রোদ্দুরের ছাড়পত্র

প্রিয় লেখক,
সম্পর্কটা এখন পাঠক আর লেখকের মধ্যকারই শুধু।
অনেকের মতো করে নিঃস্বার্থ মন নিয়ে আপনার এই পাঠকটি
এখনও হয়তো নিজেকে তেমন ধাতস্থ করে তুলতে পারেনি,
কেননা ব্যাপারটা খানিকটা তার মহত্ত্ব-প্রদর্শনের সীমার বাইরে।


তবে এজন্য দোষ কিছুটা বিলম্বিত সময়ের,
কিছুটা অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতির,
কিছুটা অসময়ের অনৈতিক পরিচয়ের,
কিছুটা লেখকের অদ্ভুত রকমের আকর্ষণক্ষমতার।
আর বাকি যা আছে, তার পুরোটাই পাঠকের অবিবেচনাপ্রসূত আচরণ!


কী আর করা যাবে, বলুন!
পাঠকই তো!
ফেরেশতা তো আর নয়!
নিতান্তই মামুলি এক মানুষ!
কাউকে কম কম ভাবলেই তো আর সে ভাবনার অগোচরে চলে যায় না!
কাউকে কম কম দেখলেই তো আর সে চোখের আড়াল হয়ে যায় না!
মনের চোখ, চোখের মন…এইসব বলে কিছু ব্যাপার তো আছেই!


হায় হায়! বলছিটা কী!
কাউকে কম কম মনে আনার আপনি আমি এমন কে-ইবা, মশাই!
অন্যের মনে যেতে যেমনি পাসপোর্ট লাগে না,
সেরকম নিজের মনেও সে আসবার সময় পাসপোর্টের তোয়াক্কাটাই তো করে না!
আর পাসপোর্ট না থাকলেই-বা কী!
নিষিদ্ধ পথগুলিকে বন্ধ করতে পারে তো নি কোনও বাহিনি আজ পর্যন্ত!
কী আর করা যাবে! ট্র্যাজেডি…আসলেই!


বছর চারেক পরও কথা হতো।
তবুও কি কথাবলার সেই মানুষটা এভাবেই নির্বাক শ্রোতা হয়ে
কথা বলার চাইতে কথা শোনায় মগ্ন থাকত বেশি?
এ উত্তর তো চার বছর বাদেই মিলতে পারে!
আবেগ বাদ দিয়ে বাস্তবতায় এলে সব আসলে আপেক্ষিকই!


সাড়ে সাতকাহনের পর এসে যদি বলি: ‘ভালোবাসি’,
তবে সেটা শুনবার জন্য তার ধৈর্য আশা করাটাও
এখন যেন অনেক বড়ো সাহসের পরিচয় দেয়!
বাস্তবটা যদি কল্পনার লেখককে রূপ দিতে পারত,
তবে বোধহয় পাঠকের হাহাকার কোনও এক স্বর্ণালি সন্ধের বন্ধনে পরিণত হতো!


রবীন্দ্রনাথকে বুড়ো বলেছেটা কে, একটু শুনি!
সে যে যুগ-যুগান্তরের চিরসবুজ এক বরপ্রাপ্ত মহামানব!
তাকে হাজারবার ‘ভালোবাসি’ বলতেও যেন আলাদা এক ভালোলাগায় মনটা ভরে ওঠে!
সোনার তরী নাহয় তীরেই থাক!
ওকে এখানে টেনে আর না আনি!
শুধুই পাঠকের এত দুঃসাহ্স দেখাতে নেই!
কিছু প্রেমে পড়া আত্মঘাতী, সে আমি ঢের জানি!


যদি কখনও চোখে চোখ পড়েও যায়, সে চোখ ফিরিয়ে নেওয়াটাই শ্রেয়!
তবুও মোড়ের মাথায়, শেষমেশ সবকিছু শেষ হয়নি যেন!
বাকি থেকে গিয়েছিল বহু কালের হিসেব নিকেশ।
যদি কখনও হঠাৎ ওঠা কোনও রোদ্দুরে দেখা হয়েই যায়,
তবে যেন সব হিসেবের ছাড়পত্র মিলে যায় বিনা কুণ্ঠাতেই!