ভুল করে ঠিক পথে

 এক।
আবছায়া জানালার কাচ…
এমনই এক আবছায়ায়--
জীবন খেলা করে…ইচ্ছেয় কিংবা অনিচ্ছেয়।


হারিয়ে গেলেই কি আর
হারানো হয়?
থেকে গিয়েই যে
হারাতে হয়!
রয়ে গিয়ে যতটা যায় হারানো
সত্যি হারিয়ে কি আর
ততটা দূরে যাওয়া যায় সরে!


দুই।
একদিন তারা পরস্পরের দূরের কেউ ছিল,
তাই রিকশায় পাশাপাশি বসা হতো না।
একসময় তারা--
দুজন দুজনের কাছের কেউ হয়,
তখন রিকশায় হাতে হাত রেখে বসা হয়…


তার পর একসময়, তারা আবার দূরের হয়ে যায়,
তখন আর পাশে বসা যায় না।
একসময়, এতটা দূরের হয়ে যায় যে--
তখন আবার রিকশায় অনায়াসেই পাশাপাশি বসা যাওয়া যায়!


তিন।
খুব কাছের আর খুব দূরের সম্পর্কগুলো--
এভাবেই জীবনরেখার কোনও এক বিন্দুতে এসে,
ঠিক মিলে যায়।


আচ্ছা, এই যে অপছন্দ-অভালোবাসা-তুচ্ছতা-বিরক্তি…
এই সব কিছুর সমন্বয়ে যে এক ভারি অদ্ভুত অনুভূতি,
যদি এর নাম দিই ঘৃণা,
তবে বছরের পর বছর, এত এত ঘৃণাবেসেও কি--
ঘৃণাটা ফুরোয় না আর?


ভেতর থেকে কে একটা বলে ওঠে…
ভালোবাসা…তাও ফুরোতে পেরেছিস কি?
শুনে আমি চুপ হয়ে যাই। একদমই চুপ!


ভালোবাসারা, ঘৃণারা বেঁচে থাকে--
কারও না কারও হয়ে।
এরই মাঝে শুধু জীবন ফুরোয়!
একদিন, পৃথিবীও ঠিকই ফুরিয়ে যাবে!


চার।
এই যে আমি ঠিক জানি,
তুমি বলে কেউ নেই…
তুমি কেবলই আমার এক
অতৃপ্ত আর উদ্ভট-অদ্ভুতুড়ে কল্পনা!


চারপাশ--
ঘন অন্ধকার একেবারেই!
আলো নামে না যেখানে, আর কিছু নেই বাকি,
নিত্য…ওতেই আমি অভ্যস্ত।
নীরবতার সাথেই আমার বসবাস!


তাই নেই-তুমি’র
হঠাৎ আগমনে
আমি আঁতকে উঠি খুউব!


যে তীব্র ঝড়
মন-শরীরের সমস্ত আচ্ছাদন
ছিঁড়ে নেয় অনায়াসে…
যখন সম্পূর্ণ নগ্ন আমি,
রই তখনও স্তব্ধ হয়েই,
স্থির চোখে।


সব সত্য আমার কাছে মিথ্যে,
কিংবা মিথ্যেরা সত্য সবই!
আমি তো জানি ঠিকই--
তুমি নেই।
তবুও ওরা বলে,
তুমি আছ!
আমি স্পষ্ট দেখতে পাই তোমায়!
বস্তুত, তোমায় প্রত্যক্ষ স্পর্শেই পাই!


তবুও জানি--
সব মিথ্যে…মিথ্যে খুবই!


পাঁচ।
খুব আয়োজন করে জীবনকে
ছুটি দেওয়ার কোনও মানে নেই,
জীবন আসলে ছুটিতেই থাকে!


এই যে প্রতি মুহূর্তেই এত মৃত্যু--
জীবনকে ছুটি দেওয়ার পসরা সাজিয়ে
নীরব অপেক্ষায় আছে…
এর চেয়ে নিশ্চিত নির্ভার ছুটি
কী হতে পারে আর?


ছয়।
পা এবং পাখা,
দুটোই ছুটে চলে
একই রকমের বৃত্তাকারে,
একই গন্তব্যে।
কখনও-বা একই বৃত্তে…
অজানার উদ্দেশে!


মানুষ প্রায়শই এক কষ্টের কান্না--
অন্য কষ্টে কাঁদে।
কিন্তু দিনশেষে আসলে
নিজেকে আর ফাঁকি দেওয়া যায় না।


সাত।
ওপারের কখনও হবে না জানা
এপারের ভালোবাসা…আকাশ ছুঁয়েছে কি না।
এপারের জানা হবে কেবলই
ওপারের অভালোবাসা
সাগরের মতো বিস্তৃত কি না।


অথচ এই অজানায় থেকেই
এক অদ্ভুত অজানায়
হঠাৎই দিতে হবে পাড়ি…অপ্রস্তুতেই!


ভাবতে এসব--
লাগে না ভালো একেবারেই!


আট।
যারা নিঃসঙ্গতাকে ভয় পায়,
তারাই নিঃসঙ্গ হয়ে যায় সবার আগে!
হারিয়ে ফেলার ভয় যার যত বেশি,
সে তত বেশি হারিয়ে ফেলে!


ওদিকে, যে একাই হাঁটতে চায়,
তার হাত ধরে যেন পৃথিবীসুদ্ধ মানুষ টানাটানি করে!


নয়।
যে একা থাকতে চায়, তাকে একা থাকতে দিই।
যে একা করতে চায়, তাকে একা করতে দিই।


পৃথিবীতে চলার জন্য যারা অপরিহার্য,
তাদের কেউই ওপরের দুই দলের কোনওটিতেই পড়ে না।


ভালোবাসাহীনতায় বাঁচার চেয়ে অশান্তিতে বাঁচা বেশি যন্ত্রণার!
হায়, লোকে এইটুকুও বোঝে না!
না-বুঝেই ভালোবাসার নামে নির্যাতন করে যায়!


দশ।
প্রায়ই কথা বলতে বলতে হঠাৎ দেখি,
যাকে বলছি এত কিছু, সে তো আসলে নেই-ই!


ধরে নিই, হয়তো-বা সব অতীত হয়ে গেছে…
অথচ একসময় বুঝতে পারি,
আসলে তা--অতীতও নয়…কেবলই এক কাল্পনিক অতীত!


একটা ‘অদৃশ্য’ অস্তিত্বের এমন দোলাচলে দুলতে দুলতে মনে সন্দেহ এসে যায়--
অনুভূতির সৃষ্টিও কি কাল্পনিক তবে?
যে অজস্র শব্দ মনের ভাবকে বহন করে এমন প্রকাশ্যে নিয়ে আসে…
ওরা সবাই কি কাল্পনিক? অদৃশ্য?


এই যে মুঠো জল কিংবা আগুন, যাকে স্পর্শ করা যাচ্ছে,
এও মিথ্যে? কাল্পনিক কেবলই?


সবই যদি কাল্পনিকই হয়,
তবে তো মনের অনুভূতিদের চলমানতায় কি স্থিরতায়…
আর কোনও পার্থক্যই থাকে না!


অনুভূতিরা প্রকাশিত হোক বা হৃদমাঝে খুব করে লুকিয়েই থাকুক,
সবই তবে এক!
নিঃস্বতায় বা শূন্যতায়…অনুভূতিরা তাই প্রায়শই স্তব্ধ হয়ে যায়!


এই যে এই সব নিঃস্বতার মাঝেও বারবার ঠিক ফিরে আসা…
দেখে ভাবি, এই পৃথিবীর সবই শূন্য আসলে!
তাই শূন্যতায় বেশিক্ষণ অভিমান ধরে রাখতে নেই।


যে হৃদ বা হৃদেরা,
শুভকামনা জানালে হাজার বছর বাঁচতে ইচ্ছে করে,
এমনই কোনও হৃদ--
ভালোবাসামাখা আদুরে কণ্ঠে তোমায় বলুক:
ভালোবাসি গো! ভালো থেকো!