মেয়েরা যেমন হয়

অ্যাতোটা দিলে ভালোবেসে?! অ্যাতোটা চাইনি তো! ভালোবাসা কি তবে বেশিই দেয়? এই সবকিছুর যোগ্য আমি নই। ‘নই’ বলছি, কারণ এতোদিন জানতাম, নই। আমাকে অ্যাতোটা ভাল ভেবে বোসো না, প্লিজ। অন্যের ভাবনাকে আমি থোড়াই কেয়ার করি, বোধহয় এটা বলেছিলাম একদিন। তবে কি প্রতিশোধ নিচ্ছ ভালোবেসে? ঘৃণাও তো এতটা দংশন করে না! ভাল না-হওয়াটা ইদানিং বড্ডো কষ্ট দিচ্ছে; বলে দিচ্ছি, এর দায় কিন্তু তোমাকেই নিতে হবে। ভাল না-হওয়াতেও সংকোচ হয়! তাও এই আমার?! তবে কি এই ভালোবাসা আমাকে শৃঙ্খল পরিয়েই দিলো শেষ পর্যন্ত? হাতজোড় করে মিনতি করছি, তোমাকে খুব বেশি ভালোবাসতে দিয়ো না। আমি একবার প্রেমিক হয়ে গেলে অনেক বেপরোয়া হতে পারি। অতটা কখনও দ্যাখোনি তুমি। ভাবতেও পারবে না তার কিছুমাত্রও। ঔদাসীন্য এবং ভালোবাসা, দুই বোধই খুব বেশি আমার। তীব্র ভালোবাসায় যদি ভেসে যাও, পারবে তো সামলাতে সবকিছু?
মেয়েদের একটা অদ্ভুত ক্ষমতা আছে৷ ওরা ভালোবেসে যা চায়, তার কণামাত্রও দিলে তা বহুগুণে ফিরিয়ে দিতে পারে৷ এমনইভাবে, যে প্রতিদান আপনি সত্যিই ভালোবাসবেন৷ সবটুকু দিতে না পারুন, একটু আন্তরিক হাসিই না হয় দিয়ে দেখুন, দেখবেন এমনকিছু ঘটে গেছে যাতে আপনার পুরো পৃথিবীটাই হাসিতে ঝলমল করছে৷ আশ্চর্য! এই ম্যাজিক ওরা শিখলো কীভাবে?!
গ্রীষ্মের রাগী ক্লান্ত দুপুর। আপনি অফিসে আছেন প্রচণ্ড কাজের চাপে। লাঞ্চ করার সময়ই হয়নি; ওকে ফোন করার তো নয়ই। (ছেলেরা ফোন করতে প্রায়ই ভুলে যায়, আর মেয়েরা কেনো জানি এটা মেনেও নেয়। তবে এর ব্যতিক্রমও আছে। ছেলেটা ফোন করতে ভুলে গেলে মেয়েটা ছেলেটার জীবনকে জ্যান্ত শ্মশান বানিয়ে ছেড়ে দেয়, এমন নজির বহু পাবেন।) ও জানে আপনি দুপুরে খাননি। মেয়েরা পছন্দের মানুষকে এই জিনিসটা জিজ্ঞেস করবেই, ও খেয়েছে কি না; কোনও ভুল ছাড়া। আমি দেখেছি, এটা ছেলেরা খুব কম জিজ্ঞেস করে। (তাই, আমাকে এমন কেউ এটা প্রায়ই জিজ্ঞেস করলে, যে ওটা জিজ্ঞেস করুক আমি তা চাচ্ছি না, আমি সত্যিই খুব টেনশনে পড়ে যাই।) ও আপনাকে কয়েকবার ফোন করলো; ধরতে পারলেন না। (আপনি জানেন, এই মুহূর্তে কাজের সময় ফোন না ধরলেও কিছু হবে না, পরে ফোন করলেই হবে। ইউ হ্যাভ অলরেডি টেকেন হার ফর গ্র্যান্টেড।) তখনই ও একটা টেক্সট পাঠাবে। "প্লিজ! ফোনটা ধর। আর্জেন্ট! আমার খুব বিপদ। তোমার সাথে এখুনি কথা বলা দরকার। প্লিজ! প্লিজ!!" এরপর আপনি একটা ফ্রি জায়গায় গিয়ে ওকে কল করলেন। "কী ব্যাপার? কী হয়েছে?" ও তখন আদুরে গলায় আবদারের সুরে বলবে, "কিছু না। তোমার ভয়েসটা খুউব শুনতে ইচ্ছে করলো, তাই। হিহি......" "মানে? ননসেন্স! আমি রাখছি...." "অ্যাই ছেলে, অ্যাই, শোন না একটু......" "কী আবার??" "দুপুরে খেয়ে নিয়ো, প্লিজ! নাহলে আমিও কিন্তু খাবো না। একদম প্রমিজ!" আপনার কাছে মনে হবে, আহ! লাইফ ইজ বিউটিফুল! বেঁচে থাকবো না কেনো? শুধু বেঁচে থাকলেও কতোকিছু হয়!
"অ্যাই, তুমি আমার সাথে ইদানীং ঝামেলা করতেসো কেনো?" "কী করলাম আবার?" "১৭বার ফোন করতে হলো কেনো? কোন মেয়ের সাথে টাংকি মারতেসিলা?" "আজব! আমি তো বাসায়! আমি মুভি দেখতেসিলাম। মোবাইল সাইলেন্ট করা ছিল, খেয়াল করি নাই। ১৭বার ফোন দিসো নাকি?" "স্টুপিডের মতো কথা বলবা না। মিসড কল লিস্ট চেক কর। মুভি দেখতেসো, না? ও, তুমি তো মুভি দেখবাই। তোমার ওই বই আর মুভিগুলারেই বিয়ে কর। ওরাই তো তোমার সবকিছু। আমি কে? আমাকে মুক্তি দাও।" "ওকে, দিলাম। বাই। ভাল থাকো। সরি ফর এভরিথিং।" এভাবে কাটলো মিনিট দশেক। আপনি ‘টু কিল অ্যা মকিং বার্ড’ দেখছেন। ভাবছেন, ভালই হয়েছে, মুভি শেষ করে ফোন দিয়ে রাগ ভাঙাবেন। কীসের কী! আবার ফোন! "কী ব্যাপার! তোমার বেশি ঢং হইসে, না? তোমার বাসায় এসে নিই, তোমার পোর্টেবল হার্ডডিস্কটা যদি আছাড় মেরে না ভাংসি, আমার নাম ....... না। আর, তোমার পেয়ারি বইগুলা যা পড়ার পড়ে নাও, সব পুড়ায়ে ফেলবো। দ্যাখো না, কী করি!" আপনি চাইলে ওর সাথে ওর রিকোয়েস্ট রেখে 'ঝামেলা করা' বন্ধ করে দিয়ে দেখতে পারেন। ও আবার ঠিকই বলবে, "ও, আমাকে তো তোমার আর দরকার নাই। তোমার ফেসবুকে সুন্দর-সুন্দর সখীরা আছে তো! দেখি তো ওদের সব পিকচারে লাইক দাও, কমেন্ট কর, হাঁ করে বসে থাকো কখন ওরা একটা পিকচার আপলোড দিবে। মনে কর, আমি কিসু বুঝি না, দেখি না, না? (আপনি ২-১টাতে দিলেও ওর ভাষায়, সেটা 'সব') আমি প্রোফাইল পিকচার চেঞ্জ করসি ১০ মিনিট হয়ে গ্যাসে, ডোন্ট টেল মি দ্যাট তুমি সেটা দ্যাখো নাই। তুমি .....এর পিকচারে একটু আগে লাইক দিসো, কমেন্ট করসো, লুকিং নাইস। ভাল, খুব ভাল। আমি খুশি হইসি। থাকো, ওদেরকে নিয়েই শান্তিতে থাকো।"
"তুমি আমার সাথে এইরকম মিন ওয়েতে আর জীবনেও কথা বলবা না।" "হাউ ডেয়ার ইউ!" "ওকে, জাস্ট লিভ মি! আই অ্যাম ফাইন উইথ মাইসেলফ!" ওর সাথে প্রচণ্ড ঝগড়া হলো। ওর কথামতো ওকে লিভ করেই দেখুন। বুঝবেন ঠ্যালা। "কী ব্যাপার! তুমি আমার সাথে কথা বলতেসো না কেনো? সমস্যা কী তোমার? ওওও! তোমার নতুন ডার্লিং জুটসে, না? ভাবসো আমি কিসু বুঝি না?" এই হলো বাঙালি নারী। আপনার লাইফ ত্যানাত্যানা করে ফেলবে। আপনি ভাববেন, হে ধরণী! দ্বিধা হও, আমি গাছে উঠি। হয়তো ধরণী দ্বিধা হবে, কিন্তু ওঠার মতো আশেপাশে কোনও চারাগাছও পাবেন না। বাঘিনীর সামনেই আপনাকে ওর ডিয়ার পুরুষ মাসিমা হয়ে মিউমিউ করতে হবে। আমি তো বলি, ঠিকই আছে। অ্যাত্তো সুখ দিয়া করবেন কী মিয়া? জীবনে ঝগড়া করার জন্যেও কাউকে লাগে। যার ঝগড়া করার কেউ নাই, সে দূরে গিয়া স্প্রাইট দিয়া ভিজাইয়া মুড়ি খাক! (ইহাতে যাঁহারা স্বগতোক্তির গন্ধ খুঁজিয়া বেড়াইবেন বলিয়া মনেমনে সংকল্পবদ্ধ হইতেছেন, তাঁহাদের প্রতি ঐকান্তিক আর্জি, আপনারা অতিসত্বর ইএনটি সার্জনের নিকট গমনপূর্বক চিকিৎসাসেবা গ্রহণ করিয়া আপন নাসারন্ধ্র শঙ্কামুক্ত করুন।)
"জানো, তোমার ছোটো ভাই আর তোমার কথা বলার স্টাইলে অনেক মিল আছে।"
"কীরকম?"
“ধরা খাইলেই ও বলবে, "ওটা আমার বোঝার ভুল।" কথা বলতে ইচ্ছা না করলে বলবে, "আমি কথা বলি, বাট শুনতে বেশি ভাল লাগে।" ঢং করে বলে, "মেয়েদের সাথে বয়স নিয়ে কথা বলতে নেই। এটা অনেকটাই অভদ্রতা।" তুমি বল, "এই! এখন যেতে হবে। রাখছি।" ও-ও বলে। কিন্তু ও কথায় কথায় তোমার মতো, "এই" বলে ডাকে না। আমার পছন্দের কেউই বলে না। শুধু তুমিই প্রায়ই বল। এই 'এই'টা তোমার ইউনিক। শুনতে ভীষঅঅঅণ ভাল লাগে। তুমি তোমার এই 'এই'টাকে পেটেন্ট করায়ে ফেলবা, বুঝসো? হিহি...... তোমার আরেকটা স্টাইল খুব পছন্দ আমার। তুমি বল, "আমি যাবো। তুমি যাবে?" "খাবো। খাওয়াবে?" প্রত্যেকটা কথার শেষে একটা করে প্রশ্ন এ্যাড করে দাও। আবার আমার মাথায় যে প্রশ্নটা ঘুরপাক খাচ্ছে ঠিক ওই মুহূর্তে, সেটাই কীভাবে যেন তুমি নিজেই আলতো করে কর, আর একটু থেমে উত্তরটাও দিয়ে দাও। "আমি ব্যস্ত? নাহ! ব্যস্ত নাতো!" "মন খারাপ? নাহ! এমনিতেই চুপ।" কীভাবে পারো বলো তো?! আমার ধারণা, দুনিয়ার আর কেউ এভাবে পারে না। মেজাজ খারাপ হলে তুমি বল, "এই পচা! মাইর চিনো, মাইর? একদম তুলে একটা আছাড় দিবো!" কী কিউট! শুধু এই কথাটা শোনার জন্যেও তোমাকে রাগানো যায়।”
"এই! তুমি অ্যাতো কিসু খেয়াল করসো কখন!! আমি নিজেই তো কখনও জানতাম না এইসব।"
"দেখসো, দেখসো! তুমি এইমাত্র আবার 'এই' বললা! যখন কেউ তোমাকে ভুলে যায়, তখন ওর খুব ছোটো-ছোটো কথাগুলো মাথায় ঘুরতে থাকে। লাইক, ও এখন এখানে থাকলে এটা এইভাবে বলতো, এইভাবে রিঅ্যাক্ট করতো।"
আমি মুগ্ধ হয়ে গেলাম, একটা মেয়ের মুগ্ধ করে দেয়ার অসীম ক্ষমতায়! শী হ্যাজ জাস্ট মেড মাই ডে!
মেয়েরা যে কয়েকটা অদ্ভুত ক্ষমতা নিয়ে জন্মায়, তার মধ্যে একটি হলো, খুব ছোটো-ছোটো ব্যাপারগুলোও ভালভাবে খেয়াল করা। একটা ছেলের সাথে মেশার সময়টাতে ছেলেটা কী ভাবে, কীভাবে কথা বলে, কোন স্টাইলে রিঅ্যাক্ট করে, কী বললে খুশি হয়ে ওঠে, এইরকম আরো অনেক অনেককিছুই ওদের মাথায় ধীরে-ধীরে গেঁথে যায়। ওরা নিজের অজান্তেই আপনার মধ্যে প্রচণ্ড অপরাধবোধ জাগিয়ে দেবে, ওদের মতো অতোটা ভালোবাসতে না পারার অপরাধবোধ। ভালোবাসা যতোটা দংশন করতে পারে, যন্ত্রণা দিতে পারে, প্রতিশোধ নিতে পারে, পৃথিবীর আর কোনওকিছুই তার বিন্দুমাত্রও পারে না; এমনকি প্রবল ঘৃণাও না।