মৃতছায়ার মতন পড়ে থাকে মন

আমাদের এই মনটার নাম ‘মন’ দিল কে?
মনটাই-বা এল কোত্থেকে?
মনের কি আদৌ অর্থ আছে?
থাকেই যদি, মনের মানে আয়না তবে?
যা কিনা আজ পুরনো কি নতুন ভেদ করে না…
আগে ছিল যা, এখন যা আছে, সামনে যা থাকে…
সবটাই তার উল্টেপাল্টে দেখায় এমন?


‘মন’ কি কোনও প্রদীপ নাকি…শুধু আলোই ছড়ায়, নিজেকে পোড়ায়?
‘মন’ তবে কি সুড়ঙ্গ কোনও, যে পথ মনের সব দরজায় অনায়াসে যায়?
আলো-হাওয়া ‘মন’ শাসায় এমন…রাত বদলে দিন করে দেয়, দিন বদলে রাত এসে যায়?
‘মন’ কি তবে প্রহরী প্রাচীন, যে কিনা এমন হয়েছে বুড়ো…সেই শুরু থেকেই?


তেমন যদি না-ইবা হবে, তবে কেন…
কেন অন্য কিছু না-হয়ে এই মনই হলো সব দোষেরই একক দোষী?
কেন অন্য সব কিছুর চেয়ে এই মনটাই পোড়ে কেবল বেশি?
কেন মনের দামে বিলোয় বিকোয় সবটা ক্ষতি?
কেন মান-অভিমান এলে সেখানে মনেরই মতি?
কেন মনের মতো মন না-হলেই যুদ্ধ খুবই?
কেন কারণ ছাড়াই মনের বাড়ির পথ রুদ্ধ সবটা দেখি?
কেন হিসেবনিকেশ মনেরই মাঝে সৃষ্টি…এ কী?
কেন কষ্ট পেলে মনেই ঝরে বৃষ্টিবাদল?
কেন নিখোঁজ হলে মনের দায়টা সবচে’ বেশি?
কেন মন খুঁজতে মন খোঁড়া হয়, আর কিছু নয়?
কেন মন পোড়ালে তার ঘ্রাণটা হয় কষ্টই?
কেন মনেরই দামে মন ম্রিয়মাণ?
কেন মনের আকাশ হরেক রঙের আকাশ খোঁজে?
কেন মনের কাছে মনটাই শুধু বশ হয়েছে?


তা হলে এই মন কোনও কি জীবনমুখী অচলছবি?
মন যদি যায় মনের বাড়ি, মনের ঘরে…সেখানটাতে মনই কি রবি?
কেন তুমি আজ থাকছ কেবল নিরুত্তরেই?
তুমি কেন চুপটি করেই দিচ্ছ করে জীবনটা পার…আমার বেলায়?
আমার বুঝি জানতে নেই গো তোমার কিছুই?
এই আমাকে বোকা বানিয়েই রেখেছ তো খুব!
আচ্ছা, তবে সময় এলে সামলিয়ো তো কেমন পার!


কাঁটাতারের খুনসুটিটা সুখ নয় তো, ও যে মিথ্যে প্রলাপ…বুঝিনি আগে!
এই বাহুতে জিরিয়ে নিয়ে ফিরিয়েছি আমি কর্কশ যত তর্ক ছিল…মনে মন নিয়ে,
তোমার ভালোবাসার ভেলাটা ঠেলে ঠগবাজদের অবগাহনে,
মিথ্যে মায়ার দায় লেপটে গিয়ে এসেছ…
ফিরে এসেছ হঠাৎ মৃত্যু নামের আহাজারিতে!
মানুষ কি তবে বুড়ো হয়ে যায় এমনি করেই…মরীচিকার এক ইশারায়?
এত উত্তাল আর উন্মাতাল এ জলের ভাঙন,
আমায় কেন বলোনি আগে?
প্রেমের বেগে এতটা কাঁপন!
আমি কি আর বুঝেছি তখন…ছড়াব এত, ছিটিয়ে নিজেকে থাকব এমন?
আমি কি আর জানতাম এই মনের মালিক ছিঁচকে এত?


আচ্ছা মশাই, তোমার বুঝি ক্লান্তি নেই?
আমায় এমনি করে রোজ পুড়িয়ে কর যে মাতাল…ধরে না তোমার ক্লান্তি কোনও?
বেশ তো আমায় বশ করেছ…বলি, জিরোও কখন?
বলো না এবার…আদৌ কি জিরোও?
ওই চাঁদটা বুঝি বাধ্য তোমার বড্ড বেশি?
চাঁদকে তুমি চুপটি করে আকাশে আমার টাঙিয়ে তবেই জিরোও বুঝি?
তাই তো বলি, চাঁদটা অমন লুকোচুরি খেলছে কেন আমার সাথে!
আমায় পাহারা দিতে তুমিই তবে চাঁদটা টাঙাও আকাশমাঝে!
আমি কে-ইবা এমন…আমাকে অমন করে চোখে চোখে রাখছ কেন?
আমি বসন্তের কোকিল নাকি? হেমন্তের সোনাঝরা রোদ পেয়েছ আমার গায়ে?


তোমার ওই চাঁদ-দারোগা বসেছে যখন আমার ঘরে,
তখন বাকি যত তলব আমার, চাঁদের কাছেই শুধাও পরে!
চাঁদকে আমি দিয়েছি বলে সবই আমার, করেছি স্বীকার যত গত-পাপ।
ওই চাঁদের বুকে আলতো ঠোঁটে চুমু পাঠাবে?
আমি তখন দুহাত ভরে জ্যোৎস্না নেব, মাখব গায়ে,
তোমার ছোঁয়া সারাশরীরে লেপটে ছোঁব!
শরীরের আর দোষ কী, বলো…সবটাই তো মনের খেলা!
এই মগজ খুঁড়ে তোমার হাসি ঘুরপাক খায় কেবলই যখন,
তখন শরীরটাও এক তোমায় ছাড়া চাইবে কী আর?


বলবে তুমি, আমায় ডেকে বারেবারে লোকের ভিড়ে নাওটা কেন?
আর নেবেই যদি, আবার কেন হাতটা ছাড়?
আমি যে তখন কাঁপতে থাকি বিরক্তিতে!
জানো না কেন…আমার ওসব হট্টগোলে ভালো লাগে না?
আর কতটা সময় কাটলে পরে বুঝবে আমায় আমার মতন?
যখন তুমি এমন কর, তখন ভাবি, আমিও তোমার মনের দোরে পাহারা বসাই!
দেখি কী করে ইচ্ছেমতন যখনতখন মনকে নিয়ে পালাও এমন!
নিজেরই তো মন…তাকেও আমার চাইতে মানা?
আমি তা হলে আবার এখন যাবটা কোথায় হাত পাততে?
এই দুহাত পাতার কেউ কি আছে…জানো না তুমি?


বড়াই তো খুব, তুমি নাকি নিখুঁতভাবে মানুষ পড়!
বলি, কখনও আমার পড়েছ হৃদয়? পেরেছ কি তা?
যদি তা না পার, তা হলে অমন মানুষ পড়ে কী-ইবা হবে?
নিজের ওই হৃদয়টাকে তারকাঁটাতেই রেখেছ কেমন!
ওসব বেড়া টপকে যাবেটা কে…সাহস অমন আছেই-বা কার?
আমি কিন্তু সহজ মানুষ…ঢুকব সোজাই…গেটটা দিয়ে!
আমার ওসব গেছো হবার সখ জাগে না! সত্যি করে বলছি, শোনো,
এই ক’ফোঁটা ভালোবাসায় আর চলে না!


আচ্ছা, আমার মনের বাড়ি…পালিয়েছে কই?
বুঝি তোমার ওখানেই গেছে?
আমি এখানে…তো মনটা আমার ওখানে কেন? কেমন করে?
একটু নাহয় বকেই দিয়ো…পায়ে পড়ছি, এবেলা প্লিজ তাড়াও ওকে!
নাওয়া নেই তার, হয় না খাওয়া…এমনি করে পরের ঘরে থাকলে চলে?
এই মনটার খুব বাড় বেড়েছে…বড্ড বেশিই!
সে ঘর ছেড়েছে, বলছে এখন…চাই তোমাকেই!
হয় কি এমন?
সত্যি বলছি, এমন একটা দিন আসবে, যেদিন এলে ভালোবাসাটা বাসে কী করে,
ভালোবাসলে করে কী কী যে, ছাড়ব আমি সব দেখিয়েই!
তখনও যদি ভালোবাসাতে দাও বাগড়া,
তোমায় কাঁচা চিবিয়ে ফেলব গিলে…হও তুমি সে যত তাগড়া!