মনস্তাপ

মা, আজ তোমায় একটা
কথা বলি সত্যি করে!
তোমায় আমি ভুলেই গেছি
সেই তো কবেই!
দেখো না গো মা,
কত বোকাটাই না তুমি ছিলে!
ভুলে যে গেছি, এই সহজ সত্য
তুমি নাওনি মেনে কোনও কালেই!


তোমার দুইটি চোখের ম্লান মোহনায়
হাসির রেখা ছড়িয়ে দিয়ে বলতে শুধু,
‘খোকাটা আমার বড্ড পাগল,
বোঝে না কিছুই, আমায় ভালোবাসে খুউব!’


জানো মা গো,
প্রথম যেদিন দাঁড়িয়েছিলাম
তোমার হাতের ছায়ায়,
ছিল স্কুলব্যাগটা কাঁধের উপর,
তোমার পায়ের চিহ্ন ধরে,
গুটি গুটি কদম ফেলে,
এগিয়ে গেছি আর-এক উঠোন,
ভুলেছি তোমায় ঠিক সেদিনই!
কেন বিশ্বাস তুমি করো না আজও?


মুঠো ভরে ভাত, নিজের হাতে
দিতে শিখেছি যেদিন মুখের ঘরে,
একা একাই জুতোর ফিতে
বেঁধে নিয়েছি যেদিন প্রথম,
মা গো, তোমায় সত্যি সত্যি
মনে রাখি না…তখন থেকেই।


পরীক্ষাতে শূন্য পেয়ে
খাতাটা যেদিন লুকিয়েছিলাম,
মিথ্যেবলা শিখেই ছিলাম সেদিন থেকে।
আমাদের আগের বাসার গলির মোড়ে
কিছু দুধের মাছির সঙ্গী হলাম।
ওদের কাছে নিলাম শিখে
নাকে মুখে সুখের ধোঁয়া…
আহা, জীবনটাকেই হাওয়ায় মিলায়!


মা গো, তোমার মায়ার বাঁধন,
একপৃথিবী আদর্শের ওই মুখের আদল,
...এসব সেদিন, ধোঁয়ায় মেখে
উড়িয়েছিলাম হেলার রথে।
তবুও, অমন কেন টানতে কাছে?
মা গো, সত্যি বলছি,
আলাভোলা বোকাসোকা…
তেমন আমি ছিলাম নাকো!


প্রথম যেদিন
লুকিয়ে থেকে গাছের ফাঁকে,
এঁকেছি চুমু
এক মেয়ের ঠোঁটে,
ভেবেছি যাকে প্রেমিকা তখন,…
সেদিন তোমার
ভ্যানিটি-ব্যাগের মধ্য থেকে
বাবার ওষুধ কেনার টাকাটা নিয়ে,
ওকে কত কী যে দিলাম কিনে…
শুধু একটুখানি হাতটা ধরে চুমু খেতে!


বাড়িতে ফিরে
বলেছি, ‘মা গো,
তোমায় আমি ভালোবাসি খুউব!’
সব বুঝেও সেদিন কেন বলোনি কিছুই?
অর্ধাহারে ক্লিষ্ট তোমার
অশ্রুসিক্ত চাহনি ঠেলে,
আঁচলভরা আদর-সোহাগ আর
রাত্রিজাগা প্রতীক্ষাও পেছনে ফেলে
অন্ধকারের আলোর মায়ায়
একটিমাত্র খোকা তোমার
বাড়িয়েছে পা…ঠিক সেদিনই!


মা…মা গো…মা…
সবকিছুরই ঊর্ধ্বে উঠে
বলেছ সেদিনও,
‘খোকাটা আমার বড্ড পাগল,
বোঝে না কিছুই!
আর…আমায় ভালোবাসে খুউব!’
সেদিন যদি একটুখানিও কঠিন হতে,
আজকে আমার ঘর হতো না
এই সাড়ে তিন হাত মাটির বুকে!