রূপান্তর

একটা সময় ছিল, যখন আমার অন্তত একজন, অন্তত একজন হলেও, একান্তই কাছের মানুষ খুব বেশিই প্রয়োজন ছিল।
কিন্তু তখন একটা মানুষকেও আমি আমার এতটুকু নিজের করে কাছে পাইনি।
‘আমি ভালো নেই।’ এই কথাটুকু বলবার জন্যও আমি একজন মানুষকে আমার করে হাজার খুঁজেও পাইনি।
রাতের আধারে কাঁদতে ইচ্ছে করলে জড়িয়ে ধরে কাঁদবার মতো একজন মানুষও আমি পাইনি।
ফোনের ব্যালেন্স শেষ করতে না পারায় মেয়াদকাল পর্যন্ত ফুরিয়ে গেছে! তবুও ফোন করে বা টেক্সট করে কথা বলবার মতো একজন মানুষও আমি খুঁজে পাইনি।


তবে হ্যাঁ, কিছু অমানুষ পেয়েছিলাম।
আর আমার প্রতি তাদের অমানবিকতার বদলে তাদের আমি মানবিকতা উপহার দিয়েছিলাম।
সেই আমিই এখন অনেক মানুষের ‘সেই…অন্তত একজন মানুষ’ হবার চেষ্টা করে যাই প্রতিনিয়ত।
মন থেকেই করি। ভালোলাগায় করি। ভালোবেসে করি।


যে মানুষ আমি খুঁজে পাইনি, আমি সবার সেই মানুষটা হবার চেষ্টা করি।
যে কষ্টটা একসময় আমি নিয়ম করে গিলতে গিলতে অভ্যস্ত হয়ে গিয়েছিলাম,
সে একই কষ্ট এখন অন্য কারও হলে আমি তা সমূলে উপড়ে ফেলতে আপ্রাণ চেষ্টা করি…
সেটা আমাকে ছোটো করে হলেও...করি!


আমি চাই, অন্তত কেউ তো ভালো থাকুক, ভালোভাবে বাঁচুক।
কারও উপকারে কিংবা কাজে না আসি, অন্তত ক্ষতি যেন না করি।
অন্তত কোনও একজন একা-হয়ে-যাওয়া মানুষের রাতের আঁধারে
জড়িয়ে ধরে কাঁদবার মতো একজন নিজের মানুষ তো হই!
তবুও তো কেউ তার চোখের জলে আরও পবিত্র হয়ে নতুনভাবে বাঁচুক!


আর এসবের ফলাফলস্বরূপ আমি এখন একা একাই খুব স্বতঃস্ফূর্তভাবে কাঁদতে শিখে গেছি।
আমি সেই ‘অন্তত একজন হলেও নিজের মানুষ’ খুঁজতে খুঁজতে পুরোপুরিভাবে আত্মবিস্মৃত হয়েছি।
এখন আমি একা বেঁচে থাকতে পুরোপুরিভাবে না শিখলেও,
সম্পূর্ণ একা, সবার আড়ালে কাঁদতে শিখেছি।


তবে কী, জানেন, এখন আমার অনেক মানুষ!
কিন্তু এখন আমার কোনও মানুষকেই খোঁজার ইচ্ছেটা একেবারেই আর নেই।


এখন আমার একাকিত্বেই বাস,
তবু যেন তা কোনও বসবাসই নয়!
এখন আমার একার লড়াইয়ে বেঁচে-থাকা,
তবু যেন তা কোনও বেঁচে-থাকাই নয়!