শহরতলিতে শহরবাসী

শব্দঋণে জর্জরীভূতা হয়ে শব্দচয়নে ভিক্ষুণী আমার এই নিশ্চুপ-নিশ্চিহ্নপ্রায় শহরতলিতে ব্যস্ততম কোলাহলময় শব্দবহ শহরবাসী হয়ে এসেছিলে তুমি...


আমার কঠিনীভূত নিস্তেজ জীবদ্দশার সেই চিরপরিচিত নিস্তব্ধতাকে উপহাস করে তোমার ওই কোলাহলধ্বনিকেই যেন আপনাতে ধারণক্ষম হয়ে উঠতে বেশি ব্যস্ত হয়ে পড়েছিল আমার এই অপরিণামদর্শী শহরতলি...


বেশি কিছু নয় তো...শুধু আমার এই শহরতলির কোনও এক অচেনা গলির অচেনা মোড়ের মাথায় নিয়নআলোর হলুদ চলোর্মিচঞ্চলতায় নিজকীয় অসাড় অনুভূতিজাত সত্তাকে প্রাণদান করতে তোমার হাতের আঙুলের স্পর্ধাকে আশ্রয় করে স্বস্তি পেতে চেয়েছিল আশ্রয়হীন আমার এই শহরতলি...


একবিংশ শতাব্দীকালের অত্যাধুনিকায়নে নয়...বরং উনবিংশ শতাব্দীপূর্বতার একজোড়া রেশমিচুড়ি, ছোট্ট টিপে পূর্ণ কপাল, কাজলনয়ন, একগুচ্ছ শুভ্র রজনীগন্ধা আর লাজপূর্ণা লালচে আঁচলে নব্য শহরবাসীর পরিচিতা হয়ে উঠতে চেয়েছিল আমার এই স্বপ্নালু শহরতলি...


কোনও আড়ম্বরপ্রধান ধাঁচে নয়...অতি সাধারণের পরিক্রমায় এক নীলাভ্র নীলাম্বরী হয়ে বৃষ্টিভেজা আকাশপটে রংধনুতে অব্যক্ত সৌন্দর্যসৃষ্টির অব্যবহিত পর আকাশনীলাকে খুঁজতে সেই অমূল্যকুমাররূপে আসা নব্য শহরবাসীকে সাথে চেয়েছিল আমার এই সহজিয়া শহরতলি...


না না, অত কিছু নয়...শুধু এই কিছু পরিমাণ মুহূর্তঅবজ্ঞায় হার মানতে নারাজ হয়ে নব্য শহরবাসীর অপরাজিতা হয়ে উঠতে চেয়েছিল আমার এই নিমপূর্ণা শহরতলি...


হায়! কী এক অদৃষ্টপুরুষ! আজ এসবই সেই হঠাৎই আগন্তুক হয়ে আসা নব্য শহরবাসীর কাছে কিছু বিস্মৃতপ্রায় বক্তব্য মাত্র...


পিচগলা রাস্তাসমন্বিত একলা কিছু দুপুর আর তেলচিটে বিকেল পিছলে আঁধার ঘনিয়ে আসা সন্ধের আনাগোনায় বিষণ্ণতাকে নানান আঙ্গিকে ধারণপরবর্তী দশায় নবরূপে এই শহরতলিকে দেখতেই যেন বেশি প্রশান্তচিত্ত সেই নবরূপকাররূপ নব্য শহরবাসী…


অস্থিসন্ধির প্রতিটি মজ্জায় অসহ্য যন্ত্রণাবৎ যাপিত জীবনে অভ্যস্ত পথিকের সাথে এই সহজিয়া শহরতলির সাক্ষাৎকারেই আজ যেন বেশি আগ্রহশীল সেই নব্য শহরবাসী...


একাকিত্বের বিষম যন্ত্রণাকে উপহার দিয়ে ভালোবাসার অপমৃত্যুর পরিণামস্বরূপ মরুঝড়ে নুয়ে-পড়া কৃষ্ণকলি হিসেবেই আজ এই সামান্যা শহরতলিকে দেখেই যেন শান্তিদূত হতে চায় নব্য শহরবাসী...