুচেতনার করুণ মৃত্যু ঘটায়। শুধু একবারের জন্যে, শুধু একটিবারের জন্যও ভেবে দেখে না, ওই বিশেষ মূল্যবান জিনিসটির, তার জীবনে আদৌ কোনো মূল্য আছে কিনা। একেবারে শেষটায় এসে, কখনোসখনো কেউ-কেউ হয়তো বুঝতে পারে, যা অতি মূল্যবান ভেবেছিল, সেটি তার নিজের জন্য, নিজের জীবনে কী ভীষণ মূল্যহীন! অথচ, এসব মূল্যহীনের পিছু ছুটে-ছুটে কত মূল্যবান কতকিছুই জীবনকে পাশ কেটে চলে গেছে। সে হিসেব কারো জানা নেই, সে হিসেব কেউ কখনো করে না, করলেও, এমনসময়ে করে, যখন অনেক দেরি হয়ে গেছে। কখনো-কখনো নরোম তুলোর স্পর্শও রক্ত ঝরায়, আর কুঠার আঘাত করে পরম মমতায়। এ রহস্য আহত হওয়ার আগে কে জানতে পারে?

একেকদিন একেকরকম হলেই ভাল। কারো-কারো ওরকম হয় বোধহয়। আমার অতো হয় না।

আকাশের সব নীল এক হয়ে চারপাশ থেকে আমায় ঘিরে ধরে।

আর বলে, “আচ্ছা বলতে পারো, নীল কেমন? আমায় একটু বলো না!”

যে আকাশখাতায় আমি নীল চিনেছি, নীল শিখেছি, তাকেই কীকরে বলি, নীল কেমন? এ কেমনতর ঠাট্টা?

বিশাল সমুদ্র, যে কিনা অনন্তকাল ধরে একরাশ জল নীরব মুখর স্বরে বুকে ধারণ করে আছে, সে যদি জিজ্ঞেস করে বসে,

“গভীরতার সাতকাহনটা কী? একটু বুঝিয়ে দেবে?”

হায়! জীবনের গভীর বেদনাগুলো যে গভীরতায় মিলিয়ে দিই, যে গভীরতায় জীবন খুঁজে বেড়াই, তাকেই কীকরে বোঝাই গভীরতা ব্যাপারটা কেমন? অতোটা প্রহসন না করলেই কি নয়? এ জগতের সকল প্রহসন শুধু আমার জন্যই বরাদ্দ? আর কতদিন জীবনটা এমন বিদ্রূপ ঠেলে-ঠেলে কাটাতে হবে?

পাগল-করে-দেয়া মিষ্টি গন্ধের ফুলগুলো দলবেঁধে এসে আমায় বলে, “সুবাস কেমন?”

বাতাসে ভর করে-করে চলে কী ভারি-ভারি সব অদ্ভুত অস্তিত্ব! ঘ্রাণ নিয়ে নিই অনেকটা, অমন অস্তিত্ব এসে নাড়া দিলে। যেখানেই থাকি, আশপাশটা যেমনই থাকুক, কী এক মায়াবী আবেশে মনটাতে কিছুটা আনন্দের দোলা দিয়ে দেয় ওই সুবাস। সে যাদুকরের জন্মদাত্রীকে কীকরে বোঝানো যায়, সুবাস কেমন, আমার অল্প বুদ্ধিতে তো আসে না!

শাদা গাভীর পালের মতো মেঘের ভেলা ভেসে যায়। সে মেঘের সঙ্গী হয়ে মন উড়ে চলে পাখির গানের সুরে। অমন সুরের ঝর্ণা যদি আমায় প্রশ্ন করে, “বলবে আমায়, সুর কেমন?” এমন প্রশ্নের উত্তরে কী বলতে হয়, আমি সত্যিই জানি না। যাদের গানে পৃথিবী জাগে অফুরান প্রাণে, তাদের সুর চেনাই কীকরে?

এমনি কতশত মধুর সৃষ্টি প্রায়শই এসে আমায় প্রশ্ন করেই যায় করেই যায়, আর বাকরুদ্ধ করে ফেলে রেখে হাসতে-হাসতে ফুড়ুৎ করে পালায়!

প্রিয় মানুষটি এসে যখন শুধোয়, “ভালোবাসাটা কেমন হয়?” তখন কী এক লজ্জায় মনে হয়, নিজেকেই ধাক্কা মেরে ফেলে দিই!

জীবনপথে হাঁটি, হোঁচট খাই, আর ভাবি, এই ভুল জীবনটার সবকিছুই এলোমেলো, সবকিছুই ভুল। একমাত্র শাস্তিটাই বেশ গোছানো, ঠিক!

ভাবনা: একষট্টি।

……………………..

আকাশটা ভীষণ কালো করে মেঘ ভাসছে, এমনসময় টুপ্‌ করে সন্ধেটা নামল, সাথে বৃষ্টি। সেদিনের সন্ধেটা বৃষ্টিতে খুব মেতেছিল। ইচ্ছেগুলো বাঁধছাড়া রাস্তায় নেমে ছুটছিল। এমন ভীষণ বৃষ্টিতে, খুব চেষ্টা করেও যখন সব কাজ সময়মত শেষ হয় না, ওতেও তেমন একটা রাগ হয় না, কারণ দিনটা বৃষ্টিতে ভেজার। বাসায় পৌঁছতে হবে খুব দ্রুত, এরকম বাসায় ফেরার তাড়া থাকলে দেরি হয়ই, আজকেও হচ্ছে। ওদিকে রিকশা পাইনি, আমায় কেউ নিচ্ছে না, কারণ আমি যে ভাড়া সাধছি, সেটা বৃষ্টির দিনের ভাড়া নয়—এর মানেটা দাঁড়াল, আমিও কাউকে নিচ্ছি না। আমার আর রিকশাওয়ালার মধ্যে রিলেশনটা কমপ্লিকেটেড! হাতে ক্ষীরসার প্যাকেট। ছোটভাইয়ের আবদার জলের ছাটে ভিজে যাচ্ছে, এমন ঝুম বৃষ্টিতে ছাতায় কিছু লাভ হয় না। রাস্তায় অতো মানুষ নেই, তাই ওড়না দিয়ে প্লাস্টিকের প্যাকেটটা আগলে নিলাম। আকাশের দিকে তাকিয়ে হাঁটছি, গুনগুন করছিলাম কিনা, মনে নেই। বৃষ্টির ঝুউম শব্দ সবকিছু এলোমেলো করে দিচ্ছে। হাত-পা ছুঁড়ে-ছুঁড়ে হাঁটছি আর ছাতাটা মাঝেমধ্যে সরিয়ে ভিজে নিচ্ছি আরো একটু বেশি। ভেজা কাপড় গায়ে লেপটে আছে, শরীরের ভাঁজগুলি স্পষ্ট হয়ে উঠেছে, ঠিক বুঝতে পারছি। কিন্তু সেটা ঢেকে রাখার তাগিদ অনুভব করছি না অতোটা। রাস্তায় তো কেউ নেই, আমার ভাঁজ দেখবে কে? স্বেচ্ছাচারের অসীম আনন্দ সাথে করে নিয়ে বাসায় ফিরলাম। বরাবরের মতোই, একটা যুক্তি দাঁড় করিয়ে ফেললাম নিমিষেই: একটু আগে-আগে বাসা থেকে বের হলেই তো আর বৃষ্টিটা আমাকে পেতো না। কিংবা, রিকশাভাড়া ১০ টাকা বাড়িয়ে দিলে কী এমন ক্ষতি হতো? অরুণার সাথে আজকে একটু কম পক্‌পক্‌ করলেই তো হতো! এরকম আরো কী কী যেন ভেবেটেবে ফেললাম। এসব ভাবতে-ভাবতে পরক্ষণেই আবার মনে এলো, না না, এমন একটা বৃষ্টিতেই তো আমি ভিজতে চেয়েছিলাম। অনেকটা রাস্তা ধরে হেঁটে যেতে-যেতে ভিজব—এই তো ছিল আমার মনে। ভেজা কাপড়ে হাঁটলে রাস্তার মানুষজন হাঁ করে তাকিয়ে থাকবে ভেবেই তো আর হাঁটাটা হয়নি, তাই না? সাধ আছে, সাথে সংকোচও। তাইতো কতকিছুই করা হয়ে ওঠে না। কিন্তু আজকে কী মজাটাই না হলো! রাস্তা ফাঁকা, বৃষ্টিও দারুণ, রিকশা পেলাম না বলে বৃষ্টিতে ভিজে-ভিজে হাঁটার পক্ষে মনকে বোঝানোও যাবে, আর কী চাই? হ্যাঁ হ্যাঁ, আমি এভাবেই একাকি ভিজতে চেয়েছিলাম—কোনো দ্বিধা বা সংকোচ ছাড়াই। আমার ইচ্ছেপূরণের রাজ্যে আমি এরকম করেই বাঁচতে চেয়েছিলাম।

জীবনটাও অনেকসময় এরকমই। জীবনে এমন অনেককিছু ঘটে, যাকিছু খুব নৈমিত্তিক বলে আমরা হয়তো অতোটা খেয়ালও করি না। কিছু ঘটনার কথা মাথায় এলে আমরা চাই, সেটা না ঘটুক। আমরা জানি, সে ঘটনা বাড়তি কিছু ভোগান্তি নেমতন্ন করে নিয়ে আসবে। কিন্তু ওরকম ঘটনা ঘটে যায়। আমরা ভাবতে বসি, কী হলো? কেন হলো? কীভাবে হলো? সত্যিটা হচ্ছে, সেভাবেই ঘটনাটা ঘটুক—আমরা আসলে এটা চেয়েছিলাম—অনেক আগে, আমরা ভুলে গেছি; কিংবা অবচেতন মনে, আমরা খেয়াল করতে ভুলে গেছি।

ভাবনা: বাষট্টি।

……………………..

ভালোবাসা, এমন নয়—যা একবারেই অনেকটা বেসে দেয়া যায়।

একেবারেই যে যায় না—তাও নয়, যায় কখনো কখনো।

তবে, সেই ভালোবাসাটা—খুব একটা কাজে দেয় না।

আবার, কাজে যে একেবারেই দেয় না—তাও নয়।

দেয়, কারো-কারো ক্ষেত্রে……তবে, সে মানুষের সংখ্যা—অনেক কম।

এই গুটিকয়েক মানুষ, জানে—অনেকগুলো ভালোবাসা একবারে পেলে, কীভাবে, ধারণ করে নিতে হয়—হিসেব করে, একটু-একটু করে খরচ করে বেঁচে থাকতে হয়……। ওরা বড় মাপের আর্টিস্ট—দ্য গ্রেট আর্টিস্টস্‌ অব্ লাভ!

কিন্তু, বেশিরভাগ মানুষের ক্ষেত্রেই, হিসেবটা ভিন্ন……ভিটামিন সি-এর মতোই—প্রতিদিনের ভালোবাসাটা—তাদের প্রতিদিনই চাই, দেরি করা চলবে না, অপেক্ষা করিয়ে রাখা সইবে না……কয়েকদিনের, এমনকি, এমনও হয়, মাত্র একদিনের ভালোবাসার অনুপস্থিতিতেও, শূন্যস্থানে নতুন ভালোবাসার উপস্থিতি ঘটে যায়।

প্রকৃতি শূন্যস্থান পছন্দ করে না…….কারো-কারো হৃদয়, প্রকৃতির চাইতেও, অধৈর্য।

কোনো সম্পর্কই, আপনাআপনিই চলে না—তাকে রোজ ভালোবাসার আর্দ্র ঘ্রাণে জিইয়ে রাখতে হয়।

……..অন্যথায়, সম্পর্ক ভালোবাসার হাত ধরে আর চলে না, ভালোবাসাই সম্পর্কের হাত ধরে চলতে শুরু করে।

ভাবনা: তেষট্টি।

……………………..

আমি তখন সিওলে। হেমন্তের অলস দুপুর ক্রমশ বিকেলের দিকে পিছলে যাচ্ছে। একটা কফিশপে বসে-বসে সোয়া এক কাপ ধোঁয়ায় চুমুক দিচ্ছি। উষ্ণ কফির রেশে শরীর জেগে আছে অনেকক্ষণ ধরেই। কিস দ্য রেইন বাজছে সারা সিলিংময়, মাথায়। এক কিউট পিচ্চি একটু পরপর দৌড়ে এসে-এসে একটা কাঠি দিয়ে আমার হাঁটুতে বাড়ি মেরে-মেরে আবার ছুটে যাচ্ছে। এটা ওর একটা খেলা। হঠাৎ দেখি, এক অতি-অতি সুন্দরী কোরিয়ান তরুণী কোত্থেকে এসে কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে আমার ঠিক সামনের টেবিলের ওপর থেকে ওর ব্যাগটা নিয়েই বেরিয়ে গেল। আর, আমাকে এলোমেলো করে দিল। ওর চুল, চোখ, হাতের মৃদু সঞ্চালন, ঠোঁটের কোণে হাসি—আমি ‘নেই’ হয়ে গেলাম মুহূর্তেই! নিঃশ্বাসের সংখ্যা গোনার মধ্যে এসে যাচ্ছিল বারবার। কোনো কারণ ছাড়াই আমার বিশ্বাস করতে ইচ্ছে করল, সে আমার দিকে এক মুহূর্তের জন্য হলেও তাকিয়েছে। মাথাটা ফাঁকা হয়ে গেল, এবং আমি অনেক চেষ্টা করেও ওকে কিছুতেই চোখে আনতে পারলাম না। মনে পড়ছে না, ও কেমন দেখতে; মন শুধু বলছে, ও এসেছিল, চলে গেছে। সে অপরিচিতাকে বড়োজোর কয়েক সেকেন্ড দেখে যে সুখটা পেয়েছিলাম, সে সুখ আজ পর্যন্ত কোনো নিখুঁত সঙ্গমেও পাইনি—আমার সরল স্বীকারোক্তি। এবং, এটাই সত্য।

মেয়েটা ওর ব্যাগ ফেলে গিয়েছিল। আমার খুব মনে হচ্ছিল, সারা সিওল শহর ঘুরে-ঘুরে আর কোথায়-কোথায় মেয়েটা আর কী কী ভুলে ফেলে গেছে, এবং ফেলে যাবে সেদিন, যদি বের করতে পারতাম!! আর কিছু নয়, দূর থেকে একটুখানি দেখা যেত ওকে!! কিংবা, ও এসেছে, কিছু মুহূর্ত ছিল, আবার চলে গেছে—এমন জায়গায় যাওয়া যেত! হয়তো, আমি যখন সেখানে পৌঁছব, তখন সে সেখানে নেই, কিন্তু সেখানে এসেছিল তো–এটাই বা কম কীসে? মেয়েটা কি কিছু বলতে চেয়েছিল আমায়? নিশ্চয়ই তা হবে। নাহলে, আমার কেন মনে হবে, ও তাকিয়েছে আমার দিকে? সেই অনর্থক মনেহওয়াটা যে কতটা অর্থবহ হয়ে উঠেছিল সেই সদ্যবিকেলে, তার সাক্ষী আমার চোখের আর ঠোঁটের তৃপ্তির যুগলহাসি। আমার সেইদিনের মুগ্ধতার রেশ কোনোদিনই কাটবে না।

কিছু-কিছু বই অপ্রিয় হয়ে যাওয়ার ভয়ে আর দ্বিতীয়বার পড়ার সাহস হয় না।
কিছু-কিছু মুভি অপ্রিয় হয়ে যাওয়ার ভয়ে আর দ্বিতীয়বার দেখার সাহস হয় না।
কিছু-কিছু জায়গা অপ্রিয় হয়ে যাওয়ার ভয়ে আর দ্বিতীয়বার ঘোরার সাহস হয় না।
কিছু-কিছু গান অপ্রিয় হয়ে যাওয়ার ভয়ে আর দ্বিতীয়বার শোনার সাহস হয় না।
কিছু-কিছু মুহূর্ত অপ্রিয় হয়ে যাওয়ার ভয়ে আর দ্বিতীয়বার পাওয়ার সাহস হয় না।

মানুষ, শুধু মুগ্ধতা নয়, কিছু-কিছু মুগ্ধতার স্বপ্ন নিয়েও বাঁচে। হয়তো তাই জীবনটা এতো সুন্দর!