ভালো বাঁচার ভাবনা

(আমার কিছু ব্যক্তিগত ভাবনা আমার ভাবনাদেয়ালে শেয়ার করলাম। কারোর ভাল না লাগলে, এড়িয়ে যান।)

এক। অতীতের যে যে কাজ করার কারণে আপনার জীবনে দুর্ভোগ নেমে এসেছে, সেসব কাজের একটা তালিকা করে আপনার বালিশের কাছে রেখে দিন আর ঘুমাতে যাওয়ার আগে একবার করে পড়ে নিন কিংবা সেসব নিয়ে ৫ মিনিট ভাবুন। সেসব থেকে কীভাবে করে দূরে থাকা যায়, প্লান করুন। পরেরবার যখন একই কাজটি করতে যাবেন, তখন অবচেতন মনেই আগেরবারের ব্যর্থতার কথাটা স্মৃতিতে চলে আসবে। যদি সেটা থেকে কীভাবে নিজেকে দূরে রাখা যায়, সে প্ল্যানটা করা না থাকে, তবে আগের ব্যর্থতার স্মৃতি পরেরবারের কাজের মানকে প্রভাবিত করতে পারে।

দুই। আপনাকে আগামী ১০ দিনে কী কী করতে হবে, সেটা নিয়ে না ভেবে আজকের দিনে কী কী করতে হবে, সেটা নিয়ে ভাবুন এবং কাজগুলি করতে শুরু করে দিন। এতে কাজকে সহজ মনে হবে।

তিন। আপনার বিপরীত লিঙ্গের কাউকে, যাকে হয়তোবা কখনওই পাবেন না, তাকে সপ্তাহে একটি প্রেমপত্র লিখুন; একেক সপ্তাহে একেকজনকে। সেখানে তার বিভিন্ন গুণের কথা লিখুন। ফেসবুকে শেয়ার করতে পারেন চাইলে। এটা নির্মল মানসিক আনন্দদান করে। (এই যেমন, আমি সপ্তপদী’র সুচিত্রা সেনকে নিয়ে প্রায়ই বাইকে চেপে ঘুরতে যাই……….চারুলতা’র মাধবী মুখার্জির সাথে চোখের ভাষায় দুষ্টুমি করতে থাকি………কিংবা, অড্রে হেপবার্নের দিকে তাকিয়ে তাকিয়ে ভাবি, এই বুঝি রোমান হলিডে’র সেই মিলিয়ন ডলার লুকটা দিল বলে…..!!)

চার। আপনার মৃত্যুর পর আপনার কবরের গায়ে কী লেখা থাকবে বলে আপনি চান? সেটা কল্পনায় আনুন এবং সেটা করার চেষ্টা করতে থাকুন। আমারটা বলছি : এখানে যে মানুষটি শুয়ে আছে, সে মৃত্যুর আগে বেঁচে ছিল।

পাঁচ। যে কাজটি করা আপনার দায়িত্বের মধ্যে পড়ে কিন্তু করতে ভাল লাগে না, সেটি অর্ধেক সময়ের মধ্যে করে ফেলার টেকনিক আবিষ্কার করুন। তাহলে আপনি যা যা করতে ভালবাসেন, সেগুলি করার জন্য সময় পাবেন।

ছয়। আপনার সম্পর্কে ১৫টি নেতিবাচক পয়েন্ট লিখে ফেলুন। সেগুলির কোনটা থেকে আপনি কতদিনে মুক্তি পেতে চান, সেটা পয়েন্টের পাশে লিখে রাখুন। মাঝে মাঝে সে কাগজটা উল্টে দেখুন, যে যে পয়েন্ট থেকে মুক্তি পেয়েছেন, সেটি সেটি কেটে দিন। আপনার করতে ভাল লাগে, এমনকিছু করে আপনার ছোট ছোট সাফল্যকে সেলিব্রেট করুন।

সাত। আপনি যে যে কাজ করতে ভয় পান, কিন্তু করা উচিত, সেসব কাজের একটি তালিকা বানান। তালিকাটি বড় করেই বানান। যত বিরক্তই লাগুক, প্রতিদিন একটি করে কাজ করতে শুরু করুন এবং এভাবে করে কয়েক সপ্তাহে কতটুকু এগিয়ে গেলেন, মিলিয়ে দেখুন।

আট। আমরা আসলে কী করতে ভালোবাসি, সেটা জানাটা অনেক গুরুত্বপূর্ণ। সেটা একবার জানতে পারলে, আর সেটাতে নিজের আন্তরিকতা আর প্রচণ্ড পরিশ্রম দিতে জানলে পিছিয়ে থাকার কোন কারণ নেই। আমাদের সবচাইতে বড় সমস্যা, আমাদের আসলে কী ভাল লাগে, আমরা সেটাই জানি না।

নয়। কোন একটা বিষয়ে কাজ করা শুরু করার আগে যথেষ্ট সময় নিয়ে ভাবুন কাজটা কীভাবে করবেন, কতটুকু করবেন, কেন করবেন। ধৈর্য সহকারে চিন্তা করার ক্ষমতা দিয়ে মানুষ অনেকদূর যেতে পারে। নিজের ইন্টিউশনকে গুরুত্ব দিন।

দশ। কোনকিছুকেই অন্ধভাবে ফলো করবেন না। কারোর বাঁধা ছকে না পড়ে নিজের ছক নিজেই বানান। যেকোনো পরামর্শকে নিজের সুবিধা মতো কাস্টমাইজড করে নিন।

এগার। খুব রেগে গেলে মাথা নিচু করে মাটির দিকে তাকিয়ে উল্টো থেকে ১০০ থেকে ১ পর্যন্ত গুনতে থাকুন, কিংবা দেয়ালের অথবা সিলিংয়ের কোনার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আপনার নিজের সম্পর্কে ১০টি ভাল চিন্তা করুন। এতে রাগ কমে যাবে।

বার। গ্রেটম্যানদের নিন্দা করবেন না, নিন্দা শুনবেন না। ওরকম করলে অহংকার বাড়ে। আপনি যার সমপর্যায়ের নন, তার সম্পর্কে খারাপ বলার কোন যোগ্যতাই আপনার নেই, এটা মন থেকে বিশ্বাস করুন।

তের। জীবনের সকল ক্ষেত্রে অতিপণ্ডিত এবং অতিবুদ্ধিমানদের এড়িয়ে চলবেন। এরা সাধারণত হয় আপনার ক্ষতি করবে নিজের লাভের জন্য, কিংবা আপনার আত্মবিশ্বাসকে ভেঙে দেবে।

চৌদ্দ। টিভি দেখার সময় বাঁচিয়ে প্রার্থনা করুন, বই পড়ুন, মিউজিক শুনুন, কিংবা ভাল একটা মুভি দেখুন।

পনের। নিজেকে ছাড়িয়ে যেতে কাইজেন পদ্ধতি কাজে লাগান। কাইজেন মানে হল, না থেমে একটু একটু করে আরও ভাল অবস্থায় যাওয়া। অল্প অল্প করে ধীরে ধীরে এগিয়ে যান, কিন্তু থেমে যাবেন না।

ষোল। প্রতিদিন ২ মিনিট করে ঘড়ির কাঁটার দিকে অখণ্ড মনোযোগ দিয়ে তাকিয়ে থাকুন। এসময় অন্যকোন ভাবনা মনে আসতে দেবেন না। এভাবে করে টানা ২১ দিন করুন। এতে আপনার চিন্তা করার ক্ষমতা বাড়বে।

সতের। প্রতিদিন আপনি আগের দিনের চাইতে কোন কোন ক্ষেত্রে এগিয়ে গেলেন, একটা নোটবুকে তারিখ দিয়ে লিখে ফেলুন। আগের দিনের অসমাপ্ত কাজগুলি করার জন্য আজকের দিনের কাজ কমাবেন না, কাজ করার সময় বাড়িয়ে দিন।
আঠার। প্রতিদিন নিজের পছন্দের একটি গান গলা ছেড়ে গাইতে পারেন, কিংবা নিজের পছন্দের একটি কবিতা আবৃত্তি করতে পারেন। যে যা-ই বলুক, আপনার নিজের ইচ্ছেটাকে সেলিব্রেট করুন। আপনি গান গাইবেন আপনার নিজের জন্য। যেটি আপনাকে আনন্দ দেয়, সেটি যদি কারোর কোন ক্ষতি না করে করতে পারেন, তবে সেটিকে নিয়ে কাউকে কোন বাজে কথা বলতে দেবেন না, কিংবা কারোর কোন বাজে মন্তব্যকে কেয়ার করবেন না।

উনিশ। বেশিরভাগ সময়ই ক্লান্তি একটি কল্পনা। আপনি যে বিষয়টা করতে ওই মুহূর্তে পছন্দ করছেন না, সে বিষয়ে আপনার মস্তিষ্ক বারবার সিগন্যাল পাঠায়, আপনি ক্লান্ত! আপনি ক্লান্ত! পড়ার সময় ক্লান্তি এলে পড়তে ইচ্ছে করে না, কিন্তু সে সময়ে কোন বন্ধুর সাথে ঘুরতে যেতে বললে কিন্তু ক্লান্তি কাজ করে না। কোন বিরক্তিকর কাজে ক্লান্তি এলে ওইসময়ে কোন সুখকর কাজ দ্বিগুণ পরিমাণে করে সময়টাকে ঠিকভাবে কাজ লাগান।

বিশ। মনোযোগ বাড়ানোর একটা টেকনিক ফলো করতে পারেন। আপনার রুমের এমন কিছু ছোটখাটো জিনিস দেখতে থাকুন, যা আপনি আগে কখনওই খেয়াল করেননি। সেগুলি নিয়ে ভাবতে থাকুন। সেগুলি থেকে কী কী জিনিস এই মুহূর্তেই রুম থেকে দূরে সরিয়ে রাখা যায়, ভাবুন এবং রেখেই দিন দূরে! যা আপনার দরকার নেই, তা থেকে মুক্ত হোন। প্রায়ই এমন হয়, একটা অপ্রয়োজনীয় জিনিস হাজারটা প্রয়োজনীয় জিনিস থেকে আমাদের মনোযোগ সরিয়ে নেয়।

একুশ। যাকে আপনি কোন একটা কাজে সহযোগিতা করতে পারবেন না, তাকে কখনওই বলবেন না যে সে কাজটি করতে পারবে না। যে আপনাকে কোন একটা কাজে সহযোগিতা করতে পারবে না, তাকে কখনওই বলার সুযোগ দেবেন না যে আপনি কাজটা করতে পারবেন না।

বাইশ। যারা ভাবেন, আমি জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের, আমি কী-ই বা করতে পারব, তারা আসলে নিজেকে ফাঁকি দেয়ার রাস্তা তৈরি করে দিতে থাকেন। এরকম চিন্তা থেকে নিজেকে ক্ষমা করে দেয়ার প্রবণতা তৈরি হয় এবং চ্যালেঞ্জ গ্রহণ না করার মানসিকতা গড়ে ওঠে। এ ধারণার প্রতিদিনের চর্চার মাধ্যমে আপনি নিজেকে দুর্বল করে দিতে থাকেন, কাজের মান এবং কাজের প্রতি উৎসাহ কমতে থাকে। যাদের সাথে মিশলে আপনার ওই ধারণা আর চিন্তাভাবনা বেশি করে জাগে, তাদের সাথে কম কম মিশুন। আপনি জীবনে যেটা করতে চাইছেন, সেটা যদি আপনাকে করতে চেষ্টা করার সুযোগ দেয়া হয়, আপনি নিশ্চয়ই সেটার যোগ্য। নাহলে তো সেটা আপনাকে করার সুযোগই দেয়া হত না।

তেইশ। যে কাজটি আপনার করা খুব দরকার, সেটি প্রতিদিন অন্তত ৪ ঘণ্টা করে টানা ২১ দিন করুন; কাজটা করতে ভাল লাগুক কিংবা না লাগুক।

চব্বিশ। যে কাজটি আপনি জানেন, আপনাকে করা বন্ধ করে দিতে হবে, সে কাজটি করতে থাকবেন না। আপনি সে সময়ে অন্যকিছুতে মন দিন।

পঁচিশ। যখন যা খেতে ইচ্ছে করবে, খেয়ে ফেলবেন। আপনার সবচাইতে সুন্দর পোশাকটিকে কোন বিশেষ দিনে পরার জন্য ফেলে রাখবেন না, আজকেই সেই বিশেষ দিন। কোথাও ঘুরতে যেতে ইচ্ছে করলে, সুযোগ হলেই চলে যাবেন। অতিরিক্ত পয়সা জমিয়ে রাখবেন না। যে দিনটির জন্য অতো পয়সা জমিয়ে রাখছেন, সে দিনটি আপনার জীবনে নাও আসতে পারে। নাচতে ইচ্ছে করলে একটুখানি নেচে নেবেন। এটাই জীবন!

ছাব্বিশ। যদি রান্না ভাল হয়, তবে যিনি রেঁধেছেন, তাকে ডেকে তার রান্নার প্রশংসা করুন। যারা আপনার চাইতে পদমর্যাদায় কিংবা অবস্থানে ছোট, তাদের সাথে হাসিমুখে কথা বলার প্র্যাকটিস করুন। যারা আপনার সেবা করছেন, তাদেরকে মাঝেমধ্যেই অকৃপণভাবে ধন্যবাদ দিন। আপনার কাছের মানুষটিকে, যাকে ভালবাসেন, তাকে তার মৃত্যুর আগেই একগুচ্ছ গ্ল্যাডিওলা দিয়ে বলুন, ভালোবাসি! নাহলে সে ফুল তার মৃত্যুর পর কবরের এককোনায় রেখে আসতে হবে। কী লাভ? মৃত মানুষ তো আর ফুলের সুন্দর গন্ধ নিতে পারে না! মৃত হয়ে যাওয়ার বড্ড অসুবিধে এই যে, মৃতরা পৃথিবীর সব সৌন্দর্য থেকেই বঞ্চিত।

সাতাশ। সুযোগ পেলেই শিশুদের সাথে একেবারে ওদের মতো করে মিশুন, খেলুন, গল্প করুন। ওদেরকে বিভিন্ন গিফট দিন। ওদের প্রিয় মানুষ হয়ে উঠুন। এটা আপনাকে আশ্চর্যরকমের নির্মল আনন্দ দেবে।

বাঁচুন, বাঁচতে দিন!!