ভালো থেকো, পৃথিবী

নিশীথরাত্রির নিশি ডেকেছে।
কদমফুলে গাছ ভরেছে।
এই আঁধারে আকাশটা আরও কিছুটা আপন হচ্ছে।
জ্যোৎস্না নেই। পূর্ণিমা নেই। চাঁদের কলঙ্কও নেই।
জানালার ওপারে একটুকরো নিঃসঙ্গতা অপেক্ষা করে আছে।
নটে গাছটি মুড়োলো বলে একটা গল্প সদ্যই শেষ হয়েছে।


বাড়ির পাশে একটি বড়ো গাছ।
তার মাথায় একটি বাবুইপাখির বাস।
কোন এক চড়ুই এসে বাবুইয়ের বাসায় হানা দিয়ে
তার কাছ থেকে ভালোবাসাটুকু কেড়ে নিয়ে
আবার, যেন হয়নি কিছুই, তেমন করেই নিজের গন্তব্যে রওনা হয়েছে।
বাবুইপাখিটি এতক্ষণে সব হারিয়ে সর্বস্বান্ত হয়েছে।


অচেনা এক জীবনপথে একটি মেয়ে আর একটি ছেলে ভালোবাসার খেলা খেলে চলছিল।
মেয়েটি ওই ছেলেটিকে সত্যিই ভালোবেসেছিল।
অতঃপর মেয়েটি সমস্ত ভালোবাসাবাসি ভুলে এখন
ছেলেটিকে চেনাপথে পাড়ি জমাতে দিয়েছে,
কেননা সেই ছেলের হঠাৎ শান্তির খোঁজের দরকার পড়েছে।
মেয়েটি আজ একা একাই ছেলেটিকে ভালোবাসে।


একটি সুন্দর ছেলে কলাগাছকে বউ বানিয়ে মিথ্যে সংসার করেছে।
কলাগাছ-বউটি পাপীয়সী হয়ে সংসার ছেড়েছে।
ব্যস্ত শহরে একটি একলা মেয়ে অকাজের হয়ে প্রেম হারিয়েছে।
অকাজের ভালোবাসা নিয়ে মেয়েটি কারও প্রেয়সী হবার সব সুযোগ হারিয়ে ব্যর্থ হয়েছে।


এক প্রিয়তমা তার প্রিয়তমকে ভালোবেসে লিখেছিল বলে
শুধুই এক প্রচ্ছন্ন লেখিকা হিসেবেই রয়ে গিয়েছিল।
এখন সেই লেখিকার শব্দ হারিয়েছে বলে সে পরিচয়শূন্য।
ভালোবাসার কথা ডায়েরির পাতায় পাতায় জমা ধুলো হয়ে
জানালার ফাঁক গলে বেরিয়ে পথ হারিয়েছে।
ঘর এখন ফাঁকা। লেখিকার সমাপ্তি হয়েছে।
আর সেই প্রিয়তম এখন নতুন লেখিকার খোঁজ করছে।


সময়ের এখন বড্ড দাম হয়েছে।
ভালোবাসার মানুষের কাছ থেকে একটু সময়
ভিক্ষে করেও পাওয়া যায়নি বলে একটি মেয়ে
মানসিক ভারসাম্যহীন হয়ে এখন পাগল হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে।


অসহায় বাবা-মা, দেবতুল্য মানুষ হবার পরেও,
সেই আদরের মেয়েটিকে এমন কীসে কম রেখে
ওকে ভালোবেসেছিল, তা ভাবছেই তো ভাবছে!
কোন অপরাধে তাদের মেয়েটিকে এত ভালোবেসেও
হারিয়ে ফেলেছে, তার কারণ খুঁজে চলেছে।


দিদিকে হারিয়ে ছোটো ভাইটা কাঁদতেও ভুলে গেছে।
সে এখন জানতে পেরেছে, কাজলাদিদির মতোই, তার দিদিও,
নিছকই গল্প হয়ে আজ হারিয়ে গেছে। দিদিকে সে বড্ড ভালোবাসে।
ওদিকে বোকা মেয়েটা, যারা তাকে এত ভালোবাসে,
তাদের কথা না ভেবে, যে তাকে ভালোইবাসে না,
তার কথা ক্রমেই ভেবে চলেছে!


জীবনের সমস্ত ঐশ্বর্যের সাথে বিরোধিতা করে
একটি মেয়ে জীবন থেকে পালিয়ে বাঁচার প্রস্তুতি নিচ্ছে।


শেষ বারের মতো কালো টিপ আর কাজলটাকে
আরও একবার, শাড়ির সাথে কেমন মানায় দেখতে গিয়ে,
আরও একবার, নিজেকে সাজিয়ে নিয়েছে কোনও নতুন সাজে।


‘ভালোবাসি ভালোবাসি!’ বলে বলে
একটি মেয়ে সেই ভালোবাসাতেই চিরতরে হারিয়ে গেছে।
তাকে বাইশটি বছর সহ্য করে বাঁচিয়ে রেখেছে বলে
একটি মেয়ে পৃথিবীকে ধন্যবাদ জানিয়েছে।


শেষ বার লিখছে জেনে মেয়েটি এখন লিখতেই ভুলে গেছে!
এসব কিছু সবাইকে জানিয়ে এখন সে শান্তির খোঁজে
বিদায় দেবে একটি অথর্ব জীবনকালকে।


শেষ চিরকুটে লিখল সে,
ভালো থেকো, পৃথিবী। ভালোবেসো সবাইকে।
তোমার বুকে মাথা গুঁজতে আর পারলাম না বলে
তোমায় কখনও বাসিনি ভালো, ভুল করেও তা ভেবো না।


ও গো, ভালোবেসেছিলাম! বড্ড বেশিই ভালোবেসেছিলাম।
শুধু ভালোবাসাকে ভালোবাসি বলে
ভালোবাসায় নিজেকে বাঁধতে আর পারিনি।